লিখেছেন । টোকন ঠাকুর
কোভিড-১৯-এর ফলে পৃথিবী জুড়েই লকডাউন চলছে। এখন, জুন ২০২০। মানুষের সঙ্গে মানুষের নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হচ্ছে বলে অন্য সবার মতো আমিও ঘরবন্দী। এই বন্দী জীবন ভালো লাগছে না। কিন্তু করোনাভাইরাস কারোর ভালো লাগা পাত্তা দেয় না। ঘরের বাইরের কাজ-কর্মও তাই থমকে গেছে প্রায় সবার মতো আমারও। সময় টালমাটাল খাচ্ছে। এরকম সময় আমরা আগে দেখিনি। কবিতা লিখব? মাথার মধ্যে কবিতারা ডিম পেড়ে যাচ্ছে, ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোবে কীভাবে?

লিখতেই তো ইচ্ছে করছে না। মাথার মধ্যে সিনেমা ঘুরছে, সেটা আমি নিজে ছাড়া কেউ দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু সবাইকে দেখাব বলে নির্মাণাধীন আমাদের সিনেমা কাঁটার কাজও করোনাকালের যাত্রায় সমাগত লকডাউন বাস্তবতায় থেমে আছে। কাঁটার শুটিং তো শতভাগ সম্পন্ন, কিন্তু পোস্টের কাজে এসে যখন চূড়ান্ত সম্পাদনা পর্ব শুরু হবে, তখনই অতিথি হয়ে এলো করোনাভাইরাস, ঢাকা শহর কার্যত লকডাউনের মধ্যে পড়ে গেল এবং এই অবস্থায় সম্পূর্ণ এক নতুন পৃথিবীর নাগরিক হয়ে উঠলাম আমরা। গত তিন মাস আমরা প্রায় সব্বাই ঘরবন্দী হয়ে পড়েছি। করোনার কারণেই নাগরিক জীবনে সবাই যে- যার মতো হোম কোয়ারেন্টাইনে আছি।
কোয়ারেন্টাইন চলমান আছে। কিন্তু করোনা সব কিছু থামিয়ে দেওয়ায় যে পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, এই পরিস্থিতিও আর বেশিদিন চলমান থাকতে পারে না। যেভাবেই হোক, জীবনকে তার ছন্দগতি ফিরে পেতেই হবে, জীবন বলতে নিতান্তই মানুষের জীবনের কথা বলছি।
যে জীবন দোয়েলের, ফড়িংয়ের,– তার সঙ্গে আর দেখা হলো কই?
…
হয়তো
মানুষের
ছদ্মবেশে আমি শালিক
জীবন কাটিয়ে যেতে চেয়েছি
…
মানুষের তো অনেক কাজ, বেঁচে থাকতে হলেই কাজ করে যেতে হয়। হয়তো মানুষের ছদ্মবেশে আমি শালিক জীবন কাটিয়ে যেতে চেয়েছি। একটি শালিক হয়ে নদীদের এই দেশে জীবন পার করতে চেয়েছি; কিন্তু থাকতে হলো মানুষ হয়ে– সে কারণেই কি এত এত রাশি রাশি কবিতা লিখলাম?
বিরচনা?

