জ্যান ম্যরোর সঙ্গে আলাপ

206

সাক্ষাৎকার । হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ

জ্যান ম্যরো [২৩ জানুয়ারি ১৯২৮-৩১ জুলাই ২০১৭]। ফরাসি অভিনেত্রী, গায়িকা, স্ক্রিনরাইটার ও ফিল্মমেকার। সবচেয়ে তীব্র পরিচয়– ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ ফিল্ম মুভমেন্টের তুখোড় অভিনেত্রী। লুই বুনুয়েল [ডায়েরি অব অ্যা চেম্বারমেইড], মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি [দ্য নাইট । বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস], ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো [জুলস অ্যান্ড জিম । দ্য ব্রাইড ওর ব্ল্যাক], লুই মালে [এলিভেটর টু দ্য গ্যালোস । দ্য লাভারস । দ্য ফায়ার উইদিন । ভিভা মারিয়া!], জ্যঁ রেনোয়া [দ্য লিটল থিয়েটার অব জ্যঁ রেনোয়া], অরসন ওয়েলস [দ্য ট্রায়াল । চাইমস অ্যাট মিডনাইট । দ্য ইমমোর্টাল স্টোরি], রাইনার ভার্নার ফাসবিন্ডার [কোয়ারেল], রজার ভাদিম [ডেঞ্জারাস লেইজনস], থিও অ্যাঙ্গেলোপোলোস [দ্য সাসপেন্ডেড স্টেপ অব দ্য স্টর্ক], মার্গারিতা দুরাস [নাথালি গ্রেঞ্জার], মার্সেল অফুলস [বেনানা পিল], এলিয়া কাজান [দ্য লাস্ট টাইকুন], ভিম ভেন্ডার্স [আনটিল দ্য এন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড । বিয়ন্ড দ্য ক্লাউডস], ফিলিপ দা ব্রোকা [দ্য ওল্ডেস্ট প্রফেশন । ডিয়ার লুইস], সাই মিং-লিয়াং [ফেস] প্রমুখ মাস্টার ফিল্মমেকারদের সিনেমায় করেছেন অভিনয়। অরসন তাকে ডাকতেন “জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী” বলে…


জ্যান ম্যরো
সময় । ১৯৪৮

সা ক্ষা ৎ কা র

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
[আপনার ক্যারিয়ারের] শুরু থেকেই শুরু [আলাপ] করতে চাই। যখন কাজ শুরু করলেন, জ্যঁ আনুইয়্যি [ফরাসি নাট্যকার] ছিলেন আপনার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আপনি কি তার হাত ধরেই থিয়েটারে এসেছেন?

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ, দখলদারিত্বের [ফ্রান্সে জার্মান দখলদারিত্ব] দিনগুলোতে একটা নাটকের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু আমার। স্কুলের বান্ধবীরা আমাকে লাতেলিয়ে থিয়েটারে [প্যারিস] নিয়ে গিয়েছিল আনুইয়্যির অ্যান্টিগোনে দেখাতে; বাইরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না বলে বাবাকে তখন মিথ্যে বলেছিলাম। নাটকটিতে আনুইয়্যির তখনকার স্ত্রী মনোলা ভালোতাঁ অভিনয় করেছেন। কাজটি আমাকে ভীষণ শিহরিত করল; কেননা এখানে এক তরুণী বলছে ‘না’। এটা তো আমারই ব্যক্তিত্ব। সব ধরনের প্রথা আমি প্রত্যাখ্যান করি। সে ‘না’ বলেছে ক্ষমতাকে। বামপন্থী সে। প্রতিরোধী সে। আমিও বামপন্থী ছিলাম। তাই মনে হলো, এটাই রাস্তা। কেননা, আমি মায়ের মতো নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলাম ঠিকই, তবে নাটকটা নিজেকে বললাম, ‘নিজের ভাবনাগুলো প্রকাশ করার জন্য মঞ্চেই হাজির হতে চাই।’

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
তার মানে রাজনীতিই আপনাকে থিয়েটারে এনেছে?

জ্যান ম্যরো
সেই সময়ে রাজনীতি নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা ছিলাম প্রতিরোধের ভেতর; কেননা তখন আমাদের দেশটি দখলদারিত্বে ছিল। জার্মানদের দেশ থেকে তাড়াতে চেয়েছিলাম আমরা। মার্শাল পিইতাঁর [ফিলিপ পিইতাঁ; ফরাসি প্রধানমন্ত্রী] কাছে নিজেদের নিবেদন করা মানুষগুলো ছিল ডানপন্থি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনি আনুইয়্যির সেই অভিজ্ঞতার দিকে পা বাড়ালেন?

