ভেরা খিতিলোভার চিঠি অথবা শাসনযন্ত্রের বুলডোজারে পিষ্ট এক মাস্টার ফিল্মমেকারের জবানবন্দি

258
ভেরা খিতিলোভা Věra Chytilová

মূল । ভেরা খিতিলোভা
ভূমিকা ও অনুবাদ । রুদ্র আরিফ

অনুবাদকের নোট
ভেরা খিতিলোভা [২ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯–১২ মার্চ ২০১৪]। চেক মাস্টার ফিল্মমেকার। চেক নিউ ওয়েভ ফিল্ম মুভমেন্টের অন্যতম অগ্রসেরা। আপসহীন এই ফিল্মমেকারকে নিজ দেশের কট্টরপন্থী কমিউনিস্ট শাসনামলে দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হয়েছে নিষেধাজ্ঞার বোঝা। সেই প্রতিকূল সময়ে সমকালীন ও সহযোদ্ধা বেশ কয়েকজন ফিল্মমেকার বিদেশে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেও ভেরা ছাড়েননি নিজ ভূমি। লড়ে গেছেন নিজের মতো; আর সুযোগ পেলেই ঘটিয়েছেন একেকটি দারুণ সিনে-বিস্ফোরক। তেমনই এক সময়ে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে লেখা এ চিঠি শাসনযন্ত্রের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ের ঐতিহাসিক সাক্ষ্য বহন করে…


হেমন্ত ১৯৭৫

প্রিয় কমরেড প্রেসিডেন্ট,
অন্য কোনো উপায় না পেয়ে আপনাকেই লিখছি। কাজ পাওয়ার আমার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে; ফলে আপনার বিচার বোধই আমার শেষ আশার জায়গা। আমি একজন ফিল্মমেকার। ২১ বছর আগে, বারান্ডোফ ফিল্ম স্টুডিওর একজন ক্ল্যাপার গার্ল হিসেবে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যখন পা রাখি, তখন এই মাধ্যমের প্রতি এতটাই আগ্রহ জন্মায়, ফিল্ম ফ্যাকাল্টিতে ভর্তির পরীক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করি, এবং ২৭ বছর বয়সে পড়াশোনায় সামিল হতে সক্ষম হই। অনার্সসহ গ্রাজুয়েশন করে বারান্ডোফে ফিরে আসি আমি। এরপর মোটে পাঁচটি ফিল্ম বানাতে পেরেছি: দ্য সিলিং, অ্যা ব্যাগফুল অব ফ্লিজ, সামথিং ডিফারেন্ট, ডেইজিসফ্রুট অব প্যারাডাইস

এগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি এবার।

দ্য সিলিং বানিয়েছি ফ্যাকাল্টির গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক হিসেবে; এই সিনেমায় চেষ্টা করেছি দর্শকের মনে মানুষের সম্ভাবনাশক্তির ওপর ‘ছাদের’ [সিলিং] প্রতিফলন ঘটাতে; আমরা অহরহই উদাসিনতা কিংবা ভীরুতার কারণে নিজেদের বড় ধরনের প্রয়োজনগুলো মেটানোর সাহস করে উঠতে পারি না– সেটি দেখাতে, এবং নতুনভাবে শুরু করার মতো সময় এখনো রয়েছে– তাদের এই উপলব্ধি করাতে।

ভেরা খিতিলোভা
অ্যা ব্যাগফুল অব ফ্লিজ। ফিল্মমেকার: ভেরা খিতিলোভা

অ্যা ব্যাগফুল অব ফ্লিজ ডকুমেন্টারিটি অল্পবয়সী টেক্সটাইল কর্মী ও বালিকা শিক্ষানবিশদের ঘিরে বানানো; এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ প্রজন্ম, তাদের শিক্ষক ও প্রশিক্ষকবর্গের ভূমিকার গুরুত্বের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।