এই মুহূর্তে না হয় শালিক-দুঃখ থাক, ৫০টি কবুতরের কথা বলি। আর একটি বিড়ালের কথা বলি।
বিড়াল কিন্তু নারী বিড়াল এবং তাকে গর্ভবতী হতে হবে, কাঁটা চিত্রনাট্যে লেখা ছিল। নারী বিড়ালকে কি বিড়ালিনী ডাকা যায়? নিশ্চয়ই যায়। ইচ্ছে হলেই যায়। ইচ্ছেকে আটকাবে কে? তো বাংলা কত্থক সাহিত্যের উঁচু স্তরের লেখক শহীদুল জহিরের গল্প অবলম্বনে কাঁটা চিত্রনাট্য গঠিত হয়েছে আরও কিছু সাবজেক্ট-অবজেক্ট নিয়ে, সরকারি অনুদান পাওয়ার পরও আমি চিত্রনাট্যে আরও দেড়-দু’বছর সময় দিয়ে কাটাকুটি করেছি।
১৯৬৪, ১৯৭১ এবং ১৯৮৯-৯০ সাল নির্মাণের জন্যে মূল গল্পঘরের জানালা দিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। ভেবেছি, শহীদুল জহির পড়তে হলে ভালো পাঠক হতে হয়, যা হয়তো আমিও হতে চেয়েছি আমার পাঠ্য-লেখ্য’র প্রথম থেকেই। বাংলা কথাসাহিত্যের ‘আধুনিক’ রীতির আড়াইশো বছরের পরম্পরার সঙ্গে একটা বোঝাপড়া আমার আছে। অনুবাদভিত্তিক অন্য ভাষার কথাসাহিত্যের প্রতি নেশাও অর্জন করতে চেয়েছি। সেই হিসেবে শহীদুল জহিরকে ধরতে পারি। তবে লেখাপড়া জানা না থাকলে পাঠক হওয়া যায় না সত্য, কিন্তু চোখ-কান পরিষ্কার মানুষ মাত্রই সিনেমার দর্শক হতে পারে। গল্পে রোপিত শব্দ-বাক্যে লেখা ন্যারেটিভগুচ্ছ নিয়ে যখনই গল্পটি চিত্রনাট্যে মোড় নেবে, সেই ন্যারেশন শব্দ ও দৃশ্যের ভেতর দিয়ে প্রতিভাত হবে। একটা টেক্সট, অন্যটা ভিজুয়াল। ছবি।
চিত্রনাট্য রচয়িতা তার মস্তিষ্কে গল্পটি কীভাবে নিচ্ছেন, সেটি হয়তো ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে আলাদাও হবে। ফলে নূরুল আলম আতিক যখন কাঁটা চিত্রনাট্য করে সরকারি অনুদানের জন্যে জমা দেন, সেই চিত্রনাট্য থেকে অনিমেষ আইচের টেলিভিশন প্রডাকশন আলাদা। কাঁটা মূলগল্প এক হলেও উপস্থাপনভঙ্গি আলাদা। আমি যখন সেই একই গল্পে চিত্রনাট্য করেছি, এতে মূলগল্পের পটভূমি এক থাকলেও কত কিছু যে যুক্ত করেছি বা যুক্ত হয়ে গেছে, সেটি কাঁটা গল্পের পাঠক যখন দর্শক হয়ে বসে ছবিটি দেখবেন, টের তো পাববেনই। কতখানি পেরেছে কাঁটা টিম, কতটুকু পারেনি, কতটা পারিনি আমি, তাও হয়তো টের পাওয়া যাবে। গল্পটি পড়া হয়নি, ছবিটি দেখবেন, এমন লোকই বেশি হবেন, সবার অভিব্যক্তি দেখার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি কাঁটার টিম প্রধান হয়ে কাজ করে যাচ্ছি। ক্যামেরার পেছনে ও সামনে এই ছবিতে কাজ করছেন প্রায় আড়াইশোজন মানুষ।
এবার, বিড়ালিনী ও কবুতরদের গল্পটা বলি। গল্প হলেও সত্যি। কাঁটার শুটিংয়ের সময় এইসব ঘটনা আমরা ঘটতে দেখেছি এবং ঘটনার মধ্যে আমরাও পাত্রপাত্রী হয়ে থেকেছি।

কাঁটার পটভূমি অনুযায়ী পুরান ঢাকার ভুতের গলির আবদুল আজিজ ব্যাপারির বাড়িতে ভাড়াটিয়া সুবোধ-স্বপ্না ছাড়াও একটি তুলসীগাছ থাকবে ও একটি পাতকুয়া থাকবে। আমি চিত্রনাট্য করার সময় লিখেছি, একটি গর্ভবতী বাড়িতে বিড়াল থাকবে, একটি কবুতরের ঘরসহ ৫০টি কবুতর থাকবে। এ ছাড়াও ইতিহাসের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে সুবোধ-স্বপ্নার ঘরের জানালার ধারে ঝুলন্ত খাঁচায় থাকবে ও ডাকবে একটি ময়না, একটি টিয়া ও একজোড়া ঘুঘু।
কিন্তু বিড়াল ও কবুতরের মতো পরস্পর সাংঘর্ষিক চরিত্র কাঁটাতে আত্তীকরণ করতে গিয়ে যা যা ঘটেছে, তার সব তো বলা যাবে না। লকডাউন পরিস্থতির মধ্যে বসে দুএকটা বলি।
এই মুহূর্তে আমি অবস্থান করছি ধানমন্ডি হাতিরপুলে; কিন্তু কাঁটার বিড়ালিনী ও কবুতরগুলোর কথা বলতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে পুরান ঢাকায়, নারিন্দায়, ভূতের গলিতে। দেড় বছর আগে।
গলির ৩৬ নম্বর বাড়িটাই আবদুল আজিজ ব্যাপারির বাড়ি। এই বাড়িতেই কাঁটা ছবির প্রায় ৮০ শতাংশ চিত্রায়িত। তো, কাঁটা চিত্রনাট্যের চাহিদা অনুযায়ী একখানা কবুতরের ঘর বানানো হলো, ৫০টি কবুতর ডানা বেঁধে ঘরের ২৫টি খোপে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। একজন সহকারি পরিচালকের উপর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কবুতর ও বিড়াল ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব অর্পিত হলো।
কবুতরের ঘরে্র খোপ করা হয়েছে ৩০টি, সেই হিসেবে ২৫ খোপে কবুতর জায়গা নিলেও আরও ৫ খোপ খালি থাকল। অর্থাৎ আরও ১০টি কবুতরের জন্যে অ্যাপার্টমেন্ট খালি। কিন্তু প্রত্যেকদিন সকালেই দেখা যাচ্ছিল কয়েকটি করে কবুতর রক্তাক্ত এবং মৃত। আমরা বিড়াল ও কবুতরের দায়িত্বে থাকা শুভর কাছে জানতে চাই, কী হচ্ছে এসব?
