ব্রিজিত বার্দো অ্যান্ড দ্য লোলিতা সিনড্রম: সিমন দ্য বুভোয়া

685

মূল সিমন দ্য বুভোয়া ।। অনুবাদ । মাহমুদ আলম সৈকত

দশকের পর দশক ধ’রে বহু অভিনেত্রীই তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। ছিলেন একাধারে মডেল, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যৌন আবেদনময়ী তারকাদের আইকন ছিলেন তিনি। তিনি ফরাসী অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো [জন্ম : ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪] । অভিনয় জীবনে জ্যঁ-লুক গোদার, উইলি রজার, মার্ক আলেগ্রেত, রেনে ক্লেয়ার, রজার ভাদিমের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চল্লিশ বছর বয়েসে এসে তিনি অভিনয় জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন। কিন্তু গোটা অভিনয় জীবনজুড়ে প্রংশসা যেমন জুটেছে, জুটেছে তেমন নিন্দাও। ১৯৫৯ সালে ফ্রান্সের শিল্প-সাহিত্য জগতের আরেক দিকপাল সিমন দ্য বুভোয়া [৯ জানুয়ারি ১৯০৮–১৪ এপ্রিল ১৯৮৬] একটি গদ্য লেখেন ব্রিজিতকে নিয়ে। নাম দেন ‘ব্রিজিত বার্দো অ্যান্ড দ্য লোলিতা সিন্ড্রম’। পরে যেটির ইংরেজি অনুবাদ করেন বার্নার্ড ফ্রেচম্যান। বাংলায় অনুবাদটি বার্নার্ড-কৃত ইংরেজির ভাষান্তর…


 

ববর্ষের সন্ধ্যা, ফরাসি টিভির পর্দায় হাজির আছেন ব্রিজিত বার্দো। সেই চিরচেনা বেশভূষা– নীল জিন্স, সোয়েটার আর অগোছালো চুল। সোফায় বসা, হাতের গিটারে টুংটাং। ‘এ আর এমন কী। ওর চেয়ে ভালো আমিও বাজাতে পারে। এমনকি ও তেমন সুন্দরীও নয়। দেখতে তো একেবারে গৃহকর্মীর মতো।’ সমবেতদের থেকে একজন নারী গড়গড় করে বলে গেলো। পুরুষরা বার্দোকে চোখ দিয়ে গিলছিলো ঠিকই কিন্তু চাপাহাসিতে ওরাও তাল মেলালো। প্রায় ত্রিশজন দর্শকের ভেতর কেবল আমরা দু-তিনজনই তার কমনীয়তার রেশ ধরতে পারছিলাম। তারপর তিনি গিটারে একটা চমৎকার ধ্রুপদি নাচের বাদন ধরলেন। ‘শি ক্যান ডান্স’— যার মোহনীয়তা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সবাইকে গ্রাস করে নিলো।

filmfree
ব্রিজিত বার্দো । ২৫ জুলাই ১৯৫৬

যখন এন্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান মুক্তি পেলো, যে চলচ্চিত্রটি বানাতে খরচ হয়েছিলো প্রায় একশো চল্লিশ মিলিয়ন ফ্রাঁ, সেটি ফ্রান্সে আয় করলো ষাট মিলিয়নেরও কম। ওদিকে আমেরিকায় ব্যবসা করলো প্রায় চল্লিশ লক্ষ ডলার! যা আড়াই হাজার ডলফিনের বিক্রয় মূল্যের সমান। ফলে রিনল্ট অটোমোবাইলসের বিভিন্ন গাড়ি রপ্তানির মতোই প্রয়োজনীয় রপ্তানীযোগ্য হয়ে উঠছেন বিবি [এখান হতে ব্রিজিত বার্দোকে আমরা প্রায়ই ‘বিবি’ নামে অভিহিত করবো]।


সমাজের উঁচুতলার মানুষেরা শরীরকে
পাপের ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেছে;
তাবৎ স্বপ্ন, নিখুঁত শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র
আর পুস্তককে অনিষ্টকর হিসেবে
চিহ্নিত করে বহ্নুৎসবে
মেতেছে– এসব তো
নতুন কিছু
নয়

আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি এক নতুন আরাধনা। সেরা তারকাদের সারিতে অধিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। যদিও, স্বদেশের মানুষরা বিবি’র কাছ থেকে নিজেদের এখনও দূরে দূরেই রাখছেন। এমন একটা সপ্তাহও যায় না, যেখানে তাকে ঘিরে কিছু লেখা, বলা ভালো তার সাম্প্রতিক প্রণয়-আখ্যান, তার মনমর্জির হালনাগাদ তথ্য কিংবা তার ব্যক্তিত্বের নতুন ব্যখ্যা হাজির করা হয় না; কিন্তু এসব খবরাখবর বা গাল-গপ্পের অর্ধেকই এককথায় অখাদ্য। ভক্তদের কাছ হতে ব্রিজিত দিনে গড়ে প্রায় তিনশো চিঠি পেয়ে থাকেন; ভক্তদের মধ্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, প্রতিদিনিই পত্রিকার সম্পাদকরা কোনো এক ক্ষুব্ধ মা কিংবা ধর্মীয় নেতা অথবা সামাজিক সংগঠনের দপ্তর হতে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে ভরা চিঠি পান। ধনীর দুলাল তিন অকালকুষ্মাণ্ড যুবক যেদিন ক্রোধোন্মত্ত হয়ে চলন্ত ট্রেনে এক ঘুমন্ত বৃদ্ধকে খুন করলো, সেদিনই শিক্ষক-অভিভাবকগোষ্ঠী এই কাণ্ডের প্রত্যক্ষ কারণ হিসেবে বিবি’কে অভিযুক্ত করে স্থানীয় নগরপিতার কাছে অভিযোগ দায়ের করলো। শুরু হলো অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যানএর বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ; প্রভাব গিয়ে পড়লো সরাসরি তরুণদের ওপর, বেপথু হতে লাগল ওরা। এতে আমি মোটেও অবাক হইনি; বিশ্বের অন্যান্য দেশেই নয়, এমনকি আমেরিকাতেও নীতি-নৈতিকতার ধুয়া তুলে তার চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সমাজের উঁচুতলার মানুষেরা শরীরকে পাপের ধারক হিসেবে চিহ্নিত করেছে; তাবৎ স্বপ্ন, নিখুঁত শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র আর পুস্তককে অনিষ্টকর হিসেবে চিহ্নিত করে বহ্নুৎসবে মেতেছে– এসব তো নতুন কিছু নয়।

filmfree
অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান

কিন্তু বিবি’র প্রতি ফরাসিদের আচরণ, তাদের জগদ্বিখ্যাত শিষ্টাচারকে মাথায় রেখে ভাবা যাবে না; বরং তাদের আচরণ বেশ বিদঘুটেই ছিলো। এই যেমন মার্টিন ক্যারল বক্স অফিসে হিট আখ্যায়িত সব চলচ্চিত্রেই নিজেকে অনাবৃত করছেন, অথচ সেটা নিয়ে কারো টুঁ শব্দটি নেই, অথচ যতো দোষ বিবি’র বেলায়! এককথায় তাকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে অধর্মের প্রতিমূর্তি হিসেবে। কেন এই দ্বৈততা? মার্ক আলেগ্রেত বা বিশেষ করে ভাদিমের [রজার ভাদিম] দ্বারাই কী এমন বিদ্বেষপূর্ণ আচরণের সুত্রপাত?


স্বপ্ন বোনার কারিগররা অড্রে হেপবার্ন,
ফ্রাংকুইস আরনল, মারিনা ভাদি,
লেসলি ক্যারন আর ব্রিজিত
বার্দোকে সাথী করে নাও
ভাসালেন, খুল্লমখুল্লা
দস্যিপনার
নাও