সামথিং ডিফারেন্ট-এ দুটি নারীর দৃশ্যতই পারস্পরিক সংযোগহীন জীবনকাহিনি জাহির করার মধ্য দিয়ে মানুষের প্রচেষ্টাসত্তার নেপথ্যের তাৎপর্য ফুটিয়ে তুলে, আমাদের আত্মপরিতৃপ্তি নিশ্চিত কিংবা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার রহস্যটি উদঘাটনের করেছি চেষ্টা।


শয়তান
যে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত
পরিস্থিতিতেই বেলেল্লাপনায়
নিজেকে নিয়োজিত করে, তা নয়;
বরং এর শেকড় আমাদের
দৈনন্দিন জীবনের
বিদ্বেষপরায়ণ
সত্তার
গভীরেই
হয়তো নিহিত রয়েছে

ডেইজিস একটি নীতিনাট্য, যেখানে দেখানো হয়েছে– শয়তান যে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতেই বেলেল্লাপনায় নিজেকে নিয়োজিত করে, তা নয়; বরং এর শেকড় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিদ্বেষপরায়ণ সত্তার গভীরেই হয়তো নিহিত রয়েছে। এখানে নায়িকা হিসেবে দুই তরুণীকে আমার বেছে নেওয়ার কারণ, এ এমনই এক বয়স– যখন একজন মানুষ নিজের সব ইচ্ছে চরিতার্থ করতে চায়, এবং তাদেরকে যদি নিজেদের মর্জির ওপর ছেড়ে না দিয়ে, খুব সহজেই সে যুবক কিংবা যুবতী যা-ই হোক– তার এই চাহিদাকে একেবারেই বিপরীত দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব।

ভেরা খিতিলোভা
ফ্রুট অব প্যারাডাইস। ফিল্মমেকার: ভেরা খিতিলোভা

আমার শেষ সিনেমা ফ্রুট অব প্যারাডাইস-এ একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যকার সম্পর্ক, তাদের সম্পর্কের নেপথ্যের সত্য আবিষ্কারের সমস্যা এবং সেই সত্যকে সঙ্গী করে জীবনযাপনের শক্তিমত্তাকে বিষয়বস্তু করে নির্মাণ করেছি।

১৯৭০ সালে এই সিনেমা সম্পন্ন করার পর এখন পর্যন্ত আমার আর কোনো চিত্রনাট্যকে সিনেমা বানানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি; যদিও সেগুলোর কয়েকটি এর আগে গ্রহণ ও অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। সেগুলোর বিষয়বস্তু বিবিধ বটে, তবে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই চিত্রনাট্যগুলোর মধ্যে একটি শিশুতোষ সিনেমা, একটি মিউজিক্যাল, একটি কমেডি থ্রিলার, একটি ম্যাজিক ল্যান্টার্ন থিয়েটারের ওপর সিনারিও, এবং সবচেয়ে বড় কথা, চুক্তিবদ্ধ আছে বোজেনা নেমচোভার [চেক সাহিত্যিক] ওপর একটি, আর জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে দ্য অ্যাপল গেম নামে একটি সিনেমার চিত্রনাট্য– যেটি আমি আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ [১৯৭৫] উপলক্ষে বানাতে চেয়েছিলাম।


আসল উদ্দেশ্য হলো, আমাকে আর
একটিও সিনেমা বানাতে না দেওয়া;
যেন ‘সমাজতন্ত্রের প্রতি ইতিবাচক
মানসিকতার ঘাটতি’ রয়েছে
আমার মধ্যে– এমনতর
অভিযোগ খণ্ডনের
সুযোগ থেকে
আমাকে
বিরত
রাখা

এই চিত্রনাট্যগুলোর কপালে ঘটেছে কম-বেশি একই ভাগ্য: যথাযথ কর্তৃপক্ষ এগুলোকে গ্রহণ করেছেন, তারপর নানাবিধ স্ববিরোধী অজুহাত দেখিয়ে স্থগিত করেছেন– এ দেশে স্পষ্টতই মনে হয়, আসল উদ্দেশ্য হলো, আমাকে আর একটিও সিনেমা বানাতে না দেওয়া; যেন ‘সমাজতন্ত্রের প্রতি ইতিবাচক মানসিকতার ঘাটতি’ রয়েছে আমার মধ্যে– এমনতর অভিযোগ খণ্ডনের সুযোগ থেকে আমাকে বিরত রাখা।

