তাইওয়ান স্টোরিজ: এডওয়ার্ড ইয়াংয়ের সাক্ষাৎকার

370
এডওয়ার্ড ইয়াং

ভূমিকা ও অনুবাদ: আবীর হাসান একা

অনুবাদকের নোট

আমার কৈশোর কাটছে টাঙ্গাইলে। ক্লাসে আমি-ই ছিলাম একমাত্র নন-লোকাল। ক্লাস সিক্সের শেষের দিকে আব্বু ব্র্যাক আফগানিস্তানে ট্রান্সফার হয়ে গেলে পুরো শহরে আপন বলতে ছিল মা আর ছোট বোন। মফস্বলের পাড়ায় পাড়ায় তখন চোগলখোড়ি রাজনীতির নোংরামি বাপ-চাচা হয়ে হাইস্কুল বালকদের উপর চুইয়ে চুইয়ে পড়তো (এখন কি অবস্থা জানা নাই)। অন্য পাড়ায় গিয়ে বিড়ি-সিগ্রেট খাওয়ার সাহস ভোলাভালা আমরা কলেজে উঠেও পাইতাম নাই। অমুক মেয়ে রাজি থাকলে তারে নিয়ে ডেইটে যাওয়া গেলেও সহি-সালামতে বাসায় ফেরার গ্যারান্টি ছিল না। এইটুকুন বাদ দিলে কৈশোরের আরটুকুন সম্পূর্ণ রঙিন।

তো আমাদের এই মফস্বলীয় কৈশোরের সবচে লেজিট রূপ পাইসি অ্যা ব্রাইটার সামার ডে‘তে। প্রথমবার সিনামা দেখার সময় বারবার খালি মনে হইতেছিল, ‘আরে এইটা তো আমাদের হাইস্কুল লাইফ!’ এরপর এডওয়ার্ড ইয়াংরে নানাভাবে এক্সপ্লোর করা হইছে। তাইওয়ান সমাজ-রাষ্ট্র নিয়ে ইয়াং’র কথা পড়লেও বারবার মনে হয় ‘আরে বাংলাদেশেও তো সেইম!’ দুই সোসাইটির মাঝে অসংখ্য মিল, দুই দেশেই হিউম্যানিটিজ পড়ানো হয় অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ স্টুডেন্টদের, ‘ভালোরা’ পড়ে সায়েন্স, নাটক-সিনামারে উভয়ই নিচু চোখে দ্যাখে, উভয়েরই মানসিকতা উবার-ক্যাপিটালিস্ট (এই দুনিয়ায় কার না?)।

বেসিক্যালি, ন্যুনতম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি না-থাকা দেশ থেকেও কিভাবে ইয়াং গ্যাংরা ফিল্ম ইতিহাসের সেরা সেরা সিনামা বানায় ফেলছিল তা আমারে অনেকদিন অবাক করে রাখছিল।

যাইহোক, তাইওয়ানিজ নিউ ওয়েভ সিনামার মূল কারিগর এডওয়ার্ড ইয়াং-এর জন্ম ১৯৪৭ সালের ৬ নভেম্বর, চীনের সাংহাইতে। জন্মের কিছুদিন পরই তার পরিবার চীন ছেড়ে তাইওয়ান চলে আসে। ছোটবেলা থেকেই ফিল্মমেকার হইতে চাইলেও যেহেতু তাইওয়ান সমাজে নাটক-সিনামাকে সুনজরে দেখা হইতো না, এমনকি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে হিউম্যানিটিজ পড়তেও নিরুৎসাহিত করা হইতো, তাই পারিবারিক চাপে ইয়াং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আমেরিকা পাড়ি জমান। ৭ বছর কম্পিউটার সেক্টরে কাজ করার পর জার্মান নিউ ওয়েভের আরেক বিখ্যাত পরিচালক ভের্নার হেরজোগের অ্যাগুইরে সিনামা দেখার পর সিদ্ধান্ত নেন তাইওয়ান ফিরে গিয়ে সিনামা বানাবেন।

২০০০ সালে তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র য়্যি য়্যি-এর জন্যে কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পরিচালকের পুরস্কার পাওয়ার পরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে। বিবিসির সেরা ১০০ বিদেশি চলচ্চিত্র জরিতে তার পরিচালিত দুটি চলচ্চিত্র য়্যি য়্যি এবং অ্যা ব্রাইটার সামার ডে যথাক্রমে ২৫ এবং ৩৮তম স্থান পায়। তার সেমিনাল চলচ্চিত্র অ্যা ব্রাইটার সামার ডে রোটেন টমেটোস ওয়েবসাইটের বিরল ১০০% ফ্রেশ রেটিং-এর অধিকারী।

ইয়াং ২০০৭ সালের ২৯ জুন কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ক্যালিফোর্নিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।

