দ্য লাঞ্চবক্স : সেলুলয়েডের জলরং কবিতা

535
দ্য লাঞ্চবক্স

লিখেছেন । অদিতি ফাল্গুনী

দ্য লাঞ্চবক্স
The Lunchbox
ফিল্মমেকার, স্ক্রিনরাইটার । রিতেশ বাটরা
প্রডিউসার । গুণীত মঙ্গা; অনুরাগ কাশ্যপ; অরুণ রঙ্গচারী
সিনেমাটোগ্রাফার । মাইকেল সিমন্ডস
এডিটর । জন এফ. লিয়নস
কাস্ট [ক্যারেকটার] । ইরফান খান [সাজন ফার্নান্দেজ]; নিম্রত কৌর [ইলা]; নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী [শেখ]
মিউজিক । ম্যাক্স রিখটার
রানিংটাইম । ১০৫ মিনিট
ভাষা । হিন্দি
দেশ । ভারত
রিলিজ । ২০১৩

দ্য লাঞ্চবক্স

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও তার পরেও কয়েক বছর ঢাকার একাধিক ফিল্ম সোসাইটির সদস্য ছিলাম। এর ভেতর ‘জহির রায়হান চলচ্চিত্র সোসাইটি’র সদস্য হিসেবে ধানমন্ডির জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তথা গ্যোয়েথে ইনস্টিটিউটে বিশেষত: জার্মানি থেকে ইরান অবধি পৃথিবীর নানা দেশের বড় চলচ্চিত্রকারদের সিনেমা দেখা, কখনো ‘রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদে’র আমন্ত্রণে বুদ্ধদেশ দাশগুপ্ত এলে দু’দিনের কোর্স করতে যাওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের ওয়ার্কশপ বা বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্সে অংশ নেওয়ার মতো কাজগুলো করেছি মনের বিপুল আনন্দে।

তেইশ থেকে পঁচিশ হয়ে সাতাশ কি আঠাশ অবধি মানুষের বয়সটাই এমন যে সে সময়টায় সব কিছুই ভালো লাগে আর সব কিছুতেই অংশ নিতে ইচ্ছা করে। প্রথম ধাক্কা খাই আসলে ১৯৯৭ সালে আঁলিয়স ফ্রঁসেসে শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যঁ-লুক গোদার ও পরবর্তী সন্ধ্যায় এরিক রোমেরের পরপর দু’টো সিনেমা দেখে। এমনিতে বাসায় ছোটবেলা থেকেই ওপারের সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, অপর্ণা সেন, গৌতম ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বা দক্ষিণ ভারতের শ্যাম বেনেগাল কি হিন্দি ভাষাতেই বিকল্প ধারার নির্মাতা গোবিন্দ নিহালনীদের সিনেমা দেখার পাশাপাশি তাঁদের উপর নানা পত্র-পত্রিকা পড়েছি। তবে গোদার বা আকিরা কুরোসাওয়া থেকে ইরানের আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমা ভুবনের বিপুল ঐশ্বর্য ঐ ১৯৯৭ থেকে ২০০০ কি বড়জোর ২০০২-০৩ পর্যন্ত নিয়মিত গ্রহণ করা হয়েছে।

গোদারের সিনেমাকে মনে হচ্ছে যেন অ্যান্টি-কবিতা বা অ্যান্টি-গল্প পড়ছি, আবার কুরোসাওয়া কি তারকোভস্কির সিনেমা কবিতার স্বপ্নদৃশ্যের মতো কোমল, এরিক রোমের সিনেমায় ত’ দুঃস্বপ্নই আঁকছেন।

কিন্তু ধীরে ধীরে পেশাগত নানা লড়াই, লেখালিখিতে বেশি মন দেওয়া বা দেখতে দেখতে এই ঢাকা শহরের দ্বিতীয় বৃহত্তম যানজটের নগরী হয়ে ওঠাসহ নানা কারণেই এক সময়ের প্রবল সামাজিক ও নানা আড্ডা বৃত্তে ঘোরা আমি নিজে থেকেই, স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হয়ে যেতে থাকি। এক সময়ের সিনেমা পাগল আমি বছরের পর বছর সিনেমা না দেখে কাটাই। এমনি এক সময়ে সম্ভবতঃ বছর চারেক আগে অনুজ কবি পিয়াস মজিদ একদিন ধানমন্ডি-২৭-এর ‘বেঙ্গল কাফে’তে বসে আমাকে দ্য লাঞ্চবক্স সিনেমার স্টোরি লাইনটি শোনায়।

