সাক্ষাৎকার: মনোরম পলক
নূরুল আলম আতিক। বাংলাদেশি ফিল্মমেকার। ফিল্ম: ‘ডুবসাঁতার’ [২০১০] এবং ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ [২০২১]। তার আরও কিছু ফিল্ম এখন নির্মাণাধীন। সাক্ষাৎকারটি ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ নেওয়া। আলাপের প্রবাহ ধরে রাখতে তার মুখের ভাষা যথাসম্ভব অবিকল রাখা হলো…
মনোরম পলক :: আপনি ছবি কেন বানান– এই প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। এরকম একটা প্রশ্ন করতে হয় বলেই করা!
নূরুল আলম আতিক :: এখন আর এগুলো বলার, ব্যাখ্যা করার অবস্থা নাই। তোমার নিজের কৌতুহলের জায়গা থেকে যদি কিছু থাকে, বরং সেই প্রশ্ন যদি করো, তাহলে সহজ হয়। এগুলি নানান জায়গায় বলাবলি হইছে। আবারও ঘুরে ফিরে ওই একই কথা বলতে হবে!
এটা ধরো, রিটেক নিলে পারফরমারদের স্কিল ডেভেলপ হয়। আমাকে এসব প্রশ্ন করে নতুন কোনো উত্তরও হবে না, রিটেকে কোনো স্কিল ডেভেলপমেন্টও হবে না। অহেতুক কথা বলা। তবু তোমাকে ফর্মাল প্রশ্নের অংশ হিসেবেই বলি, আমার এইসব সিনেমা বানানোর, নাটক-সিনেমা করার কোনোই বাসনা ছিল না, যখন এই কান্ড-কারখানার সাথে জুটি। কেবলমাত্র ফিল্ম সোসাইটির অন্যদের দেখে কৌতুহল হওয়া, সিনেমা নিয়ে মানুষের এ রকম ভাবনার গল্প আছে। তারা নিজেরা সিনেমা নিয়ে কথাবার্তা বলে।
এর আগে তো আমি সিনেমা দেখছি মা-খালাদের সাথে দেখার বিষয় বলে। এগুলো নিয়ে নির্মাণের প্রক্রিয়ায় আমার কোনো কৌতুহল ছিল না। পড়াশোনা হয় নাই। কী করব ভেবে, অন্য কোনো রাস্তা নাই ভেবে বা দেখে নির্মাণ প্রক্রিয়ার সাথেই আস্তে আস্তে জুড়ে গেছি।
আর তুমি যে কারণে এমন প্রশ্ন করো, সেটা হচ্ছে অন্যত্র শুনে বা দেখে। সেটা হচ্ছে শিল্পীর দায়। তারপরে আছে, কাজের মধ্যে দিয়ে কি জীবনের কোনো অভিব্যক্তি হাজির করবার পিছনে কোনো যোগসূত্র আছে কি না– এরকম কিছু আমি ভাবি। আমার মনে হয়, আমার সাথে তোমার বাৎচিতে খুব সরল-সিধাভাবে, সাধারণভাবে তোমার যে কৌতুহল, সেগুলো নিয়ে কথা বলাটাই তোমার এত রাতে (আমার বাসায়) এসে হাজির হওয়ার পেছনে একটা কারণ বা ফলাফল আছে। এখন তো মানুষের বা আমাদের কথাবার্তা চালু থাকার প্রয়োজন বোধ করি বা অভাব বোধ করি। এইসব কথাবার্তার সুযোগ বোধহয় কমে আসছে। রাদার, কিছু ছকের মধ্যে বা রেডিমেড সিচুয়েশনের মধ্যে আমরা ঢুকে গেছি।
এইজন্য তোমার যদি ব্যক্তিগত কোনো কৌতুহল থাকে, সেগুলোকে বরং ওয়েলকাম করো। যা যা এখানে (কাগজে) লিখে এনেছো, সেগুলো তো আছেই।
পলক :: আপনি ১৯৭০ সালের ৩১ আগস্ট টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব কেটেছে কোথায়?
আতিক :: ছোটবেলায় অল্প কিছুকাল নানু বাড়িতে। তারপর ঢাকায়, ক্যান্টনমেন্টে। আমার ইন্টারেস্টিং একটা গল্প আছে। আমি অন্যান্য সময় স্মৃতি কীভাবে কাজ করে, এগুলো নিয়েই বাৎচিত করতে চাই। আমার ইমেডিয়েট পরপর এক ভাই… এক বছরের মধ্যে আমার ছোটভাই জন্মায়। যার কারণে টাঙ্গাইলে আমার ছোটখালার (তখন অবিবাহিতা, কলেজে পড়েন) কাছে মা আমাকে কিছুকালের জন্য রাখেন।
আমার ধারণা ছিল… হালকা করে স্মৃতিতে আসে যে, একবার ঢাকায় আসছি বাবা-মার সাথে, নিউ মার্কেটে আমি গড়াগড়ি করে কানছিলাম। একটা বাইসাইকেল চাওয়ার কারণে। বাপ-মা-ও বিব্রত হয়ে থাকবেন, পর্যাপ্ত টাকাপয়সা না থাকায় আমাকে সাইকেল দেওয়া হয় নাই। নিউ মার্কেটে আমি গড়াগড়ি করে কানছিলাম। অন্যদের কাছে শুনে শুনে এই স্মৃতিটা আমার তৈরি হয়েছে।
একই রকমভাবে আরেকটা স্মৃতি তৈরি হয়; সেটা হচ্ছে– অনেককাল বোধহয় ছোটখালার কাছে আমাকে রেখে আসছে, আমি খালার কাছে মানুষ। এই রকম একটা ধারণা বা ভাবনা আমার পরিপাশের মা-খালাদের গল্প শুনে-শুনে (আমার ভেতর) বদ্ধমূল (হয়েছিল) যে, মা আমাকে দিনের পর দিন টাঙ্গাইলে ফেলে রাখছেন।
টাঙ্গাইলে আমার অসংখ্য স্মৃতি আছে। যেমন, প্রথম সিনেমা দেখার স্মৃতি। বাড়ির সামনের উঠানে তখন পাবলিসিটি টাইপের কিছু ছিল। প্রজেক্টর এনে দেখানো হতো। যুদ্ধের কোনো কারবার ছিল। আমাদের যুদ্ধের গল্প না। সেটা চীন, জাপান বা এই ধরনের কিছু একটার ছিল বলে আমার হালকা স্মৃতিতে মনে পড়ে।
আরেকটা স্মৃতি হচ্ছে, আমার ছোট মামা ফুটবলার। আমার ছিল ফুটবলের আকাঙ্ক্ষা। তার সঙ্গ পাওয়া। বড় মামা যে রকম পড়ালেখায় চৌকস ছিলেন, সে রকম ছিলেন কালচারাল অ্যাক্টিভিজমের সাথে। (উল্টোদিকে,) আমার ছোট মামাটা একটু বখাটে টাইপের। তার প্রবণতা পড়াশোনা না করলেও হয়– এমন। তার আড্ডাবাজির অংশীদার হিসেবে আমিও তার ন্যাওটা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর কিছু স্মৃতি মনে পড়ে।
টাঙ্গাইল শহরের ছোট-ছোট অসংখ্য স্মৃতি। আমার ধারণা ছিল, শৈশবে বছরের পর বছর মা আমাকে ফেলে রেখে ঢাকায় থাকছেন। তো, একদিন আমি তাদের দুই বোনকে একসঙ্গে পাইলাম। এই (উত্তরা, বর্তমান বাসস্থান) বাসারই নিচে তখন বাসায় ঢুকতেছি। ঢোকার সময় ছোটখালাকে বললাম, ‘মা কত দিন ধরে আপনার কাছে আমাকে ফালায় রাখছে? ৩-৪ বছর না ৫ বছর?’ বলে কি, ‘একটানা ৪০ দিনের মতো মনে হয় ছিলি!’ এই সামান্য ৪০ দিনকে অন্যান্য যে স্মৃতি তৈরি হয়েছিল অন্যদের গল্প থেকে, আমি একটা লম্বা সময় বলে ধরে রাখছিলাম। আমার বছরের পর বছর এ রকম ধারণা ছিল, এরা ঢাকায় থাকত, (অথচ) আমাকে টাঙ্গাইলে ফেলে রাখছে!
এইগুলো শৈশবে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এটা মানসিক চাপ তৈরি করে। অথচ সামান্য কয়টা দিন। আমি জিজ্ঞাসা না করলে জানতামও না। আমার মানসিকভাবে মনে হয়েছে, আমাকে এরা পছন্দ করে নাই। আসলে আমার মা’র তখন বিভিন্ন অসুস্থতা তৈরি হইছে। দুইটা বাচ্চা একসঙ্গে সামলানো ডিফিকাল্ট বলে অল্প কিছুকাল বোনের কাছে (আমাকে) রেখে আসছেন।
টাঙ্গাইল ছোট্ট শহর। কিন্তু (আমার শৈশবে এটা) খুবই যে শহর ছিল, তা নয়। সেটা আমার জন্য মাটির গন্ধের মতো করে (স্মৃতিতে রয়েছে)। আমি গেছো টাইপের ছিলাম। পাজিও ছিলাম ছোটবেলায় অনেক। আমার ছোটভাইয়ের কথা বললাম, কিছু মারপিট করতাম আমরা। তখনো গ্রামের মতোই ছিল এটা (টাঙ্গাইল শহর)। সামনে ফুলের বিশাল বাগান। পিছন দিকে ডোবা। শেয়াল আসে। বেজি আসে। গুইসাপ দেখা যায়। তার ওপর মামা আবার নানা রকম পশুপাখি পোষেন। গাছপালা চারদিকে। এই রকমভাবেই ছোট শহরের ধারণা বা মফস্বলের যে ধারণা, সেইটা (ছিল টাঙ্গাইল)।
আমি অনেক বছর বাদে টাঙ্গাইলে যখন আবার গেলাম, তখন রাতের অন্ধকারে দেখেই আমার মন ছোট হয়ে যায়। পরিবারের বড়রা নাই হইলে পরের মানুষের সংখ্যা বাড়ে। সেই সংখ্যা অনুয়ায়ী জায়গার ভাগ হয়। যার যার মতো করে সেগুলোর ম্যানেজমেন্ট থাকে। অখণ্ড বা কমপ্লিট যে চেহারা, সেটা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে থাকে। যার কারণে হারমনি থাকে না।
(আমার) শৈশবের স্মৃতিতে টাঙ্গাইল শহরটা অনেক করে আছে। আবার আমি যখন এই শহরেও আসি– ঢাকায়, এইটাও এমন জায়গা– এ রকম ছোট শহরের মতো করে না গ্রাম না শহর। ক্যান্টনমেন্টেরও হালকা অল্প একটুখানি স্মৃতি মনে পড়ে। তারপর ‘৭৮ সাল থেকে (স্মৃতি তো) যথেষ্ট পরিষ্কার।
পলক :: বর্তমানে যেমন ধর্ম ও দেশপ্রেম দুটোই বিক্রি করা যাচ্ছে, বাংলাদেশি জীবনে সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে; আপনার কৈশোরে ব্যাপারটা কেমন ছিল? তখন ধর্ম ও দেশপ্রেম– এই দুটি বিষয়কে কীভাবে আপনি দেখতেন?