জ্যান ম্যরো
আসলে থিয়েটারের পাঠ নিলাম আমি। কনজারভেটরিতে আমাকে গ্রহণ করা হলো। কমেডি-ফ্রঁসেজে [থিয়েটার] অভিষেক হলো আমার। নিজের ২০তম জন্মদিনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করলাম। প্রথম অভিনয় করেছি ইভান তুর্গেনেভের [রুশ সাহিত্যিক] লেখা অ্যা মান্থ ইন দ্য কান্ট্রি নাটকটিতে।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
কোনো নায়ক কিংবা নায়িকা কি আপনাকে অনুপ্রাণিত করেছিল?

জ্যান ম্যরো
না; থিয়েটারে যাওয়ার অনুমতি ছিল না আমার; সিনেমা-হলে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। এসবে উৎসাহ দেওয়া হয়নি আমাকে। মা ছিলেন ফলি বের্জারের [ক্যাবারে মিউজিক হল, প্যারিস] নৃত্যশিল্পী। তিনি বের্জারের নাচের দল ‘লা গার্লস’-এ কাজ করতেন; দলটি এখনো আছে। কমেডি-ফ্রঁসেজের সঙ্গে চার বছরের একটি চুক্তি হলো আমার। চার বছরে ২৪টি শো’তে পারফর্ম করলাম। মলিয়ার [ফরাসি নাট্যকার মলিয়ারের লেখা নাটক], ট্র্যাজেডি, কমেডি– কত ধরনের নাটকেই না অভিনয় করেছি! তারা আমাকে ‘অভিনেতা দলের সদস্য’ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার প্রস্তাব দিল। তবে এ কথা বলতে ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না, কমেডি-ফ্রঁসেজের আগেই থিয়েটারে আমার অভিষেক হয়েছিল ১৯৪৭ সালের প্রথম আভিগোঁ ফেস্টিভ্যালে, জ্যঁ ভিলার [ফরাসি অভিনেতা] সঙ্গে। এরপর জেরার্দ ফিলিপ [ফরাসি অভিনেতা] আমাকে ১৯৫২ সালে আমন্ত্রণ জানালেন; কিন্তু আমি তখন কমেডি-ফ্রঁসেজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। ভীষণ দারুণ কিছু চরিত্র পেয়েছিলাম। সেগুলো বান্ধবীদের দিয়ে দিয়েছি। গলায় ইনফেকশন হওয়ার ভান করে চলে গেলাম আভিগোঁ ফেস্টিভ্যালে। এরপর আমাকে অভিযুক্ত করা হলো। তারা উদ্ভট পরিমাণের টাকা চাইল। তরুণ রোবের বাঁদাতে সে যাত্রায় আমার হয়ে মামলা লড়েছিলেন। আমি নিশ্চিত, তার নাম আপনি শুনে থাকবেন। খুবই বিখ্যাত আইনজীবী। ফ্রান্সে গিলোটিনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ব্যবস্থা বিলুপ্ত করার অবদান তারই।

জ্যান ম্যরো লুই মালে
কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ১৯৫৮

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনার মামলা তিনি লড়েছিলেন?

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ; আর সেজন্য কোনো টাকাও চাননি তিনি। আমার এই জীবন সম্পর্কে বাবার কোনো ধারণা ছিল না। ব্রাসেরিতে [ফরাসি রেস্টুরেন্টবিশেষ] নিজের বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন। আমি ছিলাম সবচেয়ে জনপ্রিয় মানুষ। ভীষণ সফল ছিলাম আমি। পত্রিকাগুলোতে আমাকে নিয়ে লেখা হতো। সে সময়েই টনি রিচার্ডসনের [ব্রিটিশ ফিল্মমেকার] সঙ্গে দেখা হলো; সে সময়েই দেখা হলো অরসন ওয়েলসের [আমেরিকান ফিল্মমেকার] সঙ্গে– তিনি চেয়েছিলেন তার একটি সিনেমায় আমাকে অভিনয় করাতে। আমাকে তখন যে চরিত্রেই অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হতো, সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যেতাম। এরমধ্যে একটা ছিল সংসার-ভাঙার নারী চরিত্র, সে সময়কার পুরুষ তারকা গি মারশাঁর [ফরাসি অভিনেতা] বিপরীতে। এরপর ফের্নাদেঁর [ফরাসি অভিনেতা] সঙ্গে, গাবার সঙ্গে অভিনয় করেছি; এরপর টেনিসি উইলিয়ামসের [আমেরিকান নাট্যকার] একটি নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেলাম।… তখনো কোনো সিনেমা না বানানো লুই মালে [ফরাসি ফিল্মমেকার] এ সময় আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন; আর তখনই তার সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিলেন। ফলে থিয়েটার নয়, বরং সিনেমা থেকেই আমি সবকিছু শিখেছিলাম। তবে সে সময়ের ফিল্মমেকারেরা থিয়েটারে যেতেন।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
প্রথমবার আপনি যখন এসবের মধ্যে ভেসে যাচ্ছেন, ফ্রান্সে কী কী ঘটছে– সেগুলো এর কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে কি না, সে সম্পর্কে কোনো রোমাঞ্চ আপনার মনে কাজ করেছে?