…
কবুতর
কি রাতে বেজি
এসে মেরে যাচ্ছে?
…
শুভসহ অন্যেরা কেউই বলতে পারছিল না, কীভাবে কবুতর মরে যাচ্ছে রোজ? ৫০টি কবুতর থেকে কদিনের মধ্যেই কবুতর হয়ে গেল ৪০/৪১টি। কবুতর কি রাতে বেজি এসে মেরে যাচ্ছে?
শুটিংয়ের পাশের বাড়িতে কবুতর পোষা হতো, অনেক কবুতর সেই বাড়ির ছাদে। প্রায় তিনশো কবুতর। ছাদের উপর দিয়ে এসে রাতে কি ও-ই বাড়ির কেউ আমাদের কবুতর মেরে যাচ্ছে?

মনে হচ্ছিল আমার, কাঁটা ছবিতে শুটিং করতে এসে কিছু কবুতর শহীদ হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল আমার। বললাম, কবুতরের ঘর পুনর্নির্মাণ করতে হবে। আবার মিস্ত্রী ডাকা হলো, ঘাটতি পড়া কবুতর পুনরায় কেনা হলো।
তারপরও দেখা গেল, কবুতর নিহত হচ্ছেই। খুব মন খারাপ হচ্ছিল তখন। ততদিনে কবুতর মরছে আর আমরা নতুন করে কবুতর কিনে আনছি। টাকা যেমন যাচ্ছে, নতুন কবুতর এসে আগের কবুতরের সঙ্গে খাপ খাওয়াতেও সময় লাগছে।
এভাবে তো হয় না, এক ঝাঁক কবুতর থাকবে বাড়িতে, তারা আজিজ ব্যাপারির বাড়ির ছাদ থেকে নেমে আসবে উঠোনে, সুবোধ-স্বপ্নার ঘরের দরজার কাছে উড়ে উড়ে যাবে, স্বপ্না তাদের শস্যদানা খেতে দেবে। কবুতরের ডাক শোনা যাবে সারাদিন– চিত্রনাট্যের দাবি মেটাতে গিয়ে প্রোডাকশনের টাকা বারবার খসছিল। ভোরবেলা ঘর খোলা মাত্রই বাড়ির ছাদের রেলিং ধরে বসে ডাকবে সারারাত সঙ্গমতৃপ্ত কবুতর, কিছু কবুতের দাম্পত্য কলহ থাকবে, তাদের কণ্ঠে ভোরবেলা সঙ্গম-অতৃপ্ত ডাকও শোনা যাবে– কিন্তু কবুতরের মৃত্যু থামানো দরকার আগে।
একজন পাখি চিকিৎসক ডাকা হলো, তিনি কিছু ওষুধ দিলেন। কাজ হলো না, কাজ হচ্ছিল না। প্রতিদিন সকালে কয়েকটি মৃত কবুতর ফেলতে হচ্ছিল আমাদের। আমার সহ্য হচ্ছিল না। সিনেমাটোগ্রাফার রোমান এক কাজ করল, রাত ১০টা থেকে ভোরে ঘর খোলার আগ পর্যন্ত কবুতরের ঘরে বিদ্যুতের খোলা তার পেচিয়ে রাখল। এতে বেজিই হোক আর কোনো অশুভ মানুষই হোক, টাইট হবে।
কবুতরগুলো বাঁচবে।
কেউ কেউ বলল, বেজির গায়ে কারেণ্ট লাগবে কি না… এবং এরপর থেকে আর কবুতর মরেনি। আমরা নারিন্দায় ছিলাম ৯ মাস। কবুতরের মৃত্যু রোধ করা গেল বটে। কিন্তু বিড়ালের কী অবস্থা?