আমরা যদি বুঝতে চাই এই বিবি নামের নারীটি ঠিক কি উপস্থাপন করতে চাইছেন, তাহলে ব্রিজিত বার্দো নামের সেই নারী আসলে কেমন– সেটা জানা ততোটা প্রয়োজনীয় নয়। তাকে যারা প্রশংসা করেন বা যারা তার নিন্দুক, উভয় দলই পর্দায় তার উপস্থিতিকে যতোটা দারুণ কল্পনাশক্তি দিয়ে বুঝতে চান, ততোটাই ঠিক হাওয়ায় হৈচৈ করে প্রচার করেন। আমজনতার সামনে তার সরব উপস্থিতি, তার কিংবদন্তিতুল্য আখ্যান– এসবই তার ব্যক্তিজীবনকে ম্লান করে দিয়ে তাকে স্রেফ চলচ্চিত্রের একটি চরিত্র হিসেবেই গণ্য করে। আর এই কিংবদন্তি সেই পুরনো মিথেরই পুনরাবৃত্তি যাকে ভাদিম নতুন করে প্রাণ দিতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বেশ দৃঢ়সংকল্প নিয়ে ‘শাশ্বত নারী’র আধুনিক সংস্করণ হাজির করে এক নতুন ধারার ‘কামদ’ রূপ উপস্থাপন করলেন। এই ধারাটি এমন– যা কিছুসংখ্যক মানুষকে প্রলোভিত করে, পক্ষান্তরে কিছুসংখ্যক মানুষকে অভিঘাতে ফেলে দেয়। ‘ভালোবাসা’ ধারণাটিতে হয়তো মানুষের ঘনিষ্ঠতাকে প্রতিরোধ করা যেতে পারে, কামের পক্ষে তা সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যখন দুটি পৃথক লিঙ্গের উপস্থিতি সামাজিকভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন তা কমিয়ে আনার চেষ্টা করাই যায়। ত্রিশ ও চল্লিশের দশকের মাঝামাঝি এমতর ভাবনা দুটি ধারা উপহার দিয়েছে– রোমান্টিকতা এবং ভাবালুতা। মেয়েবন্ধুদের জায়গা করে নিলো খলনায়িকারা, জ্যঁ আর্থার যাদের দলনেতা হিসেবে সবচেয়ে যুতসই। যাইহোক, সাতচল্লিশে এসে বিশ্ব চলচ্চিত্র যখন খুবই হুমকির মুখে, নির্মাতারা পরিত্রাণ খুঁজতে গিয়ে, দর্শকের মন জয় করার আশায় রগরগে চলচ্চিত্র বানানোর দিকেই ঝুঁকলেন। ব্যাপারটা এমন এক সময়ে ঘটতে লাগলো, যখন নারীরা দিব্যি গাড়ী চালিয়ে বেড়াচ্ছে, শেয়ার বাজারে দর কষাকষি করছে পাল্লা দিয়ে, যখন নারীরা বিকিনি পড়ে হরহামেশাই বালিয়াড়িতে রৌদ্রস্নানে যাচ্ছে, যখন খলনায়িকা আর তার দুর্মর রহস্যকে ভেদ করার কোনো অভিসন্ধি কারুর মনে কাজ করছে না। চলচ্চিত্রগুলো বেশ স্থূল আবেদন নিয়ে হাজির হতে চেষ্টা করলো, শরীরের বাঁকে বাঁকে লেগে থাকা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টির মতো। আবেগীয় অভিনয় বা শাশ্বত কিংবা সহজ-স্বাভাবিক অভিনয় না করিয়ে তাদের দেহবল্লরী দেখানোর প্রতিই মনোযোগী হলেন নির্মাতারা। এদিক থেকে ব্যতিক্রম ছিলেন সোফিয়া লরেন, মেরিলিন মনেরো, লোলাব্রিজিদ– যারা এই স্রোতে গা ভাসাননি। যাইহোক, স্বপ্ন বোনার কারিগররা অড্রে হেপবার্ন, ফ্রাংকুইস আরনল, মারিনা ভাদি, লেসলি ক্যারন আর ব্রিজিত বার্দোকে সাথী করে নাও ভাসালেন, খুল্লমখুল্লা দস্যিপনার নাও। ভাদিম তার ডেঞ্জারাস কানেকশন চলচ্চিত্রের একটি চরিত্রে অভিনয় করালেন মাত্র চোদ্দ বছর বয়সের এক কিশোরীকে। সেই কিশোরী মন জয় করে নিলেন দর্শকদের। এমনকি আর্থার মিলারের অ্যা ভিউ ফ্রম দ্য ব্রিজ অপেরাতেও তিনি দুর্দান্ত অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, আমেরিকায়।

filmfree
ক্রেজি ফর লাভ

ইংল্যান্ড আর আমেরিকায় মাসের পর মাস সর্বাধিক বিক্রিত উপন্যাসের তালিকায় ছিলো নবোকভের লোলিতা, উপন্যাসটির গল্প এগিয়েছে চল্লিশ বছরে বয়সের এক পুরুষ এবং বারো বছরের এক পরীর মতো দেখতে মেয়ের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ক ঘিরে। আর এই পরীদের ভেতর সবচেয়ে দুর্দান্ত ছিলেন ব্রিজিত বার্দো। তার হালক-পাতলা অথচ ঋজু আর নৃত্যপর শরীর একদিক থেকে ভাবলে, দেখতে প্রায় উভলিঙ্গের মানুষের মতোই । নারীসুলভ গরিমা উদ্ভাসিত তার সৌরভে। কাঁধে ছড়ানো লম্বা ঢেউ খেলানো চুল; অথচ সেই চুলের প্রতি নেই অযাচিত ভ্রুক্ষেপ। ঠোঁটের রেখায় একরাশ ছেলেমানুষী লেগে আছে; অথচ যা চুমো পেতেও উদগ্র। উদোম পায়ে বেরিয়ে পরেন যখন-তখন, দামি জামা-জুতো, গয়না, সুগন্ধী, প্রসাধন– কোনোকিছুতেই মন ভজে না তার। যদিও তার পদক্ষেপ কামোদ্দীপক, এমনকি যেকোনো সাধু-সন্তও নিজ হৃদয় বিকিয়ে দিতে প্রস্তুত ব্রিজিতের একটিমাত্র নাচের মুদ্রার বিনিময়ে। প্রায়ই বলতে শোনা যায়, বিবি’র মুখাবয়বে কেবল একটি মাত্র মুখভঙ্গিই খেলা করে । হ্যাঁ, একথা সত্য, বাইরের আপাত-কঠিন দুনিয়াদারির ছাপ তাতে নেই; কিন্তু তাতে ব্যক্তিমনের ভেতরকার যে নৈরাজ্য– তা-ও তো প্রকাশ পায় না। অথচ এই বৈপরীত্যের হাওয়াই ব্রিজিত বার্দো। বিবিকে অভিজ্ঞতার নিক্তি দিয়ে মেপে দেখাটা মোটেও কাজের কিছু নয়। এমনকি লাভ ইজ মাই প্রফেশনএর মতো জীবন যদি তার হয়েও থাকে, তবে সেই জীবনও তাকে এমন অবিমিশ্র অভিজ্ঞতা দিয়েছে– যা থেকে কিছু শেখা দুরঅস্ত। তার জীবন স্মৃতিহীন, অতীতরহিত, আর এইসব উপেক্ষাকে ধন্যবাদ; কারণ, নিষ্ঠুর শৈশব তাতে তার অদ্ভূত সারল্যটাকেই বজায় রেখেছে।


চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি প্রকৃতির এক
বল্গা স্রোতের মতো হলেও, শিহরণ
জাগানিয়া বা বিপদজনক হলেও,
পুরুষ চরিত্ররা তাকে বাগে
এনেছে, পোষ মানিয়েছে
বারেবারেই

লম্বা সময় ধরে ব্রিজিতের চারপাশে যে প্রচারণার ডামাডোল, যে উপাখ্যান, তা যুগপৎভাবে তার ছেলেমানুষী মুখাবয়ব আর ঝুটঝামেলা পূর্ণ চরিত্রের জন্যই বিধৃত। ভাদিম তাকে ‘সৃষ্টির এক প্রপঞ্চ’ আখ্যা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন ‘ও তো অভিনয় করে না, ও কেবল ফ্রেমে উপস্থিত থাকে।’ ব্রিজিতও তাতে সায় দেন, ‘একদম ঠিক। অ্যান্ড দ্য গড ক্রিয়েটেড উইম্যান-এর দ্য জুলিয়েট একেবারেই আমার মতো। আমি যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই, তখন আমি খুব আমার হয়েই থাকি।’ চিরুনী ব্যবহারের কথা না ভাবতেই বলা হয়েছিলো ব্রিজিতকে; বরং তিনি যেন নিজের চুল হাতের আঙুলেই আঁচড়ে নেন। পরামর্শ ছিলো পৃথিবীর সকল নীতি-নৈতিকতা ভুলে থাকার। তার সাক্ষাৎকারগুলো তাকে একাধারে সহজাত ও অদ্ভূতুড়ে– উভয়রূপেই উপস্থাপন করে। ভাদিম আরও একটু এগিয়ে ছিলেন। তিনি বার্দোকে ‘উদ্ভটত্বের আকড়’ হিসেবে চিত্রিত করলেন। ভাদিম একবার বলেছিলেন, বিবি নাকি আঠারো বছর বয়েসেও মনে করতেন– ইঁদুরেরা ডিম পাড়ে; ডিম ফুটে ইঁদুরের বাচ্চা বেরোয়! তিনি ছিলেন দারুণ খামখেয়ালী আর কল্পনাপ্রবন। তার অভিনীত চলচ্চিত্র প্লিজ, মিস্টার বালজাক-এর প্রিমিয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছে সকল কলাকুশলী আর অতিথিরা, অপেক্ষা চলছে ব্রিজিতের। শেষমুহুর্তে বলে পাঠালেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। বিবি সহজাত প্রবৃত্তির এক প্রতিমূর্তি– যে প্রবৃত্তি তার সতত প্রণোদনা হতেই উদ্ভূত। একবার হঠাৎ করেই নিজের শোবার ঘরের সাজসজ্জা অপছন্দ লাগতে শুরু করলো, আর সঙ্গে সঙ্গেই দেয়ালের তাক-তুক নামিয়ে, আসবাবের রঙ পাল্টে নিলেন। চরম বদমেজাজি তিনি, দ্র্রুত নিজের অবস্থান পাল্টান, অপ্রতিরোধ্য; যদিও তার মুখাবয়বে শিশুসুলভ নির্মলতার ছোঁয়া, তবে সেই ছোঁয়ার কী রহস্য– তিনি তা কখনোই খোলাসা করেননি। ছিপছিপে গড়নের এক সৃষ্টি– যে আদল হতে নারীসুলভ ঐতিহ্যিকতা দুরে সরে থাকেনি। তার চিত্রনাট্যকাররা বারবার যেসব গল্প লিখেছেন, তাতেও এই গতানুগতিক ধারাটিই অক্ষুন্ন ছিলো। চলচ্চিত্রে তার উপস্থিতি প্রকৃতির এক বল্গা স্রোতের মতো হলেও, শিহরণ জাগানিয়া বা বিপদজনক হলেও, পুরুষ চরিত্ররা তাকে বাগে এনেছে, পোষ মানিয়েছে বারেবারেই। একাধারে দয়ালু, ভালো মনের মানুষ, প্রায় ছবিতেই তাকে পশুপ্রেমী রূপে দেখা গেছে। যদিওবা কাউকে তিনি আঘাত দিয়ে থাকেন, বুঝতে হবে, সেটা নিতান্তই তার অনিচ্ছাকৃত। তার চিরচঞ্চলতা আর তার আচরণগত ভুলচুককে ক্ষমার চোখেই দেখবো আমরা; কেননা, তিনি বয়সে তরুণ, পাশপাশি তার অতীতটাও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। জুলিয়েটের শৈশব ছিলো অসুখী। লাভ ইজ মাই প্রফেশন-এর ইয়েত্তে, সে-ও এই সমাজেরই বলি। যদি তাদের স্থান ছাইদানিতেই হয়, তাহলে বলবো, কেউ তাদের সঠিক পথটি বাৎলে দেয়নি; তবে কোনো এক পুরুষ, সত্যিকারের পুরুষই পারে তাদের পথ দেখাতে। জুলিয়েটের তরুণ স্বামী ঠিক করলো, সে তার সাথে চিরায়ত পুরুষের মতোই আচরণ করবে; ফলে সে জুলিয়েটকে কষে একটা চড়া লাগালো। সঙে সঙে লাইনে চলে এলো জুলিয়েট; চোখের পলকেই সে বদলে গেলো সুখী, অনুতপ্ত আর অনুগত এক স্ত্রী হিসেবে। ইয়েত্তে বেশ আনন্দচিত্তেই তার প্রেমিকপুরুষের চাহিদা মেনে নিতে রাজি হয়, যে, এখন হতে সে বিশ্বস্ত রইবে, তদুপরি বাকি জীবনে প্রেমিকের কথাই মেনে চলবে। কপাল জোরে, এইসব মধ্যবয়স্ক অভিজ্ঞ পুরুষরা যদি তার মুক্তি এনে দিতে পারতো!