জ্যান ম্যরো
নিশ্চয়ই। প্রচুর টাকা কামিয়ে দিচ্ছিলাম আমি। আমাকে দুইবার ভাবতে হয়নি, স্রেফ বলে দিয়েছি, ‘শুনুন, স্ক্রিপ্টটা পছন্দ হয়েছে।’ তাকে [লুই মালে] আমি সে সময়ে ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
মালের সঙ্গে এক ধরনের রসায়নের কথা আপনি প্রায়সময়ই সাক্ষাৎকারে বলে আসছেন।

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ, একে অন্যের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। বেশ কয়েক বছর ধরে একটা অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল আমাদের। পরে আলাদা হয়ে যাই; তিনি দুইবার বিয়ে করেছেন; তিনি ‘নাই’ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত, তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমাদের মধ্যে বন্ধন ছিল।

দ্য লাভারস
ফিল্মমেকার । লুই মালে

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনাদের [মালে-ম্যরো জুটি] সবগুলো সিনেমার মধ্যে কোনটি আপনার পছন্দ?

জ্যান ম্যরো
এটা বাছাই করা সম্ভব নয়। কিছু কিছু সিনেমা অন্যগুলোর চেয়ে বেশ কঠিন ছিল, যেমন– এলিভেটর টু দ্য গ্যালোস [১৯৫৮] ও দ্য লাভারস [১৯৫৮]। শেষের সিনেমাটি সবাইকে শিউরে দিয়েছিল; কেননা, এখানে আমরা সঙ্গম করেছি। সিনেমাটি কানাডায় নিষিদ্ধ হলো। আমার মনে হলো, এই বুঝি শেষ। বানানোর পক্ষে এ খুবই বেদনাদায়ক, খুবই যন্ত্রণাদায়ক সিনেমা। তাছাড়া ভিভা মারিয়া! [১৯৬৫]। তখন ব্রিজিত বার্দোকে আমি বলেছিলাম, নির্জনতায় আছি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনাদের সব কাজের মধ্যেই মুক্তির একটা দাপুটে প্রতীতি রয়েছে…

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ; তবে আমাদের যে অনুভূতি কাজ করছিল, তাতে আমার মনে হলো, সহসাই একটা মতবিরোধ ঘটবে। এরপর লুইয়ের মাধ্যমেই [ফ্রাঁসোয়া] ত্রুফোর সঙ্গে দেখা হলো আমার। তিনি তখনো দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ [১৯৫৯] বানাননি। কোনো এক করিডরে আমরা রাস্তা ক্রস করছিলাম; লুই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে একটু সামনের দিয়ে এগিয়ে যেতেই ফ্রাঁসোয়া বললেন, ‘আপনার সঙ্গে কোথায় দেখা হতে পারে? আপনার সঙ্গে আরেকবার দেখা হওয়া দরকার।’ সেই থেকে ফ্রাঁসোয়ার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ শুরু। তিনি আমার ফোন নাম্বার নিলেন; রু মারমোঁর [প্যারিস] একটি রেস্টুরেন্টে সপ্তাহে একদিন আমরা দেখা করতাম, সেই রেস্টুরেন্টটি এখন আর নেই।

ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো জ্যান ম্যরো
জুলস অ্যান্ড জিম-এর সেটে [১৯৬২]

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
একবার আমাকে বলেছিলেন, যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেননি, সেগুলো আপনার কাছে নিজে অভিনীত চরিত্রগুলোর মতোই গুরুত্বপূর্ণ।


যে চরিত্রগুলোতে অভিনয়
করতে রাজি হইনি,
সেগুলো নিয়ে
আমার
কোনো
অনুতাপ নেই

জ্যান ম্যরো
যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে রাজি হইনি, সেগুলো নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ নেই। আমেরিকান একটি সিনেমা, যেখানে ডাস্টিন হফমান [আমেরিকান অভিনেতা] অভিনীত চরিত্রটি মা-মেয়ে– দুজনের সঙ্গেই শুতে চায়…

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
মিসেস রবিনসন [মা চরিত্র] চরিত্রটি আপনি করতে রাজি হননি?

জ্যান ম্যরো
আইডিয়াটি শুনেই ভিমড়ি খেয়েছিলাম… কী বিশ্রী ব্যাপার, তাই না? একটি পাগলাগারদের নার্সটির চরিত্রে, জ্যাক নিকলসনের [আমেরিকান অভিনেতা] বিপরীতে অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলাম।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কুকু’স নেস্ট [মিলোস ফরমান; ১৯৭৫] সিনেমায়। আর কোন কোন সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হননি?

