সাক্ষাৎকার: এরিক কোন
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
জুলিয়া দুকোর্নো। ফরাসি ফিল্মমেকার। নতুন সিনেমা তিতান-এর জন্য পেয়েছেন কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদক পাম ডি’অর।

এরিক কোন :: আপনার অন্য সিনেমাগুলোর সঙ্গে তিতান-এর একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে আরও বেশি নারীসুলভ হয়ে ওঠা এক টমবয়ের গল্প নিয়ে শর্টফিল্ম জুনিয়র; এক বালিকার নারী হয়ে ওঠার গল্প র; অন্যদিকে, লৈঙ্গিক বিষয়কে আরও বিস্তৃত নন-বাইনারি পন্থায় বোঝাপড়া করেছে তিতান। এই অগ্রযাত্রা আপনার ক্ষেত্রে কতটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল?
জুলিয়া দুকোর্নো :: ভালো প্রশ্ন! বলছি শুনুন, আমি আমার সিনেমাগুলোর মধ্যে সংযুক্তিকরণ সৃষ্টির চেষ্টা করি। আপনি বাইরে থেকে দেখলে বুঝবেন, (এভাবেই) একটি কাজ শেষ করে পরবর্তীটি শুরু করি আমি। প্রতিবারই এটি একটি নতুন ফেনোমেনা; তবে আমি একে একটি ধারাবাহিক ব্যঞ্জনা হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। তাই (আমার) সবগুলো সিনেমা একই রকম। স্রেফ বড় হয়ে গেছে বলে চরিত্রগুলো পাল্টে যায়। এভাবেই ব্যাপারটাকে আমি অনুভব করি। আমার সিনেমায়, জুনিয়র থেকে শুরু করে র হয়ে তিতান-এ ছোটখাট ইস্টার এগের দেখা পাবেন আপনি। এমন কিছু ডিটেইলের দেখা পাবেন যেগুলো অভিন্ন, এবং কিছু কস্টিউমও অভিন্ন। এক সিনেমা থেকে আরেক সিনেমায় একই ছবি রেখে দিই আমি, ঠিক যেমন একজন ফায়ারম্যান। এই [তিতান] সিনেমায় সেটি ব্যবহার করেছি। আসলে আমি ভীষণ আবেগপ্রবণ মানুষ।
এরিক :: আরও নির্দিষ্ট করে বললে, লৈঙ্গিক চাপল্যকে আপনি কীভাবে নির্ধারণ করেন? (তিতান-এর কথা যদি ধরি,) প্রথম কর্মকাণ্ড থেকেই আলেক্সিয়ার রূপান্তরটি যেহেতু একদম সুস্পষ্ট নয়, তাই এর ভিত্তির ব্যাপারটি শিহরণ জাগানিয়া।
জুলিয়া :: উদ্ভট ব্যাপার হলো, লৈঙ্গিক চাপল্য বা জেন্ডার ফ্লুইডিটি আসলে একটি টপিক হলেও এটিকে আমি স্রেফ টপিক হিসেবে দেখি না। এটি এই সিনেমার অন্যতম প্রধান থিম ঠিকই, তবে আমি এই থিমের ওপর ভিত্তি করেই (সিনেমাটির) পরিকল্পনা সাজাইনি। এভাবে দেখাটা আমার কাছে যথেষ্ট স্বাভাবিক ব্যাপার। এটি কোনো রাজনৈতিক পুস্তিকা নয়। আমি স্রেফ এভাবেই দুনিয়াকে দেখি। দুনিয়াটি এমনই– এত তরল, প্রতিনিয়ত নানাভাবে আরও তারল্যময় হওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি।