নিচের সাক্ষাৎকারটি কানে সেরা পরিচালক পুরস্কার পাওয়ার পর ব্রিটেনের বিখ্যাত নিউ লেফট রিভিউ পত্রিকাকে দেওয়া।


এডওয়ার্ড ইয়াং
এডওয়ার্ড ইয়াং। ফিল্মমেকার; তাইওয়ান। ৬ নভেম্বর ১৯৪৭–২৯ জুন ২০০৭

সাক্ষাৎকার

:: সিনামার সাথে প্রথম পরিচয় কীভাবে?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: তাইওয়ানে আসার আগে, আমার মফস্বলি বাবা সাংহাইয়ের এক ব্যাংকে জব করতেন এবং প্রতি সপ্তাহে আমাকে সিনামা দেখতে নিয়ে যাইতেন। সেইসময়ের হিসেবে এইটা কমন ঘটনা না। বলা যায় খুব অল্প বয়সেই, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে সিনামা ঢুকে গেছিলো আমার ফুসফুসে। আমার আরেক প্রেমিকা ছিল কমিক্স– জাপানিজ মাঙ্গা। ছোটবেলায় আঁকাআঁকিতে ভালো ছিলাম, আর গল্প বানাইতে পারতাম, বন্ধুদের কার্টুন এঁকে দিতাম; এজন্য ইশকুলে আমি পপুলার ছিলাম। ৯ বছর বয়সে, লুকায়ে লুকায়ে দ্য রোমান্স অফ থ্রি কিংডম পড়ে ফেলি, এরপরে গোগ্রাসে ক্লাসিক চাইনিজ উপন্যাস গিলতে শুরু করি। তা ছাড়া বিদেশি কোনো সিনামা ভালো লাগলে সেই সিনামার সোর্স গল্প-উপন্যাস যোগাড় করে পড়ে ফেলতাম, যেমন ডক্টর জিভাগো। গল্প-বলা আমার জীবনের সাথে সব সময়ই আষ্টেপৃষ্টে জড়ায়ে ছিল।

:: তখন কোন ধরনের সিনামা দেখতেন?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: যা পেতাম সব– আমেরিকান, জাপানি, হংকং, যেকোনো কিছু। আমার টিনেজ সময়ে তাইপে শহরে নানান জনরার সিনামা দেখা যাইতো। বাকি দুনিয়ার কাছে কুওমিনটাং সরকারকে বৈধ দেখানোর পলিসি হিসেবে ন্যাশনালিস্ট সরকার সারা বিশ্ব থেকে সিনামা নিয়ে আসতো আর নির্দিষ্ট সিনামা-হলে সেগুলো প্রদর্শন করতো। প্রতিটা দেশের সিনামা প্রদর্শনের জন্য বিশেষ হল বানানো হইছিল, যেমন: জাপানি সিনামা প্রদর্শনের জন্য আলাদা একটা সিনামা হল। কূটনৈতিক কারণেই এই খাতে ব্যয় করা হইতো। ফলে আমরা প্রতি সপ্তাহে ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, জাপানি, আমেরিকান সিনামা দেখতে পাইতাম। এরচে দুর্দান্ত কিছু তখন আমরা ভাবতেই পারতাম না!

অবশ্য, এটা বেশিদিন টিকে নাই। ন্যাশনালিস্ট সরকার জাতিসংঘে তার আসন হারায়, অন্যদিকে বেশির ভাগ রাষ্ট্র চীনকে স্বীকৃতি দেয়; ফলে এই পলিসি তার যৌক্তিকতা হারায় এবং কুওমিনটাং সব থিয়েটার বন্ধ করে দেয়। এর সাথে কিছু কমিক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, যেমন জাপান সরকার বেইজিংয়ে অ্যাম্বাসি চালু করলেও দক্ষিণ কোরিয়া তখনো করে নাই, ফলে আমাদের ‘জাপানি’ থিয়েটারে তখন শুধু কোরিয়ান সিনামা চলতে থাকে।

যাইহোক, আমরা মূল পলিসির কারণে অনেক বেনিফিটেড হইছিলাম বলতেই হবে। পরের প্রজন্ম এতটা ভাগ্যবান ছিল না।

:: সেই সময়ে দেখা সিনামাগুলো থেকে কোনো ইনফ্লুয়েন্স কি আপনাদের কাজে টের পাওয়া যায়?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: ঠিক জানি না। সম্ভবত ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম আমাদের উপর প্রভাব ফেলছে, এর কারণ নিওরিয়ালিস্ট মেথড খুব সাশ্রয়ী। আর আমাদেরও কোনো পয়সাকড়ি ছিল না। আমরা বুঝে গেছিলাম, সিনামা বানাইতে চাইলে টাকা দিয়েই বানাইতে হবে।