filmfree
লাভ ইজ মাই প্রফেশন

বিবি ছিলেন ভাগ্যাহত, হারিয়ে যাওয়া এক শিশু– যার একজন পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন ছিলো, দরকার ছিলো একজন রক্ষকের। এই ক্লিশে ব্যাপারটি যে দরকারি তা বেশ ভালোমতেই বোঝা যাচ্ছে। তবে কি-না এটি পুং-শ্লাঘাকে অপমানে ডোবায় আর নারীকে আরও বিকশিত করে তোলে। কেউ কেউ হয়তো বিষয়টিকে সেকেলে বলবেন, একে সাহসিকতা পদবাচ্য হিসেবে মানবেন না। তবে দর্শকরা পরম-পুরুষের এই বিজয়ে আস্থা রাখেন না এবং এমতন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিও দৃঢ়ভাবে রচিত হয় না– যার কারণে ভাদিমের চলচ্চিত্র এবং ফরাসি আরেক পরিচালক অঁতাত লারা’র চলচ্চিত্র যথার্থরূপেই তুচ্ছ হয়ে তামাদি বনে যায় না। ফলে আমরা ধরে নিতে পারি, লিটল রাস্কল কোনোমতে উৎরে গেলেও, জুলিয়েট কখনোই একজন আদর্শ মা বা স্ত্রী হয়ে উঠতে পারে না। উপেক্ষা আর অনভিজ্ঞতা হয়তো প্রতিকারযোগ্য; কিন্তু বিবি শুধু অকৃত্রিমই নয়, বিপজ্জনকভাবে আন্তরিকও। একটি বেবি ডলের বিকৃতি মনষ্কতা হয়তো মনোঃচিকিৎসকদ্বারা নিরাময়যোগ্য; কিন্তু বিদ্রোহী এক মেয়ে আর তার অপমান জর্জর হৃদয়কে শান্ত করে তাকে জয় করার ভেতর নিশ্চয় কোনো ব্যাপার আছে।


আমরা তাকে খুঁজে পাই, মৃদুভাষ্যে, তার
দৃষ্টিকোণে, গাঢ় বেদনায়– বেঁচে থাকার
নেশায় বুঁদ, পরমের প্রতি আবেগ
আর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর
অস্তিত্ব স্বীকারের
ভেতর দিয়ে

দ্য বেয়ারফুট কনটেসায় আভা গার্দনার, গল্পে তার চরিত্রে এন্তার লাম্পট্য থাকা সত্ত্বেও, প্রতিষ্ঠিত সামাজিক মূল্যবোধকে সমঝে চলেছেন– আপন প্রবৃত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন, স্বীকার করেছেন যে তিনি ‘কাদামাটিতে হাঁটতে’ ভালোবাসেন। বিবি বিকৃতও নন, বিদ্রোহীও নন, পাপাত্মাও নন, কাজেই নৈতিকতাও তার ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনি। ভালো আর মন্দ– দুটি বিষয় দাবার এমনই ঘুঁটি, যা তিনি চালতেই চাননি কখনো। অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান-এ সেই বিবাহপরবর্তী ভোজসভার টেবিলে তার মুখাবয়বের উপর যে তীক্ষ্ণ আলো এসে পড়ে, তারচেয়ে তীব্র আলো আর হতেই পারে না। জুলিয়েট তার স্বামীর আহ্বানে সটান বিছানায় চলে আসে শুতে। একদঙ্গল অতিথি-ভরা হলরুমে, সমবেত সবাইকে হতচকিত করে দিয়ে তার আবির্ভাব ঘটে তোয়ালে জড়ানো গায়ে, ঠোঁটে নির্মল হাসি। অতিথিদিরে হা-দৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের নাকের ডগায় টপাটপ তুলে নেয় গলদা চিংড়ি, মুরগীর রান, ফল-ফলাদি, মদের বোতল। একইসঙ্গে তাচ্ছিল্য আর শান্ত-মেদুর ঢঙে সে বেরিয়ে যায় খাবারের প্লেট হাতে। সমবেতর মন্তব্যে তার থোড়াই পরোয়া। প্রচলিত শিষ্টাচারবোধকে আহত করা তার মোক্ষ ছিলো না কখনোই, স্বীয় অধিকার বিষয়েও সে সচেতন ছিলো না। সে তার প্রবণতারই অনুগামী ছিলো। ক্ষুধায় খাবার খাওয়ার মতো একই সরলতা নিয়ে সে সঙ্গমে মিলিত হয়। হিতোপদেশ ও গতানুগতিকতার চাইতে ইচ্ছা আর উপভোগই বরং তার কাছে শ্রেয়তর। অন্যের সমালোচনা সে মশগুল হয় না, সে যা করে তা অনেকটা ভিক্ষাদানের কাছাকাছি। আর এই ব্যাপারটি খুবই বিরক্তিকর, অন্তত পুরুষদের জন্য তো বটেই! সে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় না; উল্টে অকপট উত্তর নিয়ে হাজির হয়– যা হয়তো মহামারির মতোই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। নৈতিক বিচ্যুতি হয়তো পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, কিন্তু বিবির এমন চোখধাঁধানো সদগুণ হতে পরিত্রাণের উপায়– এই অকৃত্রিমতা? এই-ই তার আপাত সারকথা। কোনো কুতর্ক, কোনো বেপথু হাওয়া, কোনো প্রেম তার কাছ থেকে এই গুণ কেড়ে নিতে পারবে না। ভণ্ডামি আর তিরস্কারকে যিনি কেবল খারিজই করেন না, অনাস্থা রাখেন তাবৎ দূরদর্শিতা আর পূর্বানুমান আর হিসাবনিকাশে। তার কাছে, ভবিষ্যত হচ্ছে এমনসব আবিষ্কারের মতো যাতে তিনি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস স্থাপন করেন না। জুলিয়েট বলছে, “আমি এমনভাবে প্রতিটি মুহুর্ত বাঁচি, মনে হয় এটিই শেষ ‍মুহুর্ত”। ব্রিজিতও আমাদের আশ্বস্থ করেন, “আমি সবসময়ই প্রেমের ভেতর আছি, আমার মনে হয় এটা আমার জন্য চিরকালীন।” সময়কে প্রত্যাখ্যান করাটা শ্বাশতভাবে বাঁচার আরেকটি মোক্ষম উপায়। জেমস ডিনের প্রতি প্রশংসার ফল্গুধারা ছোটান তিনি। আমরা তাকে খুঁজে পাই, মৃদুভাষ্যে, তার দৃষ্টিকোণে, গাঢ় বেদনায়– বেঁচে থাকার নেশায় বুঁদ, পরমের প্রতি আবেগ আর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুর অস্তিত্ব স্বীকারের ভেতর দিয়ে।