আতিক :: কৈশোরে ধর্মের বিষয়টা পারিবারিক অংশ হিসেবে মসজিদে যাতায়াতের গল্প। আমি ইসলামি শিক্ষার বিষয়টা কন্টিনিউ করতে পারি নাই। অল্পতেই অধৈর্য্য হয়ে যাই বা যেতাম। কিন্তু ধর্মের এই কাণ্ডকারখানাগুলো, মানে যেইটা তুমি বলতেছ, ট্রেডিংয়ের যে কারবার– এগুলো বুঝতে আরও অনেকটা সময় লাগে, বা সেগুলোর সাথে পরিচয় ঘটতে। অল্প বয়সে শিখলে কোনো (ঝামেলা) দেখি না।
দেশপ্রেমও আলাদা করে বোঝার কোনো প্রয়োজন পড়ে নাই কম বয়সে। ততক্ষণে তো এক ধরনের একটা স্বাধীন দেশের মানুষ হিসেবে দেখতে পাওয়ার মতন গল্প। আর কালচালার এমবিয়েন্সের মধ্যে দিয়ে কিছু মাত্রা। সেটা একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরিই হোক, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চ– এগুলোর নাম করে নিজেরা স্কুলে বা দেয়ালপত্রিকা করা…। কারণ, তখন তো এক ধরনের কালচালার প্রোগ্রাম রেগুলার হইত। সেটা ছোট মফস্বল শহরেই হোক আর বড় শহরেই হোক। তখন এলাকাভিত্তিক, সেটা ক্লাব হোক– যে রকমভাবে ফুটবলের বা ক্রিকেটের, একই রকমভাবে কালচারাল ইভেন্টেরও সুযোগগুলো ছিল। তার কারণে এক ধরনের প্রাথমিক দেশপ্রেমের আবহ– এটা সকলের বিষয়েই কাজ করত বা সহজ-স্বাভাবিকভাবেই ছিল। এগুলো আলাদা করে বিপননের ম্যাটারিয়াল হয়ে উঠতে পারে– এ রকম ভাবনার গল্প (তখন ছিল) না; তবে উদযাপনের গল্প ছিল।
এখন উদযাপনের চেয়ে যেমন এটা মেনিফেসটেশন হচ্ছে, করপোরেটাইজেশনের মতো কাজ করছে। সেইরকম বিষয়গুলো মনে হয় তখন এত স্পষ্ট ছিল না।

পলক :: মুক্তিযুদ্ধ আপনার পরিবারকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?
আতিক :: আমার পরিবারকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে আমি দেখি নাই। শহরে বা টাঙ্গাইলের যে বাড়িটার কথা বললাম, জন্মের পর তো ওখানেই থাকা। তার কিছুদিনের মধ্যে যুদ্ধ (শুরু হলো)। ততক্ষণে আমি একটু একটু করে কথাও বলতে পারি। যেটুকুন পরবর্তীকালে আরও অন্যদের কথা শুনে স্পষ্ট করে বুঝি, আমার মা-খালারা ৩ বোন– এদের কারণে (যুদ্ধের সময় পরিবারে) এক ধরনের টেনশনের কারবার ছিল। আর বাড়িতে একটা ট্রেঞ্চ মতন বানানো হয়েছিল।
আর কতগুলো গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া: যেমন, পাশের বাসা ডাক্তারের বাড়ি। তার কন্যার সাথে আমার শৈশবে খেলাধুলার সুযোগ ঘটে। দোতলা থেকে নিচতলায় কারো সাথে কথা বলছিলেন ওই ভদ্র মহিলা। একটা শেল এসে তাদের বাড়িতে লাগল। দোতলা থেকে, অনেক স্বাস্থ্যবতী ছিলেন, ধুপ করে নিচে পড়ছেন। সেই রকম গল্পগুলো শোনা যায়। দাদির বাড়ি থেকে কিছু গল্প শুনতাম। সেটা আবার ছিল পলায়ন পর্বের সময়ের গল্প। পাকিস্তানি মিলিটারি কোনো একজনকে ট্যাঁটা দিয়ে খোঁচা মারছিলেন, সেই ধরনের গল্প।
পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলো আস্তে আস্তে আবিষ্কারের মতন করে আরেকটু পরিষ্কার করে দেখতে পাওয়ার গল্প। আগামী, হুলিয়া— ছবি দুইটা। তারপর ততদিনে ঘাতক-দালাল-একাত্তরের কে কোথায়– সেটা কেবলমাত্র প্রকাশিত হইছে। এর আগে যা পড়া বা শোনা বা দেখা– এগুলো কোনো স্পষ্ট ভূমিকা রাখে নাই। রাদার, ওই সময়ের ছবি দুইটা…। স্কুলের মাত্র পরীক্ষা দেয়ার পর পর। বইমেলার থেকে সেই বই কিনে পড়া এবং তখন থেকে কৌতুহলগুলা আরেকটু স্পষ্ট হওয়া।
পলক :: আপনার লাল মোরগের ঝুঁটি ছবিটা শুরু হয় যুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে। সেই প্রেক্ষাপটে ৭ই মার্চের ভাষণ এই গল্পে না হলেও কি চলত না? ভাষণটার একটি শক্তিশালী ইমেজ আছে, মেজাজ আছে, তার উপর বর্তমান রাজনৈতিক ভাগাভাগিকে সামনে আনলে একটি নির্দিষ্ট রূপের বয়ান দেয় ছবিটিতে। এই ভাষণটির সাহায্য ছাড়া আপনার গল্পের নিজস্ব শক্তিটুকু ছিল কি না, তা জানতে চাইছি।
আতিক :: আজকের প্রেক্ষাপটে ‘জয় বাংলা’ বা ৭ই মার্চের ভাষণ এক রকম; কিন্তু ‘৭১-এর প্রেক্ষাপটে এইটা একটা অনির্বচনীয় জায়গা। যে কারণে আমি মোরগের সঙ্গে মোরগের প্রতিকায়নের জায়গা থেকে বা নতুন সূর্যের আহ্বানের জায়গা থেকে এটাকে শুরুতেই (ব্যবহার করেছি)…। গল্প ছিল। আরেকটা, হয়তো সাব-কনসিয়াস মাইন্ডে তুমি যে কারণে প্রশ্নটা করছ– সরকারি অনুদানের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের ছবি, সে কারণেই রাখা কি না? আমার কাছে তা মনে হয় না। আমি এভাবে দেখি না। বরং অনেক স্পষ্ট করেই বুঝি, ৭ই মার্চের আজকের প্রেক্ষাপটে অনন্য চেহারা ‘৭১-এর সময়ের সাথে সম্পৃক্ত আছে।
পলক :: আপনার প্রথম ছবি ডুবসাঁতার-এ অন্ধ প্রাপ্তবয়স্ক ভাই তার প্রাপ্ত বয়স্ক বোনের শরীর ও রূপ যেভাবে দেখেছেন, জেনেছেন এবং বুঝেছেন, সেটা ছবিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। একটি ছবি যেখানে নানা সম্পর্কের বয়ান হয়ে উঠতে পারে, সেখানে আমার মনে হয়েছে এই সম্পর্কটি প্রতিষ্ঠিত করতে ছবিটি ব্যর্থ। আপনি বিষয়টিকে কীভাবে দেখেছেন? আপনি ট্যাবুর কাছে ছেড়ে দিয়েছেন নাকি আপনার গল্পে এই সম্পর্কটির সাতকাহন যাচাই বাছাই করা দরকারের মধ্যে পড়েনি?
আতিক :: প্রথমত, আমি এত বিপ্লবী মানুষ না। কম-বেশি এক ধরনের সেলফ-সেন্সরড জায়গাটাকেই প্রেজেন্ট করি। এখন দেখো, কাপড়ের নিচে আমরা সবাই লেংটা। কিন্তু কাপড় উপস্থাপনের মধ্যে এক ধরনের পোশাকে সবকিছু জড়ানো থাকে। যেগুলো হচ্ছে, এইখানে আমার ফোকাস যখন হবে শরীরী অবয়বে ছোটবেলার যে গল্প শুরু হয়েছিল– সেই রাস্তাটা। ওকে স্পর্শ দিয়েই পুরো বিষয়টা বুঝতে হয়। সেগুলো আসবার সম্ভাবনা তো ছিলই। আমার এখানে বরং প্রাথমিকভাবে ঠিক অযৌন জায়গাকে ওয়েলকাম করা, এমন না। ভাই-বোনের সম্পর্কের মাধুর্যটুকুন খুঁজে ফেরার চেষ্টা করা। অনেকটা ওই যে আত্ম উপলব্ধি, আবিষ্কারের মতন করে না– রাদার, সহ-অবস্থানের মধ্য দিয়ে তাদের সম্পর্কগুলোকে চিনে নেয়া যায় কি না।
একটা অন্ধ ভাই আর রেনুর যে সম্পর্ক… রোকন আর রেণুর সম্পর্কের গল্পটা আমি এভাবেই দেখছি। ধরো, পরস্পরের মধ্যে আবিষ্কার করা যে। এ ছেলে-এ মেয়ে, ভাই-বোন এবং তাদের শারীরিক যে গল্প, সেগুলোর মধ্যে ফারাক। এগুলো চিনে নেওয়ার গল্প।
…
এক
ধরনের
সম্পর্কের
বহিঃঅঙ্গটুকু
চিনে নেয়ার গল্প ছিল
…
তখন হয়তো ফোকাসটা যদি কখনো এ রকম থাকে, যখন কাপড় খোলার ছবি থাকবে, তখন কাপড় খোলার ছবি। যদি চিন্তার জায়গা থেকে বলি, এক্ষেত্রে এক ধরনের সম্পর্কের বহিঃঅঙ্গটুকু চিনে নেয়ার গল্প ছিল।
পলক :: আপনার কি কখনো হয়েছে, আপনার ফিল্মের কোনো মুহূর্ত এবং ব্যক্তিগত স্মৃতি একাকার হয়ে গেছে? আপনি আর আলাদা করে মনে করতে পারছেন না– এই ঘটনাটা, মুহূর্তটা আপনার জীবনে নাকি আপনার ছবিতে ঘটেছে?