অ্যা ব্রাইটার সামার ডে
অ্যা ব্রাইটার সামার ডে। ফিল্মমেকার: এডওয়ার্ড ইয়াং

:: তাইওয়ানিজ নিউ ওয়েভের সূচনা কীভাবে?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: এটা জানতে হলে আপনাকে পঞ্চাশের শেষ আর ষাটের শুরুতে তাইওয়ানের অবস্থা বুঝতে হবে। কুওমিনটাং শাসন ছিল ভয়াবহ রকম কঠোর এবং রক্ষণশীল এক স্বৈরশাসন। যেকোনো শহুরে কিশোর-যুবার কাছে সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা ছিল পীড়াদায়ক। এটা বুঝতে কোনো রাজনৈতিক মতবাদ জানা লাগতো না– চারপাশে তাকালেই টের পাওয়া যাইতো। নিয়ম-নীতি, চালচলন, আর স্কুল থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান ছিল স্বৈরাচারী। সরাসরি নিয়মের বিরোধিতা কেউ করতে পারতো না, এমনকি লম্বা চুলের কারণেও নানান ঝামেলায় পড়তে হতো।

এ কারণে আমাদের প্রজন্ম বাইরে প্রথামাফিক চললেও ভিতরে ভিতরে ছিল ক্ষিপ্ত। সরকার আমাদের নানান মিথ্যা গালগপ্পো শোনাতো, তাতে আমাদের কোনো বিশ্বাস ছিল না। এমনকি আমাদের বাপ-মাও সেগুলা বিশ্বাস করতো না। আমাদের জীবনযাত্রা বিদঘুটে ছিল। বলতে পারেন এই সিস্টেমের বিরুদ্ধাচারণ থেকেই তাইওয়ানিজ নিউ ওয়েভের জন্ম।


যদিও
একদম
সেন্টারে ছিল
সেক্সুয়াল ফ্রিডম,
কিন্তু আমাদেরকে আকর্ষণ
করেছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে
আসা অপরিবর্তনীয় হায়ারার্কি
থেকে মুক্তি পাওয়ার
প্রতিশ্রুতি

সেই সময়ে এই বিদ্রোহ মূলত সাংস্কৃতিক আকার ধারণ করে। রক মিউজিকের প্রভাব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে বুড়ো আঙুল দেখানো আমেরিকান এইসব নতুন সাউন্ডে আমরা তখন যারপরনাই মুগ্ধ ছিলাম! যদিও একদম সেন্টারে ছিল সেক্সুয়াল ফ্রিডম, কিন্তু আমাদেরকে আকর্ষণ করেছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসা অপরিবর্তনীয় হায়ারার্কি থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রতিশ্রুতি।

শুনতে অবাক লাগলেও প্রতি সপ্তাহে ‘টপ টেন’ লিস্ট আপডেট হওয়াও আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতির কাছে ছিল বিশাল বৈপ্লবিক। খুব সম্ভবত আমরাই প্রথম চাইনিজ প্রজন্ম, যারা পারিপার্শ্বিক সামাজিকতা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বড় হয়েছি। মানতেই হবে, আমেরিকান পপ কালচার আমাদের এক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। আর যেহেতু আমেরিকা ছিল ন্যাশনালিস্ট শাসনের অফিশিয়াল রক্ষাকর্তা এবং বন্ধুভাবাপন্ন, ফলে কুওমিনটাং সরকার এটা আটকাতে পারে নাই।

আদতে এটাই নিউ ওয়েভের ব্যাকগ্রাউন্ড যা আপনারা আমার অথবা হো সিয়াও-সিয়েনের সিনামায় সচরাচর দেখতে পান। অবশ্য, সিনামা বানাতে আমাদের আরও অনেক সময় লেগে গেছে। সত্যিকার অর্থে নিউ ওয়েভ শুরু হয় যখন ন্যাশনালিস্ট সরকার সঙ্কটে পড়ে, ১৯৭৯ সালে। কার্টার যখন মেইনল্যান্ড চীনের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে, কুওমিনটাং তখন নরকাগ্নিতে গিয়ে পড়ে। ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘে আসন হারানোর ক্ষত তখনো শুকায়নি। এর উপর আমেরিকার বিশেষ অনুগ্রহের অবসান ছিল কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। হুট করেই ন্যাশনালিস্ট সরকার দলছুট হয়ে যায়, এবং তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচে বাজে সময়কাল অতিবাহিত করতে থাকে।