filmfree
দ্য লাইট অ্যাক্রোস দ্য স্ট্রিট

ফলে ঐতিহ্য রক্ষার মহান দায় নিয়ে দলভারী প্রহরীরা বলে, “বিবি এই সমাজকে অনৈতিকতায় ভাসিয়ে দেওয়ার ঝর্ণাধারা।” সাদাসিধে কিংবা অচ্ছুৎ– উভয় নারীই পরম শান্তি অনুভব করে, যখন তারা মুখোমুখি হয় শাস্ত্রজ্ঞ ধ্বজাধারীদের কঠিন বৃত্তের সামনে, যে বৃত্ত সবসময়ই অপশক্তিদ্বারা চালিত হয়ে এসেছে। এরা একেকটা কুমির, গুণে গুণে সাবড়ে চলে অন্যেদের, নিঁখুত, নিষ্ঠুর, দুষ্টশক্তির আকড়। তাদের চিন্তার দৌড় এইটুকুই– একজন বাগদত্তা বা একজন স্ত্রী বা একজন উপপত্নী বা একজন নীপিড়িত মা, সবাই-ই অভিশপ্ত ডাইনির মতো। আর যদি কোনোভাবে এইসকল নারীদের গায়ে নিষ্পাপতার রঙ লাগে, তখন তারা ক্রোধোন্মত্ত হয়ে ওঠে। ‘ব্যাড উইম্যান’-এর কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না বিবি’র ভেতর। তার মুখাবয়বে সহজেই পাঠ করা যায় দয়ালুতা আর অকপটতা। তিনি কোনো দুরাত্মা নন, লোলুপও নন। লাভ ইজ মাই প্রফেশন–এ তিনি তার স্কার্টের গোছা উপরে তুলে ধরে বেশ স্থুল প্রস্তাবে গ্যাবিনের সাথে রফা করতে চান। কিন্তু তার এই নিস্ফল সারল্যেও একধরনের হতাশাবোধ টের পাই আমরা। তিনি স্নিগ্ধ কামনায় ফুটে ওঠা ফুল। এর ভেতর শয়তানি খুঁজে বের করা দুঃসাধ্য। কাজেই তিনি মনে করেব, স্বীয় সৌন্দর্য দ্বারাই নারীরা তাদের যাবতীয় হতাশা আর হুমকির মুখোমুখি হবে।


পুরুষরা তার কাছে
বস্তুর মতো, ঠিক
যেমন তিনি
পুরুষের
দৃষ্টিতে

পুরুষেরা বিবি’র মাদকতায় ডুবেছে, ভেসেছে; কিন্তু তার মানে এই নয়, ওরা তার প্রতি প্রসন্নও থেকেছে। ফরাসি পুরুষদের অধিকাংশই এই দাবি করে থাকে, যেসকল নারীরা ছল-চাতুরী জানে না বা করতে পারে না– তারা তাদের যৌন-আবেদন সহসাই খুঁইয়ে ফেলে। এইকথা মানলে, নারীদের পাৎলুন পরা মানেই হলো পুরুষদের যৌনতার গনগনে আগুনে জল ঢেলে দেওয়া। ব্রিজিত তাদের এই ধারণাকেও তুড়ি মেরে উড়িয়েছেন। কিন্তু পুরুষ জাতি আদতে অকৃতজ্ঞ; কেননা, ওরা প্রভূত্ব আর সবজান্তার যে ভাব ধরে থাকে, তার বাইরে যেতে চায় না কস্মিনকালেও। ‍আকর্ষণের যে চর্চা তিনি করে আসছেব, তা এককথায় অপ্রতিরোধ্য। আর জেনেশুনেই ওরা এই ফাঁদে পা দেয়। ব্যক্তিস্বাধীনতা আর টনটনে চেতনা তাদের অধিকার এবং সুবিধার জায়গা। মার্লেন যখন সংরক্ত দৃষ্টি মেলে মিহি রেশমি কাপড়ে মোড়া উরু যুগল প্রদর্শনের আয়োজন করে, তখন সে আসলে দর্শকদের কাছ হতে মজা লুটে নিতে চায়। বস্তুত তিনি কোন মজাই লুটতে চান না, তিনি তার পথে আগুয়ান। তার রক্তমাংসের শরীর কাউকে আসাড় করে তোলার জন্য নয়। তার পোশাকআশাকে অতি মনোযোগ দেওয়ার কিছু নেই। আর তিনি যখন মঞ্চে একটা একটা করে কাপড় খুলে নিজেকে নগ্ন করেন, তাতেও কোনো রহস্য লুকিয়ে থাকে না। তিনি কেবল তার শরীরটি প্রদর্শন করেন, যে শরীর খুব কমই স্থানুবৎ থেকেছে পর্দাজুড়ে, এরচেয়ে কম বা বেশি কিছু নয়। সে শরীর নাচে, হাঁটে, নড়েচড়ে। তার আবেদন জাদুময় নয়, তবে আগ্রাসী। প্রেমের খেলায় তিনি ঠিক ততোটাই শিকারী যতোটা তিনি নিজেই শিকার। পুরুষরা তার কাছে বস্তুর মতো, ঠিক যেমন তিনি পুরুষের দৃষ্টিতে। আর বিবি’র এই দৃষ্টিভঙ্গিই পুরুষের চক্ষুশূল, যা তাদের অহমকে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়।

filmfree
কনটেম্পট

লাতিন দেশসমূহে, যেখানে পুরুষদের দৃঢ় মনোভাব এই যে, নারীরা আর দশটা বস্তুর মতোই, সেখানে বিবির সহজাত সৌন্দর্য তাদের কাছে যেকোনো সম্ভাব্যসকল অবদমনের উপর হস্তক্ষেপের মতো। গয়না বা প্রসাধনী বা উঁচু হিলের জুতো বা কোমরবন্ধকে অবজ্ঞাভরে ছুঁড়ে ফেলার ভেতর দূরের কোনোও মায়ামূর্তি হিসেবে নিজেকে রূপান্তর করার যে অনীহা, এ তারই ফসল। তিনি নিজেকে পুরুষের সমকক্ষ ও বন্ধুস্থানীয় দাবী করেব, বুঝতে পারেন– নারী আর পুরুষের জৈবিক আকাঙ্ক্ষা ও আনন্দ একই। বিবি এদিক দিয়ে ‘ফ্রাঙ্কো একিন’-এর নায়িকাদের মতো, যদিও তিনি বলেন, তাদের সাথে নিজের তেমন একাত্মতা বোধ করেব না। এটি সম্ভবত এই জন্য যে, পর্দায় ওইসকল নায়িকাদের উপস্থিতি বেশ চিন্তাশীল। কিন্তু পুরুষরা বেশ অস্বস্তিতে পড়ে, যখন তাদের বাহুতে ঠাঁই পাওয়া রক্ত-মাংসের এক পুতুল সচেতনভাবে ওই পুরুষদেরই মাপজোক করে। একজন স্বাধীনচেতা নারী যেকোনো হালকা চালের নারীর বিপরীতমুখী হয়। ঘরহারা সামান্য এক বেশ্যার রূপে, বিভ্রান্তিতে ডুবে থাকা এক নারী রূপে, মনে হতে পারে বিবি সব পুরুষের জন্যই সহজলভ্য। তবুও, আপাত-স্ববিরোধী মনে হলেও, তিনি আদতে ভয়-জাগানিয়া। দামি পোশাক-আশাক আর সামাজিক প্রতিপত্তি তাকে রক্ষা করে না ঠিকই; কিন্তু তার গুমসা মুখাবয়বে, তার মজবুত আটোসাটো শরীরে একগুঁয়ে ধরনের কিছু একটা আছে। একবার এক ফরাসি পুরুষ আমাকে বললো, “আপনার আসলে বোঝা উচিত, যখন কোনো পুরুষের কাছে কোনো একজন নারীকে আকর্ষণীয় ঠেকে, তখন সে ওই নারীর পাছায় চিমটি কাটতে চাইবে।” একজন নারীর শরীরে, মনে এবং হৃদয়ে ঠিক কি ঘটছে, সেটাকে গ্রাহ্য না করে নিজের স্থুল ইচ্ছা চরিতার্থ করতে বিদ্বেষপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি করাটা যেকোনো নারীর কাছে ওই পুরুষটিকে নগণ্য করে তোলা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর বিবিও ফূর্তিবাজ সহজলভ্য নারীদের অন্তর্ভূক্ত নন, যে গুণটি পুরুষদেরকে তার সাথে এমনতর আচরণ করার অনুমতি দেবে। তাকে এমন মোটা দাগে দাগানোর কিছু নেই।

filmfree
কাম ড্যান্স উইথ মি

ব্রিজিতকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্সে ভিন্নতা দেখা যায়, এই ভিন্নতার সবচেয়ে লাগসই কারণ হলো, স্থুল-রসিকতার বেলায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের রুচিবোধ ফ্রান্সের পুরুষদের চেয়ে ভিন্নতর। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষরা চোখের সামনে নারীদের সম্মান জানানোর তাগিদে একটা পর্দা ঝুলিয়ে রাখেন। বিবি’র যৌনাবেদনের সহজাত যে গুণ, তা গোটা বিশ্বে তো বটেই, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইতিবাচকরূপে সমাদৃত হয়েছে, স্বীকৃত হয়েছে দীর্ঘসময়। তবুও সুনির্দিষ্ট দুয়েকটি কারণে ‘আসল নারী’ হয়ে উঠতে বিবি-বিষয়ক বিশ্লেষণ জারি ছিলো যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের মনে। মানে, পথটা ওখানেও ততো সুগম ছিলো না।


