লকডাউনের ডায়েরি: পেদ্রো আলমোদোভার

337
পেদ্রো আলমোদোভার

মূল : পেদ্রো আলমোদোভার
স্প্যানিশ থেকে ইংরেজি : মার দিয়েস্ত্রো-দোপিদো
ইংরেজি থেকে বাংলা : রুদ্র আরিফ

অনুবাদকের নোট:
পেদ্রো আলমোদোভার। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৯-। স্প্যানিশ মাস্টার ফিল্মমেকার। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দিনগুলোতে রয়েছেন আইসোলেশনে। ফিল্ম : ‘পেপি, লুসি, বম’, ‘ল্যাবিরিন্থ অব প্যাশন’, ‘ডার্ক হেবিটস’, ‘হোয়াট হেভ আই ডান টু ডিজার্ভ দিস?’, ‘মেটাডর’, ‘ল অব ডিজায়ার’, ‘উইমেন অন দ্য ভার্জ অব অ্যা নার্ভাস ব্রেকডাউন’, ‘টাই মি আপ! টাই মি ডাউন!’, ‘হাই হিলস’, ‘কিকা’, ‘দ্য ফ্লাওয়ার অব মাই সিক্রেট’, ‘লিভ ফ্লেশ’, ‘অল অ্যাবাউট মাই মাদার’, ‘টক টু হার’, ‘ব্যাড এডুকেশন’, ‘ভলভার’, ‘ব্রোকেন এমব্রেসেস’, ‘দ্য স্কিন আই লাভ ইন’, ‘আ’ম সো এক্সাইটেড’, ‘জুলিয়েতা’ ও ‘পেইন অ্যান্ড গ্লোরি’। অস্কারজয়ী এই ফিল্মমেকার করোনাভাইরাসের দিনলিপি লিখছেন স্প্যানিশ ভাষায়। সেগুলো ইংরেজি অনুবাদে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ‘সাইট অ্যান্ড সাউন্ড’ ফিল্ম ম্যাগাজিনে। তারই বাংলা অনুবাদ, এখানে, কয়েক কিস্তিতে…


লিখব না– এতদিন পর্যন্ত ভেবে আসছিলাম এমনটাই। আইসোলেশনের শুরুর দিনগুলো আমার মনে কী অনুভূতি উসকে দিচ্ছে– সেসবের কোনো লিখিত প্রমাণ রাখতে চাইনি। এর সম্ভাব্য কারণ, প্রথমত আবিষ্কার করেছিলাম– এই পরিস্থিতি বস্তুত আমার দৈনন্দিন রুটিনের চেয়ে খুব একটা আলাদা নয় : আমি নিজের মতো থাকতেই এবং একটি ভীতিকর অবস্থায় জীবন কাটাতেই অভ্যস্ত; ফলে এ খুব একটা আনন্দের আবিষ্কার নয়।

প্রথম ৯ দিন একটা বাক্যও লিখিনি। কিন্তু আজ সকালে একটা সংবাদ শিরোনাম দেখে মনে হলো, যেন কোনো ব্ল্যাক হিউমার ম্যাগাজিনের ভাষ্য : ‘মাদ্রিদের আইস রিংককে অস্থায়ী মর্গে পরিণত করা হয়েছে।’ কথাটা ইতালিয়ান জিয়াল্লোর [মিস্টেরি ফিকশনাল ফিল্ম জনরা] মতো শোনালেও এটি ঘটছে মাদ্রিদে; এটি ‘দিনের সবচেয়ে অশুভ নিউজ আইটেমগুলোর একটি’।

আজ আমার আইসোলেশনের একাদশতম দিন; আমি শুরু করেছি ১৩ মার্চ, শুক্রবার। তারপর থেকে নিজেকে গুছিয়ে তুলেছি রাতের মুখোমুখি হতে, অন্ধকারের মুখোমুখি হতে; কেননা, জানালা ও ব্যালকনি পেরিয়ে আসা আলোর ছন্দ চিহ্ন অনুসরণ করে আমি এমনভাবে জীবন কাটাই, যেন রয়েছি কোনো বুনো পরিবেশে। এখন বসন্ত; আবহাওয়া সত্যিকারের বসন্তের মতোই! এ সেইসব দুর্দান্ত প্রাত্যহিক জীবনের অনুভূতি, যেগুলোর অস্তিত্ব এতকাল আমি ভুলে বসেছিলাম। দিনের আলো, আর রাত নেমে আসার আগ পর্যন্ত সেটির বহুদূরবিস্তৃত অভিযাত্রা। রাতের দিকে এক সুদীর্ঘ যাত্রা : তবে সেটি ভয়ঙ্কর নয়, বরং সুখকর। [কিংবা আমি সেটির ভেতর জমাট বেঁধে গেছি, ভেতরে প্রবাহমান উপাত্তের অন্তর্বেদনার দিকে পিঠ দিয়ে রেখে।]

ঘড়ি দেখা থামিয়ে দিয়েছি আমি; আমার বাড়ির সেই লং সাইড করিডর দিয়ে হেঁটে চলার সময়ই শুধু সময় গোণার জন্য ঘড়ির দিকে তাকাই– সুপুত্র না হওয়ার কারণে যে করিডরে আন্তোনিও বানদেরাসের নিন্দা করেছিলেন জুলিয়েতা সেররানো, আমার নাম মুখে নিয়ে। বাইরের অন্ধকার আমাকে বলে দিচ্ছে, ইতোমধ্যেই নেমে এসেছে রাত; কিন্তু দিন আর রাতের মধ্যে এখন আর কোনো টাইমটেবল নেই। তাড়াহুড়ো করা ছেড়ে দিয়েছি আমি। এই এতগুলো দিন পেরিয়ে, আজ ২৩ মার্চ, নিজ বোধশক্তি আমাকে বলে দিচ্ছে, দিনগুলো এখন অনেক বেশি দীর্ঘ। দিনের আলো আমি এখন দীর্ঘ সময় ধরে করতে পারব উপভোগ।

ফিকশন লিখতে শুরুর করার মতো যথেষ্ট উৎফুল্ল এখন আমি নই– যেকোনো কিছু সেটির নির্ধারিত সময়েই হয়– যদিও আমার পক্ষে এখন বেশ কিছু প্লট ভাবা সম্ভব, কিছু নিশ্চয়ই আরও বেশি অন্তরঙ্গ ধরনে। [আমি নিশ্চিত, এ সবকিছুর (করোনাভাইরাস পরিস্থিতির) শেষ হয়ে এলে সন্তান জন্মের একটা হিড়িক পড়ে যাবে; তবে আমি এ ব্যাপারেও সমান নিশ্চিত– অনেক বেশি বিচ্ছেদও ঘটবে : সার্ত্রে বলেছেন, ‘হেল ইজ আদার পিপল’। কিছু কিছু দম্পতি একইসময়ে দুটি ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে : সম্পর্কচ্ছেদ এবং সদ্য ভেঙ্গে যাওয়া পরিবারে একজন নতুন সদস্যের আবির্ভাব।]

দ্য ইনক্রেডিবল শ্রিঙ্কিং ম্যান
ফিল্মমেকার । জ্যাক আর্নল্ড

বর্তমান বাস্তবতাকে কোনো বাস্তবধর্মী গল্পের চেয়ে বরং একটি ফ্যান্টাসি ফিকশন হিসেবে বোঝাই অপেক্ষাকৃত সহজ। নতুন বৈশ্বিক ও সংক্রামক পরিস্থিতিটিকে দেখে মনে হয়, এর আবির্ভাব ঘটেছে যেন কোল্ড ওয়ারের দিনগুলোর, পঞ্চাশের দশকের কোনো সাই-ফাই কাহিনি থেকে। কমিউনিস্টবিরোধী স্থূলতর প্রোপাগান্ডা ভরা হরর ফিল্মগুলো থেকে। প্রডিউসারদের পাপিষ্ঠ উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান বি-ফিল্মগুলো, বিশেষত সার্বিকভাবে জমকালো সিনেমাগুলো থেকে [বিশেষ করে, রিচার্ড ম্যাথারসনের উপন্যাস অবলম্বনে যেগুলো বানানো হয়েছিল : দ্য ইনক্রেডিবল শ্রিঙ্কিং ম্যান, আই অ্যাম লিজেন্ড, দ্য টোয়াইলাইট জোন]। একইসঙ্গে, একটু আগেই যেমনটা বলেছি, আমি দ্য ডে দ্য আর্থ স্টুড স্টিল, ডি.ও.এ., ফরবিডেন প্ল্যানেট, ইনভ্যাশন অব দ্য বডি স্ন্যাচারস এবং মঙ্গলগ্রহবাসীকেন্দ্রিক অন্য সিনেমাগুলোর কথাও ভাবছি।


ট্রাম্প
আমাদের
সময়ের আরেকটি
মারাত্মকতম অসুখ

দুষ্টের আবির্ভাব সবসময়ই বাইরে [কমিউনিস্ট, শরণার্থী, মঙ্গলগ্রহবাসী] থেকেই ঘটে, এবং সেটি স্থূলতর পপুলিজমের কাছে একটি বিতর্ক হিসেবে জাহির হয় [তবু, যে সিনেমাগুলোর নাম আমি অতি উৎসাহে নিলাম, সেগুলো এখনো দুর্দান্ত]। আসলে, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই নিশ্চিত করে ফেলেছেন, যে পরিস্থিতি আমরা সহ্য করছি– সেটি অনেকটা পঞ্চাশের দশকের কোনো সিনেমার নামের মতোই শোনায়; কেননা, তিনি ভাইরাসটিকে বলেছেন, ‘দ্য চাইনিজ ভাইরাস’। ট্রাম্প আমাদের সময়ের আরেকটি মারাত্মকতম অসুখ।

পেদ্রো আলমোদোভার
পেইন অ্যান্ড গ্লোরি
কাস্ট । আন্তোনিও বানদেরাসজুলিয়েতা সেররানো
ফিল্মমেকার । পেদ্রো আলমোদোভার

বিনোদন খুঁজব বলে ঠিক করেছি আমি। সাধারণত আমি ইমপ্রোভাইজ করি [কিন্তু এ কোনো উইকেন্ড নয়; বরং আমার অভ্যস্ত একাকিত্ব ও আইসোলেশনের দিনগুলোই]; ফলে এখন আমি সিনেমা, সংবাদ বুলেটিন আর বইপত্র গুছিয়ে রেখেছি দিনের একেক সময়ে একেকটা দেখব বা পড়ব বলে। আমার বাড়িটা একটা ইনস্টিটিউশন, আর আমি এটির একমাত্র বাসিন্দা। পরে কর্মতালিকায় হোম এক্সারসাইজও যোগ করে নেব। এতদিন পর্যন্ত আমি ভীষণ রকম হতোদ্যম ছিলাম; একটামাত্রই এক্সারসাইজ করে আসছিলাম– সেই লং করিডরটি ধরে হেঁটে ওঠা-নামা করা, ঠিক যেই করিডরে জুলিয়েতা সেররানো ও আন্তোনিও বানদেরাস ছিলেন, পেইন অ্যান্ড গ্লোরি সিনেমায়।


এমনতর
দিনে নিখাঁদ বিনোদন,
নিখাঁদ পলায়নপ্রবৃত্তিই
সবচেয়ে সেরা জিনিস

বিকেলে দেখার জন্য বেছে নিয়েছি মেলভিল্লার একটি সিনেমা [জ্যঁ-পিয়েরে মেলভিল্লার ডার্টি মানি; আর নিজেকে অবাক করে দিয়েই সন্ধ্যাবেলা বেছে নিলাম জেমস বন্ড সিরিজের ফিল্ম– গোল্ডফিঙ্গার। আমার মনে হলো, এমনতর দিনে নিখাঁদ বিনোদন, নিখাঁদ পলায়নপ্রবৃত্তিই সবচেয়ে সেরা জিনিস।

গোল্ডফিঙ্গার
কাস্ট । অনার ব্ল্যাকম্যানশন কনারি
ফিল্মমেকার । গাই হ্যামিলটন

গোল্ডফিঙ্গার দেখতে শুরু করামাত্রই নিজের এই বাছাই নিয়ে আনন্দ হলো আমার; যেন আমি এটিকে বেছে নিইনি, বরং সিনেমাটি নিজেই বেছে নিয়েছে আমাকে। শন কনারির সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার, কানে [কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল] পাশাপাশি বসে ডিনার সেরেছি আমরা। তার সিনেমা-জ্ঞান আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। বিশেষ করে, আমার কাজের প্রতি তার আগ্রহ আছে জেনে চমকে গিয়েছিলাম। এখন আর মার্বেল্লায় থাকেন না তিনি, তবে স্পেনের প্রতি এখনো তার টান রয়েছে। আমাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল, আমরা ফোন নম্বর অদল-বদল করেছি– যদিও তখনই আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমাদের দুজনের কেউ কাউকে কোনোদিনই ফোন করব না।

তবু, অল্প কয়েক মাস পর, ২০০১ কি ২০০২ সালের কথা, টক টু হার-এর একটি প্রদর্শনী থেকে তিনি বের হওয়ামাত্রই আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি কোনো ফেটিশিট কিংবা মিথোম্যানিয়াক নই, তবু তার মুখে আমার সিনেমার কথা শুনে বিহ্বল হয়ে গিয়েছিলাম। একজন ভালো অভিনেতা ও একজন আকর্ষণীয় পুরুষ হিসেবে তার গাঢ় কণ্ঠস্বর শোনাটাও ছিল বিহ্বল-জাগানিয়া। এই সন্ধ্যায় গোল্ডফিঙ্গার দেখতে দেখতে আমি এসব ভাবছিলাম। কোয়ারেন্টিন, রাত, শন কনারি ও আমি… ভাবনার ঘোড়া ছুটছিল আর পড়ছিল নানা বাধার মুখে।

স্টোরি অব অ্যা লাভ অ্যাফেয়ার
কাস্ট । লুসিয়া বোস
ফিল্মমেকার । মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি

একটি সিনেমা শেষ করে আরেকটি শুরুর মাঝখানে এক সেকেন্ডের জন্য টিভি ছাড়লাম। আর জানতে পারলাম, লুসিয়া বোসকে উড়িয়ে নিয়ে গেছে এই ভয়ানক টর্নেডো [করোনাভাইরাস], যেটিকে আমরা শুধু নামেই চিনি। সারা দিনে এই প্রথম চোখের পানি ঝরল আমার। অভিনেত্রী ও ব্যক্তিমানুষ– উভয় হিসেবেই লুসিয়ায় বিমুগ্ধ ছিলাম আমি। আন্তোনিওনিস্টোরি অব অ্যা লাভ অ্যাফেয়ার-এ দেখা সময়ের বিচারে বিস্ময়কর সেই অপরূপ সুন্দরী নারীটি, উভলিঙ্গীয় ও পশুতুল্য হাঁটার ধরন– তার পুত্র মিগুয়েল বোস যেটি উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন… ইত্যাদি আরও কত কথা মনে পড়ছে আমার। আন্তোনিওনির সিনেমাটি আমি কাল দেখব।


বাড়িতে
অসহায়ের
মতো আটকে
থাকা একজন মানুষের
কাছে স্মৃতিকাতরতার
শিকার হওয়া
খুবই সহজ
ঘটনা

দেখতে শাশ্বত– এই পরাক্রমশালী নারীটিকে এক পলক দেখার ও তার আশেপাশে থাকতে পারার জন্য মিগুয়েলের বন্ধু হওয়া আরও অসংখ্যজনের মধ্যে আমিও ছিলাম। জ্যান ম্যরো, শাবেলা ভার্গাস, পিনা বাউশ ও লরেন ব্যাকলের মতোই লুসিয়া ছিলেন আধুনিক নারীর অলিম্পাস/পন্ডিয়ামের অংশ : মুক্ত, স্বাধীন; তারা ছিলেন তাদের ঘিরে থাকা পুরুষদের চেয়েও বেশি পুরুষালি। ‘নামের’ ঝরনা বইয়ে দিচ্ছি বলে ক্ষমা চাচ্ছি, তবে তাদের সবার সঙ্গে দেখা করার এবং তাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। অবশ্য বাড়িতে অসহায়ের মতো আটকে থাকা একজন মানুষের কাছে স্মৃতিকাতরতার শিকার হওয়া খুবই সহজ ঘটনা।

মেক্সিকো সিটিতে ফোন করে মিগুয়েলের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে কথা বললাম। অনেক বছর পর আমাদের কথা হলো; এই বেদনাত্মক পরিস্থিতি সত্ত্বেও, তাকে ধন্যাবাদ জানাতে চেয়েছি– তিন দশক ধরে আমার জন্মদিনে প্রতিবার আমাকে সাদা অর্কিড পাঠানোর জন্য। যেখানেই থাকি না কেন, বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য মাদ্রিদের বাইরেই থাকতাম, তবু প্রতি বছর ২৫ সেপ্টেম্বর আমি এক পাত্র সাদা অর্কিড ফুল পাই, যেগুলো তিন মাস পর্যন্ত টাটকা থাকে; সঙ্গে পাই বড় একটা বার্থডে কার্ড– এমবির [মিগুয়েল বোস] কাছ থেকে।

এই অবরুদ্ধ সময়ে কোনো টাইমটেবল না থাকার সুবিধা হলো, আমার কোনো তাড়া নেই। নেই প্রেসার কিংবা স্ট্রেস। আমি স্বভাবতই উৎকণ্ঠায় ভোগা মানুষ; এখনকার চেয়ে কম উৎকণ্ঠা অবশ্য কোনোদিনই অনুভব করিনি। হ্যাঁ, জানি, আমার জানালার বাইরের বাস্তবতা ভয়ঙ্কর ও অনিশ্চিত; আর ঠিক এ কারণেই আমার মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই বলে নিজেই চমকে উঠছি, এবং আমার আতঙ্ক ও প্যারানয়া কাটিয়ে ওঠার এই নতুন অনুভূতিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছি। মৃত্যু কিংবা মৃত’কে নিয়ে ভাবি না আমি।

সাধারণত মেসেজের জবাব না দেওয়ার একটা বদ অভ্যাস আমার সার্বিকভাবেই রয়েছে, দিলেও খুব সামান্য কয়েকটিরই দিই; অথচ এখন আমার মূল কাজ, সেটি আমার কাছে নতুনও– আমার নিজের ও পরিবারের খোঁজ নিতে মেসেজ পাঠানো সবাইকে উত্তর দেওয়া। এই প্রথমবারের মতো, এ ধরনের আলাপনকে আমার কাছে মামুলি নয়, বরং ভীষণ অর্থবহ মনে হচ্ছে। আমি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে জবাব দিচ্ছি; প্রতি রাতেই খোঁজ নিচ্ছি– আমার পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা কে কেমন আছে।

গোল্ডফিঙ্গার
কাস্ট । শার্লি ইটন

জানালা দিয়ে [দিনের] আলো আসা যখন একেবারেই থেমে গেল, তখন আমি গোল্ডফিঙ্গার দেখতে শুরু করলাম। আরও একবার আমাকে মুগ্ধ করলেন শার্লি বাসি, এবং অল্পক্ষণের জন্য হাজির হওয়া আরেক শার্লি– শার্লি ইটন– যে সুন্দরী অভিনেত্রীকে বন্ডের বহুডোরে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য খুবই উচ্চমূল্য চুকাতে হয়েছে। বিছানায় শুয়ে থাকা এ নারীর শরীর সোনালি রঙে এমনভাবে রাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে, দম নেওয়ার মতো যেন কোনো লোমকূপও বাকি নেই; আর তাতে শুধু নিজেদের সাঙ্গপাঙ্গদের বাদ দিয়ে সারা দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য লালন করা সুপার পাওয়ারফুল ভিলেনদের কামনা/লালসা/ইরোটিসিজম ও উন্মাদনাকে ফুটিয়ে তোলার লক্ষ্যে ফ্রাঞ্চাইজিটির [‘জেমস বন্ড’] সৃষ্টি করা সবচেয়ে দাপুটে ইমেজগুলোর একটি হয়ে উঠেছে এটি।

শাভেলা ভার্গাস

আমার বোন চুসের ফোন এলো। তার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সিনেমা দেখা থামাতে হলো আমাকে। সে জানাল, লা-টু’তে [স্পেনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের দ্বিতীয় চ্যানেল] একটি ডকুমেন্টারিতে আমাকে দেখছে এখন। ডকুমেন্টারিটি ইতোমধ্যেই অর্ধেক পার হয়ে গেছে। ভিডিও থেকে লাফিয়ে আমি টিভিতে গেলাম, ধরলাম সেকেন্ড চ্যানেল, আর দেখলাম– চলছে শাভেলাকে নিয়ে বানানো দারেশা কাই ও ক্যাথরিন গান্ডের একটি ডকুমেন্টারি।

যা দেখছি আর শুনছি, চোখ ভেঙে কান্না নামছে আমার।


পরের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

১টি কমেন্ট

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here