গ্রন্থনা: টম মেস ও দর্শক
অনুবাদ: রুদ্র আরিফ
অনুবাদকের নোট
হায়ায়ো মিয়াজাকি। জাপানি মাস্টার অ্যানিমেশন ফিল্মমেকার। বেশকিছু টিভি সিরিজ ও শর্ট ফিল্মের পাশাপাশি বানিয়েছেন ফিচার ফিল্ম– ‘দ্য ক্যাসেল অব কাগলিয়োস্ত্রো’ [১৯৭৯], ‘নসিকা অব দ্য ভ্যালি অব দ্য উইন্ড’ [১৯৮৪], ‘লাপুতা: ক্যাসেল ইন দ্য স্কাই’ [১৯৮৬],‘মাই নেইবার ততোরো’ [১৯৮৮], ‘কিকি’স ডেলিভারি সার্ভিস’ [১৯৮৯], ‘পর্কো রসো [১৯৯২], ‘প্রিন্সেস মনোনোকে’ [১৯৯৭], ‘স্পিরিটেড অ্যাওয়ে’ [২০০১], ‘হাউল’স মোভিং ক্যাসেল’ [২০০৪], ‘পনিয়ো’ [২০০৮] ও ‘দ্য উইন্ড রাইজেস’ [২০১৩]। বয়সের কারণে ঘোষণা দিয়ে ফিল্মমেকিং থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। অবশেষে দীর্ঘ বিরতি শেষে সম্প্রতি জানিয়েছেন ফেরার খবর। বর্তমানে ফিচার ফিল্ম ‘হাউ ডু ইউ লিভ?’ নির্মাণে ব্যস্ত।
তার এই সাক্ষাৎকার দীর্ঘ দুই দশক আগে, ২০০২ সালে নেওয়া হলেও এখনো দারুণ প্রাসঙ্গিক। অবশ্য এটি প্রচলিত সাক্ষাৎকারও নয়, বরং একটি আয়োজনে দর্শকদের সঙ্গে তার প্রশ্নোত্তর পর্বের সংকলন, গ্রন্থনা করেছেন টম মেস। বলে রাখা ভালো, ওই আয়োজনে প্রশ্নকারীদের মধ্যে টম নিজেও ছিলেন।

টম মেস/দর্শক :: আপনি সব ফিল্মই স্ক্রিপ্ট ছাড়া বানান, এ কথা সত্য?
হায়ায়ো মিয়াজাকি :: হ্যাঁ, সত্য। কোনো ফিল্মের কাজ যখন শুরু করি, আমার কাছে তখনো কাহিনিটি সম্পন্ন ও প্রস্তুত থাকে না। সেই সময় সাধারণত পাই না আমি। ফলে স্টোরিবোর্ড ড্রয়িং করতে করতেই কাহিনির ডেভেলপ করি। এর পরপরই প্রোডাকশনটির কাজ শুরু করে দিই, যদিও একইসঙ্গে স্টোরিবোর্ড ডেভেলপের কাজ চলতে থাকে। কাহিনিটি কোথায় গিয়ে থামবে– সে কথা আমাদের (আগে থেকে) জানা না থাকলেও ডেভেলপের পাশাপাশিই ফিল্মটির কাজ এগিয়ে নিতে থাকি।
জানি, অ্যানিমেশন ফিল্ম বানানোর ক্ষেত্রে এটি একটি বিপজ্জনক প্রক্রিয়া, এবং কাজের এই ধরন আমার পাল্টে নেওয়া উচিত; কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এভাবেই আমি কাজ করি এবং বাকি সবাই এক ধরনের বাধ্য হয়েই এর সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নেন।
টম/দর্শক :: তবে এভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে চরিত্রগুলোর প্রতি আপনার যথেষ্ট সহানুভূতি দেখানোর দরকার পড়েই, তাই না?