বেশিরভাগ ফরাসি পুরুষ তুরীয় আনন্দকে
সাথী করে কুহক হাওয়ায় ভাসার
খায়েশে অত্যুৎসাহী থাকে। কিন্তু
ব্রিজিতকে সঙ্গী করে তারা
বেশিদূর উড়তে
পারে না

বিবি তার দর্শকদেরকে হয়তো বিরক্তিতে ভরিয়ে তুলেছেব কখনো সখনো, তাদের তীব্র কৌতুকানুভূতিতে নিরুৎসাহের জল ঢেলে দিয়েছেব মাঝেমধ্যে হলেও, তবু নিজের আদর্শ হতে সরেননি একচুলও। গ্রিটা গার্বোকে একসময় ‘ঐশ্বরিক’ অভিধা দেওয়া হয়েছিলো, সেই তুলনায় ব্রিজিত নিতান্তই মাটির প্রতিমা। গার্বোর মুখাবয়বে এমন একটা নির্জনতা– ফাঁকা আবহ ধরা থাকতো, যেখানে যেকোনো কিছু ভেবে নেওয়ার ফুরসত পেতো দর্শক; অন্যদিকে বার্দোর মুখাবয়ব হতে কিছু পাঠোদ্ধার করা দুষ্কর। ব্যাপারটা আসলেই এমন। বাস্তবতার সহজসরল উপস্থিতি এমনই। অপহৃত কল্পনা আর মাটিবর্তী স্বপ্ন– এই দুয়ের ভেতর ক্রমাগত হোঁচট খাওয়ার মতোই ব্যাপার আর-কি! বেশিরভাগ ফরাসি পুরুষ তুরীয় আনন্দকে সাথী করে কুহক হাওয়ায় ভাসার খায়েশে অত্যুৎসাহী থাকে। কিন্তু ব্রিজিতকে সঙ্গী করে তারা বেশিদূর উড়তে পারে না। তারা তাদের কুরূচিকে স্বীকার করে নিয়ে, সেই শরীর, সেই উরু, স্তন, পাছা– এসবের প্রতি যে দুর্মর লোভ, তা জারি রাখে। অবশ্য অধিকাংশ মানুষই স্বীয় যৌনতার শক্তিকে ঠিকঠাক চিনে উঠতে এবং সেটাকে একটি সীমানায় আটকে রাখতে জানে না। আর কেউ যদি সেটার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ও, তখন এরা চটজলদি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আধ্যাত্মিক প্রেক্ষাপটের ঘেরাটোপে বন্দি এক সমাজে, বিবি’র উপস্থিতি নিঁখুত বস্তুবাদী আর নৈমিত্তিক।

filmfree
দ্য ফিমেইল

ভালোবাসার মিথ্যে ফাঁদ এমন কাব্যিক ছদ্মবেশ নিয়ে এই গদ্যে হাজির রয়েছে, এই গদ্যের রচয়িতা হিসেবে নিজেকে বেশ মন্দ্র, বেশ সুখী মনে হচ্ছে আমার। যৌনাকাঙ্ক্ষাকে মর্ত্যে নামিয়ে আনার ভাদিম-কৃত এই চেষ্টাকে আমি স্বীকার করে নিচ্ছি। তবুও একটা ব্যাপারে আমি তাকে দোষী ঠাওরাবো, আর সেটা হলো– ওই যৌনাকাঙ্ক্ষাকে যতদূর সম্ভব মনুষ্যোচিত বৈশিষ্ট্য হতে বেপথু করা প্রসঙ্গে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ‘মানবীয় গুণাবলী’ তার গুরুত্ব হারিয়েছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি একে অধস্তন বানিয়ে ছেড়েছে এবং কালের একটি উল্লেখযোগ্য নিয়ামক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। পুরুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ, তার পরিধান, তার অনুষঙ্গ ইত্যাদি তাকে প্রায়োগিক যুক্তিবাদিতার প্রতি ঝুঁকিয়েছে। পুরুষ নিজেকে বিবেচনা করে রাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা শিক্ষক, একজন প্রচারক, সামরিক ব্যক্তি, এমনকি মগজ ধোলাইকারী রূপে; তারা মনে করে মহামহিম বিশ্বের সকল কর্মকাণ্ডকে তারা নিপুণভাবে পরিচালিত করবে। ফ্রান্সে শিল্প-সাহিত্যপাঠের এমন একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে এসকল ধারণার প্রতিফলন বিদ্যমান। আমাদের সকল প্রচেষ্টাই মানুষের জন্য সম্ভাব্য একটি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে বদ্ধপরিকর, এমন  মহাবিশ্ব– যা এর খণ্ডাংশ ও পৃষ্ঠতল, আলো ও ছায়া, স্থান ও কালের খেলা হ্রাসে নিত্য ক্রিয়াশীল; আর এক্ষেত্রে বিবিধ চরিত্র এবং তাদের মধ্যেকার সম্পর্কটি পটভূমিতে স্থান পায়, এমনকি তা সম্পূর্ণভাবে খারিজও হতে পারে।

filmfree
ফেমাস লাভ অ্যাফেয়ারস

এই তালাশ কেবলমাত্র ছোটখাটো কিছু উদ্যোগের নিমিত্তে। নিশ্চিতভাবেই এটি ভাদিমকে অনুপ্রাণিত করেনি; তবে, তিনিও পৃথিবীটাকে বেশ ছোট করেই এঁকেছেন, শরীর বা এমনতর বিষয়গুলোকে শুধুমাত্র তাৎক্ষণিক উপযোগিতার মাপকাঠিতে বর্ণনা করেছেন। বাস্তব জীবনে এবং ভালো কোনো উপন্যাসে বা চলচ্চিত্রে, কোনো স্বতন্ত্র ব্যক্তিকে কেবল তার যৌনাচরণ দিয়ে বিবৃত করা হয় না। সবারই আপনাপন ইতিহাস রয়েছে। তাছাড়া নারী বা পুরুষের যৌনাকাঙ্ক্ষা নিঃসন্দেহে পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংযুক্ত। বা এমনও হতে পারে, পরিস্থিতি তাদের সেদিকে ধাবিত করে। আফ্রিকান কুইন চলচ্চিত্রে হামফ্রে বোগার্ট এবং ক্যাথরিন হেপবার্ন দুজন ক্ষয়াটে বুড়োর চরিত্রে রূপদান করেন, যেখানে উভয়ের কামনা জেগে ওঠে কেবল হাতের স্পর্শে। যখন বোগার্ট প্রথমবারের মতো ক্যাথরিনের কাধে হাত রাখেন, তখন ক্যাথরিনের শরীর কেঁপে ওঠে, দৃষ্টিতে ধরা পড়ে অবরুদ্ধ কামনার ছায়া। দর্শক বুঝতে পারেন, এই যে দুজন নারী-পুরুষ বা দুটি চরিত্র কীভাবে একে অপরের অনুভবকে ছুঁয়ে গেছেন। কিন্ত তরুণ, যৌবনবেগে উচ্ছ্বল নায়ক-নায়িকার ক্ষেত্রে এই দৃশ্য ধোপে টেকে না; দর্শক সেই চরিত্র দুটোর উচ্ছ্বলতাকে পর্দায় দেখতে চান। ফলে এইক্ষেত্রে লাভালাভের বিষয়টি মুখ্য। উদাহরণ হিসেবে, ইঙ্গমার বার্গম্যানের সমারলেক-এ ছন্দোবদ্ধ যে দৃশ্যরাজি, তা পূর্বনির্ধারিত নয়। ফলে আমরা দেখতে পাই, দুজন কিশোর-কিশোরীর আনন্দ অবগাহন। কিশোরীটি আমাদের আগ্রহকে উস্কে দেয়, তার বয়সোচিত চপলতায়-আনন্দে আমাদের শামিল করে। পর্দায় তার উপস্থিতি একজন ষোল বছরের কিশোরী হিসেবে, যার সামনে পড়ে রয়েছে অনাগত ভবিষ্যৎ। তার চারপাশে অবারিত যে ভূ-দৃশ্য– তা কেবল দৃশ্যকল্পই নয়, বরং তা আমাদের সাথে ওই কিশোরীর যোগাযোগের মাধ্যমও বটে। এসবই আমরা তার চোখ দিয়ে দেখি। আমরাও তার সাথে শামিল হই জলের কোলে, ঝকঝকে রাতের আকাশে। তার সকল আবেগ আমাদের হয়ে ওঠে, আমাদের আবেগ তার দিকে ছুটে যায় লহমায়। প্রেমাতুর স্পর্শ, আলিঙ্গন, কথামালা– বার্গম্যান যা হাজির করেছেন, তা অ্যান্ড দ্য গড ক্রিয়েটেড উইম্যান-এর জুলিয়েটকৃত অনৈতিকতার ধারণা হতে একেবারেই ভিন্ন। এই দুই প্রেমপিয়াসী শৈশব থেকেই একে অপরকে জুড়ে আছে। তাই বিয়ে-থা বা পাপ-অপাপ– এরকম কিছু তাদের ভেতর কোনো অনুরণন তোলে না। ওরা দ্বিধাহীন এগোয় মোহময় আর প্রশান্তিকর আলিঙ্গনের পথে। আর তাদের দুঃসাহসিক, সেই সাথে নিঁখুত বিজয় তাই আমাদের অন্যকিছু না ভাবিয়ে স্বর্গীয় কোনো কাজ সম্পাদনের মতোই অনুভব দেয়। দর্শকরা এতে দোনামোনা করেন না; আঁৎকে না উঠে বরং প্রেমিকদ্বয়ের তীব্র সুখানুভূতিকে ধরতে চেষ্টা করেন।