চিত্রনাট্যের চাহিদা অনুযায়ী গর্ভবতী বিড়াল পাওয়া গেল বটে; কিন্তু সেইসঙ্গে তার আগের ৪টি বাচ্চারও ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হলো প্রোডাকশনকে। কি আর করার!কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই গর্ভবতী বিড়াল বা আমাদের চিত্রনাট্যের বিড়ালিনী বুঝে ফেললেন, কাঁটার ক্যারেক্টার হিসেবে আমাদের তাকে দরকার। তার মধ্যে একটা স্টার ভ্যালু তৈরি হলো। ফলে, কাটা টিমের সঙ্গে এক ধরনের নখরামো দেখাতে লাগল জনাবা গর্ভধারিণী।
কাঁটাতে আমরা দেখব, রান্না ঘরের সামনে বারান্দায় বসে চা নিমকপারা খাচ্ছে ভূতের গলির কয়েকজন মহল্লাবাসী– সুবোধ বসে আছে পাশে, স্বপ্না দাঁড়ানো, বাড়ির দোতলা থেকে এই দৃশ্য দেখবে বাড়িওয়ালা আজিজ ব্যাপারি। দেখা যাবে, একটি কাসার বাটিতে করে দুধ দিয়েছে স্বপ্না, গর্ভবতী বিড়াল সেই দুধ চুক চুক করে খাচ্ছে। কিন্তু আমরা অন টেস্টে দেখলাম, স্টার বিড়াল বাজার থেকে কেনা মিল্ক ভিটা বা আড়ংগের দুধ খাচ্ছে না।
কিন্তু কাঁটাতে বিড়ালের নানারকম যাতায়াত থাকলেও দুধ খাওয়ার ব্যাপারটিও লাগবে। কী করা যায়!!
…
শুটিং
করতে
হলে বিড়ালের
কথা শুনতে হবে,
বরাদ্দ বাড়াতে হবে
…
অফ ক্যামেরা বিড়াল ও তার চার বাচ্চার জন্যে বিভিন্ন ধরনের মাছ কেনা হচ্ছিল। মাছ কিনতে যেত ১৯৭১-এর সুবোধচন্দ্র দাস, শ্রীমন্ত বসু বা কৃতিরঞ্জন। কিন্তু বাচ্চারা সব ধরনের মাছ খেলেও, মা বিড়াল বা কাঁটার কাস্ট যিনি, তিনি সব মাছ খাচ্ছেন না। কয়েকদিনের পর্যবেক্ষণ শেষে শুভ জানাল, শুটিং করতে হলে বিড়ালের কথা শুনতে হবে, বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সব মাছ উনি খাবেন না, শুধু ইলিশ ও রুই খাবেন। তার বাচ্চাকাচ্চারা চিংড়ি পুটি দিলেও পেট ভরে খেয়ে নিচ্ছে, কিন্তু তিনি ওগুলো খাবেন না। তিনি শুধু রুই আর ইলিশ খাচ্ছেন এবং সেটা ভেজে না দিলে খাচ্ছেন না। এত বাহানা!
প্রোডাকশনের স্বার্থে তাই করার ব্যবস্থা করা হলো। আমরা করতাম কি– শট শুরুর মুহূর্তে কাস্ট বিড়ালকে দেখিয়ে দুধের বাটির মধ্যে ভাজা ইলিশ বা রুইয়ের পিছ ছেড়ে দিতাম। বিড়ালটি সেই বাটিতে মুখ লাগিয়ে জিহব্বা দিয়ে একটু চেটে দুধ কমিয়ে নিত। দুধ কমে এলে ভাজি করা ইলিশ বা রুই মুখের নাগালের মধ্যে আসত, তখন সেই মাছ তিনি খেতেন। এর মধ্যেই আমাদের শট ওকে হয়ে যেত, যদি হিউম্যান বিং ক্যারেক্টারস কোনো ভুলভাল না করত। এভাবেই কাঁটাতে একটি নারী বিড়ালকে আমরা খাইয়ে দাইয়ে নয় মাস পুষেছি। যদিও তিনি এই নয় মাসে আরও ২ ধাপে বাচ্চা পয়দা করেছেন। সব মিলিয়ে এক বিড়ালিনীর জন্যে তার আরও ১৫/১৬টি বাচ্চার খাদ্য খাবার দিয়ে যেতে হয়েছে প্রোডাকশনকে।
এক হুলো বিড়ালকে ঢুঁ মারতে দেখতাম। সেই শালাই আমাদের কাস্ট বিড়ালিনীর সঙ্গে ওইসব করত আর তিনি পোয়াতি হতেন, তিন সাড়ে তিন মাসেই বাচ্চা খালাস করতেন। তবে একবার তিনি বিয়োনোর আগে উধাও হলেন, আমাদের চিন্তা বাড়ল। শুটিং কন্টিনিউ হবে কী করে?