যেমন ধরুন রর কথা: কেন নিয়মনিষ্ঠভাবে কোনো কিছু দেখাতে চাই না– এ নিয়ে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আমি প্রচুর কথা বলেছি। লৈঙ্গিক প্রশ্নে এটি একই। আমি মনে করি, লৈঙ্গিক বিষয় কোনো মানুষের আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে আসলেই প্রাসঙ্গিক কিছু নয়। লৈঙ্গিক পরিচয় দিয়ে আমাদের পরিচিত করা উচিত বলে মনে করি না। অবশ্য, এখনো যেহেতু সেরকম সামাজিক বোঝাপড়া তৈরি হয়নি, তাই এটিকে একটি টপিক হিসেবে ধরা হচ্ছে।
…
মোটেও চাই না আমাকে
লৈঙ্গিক পরিচয়ে
পরিচিত করা
হোক
…
এ কথা আমি সবার ক্ষেত্রেই বলি: আমার ক্ষেত্রে, একজন নারী হিসেবে মোটেও চাই না আমাকে লৈঙ্গিক পরিচয়ে পরিচিত করা হোক। লোকে যখন বলে আমি একজন নারী ফিল্মমেকার– আমি বলতে চাচ্ছি, ব্যাপারটি আমাকে বেশ অস্বস্তি দেয়; কেননা, আমি তো একজন ব্যক্তি। আমি একজন ফিল্মমেকার। সিনেমা বানাই; কারণ এটাই আমি। আমি নারী বলেই সিনেমা বানাই– তা কিন্তু নয়। এটা আমি।
এ কারণেই, নারীত্বকে মানুষ যতটা ভাবে, এটি তারচেয়েও অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল ও ব্লারি– এটা দেখানোর জন্যই আলেক্সিয়া চরিত্রটি তৈরি করেছি। এ কারণেই একটি কার শোয়ের সিকুয়েন্স দিয়ে এই সিনেমার শুরু করেছি আমরা। আমি দেখাতে চেয়েছি, শুরুতে গাড়িগুলো ও নারীগুলো আসলে একই রকম। এরা একইভাবে বস্তুনিষ্ঠ। এরপর আমরা চলে গেছি ওর [আলেক্সিয়া] কাছে এবং পুরুষের দৃষ্টি থেকে সরে গেছে সে। কেননা, পুরুষদের আকাঙ্ক্ষাকে সে বশীভূত করেছে এবং নিজের মতো নেচে নিজের গাড়িটিকে জয় করে নিয়েছে।

তবে যখনই সে পুরুষদের দৃষ্টি থেকে সরে গেছে, আর তার দেখা আমরা পেয়েছি, তখন পুরো প্রেক্ষাপটকে আমি প্রলোভনের মতো একটি ফাঁদে পরিণত করেছি। পুরো ব্যাপারটিই খানিকটা স্টেরিওটাইপ; আর আমি সেই স্টেরিওটাইপ নিয়ে খেলা করেছি। পরবর্তীকালে, স্তর ধরে ধরে এটাকে পুরোপুরি তৈরি করে নিয়েছি। আসলে, ওর পক্ষে যথেষ্ট হিংস্র হওয়া সম্ভব; আসলে, ওর যৌনতা যথেষ্ট ‘চুদে গেছে’। ওহ হ্যাঁ, আসলে ওর পক্ষে একজন পুরুষ হওয়া সম্ভব। আপনি [দর্শক] ভাবছেন, সে একজন নারী ছিল! এই তো!
এরিক :: আপনার কথাগুলো বেশ যৌক্তিক মনে হচ্ছে। কিন্তু গাড়ির সঙ্গে তার নিজেকে সম্পর্কের বাঁধনে বেঁধে ফেলার আইডিয়াটি সম্পর্কে কী বলবেন?