চলচ্চিত্রটির শুরুর দিকে যে নারীকে
দেখে তারা চমকিত হয়েছিলেন, তা
কিছুদূর গিয়ে সেই নারীকে
রৌদ্রস্নাত দিনে নগ্ন দেখার
মধ্য দিয়ে মামুলিতে
রূপ নেয়

আমি যেদিন প্রেক্ষাগৃহে অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান দেখতে যাই, দেখেছি বেশ কয়েকটি দৃশ্যে এসে দর্শকদের অনেকেই হেসে কুটিপাটি হচ্ছেব। কেন? কারণ ভাদিম মানুষের কুকর্মের চিরস্থায়ী যে প্রবৃত্তি, তাকে আকর্ষণ করতে পারেননি। তিনি কেবল যৌনতাকে প্রদর্শন করেছেন, আর ওই দর্শকরা তা দেখে বিপুল আনন্দ পেয়েছেন। কেননা, তারা নিজেদেরকে কখনোই পর্দায় এইরূপে দেখতে পাবেন না। অবশ্য তা তাদের এই অস্বস্তিকে অংশত ন্যাযতা দান করেছে। চলচ্চিত্রটির শুরুর দিকে যে নারীকে দেখে তারা চমকিত হয়েছিলেন, তা কিছুদূর গিয়ে সেই নারীকে রৌদ্রস্নাত দিনে নগ্ন দেখার মধ্য দিয়ে মামুলিতে রূপ নেয়। তখন সেই শরীর অন্য যেকোনো নারী-শরীরের মতোই ঠেকে। গল্প এগুতে এগুতে সেই নারী তাদের জন্য ‘বিশেষ’ কোনো নারী হয়ে ওঠে না।

filmfree
ভিভা মারিয়া!

অকপটভাবে প্ররোচনা আর গতানুগতিকতার এই যে মিশেল আমাদের পাতে তুলে দিলেন ভাদিম, তা দর্শকদের এই গল্পের ফাঁদে পড়ার মতো প্রলুব্ধ করতে পারে না। আর চরিত্রগুলোকেও এমন করে চিত্রায়িত করা হয়েছে যেন ওরা পরোক্ষভাবে এর সঙ্গে যুক্ত। ফলে আমার মনে হয়েছে, বিবি’র চরিত্রটি বেশকিছু অভিপ্রায়ের ভারে জবুথবু। ধারণা করি, ভাদিম চেয়েছেন এর মাধ্যমে দর্শক যেন চরিত্রটির বাস্তবতা হৃদয়ঙ্গম করতে পারে। পাশাপাশি সেন্ট ট্রোপেজ শহরের সাথে সেই শহরে বাস করা চরিত্রদের [চলচ্চিত্রের চরিত্র] ঘনিষ্ঠ যোগাযোগও স্থাপন হতে দেখি না। দর্শকদের কাছে ব্যাপারটি একেবারেই আবেদনহীন। সমারলেক-এ আমরা যে পৃথিবীর দেখা পাই, তাতে প্রেমিকদ্বয়ের বিভ্রান্তি, তাদের শংসয়াকুল কামনা আর আনন্দের প্রতিফলন দেখি। রাতের বেলায় নির্মলপ্রাণ এক নৌকা ভ্রমনে বেরুনো যুগলের মুখাবয়বেও ধরা পরে কামনার অর্থবহ আলো, যেনো এই আলো-আধারির চলনই বলে দিচ্ছে সব। ওদিকে ভাদিমের চলচ্চিত্রে এই একই পৃথিবী গড়হাজির। ছোপ ছোপ মিথ্যা রঙের পটভূমিকায় তিনি কেবল চৌকষ কিছু দৃশ্য ধরেছেন; স্ট্রিপটিজ, উন্মাতাল যৌনমিলন, দুর্ধর্ষ কিছু দৃশ্য, এই-ই তো। আর এসবই বিবির নারীসুলভ আগ্রাসী ভাবকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর দর্শকদেরও তাতে করে অলীক পৃথিবীর দিকে টেনে নেওয়ার কাজটা সমাধা হয় না।

জনৈক চলচ্চিত্র সমালোচক লিখেছেন, “পর্দায় দেখা বিবি’র চরিত্রগুলোর যৌনাবেদন এতই আবেগবর্জিত যা কেবল লাতিন আমেরিকার দর্শকদেরই তৃপ্ত করতে পারে।” এই যে মূল্যায়ন, এতে বিবি’র চাইতেও দোষী ভাদিম। ভাদিমের সেই নিরীক্ষাধর্মী আর অনুবর্তী বিমূর্ত ভাবধারার ফসল, যেমনটি আগেও বলেছি, দর্শকদের গুপ্ত আনন্দের স্রোতে ভাসায়। যে লালসা চরিতার্থ হয় ‘নীল ছবি’ বা যৌনমিলনের স্থিরচিত্র বা ক্লাবে গিয়ে উলঙ্গ নাচ দেখার মধ্য দিয়ে, সেই একই বাসনা নিয়েই তারা পেক্ষাগৃহে ঢোকে। এই ভাবনাটা বেশ অসোয়াস্তির। এসব ক্ষেত্রে দর্শকদের মগজও মাঝে মধ্যে বিগড়ে যায়। কেননা, ঠাণ্ডামাথায় চোখের সামনে পর্দাজুড়ে ঘটে চলা এমন রগরগে বিষয় হজম করা চাট্টিখানি কথা নয়। বিবি যখন নাচতে গিয়ে তার বিখ্যাত ঠমকগুলো দেখান, তখন কারো ভাবনায় ‘জুলিয়েট’ থাকে না। অথচ এ-তো সেই বিবিই, যিনি নিজেকে প্রদর্শন করছেন। আর এখানে তিনি একলা-একা, সেই স্ট্রিপটিজের মঞ্চের নগ্ন মেয়েটির মতো একা । তিনি  প্রতিটি দর্শকের কাছে ছুড়ে দিচ্ছেন নিজেকে। কিন্তু এই যে নিবেদন তা প্রতারণাপূর্ণ; কারণ, যে দর্শক পর্দায় তাকে উপভোগ করছে সে জানে, এই তন্বী-তরুণী বিখ্যাত, ধনী, স্তাবকের দল ঘিরে থাকে একে, আর তাকে কখনো ধরা-ছোঁয়া যাবে না, নিশ্চিতভাবেই। ফলে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ওরা তাকে রাস্তার মেয়েছেলে ভাবে এবং সেইহেতু তাকে যতোটা নীচে নামানো সম্ভব নামায়।

filmfree
বাবেত্তে গৌজ টু ওয়ার

কিন্তু এ ধরনের নিন্দামন্দ লাভ ইজ মাই প্রফেশন-এর ব্রিজিতকে দেখানো সম্ভবপর নয়। কেননা এই চলচ্চিত্রে বার্দো তার সর্বোচ্চ মেধা প্রদর্শন করেছেন। অঁতাত-লারা’র পরিচালনা, পিয়েরে বোস্ত এবং অউরেঞ্চের দৃশ্যকল্প আর সংলাপ, গ্যাবিনের মেধাবী অভিনয়– সবমিলে জমাটি কিছু সময় দর্শককে টেনে রেখেছিলো প্রেক্ষাগৃহে। আর এই দলের সাথে যুক্ত হয়ে বিবি তার পক্ষে যতদূর সম্ভব বিশ্বাসযোগ্য অভিনয় উপহার দিয়েছেন। কিন্তু তার নৈতিকতার যে খ্যাতি [বা কুখ্যাতি]– তা এই চলচ্চিত্রের জন্য ততোটা কাজে লাগেনি। চলচ্চিত্রটি ক্রুদ্ধ প্রতিবাদের ঝড়ের মুখে পড়ে, বস্তুত চলচ্চিত্রটি তার আগের অভিনীত অন্য যেকোনো ছবির চাইতেও প্রবলভাবে সামাজিক অনুশাসনকে আঘাত করে। ইয়েত্তে, চলচ্চিত্রটির নৈতিকতাবর্জিত নায়িকা, মূলত প্রগতিবাদী। নিঃস্পৃহতা নিয়ে তিনি নিজেকে বিকিয়ে দেন, যেকোনো বুড়ো হাবড়ার প্রতি হামলে পড়তেও তিনি দ্বিধায় ভোগেন না। এক তাবড় উকিলকে তিনি গোপন আমন্ত্রণ জানান, যা সেই উকিলকে মানসম্মানের ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। কোনো প্রেমবোধ ছাড়াই তিনি তার শরীরটা সঁপে দেন। তারপর তিনি ওই উকিলের প্রেমে পড়ে যান, তাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন, ফের তাকে নিজের বিশ্বাসঘাতকতার কথা উচ্চকণ্ঠে জানানও। তিনি এ-ও জানান, ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকবার নিজের গর্ভপাত ঘটিয়েছেন।


