অসুখের মেটাফর: দুই শিল্পীর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি [তলস্তয় ও কুরোসাওয়া]

381

লিখেছেন । সাব্বির আহমেদ

সাহিত্যের আঙ্গিনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম লিও তলস্তয়। তার লেখা কোনো স্থান-কাল-পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। গভীরভাবে বোঝা ও অনুভব করা যায় তার লেখা চরিত্রের বিশ্বজনীনতা।

কিশোর বয়সে আমার এক শিক্ষকের বাসায় প্রায় প্রতিদিন যেতাম। ভাবুক ধরনের এক লোক বারান্দায় বসে লিখতেন। বেশ কিছু লেখালিখি হলে, তার চা-বিরতি। বিরতি কিংবা ওইদিনের জন্য সমাপ্তি। আমরা দুজন চা খাই। চা খেতে খেতে ভিবিন্ন গল্প বলতেন তিনি। বিস্ময়কর সেই গল্প। গল্পের চরিত্র কেউ কেউ ভাগ্যের বন্দিত্ব বরণ করে, কারও চরিত্রের বর্ণনা শুনে খুব বিস্মিত হতাম, মনে হতো এত বোকা ও সরল মানুষ। আর, বেশি মুগ্ধ হতাম চরিত্রগুলো কীভাবে অনিবার্য দিকে পায়ে পায়ে এগিয়ে যায়, পতিত হয়। সেই পতন কী অসাধারণ মনে হতো!

তার নাম রহমান। অতি সাধারণ, শৌখিন, ও গ্রাম থেকে আসা একজন। প্রচুর বই পড়তেন ও লিখতেন। প্রতিদিন তার সঙ্গে চা পান করে আর গল্প শুনে আমি হারিয়ে যেতাম রূঢ় বাস্তবতায়। যেই গল্প আমার খুব বেশি মনে আছে, ‘ককেশাসের বন্দি’। জেলখানা কী, স্বাধীনতা কী, ভাগ্য– এইসব ধারণা নিয়ে ভাবতে থাকি; কল্পনার দুয়ার দিয়ে এক অন্য পৃথিবী ও সময়ে হারিয়ে যাই তার বর্ণনায়।

আমি তখন ভাবতাম, ওইগুলো তার গল্প। কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসা করলে বললেন, ‘না, এইগুলো রুশ লেখক লিও তলস্তয়ের লেখা।; তবে তার নিজের ঝুড়ি থেকেও পরে অনেক দুঃসাহসী গল্প বলেন, যা আমার সেই সময় পার করতে সহায়তা করে।

লিও তলস্তয়ের গল্প ভালোলাগা থেকে আরও জানার কৌতূহল। লেখক ও তার লেখা নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি।

জানলাম, লিও তলস্তয় জমিদারের ছেলে ছিলেন। অবাক হই। ভাবি জমিদারি করে এত সরল, গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ অথচ বিনোদনমূলক গল্প জোগানোর ও গাথার কি সময় বা প্রয়োজন ছিল? আর জানতে বই ঘাটি। জানতে পারি লেখকের সময়কাল ও তার বেড়ে ওঠা নিয়ে। অষ্টাদশ শতকের ইতিহাস নিয়ে যখন আর একটু জানতে লাগলাম, দেখলাম নেপোলিয়ন নামে এক ফরাসি জেনারেল রুশ দেশে আক্রমণ করেন, যার প্রভাব জমিদার লিও তলস্তয়ের ওপর গভীরভাবে পড়ে, যা তার মূল কাজে একটা বড় ছাপ ফেলে পরবর্তীকালে।

সময়টা যেমন যুদ্ধের ছিল, ছিল গুরুত্বপূর্ণ বাক-বদলের: যেমন, শিল্প-বিপ্লব, যা নিয়ে লেখক ও দার্শনিক তলস্তয় কঠিন কিন্তু দৃঢ় সিদ্ধান্তের মুখমুখি হন, যা তার মূল লেখায় বহুভাবে ফুটে উঠে। এই দার্শনিক স্টেটমেন্ট ও দার্শনিক পয়েন্ট-অব-ভিউ পরিস্ফুট হয় যুদ্ধ ও শান্তি, আন্না কারেনিনা ইত্যাদি।