বোধ করি ২০১৫-এর নভেম্বরের কথা। কাহিনীটি শুনেই আগ্রহ বোধ করি এবং তারপরই সিনেমাটা দেখার সুযোগ হয়ে যায়। বড় পর্দাতেই। বাসায় বসে ইউটিউবে নয়। সেই নাসিরুদ্দিন শাহ-স্মিতা পাতিল-শাবানা আজমী-ওম পুরীদের স্বর্ণ যুগের পর হিন্দি ছবিতে অবাণিজ্যিক কাজ আর ছিল কই? সেই ত’ নাচানাচি, ঝাঁপাঝাঁপি, গাছের পাশে কি সমুদ্র তীরে নায়ক-নায়িকার নানা রঙের পোশাক বদলে গান। তা’ এর আগে সত্যি বলতে ইরফান খানের নামও আমি শুনিনি। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীকে জানতাম না। সেই যে বহুদিনের বিচ্ছিন্নতা!


এক
অদ্ভুত,
বিষণ্ন ঘোরের
ভেতর দিয়ে সময়
কেটে গেল নিষ্পলক মুগ্ধতায়

সিনেমা শুরু হলো– আর তারপর? এক অদ্ভুত, বিষণ্ন ঘোরের ভেতর দিয়ে সময় কেটে গেল নিষ্পলক মুগ্ধতায়। সিনেমাটা দেখে বের হবার পরও মাথায় রয়ে গেল বহু বহু দিন। খুব সাদামাটা চেহারার ইরফান খান আমার চোখে অসম্ভব সুন্দর এক মানব মূর্তি হিসেবে রয়ে গেলেন। যেমন মানব মূর্তি আপনি দেখতে পাবেন মতিঝিলের ব্যাংক পাড়ায় দিন শেষে বাড়ি ফেরার তাড়ায় বাসে ওঠার ধাক্কায় ব্যস্ত কোনো মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে, বাড়ির জন্য বাজার-সদাইয়ে রত কোনো শান্ত, বাঙালি গৃহস্থকে।

আমাদের কৈশোর পার হতে থাকা সময়ের স্বপ্ন পুরুষ অক্ষয় কুমার-সঞ্জয় দত্ত-আমির খান নয়, লিওনার্ডো ডি ক্যাপ্রিও বা ব্র্যাড পিট কি হৃতিক রোশন নয় বা এমনকি আফজাল হোসেন বা আসাদুজ্জামান নূরের মতো সুদর্শন কেউও নয়। অনেকটা যেন হুমায়ুন ফরীদির মতো রূপবান কেউ অথবা খানিকটা কি মোশাররফ করিমের মতোও, যদিও মোশাররফ করিমকে আমরা প্রায় কৌতুকাভিনেতা বানিয়ে ফেলেছি? চেখভের গল্পে পিটার্সবুর্গের অতি সাধারণ কেরানীর যে রূপ ছিল, মহানগরীর তুচ্ছাতিতম সাধারণ মধ্যবিত্ত পুরুষটির যে অজেয় হারকিউলিস সম অতুল রূপ থাকে, তেমনটা? যা মধ্য ত্রিশ পার হবার আগে অন্ততঃ নারী হিসেবে আপনি বুঝতেই পারবেন না?

সিনেমাটা আমি দেখলাম এবং কোথাও আমার গোটা অস্তিত্বে সিনেমাটি এক অদৃশ্য বীজাণুর মতো রয়ে গেল। এরপর মোস্তফা সারয়ার ফারুকীর সিনেমায় ইরফান খান অভিনয় করতে যাচ্ছেন জানি– সেটা আবার হুমায়ূন আহমেদের জীবনের সাথে বলতে গেলে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে– অভিনয়ে ওপারের পারো মিত্র আর এপারের নুসরাত ইমরোজ তিশা। কিন্তু না– আমি দ্য লাঞ্চবক্স-এর যে ইরফানকে দেখেছি, তাঁকে এই ছবিতে এবং এই চরিত্রে দেখব না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। ফারুকীর সিনেমাটা তাই আর দেখলামই না। একথা এখানে একদম ফারুকীর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা নিয়েই স্বীকার করছি।

গত দু’বছর ধরেই কর্কট রোগের সাথে লড়াই করছিলেন ইরফান খান। তবু মনে কোথাও আশা ছিল যে বোধ করি সুস্থ হয়ে উঠতেও পারেন। আজকাল সবাই না হলেও কেউ কেউ ত’ ভালো হচ্ছেন। বিশেষতঃ খুব একটা বয়স ত’ তাঁর হয়নি। কিন্তু আমাদের সব আশা ধূলোয় লুটিয়ে দিয়ে গত ৩০শে এপ্রিল তাঁর মৃত্যুসংবাদ যখন সামাজিক মাধ্যমের নিউজ ফিডে দেখতে পেলাম, তখন কি মনে করে সব কাজ বাদ দিয়ে ইউটিউবে আবার দেখতে বসলাম দ্য লাঞ্চবক্স। আমি বোধ করি এতক্ষণে সিনেমাটির মূল আলোচনায় প্রবেশ করতে যাচ্ছি।