…
দানবীয় বৈ অন্য কিছু নয়
বলে ভীষণ শক্তিশালী–
এমন একটি নতুন
মনুষত্ব
সৃষ্টির আইডিয়া ছিল আমার
…
জুলিয়া :: হা-হা-হা…! একটি নতুন পৃথিবীর জন্মকে ঘিরে আমি এই সিনেমা বানাতে চেয়েছি। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকেই এর আবির্ভাব। আমি সাধারণত নিজের মাথায় (পুরো সিনেমার গল্প) শেষ করি আগে, তারপর সেটা নিয়ে কাজে নামি। আমি এমন একটা নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম, (গ্রিক মিথোলজি অনুসারে) ইউরেনাস ও গাইয়ার মিলনের পর জন্ম নেওয়া টাইটান বা তিতানের সঙ্গে যেটি সমতুল্য: আকাশ ও পৃথিবীর মিলনে। সেখান থেকেই এর আবির্ভাব। দানবীয় বৈ অন্য কিছু নয় বলে ভীষণ শক্তিশালী– এমন একটি নতুন মনুষত্ব সৃষ্টির আইডিয়া ছিল আমার। দানবকে সবসময়ই আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি। এটি সমাজ ও সামাজিক জীবনের সব ধরনের স্বাভাবিকত্বের স্বরূপ উদ্ঘাটনের ব্যাপার। রও কিন্তু এ নিয়েই বানিয়েছি। নারীটির দানবিকতাই ওর মুক্তির সোপান। সেই জায়গা থেকে আমি নিশ্চিতভাবেই ভেবেছিলাম, ‘কীভাবে এটা দেখানো যেতে পারে?’ আর সেই ভাবনাই আমাকে গাড়িটির কাছে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।
এরিক :: আপনার সিনেমাকে ডেভিড ক্রোনেনবার্গের সিনেমার সঙ্গে তুলনা করা খুবই সহজ; আর সেক্ষেত্রে এই সিনেমার কনটেক্সটে তার ক্র্যাশ সিনেমার কথা উল্লেখ করা যায়। তার সিনেমা আপনার ক্ষেত্রে কতটুকু প্রাসঙ্গিক?

জুলিয়া :: এটি নিশ্চিতভাবেই আমার ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। কেননা, ক্রোনেনবার্গের সিনেমাই আমার বুনিয়াদ গড়ে দিয়েছে; ঠিক যেমনটা গড়ে দিয়েছে আমার শৈশবে গ্রিক মিথোলজি। ১৬ বছর বয়সে এবং বড় হওয়ার কালে নিজেকে আমি এসবের মধ্য দিয়েই তৈরি করেছি। আমার বাবা-মাকে ছাপিয়েও এই সিনেমা [ক্র্যাশ] আমাকে একটি নতুন ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে। এটি এখনো প্রাসঙ্গিক। অবশ্য তার [ক্রোনেনবার্গ] প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো খুব একটা ইন্টারেস্টিং কিছু নয়। নিজেকে কোনো সিনেমার মধ্যে প্রকাশ করা যারপরনাই অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন কাজ। সেটিতে যদি আপনাকে অন্য লোকদের জুড়ে দিতেই হয়– ওহ, আমি তাকে আমার সিনেমায় জুড়ে দেব এবং এ নিয়ে কথা বলব– তাহলে আপনি পিষ্ঠ হয়ে যাবেন। তবে ক্রোনেনবার্গের কাজ আমার ডিএনএ’তে জায়গা করে রয়েছে এবং আরও অনেকের মতো তিনিও আমার একটি প্রেরণা। এক্ষেত্রে শুধু ডেভিড ক্রোনেনবার্গের কাজ নয়, আমি কয়েকজন পেইন্টার ও ফটোগ্রাফারের নামও নিতে পারি।
এরিক :: কয়েকজনের নাম বলুন প্লিজ…
জুলিয়া :: মূলত ন্যান গোল্ডিন। আমি এই ফটোগ্রাফারের কাজের কাছে সময়ে সময়ে ফিরে ফিরে যাই। তার কাজের মধ্যে কী যে দারুণ কর্মশক্তি! তিনি অবিশ্বাস্যরকমের ফ্রন্টাল ও আন্তরিক, ভীষণ র। নিজের সাবজেক্ট কিংবা এমনকি যখন নিজের ছবি নিজেই তোলেন– সেসবের ক্ষেত্রে কখনোই কোনো রকমের আপস তিনি করেন না। এটিও আমার ডিএনএ’তে রয়েছে– যার কাজ আমি নিত্যদিন নিজের ভেতর বয়ে বেড়াই। তবে ঘটনা হলো, স্রেফ একজন অনুরাগী হওয়া এবং নিজের জীবনে কারও প্রভাব পড়ার কথা স্বীকার করা– এ দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
এরিক :: ‘বডি হরর’ টার্মটি নিয়ে আপনার কী মত?