জ্যান ম্যরো
স্পার্টাকাস [স্ট্যানলি কুব্রিক; ১৯৬০] করিনি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
কেন?

জ্যান ম্যরো
যে লোকটি সবার সঙ্গে শুয়ে বেড়ায়, কী যেন নাম? পরবর্তীকালে তার ছেলেও তারকা হয়েছিল।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
কার্ক ডগলাস [আমেরিকান অভিনেতা]। তার মানে, কুব্রিককে আপনি ‘না’ বলে দিয়েছেন?

জ্যান ম্যরো
প্রস্তাবটি কুব্রিক আমাকে দেননি। তিনি যদি নিজে দিতেন, তাহলে আমার আগ্রহ থাকত। তবে আমি বলেছিলাম, ‘এই লোকটা হয়েছে তো কী হয়ে গেছে, শুনি?’

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
সবসময়ই ফিল্মমেকার সরাসরি আপনার সঙ্গে কথা বলে নেন। কোনো অ্যাজেন্ট কিংবা ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে যোগাযোগটা হয় না। করতে পারেননি, এমন কোনো প্রজেক্ট রয়েছে আপনার?

গেবো অ্যান্ড দ্য শ্যাডো
ফিল্মমেকার । মানোয়েল দে অলিভেইরা

জ্যান ম্যরো
না। আমি সদ্যই দুনিয়ার সবচেয়ে বয়স্ক ফিল্মমেকার মানোয়েল দে অলিভেইরার [পর্তুগীজ] সঙ্গে কাজ শেষ করলাম। প্যারিসে সিনেমাটির শুটিং করেছি; এটি নিশ্চিতভাবেই কান ফেস্টিভ্যালে যাবে। দুর্দান্ত এক সিনেমা এটি [গেবো অ্যান্ড দ্য শ্যাডো; ২০১২] । চমৎকার এক কাহিনি। মানোয়েল অতুলনীয়। আমার ধারণা, তার বয়স এখন ১০৫ বছর।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
এত বয়ষ্ক এবং দারুণ সচল দুজন মানুষকে আমি চিনি। একজন তিনি, আরেকজন [ব্রাজিলিয়ান] আর্কিটেক্ট অস্কার নেইমার। এক বছর আগে আপনি আমাকে বলেছিলেন, জ্যঁ জেনেতের [ফরাসি সাহিত্যিক] দ্য কনডেমড টু ডেথ [Le Condamné à Mort?] কাব্যটি অবলম্বনে কিভাবে কাজ করছিলেন?

জ্যান ম্যরো
…ই্যতেন দায়োর [ফরাসি গায়ক] সঙ্গে। আমরা আগামী বছর এটার বাকি কাজ করব। ই্যতেন দায়োর কাজের আমি সত্যিই গুণমুগ্ধ; খবর পেয়েছিলাম, তিনি তার অলিম্পিয়া অ্যালবামটির গান শোনাতে আসছেন, এবং দ্য কনডেমড টু ডেথ গীতিকাব্য থেকে একটি গান রয়েছে সেখানে। আমি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে, সবার সঙ্গেই নাচতে শুরু করলাম। ‘সুর মোঁ ক্যু’ গানটি যখন বেজে ওঠল, রুমটিতে একটা নিস্তবদ্ধতার হাওয়া বয়ে গেল ভীষণ চমৎকার আবেগে; আর আমি বিস্ময়বিমুগ্ধ হয়ে পড়লাম। ব্যাকস্টেজে তার কাছে গেলাম; আমার সঙ্গে ছিলেন অ্যাঙ্গারস ফেস্টিভ্যালের প্রেসিডেন্ট ক্লুদ-এরিক পইরুক্স। দেখা পেয়ে ই্যতেনকে বললাম, ‘শুনুন, আমার মাথায় একটা আইডিয়া আছে; আমরা কি একসঙ্গে দ্য কনডেমড টু ডেথ নিয়ে কাজ করতে পারি? জ্যঁ-কে আপনি চেনেন, তাকে আপনি ভালোবাসেন। চলুন, দ্য কনডেমড টু ডেথ নিয়ে কাজ করা যাক।’