যারা বিবিকে কাছ থেকে চেনে-জানে,
তারা তার সৌহার্দপূর্ণ প্রবণতার সাথে
পরিচিতি, তার সহজাত দয়ালুতা
আর যৌবনদীপ্ত সতেজতার
তারিফ করে

যাইহোক, যদিও এই পরিস্থিতি কিছু সম্ভাব্য কথোপকথনের দিকে ইঙ্গিত করে, তবে তার এমনতর আচরণ বা তাকে যে এভাবে প্রদর্শিত করা হলো– তা অনিচ্ছাকৃত নয়। সত্যটা আমরা জানি। তিনি তার অভিপ্রায় লুকোননি। যা তিনি সত্য হিসেবে জেনে এসেছেন, তার সাথে তিনি কখনো বিরোধে যাননি। চরিত্রটির তার সমস্ত অকৃত্রিমতা নিয়ে তার প্রেমিক পুরুষকে সংক্রামকব্যধির মতোই গ্রাস করে। জয় করে। চলচ্চিত্রটির গল্পকার ভাদিমের চরিত্রটিকেই এখানে বহাল রাখতে চেয়েছেন। তবে তারা চরিত্রটিকে বেশ বিধ্বংসী রূপেই এঁকেছেন। ধরুন, যদি এমন কেউ থাকে, যে সমাজকেই বুড়ো আঙুল দেখাতে জানে বা নিজেকেই সমাজের বাইরে সরিয়ে নেয়, তাদের ছাড়া বাকিদের পক্ষে এই কলুষিত সমাজে নিখাঁদ হওয়াটা অসম্ভব। কিন্তু এই চরিত্রটি এখন স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। বিবি সম্ভবত বেশ ভালোমতোই বুঝেছেন, ফ্রান্সে তার অকুস্থলটি নাগালের বাইরেই। ব্রিজিতকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের দায়ে ভাদিম এখানে অভিযুক্ত আর ব্যাপারটি মিথ্যেও নয়। যারা বিবিকে কাছ থেকে চেনে-জানে, তারা তার সৌহার্দপূর্ণ প্রবণতার সাথে পরিচিতি, তার সহজাত দয়ালুতা আর যৌবনদীপ্ত সতেজতার তারিফ করে। তিনি বোকাসোকা নন, তার মাথাও বিগড়ানো নয়, আর তার সহজাত প্রবৃত্তি মোটেও লোক দেখানো অভিনয় নয়। আজকাল প্রচুর প্রবন্ধ লেখাজোকা হচ্ছে, সেখানে বিবিকে আবিষ্কারের নাম দিয়ে চটকদার শিরোনাম দেওয়া হচ্ছে; যেমন– ‘আসল ব্রিজিত’, ‘আতশী কাঁচে দেখা বার্দো’ ‘বিবির যতো সত্যকাহন’। আমি বলছি, এসবের চাইতেও বিবি অনবদ্য। আমরা বরাবর বলে এসেছি, ব্রিজিত কেবলই একজন সাধারণ নারী। তিনি প্রাণীদের অসম্ভব ভালোবাসেন, নিজ মায়ের প্রতি তার দারুণ ভালোবাসা। বন্ধুদের প্রতি তিনি নিবেদিতপ্রাণ, আতিথেয়তার জন্য তার প্রাণ কাঁদে, তিনি নিজের দৈন্যতা বুঝতে পারেন, নিজেই নিজেকে সংশোধনে উদ্যোগী হন। তার যে বিচ্যুতি, সেটির পেছনে কিছু কারণ বর্তমান : হঠাৎ পাওয়া যশ আর সুপ্রসন্নভাগ্য– যা তার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে; কিন্তু তিনি তার নিজের হুঁশ ফিরে পাচ্ছেন। আমরা দেখতেও পাচ্ছি, তিনি সংশোধনের পথে কিছুদূর এগিয়েছেন। এসব ঝুটঝামেলা একজন উঠতি তারকার জীবনে ঘটেই থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিয়ে আর মাতৃত্ব– এসব থেকে নিদান পাইয়ে দেয় তারকাদের।

filmfree
নটি গার্ল

মাঝে-মধ্যে ঝোঁক চাপলে ব্রিজিত বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা বলেন। অন্যদিকে, প্রায়ই তিনি দেশের প্রতি তার ভালবাসার কথা জানান দেন, গ্রামে গিয়ে তিনি একটি খামার গড়ার স্বপ্নও দেখেন। ফ্রান্সে গবাদী পশুর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন মানে উত্তম নৈতিকতা প্রদর্শন। গ্যাবিন আমজনতার সহমর্মিতা পেতে, মন জয় করতে ঘোষণা দেন– “একটি গরুও খ্যাতির চাইতে ঢের প্রকৃত সত্তা।” আজকাল তো তারকারা তাদের গৃহপালিত মুরগীকে খুঁদকুড়ো দিচ্ছেন বা বাগানে মাটি খুঁড়ছেন– এমনসব ছবি তোলার হিড়িক পড়েছে। সমাজের সচেতন মানুষদের মাটিবর্তী থাকার এই যে আবেগ, আমরা আশ্বস্থ হতে পারি, ব্রিজিতও সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছেন। বাজারে কোন পণ্যটির দাম কতো– তা বিবি ভালো করেই জানেন। ফলে নিজের ব্যাক্তিগত রাঁধুনির সওদাপাতি আর বাজারখরচার ব্যাপারে তিনি সবসময়ই সজাগ। শেয়ার বাজারে শেয়ারের দাম ওঠা-নামায় তার খোঁজখবর একেবারে টনটনে এবং তার সহকারীদের এই বিষয়ে সবসময়ই নানা তথ্য-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। একবার এক সরকারি কর্তাব্যাক্তিদের সাথে মধ্যাহ্নভোজের সময় ফ্রান্সের জনৈক ব্যাংক পরিচালক বিবি’র ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা দেখে যাকে বলে স্তব্ধ হয়ে যান।

যা-ই হোক; স্ত্রী কিংবা মা, মাঠের কিষাণী, ব্যবসায় উদ্যমী নারী, গির্জার নান– বিবি এইসব চরিত্রের যেকোনো একটিকে হয়তো বেছে নিতে পারেন। কিন্তু একটি বিষয় নিশ্চিত : পর্দায় স্বীয় উপস্থিতিকে তিনি বদলাতে শুরু করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে যাচ্ছে তাঁর বেবেত্তে গৌজ টু ওয়ার চলচ্চিত্রটি। যথারীতি এই চলচ্চিত্রেও নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। তবে এই চরিত্র্রের নারীটি পর্দায় বেশ প্রতিবাদমুখর। এই চলচ্চিত্রে তার তথাকথিত কামোদ্দীপক শরীর সামরিক উর্দিতে ঢাকা থাকবে; চরিত্রটি আচরণ করবে যথেষ্ট শালীনতার সাথে। তিনি ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন, “আমি অনূর্ধ্ব ষোল বছরের সব দর্শককে অনুরোধ করছি প্রেক্ষাগৃহে আসার জন্য, তারা যেনো এই চলচ্চিত্রটিতে আমার অভিনয় মনোযোগ দিয়ে দেখে।” চলচ্চিত্রটি শেষ হবে যে দৃশ্যটির মাধ্যমে, তা একটি সামরিক কুচকাওয়াজের, যেখানে দেখা যাবে বেবেত্তোকে তুমুল করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে জেনারেল দে গল হিসেবে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে।


“ব্রিজিত এই সময়ের অনৈতিকতার সাক্ষাৎ-প্রতিমূর্তি”
–এই বাক্য আওড়ানো মানেই হলো বিবি তার
চলচ্চিত্রগুলোয় যেসব চরিত্রে অভিনয়
করেছেন, তা লোকাচারে সেই অনুচ্চার্য
বিষয়গুলোর প্রতি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে
দিয়েছে– যেসকল লোকাচার দীর্ঘ
সময় ধরে সমাজে জেঁকে
বসে আছে