মিয়াজাকি :: চরিত্রগুলোর প্রতি আমার সহানুভূতি নয়, বরং ফিল্মটির বাড়ন্ত দৈর্ঘ্যই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্মটির দৈর্ঘ্য আমাদের কতটুকু করা উচিত? এটির পক্ষে দুই-তিন ঘণ্টার ফিল্ম হওয়া ঠিক হবে কি? এটা একটা বড় সমস্যা।
…
আমি
কিছুতেই
নিজের কাজের
ক্রিতদাসে পরিণত
হতে চাই
না
…
এ নিয়ে প্রডিউসারের সঙ্গে হরদমই বিবাদ লেগে যায় আমার। তিনি সাধারণত আমার কাছে জানতে চান, প্রোডাকশন সিডিউল অতিরিক্ত এক বছর বাড়িয়ে নেব কি না। সত্যি হলো, আমাকে এক বছর বাড়তি সময় দেওয়ার কোনো আগ্রহ তার নেই; বরং এমন কথা বলে তিনি আসলে আমাকে স্রেফ ভড়কে দিতে এবং কাজে ফেরাতে চান। যতটা সময় লেগে গেছে, তারচেয়ে আরও এক বছর বেশি কাজ করে আমি কিছুতেই নিজের কাজের ক্রিতদাসে পরিণত হতে চাই না; তাই তিনি আসলে এ ধরনের কথা বলে আমাকে কাজটির প্রতি আরও মনোনিবেশ করার ও কাজের গতি বাড়িয়ে তোলার তাড়া দেন।
ডিরেক্টিংয়ের সময় আরেকটি মূলনীতি আমি মেনে চলি: আমার কর্মীদের সৃষ্টি করা যেকোনো কিছুর সর্বাত্মক ভালো রকমের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ। এমনকি তাদের বানানো ফোরগ্রাউন্ড যদি আমার ব্যাকগ্রাউন্ডের সঙ্গে যথেষ্ট ভালোভাবে না মানায়, তবু সেটি নষ্ট করি না; বরং সর্বাত্মক ভালো রকমের কাজে লাগানোর উপায় খুঁজি।
টম/দর্শক :: তার মানে, কোনো একটি চরিত্র একবার সৃষ্টি করা হয়ে গেলে সেটিকে কাহিনি থেকে কখনোই বাদ দেন না এবং চূড়ান্ত ফিল্মটিতেও শেষ পর্যন্ত সেটির দেখা মেলে?
মিয়াজাকি :: চরিত্রগুলোর জন্ম ঘটে পুনরাবৃত্তি থেকে, সেগুলোকে নিয়ে বারংবার ভাবনা-চিন্তা থেকে। সেগুলোর আউটলাইন আমার মাথায় আগে থেকেই থাকে। আমিই হয়ে উঠি ওই চরিত্র, আর চরিত্রটির মানসিকতা নিয়ে কাহিনিটির লোকেশনগুলোতে বারবার আসা-যাওয়া করতে থাকি। এরপরই শুধু ওই চরিত্রের ড্রয়িং শুরু করি। তবু এরপরও বারবার ওকে মাথায় নিয়ে, ওর চোখে লোকেশনে ঘুরতে থাকি। আমার ড্রয়িং শেষ হয় কেবলই ডেডলাইনের ঠিক আগ মুহূর্তে।
টম/দর্শক :: চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজের এই যে ভীষণ রকমের ব্যক্তিগত সংযোগ, তাহলে আপনার বেশির ভাগ ফিল্মের প্রধান চরিত্র কেন সাধারণত মেয়ে?
মিয়াজাকি :: এই মুহূর্তে এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া খুবই জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে ওঠবে। তাই আপাতত এটুকুই বলছি: এর কারণ, নারীদের আমি ভীষণ ভালোবাসি… হা-হা-হা…!
টম/দর্শক :: স্পিরিটেড অ্যাওয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র চিহিরোকে আপনার আগের ফিল্মগুলোর কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রগুলোর চেয়ে একটু আলাদা ধরনের নায়িকা বলেই মনে হয়। তার মধ্যে নায়কোচিত ভাব নিশ্চিতভাবেই তুলনামূলক কম; তার মোটিভেশন কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানতে পারি না।
মিয়াজাকি :: চিহিরোর চরিত্রটিকে আমিই এভাবে গড়ে তুলেছি– এমন কথা বলব না; কেননা, বর্তমানে জাপানে এ ধরনের তরুণীর সংখ্যা প্রচুর। তাদের খুশি রাখতে বাবা-মায়েরা কী নিদারুণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সে ব্যাপারে তারা দিনে দিনে আরও বেশি সংবেদনহীন হয়ে উঠছে।