আগে থেকেই সরকারি প্রোপাগাণ্ডায় জনগণের বিশ্বাস ছিল না। এবার তারা নিঃসঙ্কোচে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস পায়। বেশ কয়টা বড় বড় বিক্ষোভের পর, অবশেষে ১৯৪৯ সাল থেকে চলে আসা মার্শাল ল বাতিল করতে বাধ্য হয় সরকার। ঠিক গণতন্ত্র না এলেও, সরকারের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তখন দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে সাংস্কৃতিকভাবে সেন্সরের বিরোধিতা করা সম্ভব হয়ে ওঠে।

আমি তখন তাইপে ছেড়ে প্রায় দশ বছর হলো আমেরিকার সিয়াটলে এক কম্পিউটার কোম্পানিতে চাকরি করছি। যখন দেখলাম রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হচ্ছে, তখন সিদ্ধান্ত নেই, ফিরে গিয়ে সিনামা বানাবো। আমার বয়স তখন তেত্রিশ।

:: এখনকার সময়কে তখনকার সাথে কীভাবে তুলনা করবেন?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: ইন্টারেস্টিংলি ‘৭০ বা ৮০’র দশক কিছু ক্ষেত্রে ৯০’র চে– মানে তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক হওয়ার আগে– বেটার ছিল বলা যায়। আজকে বাইরে থেকে অনেক কিছুই দেখতে গণতান্ত্রিক লাগে, কিন্তু দ্রুত বুঝে ফেলতে পারবেন যে গণতন্ত্রের আড়ালে অনেক কিছু লুকায় রাখা সম্ভব। কিছুদিন আগে, চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করার বছরে, সেখানকার এক বন্ধুর জন্য একটা কমেডি লিখি। থিম ছিল যদি চীনা নেতারা বুঝে ফেলে কীভাবে তাইওয়ানের গণতন্ত্র কাজ করে, তবে তারা পরেরদিনই গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হবে।


অনুকরণ যখন
পুরস্কৃত হয়, বৈচিত্র্য
তখন মূল্য
হারায়

শাসনব্যবস্থার চাবি হচ্ছে দুইটা– মিডিয়া এবং বিচার বিভাগ। আপনার যদি স্বাধীন বিচার বিভাগ না থাকে, তবে আপনি বিশেষ কিছু স্বার্থান্বেষী গাইডলাইন না মানলেই শাস্তি ভোগ করবেন। এর ফলে কোনো নিরপেক্ষ মিডিয়া থাকবে না, আর নিরপেক্ষ মিডিয়া না থাকলে কোনো বাকস্বাধীনতাও থাকবে না। তখন আপনার চিৎকারও কারো কানে যাবে না। অনুকরণ যখন পুরস্কৃত হয়, বৈচিত্র্য তখন মূল্য হারায়। আমাদের পলিটিশিয়ানরা অদূরদর্শী, রিক্ত। আপনাকে সারাদিন ওদের অর্থহীন দম্ভোক্তি শুনতে হবে, কিন্তু আপনি এর বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবেন না। স্বৈরশাসনকালে আপনি অন্তত একটা লক্ষ্য নিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ড চলে যেতে পারবেন। কিন্তু এখন সবকিছু দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও সিস্টেমের সাথে আপনি সত্যিকারের অংশগ্রহণে অক্ষম।

:: আপনি বড় হয়েছেন কুওমিনটাংয়ের স্বৈরাচারী শাসনামলে, এবং এ ধরনের শাসনে কেমন সমাজ গড়ে ওঠে তা নিয়ে সিনামাও বানিয়েছেন। বর্তমানে, তাইওয়ানে আরেকটি সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে– মেইনল্যান্ডার এবং আইল্যান্ডারের মধ্যকার আইডেন্টিটির প্রশ্ন নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তাইওয়ানিজ জাতিসত্তা বা জাতীয়বাদের সাথে ব্যাপকভাবে চৈনিক চেতনার দ্বন্দ্ব নিয়ে কেউ কি সিনামা বানিয়েছে? নাকি সিনামা বানানোর জন্য টপিক হিসেবে এটি এখনো স্পর্শকাতর?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: এই টপিকেও সিনামা বানানো সম্ভব; কিন্তু কে এত বড় ভার কাঁধে তুলে নিবে– এত তাকত কার আছে? আমি যদি আজকের যুগের ফিল্মমেকার হতাম, হয়তো আমি থিম হিসেবে এ বিষয়কে বেছে নিতাম। আমি স্বাদেশিক কোনোকিছুর মানে খুঁজে পাই না। তার মানে এই না যে আমি আইডেন্টিটি বা স্বাধীনতার বিরোধী।

তাইওয়ানের আইডেন্টিটি নিয়ে আলোচনা সব সময় বিরক্তিকর ওভারটোনে ভরা। প্রায়ই দেখি সেসবে কোনো সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতা থাকে না, বরং জাপানের অতিগোঁড়া দলগুলোর মতন অতিরক্ষণশীল জাতীয়তাবাদের প্রতি প্রশ্রয় থাকে।