জুলিয়া :: আমার মতে এটি আসলে একটি খাঁটি থিম; তবে আমি নিজে ‘বডি হরর’ বানাই বলে মনে করি না। বরং আমি আমার সিনেমাগুলোতে বডি হররের টুলগুলো ব্যবহার করি– যেমন ধরুন, ড্রামা কিংবা লাভ স্টোরি। এইসব টুল আমার ব্যবহারের কারণ, শরীরের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করার বেলায় এভাবেই আত্মপ্রকাশ করতে আমি পছন্দ করি। তবে এটি একটি পুরোদস্তুর মর্যাদাপূর্ণ টার্ম।

এরিক :: এই সিনেমায় (কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেত্রী) আগাত রুসেল একটি উল্লেখযোগ্য রকমের নাটকীয় রূপান্তরের ভেতর দিয়ে গেছেন এবং তিনি একটি অতুলনীয় আবিষ্কার। তাকে কীভাবে খুঁজে পেলেন?
জুলিয়া :: এই কাস্টিং নিয়ে বেশ ভুগতে হয়েছে। আমি একজন একেবারেই অচেনা অভিনেত্রী, একেবারেই টাটকা মুখ চেয়েছিলাম; কেননা, আমার সিনেমায় আগে কাজ করেছেন– এমন কোনো পরিচিত অভিনেত্রী হলে লোকে হয়তো তার রূপান্তরটি সম্পর্কে এক ধরনের আন্দাজ করে নিত, আর সেটা দেখতে হয়তো মেকি লাগত। আমার এমনটাই মনে হয়েছিল। মেকি দেখাবে– এমন একটা ভয় ছিল আমার। চরিত্রটির রূপান্তরটির সঙ্গে আমাদের নিজেদের সংযুক্ত করতে এবং সে স্রেফ ওই ধরনের পোশাক পরে রয়েছে বলে নয়, বরং তার সত্তাই এ রকম– এটি বিশ্বাসযোগ্য করতে একটা সাদা ক্যানভাসের মতো কাউকে আমার দরকার ছিলই। তাকে দেখতে একজন ভীষণ রকমের উভলিঙ্গ ধরনের হওয়ারই ছিল। এ কারণে কাস্টিংয়ের সময় নারী ও পুরুষ– দুই ধরনের লোকের মধ্যেই তাকে খুঁজেছি।
আমার একটি চেহারা, একটি নতুন চেহারার দরকার ছিল; সেক্ষেত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। ঘটনা হলো, যখন কোনো অপেশাদার লোককে কাস্ট করবেন, আপনাকে নিশ্চিত করতেই হবে– লোকটি অন্তত ‘যথাযোগ্য’: এক ধরনের ভারসাম্য ও ফ্লেক্সিবিলিটি তার মধ্যে থাকা লাগবেই, যেন আপনি ইচ্ছেমতো তাকে নির্দেশনা দিতে পারেন। আগাতকে বাছাই করার পর তার সঙ্গে আমি চরিত্রটি নিয়ে এক বছর কাজ করেছি।
এরিক :: বাহ!