(এই ফিল্মের) একটি দৃশ্যে দেখা যায়, চিহিরোকে তার বাবা নাম ধরে ডাকলেও সে সাড়া দেয়নি। দ্বিতীয়বার ডাকার পরই সাড়া দিয়েছে। আমার অনেক কর্মীই আমাকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় ডাকে নয়, বরং তৃতীয় ডাকে সাড়া দেওয়া দেখাতে; কেননা, জাপানে এখন অনেক মেয়েই এ রকম। বাবা-মায়ের ডাকে তারা মুহূর্তেই সাড়া দেয় না।
ফিল্মটি বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে প্রেরণা জোগানো উপলব্ধিটি হলো– ১০ বছর বয়সী এইজ গ্রুপের মেয়েদের নিয়ে কোনো ফিল্ম নেই। আমি আমার এক বন্ধুর মেয়েকে পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করেছি, ওর জন্য কোনো ফিল্মই নেই; কোনো ফিল্মই সরাসরি ওর হয়ে কথা বলেনি। নিশ্চিতভাবেই, মেয়েরা সাধারণত তাদের সমবয়সী চরিত্রগুলোকে নিয়ে বানানো ফিল্ম দেখতে বেশ পছন্দ করে; কিন্তু সেই চরিত্রগুলোর মাঝে নিজেকে খুঁজে পায় না তারা। কেননা, সেগুলো স্রেফ কাল্পনিক চরিত্র; ওদের সঙ্গে কোনো মিল নেই।

স্পিরিটেড অ্যাওয়ের মাধ্যমে আমি ওদের বলতে চেয়েছিলাম, ‘চিন্তা করো না, শেষ পর্যন্ত সব ঠিক হয়ে যাবে, তোমার জন্য কিছু একটা থাকবে,’ আর সেটা শুধু সিনেমায়ই নয়, প্রাত্যহিক জীবনেও। এ কারণেই এই ফিল্মের নায়িকার আসলে উড়তে পারা কিংবা অসম্ভব কিছু করতে পারা কেউ নয়; বরং একদম সাধারণ একজন বালিকা হওয়ার দরকার ছিল। সে স্রেফ এমন এক বালিকা, যার দেখা জাপানের যেকোনো জায়গায় আপনি পাবেন।
চিহিরো চরিত্রটি ও তার অ্যাকশন ঘিরে যখনই আমি কিছু লিখতে বা আঁকতে বসেছি, নিজেকে বারবার প্রশ্ন করে নিয়েছি: আমার বন্ধুর মেয়েটি কিংবা ওই মেয়ের বান্ধবীরা এমন কিছু করতে সক্ষম তো? এই মানদণ্ডেই দৃশ্যগুলোতে চিহিরোর জন্য কোনো টাস্ক কিংবা চ্যালেঞ্জ হাজির করেছি। কেননা, এই ধরনের চ্যালেঞ্জ সামলানোর মধ্য দিয়েই এই পুঁচকে জাপানি মেয়ে পরিণত হয় একজন সক্ষম ব্যক্তিতে।
ফিল্মটি বানাতে আমার তিন বছর লেগেছে। তাই আমার বন্ধুর মেয়েটির বয়সও আর ১০ নেই, ১৩ হয়ে গেছে; তবু ফিল্মটি তার পছন্দ হয়েছে। তাই আমি ভীষণ খুশি।
টম/দর্শক :: যেহেতু বললেন, স্টোরিবোর্ড ড্রয়িং শুরু করার সময়ও কাহিনির সমাপ্তি সম্পর্কে আপনার জানা থাকে না, সেক্ষেত্রে কাহিনির উপসংহারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আপনি কি কোনো নির্দিষ্ট মেথড বা নিয়ম অনুসরণ করেন?
মিয়াজাকি :: অন্তস্তলীয় একটি শৃঙ্খলা তো থাকেই: কাহিনিটির নিজের প্রয়োজনই আমাকে উপসংহারে পৌঁছানোর পথ দেখায়। স্পিরিটেড অ্যাওয়েতে বিভিন্ন ধরনের ১৪১৫টি শট রয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শুরু করার সময় আমি ধরে নিয়েছিলাম, এ সংখ্যা হবে ১২০০’র মতো; কিন্তু স্বয়ং ফিল্মটিই আমাকে বলে দিয়েছিল, এটির আরও ১২০০ শট দরকার।
ফিল্মটি আসলে আমি বানাইনি; বরং ফিল্মটি নিজেই নিজেকে বানিয়ে তুলেছে। সেক্ষেত্রে ওকে অনুসরণ করা ছাড়া আমার কোনো উপায় ছিল না।
টম/দর্শক :: আপনার কাজে ঘুরে-ফিরে আসা বিভিন্ন বিষয়ের দেখা স্পিরিটেড অ্যাওয়েতেও পাওয়া যায়; বিশেষ করে, নস্টালজিয়ার থিমটি। আপনার চোখে নিজের আগের কাজের সঙ্গে এই ফিল্মের সম্পর্কটি কেমন?
মিয়াজাকি :: খুবই কঠিন প্রশ্ন! আমার ধারণা, নস্টালজিয়ার অনেকগুলো রূপ রয়েছে, এবং এটি শুধু বড়দের জিনিস নয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার জীবনের একটি নিদিষ্ট সময়ের নস্টালজিয়া অনুভব করতে পারে; তবে আমি মনে করি, শিশুদেরও নস্টালজিয়া রয়েছে। এটি মানবজাতির সবচেয়ে বেশি জাহির করা আবেগগুলোর একটি। আমাদেরকে মানুষে পরিণত করার ক্ষেত্রে যতকিছুর ভূমিকা রয়েছে, এটি তার অন্যতম; তবে নস্টালজিয়াকে নিরূপন করা কঠিন।
তারকোভস্কির নস্টালজিয়া সিনেমাটি দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, নস্টালজিয়া একটি শ্বাশত বিষয়। ‘নস্টালজিয়া’ শব্দটি যদিও জাপানে আমরা ব্যবহার করি, তবু এটি কোনো জাপানি শব্দ নয়। ঘটনা হলো, যদিও ভিনদেশি ভাষায় আমি কথা বলতে জানি না, তবু (তারকোভস্কির) সিনেমাটি দেখে বুঝতে পেরেছিলাম, সব মানুষই আসলে নস্টালজিয়া অনুভব করে।
মানুষ যখন বর্তমানে থাকে, নানা জিনিস খুঁইয়ে ফেলে সে। এটিই জীবনের নিয়ম। তাই সব মানুষেরই নস্টালজিয়া থাকা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।
টম/দর্শক :: আপনার আগের সিনেমাগুলোর সঙ্গে স্পিরিটেড অ্যাওয়েকে তুলনা করলে এখানে একজন অথরের সত্যিকারের স্বাধীনতার দেখা পাওয়া যায়। মনে হয়, ফিল্মটি ও এর কাহিনিকে যুক্তির তোয়াক্কা না করে আপনি মর্জিমতো যেখানে খুশি নিয়ে যেতে সক্ষম।
মিয়াজাকি :: যুক্তি হলো মস্তিষ্কের সামনের অংশের ব্যবহার ঘটানো। কিন্তু যুক্তি দিয়ে আপনি কোনো ফিল্ম বানাতে পারবেন না। কিংবা, এটিকে যদি ভিন্নভাবে দেখেন, সেক্ষেত্রে, যুক্তি দিয়ে সবার পক্ষেই ফিল্ম বানানো সম্ভব।
তবে আমি যুক্তি ব্যবহারের লোক নই। বরং আমার অবচেতন অংশের গভীরে খনন চালানোর চেষ্টা চালাই। এই প্রক্রিয়ার একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে সেই ঢাকনাটি খুলে যায় এবং মুক্তভাবে বিভিন্ন আইডিয়া ও ভিশন ধরা দিতে থাকে। সেগুলোকে নিয়েই ফিল্ম বানানো শুরু করতে পারি আমি।
তবে সেই ঢাকনাকে পুরোপুরি খুলে না ফেলাই বোধহয় ভালো। কেননা, আপনি যদি নিজের অবচেতনকে মুক্তি দিয়ে দেন, তাহলে আপনার পক্ষে সামাজিক কিংবা পারিবারিক জীবন কাটানো সত্যিই খুব কঠিন হয়ে উঠবে।

আমি মনে করি, আমরা যতটুকু উপলব্ধি করতে সক্ষম, মানব মস্তিষ্ক তারচেয়েও বেশি জানে ও গ্রহণ করে। দর্শকের কথা মাথায় রেখে একটি নির্দিষ্ট পন্থায় কোনো দৃশ্যকে সামলানো উচিত– এমন ধরনের কোনো সিগন্যাল আমার মস্তিষ্কের সামনের দিকটি আমাকে দেয় না। যেমন ধরুন, ট্রেনে চিহিরোর একা একাই যাত্রা করার দৃশ্যটি দিয়েই ফিল্মটির সমাপ্তি টানার কথা ভেবেছিলাম আমি। আমার কাছে ওটিই ফিল্মটির সমাপ্তি। প্রথমবার যখন একা একা ট্রেনে উঠেছিলাম, সেই অনুভূতি আমার মনে আছে। সেইসব অনুভূতিকে ওই দৃশ্যে জুড়ে দিতেই ট্রেনের জানালা দিয়ে পাহাড় কিংবা অরণ্যের কোনো ভিউ না দেখানোটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
একা একা প্রথম ট্রেনের চড়ার অভিজ্ঞতা যদি কারও মনে থাকে, তাদের বেশিরভাগেরই ট্রেনের বাইরের ল্যান্ডস্কেপ সম্পর্কে কিচ্ছুটি মনে পড়বে না; কেননা, তারা তখন স্বয়ং ভ্রমণের ওপরই পুরো মনোনিবেশ করেন। সেটা বোঝাতেই (ফিল্মটির ওই দৃশ্যে) ট্রেন থেকে কোনো ভিউ রাখিনি। তবে সেজন্য আগের দৃশ্যগুলোতে একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নিয়েছিলাম– বৃষ্টি ঝরছে, আর ল্যান্ডস্কেপটি ডুবে রয়েছে পানিতে। তবে ট্রেনের দৃশ্যটিতে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত আমি এটির কারণ নিজেই জানতাম না।
…
কাহিনি
সৃষ্টির ক্ষেত্রে
স্রেফ যুক্তির চেয়ে
বরং আরও গভীর কিছু
আপনাকে পথ
দেখাবে
…
ট্রেনের দৃশ্যে পৌঁছে তবেই নিজেকে বললাম, ‘আরে, কী সৌভাগ্য আমার, আমি তো (ল্যান্ডস্কেপটাকে) রীতিমতো একটা মহাসমুদ্র বানিয়ে ফেলেছি’… হা-হা-হা…! ওই দৃশ্যের কাজ করার সময়ই উপলব্ধি করেছিলাম, আমি একটা না-চেতন পন্থায় কাজ করি। কাহিনি সৃষ্টির ক্ষেত্রে স্রেফ যুক্তির চেয়ে বরং আরও গভীর কিছু আপনাকে পথ দেখাবে।

টম/দর্শক :: ওয়েস্টার্ন কিংবা ইউরোপিয়ান ল্যান্ডস্কেপে প্রচুর ফিল্ম বানিয়েছেন আপনি; যেমন ধরুন, লাপুতা কিংবা পর্কো রসো। বাকিগুলো বানিয়েছেন জাপানি ল্যান্ডস্কেপে। ফিল্মের প্রেক্ষাপট আপনি কোন ভিত্তিতে নির্ধারণ করেন?
মিয়াজাকি :: নিজের সিনেমায় ব্যবহার করব বলে আমার কাছে এক গাদা স্টক ইমেজ এবং ল্যান্ডস্কেপের পেইন্টিং রয়েছে। তার মধ্যে কোনটি ব্যবহার করব, তা বেছে নেওয়া পুরোপুরিই নির্ভর করে– যখন ফিল্মের কাজ শুরু করি, ঠিক সেই মুহূর্তের ওপর।
বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রডিউসারের সঙ্গে আলাপ করে নিই; তবে এটি আসলে একান্তই সেই মুহূর্তটির ওপর নির্ভরশীল। কেননা, যে মুহূর্তে কোনো সিনেমা বানাব বলে ঠিক করি, তখন সে সংক্রান্ত ডকুমেন্টেশন জড়ো করার কাজও চালিয়ে যাই।

প্রচুর তল্পিতল্পা নিয়ে ভ্রমণ করি আমি; দুনিয়ার প্রাত্যহিক জীবনের বহু ইমেজ থাকে আমার আছে– যেগুলো ফিল্মে ফুটিয়ে তুলতে চাই। কোনো বাথহাউসকে ফিল্মের প্রেক্ষাপট বানানোর– যেমন প্রেক্ষাপট স্পিরিটেড অ্যাওয়ের ক্ষেত্রে ঘটেছে– এ ভাবনা আমার মাথায় শৈশব থেকেই ছিল, যখন নিজে পাবলিক বাথহাউসে গিয়েছিলাম। অন্যদিকে, ততোরো বানানো শুরু করার আগে ফিল্মটির প্রেক্ষাপট হিসেবে অরণ্যের কথা আমি ১৩ বছর ধরে ভেবেছি। লাপুতার ক্ষেত্রে সেটির লোকেশন হিসেবে ওই প্রেক্ষাপট ব্যবহারের ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল ফিল্ম বানানো শুরু করার বেশ কয়েক বছর আগেই।
ফলে আমি সবসময় এইসব আইডিয়া ও ইমেজ নিজের সঙ্গে নিয়ে চলি, এবং ফিল্মটি বানানো শুরু করার মুহূর্তটিতেই সেগুলো থেকে একটি বেছে নিই।
টম/দর্শক :: দুনিয়ার এই প্রান্তকে দেখানো অন্যান্য জাপানি অ্যানিমেশনের তুলনায় আপনার ফিল্মগুলোতে সবসময় ইতিবাচকতা, আশাবাদ ও মানুষের ভালোত্বের প্রতি বিশ্বাসের একটি বোধের প্রকাশ ঘটে। এটি কি আপনি সচেতনভাবেই আপনার ফিল্মগুলোতে জুড়ে দেন?
…
ফিল্ম
বানানোর
সময় শিশুদের
মধ্যে নিজের নৈরাশ্যকে
চালান করে
দিতে চাই
না
…
মিয়াজাকি :: আসলে আমি একজন নৈরাশ্যবাদী লোক। কিন্তু ফিল্ম বানানোর সময় শিশুদের মধ্যে নিজের নৈরাশ্যকে চালান করে দিতে চাই না। সেটিকে দূরে রাখি। আমি মনে করি, বড়দের কিছুতেই নিজেদের দুনিয়া দেখার দৃষ্টিভঙ্গি শিশুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়; শিশুরা নিজ নিজ অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তুলতে যথেষ্ট সক্ষম। আমাদের অন্তর্দৃষ্টি তাদের ওপর জোর করে চাপানোর কোনো দরকার নেই।
টম/দর্শক :: তার মানে, আপনার সব ফিল্মই শিশুদের উদ্দেশ্য করে বানানো– এমনটা অনুভব করেন?
মিয়াজাকি :: পর্কো রসো ফিল্মটি শিশুদের জন্য বানানো– এমন কথা কোনোদিনই বলিনি। আমি তা মনেও করি না। তবে পর্কো রসোর কথা বাদ দিলে, আমার বাদবাকি সব ফিল্মই মূলত শিশুদের জন্য। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ফিল্ম বানাতে সক্ষম– এমন অনেক লোকই রয়েছেন; তাই সেই দায়িত্ব তাদের ওপর ছেড়ে দিয়ে আমি বরং শিশুদের প্রতিই মনোযোগ রাখতে পছন্দ করি।
টম/দর্শক :: তবু লাখ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক দর্শকও আপনার ফিল্ম দেখেন এবং তারা আপনার কাজ থেকে প্রচুর আনন্দও পান।
মিয়াজাকি :: এ ঘটনা আমাকে বিপুল আনন্দ দেয়। এর কারণ হিসেবে মনে করি, যে ফিল্ম বিশেষত শিশুদের জন্য বানানো, যে ফিল্ম বানানোর পেছনে প্রচুর একনিষ্ঠতা জড়িয়ে রয়েছে, সেটি প্রাপ্তবয়স্কদেরও আনন্দ দিতে সক্ষম। এর বিপরীতটা সবসময় সত্য নয়।
শিশুদের জন্য বানানো ফিল্ম ও বড়দের জন্য বানানো ফিল্মের মধ্যে একক পার্থক্য হলো, (শিশুদের জন্য বানানো ফিল্মে) নতুন করে শুরু করার, নতুন একটি শুরু সৃষ্টির সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে। বড়দের জন্য বানানো ফিল্মে কোনোকিছু পরিবর্তনের কোনো উপায় থাকে না: যা ঘটে, তা ঘটেই।
টম/দর্শক :: এই যে কাহিনিগুলো আপনি একটি নির্দিষ্ট পন্থায় দেখান, এটা কি মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য জরুরি বলে মনে করেন?
মিয়াজাকি :: আমি কোনো স্টোরিটেলার নই; বরং এমন একজন মানুষ– যে কি না ছবির ড্রয়িং করি… হা-হা-হা…! অবশ্য কাহিনির শক্তি আছে– এ কথা বিশ্বাস করি। মানুষের মানুষ হয়ে ওঠার পেছনে কাহিনিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে; এগুলো শ্রোতাদের উদ্দীপ্ত, বিনোদিত ও অনুপ্রাণিত করতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
টম/দর্শক :: শিশুতোষ কাহিনি শোনানোর ক্ষেত্রে ফ্যান্টাসি থাকা আবশ্যক বলে মনে করেন?
মিয়াজাকি :: কল্পনাশক্তির তাৎপর্য হিসেবে ফ্যান্টাসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করি। প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতার একেবারেই কঠোর রকমের নিকটবর্তী হওয়া আমাদের উচিত নয়; বরং অন্তর, মনন ও কল্পনার জগতের বাস্তবতাকেও একটু জায়গা দেওয়া দরকার। এই জিনিসগুলো আমাদের জীবনে বেশ কাজে দেয়।
…
নিজের কাজে কাল্পনিক দুনিয়া
ও বাস্তব দুনিয়ার মধ্যে
ভারসাম্য ধরে রাখার
প্রশ্নে আমাকে
নিরন্তর
লড়তে
হয়
…
তবে এই ওয়ার্ড ফ্যান্টাসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। জাপানে আজকাল ওয়ার্ড ফ্যান্টাসির প্রয়োগ ঘটে টিভি শো থেকে শুরু করে ভিডিও গেমস পর্যন্ত সবকিছুতে; এ যেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তো আসলে রিয়ালিটির একটি অস্বীকার। বাস্তবের ক্ষেত্রে কাজে লাগে– এমন কল্পনাশক্তির ক্ষমতার প্রতি আমাদের উদার হওয়া জরুরি। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি তো মানুষকে বন্দি করে ফেলতে সক্ষম। নিজের কাজে কাল্পনিক দুনিয়া ও বাস্তব দুনিয়ার মধ্যে ভারসাম্য ধরে রাখার প্রশ্নে আমাকে নিরন্তর লড়তে হয়: এ এক উভয়সংকট।
টম/দর্শক :: স্পিরিটেড অ্যাওয়ে ও পর্কো রসো— উভয় ফিল্মেই মানুষকে আমরা শূকরে রূপান্তরিত হতে দেখি। শূকরের প্রতি এই মুগ্ধতা আপনার ভেতর কীভাবে এলো?