বোজেনা নেমচোভার জীবন ও কর্ম নিয়ে সিনেমার যে চিত্রনাট্য ছিল, সেটিকে প্রথমে সব ধরনের অনুমোদন দেওয়া হলেও পরে স্থগিত করা হয়; কারণ হিসেবে জানানো হয়, সিনেমাটি বোজেনা নেমচোভার প্রতি দর্শকদের মোহ ‘হয়তো নষ্ট করে দেবে’।

অভিভাবকত্বের দায়সংক্রান্ত সমস্যা, অপ্রয়োজনীয় গর্ভপাত, এবং আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমানাধিকারের বিষয়-আশয়ের মতো নৈতিকতা ধারণ করা দ্য অ্যাপল গেম-এর স্ক্রিপ্টটির শুটিং ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু করার ব্যাপারে সুপারিশ করে চিফ স্টোরি এডিটর কমরেড তোমানের বরাবর একটি চিঠি পাঠান তার সহকর্মীরা; তাতে তারা লিখেন, ‘…আমরা মনে করি, সকল দুর্বোধ্যতা সত্ত্বেও, সাবমিট করা চিত্রনাট্যটি (দিয়ে) নিখাদ মানব-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করা এখন পর্যন্ত নির্মিত সত্যিকারের সমকালীন সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সেরা প্রচেষ্টাগুলোর একটি (হওয়া সম্ভব)। আমাদের প্রোডাকশনের মধ্যকার একটি বড় ধরনের গ্যাপ পূরণে সাহায্য করবে এটি।’ অক্টোবরে ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. পুর্স সিনেমাটি নির্মাণের অনুমতি দিলেও, সে কথা আমাকে জানাতে স্টুডিও কর্তৃপক্ষ রাজি হননি।

এ হলো আমার অবস্থার একটি চিত্র। পাঁচ বছর হয়ে গেল, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক কর্তা থেকে আরেক কর্তার কাছে অবিরাম ছুটছি; তারা সবাই একই কথা বলছেন, যেন যত বেশি সম্ভব, বিদেশি সাংবাদিকদের জানিয়ে দিই– আমি কাজ করতে পারছি! আমার সোভিয়েত বন্ধুরা, ফিল্মমেকার গেরাসিমভ ও অভিনেত্রী মাকারোভা যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন, তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হলো– আমি নাকি স্লোভাকিয়ায় কাজে ব্যস্ত। এ কথা জেনে যুগোস্লাভ ফিল্মমেকারেরা যখন আমার সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ জানালেন, তাদের বলা হলো, আমি দেশেই আছি, তবে কাজে ব্যস্ত অনেক।

সামথিং ডিফারেন্ট। ফিল্মমেকার: ভেরা খিতিলোভা

একই অজুহাত দেখিয়ে, নিউইয়র্কের ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড ফেস্টিভ্যাল অব উইমেন ফিল্ম ডিরেক্টরস থেকে আমার নামে আসা আমন্ত্রণপত্র করা হলো প্রত্যাখ্যান; অথচ, আমার সামথিং ডিফারেন্ট ফিল্মটি দেখানোর মাধ্যমেই উদ্বোধন হয়েছিল ওই ফেস্টিভ্যালের। নতুন ফরাসি সিনেমাটেকের [সিনেমা-হল] উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফরাসি সংস্কৃতি মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আসা আমন্ত্রণপত্র, এবং গত বছর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান নারী ফিল্মমেকারদের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমার অংশগ্রহণ– এমন অনেককিছুই আটকে দিয়েছেন আমাদের স্টেট ফিল্ম কর্তৃপক্ষ।