শুভ বাইরে যোগাযোগ করে, কাস্ট বিড়ালের গায়ের রং, সাইজ মিলিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিচড়িয়ে আরও দুটি বিড়াল ম্যানেজ করে আনল। তার মধ্যে এক বিড়ালের মালিক এলেন, তিনি তরুণী। তার বিড়ালটি আজিজ ব্যাপারির বাড়িতে ঝাঁপি খুলে দিতেই একটি পরিত্যাক্ত স্টোর রুমে আত্মগোপন করল দেখে সেই তরুণী হাউমাউ করে কান্নাকাটি শুরু করেন। জানলাম, শুটিংয়ে আনা বিড়ালটি তার নাতনি। কান্নাকাটি দেখে মেয়েটিকে বললাম, আপনি বিয়ে করেছেন?
না, তিনি বিয়ে না করলেও তার নাতনি হচ্ছে শুটিংয়ের লোকজন দেখে পালানো বিড়ালটি। পরে অবশ্য নাতনিকে উদ্ধার করে তিনি চলে গেলেন এবং আমরা আবার কাস্ট বিড়ালের চিন্তায় পড়ে যাই। আবার আমি চাচ্ছিলাম, কবুতরগুলো ছাদ থেকে উঠোনে বা পাতকুয়া পর্যন্ত আসুক, কিন্তু বিড়াল থাকায় কবুতরগূলো ঠিকঠাক শটের আওতায় আসছিল না। কদিন পর আবার দেখি, আমাদের সেই স্টার বিড়াল এসেছে। সঙ্গে নতুন জন্মানো কয়েকটা বাচ্চা। কিন্তু বিয়োবার ঝক্কিতে স্বাস্থ্যহানি ঘটেছে। তাকে আবার ইলিশ-রুই দিয়ে স্বাস্থ্য আগের জায়গায় নেবার প্রচেষ্টা চলল।

এভাবেই, কাঁটার চিত্রনাট্য অনুযায়ী পরস্পর সাংঘর্ষিক বিড়াল ও কবুতর উপস্থিত করতে চেয়েছি আমরা। এবং শেষ পর্যন্ত, আজিজ ব্যাপারির কারসাজিতে এই নারী বিড়ালকে এক লোক ধরে নিয়ে গিয়ে নদীর ওপারে ফেলে আসলেও দেখা যাবে, পরদিন তিনি আবার হাজির। স্বপ্না তাকে বাটি ভরে দুধ খেতে দিয়েছে। যে লোক বিড়াল বস্তায় ভরে নিয়ে নদীর ওপারে ফেলে দিতে যায়, তার নাম অ্যালান পো। তিনিই কি এডগার অ্যালান পো? ঠিক জানি না আমরা, তবে কাঁটার অ্যালান পো’র একটি বাইসাইকেল আছে।
আর বিড়ালটি কি সেই মিথ, সেই লৌকিক দুঃখের মতোন, যাকে ফেলা যায় না। এমনকি বহুদূরে নদীর ওপারে ফেলে দিয়ে এলেও সে ঠিকই পরদিন আবার চলে আসে, বারান্দায় মিউ মিউ করে!
পুরান ঢাকার ৩৬ নম্বর ভূতের গলির আজিজ ব্যাপারির বাড়িতে গ্রাম থেকে আসে সুবোধচন্দ্র দাস ও তার স্ত্রী স্বপ্নারানী দাস। তারা বাড়ির পাতকুয়ার মধ্যে একদিন মরে যায়। বেশ কিছু বছর পর আবার একজোড়া স্বামী-স্ত্রী আসে এই একই বাড়িতে, তাদেরও একদিন লাশ তোলা হয় কুয়ো থেকে। আবার আসে সুবোধ-স্বপ্না। কেন আসে? মনে হয়, দুঃখ-বিড়াল সব জানে…
২৯ মে, ২০২০
ফিল্মটি কবে থেকে দেখার জন্য বসে আছি।টোকন দা দেখাচ্ছেনা।