সবকিছু ঠিকঠাক করতে আমাদের দুই বছর লেগে গেছে। আমরা কানাডায় গিয়েছিলাম। এ ছিল এক জয়জয়কার ব্যাপার। আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ডে আমরা একটা তরুণ রক-ব্যান্ডকে নিয়েছিলাম; স্টেডিয়াম ভরা ছিল হাজারও মানুষ। আমরা বেলজিয়াম গিয়েছিলাম, ইতালি গিয়েছিলাম, লিওনে গিয়েছিলাম; তারপর প্যারিসে ফিরে এসেছি প্লেয়েল [পিয়ানোবিশেষ] বাজাতে। এখন এটির রেকর্ডিংয়ের কাজ চলছে। তেতা রেইদে-কে [ফরাসি মিউজিক্যাল গ্রুপ] নিয়ে রেকর্ডিংটি করছি আমি। এ বছর আভিগোঁ ফেস্টিভ্যালে আমাকে দুটি শো করতে হবে। পরের বছর আমরা আবার দ্য কনডেমড টু ডেথ-এর কাজটিতে হাত দেব।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
এক সাক্ষাৎকারে আপনি এ-ও বলেছিলেন, জ্যঁ জেনেতকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সমকামিতা সম্পর্কে কোনো কিছু শেখার বাধ্যবাধকতা প্রয়োজনবোধ করেননি; কেননা, আমরা সবাই আসলে আধা-পুরুষালি, আধা-মেয়েলি।


নিশ্চিতভাবেই আমি
নিজের ক্ষেত্রে
অনুভব
করেছি–
নারীত্বই পুরুষত্বকে পথ দেখায়

জ্যান ম্যরো
দেখুন, সমকামিতাকে আমি কোনো ট্যাবু হিসেবে দেখি না! নিশ্চয় আমরা সবাই পুরুষালি ও মেয়েলি। যতই দিন গেছে, যতই দিন কাটিয়েছি নারী হিসেবে, নিশ্চিতভাবেই আমি নিজের ক্ষেত্রে অনুভব করেছি– নারীত্বই পুরুষত্বকে পথ দেখায়। আমার একটা আধিপত্য বছরের পর বছর ধরে আমি অর্জন করেছি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
জ্যঁ জেনেতের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ঘটনাগুলো বলবেন?

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ, তাকে চিনতাম। ক্যাট অন অ্যা হট টিন রুফ মঞ্চনাটকে আমি অভিনয় করেছিলাম। থিয়েটারে এসে তিনি আমার সঙ্গে দেখা করলেন। আমরা একসঙ্গে হাঁটতাম, পার্টিতে যেতাম, তিনি ফ্লার্ট করতেন : লোকজনকে ধরার জন্য আমাকে ব্যবহার করতেন তিনি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
থিয়েটারের মাধ্যমেই পরিচয় আপনাদের?

জ্যান ম্যরো
না। তার সঙ্গে আলাপ হয় ফ্লোরেন্স মালরুক্সের [ফরাসি অভিনেত্রী] মাধ্যমে; হুয়াইন গুইতিসোলোর [স্প্যানিশ কবি] মতো যারা জ্যঁ’র ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাদের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব ছিল ফ্লোরেন্সের।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আরেকজন বড় সাহিত্যিকের নাম নিলেন।

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ; তিনি স্প্যানিশ সাহিত্যিক। এখন মরোক্কোতে থাকেন। ফ্লোরেন্স মালরুক্স ছিলেন আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
তিনি আপনার জন্য যোগাযোগগুলো তৈরি করে দিতেন?

জ্যান ম্যরো
না, না; সেভাবে ভাবতেন না তিনি। তবে তিনি ন্যায়পরায়ণ এক নারী। আমার কাছে তিনি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আমি যেন তার আগেই মরতে পারি; তাকে ছাড়া বাঁচা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

জুলস অ্যান্ড জিম
ফিল্মমেকার । ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
তার মানে তাকে আপনি সবচেয়ে বেস্টফ্রেন্ডদের একজন ভাবেন?

জ্যান ম্যরো
সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন। তিনিই একমাত্র।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
সাহিত্যের সঙ্গে আপনার সংযোগের ব্যাপারটিও ইন্টারেস্টিং।

জ্যান ম্যরো
যত ফিল্মমেকারকে চিনি, তাদের মধ্যে ত্রুফো ছিলেন একজন বড় পাঠক। গোদার, শ্যাব্রল– এরা বই পড়ার মধ্যে, সাহিত্যের মধ্যে জীবন কাটাতেন। ছোটবেলায় আমার যেহেতু সাহিত্য পাঠের অনুমতি ছিল না… কোনো শিশুকে যখন কোনোকিছু করতে বারণ করা হয়, তখন তারা কী করে? তারা বই পড়ে! আমার যখন দশ বছর বয়স, তখন আবে মুরেত’স ট্রান্সগ্রেশন [এমিল জোলার উপন্যাস] পড়েছি। এটা পড়ে আমার জ্বর এসে গিয়েছিল। একজন ধর্মযাজক ও এক নারীর মধ্যকার সম্পর্কে এই প্রথম আমি আবিষ্কার করলাম, লোকটি নারীটিকে গর্ভবতী করে দিয়েছে। আমার দাদী ছিলেন একজন ক্যাথলিক চর্চাকারী। তারচেয়েও বড় কথা, আমি জানতে পারলাম, যেখানে ক্যাপিট্যাল ‘সি’-অলা গির্জার মধ্যেই আবে মুরেত সেই তরুণীটিকে গর্ভবতী করেছে, সেখানে গীর্জা কর্তৃপক্ষ সব দোষ এই তরুণীটির উপর চাপিয়ে দিয়ে ধর্মযাজককে রক্ষা করেছে। যে বাগানটিতে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটিকে কোনোদিনই ভুলব না।