কয়েক সপ্তাহ আগে, প্রাগে ইউনেস্কোর কয়েকজন নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিনিধি সফরে আসার পরই শুধু আমি জানতে পেরেছি, আন্তর্জাতিক নারীবর্ষের অংশ হিসেবে জুলাইয়ে ইতালিতে অনুষ্ঠিত হওয়া উইমেন ইন ফিল্ম শিরোনামের সিনেমা-সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রও চেপে যাওয়া হয়েছে আমার কাছ থেকে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে কারাকাসে [ভেনেজুয়েলা] অনুষ্ঠিত আরেকটি উইমেন’স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি আমাকে; এ ক্ষেত্রে পরিচালক ফাবেরা এই বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আমার অংশগ্রহণের ব্যাপারে বারান্ডোফে পার্টি অর্গানাইজেশনের আপত্তি রয়েছে। এভাবে, মুখের কথায় আমাকে আটকে দেওয়ার ঘটনা খুবই নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার।

যাহোক, লিখিত ডকুমেন্টও কিছু ছিল; বিশেষ করে ‘কমপ্লেক্স অ্যাসেসমেন্ট’টি– যা কি না এ বছর জাহির করা হয়েছে। তার মানে, বোজেনা নেমচোভাকে ঘিরে আমার সিনেমাটি নির্মাণের ব্যাপারে যে বছর স্টুডিওকে সুপারিশ করা হয়েছিল, সেই ১৯৭২ সালে আমার রাজনৈতিক ‘স্ক্রিনিং’গুলোর ব্যাপারে এটি সংক্ষেপে এমন সিদ্ধান্তই টানার কথা ছিল। (অথচ) ওই মূল্যায়নে সে ব্যাপারের কোনো উল্লেখ করাই হয়নি; এমনকি অনুমোদনের জন্য আমি যে চিত্রনাট্যগুলো জমা দিয়েছিলাম, সেগুলোর ব্যাপারেও বলা হয়নি কিছুই। সিদ্ধান্ত টানা হয়েছে এই জানিয়ে– স্টুডিওর সঙ্গে আমার চুক্তিকে যেন অবশ্যই ভেঙে দেওয়া হয়।

বলা হয়েছে, পাঁচ বছর আমি কোনো কাজই করিনি; বলা হয়েছে, আমার সিনেমাগুলোর ধরন দায়িত্বজ্ঞানহীন ও নৈরাশ্যবাদী নিরীক্ষার নামান্তর; বলা হয়েছে, ন্যাশনাল আর্টিস্টসের ই্যরি ত্রন্কা ও ইয়ান ভেরিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে; বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পদকগুলো আমি মূলত অর্জন করেছি পশ্চিমা ফেস্টিভ্যালগুলো থেকে; বলা হয়েছে, মানহাইম ফেস্টিভ্যালে প্রেসিডেন্টের ভূমিকা পালন করার সময় আমার মধ্যে একটি এলিটিস্ট ঢঙ ছিল; বলা হয়েছে, দর্শকের মধ্যে আমার সিনেমা সাড়া ফেলতে পেরেছে একেবারেই ন্যূনতম; বলা হয়েছে, সমালোচকেরা আমার সিনেমাকে অতিমূল্যায়ন করেছেন; আরও বলা হয়েছে, ‘চেকোস্লোভাকিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির সমকালীন সাংস্কৃতিক নীতিমালা উপলব্ধি’ করার প্রবণতা আমার কাজে ‘দৃশ্যমান নয়’।

এই কথাগুলোতে থাকা সমালোচনাকে মেনে নিতে আমি অস্বীকার করেছি। নিরীক্ষাকে এখন পর্যন্ত তো কেউই দোষারোপ করেনি; বন্তুত, ১৯৭২ সালের অক্টোবরে এক সম্মেলনে আপনি, কমরেড প্রেসিডেন্ট, নিজেই নিরীক্ষার ওপর শিল্পীর স্বাধীনতা থাকার ব্যাপারটিতে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। আমার সিনেমাগুলো অবাস্তববাদী নয়; বরং এগুলো বাস্তববাদী। এগুলোর সবই ‘নিবেদিত’; আর তাই এগুলো দায়িত্ববোধহীন হতে পারে না। এগুলোর তাৎপর্য ও প্রবণতা সম্পর্কে আমার ব্যাখ্যা– যা কি না বেশ কয়েকবার দিয়েছি, তা মিথ্যে প্রমাণিত হয়নি। ন্যাশনাল আর্টিস্টসের সঙ্গে আমার যোগাযোগজনিত অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। আমার সিনেমাগুলো শুধু পাশ্চাত্যেই প্রশংসিত হয়নি, বরং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো থেকেও পুরস্কার জিতেছে।