লিও তলস্তয়ের বেড়ে ওঠা বড় পরিবারে। তার ঘরে অনেক সন্তান, গৃহ সেবক-সেবিকা থাকতেন। কেয়ারটেকার, ম্যানেজার অনেক রকম লোকের সমাহার। বিদেশ থেকে নানালোকের আনাগোনা। মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবুর্গের ধনাঢ্য পরিবারের সঙ্গে ছিল যোগাযোগ। এই পরিবারগুলোর প্রায়ই মিলনরীতি ছিল সামাজিক অনুষ্ঠানে, যেখানে জৌলসময় বলপার্টি হতো, চকচকে-ঝকঝকে সেই বিশাল কক্ষ, দামি পোশাক,সমকক্ষ নতুনদের সঙ্গে পরিচয় হতো একে-অপরের। আমি এই জৌলসময় সাহিত্য পড়তে খুব পছন্দ করতাম।

কিছু দিন আগে, এই তলস্তয়ের কিছু লিখা পড়লাম যা হতবাক ও স্তব্দ করে দেয়। আবার তার জীবনীতে গেলাম। তলস্তয়ের দাম্পত্য সম্পর্ক, পরকাল নিয়ে ভাবনা, ধর্মচিন্তা, আশা-হতাশা, বৈষয়িক চিন্তা, ও শেষের জীবন সময়। কিছুটা মিলও পেলাম লেখনীর সঙ্গে। লিও তলস্তয়ের পত্নী সোফিয়া যখন স্বামীর উদাসিনতা, লাম্পট্য ও ব্যস্ততা আর সহ্য করতে পারেন না, তখন তাদের দুজনের বয়স গোধূলি লগ্নে। ছেলে-মেয়ে সবাই উঠতি, বুঝের– এত বড় এস্টেট কে কতটুকু পাবে, হিসাব কষে রেখেছেন। তলস্তয় ওই বয়সে এসে সন্ন্যাসীর মতো হয়ে উঠে, সন্ন্যাস চিন্তা ধারন করে, জীবনের অর্থ খুঁজতে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের কাছে যান ও ধ্যান করেন। গরিব মানুষের প্রতি তার জম্মায় গভীর দরদ। নিজের স্থান, নিজের প্রাচুর্য আর ভালো লাগে না। অতি সাধারণ, সহজ মানুষ হওয়ার তাগিদ ভেতর থেকে অনুভব করেন। ভাবেন, এইসব ধন-দৌলত গরিবের মাঝে বিতরণ করলে কিছুটা সমস্যা সমাধান হবে। কৃষি কাজে অনেক লোক ভাগ্য বদলাতে পারবে। কলকারখানা চেয়ে কৃষি খাতেই বেশি সম্ভাবনা দেখতেন তলস্তয়। এই বিষয়গুলো তার ছোট উপন্যাসগুলোতে কোনো না কোনোভাবে ফুটে উঠতে দেখি।

ছোটবেলায় বাংলা ফিল্মে কবে কখন দেখেছি এক পঙ্গু লোক, যার বউ তাকে খেয়াল করে না, সেবা-যত্ন তো অনেক পরের কথা, অন্য লোকের সঙ্গে সময় কাটায় পয়সা উপার্জনের জন্য। কী নির্মম জীবন ও দৃশ্য!