এই
অঙ্কুরোদ্গমটি
আমার সামনে
কামনার বার্তা দিচ্ছে,
যদিও কামনা সম্পর্কে
কোনোই ধারণা ছিল না তখন

আমি বুঝে গেলাম, ফিকশন কী জিনিস; কেননা উবের্নি অঞ্চলে আমি গ্রীষ্মকাল কাটিয়েছি, এবং এই ফুল ও গাছগুলোকে বেশ ভালোভাবে চিনি। আবে মুরেত’স ট্রান্সগ্রেশন-এ পেলাম এমনই এক বাগান, যেখানে একই সময়ে সব ঋতুর মিশ্রণ রয়েছে। এখানে পদ্মফুল আর গোলাপ রয়েছে একই সময়ে; সবকিছুই মিশ্রিত এখানে! এখানে উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গম হওয়ার কালেও তামাটে পাতাগুলো ঝরে পড়ছিল…! ফলে নিজেকে বললাম, ‘এটা তো ফিকশন’ : বছরের প্রতিটি ঋতু, জীবনের প্রতিটি ঋতুর এই যে মিশ্রণ– এটি একটি প্রতীক; আর এই অঙ্কুরোদ্গমটি আমার সামনে কামনার বার্তা দিচ্ছে, যদিও কামনা সম্পর্কে কোনোই ধারণা ছিল না তখন।

লুমিয়ের
অ্যাকট্রেস ও ফিল্মমেকার । জ্যান ম্যরো

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনি যখন প্রথম ফিল্মমেকিংয়ে এলেন, তখন কি এই আইডিয়াটির ব্যবহার করেননি? সেই যে জাঁকাল বাগানটি?

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ; সেটি আমার বাড়িতে ছিল। আমার প্রথম সিনেমা লুমিয়ের-এর [১৯৭৬] শুটিং করেছি আমার সম্পত্তিতেই, সেন্ট ট্রোপেজের কাছে, লা প্রিভার্জা অঞ্চলে। নিজেকে তখন বলেছিলাম, ‘আমরা প্রতীক ব্যবহার করব।’ কেননা আমি একজন সম্পূর্ণই স্বশিক্ষিত মানুষ; হাই স্কুলের পরই [প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা] আর করিনি।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনার কাজে সাহিত্যের সংযোগটি জোরাল; কেননা শুধু জেনেতই নয়, বরং হেনরি মিলার [আমেরিকান সাহিত্যিক], জ্যঁ ককতো-সহ [ফরাসি সাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার] আরো অনেকেই ছিলেন…

জ্যান ম্যরো
তবে জ্যঁ ককতোকে আমি নিশ্চয়ই ভালোভাবে চিনতাম! তার দ্য ইনফারনাল ম্যাশিন [La Machine Infernale] নাটকে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। জ্যঁ রেনোয়ার [ফরাসি ফিল্মমেকার] সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ককতোর কাছে আমি ঋণী; জ্যঁ মারেই [ফরাসি অভিনেতা] ও ইংরিদ বারিমনের [ওরফে, ইঙ্গরিড বার্গম্যান; সুইডিশ অভিনেত্রী] সঙ্গে আমি ডিনার করেছিলাম, তারা তখন জ্যঁ রেনোয়ার সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছিলেন।

নাটক । দ্য ইনফারনাল ম্যাশিন
প্যারিস, ফ্রান্স; ১৯৫৪

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
জ্যঁ ককতোর সঙ্গে কি একটি ঐকান্তিক আলাপ ছিল না আপনার?

জ্যান ম্যরো
ওহ, আমাকে লেখা ককতোর চিঠিগুলো এক নির্বোধ সেক্রেটারি নষ্ট করে ফেলেছে…!

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
হায়! হায়!

জ্যান ম্যরো
সব চিঠি, সবকিছু…।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আর, হেনরি মিলার?