ভেরা খিতিলোভা
সিলিং। ফিল্মমেকার: ভেরা খিতিলোভা

এছাড়া, অবশ্য, চিফ স্টোরি এডিটর তোমানের যুক্তিগুলো যদি আমরা মেনেও নিই, তবু, এটি পশ্চিমা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতে আমাদের অংশগ্রহণকে ননসেন্স হিসেবে জাহির করবে– যেখানে একজন সমাজতান্ত্রিক ফিল্মমেকার– যে কি না ন্যাশনালাইজড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একজন কর্মী হিসেবে সিনেমা বানিয়ে সাফল্য পায় কোনো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে পদক জয়ের মাধ্যমে, নিজ দেশেই তার নিপীড়নের ঝুঁকি রয়ে যাবে। যেটিকে স্বাস্থ্যবান সাংস্কৃতিক বিনিময় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে– এমন একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচেষ্টা যখন বৃদ্ধিমান, এবং যখন শিল্পকর্মের মধ্যে গুণগতমানের প্রয়োজনীয়তা অবিরাম বেড়েই চলেছে– তেমন এক সময়ে এ ধরনের আচরণ বিশেষভাবে নিন্দনীয়।

চেকোস্লোভাক সিনেমার ওপর প্রকাশিত সর্বশেষ পরিসংখ্যানমূলক বর্ষপুঞ্জি থেকে জানা যায়, যদিও তারা সিনে-পণ্ডিতদের উদ্দেশ্য করেই শুধু সিনেমা-হলগুলোতে (সিনেমা) প্রদর্শন করে থাকে, তবু আমার সিনেমাগুলো আজকের দিনের চেক সিনেমার তুলনায় গড়ে অনেক বেশি দর্শক আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া, যেকোনোভাবেই, আমার কাজ যদি সমাজতান্ত্রিক চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়ে থাকে, তাহলে অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তো আমাকে সহযোগিতা করার কথা নয়, এবং আমার সিনেমাগুলোও সেসব রাষ্ট্রে দেখানোর কথা নয়; অথচ আমার রাষ্ট্রেই এগুলো দেখানো বন্ধ রয়েছে এখনো। সমকালীন জীবনের প্রতি মনোভাব বিবেচনা করে আমার বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ তোলা হয়েছে– সবই মিথ্যে; একগুচ্ছ ‘চুক্তিবদ্ধ’ চিত্রনাট্য আমি জমা দিয়েছি, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি শুটিংয়ের জন্য অনুমোদনও পেয়েছে, অথচ একটি সিনেমাও আমাকে বানাতে দেওয়া হচ্ছে না।

কমরেড তোমানের ‘কমপ্লেক্স অ্যাসেসম্যান্ট’টি পাঠ এবং ফিল্ম স্টুডিকে আমার সঙ্গে চুক্তি ভেঙে দেওয়া প্রস্তাবনা সম্পর্কে অনেক বেশি বিশদ আলোচনা করে আপনার সময় নষ্ট করতে চাই না। সেটিকে [সেই মূল্যায়ন] আমি প্রত্যাখ্যান করেছি, এবং বলেছি, আমি আসলেই বুঝতে পারি না– কী করে এ রকম কোনো পরামর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব।

কমিশনের সদস্যরা আমাকে কোনো প্রশ্নের মুখে ফেললে, আমি যখন সেটির জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আমার সিনেমাগুলোকে অভিযুক্তকারী কমিশনের একজন নারী সদস্যের কাছে জানতে চেয়েছি– আমার যেকোনো একটি সিনেমার অন্তত একটি সমাজতন্ত্রবিরোধী আইডিয়ার উদাহরণ যেন দেখানো হয়, তখন তিনি তা দেখাতে পারেননি; কেননা, তিনি নিশ্চিতভাবে তা পাননি। পার্টি অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান কমরেড লাইতার এই বলে সতর্ক করেছেন, কথা শুধু তারাই বলবেন, আমাকে বসে থেকে চুপচাপ শুনে যেতে হবে। পার্টি কোড সম্পর্কে জানা ছিল না আমার; তিনি আমাকে তা জানিয়েছেন; আর সেটি মার্কসবাদী ও লেনিনবাদী টার্মে আমি ভাবতেও পারছিলাম না।