২০১৩ সালে নির্মিত পরিচালক রিতেশ বাটরার ছবি দ্য লাঞ্চবক্স-এর সূচনা দৃশ্যেই আমরা দেখতে পাচ্ছি মুম্বাইয়ের এক সম্পন্ন মধ্যবিত্ত গৃহের এক তরুণী গৃহবধূ ইলা [নিম্রত কৌর] স্কুলগামী কন্যাশিশুটিকে স্কুলের জন্য প্রস্তুত করছে। সারাজীবন বিচিত্র বেশ-ভূষা ও সাজগোজে হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের দেখতে অভ্যস্ত চোখে নিতান্ত ঘরোয়া সালোয়ার-কামিজ পরা ও চুলে পাঞ্চ ক্লিপে একটি খোঁপা করা এবং বলতে গেলে প্রায় প্রসাধনহীন ও নিরাভরণ নিম্রত তথা ইলাকে দেখেই আমরা প্রথম ধাক্কাটি খাই বা খাব। ‘হিন্দি’ সিনেমার নায়িকা এত সাধারণ বা ক্যাজুয়াল চেহারায় পর্দায় দেখা দিচ্ছে? বাচ্চাকে স্কুলে পাঠিয়েই গৃহবধূটিকে আমরা রান্নাঘরে খুব দ্রুততার সাথে রান্না করতে দেখব। এক হাতে রুটি বেলছে, আবার সব্জির তরকারি নামাচ্ছে। যার জন্য রান্না করছ্‌ সেই বরটির সাথে ইলার সম্পর্ক কেমন? সেটাও খুব দ্রুতই আমরা জানতে পারব। সিনেমার শুরুতেই কয়েকটি দৃশ্য থেকে বোঝা যাবে এই পরিবারে ইলার সাথে তার স্বামী রাজিবের সম্পর্ক খুব প্রীতিপ্রদ বা সুখকর নয়। তবু সেই বরকে সুখী করতেই বা তার একটু মন পেতেই ইলার শশক সম ব্যস্ততা।

রান্না করতে করতেই ইলা উপর তলার ফ্ল্যাটের দেশপান্ডে আন্টির সাথে কথা বলে। আন্টি তাকে ‘স্বামীকে খুশি করতে বা ধরে রাখতে’ রান্নার রেসিপিতে মশলাসহ নানা কিছু পরিবর্তন করতে বলে। গোটা সিনেমায় দেশপান্ডে আন্টিকে কখনোই দেখা যায় না। তবে তাঁর কণ্ঠস্বর শোনা যায়। একটু অবাক করা হলেও মুম্বাইয়ে দেখা যাচ্ছে গৃহবধূরা সরাসরি বরের হাতে লাঞ্চ বক্স দেন না। অথবা বররা হয়তো আরও সকালেই অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়েন। ‘ডাব্বাঅলা’রা এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গৃহবধূদের কাছ থেকে লাঞ্চ বক্স নিয়ে এক বিচিত্র ডেলিভারি ব্যবস্থার মাধ্যমে যার যার অফিসে ঠিক ঠিক জায়গায় খাবার পৌঁছে দেন। কিন্তু খুব অদ্ভুতভাবে ইলার হাতে রান্না করা লাঞ্চ বক্স এক দুপুরে তার বর রাজিবের অফিস ডেস্কে না পৌঁছে চলে গেল ছ’মাস পর অবসরে যাবেন– এমন এক সিনিয়র অ্যাকাউনট্যান্ট সাজন ফার্নান্দেজের কাছে।

সাজন ফার্নান্দেজ একে বিপত্নীক, তাতে ক্রিশ্চিয়ান। নিঃসন্তান, তবে শিক্ষিত এই সংখ্যালঘু ভদ্রলোক কি এলিয়টের কবিতার প্রুফক– যিনি কফির চামচে জীবন পরিমাপ করেন: ‘আই হ্যাভ মেজার্ড মাই লাইফ উইথ কফি স্পুন?’ অথবা শহীদুল জহিরের গল্পের একাকী মাঝবয়সী ভদ্রলোকই হবেন হয়তো, যার জীবন থেকে বিশেষ কিছুই আর চাওয়া-পাওয়ার নেই।