কয়েক মাস আগে প্যাসিফিক যুদ্ধে জাপানের ভূমিকা নিয়ে কোবাআশি ইয়োশিনোরি নামে একজন কমিক্স লিখেছে। সেখানে জাপানকে দেখানো হয়েছে ত্রাতা হিসেবে, পশ্চিমা শেতাঙ্গদের থেকে চাইনিজদের রক্ষাকারী হিসেবে। এটা ঠিক সেই ধরনের প্রোপাগাণ্ডা যা ব্যবহার করে ইউরোপে লাখ লাখ ইহুদি মারা হয়েছিল। বইটা তাইওয়ানে প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রচুর মানুষ এটাকে ডিফেন্ড করেছে। এ রকম কেন হয় আমার মাথায় ঢুকে না। পুরো ব্যাপারটাই দুর্ভাগ্যজনক।

আমি যদি ১৯৪৭ সালের মার্চ ম্যাসাকার* নিয়ে সিনামা বানাতাম, তাহলে আমি শুধু সেই গণহত্যার শিকার তাইওয়ানিজদের সাথেই সহানুভূতিশীল হতাম না, তাতে যেসব নিরপরাধ মেইনল্যান্ডার ভিক্টিম হয়েছিল, তাদের গল্পও বলতাম।

*মার্চ ম্যাসাকার: ১৯৪৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পরে তাইওয়ান জুড়ে। কুওমিনটাং সরকার কঠোরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করে। আনুমানিক ২৮০০০ মানুষ এতে নিহত হন। এটি ২৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষ নামেও পরিচিত। --অনুবাদক

:: তাইওয়ানের সবচে বড় শহর নিয়ে গোটা একটা সিনামা বানিয়েছেন আপনি; কীসের আগ্রহ থেকে তাইপেই স্টোরি [১৯৮৫] বানিয়েছিলেন?

এডওয়ার্ড ইয়াং
দ্যাট ডে, অন দ্য বিচ। ফিল্মমেকার: এডওয়ার্ড ইয়াং

এডওয়ার্ড ইয়াং :: আমার প্রথম ফিচার, সেদিন সৈকতে [দ্যাট ডে, অন দ্য বিচ; ১৯৮৩] আমি নিজের এবং কাছের বন্ধুদের জীবনে ঘটা নানান ঘটনা দিয়ে ন্যারেটিভ সাজিয়েছিলাম। সিনামাটি ব্যবসাসফল হয়, লোকে বলে কারণটা নাকি স্টারকাস্টিং। তাই আমার দ্বিতীয় সিনামা বানানোর সময় আগেকার সীমাবদ্ধতাগুলো ভেঙে ফেলতে চাইলাম। সেটা করার একটা রাস্তা ছিল কোনো তারকা অভিনেতা না নিয়ে অপেশাদার অভিনেতা ব্যবহার করা। আরেকটা রাস্তা হলো শূন্য থেকে গল্প তৈরি করা– এমন গল্প যা আমার ব্যক্তিগত কিংবা আমার পরিচিত কারো অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা নয়।

এ রকম একটা কনসেপ্ট নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। আমি তাইপেই নিয়ে গল্প বলতে চাচ্ছিলাম। এর সাথে ব্যক্তিগত কারণও যুক্ত ছিল। লোকে আমাকে প্রায়শই মেইনল্যান্ডার বলে ট্যাগ করতো; বলতো আমি তাইওয়ানবিরোধী ফরেইনার। কিন্তু আমি নিজেকে ‘তাইপেই গাই’ মনে করি। আমি মোটেই তাইওয়ানবিরোধী নই, আই অ্যাম ফর তাইপেই।


বিতর্কিত কিছু প্রশ্ন স্ক্রিনে
ছুঁড়ে দর্শককে তাদের
যাপিত জীবন নিয়ে
জিজ্ঞাসা
বাড়ানো
ছিল
আমার উদ্দেশ্য

আমি চেয়েছিলাম শহরের প্রতিটা উপাদান সিনামায় রাখতে, আনকোড়া গল্পের জন্য তাই বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছিল। প্রধান দুই চরিত্র তাইপেই শহরের অতীত আর ভবিষ্যৎ রিপ্রেজেন্ট করে এবং এই অতীত থেকে ভবিষ্যতে ট্রাঞ্জিশন করার গল্পটাই বলতে চাইছি। বিতর্কিত কিছু প্রশ্ন স্ক্রিনে ছুঁড়ে দর্শককে তাদের যাপিত জীবন নিয়ে জিজ্ঞাসা বাড়ানো ছিল আমার উদ্দেশ্য। বাইরে-বাইরে তাইপেই স্টোরি অনেক মেলাড্রামাটিক হলেও আমাদের জীবনযাপনের প্রতিটি উপাদান সিনামায় ছিল। এটা দেখানো মূলত আমার উদ্দেশ্য….