যেন
ফিল্মমেকিং
ছেড়ে বরং দুই
সন্তানের জননী
হিসেবে কাজ খুঁজে নিই

একজন নারী সদস্য আমার কাছে প্রস্তাব রাখলেন, যেন ফিল্মমেকিং ছেড়ে বরং দুই সন্তানের জননী হিসেবে কাজ খুঁজে নিই। জানতে চাইলাম, ফিল্মমেকার হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছি, এবং ইতোমধ্যে বানিয়ে ফেলেছি পাঁচটি সিনেমা– এখন আমাকে কেন ও কোন যুক্তিতে এভাবে ভাবতে বলা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। তিনি বললেন, এখন থেকে ফিল্মমেকিং ভুলে যেতে হবে আমাকে; বরং শিখতে হবে নতুন কিছু। ‘আমি কীভাবে সেটা করব,’ জানতে চাইলাম। ‘আমার যে চিত্রনাট্যগুলো অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর কোনোটার শুটিংয়ে ক্ল্যাপার গার্লের দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে হয়তো?!’ তারা জানালেন, কাজের প্রতি আমার মনোভাব খারাপ; আর জানালেন, তাদের কথা আমি বিকৃত করছি।

ডিরেক্টর ফাবেরাকে ডাকা হলো এরপর; তিনি আমাকে অধৈর্য হওয়ার দায়ে আবারও ভর্ৎসনা করলেন। জানালেন, যদি বিনম্র হই এবং মুখ বন্ধ রাখি, শুধু তাহলেই পরের সপ্তাহ থেকে শুটিং শুরু করতে পারব। আমাকে বরখাস্ত করার একটি প্রস্তাবনাপত্র টেবিলের ওপর পড়ে থাকতে দেখে, আর মুখে অন্য কোনো কাজ বেছে নেওয়ার পরামর্শ পেয়ে, সে কথাকে মনে হয়েছে ভীষণ এক উদ্ভট বিবৃতি যেন।

বোঝাই যাচ্ছিল, তারা বৈষম্যপরায়ণ; কথাটি কমরেড ফাবেরাকে আমি বললাম, আর এ ব্যাপারে তিনি নিজেই আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, ‘লোকজনের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হয়– আপনি জানেন না; অথচ একজন ফিল্মমেকারের এই সক্ষমতা থাকা লাগেই।’ যেন বলতে হলো বলেই তিনি বলে দিলেন।

ভেরা খিতিলোভা
ডেইজিস। ফিল্মমেকার: ভেরা খিতিলোভা

কমিশনকে আমি জানালাম, সবকিছু একেবারেই খোলাসা হয়ে গেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল কোনো-না-কোনোভাবে আমাকে অভিযুক্ত করা, আর যখন আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করেছি, তারা তাতে মর্মাহত ও মারমুখো হয়ে উঠেছেন এ কথা প্রমাণ করতে, আমজনতার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে সক্ষম নই আমি; আর, ‘আমজনতার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে না পারলে আপনার পক্ষে ফিল্মমেকার হওয়া সম্ভব নয়’। যদিও প্রকৃত সমস্যাটি অন্য কোথাও। আমি একজন নারী ফিল্মমেকার। কিন্তু আমি একজন মা এবং একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিকও বটে; তাই নিজের অধিকার সম্পর্কে আমি সচেতন এবং অধিকারের প্রশ্নে লড়ে যেতে সদাপ্রস্তুত। যথাযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই চাকরি থেকে আমাকে বহিষ্কার করে দেওয়া মেনে নিতে পারি না; কেননা, এটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