আতিক :: একটু আগে যেটা তোমাকে বললাম, (আমি) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বানায়া তোলা গল্পই বানাই, নাটক-সিনেমা যা-ই হোক। কিছু কিছু জায়গায় নিজের ব্যক্তিগত স্মৃতি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে জিনিসগুলোকে যখন (হাজির করা হয়)… (যেমন, একটু আগে) আমি আমার মামার কথা বলছিলাম। সে মামার জীবনেও কিছু ঘটনা-দুর্ঘটনা ছিল। তার ফুটবল খেলতে গিয়ে যে দুর্ঘটনা। তার মারপিট। তাকে জবাই করার চেষ্টা করা। তার মাথাটা বিগড়ে যাওয়া। এর কাছাকাছি একটা বিষয়কে বেসিক্যালি মামার সাথে সম্পৃক্ততার জায়গা থেকেই একটা সাইকেলের ডানা রচিত হইছিল। আমার কাছে যেই ঘটনা নিয়ে জানি বা দেখছি, মামার প্রসঙ্গে তার হয়তো আংশিক এখানে হাজির আছে। আবার অন্য একটা টুকরো হয়তো অন্য কোথাও আছে।
এ রকম সিমিলার টাইপের আরেকটি চরিত্রে আমি পলায়ন পর্ব নামে একটি সিরিজ করছিলাম, সেখানে (ফজলুর রহমান) বাবু ভাই অ্যাক্টিং করছিলেন। সেখানে পার্টলি ছোট্ট করে তার ভূমিকাটাও ওখান থেকে ছিল। আবার বিকল পাখির গান-এর এয়ারপোর্টটা তো আমার চেনা আছে বলেই, এয়ারপোর্টের আশেপাশের মানুষজন বা এইরকমের নিম্ন আয়ের মানুষজনের চেহারা-সুরত, জীবন-আচরণের সাথে কম বয়স থেকেই আমার এক ধরনের যোগাযোগ থাকার কারণে হয়তো এ রকম। কিন্তু এটা অবাস্তব গল্প। এটা রিয়্যালিটি নয়। তবে রিয়্যালিটির কিছু অনুসঙ্গ, কিছু ক্যারেক্টার বা এলিমেন্ট হয়তো ট্রিগার করে কোনো একটা গল্প বলার জন্য।
তারপরে যা ঘটে, সেগুলো পর্দার সঙ্গে বাস্তবের বা স্মৃতির একটা মিল বা অমিল– সেটার চেয়েও আমার কাছে প্রসেসের মধ্যে একটা ইন্টারেস্টং জায়গা লাগে। যখন শুটিং করতে যাই, আমি আজব আজব স্বপ্ন দেখি; কিন্তু একটু পরেই ভুলে যাই। তারপরে স্বপ্নের মধ্যেই তৈরি হয় এই সেগমেন্টটুকু– যা শুটিং করা হইছে বা পরের দিন হবে। তারমধ্যে এই গ্যাপটা আছে, এইটা এখন শুট করতে হবে। পরদিন সকাল বেলা ভুলে যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। দুইটা-একটা আবার লেখা দেখে মনে পড়ে। যা আছে, স্ক্রিপ্টের ধারণা যা আছে– তা দেখতে পাওয়া যায়।
…
শুটিং
টাইমে যা
আমার ভাবনায়
ছিল স্ক্রিপ্টে, আর অলরেডি
শুটিং করা হইছে– এই দুইটার
মাঝখানে আমি ট্রাভেল
করতে
থাকি
…
এমনিতে আমি খুব (একটা) স্বপ্ন দেখি না। মানে, ঘুমের ঘোরে যে স্বপ্ন। এমনকি দিবাস্বপ্নও দেখি কম। যেটা কম বয়সে দেখতাম অনেক। এখনো শুটিংয়ে গেলে আমি নানান রকম স্বপ্ন দেখি। হয়তো ১-২ ঘণ্টা ঘুমানোর সুযোগ হয়। আমি (এমনিতে) অনেক ঘুমকাতুরে মানুষ। ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে পারি। কিন্তু শুটিং টাইমে যখন থাকি, তখন সবার শেষে ঘুমাই এবং সবার আগে উঠি। মানে উঠতেই হয়। যার কারণে ওই সময়টাতে আমি নানান রকম দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকি। সেইটা বরং আমার বেলায় ঘটে যে, আমার বাস্তবের চরিত্র এবং সিনেমার চরিত্র একাকার না হয়ে শুটিং টাইমে যা ভাবনায় ছিল স্ক্রিপ্টে, আর অলরেডি শুটিং করা হইছে– এই দুইটার মাঝখানে আমি ট্রাভেল করতে থাকি।
পলক :: (ডুবসাঁতার-এর) সেই রাজহাঁসগুলোর কথা কি মনে হয়, যেগুলোকে স্পিডিং ট্রেনের সামনে ক্রস করার জন্য ডিরেক্ট করেছিলেন?
আতিক :: চারটা রাজহাঁস কেনা হইছিল এই কাণ্ডের জন্য। এই রাজহাঁসের গল্পটা ছিল কৈশোরের। এক ক্লাসমেটের বাড়িতে গেছি। তার ভাইয়েরা সব বিদেশে থাকে। ছোটভাই আমার বয়সী। সে দুরন্ত। খেলাধুলার মধ্যে (থাকে)। বাসায় একটা হাঁস, সেটা আমাকে জবাই করতে দিছে, যেহেতু ছেলে নাই ঘরে। ওইটা আমি জবাই করলাম, তারা ধরল। ছেড়ে দেয়ার পরে সেই কাটামুন্ডু নিয়ে সারা ঘরময় দৌড়াইল (হাঁসটা)। এটা আমার কাছে দুঃসহ স্মৃতির মতো মনে আছে। সেই কারণেই এ রকম একটা ব্রুটাল সিকুয়েন্সের কথা ভাবতে পারছি।
ইনফ্যাক্ট, ওই স্মৃতি আমাকে নানান সময়ে হান্ট করছে। সেটা হয়তো ধরো যৌবনের প্রারম্ভের গল্প বা কৈশোরের প্রথম বলা গল্প। কেবলমাত্র গোঁফটোফ গজাচ্ছে টাইপ অবস্থা, স্কুলে পড়ার সময়।

পলক :: ডুবসাঁতার-এর ভাত চোর এখন কী করে বলে মনে করেন? আপনার কি মনে হয় সে এখনো ভাত চুরি করে, বর্তমান বাংলাদেশের অর্থ-সামাজিক-পলিটিক্যাল বাস্তবতায়?
আতিক :: ভাত চোর এত দিনে গণপিটুনিতে মারা গেছে! সেইদিন [ডুবসাঁতার-এর একটি দৃশ্যে] তার কারণে অন্য কেউ মারা গেছে। গেরস্থের তো একদিন বলে কিছু আছে! (বাস্তবে) সে আবার হয়তো কয়েকবার ছাড়া পাইছে, তারপরে…
পলক :: আমি মনে করি, একটা কমন ব্যাধিতে সবাই কম-বেশি ভুগেছেন, বিশেষ করে যারা সামাজিকভাবে সোচ্চার মানুষজন, তারা ভুগে থাকেন বেশি। আপনিও কি প্যারানয়া এবং সেলফ-সেন্সরশিপে ভোগেন?
আতিক :: আমি পুরোদস্তুর সেলফ-সেন্সর পরিস্থিতির (শিকার)। আমি যে অর্থে বললাম, কম বয়সে নানান স্বপ্ন দেখার গল্প ছিল। এখন দিবাস্বপ্ন বা ঘুমঘোরের স্বপ্ন দেখি না। কম বয়সে একটা পরিস্থিতির মধ্যে নানা স্বপ্নের তাড়নায় দৌড়াইতাম। এখন বরং দুঃস্বপ্নই বড় হয়ে থাকে: ‘এটা’ করা ঠিক হবে কি না, ‘এটা’ করতে হলে তো এত এত আয়োজন– সেটা তো আমি জোগাড় করতে পারব না!
প্রথমত, যে কথা বলবার, সেটি বলবার মতন যে আয়োজন-প্রয়োজন, সেটি করে উঠবার মতো তাকত অর্জন করতে না পারা। তারপরে তো আছে শিল্পের স্বাধীনতা। পর্যায়টা আরও অনেক দূরের– শিল্পীর স্বাধীনতা। প্রাথমিকভাবে কথা বলবার জন্য বা যে কথাটা বলতে চাই সেটা বলবার আয়োজনটুকুন নিয়েই আমি ফাপড়ে থাকি। পরবর্তী ধাপ তো অনেক দূরে!

পলক :: একটা সময় আপনি পাবলিক স্পেসে যেতে প্যারানয়েড থাকতেন, বাসা থেকে বের হতে চাইতেন না বলে জেনেছি– ডুবসাঁতার এবং তার আগের সময়টাতে? এখন কি এই প্যারানয়া কাজ করে?
আতিক :: এটা পরবর্তীকালের কথা। মাঝখানে কিছুকাল রেগুলার কাজ-কর্মে কেটেছে। টিভির জন্য রেগুলার কাজ-কর্ম তো বছর দশেক করলাম। তখন বের হওয়ার একটা প্রক্রিয়া ছিল। আবার যখন কাজ বন্ধ করে দিলাম, তখন সেই আগের ফেইজই। ঘরে গৃহবন্দি ছিলাম।
পলক :: আপনি কি আপনার কাজ নিয়ে স্যাটিস্ফাইড হতে পারেন?
আতিক :: শুকরিয়া! আমার যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে এইটুকুন কাজ করতে পারি, তাতেই খুশি। সেই কাজ ভালো নাকি মন্দ– এগুলো নিয়ে আমার এত কোনো (মাথাব্যথা) নাই। প্রথমেই শুকরিয়া যে, আমি বেঁচে আছি এতকাল ধরে। তারপরে দ্বিতীয় হচ্ছে, এখনো কিছু কাজ শেষ করা যাচ্ছে। আর তুমি যে স্যাটিস্ফ্যাকশনের কথা বলতেছ, ওইটা আবারও শিল্পীর অতৃপ্তির প্রসঙ্গ।
প্রথমত, আমি নিজেকে শিল্পীই ভাবি না। এটা আমার কোনো স্টান্ট নয়। আমার মনে হয়, এই সংসারে যদি আমার অন্য কোনো কাজ থাকত বা আমি করে উঠতে পারতাম! এটাকে অন্যেরা অনেক সুন্দর করে গুছায় বলে, ‘আমি তো শুধু এটাই পারি, অন্য কিছু পারি না!’ আমার এইটাও না। আমি অন্য কিছু পারি না। চেষ্টা এদিক-সেদিক নানান সময় করে দেখছি। সেখানেও সুবিধা হয় না। এখানেও যে খুব কোনো সুবিধা হবে, এ রকম না।
আমি যেই সময়টায় (মেকিং) শুরু করছি, তখন (মেকিংয়ে) অনেক অনেক মানুষ ছিল– এমন নয়। হয়তো সেই সুযোগে আমি কিছু কাজ-কর্ম করার সুযোগ পেয়ে থাকব। এখন যদি ২০০০ মানুষ থাকে, আমার সময় তখন হয়তো ২০টা মানুষ ছিলেন এই রকমভাবে। তারপর আমরা হয়তো আরও ২০০ মানুষকে দেখতে পাইছি। সেইটা আমার জন্য অনেক বড় ঘটনা যে, আমি অন্য কিছু পড়াশোনা করতে পারি নাই, অন্য কোনো স্কিল ডেভেলপ করতে পারি নাই। তারপরও যে এইখানে কিছু বন্ধুদের সাহচর্যে কিছু কাজ-কর্মের মধ্যে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারছি, সেইটাই (শুকরিয়া)।
…
আমার
কোনো উচ্চাশাও
নাই এইসব কাজ-কর্ম নিয়া
…
আর তৃপ্তি-অতৃপ্তির গল্প! সেটা একদমই আলাদা করে দেখবার বিষয়। এই বেলায় আমি ওগুলোকে কোনোভাবেই দেখি না। আমার কোনো উচ্চাশাও নাই এইসব কাজ-কর্ম নিয়া। আমি আরও অনেক বড় কাজ করব, আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে লোকেট করব, এইরকম উচ্চাশা নাই। কিন্তু আমার প্রত্যাশা আছে অনেক।
আমার জেদের কারণে হয়তো প্রকৃতি আমাকে এখন পর্যন্ত বাঁচায় রাখছে। নানান সময় আমি ‘এই মারা যাচ্ছি, সেই মারা যাচ্ছি’ টাইপের পরিস্থিতি হইছে। তারপরেও যে বেঁচে থাকা, সেইটার জন্যই আমি পয়লা শুকরিয়ার কথা বললাম। যেইটা আছে সেটা হচ্ছে, যেইটুকুন কাজ করে উঠতে পারা যায়– সেটাকে লোকেট করতে না পারার এক ধরনের ফাপড় ছিল আমার। না আমার পরিপার্শ্ব, না আমি নিজে পেরেছি।
তারপরে এক সময় আমার জেদের কারণে আমি একটু গজার চেষ্টা করলাম। সেই কারণে অন্যদের কাজকর্ম খুব খুটায় খুটায় দেখতাম। তখন আমার আরও অভিমান হইতো। আমি যেই কয়টা রিকগনিশনের নাম করে পুরস্কার, সেইগুলোকে থোড়াই গুণে বলতাছি। আমি বলতাছি অন্য কথা। বাংলাদেশের অডিওভিজুয়ালে চন্দ্রবিন্দুর মতো একটা কাণ্ড (কেউ লোকেট করল না)। আমি তখন তো নাটকই করি। সেই নাটক বাদ দিয়েও বললাম, করব না এগুলো, সেগুলো [চন্দ্রবিন্দু] করতে গেলাম। একটা চন্দ্রবিন্দুর মতো প্রোগ্রাম ওনারা লোকেটই করল না! এটাতে আমার অভিমান হইতো।
তারপরে একই রকমভাবে মুঘল রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছরের নাম করে, একই রকম (নন ফিকশনাল প্রোগ্রামের) ৫২টা এপিসোড (বানানোর মতো রেডি করা) ছিল। চেষ্টা করলাম, দ্বারে দ্বারে ঘুরলাম বিভিন্ন টেলিভিশনে নানান জায়গায়; হইলো না। একটা বছরে একটা পান্ডুলিপি কারখানার শুরুর গল্প। এক বছরে আমরা ৭-৮ জন মানুষ রিসার্চ করলাম ৫২টা এপিসোডের। কিন্তু আখেরি কাণ্ডটা ঘটল না। এইসব কারণে আমার অনেক অভিমান হইতো। সময়ের প্রতি, এই প্রবণতার প্রতি, করে খাওয়া রাত্রের বন্ধুদের প্রতি যে– তারা কী করে অন্যতর সম্ভাবনাগুলো নস্যাৎ করতেছে।
এখন আমার এগুলো [অভিমান] নাই। কারণ, যখন দেখছি এগুলো দিয়ে কী হবে সংসারের? কয়টা দিন আরও নিজে যেটুকুন সামান্য নড়াচড়া করা যায়, সেইটুকু করে উঠতে পারাটাই (আমার জন্য শুকরিয়া)। যা হবে না, তা হবে না।
পলক :: বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট শিক্ষিত এবং নির্দিষ্ট বয়সের মানুষ, যারা টেলিভিশনে প্রচারিত আপনার অডিও-ভিজুয়ালগুলো দেখেছে এবং তাদের অনুজেরা– যারা সেগুলো ইন্টারনেটে দেখেছে, তাদের অংশ বিশেষ আপনাকে মান্য করে, আপনার কাজকে গুরুত্বের সঙ্গে মূল্যায়ন করতে চায়। আপনার অডিয়েন্স বা ফলোয়ারদের প্রত্যাশা রাখতে পারছেন?