এডওয়ার্ড ইয়াং
তাইপেই স্টোরি। ফিল্মমেকার: এডওয়ার্ড ইয়াং

:: দর্শক সিনামাটি কীভাবে নিয়েছিল?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: বক্সঅফিসের অবস্থা ছিল শোচনীয়। বড় কারণ, সিনামায় কোনো তারকা অভিনেতা ছিল না। আর অনেকেই সিনামার ইন্টেনশন ধরতে পারেনি। তারা আশা করেছিল আরেকটি সেদিন সৈকতে— রোমান্টিকতায় মোড়ানো আরেকটি প্রেমের গল্প। তাই তারা সিনামা দেখে চুপসে যায়। ‘কী? এইটাকে তুমি প্রেমের গল্প বলছো– এটা তো ব্রেকাপের গল্প?’

কিন্তু তখন তাইপেই শহর দেখলে আমার বিচ্ছেদের কথাই মনে হতো, যেন অতীতের থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সরে আসছি– একটু একটু করে। অতীতের সাথে আমাদের রোমান্টিক সখ্যতা ছিল, কিন্তু তাতে বাধ সাঁধে বাস্তবতা, অস্বচ্ছলতা আর সীমাহীন ক্লেশ। এরপর নারী চরিত্রে উপর কঠিনসব চাহিদা এসে ভর করে। সে বাধ্য হয় ভিন্নভাবে ভাবতে, এ বিষয়গুলো না ধরতে পারলে সিনামার গল্পটা মাঠে মারা যায়।

এটাও ঠিক তখন বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন সমালোচক ছিল না, এবং প্রায় প্রত্যকেই সিনামাটিকে কমার্শিয়াল ফেইলার অভিহিত করে বাতিল করে দেয়। কিন্তু পিছন ফিরে তাকালে, তাইপেই স্টোরি শহরটির প্রতি আমার অনুরক্তিই প্রকাশ করে– কতটা বন্দি ছিলাম অতীতের বাঁধনে, আর কতটা উন্মুল ছিল ভবিষ্যতের বাসনা!

ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের প্রথম ব্যাচের অল্প যে কয়জন শিক্ষার্থীদের থেকে তাইওয়ানের হাইটেক লিডারেরা বের হয়েছিল, আমি ছিলাম তাদের একজন। আমাদের থেকে অনেকেই পরে এই দ্বীপের সর্বোচ্চ ধনী হয়। যদিও সে সময় এরকম কিছু আমরা আঁচ করতে পারিনি। আমেরিকা এখানে একটা ল্যাবরেটরি স্থাপন করে, আর আমাদের স্কুলপাশ গ্রাজুয়েটরা সেখানে চাকরিতে ঢুকে পড়ে। এই ল্যাবরেটরি থেকেই পরে সেমি-কন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি জন্ম নেয়। যারা এই লাইনে ছিল তারাই পরে ফার্স্ট জেনারেশন ইলেকট্রনিক ধনকুবের হয়।

আমি এই রূপান্তরের ভিতর দিয়ে গেছি, এর সাথে আমার অনেক আবেগও জড়িত, সমাজের এই সফিস্টিকেইটেড অংশে কী কী হয়েছিল– আমি তার প্রত্যক্ষদর্শী। এ সময় খুব দ্রুত আমাদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক জীবন পাল্টে যায়। আমি সৌভাগ্যবান যে আমাকে এর ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল এবং আমি এই গল্পটা বলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম– আমি না বললে কে বলতো?

একই ধরনের প্রণোদনা থেকেই পরবর্তীকালে অ্যা ব্রাইটার সামার ডে [১৯৯১] বানাই, যদিও সেটা আরও ২৫ বছর আগেকার, ১৯৬০ সালের গল্প ছিল। মেইনল্যান্ড থেকে আসা পরিবারগুলো তাইওয়ানের সমাজে কীভাবে সেটল হয়, সেটাই ছিল এই সিনামার কাহিনি। এই সময়কালের কোনো ইতিহাস রেকর্ড করেনি কেউ, কারণ এ সময়টা ছিল কুওমিনটাং শাসনামলের সবচে কালো অধ্যায়, সরকার কখনো এসব জানতে দিতে চায়নি। কিন্তু তাইওয়ানিজরাও সিনামাটি ভালোভাবে নেয়নি, তাইওয়ানের এই অধ্যায় তারাও দেখতে চায়নি। এমনকি কেউ কেউ এ সিনামাকে ২৮ ফেব্রুয়ারির সমতুল্য বলেছে।