জ্যান ম্যরো
দেখুন, হেনরি মিলারের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে অ্যানাইস নিনের [আমেরিকান-ফরাসি-কানাডিয়ান প্রাবন্ধিক] মাধ্যমে; কেননা, আমার সঙ্গে মানাসসই– অ্যানাইস নিনের এমন একটি উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা বানাতে চেয়ে কুবেকের [কানাডা] এক তরুণ ফিল্মমেকার ও প্রডিউসার বলেছিলেন, ‘আপনি যদি রাজি থাকেন, অ্যানাইস নিনের অনুমতি নেব আমরা।’ তাকে বলেছিলাম, ‘আপনাকে তাহলে অবশ্যই প্যারিসে আসতে হবে; আপনাকে আমার চিনতে হবে আগে।’ ফলে সেই শ্যামাঙ্গিনী তরুণীটি এলেন– যিনি আমার কাজ আর অ্যানাইস নিনের প্রতি নিজের তীব্র অনুরাগের কথা জানান দিয়েছিলেন। নিজের একটি বইয়ের প্রচারণার কাজে তখন প্যারিসে থাকা অ্যানাইস নিনের সঙ্গে মিটিং করেছিলেন তিনি। সেবাস্তিয়েন বতিন রোডের কুই দো মোনা এলাকার একটি হোটেলে নিজেদের সান্নিধ্য আবিষ্কার করলাম আমরা।… ওখানে থাকার ইচ্ছে আমার সবসময়ই ছিল। সিনেমাটি কোনোদিনই বানানো হয়নি ঠিকই, তবে আমাদের দেখা হয়েছিল, ভালো সময় কেটেছে এবং পরস্পরের প্রতি আগ্রহ অনুভব করেছি। হেনরি মিলারকে নিয়ে অনেক গল্প তিনি শুনিয়েছেন।

এক সময় হেনরি মিলার শহরে থাকতেন, আমাদের দেখা হয়েছিল, ডিনার সেরেছি রিৎসে [হোটেল রিৎস পারি; প্যারিসের ফাইভ স্টার হোটেল]; এরপর আমি যুক্তরাষ্ট্রে, হলিউডে শুট করতে গিয়েছিলাম। সেখানকার এক পোস্টম্যান আমাকে তখন বিয়ে করতে চেয়েছিলেন; সে এক বিশাল ড্রামা, এক আমেরিকান পোস্টম্যান। ঠিক সে বছরই [রোমান] পোলান্সকির [পোলিশ ফিল্মমেকার] তরুণী স্ত্রীটি গুপ্তহত্যার শিকার হন। আমি আমার গৃহতত্ত্বাবধায়ককে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলাম। ভাগ্য ভালো, তিনি ইংরেজি বুঝতেন না। তিনি টিভি ছেড়ে রাখতেন, কিন্তু একটা শব্দও বুঝতেন না। তিনিই আমাকে ঘটনাটা জানালেন। আমি বললাম, ‘আরে না, এটা স্রেফ একটা টিভি সিরিজ।’ এটা বোঝানো খুবই জটিল ছিল, তবে অসাধারণ মানের ফ্রেঞ্চ ওয়াইন ছিল আমার কাছে, সেটি আমার এক বন্ধু পাঠিয়েছিলেন। আমি পৌঁছানোর আগেই গৃহতত্ত্বাবধায়কটি আমার জন্য খাবার প্রস্তুত রাখতেন।

আমার সে সময়কার অ্যাজেন্ট, পরবর্তীকালে বিরাট প্রডিউসার হয়ে ওঠা মাইক মিডেভয় আমাকে সেই ব্লকটিতে একটা বাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিলেন– যে ব্লকে সব তারকাদের বসবাস, এবং যেখানে নিজের পরিচয়পত্র প্রমাণ করা ছাড়া কারও পক্ষে ঢোকা সম্ভব নয়। অ্যানাইস সেখানে থাকতেন; কেননা তার স্বামী ছিল দুজন; বয়স্ক স্বামীটি ছিলেন নিউইয়র্কে, আর তরুণটি লস অ্যাঞ্জেলেসে– যে কিনা আবার অ্যালকোহলিক। যাহোক, একদিন তিনি সত্যি সত্যি আমাকে খুব রাগিয়ে তুলেছিলেন; বলেছিলেন, ‘আশা করছি কাউকে বললেন না আপনি আমাদের বন্ধু!’ বললাম, ‘আরে না, না, আপনার কথা আমি বলি না কাউকে।’ তিনি বললেন, ‘আপনি যদি বলেন নাট্যকারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে, তাহলে লস অ্যাঞ্জেলেসে আপনার সুনাম নষ্ট হবে।’

জ্যান ম্যরোআমোস জিতাই
ওয়ান ডে ইউ উইল আন্ডারস্ট্যান্ড-এর সেটে [২০০৮]

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
একটা কথা উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম, আপনি সেইসব অসাধারণ ফিল্মমেকারদের সঙ্গে কাজ করেছেন, যাদের নাম ইতোমধ্যেই এই আলাপে এসেছে : ত্রুফো, লুই মালে ও মানোয়েল দো অলিভেইরা– এরা প্রত্যেকেই একই প্রজন্মের; এবং আপনি কয়েকজন একেবারেই তরুণ ফিল্মমেকারের সঙ্গেও কাজ করেছেন– ফ্রাঁসোয়া অজোঁ [ফরাসি ফিল্মমেকার] ও আমোস জিতাই [ইসরাইলি ফিল্মমেকার]। তরুণ ফিল্মমেকারদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