আতিক :: স্বাভাবিকভাবেই যখন প্রথম দিকে কাজগুলো করে উঠি, উঠতে পারি বা কমপ্লিট হয়, সেগুলো তারা দেখেন, তখন যে স্ট্যান্স বা স্টান্স যাই বলো, সেইটাতে অপরাপর আমার মতো যারা চিন্তা করছেন নানান প্রান্তে, তাদেরকে কৌতুহলী করে থাকবে। পরবর্তীকালে আমার কাজ দেখে তারা আবার আহত হবেন। আবার হঠাৎ হঠাৎ একটা-দুইটা কাজ দেখে বলবেন– ‘না, ঠিক আছে।’ কিন্তু বেশির ভাগই তো যখন আমি বানাইয়া তোলা গল্প করতে গেছি, তখনই তারা হতাশ হইছেন।
…
আমার যেইটুকু করবার
সেটা চালু রাখাটাই
বোধহয় আমার
করণীয়
…
কিন্তু আমি যেটা আন্দাজ করি যে, তাদেরকে সার্ভ করার মতনও আমার ক্যাপাসিটি নাই। কিন্তু আমার যেইটুকু করবার, সেটা চালু রাখাটাই বোধহয় আমার করণীয়। ওইটা আমি কেয়ার করলেও কেয়ার নিতে পারব না। আমি তো প্রতি মুহূর্তেই চেষ্টা করতেছি; তার মানে ওইটাই আমার ক্যাপাসিটি। তার বাইরে আমার কিছু ভাবার নয়; এইটুকুনই হবার কথা।
মানে, এটা আমার উপর পরে ওহিও নাজিল হবে না বা আমি যে অর্থে বললাম, এমন ডাইনামিক ক্রিয়েটিভ মানুষ, অনেক যত্নশীল মানুষ (আমি নই)। আমি হচ্ছি কুড়ায় কুড়ায় একটা জিনিস জড়ো করে ‘এইটুকুন’… বলতে পারি। আমি তাদের সার্ভ করতে পারব বা অনেক ক্রিয়েটিভ কিছু দিয়ে তাদের ক্ষুধাকে (পূরণ) করতে পারব, সে রকমভাবেও আমি দেখতে পারি না।
পলক :: আগের প্রশ্নে যেই জনগোষ্ঠীর কথা বলেছি, তাদের বাইরে যারা আছে, তারা যদি আপনার কাজ দেখে এবং মনে করে একজন নূরুল আলম আতিক ওভাররেটেড… আপনি ওভাররেটেড, আন্ডাররেটেড শব্দগুলো নিয়ে চিন্তা করেন কি না?
আতিক :: হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি এগুলো নিয়ে অনেক চিন্তা করছি। এখন আর করি না। করি না অল্প কিছুকাল। আমি ছিলাম তো ওই রকম যে, ‘১২ সালের পর থেকে একটুখানি করে বোঝার চেষ্টা করছি আরও। কাজকর্ম বন্ধ করার পর। যখন দেখছি, আমি এত বেশি আন্ডাররেটেড আমার পরিপার্শ্বের কাছে, আর ওভাররেটেড– যাদেরকে চিনি না, যাদেরকে দেখি না (তাদের কাছে), তো এই দুইটা টানাপোড়েনের মাঝে আমার এক ধরনের মানসিক অস্থিরতা তৈরি হইতো।
আর আমার যারা কাছের মানুষজন, তারা যেভাবে দেখে, আমি হয়তো (সেভাবে) দেখতে পাই না, বা তারা যা করে উঠতে পারে (আমি তা পারি না), বা তাদের আন্ডারস্টান্ডিংয়ের সাথে আমার অনেক দূরত্ব। আর হঠাৎ হঠাৎ কোথাও গিয়ে আমি এমন সব মানুষের খোঁজ পাই, যারা আমাকে বরং ফের আবার একটু কাজ করার জন্য স্পৃহা দেয়। ওইটুকুনই আমার কাছে মনে হয় রসদ।
এই যে ওভাররেটিং-আন্ডাররেটিংয়ের গল্প, সেটা যে রকম আমার প্রতি নিজের বেলায় বুঝি, সেই একইভাবে আমার পারিপার্শ্বকে রিড করি, তখন এগুলো নিয়ে অনেক অস্থিরতা তৈরি হইতো। এখন এইগুলো থেকে বেশ কয়েক বছর ধরে আমি নিজেকে রেহাই দিতে পারছি বলে আন্দাজ করি। তবু নিশ্চয়ই এখনো এগুলো থেকে মুক্তি পাই নাই বলে এগুলো নিয়ে কথা বলতেছি; নাহলে তো এগুলো নিয়ে কথা বলাও বন্ধ হয়ে যেত।
পলক :: আমি মনে করি আপনি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার জনগণের কাছে একজন নূরল আলম আতিক হয়ে আছেন, থাকবেন; এর বাইরের লোকজনের কাছে পৌঁছানোর জন্য লাল মোরগের ঝুঁটি একটি উল্লেখযোগ্য প্রয়াস। লাল মোরগের ঝুঁটি কি আপনার অডিয়েন্স বাড়াতে পারবে?
আতিক :: না, লাল মোরগের ঝুঁটি অডিয়েন্স বাড়াতে পারবে– এ রকম খুব সম্ভাবনা দেখি না। কিন্তু আমি যেটুকুন আন্দাজ করি, লাল মোরগের ঝুঁটি বরং আগের যে অল্প কিছু মানুষ, তার চেয়ে অন্যত্র (সমাদর পাবে)। এই অল্প কিছু মানুষ কারা? যারা আমারই মতো কিছু কিছু– তাদের পরিপার্শ্ব নিয়ে। সেটা সাহিত্যপাঠ বলি, সেটা সময় ইতিহাস বলি বা জীবন অভিজ্ঞতার থেকে অডিও ভিজ্যুয়ালে সেগুলোর রিফ্লেকশন দেখতে চাওয়া যে মানুষগুলো– তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার গল্প ছিল। চতুর্থ মাত্রা, সাইকেলের ডানা কিংবা বিকল পাখির গান— এগুলো আসলে যতটা না অডিয়েন্স বলে আমরা যাদেরকে বুঝি, যারা নির্মাণ প্রক্রিয়ার অংশীদার নয়, তাদেরকে যে এইটা খুব করে স্পর্শ করে থাকবে, এমন নয়। সে অর্থে আমি কোনো জনপ্রিয় মানুষ নই, নির্মাণের জায়গায়। বরং ভবিষ্যতে যে নির্মাণ করবে, যিনি এখন নির্মাণ প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন– এইরকম মানুষজন হয়তো সেগুলো কানেক্ট করে থাকবেন।

লাল মোরগের ঝুঁটির বেলায় সেটা বিষয়ের কারণে হোক বা স্টোরিটেলিং যতটাই কমপ্লিকেটেড বা ক্যাচি বা যতটাই অসম্পূর্ণ থাকুক, কিন্তু এটার অ্যাসোসিয়েশনটা এমনভাবে কানেক্ট করে, তার সাথে সিনেমার নির্মাণ প্রক্রিয়ার মানুষ বা এই আর্ট-কালচারের বাইরের মানুষকেও এক ধরনের কানেক্ট করে বলে আমি আন্দাজ করি না। সো ইনফ্যাক্ট, এটা কিছু কিছু মানুষের সঙ্গে (কানেক্ট করে)। যারা এইসবের সাথে জড়িত নয়, তাদের রিফ্লেকশন থেকেই টের পাই, এটা আরও একটু বেশি মানুষকে বা অন্যতর মানুষকে কানেক্ট করার ইচ্ছা হয়তো তৈরি করে থাকবে।
সেটার একটা বড় কারণ, আমি নিজের জন্যই বোঝার চেষ্টা করছিলাম বলে আন্দাজ করি, সেটা হচ্ছে– এটা কম-বেশি সিনেমা সম্পর্কে আমাদের যে পূর্ব অভিজ্ঞতা বা ধারণা আছে, যতটাই আমি অন্য রকম কথা বলি না কেন বা চেষ্টা করে থাকি না কেন, টেলিভিশনের বা শুরুর দিকের যে প্রোডাকশনগুলো কিছু মানুষ, ক্রিটিক্যালি এক্লেইমড বলে যেগুলোকে বুঝি, সেগুলোর চেয়ে আলাদা। এটা বরং আরও একটু বেশি সাধারণ মানুষকে কানেক্ট করে বলে আমি আন্দাজ করি। এটার অ্যাসোসিয়েশন আমাদের সিনেমার পূর্ব ধারণাকে রিকানেক্ট করার একটা বিষয় থাকতে পারে।
পলক :: নূরুল আলম আতিক এবং তার অডিয়েন্স শহরকেন্দ্রিক– এ কথা বললে কি ভুল বলা হবে?