সাজন ফার্নান্দেজকে প্রথম দৃশ্যে আমরা দেখি তাঁর অফিস টেবিলে। তাঁর বস এসে এক শিক্ষার্থী যুবক শেখের (নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী) সাথে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয়। যেহেতু সাজন ছ’মাস পর অবসরে যাবেন, শেখ যেন এখনি তাঁর কাছ থেকে সব কাজ শিখে নেয়। এমন সময় সাজনের কাছে দুপুরের খাবার হিসেবে লাঞ্চ বক্স পৌঁছে যায় এবং সাজন গতানুগতিক আর দশটি দিনের মতো অফিস কেন্টিনের নীরস রান্না খাবার প্রস্তুতি নিয়ে খাবার টেবিলে বসেন। কিন্তু রেক্সিনের কাভার খুলেই অবাক হয়ে যান। যত্ন করে সাজানো লাঞ্চ বক্সের পাঁচটি বাটিতে হাতে গড়া রুটি, নানা রকমের সব্জির তরকারি। গন্ধও ত’ একদম বাড়ির হাতের রান্নার সুঘ্রাণ যেন! প্রচণ্ড বিস্ময়ের সাথে খাবার শেষ করে সাজন এমনকি খোদ কেন্টিন বয়দের কাছে যেয়ে খাবারের প্রশংসা করে। কেন্টিন বয়রাও উল্টো অবাক হয়। শুরু হলো ‘বিরস দিন বিকল কাজে’র ভেতর প্রেমের সহসা আবির্ভাব!

এদিকে ইলাও ত’ দিন শেষে দরজা খুলছে ডাব্বাঅলার কাছ থেকে তার বরের না খাওয়া লাঞ্চ বক্স ফিরিয়ে নিতেই। কিন্তু আজ যে লাঞ্চ বক্সের ওজন হাল্কা? ব্যাগ খুলে দেখা গেল সব খাবার শেষ। আনন্দিত ইলা উপরতলার দেশপান্ডে আন্টিকে জানায় যে আজ তার বর সব খাবার খেয়েছে। উত্তরে দেশপান্ডে আন্টির উত্তর যে এ ত’ জানাই ছিল যে, এমন ভালো রান্না খেয়ে তার বর আর তাকে উপেক্ষা করতে পারবে না। ইলা যেন ‘দ্য ফেমিনিন মিস্টিকে’র সেই পঞ্চাশের দশকের মার্কিনি গৃহবধূদের একজন, যাদের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর জাতি-রাষ্ট্র ছেলেদের বেশি চাকরি দিতে মেয়েদের ঘরে ফেরত পাঠাচ্ছে। সুখী দাম্পত্য ও পরিবারই নারী জীবনের একমাত্র অন্বিষ্ট– একথা বলে বলে পঞ্চাশের দশকে মার্কিনি মেয়েদের বিয়ের গড় বয়স কমে যাচ্ছে ও সন্তান সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে আগের দশকের নারীদের তুলনায়। এই ইলাও যেমন। সাজন ফার্নান্দেজের ইংরেজি চিঠি পরের দৃশ্যগুলোয় যখন তাকে পড়তে দেখব, তখন বোঝা যাবে যে সে-ও শিক্ষিতা, দেখতে সুন্দরী, বাচ্চাকে পড়ানোর কাজটি সে-ই করে।

তবে সুখী গৃহবধূ ও আদর্শ মায়ের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে কাজে যোগ দেওয়া হয়নি? তার বর রাজিবই কি তাকে মানা করেছিল কোনো একসময়? আর এখন সেই বরই তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে?

ইলা যেন এক নির্বিকার দাসী এই পরিবারে। সারাদিন বাসন ধোয়া, ওয়াশিং মেশিনে রাশ রাশ কাপড় কাচা, প্রেমহীন বরের জন্য রান্না, বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো বা তার হোমওয়ার্ক দেখার পর আবার বর এলে দাম্পত্য টিঁকিয়ে রাখার নিষ্করুণ যুদ্ধে একটা সুন্দর ওড়না গলায় জড়িয়ে, চোখে কাজল বা কপালে টিপ এঁকে বরের সামনে ভীরু পায়ে তাকে দাঁড়াতেও হয়। বর তাকে চেয়েও দ্যাখে না। অফিস থেকে ফিরেই সে বান্ধবীর টেক্সট মেসেজ খুলে বসেছে। ‘আজ তুমি সব খাবার খেয়েছো?’ খুশি মুখে বলে ইলা। তবে বরের বাচিক ও দেহভঙ্গিগত উভয় উত্তর দেখেই বোঝে, খাবারগুলো যে-ই খাক, তার বর খায়নি।

পিতৃতন্ত্র নারীর জন্য যুগে যুগে যে আদর্শ গৃহবধূ ও মায়ের ভূমিকা নির্মাণ করেছে, সেটা যেন একটা জুয়ার মতো। বরটি যদি তা-ও ভালোমানুষ বা প্রেমময় থাকে, নারীর যাবতীয় ত্যাগ তবু একটা অর্থ পায়। সেটাও যখন থাকে না, তখন যে একজন শিক্ষিতা ও সুন্দরী নারীও দিনশেষে বিনা বেতনের গৃহশ্রমিক ও একইসাথে যৌন বস্তুর বেশি কিছুই নয়।


রান্নাও
কি শ্রম নয়,
শিল্প নয়, সৃজন নয়?

