‘অন্তহীন’ চলচ্চিত্রে অপর্ণা সেন কী করে জীবনানন্দের কবিতাকে সুনীলের কবিতা বললেন!

2519

লিখেছেন । পিয়াস মজিদ

আমার মতো অনেকেরই নিশ্চয়ই অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর অন্তহীন [২০০৯] মুভিটা ভালো লেগেছে খুব। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এই বহুখ্যাত মুভিতে একটি ভয়ঙ্কর ভ্রান্তি কারও কানে বিকটভাবে বেজেছে কি না ঠাহর হয় না; হলে এই নিয়ে অনেক লেখালেখি হতো নিশ্চয়ই।

মুভির ২৮-৩০ মিনিটের দিকে এক দৃশ্যে ‘পারুদি’ চরিত্রটি [অপর্ণা সেন] ‘বৃন্দা’ চরিত্রকে [রাধিকা আপ্তে] বলে নিম্নোক্ত কথা ক’টি–

“পৃথিবীতে আদর্শ রিলেশনশিপ বলে কিছু নেই। সেই যে সুনীল গাঙ্গুলির লাইনগুলো আছে না– ‘পৃথিবীতে নাই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি’? দ্যাট হোল্ডস গুড ফর রিলেশনশিপ অ্যাজ ওয়েল।”

অন্তহীন
অন্তহীন
কাস্ট । অপর্ণা সেনরাধিকা আপ্তে
ফিল্মমেকার । অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী

এত বিখ্যাত ও বহুশ্রুত জীবনানন্দের কবিতা-পঙক্তি কোন অদ্ভুত উপায়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হয়ে গেল তা আমার কোনোমতেই বোধগম্য না। হ্যাঁ, হয়তো মুভির সংলাপ-রচয়িতার ভুল এটি; কিন্তু সংলাপটি যিনি আওড়াচ্ছেন তিনি তো আর যেন-তেন কেউ নন; খোদ অপর্ণা সেন– যার প্রজ্ঞার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। হ্যাঁ, সবাই হয়তো জীবনানন্দের সব কবিতা জানবেন না, কিন্তু অপর্ণা সেন? আর যতটুকু জানি, অপর্ণা সেনের মাতা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত জীবনানন্দের পিসতুতো বোন এবং অপর্ণার পিতা প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক ও চলচ্চিত্র-সমালোচক চিদানন্দ দাশগুপ্ত Jibanananda Das [সাহিত্য একাডেমি, দিল্লি, ১৯৭২] শিরোনামে জীবনানন্দ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি বইয়ের লেখকও।

অন্তহীন

উল্লেখিত ভ্রান্তির বিষয়ে আমি ঢাকা ও কলকাতায় চলচ্চিত্র-সংশ্লিষ্ট বহুজনের সাথে কথা বলেছি, এক পত্রিকা থেকে অপর্ণা সেনের ই-মেইল জোগাড় করে মেইলও করেছি; কিন্তু কোনো উত্তর পাইনি বা কেউ-ই আমাকে এই ভ্রান্তির যথোচিত ব্যখ্যা দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে আমি অবশেষে কিছু লিখতে বাধ্য হলাম।

ফিল্মফ্রির পাঠকদের মধ্যে যদি অপর্ণা সেন বা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন কেউ থেকে থাকেন, তাদের প্রতি বিষয়টি সম্মানিত পরিচালক ও প্রিয় অভিনেত্রীর দৃষ্টিতে আনার অনুরোধ জানাই।

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দের সাতটি তারার তিমির বইয়ের সৃষ্টির তীরে কবিতার এই পঙক্তিগুলো ফের ফিরে পড়ি–

‘কূইসলিং বানালো কি নিজ নাম-হিটলার সাত কানাকড়ি
দিয়ে তাহা কিনে নিয়ে হ’য়ে গেল লাল:
মানুষেরি হাতে তবু মানুষ হতেছে নাজেহাল;
পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি।’

Print Friendly, PDF & Email
কবি । ঢাকা, বাংলাদেশ ।। কবিতার বই : নাচপ্রতিমার লাশ; মারবেল ফলের মওসুম; গোধূলিগুচ্ছ; কুয়াশা ক্যাফে; নিঝুম মল্লার; প্রেমপিয়ানো; ক্ষুধা ও রেস্তোরাঁর প্রতিবেশী; নির্ঘুম নক্ষত্রের নিশ্বাস; গোলাপের নহবত; বসন্ত; কোকিলের কর্তব্য

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here