জুলিয়া :: হ্যাঁ, তাকে শিখিয়ে-পড়িয়ে নেওয়ার দরকার ছিলই! বিভিন্ন সিনেমার প্রচুর দৃশ্য নিয়ে আমরা কাজ করেছি। নেটওয়ার্ক, টুইন পিকস, কিলিং ইভসহ এ রকম প্রচুর সিনেমার বিভিন্ন দৃশ্য নিয়ে কাজ করেছি আমরা। তার অভিনীত চরিত্রটি প্রায় সর্বদা বিমূঢ়; তাই আমরা একেকটি দৃশ্যে তাকে অভিনয় করিয়ে তার ভেতর থেকে সেটা বের করে এনেছি– শরীর নিয়ে কাজ করেছি, আর এভাবেই চরিত্রটিতে তিনি মানিয়ে তুলেছেন নিজেকে।

এরিক :: এই সিনেমায় নাচ প্রচুর। নাচের বহুবিধ ফর্ম এখানে রয়েছে। কোথাও কোথাও মনে হয়, নাচগুলো যথেষ্ট নিবিড়ভাবে কোরিওগ্রাফ করা; আবার কোথাও কোথাও ছাড়া-ছাড়া। নৃত্যকে যোগাযোগস্থাপনের একটি ফর্ম হিসেবে কীভাবে আপনি দেখেন?
জুলিয়া :: এটি কোনো মিউজিক্যাল ফিল্ম নয়; তবে চরিত্রটি একজন নৃত্যশিল্পী। তাই কার শোয়ের দৃশ্যে নাচকে কোরিওগ্রাফ করতেই হয়েছে। সেটি দেখতে স্ট্রিপটিজ কিংবা পোল ড্যান্সিংয়ের মতো লাগবে– এটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই আমরা একজন পেশাদার পোল ড্যান্সারকে নিয়োগ দিয়েছিলাম। আগাত সব মুদ্রা শিখে নিয়েছেন।
নাচ আসলে শরীরের সঙ্গে একটি কথোপকথন– এমনটাই মনে করি আমি। দৃশ্যটির অন্তস্তলের বার্তা আপনি স্রেফ মুভগুলোর দিকে তাকিয়েই ধরতে পারবেন। মুখে বলে দেওয়ার দরকার নেই। সংলাপ না জুড়েই ইমেজের মাধ্যমে যত বেশি প্রকাশ করা সম্ভব– সেদিকে আমার বরাবরই ঝোঁক। নিজেকে আমি ইমেজ পারসনের চেয়েও বেশি কিছু মনে করি।
আপনি যখন ভালোবাসার কথা বলবেন, সেক্ষেত্রে মুখের কথা সেটির মাত্রাকে কমিয়ে দিতে পারে। আপনি দর্শকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান– এমন সংবেদন প্রকাশের এটি স্রেফ একটি পন্থামাত্র। ভিত্তি হিসেবে ভালোবাসাকে কীভাবে উপলব্ধি করা যায়, এটি আসলে সংবেদনশীলতার ব্যাপার। এ কারণেই আমি মনে করি, শেষ দিকের যে দৃশ্যে ফায়ারম্যানরা আর সে আলাদাভাবে নাচে, সেখানে আপনি যদি কোনো সংলাপ জুড়ে দিতেন, তাহলে সেটা হতো একটা লজ্জার ব্যাপার, তালগোল পাকানোর ব্যাপার। সেখানে আপনার কাজ শুধু– ওদের দেখা; খেয়াল করা, সে বাকি সবার সঙ্গে নাচছে না।
ফায়ারম্যানদের ভিনসেন্ট [চরিত্র] বলে দেয়, ‘আমার ছেলের ব্যাপারে কথা বলবে না’, আর তারপর প্রথমবারের মতো তাদের আমরা সম্পূর্ণ সম্প্রীতির অবস্থায় দেখতে পাই। এরচেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই আমাদের। এটি আসলে একটি সংলাপবিহীন সংলাপ।
এরিক :: কোনদিক থেকে আপনার সিনেমাগুলো সাম্প্রতিক সিনেমায় দেখানো যৌনতার অন্যান্য রূপায়নের প্রতি একটি প্রতিক্রিয়া বলে আপনি মনে করেন?
