মূল । ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ
অনুবাদকের নোট
ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি [১৯৪১-১৯৯৬]। পোলিশ মাস্টার ফিল্মমেকার। সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম কিংবদন্তি ও স্বকণ্ঠী কারিগর। তার ফিল্মের মধ্যে রয়েছে ‘ডেকালগ’ [১০ পর্ব], ‘থ্রি কালারস’ ট্রিলজি, ‘দ্য ডাবল লাইফ অব ভেরোনিকা’, ‘ব্লাইন্ড চান্স’, ‘নো এন্ড’, ‘অ্যা শর্টফিল্ম অ্যাবাউট কিলিং’, ‘অ্যা শর্টফিল্ম অ্যাবাউট লাভ’ প্রভৃতি। তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন কি না, তা জানা যায়নি। তবে প্যারিসে ব্যস্ত একদিনের এই দিনলিপি পাওয়া গেল তার আত্মস্মৃতিমূলক “আ’ম সো-সো” গ্রন্থে…

রাত ১:১৫
স্ত্রী, কন্যা আর আমাদের কুকুরটিকে সঙ্গে নিয়ে, বাইরে থেকে একটু ঘুরে এলাম। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একটি ছোট্ট ক্যাফেতে বসেছিলাম। ১টার পর পর যখন আমরা ক্যাফেটি থেকে বেরিয়ে আসছি, সেখানে একটা সিটও খালি ছিল না।
রাত ১:২০
কম্পোজার জিবিগনিউফ প্রাইসনারকে ফোন করলাম। কাল বিকেলে ভারসাভা থেকে [এখানে] এসেছেন তিনি। কাল সকালে আমরা থ্রি কালারস-এর ব্লু সিনেমাটির ‘ডার্টি’ ভার্সনটি দেখব।
সকাল ৭:৪৫
প্রথমবারের মতো অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে ওঠল।
সকাল ৭:৫০
দ্বিতীয়বারের মতো অ্যালার্ম ঘড়ি বেজে ওঠল।
সকাল ৭:৫৫
তৃতীয়বারের মতো অ্যালার্ম বেজে ওঠল, তবে এবার আমার [হাতের] ঘড়ির অ্যালার্ম। গোসল করলাম। গত রাতের ডিনার থেকে বেঁচে যাওয়া ঠাণ্ডা মাংসের ফালির রোল দিয়ে নাস্তা সারলাম। খাবারটা এভাবে আমার ভালোই লাগে।
সকাল ৯:১৫
পার্কিং এরিয়ায় রোমেক গ্রেনেমের সঙ্গে মিটিং; সম্প্রতি এটি প্রাত্যহিক রুটিন হয়ে উঠেছে।

সকাল ৯:৪৫
প্রডিউসার মারিঁ কার্মিৎসের সঙ্গে মিটিং। ব্লুর ছবিগুলো নিয়ে আলাপ হলো আমাদের। কিছু ছবি এখনো প্রোডাকশন টিম হস্তান্তর করেনি বলে আমরা বাছাই করতে পারিনি।
জিবিগনিউফ প্রাইসনার এলেন সকাল ১০টায়। মিউজিক নিয়ে অল্প কিছু গতানুগতিক আলাপ করলাম আমরা, তারপর সিনেমাটি দেখতে শুরু করলাম। সাউন্ডের কাজ শেষ হওয়ার পর সিনেমাটিকে কেমন লাগবে– এ নিয়ে আমার কৌতূহলের শেষ নেই।

ফিল্মমেকার । ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি
বেলা ১১:৫০
প্রোডাকশনটি [দেখা] শেষ হলো। অনেক বেশি সাইড-ইফেক্ট ও অনেক বেশি পারিপার্শ্বিকতা আমরা কমিয়ে ফেলেছি। এ কারণেই সিনেমাটিতে ঠিক কী পরিমাণ মিউজিক লাগবে, সেটি বোঝার জন্য আমরা এই ‘প্রাথমিক প্রদর্শনী’ করলাম।
সাউন্ড রেকর্ডিং শুরু হলে আমরা নেগেটিভটির কিছু অংশ কেটে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রেকর্ডিং শুরু হবে ১৪ তারিখ সকালে।
আমরা ঠিক করলাম, ব্লুতে কনসার্টের দৃশ্যে এলজবিয়েতা তোভারনিচকার কণ্ঠই ব্যবহার করব। দুদিন আগে আমরা আরও দুজন গায়িকার কণ্ঠ রেকর্ড করেছি, তবে প্রথমজনই সেরা।
দুপুর ১২:৩০
ডিনার– সামান্য সালাদ। প্রোডাকশনটি শেষ করার পর থেকে আমি খুব একটা খেতে পারি না। আমি পুরোপুরি বসে পড়েছি।