:: আপনি কি একাই স্ক্রিপ্ট লিখেন, নাকি অন্যদেরও সাহায্য নেন?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: আমার সিনামার গল্প প্রধানত আমি নিজেই লিখি। তবে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলা, আইডিয়া নাড়াচাড়া করার জন্য সহকর্মী রাখি। এটা সিনামা বানানোর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট, তাই সব সময় আমার সহকর্মীদের ক্রেডিট দেই।

এডওয়ার্ড ইয়াং
টেরোরাইজারস। ফিল্মমেকার: এডওয়ার্ড ইয়াং

:: টেরোরাইজার‘র [১৯৮৬] আইডিয়া কীভাবে এলো?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: মাথায় তো ১৫/২০ বছর ধরে অনেক আইডিয়া ঘুরঘুর করছে, যেগুলার থেকে কোনো-কোনোটা সিনামার স্ক্রিনে আসে। এরমধ্যে সবচে দ্রুত আইডিয়া থেকে সিনামাতে এসেছে টেরোরাইজার। বড় ট্রিগার ছিল ইউরোশিয়ান মেয়েটি, ওর সাথে আমার পরিচয় হয় মিউচুয়াল ফ্রেন্ডের মাধ্যমে, আর ওকে দেখেই বুঝে ফেলি ওর অভিনয়ের পটেনশিয়ালিটি আছে। কথায় কথায় জানতে পারি মায়ের সাথে ওর বনিবনা হয় না, মা ওকে ঘরে আটকিয়ে রাখতো। বন্দি অবস্থায় সে প্র্যাঙ্ক কল করতো। একবার এক নারীকণ্ঠ ফোন ধরলে মেয়েটি বলে, ‘আমি আপনার হাজবেন্ডের প্রেমিকা, আপনার সাথে আমার কথা আছে।’ কিন্তু সাথে সাথে লাইনটি কেটে যায়।

আমি এ ঘটনা শুনে মারাত্মক শকড হই! আরে এটা তো বোম, আপনার এমন কাজে মানুষ খুন পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে! এরপরে বাকি গল্প দ্রুত চলে আসে। এর ন্যারেটিভটা জটিল, কারণ সিনামায় পরস্পর সম্পর্কহীন এমন একদল মানুষকে দেখানো হয়, যাদের প্রত্যেকের খামখেয়ালিপনার কারণে, একটা র‍্যান্ডম ফোনকল থেকে ভয়ানক ট্র্যাজেডি জন্ম নেয়।

:: সিনামা বানানোর টাকা কীভাবে যোগাড় করেন? তাইওয়ানিজ কোনো স্টুডিও ফাইন্যান্স করে, নাকি আপনি নিজেই টাকার বন্দোবস্ত করেন?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: বেসিক্যালি, আমি বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিয়ে সিনামা বানাই, এরপর দেনা শোধ করতে থাকি। এ ব্যাপারে আমার দার্শনিক মতবাদ হলো: যদি টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আমাকে বড়জোড় জেলের ভাত খেতে হবে। কিন্তু একদম শুরুতেই, আমার প্রথম ফিচার লোকাল বক্স অফিসে ব্যবসাসফল হওয়ার পরে, আমি বুঝতে পারি আমার কম্পিউটার ফ্রেন্ডদের মতন আমরাও শুধু লোকাল মার্কেট দিয়ে টিকে থাকতে পারবো না। আমাদের এক্সপোর্টের দিকে যেতে হবেই। আর সেক্ষেত্রে আমাদের কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

কিন্তু আমাদের ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটররা ঠিক এর উল্টো পথে গেছে। তাদের কথা হচ্ছে: লোকাল রুচি যা চায় তাই দিতে হবে, মানে হচ্ছে কমশিক্ষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ যা চাবে তা দিতে পারলেই কেবল টাকা আসবে। শুরুতে না বুঝলেও, ধীরে ধীরে আমি রিয়ালাইজ করি যে এই ম্যাস মার্কেট কেন্দ্র করে সিনামা বানাতে থাকলে কোয়ালিটি দিন দিন খারাপ হতে থাকবে। এবং ঠিক সেটাই ঘটে, হংকংয়ের দিকে তাকান, সেখানেও ঠিক এটাই ঘটেছে, তাইওয়ানে এটা ঘটেছে৷

সব ন্যাশনাল সিনামার কপাল এই খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে গেছে। তাই আমি যখন শিক্ষিত আরবান অডিয়েন্স টার্গেট করে সিনামা বানানোর চেষ্টা করি, স্বভাবতই ডিস্ট্রিবিউটররা খুশি হয় নাই। আমাদের ডিস্ট্রিবিউটররা ২০০০ সিনামা হলে এক সপ্তাহ’র জন্য একটা সিনামা চালাতে খুব আগ্রহী; কিন্তু অল্প কয়টা হলে ৩/৪ মাসের জন্য কোনো সিনামা চালাতে রাজি না, তাদের ভাষায় এগুলা হচ্ছে ‘আর্ট ফিল্ম’ বা এ রকম কিছু।