তলস্তয়
লিও তলস্তয়। লিথোগ্রাফ প্রিন্ট: সের্গেই প্রোকুদিন-গোর্স্কি

তলস্তয়ের ইভান: যখন ব্যক্তির অসুখ বড় ক্ষমাহীন

তলস্তয়ের ইভান ইলিচের মৃত্যু এমন রূঢ় ও রুচিহীন বাস্তবতার প্রতিছবি না হলেও এরচেয়েও হৃদয়হীন। ধূসর ও জীবনের পরাজয়ের প্রতিধ্বনি। যেন গল্প পড়া শেষ হবার পর মনে হয়, লাশকাটা ঘর থেকে বের হলাম।

গল্প সংক্ষেপে, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার এক দুরারোগ্য ব্যাধি হয়। তার চাকরি, টাকা পয়সা, সংসারে অনেক ফাটল ধরে। এক সময় আসে যখন অসুখটা পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যায়। তাকে শুধু সাহায্য করে গরিব কাজের ছেলেটি। সে অক্ষম হয়ে থাকে, তার পরিবারের মানুষদের কষ্ট দেয়, তাদের অযত্ন লক্ষ্য করে। তার শারীরিক যন্ত্রণার কথা বলা বাহুল্য। এই ভোগান্তি তার পরিবারকে, এবং আমার মতে, পাঠককেও অস্বস্তিকর, দমবন্ধকর, দীর্ঘকাল ধরে টেনে রাখে ন্যারেটিভে– এমন অনুভূতি দেয়; তারপর একসময় মৃত্যু হয় তার।

গল্পটা নন-লিনিয়ার [অর্থাৎ শেষ থেকে গল্পের শুরু]। এবং গল্পটির স্বর বেশ ডার্ক, নিরাশ ও একপেশে। একজন কোর্টের কর্মকর্তার, যে মোটামুটি ভালো জীবন কাটাতে চেয়েছে– প্রকৃতি তাকে এমন বীভৎস, আত্মকেন্দ্রিক ও নির্মম (কিছুটা একপেশে) মৃত্যু ধারণ করে রাখে, এমনটা পাঠক হিসেবে আমার কাছে একটু বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। মানুষের জীবন একেবারে সাদা কিংবা কালো হয় না। একটা ধূসর স্থান থাকে। হয়তো তার জীবনে এই ধূসর স্থান ছিল যখন সে পর্যাপ্ত টাকা উপার্জন করে পরিবারে খরচ করত, তখন তার বউ হাসি-খুশি থাকত; টাকা কমে গেলে আবার অশান্তি।

জীবনের সাদা অংশ আঁকা হয় টাকা দিয়ে, যা মনে হয়েছে বেশ ব্যাঙ্গাত্মকভাবে– এই যদি হয়, এই চরিত্রকে খুব নিচুমানের আত্মকেন্দ্রিক ভোগী মনে হতে পারে স্বাভাবিকভাবে।

আকিরা কুরোসাওয়া

ইকিরু: অসুস্থ সমাজের বিবেক জাগরণ

এই গল্পের মূল নির্যাস [প্রেমিস] নিয়ে আকিরা কুরোসাওয়া ১৯৫২ সালে ফিল্ম বানান ইকিরু; যার অর্থ ‘বাঁচার জন্য’। অ্যাডাপটেশন করার কারণে মূল গল্প থেকে ভাব নিয়ে, গল্পের শাখা-প্রশাখা নিজের মতো করে বলতে গেলে নতুন গল্পই ফেঁদে ফেলেন নির্মাতা।

কুরোসাওয়ার গল্পের কাহিনি এক আমলার [কাঞ্জি ওয়টানবে]। পাকস্থলীতে ক্যানসার ধরা পড়ে তার। ডাক্তারের ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করে যখন, আরেক রোগী তাকে পূর্ব বাণী দেয়: ডাক্তার যদি বলে আলসার, বুঝতে হবে ক্যানসার। এখানে রোগী/ডাক্তারের একটা সম্পর্কের চালচিত্র ফুটে ওঠে।

আসলে আমলা হিসেবে এতদিন সে মরাই ছিল। প্রতিটা দিন, প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিদিনের দাপ্তরিক কাজ তার কাছে একঘেঁয়ে, উদ্দেশ্যহীন মনে হয়। এমনকি, তার নিজের জীবন, সংসার, টাকা– সবকিছু সে ধরেই নিয়েছে।