মিয়াজাকি :: এর কারণ, উট কিংবা জিরাফ আঁকার চেয়ে শূকর আঁকা খুবই সহজ… হা-হা-হা…! আমার ধারণা, আমি যা বলতে চাই, তার সঙ্গে এই প্রাণী বেশ ভালোভাবে মিলে যায়। শূকরের আচরণের সঙ্গে মানুষের আচরণের মিল অনেক। শূকরের শক্তিমত্তা ও দুর্বলতা সহকারে শূকরকে আমি অন্তর থেকে পছন্দ করি। গোলগাল পেট সহকারে আমরা দেখতে যেন শূকরের মতোই। ওদের সঙ্গে আমাদের খুব মিল।
টম/দর্শক :: পচা-গলা নদী দেবতার দৃশ্যটি সম্পর্কে কী বলবেন? জাপানি মিথোলজিতে এর কোনো ভিত্তি আছে?
মিয়াজাকি :: না। এটি মিথোলজি থেকে নয়, বরং নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নিয়েছি। যে গ্রামাঞ্চলে আমি থাকি, তার কাছেই একটি নদী আছে। নদীটি যখন পরিষ্কার করা হয়েছিল, আমরা দেখতে গিয়েছিলাম– তলার অবস্থা কী রকম: পুরোদস্তুর দূষিত ও দুর্গন্ধময়।

নদীর ভেতর একটা বাইসাইকেল ছিল; সেটার চাকাগুলো উঁকি দিয়ে ছিল পানির উপরে। তাই পরিচ্ছন্নকর্মীরা ভাবলেন, খুব সহজেই ওটাকে টেনে তোলা যাবে। কিন্তু করতে গিয়ে দেখা গেল, কাজটা বেশ কঠিন। কেননা, বছরের পর বছর ময়লা-আবর্জনার মধ্যে থেকে এর ওজন অনেক বেড়ে গেছে।
নদীটা অবশেষে পরিচ্ছন্ন করা গেছে। সেখানে ধীরে ধীরে ফিরতে শুরু করেছে মাছ। তার মানে, সবকিছুই চিরতরে হারিয়ে যায় না। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মের সময় ভয়ানক দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল সেখান থেকে। কেননা, বছরের পর বছর ধরে লোকজন সব রকমের আবর্জনাই ওখানে ফেলেছিল। তাই যাচ্ছেতাই অবস্থা দাঁড়িয়েছিল নদীটির।
টম/দর্শক :: আপনার ফিল্মগুলোতে এমন কোনো কেন্দ্রীয় দৃশ্য থাকে, যেটি সম্পূর্ণ ফিল্মের প্রতিনিধি?

মিয়াজাকি :: আমি যেহেতু একটি স্টোরিলাইনের সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছাড়াই কাজ শুরু করা মানুষ, তাই আমার কাছে প্রতিটি দৃশ্যই কেন্দ্রীয় দৃশ্য। (স্পিরিটেড অ্যাওয়ের) যে দৃশ্যে বাবা-মা রূপান্তরিত হলো শূকরে, সেটি ওই ফিল্মের ওই মুহূর্তের কেন্দ্রীয় দৃশ্য। তবে এরপর, এর পরবর্তী দৃশ্যটিই কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে সবগুলো দৃশ্যই।
…
প্রতিটি
দৃশ্য সৃষ্টিই
এর নিজস্ব সমস্যাগুলো
হাজির
করে
…
যেমন ধরুন, যে দৃশ্যে চিহিরো কাঁদতে থাকে, সেখানে আমি ওর অশ্রুফোঁটাগুলো ভীষণ বড় করে দিতে চেয়েছিলাম, ঝরনাধারার মতো। কিন্তু দৃশ্যটিকে ঠিক যেভাবে কল্পনা করেছিলাম, সেভাবে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারিনি। তাই এখানে কোনো কেন্দ্রীয় দৃশ্য নেই; কেননা, প্রতিটি দৃশ্য সৃষ্টিই এর নিজস্ব সমস্যাগুলো হাজির করে, যার প্রভাব পড়ে পরবর্তী দৃশ্যগুলোতে।
তবে স্পিরিটেড অ্যাওয়েতে থাকা দুটি দৃশ্যকে ফিল্মটির প্রতীক হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। একটি হলো, প্রথম দৃশ্যে গাড়িটির পেছনে মেয়েটি যখন বসে থাকে, সে তখন আসলেই একজন ভঙুরচিত্ত এক পুঁচকে বালিকা; অন্যটি হলো শেষ দৃশ্যটি, যেখানে পূর্ণ জীবনশক্তির অধিকারী হয়ে সমস্ত দুনিয়ার মোকাবেলা করতে সে সক্ষম। চিহিরোর এই দুটি প্রতিকৃতিই তার চরিত্রটির বিকাশের ভেতর দিয়ে দেখানো হয়েছে।
টম/দর্শক :: আপনার ওপর অন্যান্য ফিল্ম ও ডিরেক্টরের প্রভাব কতটুকু?