…
সিনেমায় দেখানো বেশির ভাগ
যৌনদৃশ্যই আসলে
অপ্রয়োজনীয়
…
জুলিয়া :: এটি খুব বেশি রক্ষণশীল হয়ে ওঠার কোনো বিষয় নয়; তবে একটা ব্যাপার আমার কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়: সিনেমায় দেখানো বেশির ভাগ যৌনদৃশ্যই আসলে অপ্রয়োজনীয়। এ হলো প্রথম কথা। আমি মনে করি, কোনো যৌনদৃশ্য যদি কোনো চরিত্রের জীবনযাত্রায় প্রাসঙ্গিক কোনো স্তর যোগ না করে, তাহলে সেটি রাখার দরকার নেই। সেটা রাখবেন না। দুটি মানুষ ‘চোদাচুদি’ করছে– স্রেফ এটা দেখানোই যদি উদ্দেশ্য হয়, সেই অপ্রাসঙ্গিক দৃশ্য আমার অপ্রিয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, যৌনদৃশ্যগুলো অপ্রয়োজনীয়। দ্বিতীয়ত, বেশির ভাগ ফিল্মমেকারই পুরুষ।
এরিক :: বলে যান…
জুলিয়া :: স্রেফ এটুকুই, হা-হা-হা…!
এরিক :: র ছিল আপনার জন্য একটি ব্রেকআউট ফিল্ম। এর ফলাফল নিশ্চিতভাবেই আপনাকে নতুন নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। এরপর তিতান বানালেন; যেটি সম্ভবত আপনার সেরা কাজ। ফিল্মমেকার হিসেবে নিজের পরবর্তী ধাপটি আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

জুলিয়া :: এটি পুরোটাই আমার চাওয়ার ওপর নির্ভর করে। রর পর বিদেশের বদলে বরং ফ্রান্সেই নিজের দ্বিতীয় ফিচার ফিল্মটি বানানোর ব্যাপারটি আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছিল। আপনাকে বুঝতে হবে, এ দেশে এই জনরা এখনো ভীষণ কচি; এ নিয়ে এখানে এখনো অনেক কিছু গড়ার রয়েছে। আমার কাছে ব্যাপারটি বেশ ইন্টারেস্টিং। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে এটি ভীষণ পুরনো ট্র্যাডিশন। এ ধারার প্রচুর ফিল্মমেকার রয়েছেন সেখানে। সেটি কোনো সমস্যা নয়; তবে আপনাকে এটা করতে হবে। এখানে [ফ্রান্স] আমরা নতুন কিছু শুরু করছি, যেটি বেশ রোমাঞ্চকর। এ কারণে ফ্রান্সেই তিতান বানাতে চেয়েছিলাম আমি। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু একটা বানানোর আকাঙ্ক্ষা আমার রয়েছে; সেটা নিশ্চিতভাবেই বানাব। তবে ফ্রান্সই সবসময় আমার মূল বিচরণক্ষেত্র রয়ে যাবে বলে মনে করি। আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকব ঠিকই, তবে ফ্রেঞ্চ সিনেমা বানানো থামাব না কখনো।
এরিক কোন :: তার মানে, মাঝখানে মার্ভেলের কোনো সিনেমা বানিয়ে আবার দেশে ফিরবেন আপনি।
জুলিয়া দুকোর্নো :: আমি আসলে জানি না। সুপারহিরো সিনেমার ক্ষেত্রে আমি বোধহয় একটু বেশিই অর্গানিক; নাকি?
সূত্র: ইন্ডিওয়্যার। ১৭ জুলাই ২০২১