ইকিরু
ইকিরু। ফিল্মমেকার: আকিরা কুরোসাওয়া

এই মরনব্যাধি যখন থেকে তার পেটে হানা দেয়, যখন টাইম-বোমার মতো দ্রুত সময় যেতে থাকে, তখনই তার ভেতর থেকে তাগিদ আসে এক ধরনের জাগরণের। প্রাণ যোগ হয় সেই অতি অভ্যস্ত, ব্যর্থ ও বয়স্ক একটি জ্যান্ত লাশের। নতুন প্রাণশক্তিতে বলিয়ান সে। জীবনের অর্থ, ও ভুল শনাক্ত করার প্রয়াস করে তখন থেকে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় তার নিজের ছেলে, যার জন্য সে আরেকটা বিয়ে করেনি তার স্ত্রী প্রয়াত হওয়ার পর, এখন বাবার কথা শোনার সময় নেই, এমনকি অসুখটার বিষয়ে তাকে বলা হয়ে ওঠেনি। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় আর অফিসে যাবে না। সে বের হয়ে যায়, অনেকের সঙ্গে দেখা হয়।
পানশালায় দেখা হয় এক লেখকের সঙ্গে, যে মনোযোগ দিয়ে তার দুঃখ-জর্জরিত কথা শুনে তাকে নিয়ে যায় শহরের সুখের আস্তানায়। শারীরিক সুখের জগতে যা কাঞ্জির কাছে অনেক দূরের, সে এইগুলোর ভেতরে গিয়ে সাময়িক আনন্দ পায়; কিন্তু করুণ সুরে একটা অতি প্রিয়, দুঃখের গান গায়, আর সবাইকে হতবাক করে ফেরত আসে।

পরের দিন দেখা হয় অফিসের সরল, হাস্যজ্জল একটি মেয়ের সঙ্গে, যে তাকে তারুণ্যের ছোঁয়া দেয়, হাসতে শেখায়, ছোট ছোট জিনিসে আনন্দ পেতে হয় কী করে– তা দেখায়। একটু আগে যে ইন্দ্রিয় জগত থেকে সে ফেরত এলো, এখন মানসিক প্রশান্তির ভুবনে ঢুকে পড়ে এই মেয়ের মাধ্যমে। অসুস্থ লোক তার অসুখের কথা ভুলে যায়। কিন্তু একটা সময় এই সম্পর্ক ভারি হয়ে উঠলে লোকটা আত্মিক সুখের কথা অনুভব করে আবার ফিরে আসে অফিসে। এবার তার একটা মিশন রয়েছে। তার স্বপ্ন– শিশুদের জন্য খেলার পার্ক করা।

ইকিরু

অন্য অনেক ফিল্মমেকার হলে হয়তো সোজাসাপ্টা ঘটনার বর্ণনা চলত সরলরৈখিকভাবে। কিন্তু নির্মাতা যখন নিরীক্ষাকামী, ফর্ম নিয়ে উদ্ভাবনী-ক্ষমতা রাখেন নিজস্ব দার্শনিক চিন্তার আলোকে (যেমনটা লক্ষণীয় তার নির্মিত ১৯৫০ সনে রশোমন ফিল্মে), তখন তো গল্প অন্য ঢঙেই এগোবে।

আমরা দেখি মূল চরিত্রের মৃত্যুর পরের ঘটনা। অফিসের কলিগরা কফিনের সামনে বসে। কেবলই দায়িত্ববোধ থেকে আসা। তাদের মাধ্যমে জানা যায়, স্বপ্নের সেই শিশুপার্ক সম্পন্ন হয়েছে। এক সময় কিছু মহিলা আসে, শহরের কিছু অতিসাধারণ নাগরিক, যাদের দাবি-দাওয়া পূরণ হয়েছে। তারা কান্না করে; চলে যায়। বিস্ময় ও শিহরণ হয় অফিস কলিগদের। এরা অনেকক্ষণ ধরে যুক্তিতর্ক করতে থাকে, সত্যি কি এই পার্কে মরা লোকটার অবদান আছে? এক সময় তারা সবাই স্বীকার করে; মাথানত হয়ে যায় তাদের। তারা শপথ নেয়; কিন্তু শেষে দেখি, যেই লাউ সেই কদু! তারা সিস্টেমে আবার মিশে আগের মতো কাজে অসৎ হয়ে পড়ে।