তো ব্যাপারটাকে আমি এভাবে দেখি: কোয়ালিটি সিনামা থেকে দেশে যদি কোনো টাকা নাও পাই, অন্তত বাইরে থেকে আয় সম্ভব। ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সার্কিটে স্বীকৃতি পাওয়ার অল্প কদিন পর থেকে আমাদের সিনামা বানানোর খরচ উঠে আসতে থাকে।

তবে তখনো আমরা জানতাম না এই সাকসেস নিয়ে কী করবো, কীভাবে বিজনেস চালাবো। হংকং থেকে এক বন্ধু আমাদেরকে ব্রিটিশ এক সেলস এজেন্ট ম্যানেজ করে দেয়, যে কি না আমাদের সিনামার বাজার খুঁজতে থাকে। সবার আগে জাপান আমাদের সিনামা নেয়। তখন রিয়ালাইজ করি যে আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে, কারণ তাইওয়ানে তখনও সস্তায় সিনামা বানানো যেত। অর্থাৎ কয়েকটা জায়গায় সেল করতে পারলেই সিনামা বানানোর টাকাটা উঠে আসতো।

আমার মতন প্রকৌশলী ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকের জন্য এটা বেশ কার্যকরী বিজনেস মডেল। এতে হয়তো স্থানীয় বিনোদন পাতার শিরোনাম হওয়া যাবে না, কিন্তু মনের মতন কাজ করা যাবে আর ডিসেন্ট সিনামা বানানো যাবে। এভাবে ৯০’র দশকে এসে আমি নিজেই নিজের সিনামার প্রযোজক হওয়ার কনফিডেন্স পাই।

এডওয়ার্ড ইয়াং
য়্যি য়্যি। ফিল্মমেকার: এডওয়ার্ড ইয়াং

:: আপনার লেটেস্ট সিনামা, য়্যি য়্যি [২০০০] তাইওয়ানে কেমন চলেছে?

এডওয়ার্ড ইয়াং :: সত্যি বলতে, তাইওয়ানে সিনামাটি এখনো কমার্শিয়ালি রিলিজ হয়নি। রিসেন্ট এই কাজটায় আমি প্রযোজক ছিলাম না। জাপানি প্রযোজক এই সিনামার কপিরাইটের মালিক, আর তাইওয়ানিজ ডিস্ট্রিবিউটররা প্রযোজকের চাহিদামতন টাকা দিতে রাজি না। এ ছাড়া তাদের মধ্যকার রিলেশন সুবিধার না। অতীতে তাইওয়ানিজ ডিস্ট্রিবিউটররা প্রতিশ্রুত প্রোফিট শেয়ার করে নাই, সব সময় বলে এসেছে কোনো প্রোফিট হয় না। এবার তাই জাপানিজরা শুরুতেই এককালীন টাকা চেয়ে বসেছে, ফলে সব ঝুলে আছে। পৃথিবীর কোথাও যেখানে ফিল্ম বিজনেস স্বাভাবিক অবস্থায় নাই, সেখানে তাইওয়ানে সেই স্বাভাবিকতা আশা করা পুরোদস্তুর পাপ।

:: মেইনল্যান্ডের কোন ডিরেক্টর আপনার প্রিয়?


যেন ডিরেক্টররা দর্জি,
বিদেশি খদ্দেরের
মর্জিমাফিক
স্যুট
বানানোর কারিগর

এডওয়ার্ড ইয়াং :: তিয়ান জুয়ানজুয়াং’কে আমি মারাত্মক শ্রদ্ধা করি। সে একাই একশো। অথোরিটির বিরুদ্ধে তার দাঁড়ানোর সাহসিকতাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি। তবে চীনের ফিল্মে এখন প্রচুর বাইরের টাকা ঢুকছে। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যে ডিরেক্টরের হাতে প্রযোজক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের একটা পাতা দেখায় বলে, ‘এ রকম কিছু একটা বানায় দাও দেখি!’ যেন ডিরেক্টররা দর্জি, বিদেশি খদ্দেরের মর্জিমাফিক স্যুট বানানোর কারিগর।

তরুণ ফিল্মমেকারদের জন্য এটা মোটেও ভালো কিছু না। নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি কারণ আমাদের সাথে এমন কিছু হয়নি। তারপরও আমাদের আশা করে যেতে হবে যে চাইনিজ বক্স অফিসের রমরমা অবস্থা নতুন ফিল্মমেকারদের ফ্রিডম আর সেল্ফ-কনফিডেন্স যোগাবে।

Print Friendly, PDF & Email