রূপান্তরিত হওয়াটা কি নিশ্চিত? যদি হয়, তাহলে এমন কিছু মানুষ তখনও রয়ে যাবে, যারা বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করবে। তার কারা? তারা হলো পুরনো ধ্যান-ধারণা আকড়ে ধরে থাকা আধুনিক মানুষ। যারা গতানুগতিকতার দোহাই পারতে পারঙ্গম। তবে এটা ভাবাও বেশ সংকীর্ণমনের পরিচয় দেওয়া হবে, ভিন্ন ভিন্ন দুটি প্রজন্মের মধ্যে বিবি-বিষয়ক কোনো দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। আর যদি দ্বন্দ্বের ব্যাপারটা বিরাজ করেই, তবে তা হবে সেই দুটি বিষয় সাপেক্ষে– যেখানে একদল চায় লোকাচারকে পোক্ত করতে, সুসংহত রাখতে; আর আরেক দল চায় বিষয়আশয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হতে দেওয়াটাই উত্তম। “ব্রিজিত এই সময়ের অনৈতিকতার সাক্ষাৎ-প্রতিমূর্তি”– এই বাক্য আওড়ানো মানেই হলো বিবি তার চলচ্চিত্রগুলোয় যেসব চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তা লোকাচারে সেই অনুচ্চার্য বিষয়গুলোর প্রতি কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে– যেসকল লোকাচার দীর্ঘ সময় ধরে সমাজে জেঁকে বসে আছে।

filmfree
দ্য নাইট হেভেন ফেল

বিশেষ করে ওইসব রীতিনীতি যা নারীর যৌনস্বাধীনতার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। পুরুষের ওপর নারীর নির্ভরশীলতার ব্যাপারটি ফ্রান্সে এখনও ধর্মীয় নানা আচারের মতোই অবশ্যপালনীয়। আমেরিকায় নারীর যৌন স্বাধীনতার বিষয়টি এখনও প্রাচীনধর্মী হলেও আশার কথা হলো, তারা তা তাত্ত্বিকভাবে মেনে নিয়েছে। এবং সেখানে বিবি’র পর্দায় উপস্থিতিকে গা ঘিনঘিনে ব্যাপার হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে না। বিবি একবার বলেছিলো, “ভালোবাসায় আমি কোনো ভণ্ডামি চাই না, কোনো আলাৎপালাৎ চাই না।” প্রেম আর কামুকতা বিষয়ে যে অমূলক অনুভূতি তার ব্যাপ্তি এতটাই, সমাজে এর প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, সেটা আমাদের ক্ষুদ্র চিন্তার বাইরে। একটি অনুল্লেখ্য বিশ্বাসকেও যদি তা ছুঁয়ে যায়, তাহলে অন্যান্য বিশ্বাসগুলোও তখন হুমকির মুখে পড়ে যায়। একটি আপাত-নির্বিরোধ কটাক্ষ, চাই সে তেমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না হলেও, এমন স্ফুলিঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে– যা দাউ দাউ আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে চারপাশে, পুড়িয়ে ছাই করে দিতে পারে সমস্ত ছদ্মবেশি বাস্তবতা।

শিশুরা চিরকালই শুনে এসেছে ‘কেন’ ও ‘কেন নয়’ গোছের কথাগুলো। তাদেরকে সবসময় চুপ থাকতে বলা হয়। ব্রিজিতের দৃষ্টি, তার হাসি, তার উপস্থিতি… এসবই একে অপরকে প্ররোচিত করে ‘কেন’ আর ‘কেন নয়’-এ। অনুচ্চারে ব্রিজিত যে প্রশ্নগুলো ছুড়ে দিয়েছেন, তা কি তাদের শান্ত করবে? বা বার্দোও কি এমনি এমনি ছেদো কথার সাথে সম্মত হবেন? আমার ধারণা, ঘৃণার যে দাবানল ব্রিজিত জ্বালিয়েছেন তা নির্বাপিত হবে; তবে ততদিনে কারুর জন্য আর কিছু দেবার মতো রসদ তার কাছে মজুদ থাকবে না হয়তো। আমি আশা করি, স্বস্তা জনপ্রিয়তার কাছে তিনি নিজেকে ফুরিয়ে ফেলবেন না। আমি আশা করি, নিজের সামান্যতম বদল না ঘটিয়েই তিনি একদিন পূর্ণবিকশিত হবেন।


প্রথম প্রকাশ [বাংলা] • সিল্করুট ঈদসংখ্যা ২০১৮ । বণিক বার্তা । জাতীয় দৈনিক, বাংলাদেশ
মূল গ্রন্থ [ইংরেজি অনুবাদ] • ব্রিজিত বার্দো অ্যান্ড দ্য লোলিতা সিন্ড্রম/ সিমন দ্য বুভোয়া । ১৯৫৯
অনুবাদকের অনুমতিক্রমে পুনঃপ্রকাশিত

ব্রিজিত বার্দোব্রিজিত বার্দো ফিল্মোগ্রাফি

১৯৫২ । ক্রেজি ফর লাভ [Le Trou normand; ফিল্মমেকার : জ্যঁ বোয়া]
১৯৫২ । মানিনা, দ্য গার্ল ইন দ্য বিকিনি [Manina, la fille sans voile; উইলি র‍্যজা]
১৯৫৩ । হিজ ফাদার'স পোর্ট্রেট [Le Portrait de son père; অঁদ্রে বার্থেম্যু]
১৯৫৩ । অ্যাক্ট অব লাভ [Un acte d'amour; আনাতোলি লিৎবাক]
১৯৫৪ । কনসার্ট অব ইন্ট্রিগু [Tradita; মারিও বননার্দ]
১৯৫৫ । ক্যারোলিন অ্যান্ড দ্য রেভেলস [Le Fils de Caroline chérie; জ্যঁ দুভাইভরে]
১৯৫৫ । স্কুল ফর লাভ [Futures Vedettes; মার্ক আলেগ্রেত]
১৯৫৫ । ডক্টর অ্যাট সি [র‍্যালফ থমাস]
১৯৫৫ । দ্য গ্র্যান্ড ম্যানুভার [Les Grandes Manœuvres; রেনে ক্লেয়া]
১৯৫৫ । দ্য লাইট অ্যাক্রোস দ্য স্ট্রিট [La Lumière d'en face; জর্জা লাকোম্বা]
১৯৫৬ । হেলেন অব ট্রয় [রবার্ট ওয়াইজ]
১৯৫৬ । নটি গার্ল [Cette sacrée gamine; মিশেল বোসরো]
১৯৫৬ । নিরো'স উইকেন্ড [Mio figlio Nerone; স্তেনো]
১৯৫৬ । প্লাকিং দ্য ডেইজি [En effeuillant la marguerite; মার্ক আলেগ্রেত]
১৯৫৬ । অ্যান্ড গড ক্রিয়েট উইম্যান [Et Dieu… créa la femme; রজার ভাদিম]
১৯৫৬ । দ্য ব্রাইড ইজ মাচ টু বিউটিফুল [La Mariée est trop belle; পিয়েরে গাসপার-হুই]
১৯৫৭ । লা পারিসিনা [La Parisienne; মিশেল বোসরো]
১৯৫৮ । দ্য নাইট হেভেন ফেল [Les bijoutiers du claire de lune; রজার ভাদিম]
১৯৫৮ । ইন কেইস অব অ্যাডভার্সিটি [En cas de malheur; ক্লুদ অতাঁ-লারা]
১৯৫৯ । দ্য ফিমেইল [La Femme et le Pantin; জুলিয়্যেঁ দুভিভিয়্যে]
১৯৫৯ । বেবেত্তে গৌজ টু ওয়ার [Babette s'en va-t-en guerre; ক্রিশ্চিয়ান-জাক]
১৯৫৯ । কাম ড্যান্স উইথ মি [Voulez-vous danser avec moi?; মিশেল বোসরো]
১৯৬০ । টেস্টামেন্ট অব অর্ফিউস [Le testament d'Orphée; জ্যঁ ককতো]
১৯৬০ । দ্য ট্রুথ [La Vérité; অঁরি-জর্জা ক্লুজা]
১৯৬১ । প্লিজ, নট নাউ! [La Bride sur le cou; রজার ভাদিম]
১৯৬১ । ফেমাস লাভ অ্যাফেয়ারস [Les Amours célèbres; অ্যালাঁ দেলোঁ]
১৯৬২ । অ্যা ভেরি প্রাইভেট অ্যাফেয়ার [Vie privée; লুই মালে]
১৯৬২ । লাভ অন অ্যা পিলো [Le Repos du guerrier; রজার ভাদিম]
১৯৬৩ । কনটেম্পট [Le Mépris; জ্যঁ-লুক গোদার]
১৯৬৪ । দ্য রিভাইজিং ইডিয়ট [Une ravissante idiote; এদুয়ার্দ মলিনারো]
১৯৬৫ । ডিয়ার ব্রিজিত [হেনরি কস্টার]
১৯৬৫ । ভিভা মারিয়া! [লুই মালে]
১৯৬৬ । মাসকুলিন ফেমিনিন [Masculin féminin; জ্যঁ-লুক গোদার]
১৯৬৭ । টু উইকস ইন সেপ্টেম্বর [À coeur joie; সার্জে বুগুইনোঁ]  
১৯৬৮ । স্পিরিটস অব দ্য ডেড [Tre passi nel delirio; লুই মালে]
১৯৬৮ । শালাকো [এদোয়ার্দ দিমিত্রিক]
১৯৬৯ । লা ফেমা [Les Femmes; জ্যঁ অরেল]
১৯৭০ । দ্য বিয়ার অ্যান্ড দ্য ডল [L'Ours et la Poupée; মিশেল দুভিলা]
১৯৭০ । লা নভিসা [Les Novices; গাই কাসারিল]
১৯৭১ । রাম রানারস [Boulevard du Rhum; রবার্ট এনরিকো]
১৯৭১ । দ্য লিজেন্ড অব ফ্রেঞ্চি কিং [Les Pétroleuses; ক্রিশ্চিয়ান-জাক] 
১৯৭৩ । ডন জুয়ান, অর ইফ ডন জুয়ান অয়্যার অ্যা ওম্যান [Don Juan ou Si Don Juan était une femme...; রজার ভাদিম]
১৯৭৩ । দ্য এডিফাইং অ্যান্ড জয়াস স্টোরি অব কলিনট [L'histoire très bonne et très joyeuse de Colinot Trousse-Chemise; নিনা কম্পোনিজ]
Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here