জানি না পরিচালক রিতেশ বাটরা এত কিছু ভেবে এ ছবি বানিয়েছেন কি না, তবে এ ছবি দেখতে দেখতে আমাদের গালে নিঃশব্দ চড়গুলো যে পড়তেই থাকে। অসহায় ও ধন্দে পড়া ইলা তখন দেশপান্ডে আন্টির কাছে জানতে চায় যে খাবারগুলো বোধ করি অন্য কারও পেটে গেছে, আন্টি অবাক হয়। কিন্তু মানুষই ত’ সেই প্রাণী, যে যাবতীয় বিরূপতার ভেতরেও বাঁচতে চায়। ইলাই বা কেন বাঁচতে চাইবে না? পিতৃতন্ত্রে আদর্শ নারী হতে গিয়ে জীবনের লক্ষ্যকে সে সীমিত করে এনেছিল বরকে ভালো-মন্দ খাইয়ে তাকে খুশি করায়। সেই রান্নার কোনো প্রশংসাও সে পায় না। তবু ত’ একজন তার রান্না খেল আজ! রান্নাও কি শ্রম নয়, শিল্প নয়, সৃজন নয়? সে তাই আবার রান্না করে এবং একটি ছোট চিরকুটে লিখে পাঠায়, ‘হ্যালো- বোধ করি আমার বরের রান্না আপনার কাছে ভুলে চলে গেছে। আজ পনির রান্না করে পাঠালাম– আমার বরের প্রিয় খাবার। ইলা।’

সাজন ফার্নান্দেজ যথারীতি দ্বিতীয় দিন লাঞ্চ বক্স খুলে অবাক হয়ে যান। খাবারের সাথে একটি চিরকুটও? আপাতঃ রাশভারি সাজন উত্তরে লেখেন যে, খাবার আজ ‘নোনতা’ ছিল বা লবণ বেশি ছিল। ইলা এই উত্তর পেয়ে বিচলিত হয়ে দেশপান্ডে আন্টিকে বললে, আন্টি হেসে উড়িয়ে দেন। লবণ বেশি হলে সব খাবার খাওয়া হলো কী করে? দেশপান্ডে আন্টি বয়সে এক প্রজন্ম বড় হলেও পুরো ছবিতে দুই নারী এক ‘সিস্টারহুডে’র বন্ধনে আবদ্ধ। দেশপান্ডে আন্টিও কি জীবনের দীর্ঘ লড়াইয়ে বরের অমনোযোগ সহ্য করেছেন? রান্নায় বৈচিত্র্য এনেছেন?

আরও অদ্ভুত বিষয় হলো, দেশপান্ডে আন্টি ত’ ঠিকই জানছেন যে ইলার এই রান্নাগুলো এখন তার বরের কাছে নয়, কোনো অনাত্মীয় পুুরুষের কাছে যাচ্ছে। তারপরও কেন ইলাকে বিশেষ মরিচ ও মশলা ব্যবহার করতে বলছেন? তিনিও কি চান এই সম্পূর্ণ অস্বীকৃতির জীবনে মেয়েটি কোথাও থেকে এতটুকু স্বীকৃতি পাক?

দ্বিতীয় দিনে সাজন ফার্নান্দেজ লেখেন যে খাবারে একটু ঝাল বেশি ছিল আর তাই তিনি কলা খাচ্ছেন। তারপরও এই নিঃসঙ্গ মাঝবয়সী ভদ্রলোক আর সুন্দরী তবে উপেক্ষিতা মেয়েটির ভেতর যোগাযোগ হতেই থাকে।

সাজন চরিত্রে ইরফানের অভিনয় দেখুন! প্রতি দুপুরে লাঞ্চ বক্স আসার আগে অধীরতা বাড়তে থাকে। লাঞ্চ বক্স এলেই গন্ধ শোঁকেন– একদিন সে দৃশ্য দেখে এক সহকর্মী হাঁ হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কেন্টিনের টেবিলে বসে লাঞ্চ বক্স খুলে সবার আগে চিরকুট খোলার সময় ত্রস্ত মুখভাব যেন লুকিয়ে প্রেম করতে গিয়ে সবার কাছে ধরা না পড়েন! এবং যেন বা প্রতিদিনকার জীবনের ‘ডিভাইন কমেডি’র মতো, আমাদের অস্তিত্বের ‘দ্য লাইটনেস অফ বিয়িং’য়ের মতো তরুণ শিক্ষার্থী শেখ বা নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীও হাজির হয় এই প্রেমকে না জেনেই গৌরবান্বিত করতে। মুম্বাই শহরে অকৃতদার এই যুবক রান্না করে খাবার সময় পায় না বলে একটি কলা ও একটি আপেল নিয়ে বস সাজন বা ইরফানকে সঙ্গ দিতেই যেন হাজির হয় লাঞ্চ আওয়ারে। আহা, বসের সামনে অত খাবার!

