চিত্রনাট্য: টক, ঝাল, মিষ্টি

353
সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী
বাঙ্কসির গ্রাফিতি অবলম্বনে

লিখেছেন: সৈয়দ সালাহউদ্দীন জাকী

[সাম্প্রতিক সময়ে সম্মানিত তথ্যমন্ত্রী মিডিয়ার দায় নিয়ে মন্তব্য করেছেন চ্যানেলের টক শোর দিকে কৌণিক দৃষ্টি দিয়ে। তিনি সু-বক্তা, ধীর-স্থির বাচনভঙ্গি। টক শো’তে এসে উদবমন করেননি অতীতের অনেক সোনার পাথর বাটির মতো। তাঁর সু-বক্তব্য মানি! কিন্তু কিছু প্রশ্ন থেকে যায়। ৪০টির মতো ‘চ্যানেল’!! বিস্ময়ে তাই জাগে, জাগে কিছু প্রশ্ন! ৪০+ চ্যানেল?

চ্যানেল সংস্কৃতি বা মিডিয়া সংস্কৃতি Highly sophisticated universal culture on the APEX of the cultural pyramid. No doubt! What was the set criteria and the basis of allotment? Quantity never reflects quality. Quantitative measurements are not always a ‘measure’ of ‘progress’?

আপনি বিজ্ঞ মানুষ, ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই!

আমাদের আরেকটি প্রশ্ন: ঠন ঠন খালি কলসের বাদ্য শুনে কারা কলসগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছেন? স্তুতি আক্রান্ত? ঢালাওভাবে মিডিয়া কালচার বা চ্যানেল কালচারের দিকে দৃকপাত কি সমীচীন? ইদানিং অনেক প্রশ্ন নিরেট দেয়াল থেকে ফেরত আসে!]


যাক। কলম ভারী হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই স্কন্ধে করোনার বোঝা!

“Laughter is the best medicine”। সুকুমার রায় চালু করেছিলেন, “নীল গানে লাল সুর হাসি হাসি গন্ধ!” হাসির হাটে যাওয়া যাক!

*অবরুদ্ধ! এই ফাঁকে ছোট্ট একটা চিত্রনাট্যের “আইডিয়া” রচনার এরাদা করেছেন একজন অভিজ্ঞ প্রযোজক! এক নিশ্বাসের! শেষটায় স্বস্তির নিশ্বাস!

দৃশ্য: চল্লিশ+ চ্যানেলের একটি ।
রাত ১১টার টক-শোতে একজন ‘শো-ম্যান’ মিনিট পাঁচেক আগে ত্রস্ত-ব্যস্ত আসলেন।মেকাপ শিল্পী এগিয়ে এলেন।

: স্যার…
: মেকাপ? মেকাপ লাগবে না, মেকাপ লাগবে না! কারণ…

বাঙালির তিন হাতের এক হাত হলো অজুহাত! বাম হাত, ডান হাত। তবে সবচেয়ে সচল হাত আজুহাত দিয়ে বললেন:

“সকালে মেকাপ দিয়ে বের হয়েছি, বলা তো যায় না কখন ডাক পড়বে, হেঁ, হেঁ! আমি তো আবার ‘না’ বলে কারও মনে আঘাত দিতে পারি না। এ নাগাদ ‘দুটু’ ঝেড়ে এসেছি! বলুন, বলুন আপনার চ্যানেলের ‘এনগেল’ (?) (angle) বলুন। আগের ‘দুটু’র মতো করে বললে রিপিট আর বোরিং হয়ে যাবে, হাওয়া গরম হবে না!”

প্রযোজকের স্বগত উক্তি: বাদামওয়ালার কথা মনে করা যেতে পারে!

ওভার ল্যাপ: চাই চীনাবাদাম, চাই, গরম গরম ভাজা বাদাম!

নগদ কিছু ‘খেয়ে’ খোসাগুলো ক্যামেরার সামনে ঝেড়ে ফেল্লেই হবে। নগদ-ফদক কিচ্ছু না যদিও,আসল হইলো চেহারা, আর কানেকশন, হাই ভোল্টেজ ইলেকট্রনিক, তার-ফারের ঝামেলা নাই, ডাইরেক্ট ঘরে ঘরে জায়গা মতো, ‘মঞ্জিলে’ মিডিয়া বইলা কথা!

{টেলিভিশন অপ্টিকাল কার্ড, অথবা সুপার ইম্পোজ}।

**সতর্ক উচ্চারণ: চীনের বাদাম এখন খাবেন না, করোনা দেশের বাদাম খেয়ে খোসা ছড়াবেন না! খোসাগুলোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন! নৈকট্য এখন অসামাজিক, ‘নৈকট্যের’ বৈধ সামাজিক ‘লাইসেন্স’ থাকলেও! কাজী সাহেবদের রুজি বন্ধ!

প্রডিউসার: আজ আছেন একজন ‘মহা-উপদেশটা’ (স্বগতঃ স্ব-নিয়োগকৃত! আমাদের purpose-এর জন্য যথাযথ! প্রশ্ন হতে পারে, কোন দলের?)।

“যখনি যাহার, তখনি তাহার’? Nincompoop? ‘দল’ নেই তাই কোন্দল নেই, apparently যদিও! আবার কিছু আছেন Jack of all trades, তাঁরা আলু-পটল নিয়ে, আদার ব্যাপারী হয়েও জাহাজের খবর নিয়ে কথামালার খৈ ফুটান। “রাজা যত বলে পারশদ দলে কথা বলবেন পটুপটু! আবার absolutely non-technical হয়েও highly technical বিষয় নিয়েও কথা বলেন, expert opinion দেওয়া তো আয়েশে হাতের আঙুল ফুটানো বা আঙুলের তুড়ি, এবং বিত্তবান ভূমিদস্যু বা তথকথিত ‘ডেভেলপার’ হয়েও কতিপয় শো-ম্যানের ডাক্তারি বিদ্যা আর প্রেসক্রিপশন ফলানো তো, নস্যি, নাক ঝাড়া!