আতিক :: আমার মনে হয় শহরের চেয়ে ছোট শহরের মানুষের সাথে আমার যোগাযোগটা সহজ এবং স্বাভাবিক। শহরের এইসব করে খাওয়া লোকেদের… করে খাওয়া বলতেছি– যারা এই কনুই দিয়ে তাকে শোয়ায় দিলে, অন্যকে নসাৎ করলে নিজে দাঁড়াইতে পারি। ‘ওর কিছু হয় না, এটা বাম হাতের কাজ, ও বাটপার…’ এই ধরনের যে আবহ বা ভিড়ের বাসে সিট পাওয়ার জন্য দুই ঠ্যাং তার ঠিক মতো পাতার জন্য অন্যকে কনুই দিয়ে গুতাগুতির যে সংসার! এই ট্রাফিক জ্যামের মধ্যে পড়ে হা-হুতাশ, প্রত্যেকে বিপন্ন চেহারা। এই আজকের সমস্ত অর্জন যে কালকেই নসাৎ হয়ে যাবে, এই রকমের মুখমালার ভিড়ে আমি নিজেকে লোকেট করতে পারি না। রাদার, যার জীবনে এমন কিছু ঘটবে না, এই পর্যন্ত পৌঁছাবে না, তার সঙ্গে বরং আমার সংযোগটা সহজ।
পলক :: নিজের শৈল্পিক যোগ্যতা নিয়ে কি আপনার সন্দেহ হয় কখনো?
আতিক :: এ কারণে শিল্পীর দায় নিয়ে আমি আলাদা করে কিছু বুঝি না। শিল্পীর ফ্রিডম… এগুলো নিয়ে আমি চিন্তাও করি না। এগুলো নিয়ে, আগে অন্যদের কাজকর্ম নিয়ে কথা বলার গল্প ছিল। আমার কেবলই মনে হয়, আমি আমার নিজের দেমাগের সাথে সৎ আছি কি না। যেই কাজটুকুন করতেছি, সেই কাজের প্রতি আমার চেষ্টা আছে কি না। যত্নের সাথে থাকে দেমাগটা। আর দেমাগের সাথে থাকে সেনসিবিলিটির গল্প। এইটা যা দেখা যাবে, ওইটা আমার যোগ্যতা। এর চেয়ে বেশি স্কিল বলি বা এটার ঐশ্বরিক কিছু নাজিল হবে বলি, আসলে এর বাইরে আর কিছুই হবে না।
পলক :: অনেক সিনেমাটোগ্রাফারের সাথে কাজ করেছেন। এমন কেউ আছে যার সাথে বারবার কাজ করতে চান?
আতিক :: আমি যখন যাকে পাই টাইপের অবস্থার মধ্যে কাজ করে গেছি। এর মধ্যে খসরুর সাথে ফের আমার কাজ হোক, সেটা আমার প্রত্যাশা। কিন্তু আমি শুরুর দিকেই আমিত্ব তৈরি করার একটা ভঙ্গি খেয়াল করে দেখছি। যে সময়টায় সিনেমাটোগ্রাফি নিয়ে আমার পরিপার্শ্বের মানুষদের যত্নের অভাব ছিল, তখন আমি বরং সেটায় যত্নশীল হওয়ার চেষ্টা করছি। পরবর্তীকালে আমি এটা ছেড়ে দিছি। বরং ওই চেষ্টা-চরিত থেকে নিজেকে রেহাই দিছি। যার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে যাকে সঙ্গি হিসেবে পেলে আমার কাজটা হয়ে যায়, এখন তাকে নিয়ে কাজ করার গল্প।
পলক :: ব্যাটে বলে মিলে গেলে, আপনি এবং সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামানকে কি কোনো অডিওভিজুয়ালে একসাথে দেখতে পাব?
আতিক :: রাশেদের সঙ্গে প্রসঙ্গটা অনেকটা ব্যক্তিগত পর্যায়ের। আমার সাথে কাজ করার ব্যাপারে ওর আগ্রহের জায়গায় ঘাটতি আছে বলে আমি আন্দাজ করি। সম্ভাবনা কম দেখি।
পলক :: ঘুরে ফিরে গুটিকয়েক অভিনেতা (মহিলা ও পুরুষ) আপনার প্রজেক্টে কাজ করেন। এটা কেন?
আতিক :: প্রথমত, তারা আমার চোখে অনেক বড় স্টার নয়। স্টার দেখলে আমি ভয় পাই। তাদের সঙ্গে কেমন করে আমি কথাটা বলব, এইসব নিয়ে আমার অস্বস্তি থাকে। আমি তার জন্য যতটা চেনা মানুষ আর যাদের স্টার মনে করি না– তারাও হয়তো আমাকে ওইভাবে মনে করে না বলে তাদের সাথে আমার যোগাযোগটা সহজ। স্বাভাবিকভাবে যখন স্ক্রিপ্ট লিখি বা ক্যারেক্টার লিখি, তখন এদের কথা মনে আসে। কিন্তু এখন আমার মনে হয় কিছুমাত্র আমার এটাও মুখের আদল মনে না রেখে বা তার পসিবিলিটি লিমিটেশনের কথা চিন্তা না করে শুধুমাত্র চরিত্রকে রচিত হইতে দেওয়া এবং তার অনুযায়ী মানুষটাকে খুঁজে নেওয়ারও এইসব প্রকল্প হয়তো ওয়েলকাম করব, যদি সেরকম কোনো কাণ্ড ঘটে।
পলক :: অভিনেতা আহমেদ রুবেলের সাথে আপনার ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা কেমন? তিনি আপনার পরের ছবিতেও (পেয়ারার সুবাস) আছেন। তার এমন একটা বিষয় বলুন যা আপনাকে তার সাথে কাজ করতে বারবার টানে?
আতিক :: প্রথমত, রুবেল আমার বেলায় অনেক যত্নশীল। কেউ আমার যত্ন নিচ্ছে, এটা দেখলেই তো একটা বন্ধুত্বকর জায়গা তৈরি হয়। সেই বন্ধুতার জায়গা থেকেই আমি যে তার প্রতি যত্নশীল হতে চাই, তার চরিত্রটা কেমন হবে, কতটুকুন কী ঘটলে আমার জন্য সুবিধা হবে, তার জন্য সুবিধা হবে, চরিত্রের প্রতি প্রপার আচরণ করা যাবে– সেই জায়গা থেকে আমাদের এক ধরনের বন্ধুতা। কাজের বাইরেও আমাদের একটা বন্ধুতার জায়গা আছে, মানে কোনো অডিওভিজ্যুয়াল বা এক্টিং-স্ক্রিপ্টিংয়ের বাইরে।
পলক :: অভিনেত্রী দিহান কোথায়? বিকল পাখির গান-এর জন্য যাকে আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে। আপনার কী মনে হয়, কেন তিনি ক্যারিয়ার কন্টিনিউ করতে পারেননি? আপনার কি মনে হয় ভালো প্রোডাকশনের অভাব শেষ পর্যন্ত তার মতো অভিনেত্রীকে ফেইল করিয়েছে?
আতিক :: এটা ভালো প্রোডাকশনের অভাবে শুধু না। প্রোডাকশনের অভাবে সে তো কাজটাই করতে চাইছিল এখানে একটা সার্টেইন টাইমে, সেটা আর ওয়ার্ক করছিল না। যেই সময়টা ও কাজ থেকে আস্তে আস্তে দূরে চলে গেছে, পরে আমেরিকা চলে গেছে, সে সময়টা আমারও কাজ আস্তে আস্তে বন্ধ। মূলত টেলিভিশনের জন্যই কাজ করতাম। তখন টেলিভিশনের দুর্গতি তৈরি হয়ে গেল।
আমরা যখন কাজটা শুরু করি, তখন টিভি বুমিংয়ের ফেইসটা আস্তে আস্তে স্যাচুরেশন লেভেলে চলে গেল। তখন প্রোডাকশনের জন্য প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেলের মার্কেটিংটা বড় হয়ে গেল, কী গল্প কে বানাবে তারচেয়ে। মার্কেটিংয়ের মধ্যে কারে কারে নিয়ে কাজ করতে হবে– এই যে চক্করটা চালু হয়ে গেল, আস্তে আস্তে যেই সম্ভাবনাটা তৈরি হয়েছিল, সেটা স্যাচুরেশনের হাইটে চলে গেল। তখন আর কাজ করাটা আমার জন্যও যেমন সম্ভব হয় নাই, সেটা দিহানের জন্যও সম্ভব ছিল না। তারপর তো আস্তে আস্তে করে দেশের বাইরেই চলে গেল।
পলক :: প্রিভিলিজড ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষজন সফল ক্যারিয়ার বা মাঝ ক্যারিয়ার থেকে কেন আমেরিকার মতো দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে চলে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
আতিক :: সেইটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল। নিজে ওইভাবে কোনোদিন অন্যত্র যাওয়ার কথা ভাবি নাই বলেই হয়তো ডিটেইলগুলো সম্পর্কে (বলতে পারব না)– অন্যরা কী কী কারণে যায়। আমি এইটুকু বুঝি, প্রথমত মাঝ বয়সে বা ক্যারিয়ার… আমাদের কালচারালগণের বেশিরভাগ মানুষ যারা পরবর্তীতে যান, যখন মনে করেন, ‘এখানে এক্সপ্লোর করার চেয়ে বরং গুছায় নিয়ে একটু স্থিরভাবে জীবনযাপন করি, অনেক তো হইলো।’ এটা একটা কারণ হইতে পারে মাঝপথে যাওয়ার। অন্যান্য ফিল্ডে যারা চলে যান, তারা তাদের ওইখানে টিচার হন বা অন্য কোনো ব্যাকগ্রাউন্ডের যে মানুষ থাকেন, উনি আগেই চলে যান। তারপর সেখানে একটা ক্যারিয়ার গড়েন।
অডিওভিজ্যুয়ালের মানুষ যারা মাঝপথে যান, তারা কেউ যে অন্য দেশে গিয়ে ক্যারিয়ার গড়েন, এমন না। শান্তিতে একটু জীবনযাপন করার রাস্তা খোঁজেন। এই শহরের এই ট্রাফিক জ্যাম, এই অস্থিরতা, এই ইনসিকিউরিটি বিভিন্ন ধরনের– এইগুলো থেকে রেহাই পেয়ে একটা স্থিরভাবে ততদিনে তারা সন্তানাদি উৎপাদন করে ফেলছেন, তাদেরকে বড় করা, তাদের সিকিউরিটি নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন। আর শেষ বয়সে স্যোশাল সিকিউরিটির গল্প।
পলক :: এমন কি কেউ আছে যার সাথে আপনার কাজ করার ইচ্ছা, কিন্তু এখনো হয়ে ওঠেনি?