ইরফানও বোঝেন। যেন বা স্ত্রীর ক্যুইসিন ক্ষমতায় গর্বিত কোনো বরের মতোই সাজনও শেখের দিকে বাড়িয়ে দেয় খাবারের ভাগ। এমন দারুণ সব রান্না খেয়ে তৃপ্ত শেখ পরের দিন দু’টো আপেল ও দু’টো কলা নিয়ে এসে [যাতে করে বসকে ফলের অর্ধেক ভাগ দিয়ে সে-ও বিচিত্র নানা তরকারির অর্ধেক ভাগ পেতে পারে] সাজনের সামনে রেখেই ভদ্রতা করে বলে, ‘না- না-স্যার… আপনি খান! আমার কাছে ফল আছে।’

সাজন ভদ্রলোক। তিনি কি আর জুনিয়রকে না দিয়ে এত ভালো সব খাবার খাবেন? আর একদিন শেখ বলেই ফেলে, ‘আপনার স্ত্রীর হাতের রান্নার গন্ধে আপনার ডাব্বা যে ময়-ময় করছে।’ সাজন অবশ্য বলেন যে তিনি বিপত্নীক। অথবা ভিড়ে গাদাগাদি ট্রেনে ফেরার সময় শেখ যখন সাজনকে বলে, ‘কখনো কখনো ভুল ট্রেনে করেই আপনি সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে যেতে পারেন!’ কিম্বা ‘আজ স্যার আপনার চেহারা থেকে আলো ফুটে বের হচ্ছে!’ পরিচালক রিতেশের প্রশংসা এখানে না করলে নয়। ভিড়ের ট্রেনে মুম্বাইয়ের পথশিশুদের কচি গলায় হিন্দি সিনেমার জনপ্রিয় সব গান যেমন ‘পরদেশি পরদেশি যানা নাহি’ বা ‘সাজন সাজন মেরি সাজন’ আর অমন দমবন্ধ ভিড়ের ট্রেনেও বাতাস ঢোকে কখনো কখনো আর ক্লান্ত মানুষগুলো শিশুদের গানে একটু হলেও খুশি হয়– মুম্বাই-ঢাকা-করাচির এই জীবন কত দূরবর্তী, তবু নিউইয়র্ক-লাস ভেগাস-লন্ডন-ফ্রাঙ্কফুর্টের জীবন থেকে। তৃতীয় বিশ্বের মানুষ এভাবেই ত’ বাঁচে। কত প্রতিকূলতার ভেতরেও কত অল্পেই না সে সুখী!

আর ইলা? সাজন ফার্নান্দেজকে জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের কথা লেখে সে। অতি ভদ্র সাজন তাকে দ্বিতীয় সন্তান নেবার কথা বলে যা ‘বিয়ে’কে একটি নতুন মোচড় দিতে পারে। ইলা হায় এই পরামর্শের পরে রাতের বেলা বরের সামনে যায়! এবং বিয়ে যেহেতু ‘আইনগত পতিতাবৃত্তি’ও বটে, তাকে বরের দৃষ্টি আকর্ষণে বিশেষ দেহভঙ্গিমাও করতে হয়। না, রাজিব তাকে ফিরিয়ে দেয়। ইলা সাজনকে লেখে যে আত্মহত্যার সাহসটুকু করতে পারলেই আর কিছু চাই না। সাজন তাকে এমন ভাবনা ভাবতে নিষেধ করে। অসুখী ইলা মা’র কাছে যায়। তবে মা তাকে সংসার টিঁকিয়ে রাখার পরামর্শই দেয়।

এ সময়ই মেয়ের হোমওয়ার্কের খাতায় ভুটানের ছবি দেখে ইলার মনে হয় ভুটান গিয়ে সে কি নতুনভাবে বাঁচার যুদ্ধ করতে পারে যেখানে জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম? সে কথাও সাজনকে জানায় সে। জানতে চায় সাজনের নাম, “আমি ত’ আপনার নামই জানতে চাইনি এতদিন।”

উত্তরে সাজন যেদিন তাঁর নাম জানালেন, ইলা দেশপান্ডে আন্টিকে বলে ‘সাজন সাজন ও মেরি সাজন’ গানটি বাজাতে। এভাবেই প্রেম আসে। সারা দিনের গৃহশ্রমের পর, ঘরের এক কোণে এক কাপ দুধ চা বানিয়ে সাজনের চিরকুট নিয়ে বসে ইলা– পাশের ঘরে বর বা বাচ্চা তাকে দেখছে কি না সেটাও সতর্কতার সাথে দেখে নেয়। আর তখন তার মুখে এসে পড়ে দিব্য আলো, ‘বঁধূ কোন আলো লাগলো চোখে! ছিলে দীপ্তি রূপে কোন্ স্বর্গলোকে?’