ঠাকুর অবশ্য support দিয়েছেন শতবর্ষ আগে, সাহস দিয়ে: “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোরা রাজার সাথে মিলবো কি শর্তে?”

* কি প্রফেটিক (Prophetic) ঠাকুর! সব লিখে ভাষার ভাণ্ডার ভরা কলস করে গেছেন! ঠন ঠন বাজেন না! আমাদের নমস্য ঠাকুর বেঁচে থাকলে কতিপয় শো-ম্যানের আর করে খেতে হতো না! ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই, বাক্য দিয়ে বোঝাতে হবে না, সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে! “আকলবন্দ কে লিয়ে ঈশারাই কাফি।” {কফি বা কাফি রাগ নয়, দুটোই আমার প্রিয়, আর রাগ?}

*** (অবশ্যিই সবাই নয়, এই চিত্রনাট্য সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। আমি প্রডিউসারের আইডিয়ার সঙ্গে একমত নই। একদম না! অনেককে আমরা সম্মান করি, হ্যাঁ, বুকে হাত দিয়ে বলছি, তাঁরা এভাবে “চ্যাল-চ্যালাইয়া” চ্যানেলে আসেন না, যদি তাঁরা অনেক অনুরোধের পর আসেনও, তাহলে সৌভাগ্য সেই চ্যানেলের এবং আমাদের! Absolutely Professional and specific, তামাশা নয়!)

(‘চ্যাল-চ্যালাইয়া’ সৈয়দ হকের কপি-রাইট , আমি ডিস্কো-সৈয়দ হলেও ব্যবহার করতে পারি, তাঁর সঙ্গে দেখা হলে অনুমোদন নিয়ে নেব!)

ঠাকুরের একটি ‘কবিতা’ আমার কানে ইদানিং কাটা রেকর্ডের মতো বাজে: “ধিক ধিক ওরে, শত ধিক তোরে নিলাজ কুলটা ভূমি, যখনি যাহার, তখনি তাহার– এই কি জননী তুমি!” কুলটা??

ঠাকুর তাঁর কাব্যের শস্য খামারে শব্দ চয়নে কখনো এতটা নির্দয় হয়েছেন বলে মনে হয় না! আগাম লিখেছিলেন আর কি!!

করোনার ভয়ে যতটা নয়, ট্রান্সপোর্টের অভাবে আর সুবুদ্ধি সম্পন্ন চ্যানেলের সময়োচিত সুচিন্তায় কতিপয়ের টক আর তেতো শো’তে ভাটা পড়েছে!

শেষ পর্ব:
স্বস্তির নিশ্বাস!
আলহামদুলিল্লাহ! চাঁদ, তুমি বদনে মাস্ক বেঁধে রাখো, ভাটা যেন নবারুণ পর্যন্ত স্থায়ী হয়! নতুন সূর্য আর নতুন চাঁদের টানে ভরা জোয়ারের অপেক্ষায়–! চলচ্চিত্র বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া বা ‘মুভিং ইমেজে’র সবাই জেগে উঠুন!

বঙ্গের দক্ষিণ সাগরের ভরা জোয়ার আমাদের করোনা মুক্ত করবে! অচিরেই! মানসিক মুক্তিও দেবে। আমরা মুক্ত হব, মুক্ত হব ভুয়া চাটুকারদের হাত থেকে। আমাদের মধ্যে যাঁরা স্তূতি-আক্রান্ত, caught unaware or enjoy ghee-makhon deliberately , beware!! চাটুকার They are worse than mad dogs. Hydrophobia is worse than cancer! বা করোনার চেয়ে ভয়াবহ! Fact. ইতিহাস তাই বলে! আমরা যেভাবে করেছিলাম দেশ হানাদারমুক্ত, সেভাবেই! মিডিয়া-বান্ধব সরকার আমাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে সহায়ক শক্তির যোগান দিন। সমালোচক বন্ধুর মর্যাদা দিন, আমরা রাজদরবারের ক্লাউন স্তুতিকার নই, হতেও চাই না! টক-শোর স্তুতিকারের কেরামতি, ভেল্কি দেখেছেন। মুহূর্তে বিব্রত সবাই!

*** মিডিয়া যোদ্ধাদের প্রতি সাহসের বারতা আর যাঁরা আত্মহুতি দিয়েছেন, মাথা নত করে শ্রদ্ধা! শুভ্র-সমুজ্জ্বল হে চির নির্মল– জাগ্রত হও! শুভেচ্ছা! জয় বাংলা!

এই লেখার মেকআপ ও ছবির বিন্যাস লেখকের সাজানো...
-ফিল্মফ্রি
Print Friendly, PDF & Email
প্রখ্যাত ফিল্মমেকার; সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ ।। জন্ম : ২৬ আগস্ট ১৯৪৬ ।। ফিচার ফিল্ম : ঘুড্ডি ; লাল বেনারসী; আয়না বিবির পালা ।। শর্টফিল্ম : দেয়াল, তামাশা, গল্পদাদুর গল্পকথা, অংকুর ইত্যাদি ।। মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন [১৯৯৬-২০০১] ।। অপারেশন ডিরেক্টর, বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন [১৯৮১-১৯৯৪] ।। শিক্ষার্থী, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া [(পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট); ১৯৭২-১৯৭৭]

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here