আতিক :: এগুলো আলাদা করে আমি কখনো ভাবি নাই। কাজের আয়োজনের মধ্য দিয়ে যদি কাউকে পাওয়া যায়, খুবই ভালো। তখন হয়তো খুঁজে নেয়ার প্রসঙ্গ থাকবে।
পলক :: বর্তমানের তরুণ ডিরেক্টরদের মধ্যে আপনার পছন্দের নাম শুনতে চাই।
আতিক :: তরুণ ডিরেক্টরদের মধ্যে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে আমি এদের কথা অনেক বলছি, এই অনিমেষদের ব্যাচের বা মেসবাহ সুমনদের ব্যাচের। আশুতোষ সুজনের কাজের বিষয়ে আমি অপেক্ষায় আছি কৌতুহলী হয়ে। রবির কাজ আমার পছন্দ, সেগুলো নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। নিপুণের কাজ পছন্দ। আরও অনেকে আছে। টুশি কাজ করতেছে, টুশির কাজ পছন্দ। হুমায়রার কাজ পছন্দ। এ রকম আরও অনেকেই আছে।
পলক :: আপনার ছবিটা [লাল মোরগের ঝুঁটি] সাদাকালোতে গ্রেডিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কি সহজ ছিল? এর পেছনে কারণ কী ছিল?এটা কি বাজেট স্বল্পতা? আপনি বিভিন্ন ক্যামেরা দিয়ে আগে-পরে-নানা সময়ে কাজটি শেষ করলেন; কালার কন্টিনিউটি পছন্দসই জায়গায় যাচ্ছিল না বলে? নাকি এই গল্পটা সাদাকালোতেই বলতে হতো?
আতিক :: এটা অনেক কঠিন ছিল। প্রথমে একবার কিছু সিকোয়েন্স ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট করে পছন্দ হয় নাই। হয়তো তেমনভাবে ওই জায়গায় পৌঁছায় নাই বা পুরোটা না করে কিছু সেগমেন্ট করে দেখছিলাম। তারপরে কালারে গ্রেড করা হইল। শেষ মুহূর্তে আবার ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটে ফেরত যাওয়া। সেই সিদ্ধান্তটা অনেক ডিফিকাল্ট ছিল। এই বিষয়টায় আমাদের শোয়েব এবং রবির একটা বড় ভূমিকা আছে। কয়েকদিন এটার একটা প্রেশার নিতে হইছে। প্রথম যারা গ্রেড করছে, তারা খুবই আহত হইছে। তারা খুবই যত্ন নিয়ে গ্রেড করছে অনেক সময় নিয়ে। ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইটটা এক রকম খুব কম সময়ের মধ্যে হুরপার করে করতে হইছে।
আমি কালারটাকে স্ট্রেইট ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট করে দেখে তারপর কিছু জায়গায় কমায় বাড়ায় হাইলাইট, মিডটোন এগুলো দিয়ে তখন একটু ধারণা নিয়েছিলাম। আমি নিজেও কনফিউজ ছিলাম। পরে এদেরকে ফাইনালি করতে দেয়া। খুব কম সময়ের মধ্যে এটা ফাইনালি হইছে। শেষ পর্যায়ের ডিসিশন মেকিং ছিল।

হ্যাঁ, ৫ বছর আগে-পরে তো এটা নানানভাবে ছিল। প্রথমত কন্টিনিউটি ছিল ফিজিকে। দোয়েলের জন্য যতটা সহজ ছিল, জ্যোতির জন্য ততটা ছিল না। তার কারণে জ্যোতির অনেক সিকোয়েন্স আমাকে কৌশলে বাদ রাখতে হইছে। রুবেল ভাইয়েরটা অনেক জটিল হয় নাই। তারপরও চুলের কন্টিনিউটির প্রেসার ছিল। ছিল জয়রাজের পেটের বেলায় বা স্বাস্থ্যের বেলায়। এগুলো অনেকটা কম্পেনসেট করতে হইছে কন্টিনিউটির প্রেসারে।
আমার যদি পর্যাপ্ত আয়োজন থাকত, আমার যদি মিডটোন, ডিটেইল– এগুলো দেখবার মতন ফুসরত থাকত, আমি প্রথমে কেন… করতে চাই? সেটা হচ্ছে, এই ভাঙ্গারি জিপ গাড়ি কালারে থাকলে যত ফুটে বের হয়, দেখতে এটা আসলে জ্যান্ত না। এটা তো আসলে ভৌতিক গাড়ি, ভূতের গাড়ি। তো, একই রকমভাবে অন্যান্য বেলায়ও সত্যি। আমার যদি সেই আয়োজন থাকত, আমি সময়ের দূরত্বটাতে আমার একটা পদ্ধতিগত জায়গা বা চারদিকে এত কালার আছে, তার জন্য কিছু ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট হইলেই বরং একটু দূরত্ব তৈরি করা যায়, সময়ের দূরত্ব। শুধু একাত্তরের সাথে আজকের না। এই সময়ের মধ্যে এটা দিকে একটু আলাদা করে নজর করা যায়। বা ডিটেইল লেভেলের দিকে নজর কমিয়ে এসে বরং মানুষের অ্যাকশনের দিকে বা চোখের দিকে, মুখের দিকে নজর আসুক। সেগুলো হয়তো অন্যতর গল্পে চিন্তা করা (যাবে)।
পলক :: সাদাকালো ছবি হিসেবে লাল মোরগের ঝুঁটি আবার সেই শহরকেন্দ্রিক মানুষের জন্য হয়ে থাকছে না? গ্রামবাংলার মানুষের কাছে যদি ছবিটা কোনোভাবে পৌঁছাইতে পারে কোনোদিন, তাহলে কি আপনার মনে হয় সাদাকালো ছবি তারা গ্রহণ করতে চাইবে, যতটা সহজে একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র নিতে পারে?
আতিক :: না, আমার কাছে এটা মনে হয় না। বরং আমি অন্যত্র গ্রাম বা ছোট শহরের মানুষ… আর যে অর্থে গ্রামবাংলা বলা হয়, হয়তো সেই লেভেলের মানুষের সাথে এখনো সংযুক্তিটা ঘটে নাই। সেটা হয়তো আমরা ইউনিভার্সিটি ফেইজে সেই গ্রাম থেকে আসা অসংখ্য ছেলেমেয়েদের দেখানোর সুযোগ হবে, তখন হয়তো আরেকটু স্পষ্ট করে বুঝতে পারব, তাদের কাছে সাদাকালোর মানেটা কী। তো, আমার কাছে মনে হয় যে রঙিলা জীবনের প্রতিচ্ছবি পর্দায় দেখতে চান যারা, তাদের কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না– এটা তারা কীভাবে রিয়েক্ট করেন।
পলক :: আপনি কি কখনো টিভিসি অথবা কোনো কমার্স প্রজেক্ট ডিরেক্ট করেছেন? যদি না করে থাকেন, এর পিছে কি কোনো কারণ আছে?
আতিক :: অবশ্য এগুলো অনেকদিন আগে বলছি। একদিন তো ভাড়া খাটতে গেছিলাম, তাতে বাড়ি ভাড়া দিতে পারি না, ৫ হাজার টাকা… তার জন্য ঘাড় ফিরায় সেদিন অ্যাকশন কাট বলছি, তাতে ১০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। তাতে আমি ঘাবড়াইছিলাম। এটা খুব ভালো লক্ষণ না। এত সহজেই টাকা ইনকাম করে ফেলতে পারব, এটা দেখে আমি ভয় পাইছি। তারপর থেকে এই রাস্তায় না।
এটা তো চিন্তার গল্প এক ধরনের। পরবর্তীকালে আমি যখন পুরো চেইনটা টের পাইতে থাকলাম, তখন আরও এটার প্রতি দূরত্ব রচনা করাটাই কাজ ছিল। কিন্তু এখন আবার এটাও দেখছি, আমার সহযাত্রী বা সমসময়ের বন্ধুরা– যারা বিজ্ঞাপন করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থানটা উন্নত করতে পারছেন, তাদের চেহারা-সুরত ভালো হইছে, জীবনযাপনের মান বাড়ছে। তারা সেইসব সোসাইটির পাওয়ার প্লে করা মানুষগুলোর সঙ্গে ইন্টারেক্ট করার সুযোগ পাইছেন। তারাই পরবর্তীকালে কাজগুলো করে ওঠার সুযোগটা তৈরি করতে পারছেন।
আখেরি কী কাজ করছেন, সেগুলো তো এচিভমেন্ট দিয়ে (বোঝা যাবে)… সেগুলো আছে। কিন্তু অন্তরগত কী কাজ, সেটা অন্যরা বিচার করবেন। আমি একটা সময় দেখি যে, আরে, এরাই তো কাজটা করে উঠতে পারল। তাহলে কী লাভ হলো এই দূরত্ব তৈরি করে? সেটাই হওয়ার কথা আরকি। কারণ, পুরা চেইনটা তো ওই জায়গাই। মানে, পুরা মেশিনেরই একটা পার্ট।
পলক :: ঢাকা শহরের অডিওভিজুয়াল মাধ্যম যেইভাবে নানা বিজ্ঞাপনী সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করে, আপনি সেটাকে কীভাবে দেখেন?
আতিক :: একই গল্প তো! এটা পুরো সিস্টেমের অংশ। আগে টেলিভিশনের কাণ্ডটা ঘটত মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের মধ্য দিয়ে, তখন আর (কর্তৃত্ব) প্রোগ্রাম সেকশনের হাতে রইল না। এখনো যেটা ওটিটিতে হবে, সেটা হবে বিজ্ঞাপনের এজেন্সির মাধ্যমে। কারণ, পুরো প্রসেসটাই এমন।
আগে আমরা যে রকমভাবে ভাবতাম, কোনো একটা প্রোগ্রাম সেকশন থেকে আমাদের বলা হইল– এ রকম একটা গল্প অমুক উপলক্ষ্য একটা এক প্যারার সিনোপসিস কি আর্টিস্ট, এগুলো শুধু লিখে পাঠালেই কাণ্ডটা ঘটে যেত। কিন্তু পরবর্তীকালে যে ফেইসটা আসতেছে, ওটিটিতে পুরো একটা ডিজাইন দরকার হবে। পিচিং সেশন বলি বা তার পুরো প্রোডাশন ডিজাইন, সেটা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে হাজির হওয়া। সো, এইগুলোতে অভ্যস্থ বিজ্ঞাপনী প্রক্রিয়ার মানুষরা। এবং ওই পদ্ধতিতেই কাণ্ডটা এখন ঘটবে।
সো, এখন এই পুরো চেইনটাই এই ধরনের মানসিকতার মানুষের হাতেই থাকবে বা এই মেকানিজমের মানুষের হাতে থাকবে। একেবারে ইন্ডিভিজ্যুয়াল লেভেলের কাণ্ডগুলোর বেলায় ভিন্ন কথা। সেটা ধরো, তুমি ইউটিউবের জন্য নিজে কিছু বানাইতেছো। নিজের চ্যানেলে নিজে কিছু দিতেছো। শর্ট ফিল্ম বানাইতেছো যেটা এই সিস্টেমের বাইরে, সেটার লাইফ আছে। বা তুমি ফিচার ফিল্ম বানাইতেছো, কিন্তু এই সিস্টেমের বাইরে কোথাও সেটা কানেক্ট করে। ধরো, তুমি গণঅর্থায়ন কোনো ছবি করলা, তাদেরকে দেখাইলা। তুমি ফরেন ফান্ডে ছবি করলা, বিদেশে দেখাইলা বা দেশের মানুষকেও দেখাইলা। সেগুলো হয়তো এগুলোর বাইরে ঘটবে।
পলক :: আপনার প্রথম স্মৃতি কী?
আতিক :: প্রথম স্মৃতি বলে কিছু আলাদা করে মনে পড়ে না। একেক সময় একেক রকম ঝাপসা ঝাপসা মনে পড়ে।
পলক :: কখন বুঝলেন যে, আপনাকে লাল মোরগের ঝুঁটি গল্পটি বলতেই হবে?
আতিক :: এটা তো হচ্ছে সরকারের সমন চলে আসবে, এ রকম করে শেষ (করা)। আর বলতে হবে, বেশ অনেককাল আগে, যখন আমি নানানভাবে নানান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটের সিনেমাগুলোতে রিসার্চার হিসেবে বা অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতে করতেই মনে হইছে। মানে, যেগুলোতে আমার মনে হইছে, এগুলোর বাইরে আরও কিছু আছে, সেগুলো কোনো একদিন বলতে হবে। সেইটা থেকেই হয়তো এ রকম একটা ভাবনা।
পলক :: আপনার আগামী ছবি মুক্তির সম্ভাব্য তারিখ কী? কবে দেখতে পাব?
আতিক :: সেটার এখতিয়ার আমার নাই! দুইটা [মানুষের বাগান ও পেয়ারার সুবাস] ছবির দুইজন প্রডিউসার। কিন্তু আন্দাজ করি আগামী বছর [২০২২] সেগুলোর কোনো একটা ব্যবস্থা হবে। একটা প্রক্রিয়া চলতেছে, দুইটারই আলাদা আলাদাভাবে। দেখি, সে প্রক্রিয়াটা কোথায় গিয়ে ঠেকে! প্রত্যাশা, আগামী বছরই দেখা হবে। কারণ, এগুলো তৈরি হয়ে আছে তো বেশ কিছুকাল হয়ে গেল।
পলক :: আপনার আগামী ছবি পেয়ারার সুবাস নিয়ে যদি কিছু শেয়ার করতেন? ছবিটির বিষয়বস্তু কী?
আতিক :: এগুলো নিয়ে আমরা অলরেডি কিছু কথা শেয়ার করছি। ওইটুকুনই বলা যায়। এর বাইরে (এখন) না বলাই ভালো। লাল মোরগের ঝুঁটি যে রকমভাবে অনেক বেশি জাতীয়তাবোধ নিয়েই কাজ করা, ঘটনাচক্রে এটা বাংলাদেশের জন্মক্ষণের মুহূর্ত, আর পেয়ারার বেলায় এটা অনেক বেশি অন্দরমহলের গল্প। অন্তরে স্যাঁতস্যাতে বা যদি বলি খুঁজলি পাচরার গল্প।
পলক :: আমার মতো তরুণ যারা কি না ছবি বানাতে চান, তাদের জন্য যদি একটা উপদেশ দিতেন…
আতিক :: আলাদা করে উপদেশ এই মুহূর্তে বলার কিছু নাই। কিন্তু আমি বছর চারেক আগে একটা ছোট্ট বই আকারে কিছু জিনিস লিখছি। সেটা হচ্ছে, এই দেশে বসে এই সময়ে একটা মানুষ যখন একটা সিনেমা করব– এ রকম ভাবে, তার এই ভাবনা থেকে শুরু করে কী সেই ভাবনা, কী নিয়ে সে সিনেমা বানাবে, তার প্রথম শঙ্কাটা হয় কী নিয়ে সিনেমা বানাব…। সেটা ওই ‘মায়ের চেয়ে আপন কেহ নাই’ বা ‘দেশ আমার মাটি আমার’ টাইপের বা ছিন্নমূল মানুষের জন্য আমার কেমন দরদ কিংবা হয়তো কোনো একটা চরিত্রের উপর ভর করে। যেমন মুক্তিযুদ্ধ একটা ভর করার গল্প। কোনো একটা বিশেষ চরিত্র। কিংবা সাহিত্যের কোনো একটা বড় লেখকের বড় গল্প। বড় গল্প মানে বড় নাম করা গল্প, সেটা নিয়ে।
আমার হচ্ছে, যে মানুষটা আজকে ভাববে এই রকম ভাবনার বাইরে সে, আচ্ছা, এই কাহিনিটা বা ভাবনাটা আমাকে এমনভাবে অস্থির করতেছে বেশ কিছু দিন– সে প্রথমে সিনেমা বানাব ভেবে সিনেমার বিষয় খুঁজতেছে না। তার এই ভাবনাটার কারণে মনে হচ্ছে এই ভাবনাটা যদি সিনেমায় দেখানো যেত। তার জন্য কী প্রক্রিয়া হওয়া দরকার? ব্ল্যাকবুক নামে ওই বইটার কাহিনিটাই হইতেছে এই চিন্তা যে, আমি এটা সিনেমার বা এই রকম একটা ভাবনা আসছে যেটা নিয়ে সিনেমা করতে চাই। তাহলে সিনেমার প্রক্রিয়া কী? প্রথমে একটা (স্টোরি) লিখে ফেলা। তারপর ওটা স্ক্রিপ্ট আকারে লিখে ফেলা। স্ক্রিপ্ট লিখতে গিয়ে কী কী হুজ্জতিগুলা সামলাইতে হবে, স্ক্রিপ্ট লেখার পরে রিয়েলাইজেশনের জন্য কী কী দরকার, সেটার জন্য আচ্ছা ঠিকাছে, প্রডিউসারশিপের কারবার আছে। তার আগে সেটা যদি নিজে ডিরেক্ট করি, তাহলে ডিরেকশনের প্রক্রিয়াটা কী হবে? অন্যান্য টেকনিক্যালিটিস প্রি-প্রোডাকশনে কী কী আছে? শুটিং করতে গিয়ে বা শুটিংয়ের আগে এই যে পারফরমারের বিষয়টা কী, অ্যাক্টিং বিষয়টাকে আমি কীভাবে পারসিভ করি, পারফরমারদের কাছে কী রকম অ্যাক্টিং চাওয়া, তারপরে তাদের ম্যানেজমেন্টর গল্পটা কী?
এই যে পুরো প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতাটা যা হয়, এটা ৪ বছর আগে লেখা হইলেও এটা ছাপা হয় নাই। কেবলমাত্র আমার পর্দার এক্সপেরিয়েন্স না হওয়া পর্যন্ত এটা ছাপতে চাই নাই। অডিয়েন্সের সাথে পূর্ব প্রক্রিয়ার ব্যাপারটা ঘটুক। এখন মনে হয় এটা ছাপা যাবে। আমার মনে হয় ওইটা শেয়ার করাটাই ভালো। আলাদা করে আর উপদেশের গল্প না; যত দ্রুত পারি (বইটা) শেয়ার করে ফেলা। এটা নতুন ফিল্মমেকারের নিজের নোটবুক। পার্সোনাল নোটবুক টাইপের।
পলক :: থিয়েটার থেকে আমাদের এই মডার্ন ফিল্ম। আর এই মডার্ন ফিল্ম থেকে যে চাহিদা বা দেয়ার যে জায়গাটা, সেটা এখন কোনদিকে যাচ্ছে?
আতিক :: গেমসের দিকে যাচ্ছে। থিয়েটারের ম্যাজিক যেটা ছিল, থিয়েটারের সঙ্গে শরীরবৃত্তীয় একটা স্পেসিয়াম বলি বা বাইরের স্পেসেই বলি, সেখানে একটা থিয়েটার এক্সপেরিয়েন্স করার যে শরীরবৃত্তীয়– সেটা প্লেজার বলি বা দেখার পরে ক্যাথারসিস বলি, তো এইটা যখন অন্ধকার ঘরে সিনেমায় ঘটল, সেটা আরেকটু অন্যরকমভাবে। অন্যরকমটা কী? আরও ইন্টেন্সলি ওই ক্যারেক্টারটার মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করা এবং সেইটা থিয়েটারে যেমন আশপাশের মানুষের উচ্ছ্বাসগুলো নিয়ে, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কাণ্ডটা হয়, তাপ-উত্তাপের সাথে জিনিসটা ঘটে; এইখানে বরং আরেকটু বেশি করে হয়তো ক্যারেক্টারের ভেতরে ট্রাভেল করার সুযোগ থাকে। যেইটা গেমসের ফেইজে এসে আরও ডাইনামিক হয়ে যাইতেছে। আমি আমার মতন করে একটা চরিত্র নির্বাচন করব। সেই চরিত্র অনুযায়ী রোল প্লে করব। এটা অনেকটা রোল প্লে করার মতন কাহিনির দিকে যাবে।
…
অনেকটা
গেমসের মতন
করেই মুভি মেকিংয়ের
কারবারটা ঘটবে। তারও কিছুকাল
পরে আর মুভির
প্রয়োজন
পড়বে
না
…
আমার ধারণা, অল্প কিছুকালের মধ্যে আমাদের আর এসব দরকারও হবে না। এটা তো এক ধরনের মস্তিস্ক এবং শরীরবৃত্তীয় প্লেজারেরই গল্প, নাটক, সিনেমা, থিয়েটার… আমরা কম্পিউটারে দেখি, হলে গিয়া দেখি। কেমন ছবি আমরা দেখতে চাই, ওইটা মস্তিস্কের সঙ্গে ডিজাইন করে। একই ছবি একেকজন মানুষ একেকভাবে তার চাহিদা অনুযায়ী দেখার সুযোগ তৈরি হবে। অনেকটা গেমসের মতন করেই মুভি মেকিংয়ের কারবারটা ঘটবে। তারও কিছুকাল পরে আর মুভির প্রয়োজন পড়বে না। তখন গেমস ইটসেলফ পুরোটা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মধ্যে চলে যাবে। তখন সেন্স করার যে কারবার, সেটার সঙ্গে হয়তো তেমনসব ডিভাইস থাকবে, যেগুলো আমাদের এত কষ্ট করে দেখতে হবে না।
পলক :: সবার আগে তো ছিল মুখে বলা গল্প। সেই মুখে বলা গল্প তো আজও লাগে। সেটা বই লেখার জন্য হোক, ফিল্ম বানানোর জন্য হোক, অথবা গেমটা বানানোর জন্য হোক। সেক্ষেত্রে ফিল্মের একটা জায়গা তো সারা জীবনই থেকে যাবে।
আতিক :: সেটা ফিল্মের কোনো অনন্য জায়গা না। আর ফিল্ম তো আসলে শুধু গল্প বলা না। আমাদের কাছে মোটা দাগের একটু গল্প বলাটা মেজর হয়ে আছে। কারণ, আমরা গল্প বলার পার্টই এখনো শেষ করতে পারি নাই। মানে সেটা উত্তীর্ণ হইতে পারি নাই। এখনো দেখব, আমাদের শেষ পর্যন্ত সংকট হইতেছে। মানে অন্যান্য সংকট তো আছেই। দেখা যাচ্ছে, আমরা একটা গল্পই বলতে পারি না ঠিকমতো।
এখন এই গল্পের প্রয়োজন তো ফুরাবে না, সেটা ঠিকাছে। যেভাবে অন্য কিছুর মতন করে হয়তো সিনেমার প্রয়োজন থাকবে না। গল্পের প্রয়োজন আছে, তার অংশ হিসেবে সিনেমার গল্প। গল্প, গান– এগুলো আমরা প্রতিক্ষণ অপরকে চেনানোর নাম করে তাকে নিয়ে যে একটা গল্প পালি বা আজ মনে দুঃখ, মনে ফুর্তি গানটা গাইলাম বা কাজের ছন্দে হাত পা নেড়ে চেড়ে নাচটা হলো বা রিচুয়ালের অংশ হিসেবে– সিনেমার এ তো আদিম যোগ। সিনেমা প্লেজারের গল্পটা এটা আর্টিফিশিয়াল বা বাড়তি জায়গা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন কিছু যেভাবে অ্যাড অন করা। স্টোরিটেলিংয়ের জন্য আর আমাদের সিনেমার দ্বারস্থ হইতে হবে না। অন্যান্য জায়গা আছে।
এই কারণেই ধরো, আমার কিন্তু অনেক কৌতুহল এখনকার সিনেমা নিয়ে। একটা সময় আমি বর্তমান সিনেমা থেকে হয়তো দূরে ছিলাম। কিন্তু এই গত আট-দশ বছর ধরে বর্তমানের ছবিগুলো দেখার চেষ্টা করছি। বর্তমান বলতে লাস্ট ১০-১৫ বছর, ২০ বছর। সিনেমার সেই প্রথম দিকের ফেইজের সেই অন্যান্য একটা চরিত্র নিয়ে সে হাজির হওয়ার চেষ্টা করতেছে। ওই ফেইজটা এখন শেষ।
…
সিনেমা না থাকলেও
আমাদের জীবনে
কোনো সমস্যা
হবে
না
…
ধরো, একটা স্পাইডারম্যান বা থ্রিডি একটা মুভি, তার যে সাউন্ডে অ্যারেঞ্জমেন্ট, আমাকে ওই গল্প বলার চাইতে ওটা ফিজিক্যালি এক্সপেরিয়েন্স করতেই হেল্প করে। তো, ওই ফেইজের আগের ফেইজের সিনেমা, যেগুলোকে আমরা ক্লাসিক সাহিত্য যেমন থাকে, ক্লাসিক ফিল্মস– ওই ফেইজটা শেষ। ওইগুলো রিভাইভ হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। যেভাবে ধরো, আমাদের যাত্রাপালা (আর) নাই। সিনেমা না থাকলেও আমাদের জীবনে কোনো সমস্যা হবে না।
পলক :: ওয়েস্টের দিকে কিছু ক্রিটিকালি এক্লেইমড যারা কমার্শিয়ালি সাকসেসফুল বলা যায়, সবদিক দিয়ে সফল চলচ্চিত্রকারকে দেখি, চলচ্চিত্রের পাশাপাশি গেমও বানান। আপনার কি মনে হয়, আজকে যারা হয়তো বর্তমান সময়ে চলচ্চিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখত, কাল তারা গেম বানানোর স্বপ্ন দেখবে?
আতিক :: নট নেসেসারিলি। সে তো ততক্ষণে অন্য কিছু দেখবে। গেম যারা বানানোর, তারা তো বানাচ্ছেই। আর ধরো, সিনেমার মধ্যেও সিজিআই বা এনিমেশনে যারা কাজ করেন, রেগুলার পারফর্মার দিয়ে বা যিনি ফিজিক্যাল প্রেজেন্স দিয়ে একটা থিয়েটার প্লে করলা, পাপেট দিয়ে থিয়েটার করলা, একই রকমভাবে তুমি পারফর্মার দিয়ে ইনএক্ট করাইলা, এনিমেট করে ক্যারেক্টার তৈরি করে ইনএক্ট করতে দিলা। ওই একই, যদিও স্টোরিটেলিংয়ের গল্প। ওই অর্থে যে রকম ফারাক আছে… এখন তো নানান রকম মোশন ট্রাকার এক্সপ্রেশনের জন্য ডিভাইস করে অন্য চরিত্রে এক্টিং করতেছে। তো, সেই অর্থে সিনেমার ইউনিক, অনন্য কিছু নাই; এটা শুরু থেকে যৌগিক মিডিয়া। এখনো তা-ই আছে। এটার কোনো শুদ্ধ শিল্পের দিকে যাত্রা নাই বা কোনো প্রয়োজন নাই। যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত পাল্টায়; মানে পাল্টাচ্ছে সিনেমা।
পলক :: বাংলাদেশে সিনেমার সাথে সংযুক্ত হওয়া, শিক্ষা গ্রহণের এ রকম একটা স্থান করে দেয়ার বা তৈরি করার যে আপনার একটা পরিকল্পনা আছে, সেটা নিয়ে কিছু বলতে চান?
আতিক :: সেটা নিয়ে বলতে চাই মানে কি, দেখো, ফিল্ম স্কুলে তো হয়তো ভাগোয়া ছাত্র হিসেবেই আমার বারবার ওইটার প্রয়োজনের কথাটা মনে হয়। আবার ফিল্ম স্কুল হইলেই যে ভালো ভালো ফিল্ম তৈরি হবে, ফিল্মমেকার এসে হাজির হবে– এমন না। আমার কৌতুহলটা ভিন্ন একটা জায়গায়। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষ এখন খুব সহজে কানেক্টেড। তোমার দেশে একটা ক্যামেরা তৈরি হয় না, একটা লাইট পর্যন্ত তৈরি হয় না। তুমি ক্যামেরা চালাইতেছো। এডিটের কোনো সফটওয়্যার বলি, হার্ডওয়্যার বলি– সবই অন্যরা আবিষ্কার করছে, সেগুলো তুমি ব্যবহার করো মাত্র, টুলস।
ঠিকাছে, জগতের মানব সভ্যতার যে কোনো আবিষ্কারের এখতিয়ার পৃথিবীর, মানে জগতের যে কোনো প্রান্তের মানুষের। খুবই ভালো কথা। কিন্তু ওই একই যন্ত্র দিয়ে, তার একটি ব্যাকরণ আছে, লাইটের ব্যাকরণ যেমন, ক্যামেরার লেন্সের কারবার সেগুলো। তবু পেছনের মানুষটা, মনোজগৎটা, তার বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠবার যে ব্যাকরণ, সিনেমা নির্মাণের যে ব্যাকরণ বা রীতি-পদ্ধতি– তার আগে একটি স্বতন্ত্র জায়গা থাকবার কথা। সেটা হচ্ছে নিজের পায়ের তলার মাটির বা কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি করতেছি।
খুবই ভালো একই ক্যামেরা দিয়ে তুমি স্ক্যান্ডেনেভিয়ান কোনো কান্ট্রিতে ছবি তোলো বা ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের শহরের মধ্যে ছবি তোলো– দুইটার কোয়ালিটিটিভ জায়গা ভিন্ন। একটা ক্লিন ওয়েদারের গল্প… একটা সময় ফিল্মের ফেইজ যখন ছিল, হয়তো একই ব্যাচের শট বা ফিল্ম তুমি প্রিন্ট করলা… ক্যামিকেলও এক থাকল, পানির গুণাগুণের কারণে ডেভেলপ হওয়ার গল্প।

একই রকমভাবে লাইট পার্টিকেলের মধ্যে যে চেঞ্জটা, তুমি একই লেন্স দিয়ে একই সময়ের মধ্যে তোমার সিজন বলো আর তোমার পরিপার্শ্বের এম্বিয়েন্সের চেহারা বলো, একই রকমভাবে চেহারা-সুরত তো আলাদাই। এই যে ভাষাভঙ্গি, মানুষের আচার-আচরণ– এইগুলোকে নিয়ে যে ছবিটা একজন নির্মাতা নির্মাণ করতে চাইবেন, তার চেহারা-সুরত-স্বভাব-চরিত্র-আচার-আচরণ মিলিয়ে তিনি। ইংরেজি ভাষা যেমন গ্লোবাল ভাষা, সিনেমার ভাষাও বুঝলাম, সে যখন ইংরেজিতে কথা বলে, তার ইংরেজিটা ব্রিটিশের মতো নয়। হয়তো ব্রিটিশ হয়ে ওঠার জন্য সে স্মার্টনেস অর্জন করতে পারে। সে স্মার্টনেসের দায় না রেখে নিজের আপন ভাষায় সিনেমা বানানোর রাস্তাটা কী?
এই কারণে আমার এক ধরনের কৌতুহল তৈরি আছে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ে সিনেমা পড়ানোর এতগুলো সুযোগ বা রাস্তা এখন এই দেশে থাকলেও নিজস্ব সিনেমার ভাষা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা তৈরি করে– এমন একটা ছোট্ট প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন আমি এখনই দেখি। এইটুকুনই। একটু আগে বললাম স্বপ্ন দেখি না। হয়তো এইরকম একটা স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন নয়। খুব দূরের ঘটনা নয়; কিন্তু সেটার জন্য যে সক্ষমতা অর্জন করা দরকার, সেটা দূরের।
পলক :: ছবি ছাড়া নূরুল আলম আতিককে সুখ দেয় কী?
আতিক :: আমার পড়তে ভালো লাগে। কিন্তু আমি অলস বলে খুব কম পড়া হয়। সেইসব পড়াগুলো যদি হয় ইতিহাস-সময়– এইসব সম্পর্কিত বিষয়আশয় এবং সেইগুলো রসকসহীন মনে হইতে পারে অন্যদের, কিন্তু আমার খুব রসালো লাগে। গল্প-কবিতা পড়ার চেয়ে আমার এই ধরনের লেখাপত্র পড়তে এখনো ভালো লাগে। আরেকটা দূরবর্তী কৌতুহল রয়ে গেছে, সেজন্য আরও একটু।
আপাতভাবে এটা কেজো প্রসঙ্গ। অতীশ দিপঙ্করের ফুটস্টেপটা ট্রাক করার গল্প। তার জন্য লেখাপড়ার সমস্ত আয়োজন মোটামুটিভাবে হাতের কাছে তৈরি আছে। এখন একটু একটু করে যদি এক্সপ্লোর করা যায়। এই জার্নিটা, এটাও আরেকটা স্বপ্ন বা আরও কিছু। এতকাল যেহেতু বেঁচে থাকা গেছে, আরও যে কটা দিন থাকা যাবে। অতীশ দিপঙ্করের ছাইভস্ম যে দিয়ে গেল কয় ফোটা, চাইনিজরা তো এগুলাতো সব নস্যাৎ করে দিছে। এদিক থেকে কিন্তু আবার ‘৭৮ সালে এসে অল্প একটুখানি বিক্রমপুরে দিয়ে গেছে।
ছাই থেকে শুরু করে এইখানে তার যে আতুরঘর, পুরো জিনিসটাকে একটা চক্কর দেয়া যায় কি না। হামাহুড়ি দিয়ে কোথায় গেলেন, তারপরে কোথায় ছোটাছুটি করলেন, কোথায় গিয়ে বসলেন, কার কাছ থেকে কী শিক্ষা নিলেন, সেগুলো কোথায় কী অ্যাপ্লাই করতে গিয়া কী কী কাণ্ড-কারখানা, কাদের সঙ্গে যোগ, সেখান থেকে আবার কোন অন্বেষণে কার কাছে গিয়ে আরও কিছু বিদ্যা শিক্ষার জন্য হাজির হন– এই পুরো চেইনটা বা তার পায়ের ছাপটা ট্রাক করা।
এই ধরনের আবোল তাবোল জিনিসগুলোর প্রতি (কৌতুহল আমার)।… আবোল তাবোল মানে কি, যেইগুলো এত আরামদায়ক বা রসালো নয়, বা অনুভূতিকে আরও জাড়িত করে আন্দোলিত করে– এমন নয়। বরং ওই ধুলো-মাটি-পাথর– সেগুলোর খোঁজ-খবর।