শব্দ সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলে এ লেখা তাড়াতাড়িই শেষ করতে হবে। সাজন ও ইলা শেষ পর্যন্ত একদিন দেখা করবে বলে মনস্থ করে। কিন্তু ইলা খানিকটা সেজে-গুজে যেদিন এক নির্দিষ্ট কাফেতে গেল, সাজন কেন ইলাকে দেখে পালিয়ে গেলেন? ইলা বড় বেশি তরুণী ও রূপসী তাঁর মতো মাঝবয়সী বিপত্নীকের জন্য? পরদিন ইলা আর রান্না পাঠায় না। সাজন জানান যে ইলার পাশে নিজেকে যে তাঁর মানানসইই মনে হয়নি। ইলার বাবা কর্কট রোগে মারা গেলেন, ইলার মা ইলাকে শোনালেন তাঁরও দীর্ঘ ও অসুখী দাম্পত্যের গল্প। ইলা আবার সাজনকে খুঁজতে শুরু করলে সাজনের তরুণ সহকর্মী শেখ তাঁকে জানায় যে অবসরের পর সাজন নাসিক চলে গেছেন। ইলা এবার ভুটান যাবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়। সাজন আবার মুম্বাই ফেরেন।

শেষ দৃশ্যে ইলা কি সেই একই চক্রবদ্ধ জীবনে আটকা পড়া? ঘরে বসে মেয়ের স্কুল থেকে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছে?

এই ছবির পরিচালক রিতেশ বাটরা শুরুতে মুম্বাইয়ে দুপুর বেলায় বিভিন্ন অফিসে খাবার পৌঁছে দেবার কাজে নিরত ‘ডাব্বাঅলা’ পেশাজীবীদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানাতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে কিছু মানবিক গল্পও জানতে পারেন এবং এক পর্যায়ে তথ্যচিত্র বাদ দিয়ে একটি সিনেমা স্ক্রিপ্টই লেখা শুরু করে দেন। রিতেশ বাটরার লেখা চিত্রনাট্য ও পরিচালিত এই ছবি প্রযোজনা করেছেন গুণীত মঙ্গা, অনুরাগ কাশ্যপ ও অরুণ রঙ্গচারী। ২০১৩ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘আন্তর্জাতিক ক্রিটিক সপ্তাহে’ প্রদর্শিত হওয়া ছাড়াও ‘গ্র্যান্ড রেইল দ’অ্যর’ অর্জন করে ছবিটি।

২০১৩ সালের টরেন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও ছবিটি প্রদর্শিত হয়। ছবিটির বক্স-অফিস সাফল্যও উপেক্ষনীয় নয়। ‘ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে’র ‘অ-ইংরেজি’ ছবির তালিকায় সেরা ছবি হিসেবে মনোনীতও হয়েছিল এই সিনেমা।


ভিড় ঠাসা
ট্রেনের হাতলে দাঁড়ানো
সাজনের তিক্ত-মধুর দৃশ্যাবলী
আমি ভালবেসেছি, ভালবেসেছি
রাতের বেলা ঘরের ব্যালকনিতে
একাকী ধূমপানরত সাজনকেও–
যেন বা এডওয়ার্ড হপারের
কোনো চিত্রকর্মের
নিঃসঙ্গতম
মানব
সে