এটি
একটি
ইতিবাচক,
জীবনমুখী ছবি,
যা জীবনের গান গায়
মৃত্যুর
মুখে

এটি একটি ইতিবাচক, জীবনমুখী ছবি, যা জীবনের গান গায় মৃত্যুর মুখে। করুণাধারার পথ দেখায়। কাঞ্জি যখন মৃত্যুর আগের রাতে, তুষারপাতের ভেতর পার্কে একটা দোলনায় আনান্দচিত্তে দুলছিল আর সেই গান ‘জীবন কত ছোট’ গাইছিল, এক অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। দুটি পরস্পরবিরোধী ব্যাপার– অসুখ আর সুন্দর– পাশাপাশি রয়ে একটা ভয়ংকর সুন্দর মুহূর্ত দেয়।

আসলে ভালো মানুষের মৃত্যু নেই। মরার পরও তারা জীবিত হয়ে ওঠে মানুষের স্মৃতিতে। এই দার্শনিক আঙ্গিক তলস্তয়র গল্পে নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়া যোগ করেন, যা এক মানবিক মূল্যবোধ সঞ্চার করে। জীবন নেহাত কালো, নেহাত পাপের– নেহাত বলে জীবনে কি আসলে কিছু আছে, নাকি তলস্তয়ের শেষের দিকে যখন ধর্ম আর মানুষ নিয়ে ধারণা পাল্টাতে থাকে, অবিশ্বাস, দ্বিধা বাড়ে– তখনকার প্রতিচ্ছবি মাত্র?

শিল্প তো আসলে শিল্পীরই মানসিক অবস্থারই প্রতিচ্ছবি।

আকিরা কুরসাওয়ার এই ফিল্ম তার অন্য ছবি থেকে একটু ভিন্নধর্মী, যেহেতু তার বেশির ভাগ ফিল্মে সামুরাই সম্প্রদায় কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থাকে হিরো রূপে কিংবা তার ছবিতে দেখা পাওয়া যায় ট্র্যাজিক হিরোর। এই ফিল্মে একজন আমলা কেমন করে পচনশীল এক সমাজকে ঠিক করছে সঠিক জীবন ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, তা সুচারুভাবে নির্মাতা ফুটিয়ে তোলেন এমন এক উক্তিতে: ‘আমি ঘৃণা করতে জানি না। অত সময় নেই।’

ইকিরু

একেক শিল্পী একেক রকম। তাদের মেজাজ, দৃষ্টিভঙ্গি একেক রকম; প্রায়ই পরিবর্তনশীল। যে কুরোসাওয়া আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, তিনিই জীবনমুখী, উজ্জ্বল কাজ পৃথিবীকে উপহার দিয়ে গেলেন। আবার যে তলস্তয় মানুষের আলোকিত দিকের গুণ গাইতেন, তিনি বীভৎস দিক– যেমন ব্যাধি, খুন, হিংসা ইত্যাদি তুলে ধরেন শেষের দিকে। যে তলস্তয় ভোগী, লাম্পট্য-জর্জরিত জীবনযাপন করেছেন, তিনিই জীবনের রুঢ় সত্য কোনো ফিলটার ছাড়া, অলঙ্করণ ছাড়া ফুটিয়ে তুলে গেছেন তার ছোট সেই অসাধারণ গল্পে, যেন সত্য-সুন্দরের বাণী আকারে। এই শিল্পী সত্ত্বার এক বৈশিষ্ট্য হয়তো– দৈত্য সত্তা নিয়ে কী করে একজন শিল্পী দুনিয়া দেখেন, ভাবেন ও প্রকাশ করেন।

ভালো কি মন্দ– তা নিয়ে কথা বলা যায়। পৃথিবী কি এই ভালো-খারাপের বাইনারি দিয়ে পরিচালিত– তা আরও বড়, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Print Friendly, PDF & Email