মিয়াজাকি :: ১৯৫০-এর দশকের ফিল্ম ও ফিল্মমেকারদের দেখে দেখে নিজেকে গড়ে তুলেছি আমি। সে সময়ে প্রচুর ফিল্ম দেখতাম। যে ফিল্মমেকার আমাকে সত্যিকার অর্থেই অনুপ্রাণিত করেছিলেন, তিনি ফরাসি অ্যানিমেটর পল গ্রিমো। সারা দুনিয়ার নানা দেশের প্রচুর ফিল্ম দেখেছি ঠিকই, তবে ফিল্মমেকারদের নাম সাধারণত আমার মনে থাকে না। এ কারণে অন্যদের নাম নিতে পারলাম না বলে ক্ষমা চাচ্ছি। আরেকটি ফিল্মের নিশ্চিত প্রভাব আমার ওপর পড়েছিল; সেটি রাশিয়ান ফিল্ম– দ্য স্নো কুইন।
সমকালীন অ্যানিমেশন ডিরেক্টরদের মধ্যে রাশিয়ার ইউরি নর্শতেইন ও কানাডার ফ্রেডেরিক বাখের প্রতি আমার প্রবল সমীহ রয়েছে। বিশেষ করে নর্শতেইন আসলে শিল্পীর মর্যাদা পাওয়ার সত্যিকারের দাবিদার।
টম/দর্শক :: আপনার পরবর্তী প্রকল্প কোনটি? এই মুহূর্তে কিছু বানাচ্ছেন?
মিয়াজাকি :: সম্প্রতি আমরা স্টুডিও জিবলি মিউজিয়াম চালু করেছি। মিউজিয়াম বললে হয়তো একটু বাড়াবাড়িই হবে; কেননা, আমরা ছোট্ট পরিসরে স্টুডিওর কিছু কাজকর্মের প্রদর্শনী করছি। তার ভেতরে ছোট্ট একটি থিয়েটার রয়েছে, যেখানে মূলত জিবলি মিউজিয়ামের জন্য বানানো শর্ট ফিল্মগুলো দেখাব। এর দায়দায়িত্ব আমার। এর জন্য একটি শর্ট ফিল্ম বানানোর কাজ করছি এখন।
তাছাড়া, হিরোয়ুকি মোরিতা নামে এক তরুণ ডিরেক্টরের বানানো নতুন একটি ফিল্মের সুপারভাইজিংও করছি। ফিল্মটি আগামী গ্রীষ্মে জাপানের সিনেমা-হলগুলোতে দেখানোর কথা রয়েছে। আরেকজন ডিরেক্টরকে সুপারভাইজ করা খুবই কঠিন কাজ; কেননা, আমি যেভাবে কাজ করি, সেই তুলনায় তার কাজ করার ধরন একেবারেই আলাদা। এ এক সত্যিকারের ধৈর্য পরীক্ষা।
টম মেস/দর্শক :: স্পিরিটেড অ্যাওয়ের অবিশ্বাস্য রকমের প্রভাব জাপানে আপনার কর্মপদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন এনে দিয়েছে?
হায়ায়ো মিয়াজাকি :: না। কোনো একটা ফিল্ম ঠিকঠাক চলবে কি না, সেটি সাফল্য পাবে কি না, কিংবা দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে নাকি– আপনার [ফিল্মমেকার] পক্ষে আগে থেকে বলা কখনোই সম্ভব নয়। নিজেকে আমি সবসময়ই বলি, যা-ই ঘটুক, দর্শক বেশি পাক কিংবা কম, সেটি আমার কাজের পন্থায় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। সেখানে এত বড় সাফল্য পাওয়ার পর নিজের কর্মপদ্ধতির পরিবর্তন করতে চাওয়াটা নিশ্চয়ই আমার পক্ষে খানিকটা নির্বুদ্ধিতাই হবে।
তার মানে, আমার কর্মপদ্ধতি আসলে ভালোই কার্যকর… হা-হা-হা…!
সূত্র: মিডনাইট আই; জাপানি ফিল্মের প্রতি নিবেদিত বিশেষ ওয়েবসাইট। ২০০২