এর আগে রিতেশ বাটরা আরও বানিয়েছেন দ্য মর্নিং রিচ্যুয়াল, গরীব নওয়াজ কি ট্যাক্সি এবং কাফে রেগ্যুলার, কায়রো। খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই দ্য লাঞ্চবক্স ৪.২৩ মিলিয়ন মার্কিনি ডলারের সমপরিমাণ ব্যবসা করেছে এবং ২০১৪ সালের মে মাস নাগাদ গোটা দুনিয়া জুড়ে এই ছবি ৮৪.৯২ কোটি রুপীর সমপরিমাণ ব্যবসা করায় সক্ষম হয়। পশ্চিমের পত্র-পত্রিকাতেও ছবিটি যথেষ্ট মনোযোগ ও আলোচনা অর্জনে সক্ষম হয়। যেমন, দ্য অবজার্ভার পত্রিকায় শ্যান ব্রুকস [এপ্রিল ১২, ২০১৪] এই ছবিকে লিখছেন ‘পুঞ্জিত আবেগের শান্ত ঝড়’ হিসেবে; লিখছেন: ‘ভিড় ঠাসা ট্রেনের হাতলে দাঁড়ানো সাজনের তিক্ত-মধুর দৃশ্যাবলী আমি ভালবেসেছি, ভালবেসেছি রাতের বেলা ঘরের ব্যালকনিতে একাকী ধূমপানরত সাজনকেও– যেন বা এডওয়ার্ড হপারের কোনো চিত্রকর্মের নিঃসঙ্গতম মানব সে।’ শ্যান ব্রুকস অবশ্য দ্য লাঞ্চবক্সকে দু’টো পশ্চিমা ছবি ব্রিফ এনকাউন্টার ও এর্নস্ত লুবিচের দ্য শপ অ্যারাউন্ড দ্য কর্নার-এর ভেতরকার এক কোমল ‘বিয়ে’ বলেও অভিহিত করেছেন।

একইভাবে পশ্চিমী সমালোচক জে উইসবার্গ তাঁর রিভিউয়ে এই সিনেমার দেশপান্ডে আন্টি চরিত্রটিকে দ্য গোল্ডসবার্গ চলচ্চিত্রের একটি চরিত্রের মতোই ব্যালকনির উপরতলা থেকে ভেসে আসা একটি কণ্ঠস্বর তবে নেপথ্যচারী চরিত্র হিসেবেই থেকে যাওয়া বলে মনে করেন। তবু রিতেশ বাটরার সাফল্য হলো একাধিক পশ্চিমী চলচ্চিত্র বা চলচ্চিত্রের চরিত্রের প্রভাব তাঁর উপর যদি থাকেও, তিনি এই ছবিকে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রেক্ষিতে উপস্থাপন করে একটি সফল ‘উপমহাদেশীয়’ ছবি হিসেবে তৈরি করতে পেরেছেন। জীবনানন্দ দাশ যেমন ‘হেলেন’ পড়ে প্রভাবিত হলেও ‘বনলতা সেন’ একদম নিজের মতো করেই লেখেন।

সমালোচক জে উইসবার্গ দ্য লাঞ্চবক্স ছবিতে ইরফানের বিভিন্নমুখী চরিত্রে অভিনয়ের ক্ষমতা, পরিচালক বাটরার সংবেদী চোখ ও ক্যামেরায় একদিকে মুম্বাইয়ের অবক্ষয়মুখী সংখ্যালঘু ক্রিশ্চিয়ান পাড়া আর পাশাপাশি সংখ্যাগুরু মধ্যবিত্ত হিন্দু অ্যাপার্টমেন্টগুলোর বস্তুগত সম্পন্নতার চিত্র নির্মাণে কুশলতারও প্রশংসা করেছেন। মুম্বাইয়ের ডাব্বাঅলাদের বিচিত্র পদ্ধতিতে খাবার পরিবহনের নানা শট ও সাথে মানানসই সাঙ্গীতিক আবহ জুড়ে দিয়ে নানাভাবেই পরিচালক রিতেশ বাটরা শিল্পী তাঁর সক্ষমতা আমাদের বুঝিয়ে দেন।

গোবলয় আর্যাবর্তের মানুষেরা টাকা-কড়ি বা রাজনীতি বুঝলেও ‘শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র’ বোঝে না বলে বাঙালি দর্শকের উচ্চমন্যতা একটু হলেও নাড়া খাবে এই ছবিতে। আর দিনশেষে একাকী বিপত্নীক সাজন ফার্নান্দেজ ও অসুখী গৃহবধূ ইলার অসমাপ্ত গল্প সেলুলয়েডের এক জলরং কবিতা হয়ে আজীবন আমাদের স্মৃতির ভেতর গেঁথে থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ ।। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ছাত্রী অদিতি বর্তমানে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগের ‘এআরএলটি ফাউন্ডেশনে’র সাথে অন্তর্জালে সমাজবিজ্ঞানে অধ্যয়ণরত ।। দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন জাতিসংঘ-সহ বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, সংবাদপত্র, প্রকাশনা সংস্থা ও বাংলা একাডেমির অনুবাদ বিভাগেও ।। অনুবাদ, কবিতা ও গল্প সংকলন, প্রবন্ধ সংকলন, গবেষণা গ্রন্থ, শিশু-কিশোরদের জন্য রচনা ও উপন্যাস-সহ মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বত্রিশের কাছাকাছি ।। এ পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে চারটি সাহিত্য পুরস্কারে সম্মানিত

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here