ফিল্মমেকার । ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি
দুপুর ১:৩০
জ্যাক ভিতার [ফরাসি ফিল্ম এডিটর] সঙ্গে ফাইনাল মাউন্টিং-কারেকশন। ফিল্মশট আর ফার্স্ট সাউন্ড-ভার্সনের এডিট করছি আমরা। এরপর এই এডিটর প্রতিটি দৃশ্যের কারেকশন করবেন; এখানে প্রতিটি অ্যাক্টে ২০টি করে টেপ রয়েছে, সব মিলিয়ে প্রায় ২০টি ‘কাট’ হবে। সিনেমাটির সময়ব্যাপ্তি এক মিনিট কমানো হবে।
ব্লুর এডিটিংয়ে বারবার বিঘ্ন ঘটছে; কারণ, হোয়াইট-এর এডিটর উর্সুলা লেসিয়াক কিছু ঝামেলায় পড়ে বারবার আমাকে জানাচ্ছেন, আগামীকালের জন্য হোয়াইট-এর দ্বিতীয় মাউন্টিং-ভার্সনটির প্রস্তুত করছেন তিনি।
দুপুর ২:৩০ থেকে…
থ্রি কালারস-এ আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট স্তাস লাতেক কানাডা থেকে এসে পৌঁছেছেন। মাউন্টিং-রুমগুলোর মাঝখানের করিডরে আমরা কথা বললাম।
বাসায় একটু পরপর ফোন করলাম। আমার স্ত্রী ও কন্যা সেখানে নেই। আমি চিন্তায় পড়ে গেছি; কেননা, চিত্রনাট্যটির যুগ্মলেখক ক্রিস্তফ পিসেভিচ ভারসাভা থেকে ৬টায় এসেছেন। তার কাছে আমার ফ্ল্যাটের চাবি নেই।
সোয়া ৬টায় ফোন করলাম তাদের। সবাই বাসায় ঢুকেছে।
সন্ধ্যা ৬:৫০
ব্লুর সূচনা ও সমাপ্তি দৃশ্যের এডিটিং শেষ। মিউজিক যথেষ্টই আছে, তবে খানিকটা ছোট করে নিতে হবে। জ্যাক বললেন, বেশিই নাকি ছোট হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, যথেষ্টই আছে।
রাত ৮:০০
আমরা বাসায় ফিরলাম। আগামীকাল হোয়াইট-এর শুটিং চলাকালে সেটির সংলাপগুলোর ভালগার এক্সপ্রেশনগুলোর অনুবাদ রোমেক কী করে করবেন, তা নিয়ে আমরা ভাবছি। দৃশ্যটির প্রেক্ষাপট পোল্যান্ড; এ কারণেই মারিনা ও ফরাসিটির [অভিনেতা] জন্য এটিকে ভাষান্তর করতে হবে।
রোমেক খুবই সংবেদনশীল; এ কারণে তিনি সম্ভবত অরিজিনাল ভালগার ভার্সনটির জায়গায় কোনো বাগধারার আশ্রয় নেবেন। ভালগার এক্সপ্রেশনগুলোর মধ্যে অনেক মিল আছে; আমি নিশ্চিত, রোমেক সেগুলোকে যথার্থভাবেই অনুবাদ করতে পারবেন।

রাত ৮:৩০ থেকে…
ক্রিস্তফ পিসেভিচের সঙ্গে দেখা করতে চাইলেন স্তাসিও লাতেক; এ কারণে আমরা আমাদের ফ্ল্যাটে গেলাম ডিনার করতে। বীন-স্যূপ আর স্ট্রবেরি খেলাম আমরা; দারুণ খাবার।
ভারসাভা থেকে চিত্রনাট্যের কিছু খসড়া নিয়ে এসেছেন ক্রিস্তফ পিসেভিচ। লাতেককে সঙ্গে নিয়ে, ফরাসি ফিল্মমেকার ফ্রান্সি কুজুইয়ের জন্য জন্য এটি তাকে লিখতে হয়েছে। তারা এ নিয়ে আলাপ করলেন। পোল্যান্ড নিয়েও কথা বললেন ক্রিস্তফ।
রাত ১১টার পর স্তাস বাড়ি ফিরে গেলেন। ক্রিস্তফ জানতে চাইলেন, আমি তার লেখা চিত্রনাট্যের খসড়াটি একটু পড়ব কি না। মাত্রা অল্প কয়েকটা পৃষ্ঠা। পড়লাম।
রাত ১১:৪৫
ক্রিস্তফকে হোটেলে নিয়ে গেলাম; খুব একটা দূরে নয়। দারুণ একটা রুম পেয়েছেন তিনি। যেতে যেতে আমরা খসড়াটি নিয়ে আলাপ করলাম।
হোটেলের সামনে, ব্যাকওয়ার্ড ড্রাইভিংয়ের সময়, একটা পাথরে ধাক্কা দিলাম। [গাড়ির] দরজায় একটা ছোট্ট ছিদ্র হয়ে গেল। এটাই জীবন।
রাত ১২:০০
প্লেস দু ক্লিসির সামনে ট্রাফিক জ্যামে আটকে আছি; জানতাম, এমনটাই ঘটবে।
আমি ক্লান্ত।
আমি নিশ্চিত, কালকে তৃতীয় অ্যালার্মটি বাজার পরই ঘুম থেকে উঠব। দিনটিও হবে আজকের দিনের মতোই।