পার্টি অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান কমরেড লাইতার এরপর আমাকে বললেন, ‘যা খুশি তা-ই করার অধিকার পার্টির রয়েছে।’ তার পাশে বসে থাকা কেউ একজন এ কথার সঙ্গে জুড়ে দিলেন, ‘হাজারটা পুর্স ও ক্লুসাকও তাকে [আমাকে] সাহায্য করতে পারবে না।’


‘সবচেয়ে
বাজে ব্যাপার
হলো, কমরেড খিতিলোভা,
আপনার বিরুদ্ধে কোনো
প্রমাণই আমাদের
কাছে নেই’

খানিকটা নিরবতা ভেঙে কমরেড লাইতার আমার কর্মহীনতা অব্যাহত রাখার পক্ষে তাদের ভোট নেওয়ার প্রস্তাব রাখলেন। আমি ছাড়া বাকি সবাই সম্মত হলেন। উঠে চলে আসার আগে তাদের আমি সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিলাম, যে কথা সম্প্রতি কমরেড লাইতার আমাকে বলেছিলেন: ‘সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হলো, কমরেড খিতিলোভা, আপনার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণই আমাদের কাছে নেই।’ এই হলো ঘটনা।

এ সবই আমি এর আগে সংস্কৃতিমন্ত্রী ড. মিলান ক্লুসাককে জানিয়েছিলাম, ১৯৭৪ সালের মে থেকে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত পাঠানো চিঠিগুলোতে। প্রথম চিঠির কোনো উত্তর পাইনি; দ্বিতীয় চিঠির উত্তর দিয়েছেন মন্ত্রীর চিফ সেক্রেটারি কমরেড লুমির পুলিফ্কার পক্ষ থেকে কেউ একজন (স্বাক্ষর অস্পষ্ট)। আমার চিঠিগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল চেকোস্লোভাক ফিল্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জে পুর্সের কাছে; আর এ-ই ছিল আমার প্রাথমিক যোগাযোগ।

ফলে নিজের দ্বিতীয় চিঠির উপসংহারের খানিকটাই শুধু পুনরাবৃত্ত করতে পারি: ‘আপনাকে দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমি এখনো অন্যায্য বৈষম্যের শিকার; যদিও এমনকি এ ক্ষেত্রে আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের বিন্দুমাত্র সুযোগও দেওয়া হয়নি; কেননা, ব্যাপারটি একেবারেই পরিষ্কার– আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সবটাই মিথ্যে অনুমান, ব্যক্তিগত শত্রুতা ও গোড়া পুরুষতন্ত্রের একটি সংমিশ্রণ। আশা করছি, যে বছরকে আমরা আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ হিসেবে উদযাপন করছি, সে সময়েই যার সিনেমা সমাজতান্ত্রিক সিনেমা হিসেবে আন্তর্জাতিক খ্যাতি বয়ে এনেছে এবং যে দুই সন্তানের জননী– এমন এক নারী ফিল্মমেকার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের গর্বে বলিয়ান একটি রাষ্ট্রে বিনাবিচারে নির্যাতিত, এবং কাজ করতে ও সহকর্মীদের সাক্ষাৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবে– এমন লজ্জাজনক ঘটনা আপনি ঘটতে দেবেন না।’

সংস্কৃতিমন্ত্রীকে যখন চিঠি লিখেছিলাম, সেই জুলাই থেকে এখনো অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সম্প্রতি শর্ট ফিল্ম স্টুডিও থেকে দ্য অ্যাপল গেম শিরোনামে আমার পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাটি বানানোর একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আমাকে। তা করতে আমার আপত্তি নেই; বিশেষ করে এখানকার ম্যানেজমেন্ট যখন সহযোগিতাপরায়ণ ও এই প্রস্তাবের সঙ্গে একমত। অবশ্য, পুরনো সমস্যাটি একটি নতুন ঢঙে আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে– কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য ফিচার ফিল্ম নির্মাণ করতে হলে ফিচার ফিল্ম নির্মাণকারীদের কাছ থেকে আর্থিক ব্যাকআপ পাওয়ার প্রয়োজন পড়বেই শর্ট ফিল্ম স্টুডিওর; তাছাড়া, এখানে ফিল্ম ম্যাটেরিয়ালের ঘাটতিও রয়েছে।