জ্যান ম্যরো
এর মধ্যে কোনোই ফাকার নেই! আমোস জিতাইয়ের সঙ্গে কাজ করাটা অপেক্ষাকৃত বেশি উত্তেজনার; আমরা সত্যি সত্যি একে অন্যের সঙ্গে অনেকবারই ঝগড়া বাঁধিয়েছি। তার সিনেমায় কাজ করার বহু বছর আগের ঘটনা। আমি তার কাছে একবার একটা স্ক্রিপ্ট চেয়েছিলাম; বললেন, ‘আচ্ছা, আপনি আমাকে গল্পটা শোনান।’ তিনি স্রেফ এটুকুই বললেন। আমি বললাম, ‘আরে না, কাজটা আমি করব না।’ সে সময়ে তিনি আমার অ্যাজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন; আমাকে অপমান করার জন্য ফোন করেছিলেন। তিনি যখন একটি এক্সিবিশন করেছিলেন এবং পেদ্রো আলমোদোভারের [স্প্যানিশ ফিল্মমেকার] প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছিলেন– এর পরপরই সিনেমাটেকে [সিনেমা-হল, প্যারিস] তার সঙ্গে দেখা। আমার সেখানে যাওয়ার কারণ, আলমোদোভারকে আমি সত্যি পছন্দ করি; তার সঙ্গে একটা সিনেমা করার স্বপ্ন আমার সবসময়ই রয়েছে। সেখানে গেলাম, জিতাই আমাকে দেখলেন, আর আমি তার বাহুর ওপর ঝাঁপ দিলাম! এটা করার কোনো কারণই আমার ছিল না, কেননা তিনি আমাকে অপমান করেছিলেন! কিন্তু তার চেহারাটা আমার পছন্দ, তার সিনেমাগুলো আমার পছন্দ; এভাবেই আমরা একসঙ্গে কাজ শুরু করি। তবে আমাদের ঝগড়া হতো…।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
অন্যদিকে অজোঁ তো আপনাকে আর মেলভিল পুপুকে [ফরাসি অভিনেতা] অভিনয়ে নিয়ে একটি অসাধারণ সিনেমা [টাইম টু লিভ; ২০০৫] বানিয়েছেন।

জ্যান ম্যরো
হ্যাঁ; তবে শুরু থেকেই অজোঁর অনুরাগী আমি। তার মধ্যে সৃজনশীলতা রয়েছে; তিনি একেবারেই আলাদা– ঠিক ত্রুফোর মতো। ভীষণ রকমের বাণিজ-সফল সিনেমা এবং এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা– এইভাবে অদল-বদল করে তিনি সিনেমা বানান।

টাইম টু লিভ
ফিল্মমেকার । ফ্রাঁসোয়া অজোঁ

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
আপনার পরবর্তী সিনেমা কোনটি?

জ্যান ম্যরো
সান্দ্রিন ভেইসে [ফরাসি ফিল্মমেকার] নামের এক তরুণী ফিল্মমেকারের কাজ এটি, যেটির প্রডিউসার আত্মহত্যা করেছেন।

হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
হামবের বালসাঁ [ফরাসি প্রডিউসার]।

জ্যান ম্যরো
হুম। কয়েক বছর আগে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তিনিই ছিলেন এই মেয়ের [সিনেমাটির] প্রডিউসার। মেয়েটি অগ্রীম কিছু টাকা নিয়েছিলেন; তবে আমরা নিশ্চিত না এই গ্রীষ্মে শুটিং করতে পারব কি না। জোজি দায়াঁর [ফরাসি ফিল্মমেকার] নির্মাণে একটি টিভি সিরিজে অভিনয় করব। জোজি দায়াঁর সঙ্গে আমার ১৬ বছরের পরিচয়; আমরা একসঙ্গে একটি খুবই চমৎকার সিনেমায় [স্যে আমোর-লা; ২০০১] কাজ করেছি– যেখানে আমি মার্গারিতা দুরাসের [ফরাসি সাহিত্যিক ও ফিল্মমেকার] ভূমিকায় অভিনয় করেছি; এছাড়া আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে, সেটি লেখা হয়ে গেছে, এবং নতুন একটি সিনেমাও করব আমরা।


হান্স-উলরিখ ওবরিস্ট
জন্ম : ১৯৬৮ । সুইস আর্ট কিউরেটর, ক্রিটিক ও হিস্টোরিয়ান
উৎস : অ্যানাদার ম্যাগাজিন; ২০১২
Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৩ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here