বিদেশে পাড়ি জমিয়ে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা আমার কোনোদিনই ছিল না; এমনতর একগুচ্ছ প্রস্তাব নির্দ্বিধায় ফিরিয়ে দিয়েছি। কেননা, নিজ দেশেই কাজ করতে চেয়েছি; এখনো চাই। ১৯৭০ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যোগ দিয়েও দেশে ফিরে এসেছি। আর এখনো আমাকে এমনসব উদ্ভট পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়– যখন কোনো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যক্তিগত ভ্রমণে যাওয়ার আবেদনও আমার খারিজ করে দেওয়া হয়, ‘সেখান থেকে তো আপনি বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবেন’– এমন অজুহাতে।

প্রবাসী হওয়ার একটি প্রস্তাব আমি সুস্পষ্টভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছি। এর আসল কারণ হয়তো এ-ই, আমাকে কোনো সিনেমা বানাতে দেওয়া হবে না, কিংবা মঞ্চস্থ করতে দেওয়া হবে না কোনো মঞ্চনাটক– কমরেড তোমানের অধীনে আমার কর্মজীবন এভাবে ঠিক করে রাখা হয়েছে; বলা হয়েছে, একজন সিনেমাকর্মী শুধু একটি নাটক মঞ্চস্থ করারই অনুমতি পাবে, যদিও আমাকে একটি নাটকও মঞ্চস্থ করতে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া, মিলেনা বালাসোভা যেহেতু নিয়োগ পেয়েছেন, অতএব, টেলিভিশনেও কাজ করতে পারব না।

ভেরা খিতিলোভা
ভেরা খিতিলোভা

তাহলে আমি করবটা কী? দেশ ও দেশের বাইরের বন্ধুদের কী বলব? কেন আমি কোনো সিনেমা বানাতে পারব না? নিজের কাজের ময়দানেই যদি সমাজতন্ত্রকে ফুটিয়ে তুলতে না পারি, তাহলে এটির [সমাজতন্ত্রের] প্রতি আমার মনোভাবকে কীভাবে জাহির করব?

সারা দুনিয়া যখন আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ উদযাপন করছে; হেলসিংকি ডকুমেন্টগুলোতে স্বাক্ষরের মাধ্যমে, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং এমন অনেক বিদেশি সহকর্মীর সঙ্গে সংযোগের চাহিদা নিত্যনৈমিত্তভাবে ক্রমবর্ধমান– যাদের অনেকেই কি না সমাজতন্ত্র ও প্রগতিশীলতার প্রতি অনুরাগী, এমন এক সময়ে; সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির শক্তিমত্তাকে যখন প্রদর্শন করা জরুরি, বিশেষ করে, সৃষ্টিশীল কাজের মধ্য দিয়ে– এমন এক সময়কালে কাজের মাধ্যমে আমিও অবদান রাখার আকাঙ্ক্ষা করি। ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর ১৯৭৫-এ, ওয়াশিংটন কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য ফেস্টিভ্যাল অব উইমেন’স ফিল্মসে অংশ নেওয়ার যে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি, কী জবাব দেবো সেটির?

আপনার পানেই চেয়ে রইলাম, কমরেড প্রেসিডেন্ট, এই আশা ও আস্থা নিয়ে যে, আমার ও আমারই মতো যারা ভুক্তভুগি– তাদের ব্যাপারটি আপনি দেখবেন, এবং নজর রাখবেন, যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। একজন নাগরিক হিসেবে, একজন নারী হিসেবে, একজন মা হিসেবে এবং একজন ফিল্মমেকার হিসেবে একটি সমাজতান্ত্রিক সমাজের আদর্শের পক্ষে আমার লড়াই অব্যাহত থাকবে, এবং আমি আমার সর্বোচ্চটা দেওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাব।

ইতি,
ভেরা খিতিলোভা

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান