…এবং বেওয়ারিশ: একটি সামাজিক অমীমাংসার দলিল

340

লিখেছেন । নির্তেশ সি দত্ত

…এবং বেওয়ারিশ
…and the unclaimed
ফিল্মমেকার । দেবলীনা
রানিংটাইম । ৬২ মিনিট
দেশ । ভারত
রিলিজ । ২০১৩


...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ
ফিল্মমেকার । দেবলীনা

প্যানসেক্সচুয়ালিটি একটি অতিসাম্প্রতিক ধারণা। সঙ্গীর জেন্ডার, সেক্সচুয়ালিটি এসব পরিচিতি বিবেচনায় না এনে যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় সেটাই প্যানসেক্সচুয়ালিটি। অপরদিকের মানুষটির জেন্ডার বা ভিন্ন যৌনরুচির প্রতি পারস্পরিক সহানুভূতি আর শ্রদ্ধাবোধের উপর এই সম্পর্কটি গড়ে ওঠে। আমাদের সমাজ ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই মুখস্ত জীবন যাপনের বাইরে আরও বৈচিত্রময় যৌনরুচির জীবন থাকে তো, যেসব যৌনতাকে আমরা এক কথায় এলজিবিটি বলি; সেসব জীবন সুষ্ঠু ও নিশ্চিত নিরাপত্তায় যাপন করার ক্ষেত্রে প্যানসেক্সচুয়ালিটি নামের এই মানবিক ধারণাটি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।

#সুতনুকা  বলে, “প্যানসেক্সচুয়ালিটি বলে একটি শব্দ হয়তো ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়…” তাইতো! শব্দটি শুধু ইন্টারনেটেই খুঁজে পাওয়া যায়, এমনকি এখনো ডিকশনারি পর্যন্ত পৌঁছায়নি শব্দটি। অন্তত আমার অক্সফোর্ডে খুঁজে পাইনি। তাইলে এর বাস্তবতা কেমন? রাজনৈতিক আর আর্থসামাজিক বাস্তবতা এমন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট মানুষ তৈরি হতেই দেয় না, যারা সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে জেন্ডার ব্লাইন্ড হবে। অর্থাৎ সঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অপরদিকের মানুষটির যৌনরুচি বা জেন্ডার ম্যাটার করবে না, বরং সঙ্গীর ভিন্ন জেন্ডার বা যৌনরুচির প্রতি সহানুভূতিশীল, শ্রদ্ধাশীল হবে এবং পরস্পর ক্রমশ সঙ্গীর যৌনরুচির প্রতি আকৃষ্ট হবে।

...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ

২০১১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামে দুই তরুণী পরস্পর সামাজিক সিলেবাস বহির্ভূত ভালোবাসাজনিত কারণে সামাজিক ও পারিবারিক নিপীড়নের শিকার হয়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। কলকাতার কাগজে এই খবর বেরোলে মানবাধিকার এক্টিভিস্টরা সেই ঘটনা সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে ছুটে যান নন্দীগ্রামে। সেই ছুটে যাওয়া দলের সহযাত্রী হয়েছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেবলীনা।


একসঙ্গে হাত ধরে ঘাসের উপর
পড়ে থাকা লাশ দুটো তাদের
ভালোবাসার গভীরতাকে
জানান দেয় এবং তাদের
সেই ভালোবাসার
স্বীকৃতি দেওয়া
বা
মেনে
নেওয়ার
মানসিকতা
আজও আমাদের
তৈরি না হওয়াকে
ভীষণভাবে বিদ্রূপ করে

#স্বপ্না ও #সুচেতা নামে দু’জন তরুণী। একই গ্রাম। তারা পরস্পর গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। তাদের গভীর ঘনিষ্ঠতা দেখে পাড়ায় কানাঘুষো শুরু হয়। স্বপ্নার অভিভাবকরা ব্যাপারটি আঁচ করতে পেরে তাকে তড়িঘড়ি করে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের পরেও তাদের ঘনিষ্ঠতার গভীরতা একই রকম রয়ে যায়। তখন তাদের সম্পর্কের বিষয়টি সমাজে এবং তাদের পরিবারে অসহিষ্ণুতার জন্ম দেয়। শুরু হয় তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ, মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার, নিপীড়ন। সমাজের এবং তাদের পরিবারের নিয়মিত নিপীড়ন উভয়কে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। অসহ্য অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে একদিন তারা বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। একসঙ্গে হাত ধরে ঘাসের উপর পড়ে থাকা লাশ দুটো তাদের ভালোবাসার গভীরতাকে জানান দেয় এবং তাদের সেই ভালোবাসার স্বীকৃতি দেওয়া বা মেনে নেওয়ার মানসিকতা আজও আমাদের তৈরি না হওয়াকে ভীষণভাবে বিদ্রূপ করে। আত্মহত্যার আগে লিখে রেখে যায় সুইসাইড নোট; যেখানে গভীর বেদনার সাথে বিস্তৃত হয়ে থাকে তাদের ভালোবাসার প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আর নিপীড়ন।

...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ

এই ঘটনাকে উপজীব্য করে #এবং_বেওয়ারিশ#and_the_unclaimed‘ নামে গভীর এক সংবেদনশীল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন এই সময়ের মেধাবী ফিল্মমেকার দেবলীনা। কেন এই নামকরণ? রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক পরিবেশ, সর্বত্রই জীবনকে একটি ধরাবাঁধা নিয়মের পথে যাপন করতে বাধ্য করা হয়। সেই পথের একটু এদিক সেদিক হলেই এসব প্রতিষ্ঠানসমূহ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ব্যতিক্রমকে তারা বিশৃঙ্খলা মনে করে এবং স্বাভাবিক ঘটনাটিকে ভিকটিমাইজড করে দেয়। অতঃপর শুরু হয় নানাবিধ মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন। ভিকটিমকে আত্মহত্যায় প্ররোচনাসহ তাকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাকে সম্পূর্ণ একা, অনাত্মীয় করে ফেলে। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারে তাকে সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় হিসেবে উপস্থাপন করে যাতে ভিকটিম যাবতীয় যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে জীবন প্রত্যাহার করে নিলে তার লাশটিকে অতি সহজেই বেওয়ারিশ ঘোষণা করা যায়। এই ঘোষণার মধ্যদিয়ে সমাজের ওইসকল মানুষকে হুশিয়ার করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত এই যে বেওয়ারিশ করে দেওয়া, বেওয়ারিশ করে দেওয়ার কারণ এবং বেওয়ারিশ করে দেওয়ার এই যে প্রক্রিয়া- সেটাই নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন দেবলীনা তাঁর …এবং বেওয়ারিশ চলচ্চিত্রে। আর এই কারণেই চলচ্চিত্রটির এ নামকরণ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।

রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো, পারিবারিক পরিবেশ; কোথাও তাদের আশ্রয়ের জায়গাটি রাখা হয়নি। যৌনরুচির বৈচিত্রতা রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির কাছে অসুস্থতা, অ্যাবনরমালিটি। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে তারা সে অসুখ সারিয়ে তুলতে চান। আমরা যেক’জন মানবিকতা চর্চা করি; যৌন অধিকার বঞ্চিত মানুষের প্রতি আমাদের সহানুভূতির দাবিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধির কাছে শুধুই ‘আঁতলামী’। এটা হতাশাজনক। ভিন্ন যৌনরুচির বলে তাদের প্রতি সংবেদনশীলতার বদলে রাষ্ট্রের এমন দৃষ্টিভঙ্গি কাম্য নয়। কারণ, কে কাকে ভালোবাসবে– রাষ্ট্র বা সমাজ তা নির্ধারণ করে দেওয়ার অধিকার রাখে না।

...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ

এক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিগণ এসব ব্যতিক্রম বিষয়কে সামাজিক বিশৃঙ্খলা মনে করেন। তাইজন্য ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা ধামাচাপা দিতে তারা ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কারণ এসব ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতির পেছনে কলকাঠিগুলো তো তারা-ই নাড়েন। সামাজিক চাপে ঠিকঠাক না হলে ভিকটিমকে নগ্ন করে জনসম্মুখে তার জননাঙ্গ প্রদর্শন করাতেও দ্বিধা করেন না এরা। অর্থাৎ ভিকটিমকে আত্মহত্যার দিকেই ঠেলে দেন এবং বেওয়ারিশ ঘোষণার আয়োজন সম্পন্ন করেন। পরিণতি ওই একটা-ই।

পরিবারগুলোর নির্মমতাও বর্ণনাতীত। ছেলেদের যৌনরুচির ভিন্নতা বুঝতে পারলে তাদের ঠিক করে দেওয়ার কৌশল হিসেবে সমাজসিদ্ধ যৌনরুচির কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন। অভিভাবকগণ মনে করেন, বিয়ে হলে পরে তার ব্যতিক্রম যৌনরুচি সমাজসিদ্ধ যৌনরুচিতে পরিণত হয়ে যাবে। বিষয়টি তো বদলে যাওয়ার নয়। কাজেই উল্টোটিই ঘটে। ততোধিক জনের জীবন বিপর্যস্ত, বিনষ্ট হয়। আর মেয়েদের বেলায় বিয়েতে আগ্রহী করার জন্য চালানো হয় যৌননির্যাতন। পরিবারের লোকজন মনে করে ব্যতিক্রম যৌনরুচির মেয়েদের যৌনক্রিয়ার ঘটানোর মাধ্যমে তারা নির্ধারিত নিয়মের পথে চলে আসবে। এক্ষেত্রে জন্মদাতা, এমনকি সহোদর ভাইদের দ্বারাও ব্যতিক্রম যৌনরুচির মেয়েটি নিয়মিত ধর্ষণের শিকার হয়। তাতে কী ঘটে? মেয়েটির বেঁচে থাকাটা ফুরিয়ে যায়! জীবন প্রত্যাহার করে নেওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার থাকে না।

...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ

এই চলচ্চিত্রযাত্রায় দেবলীনা তুলে ধরেছেন আরও চারজন ভিন্ন যৌনরুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। ঠিক সম্পূর্ণ বিকশিত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হয়ে ওঠতে না পারা সমাজে অগুনতি ব্রাত্যগণের মধ্যে চারজন। আলাদা যৌনরুচি নিয়ে তাদের প্রত্যেকেরই একটি করে গল্প আছে। কিন্তু তাদের বেদনা, লাঞ্ছনা আর নিপীড়নের গল্পগুলি একদম এক। তাদের দুঃখের সুরগুলি কোথাও এসে যেন কোরাস হয়ে ওঠে! কেউ-ই তাদের বেদনাটি, যৌন অধিকারের বিষয়টি বুঝতে চায় না। না পরিবারের লোকজন, না বাইরের লোকজন। মা বাবা ভাই বোন বন্ধু স্ত্রী পুত্র কন্যা আত্মীয় অনাত্মীয়, কেউ না। কারও কাছেই তাদের জন্য কোনো সহানুভূতি অবশিষ্ট নেই, কোনো আশ্রয় নেই। এই অভাব জীবনের প্রতি তাদের বীতশ্রদ্ধ করে তোলে, মরে যেতে ইচ্ছে করে। তারা সকলেই সুইসাইডাল টেন্ডেনসিতে ভুগতে থাকে। প্রতিনিয়ত নিজেদের মৃত্যু কামনা করে যায়। এই আত্মহত্যার বিষয়টি তাদের ফ্যান্টাসি নয়, গভীর বেদনা হিসেবেই দেখা দেয়।


তেরো থেকে
বিয়াল্লিশ বছরের
চেষ্টায়ও স্বরূপ কিন্তু
নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলতে
পারেননি, সমাজসিদ্ধ হতে পারেননি

পর্দায় আমরা দেখতে পাই, একজন #বনানী, যিনি ৩৪ বয়সেই সফল ফ্যাশন ডিজাইনার। বন্ধুহীন বনানীকে তার বাবা ত্যাজ্য করেছেন, সকল উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন একমাত্র তার যৌনরুচির ভিন্নতার কারণে। তার সাথে যার প্রেম ছিল সেই মেয়েকে তার সহোদর ভাই আর কাকাতভাই নিয়মিত উপর্যুপরি ধর্ষণ করে তার যৌনরুচি পালটে দেওয়ার পরিবর্তে তার আত্মহত্যার প্ররোচনায় সফল হয়। #স্বরূপের বয়স ৪২ আর তিনি পেশায় একজন জীবনবীমা এজেন্ট। খুব ছোটবেলা থেকেই মা-বাবা তার যৌনরুচির ভিন্নতার বিষয়টি বুঝতে পারলেও তারা ধরেই নিয়েছিলেন এবং তার বিয়াল্লিশ বছর বয়সেও একই ধারণা পোষণ করেন যে, এটি বিশেষ কোনো বিষয় নয় এবং সামান্য চেষ্টাতেই তা থেকে সমাজসিদ্ধ স্বাভাবিক যৌনরুচিতে ফিরে আসা সম্ভব। কাজেই প্রথম যৌবনেই তাকে সমাজসিদ্ধ যৌনরুচিসম্পন্ন এক মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন তার বাবা-মা। দাম্পত্য জীবনে এক সন্তানের বাবা হলেও তারা সকলেই ভীষণভাবে অসুখী। তার স্ত্রী চরমভাবে তার উপর বিরক্ত। এমনকি, তার সাথে সম্পর্কটিই তার স্ত্রী অস্বীকার করেন যা শুধু তার সন্তানের বড় হওয়ার জন্য এখনো ধরে আছেন মাত্র। তেরো থেকে বিয়াল্লিশ বছরের চেষ্টায়ও স্বরূপ কিন্তু নিজেকে পাল্টিয়ে ফেলতে পারেননি, সমাজসিদ্ধ হতে পারেননি। তার কেবলই নিজের মেয়ের মা হতে ইচ্ছে করে।

সুতনুকা ৩১ বছরের ছাত্রী। মেঘের মতো ভাসতে, পাহাড়ের নীলে হারিয়ে যেতে, ঢেউয়ের মতো মিলিয়ে যেতে তার ভীষণ ইচ্ছে করে। সোসাইটির ধরাবাঁধা নিয়মে কেবল বাক্স-বাক্স-বাক্সবন্দী হয়ে জীবনযাপন তার ভালো লাগে না। তার কথাগুলো শুনতে শুনতে পিট সিগারের সেই লিটল বক্সেস গানটা মাথার ভেতর বারবার বেজে ওঠে। তারপর আরেকজন, প্রায় প্রৌঢ় ভদ্রমহিলা, তাঁর নামটি এখন মনে পড়ছে না, যিনি ৩৭ বছর বয়সে আবিষ্কার করেন যে, তিনি একটি মেয়ের গভীর প্রেমে পড়েছেন এবং ওই মেয়েকে ছাড়া তিনি বাঁচবেন না। তিনি হয়তো সমাজের উঁচুতলার অধিবাসী, কিন্তু তার বেদনার, লাঞ্ছনার জায়গাটি স্বপ্না-সুচেতা বা বনানী স্বরূপ সুতনুকার চেয়ে আলাদা কিছু নয়।

...এবং বেওয়ারিশ
…এবং বেওয়ারিশ

ফিল্মটি শুরু হয়েছে কান্না দিয়ে, শেষও হয়েছে কান্নাটা রেখে দিয়ে। শুরুতেই আমরা বনানীর বোবা কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই নির্জন একটা বন্ধ ঘরের ভেতর। বনানীর মুখটা দেখা যায় না, গভীর বেদনার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা তার কান্না শোনা যায়। শটের পরতে পরতে বনানীর কান্না মিশে যায় স্বপ্না-সুচেতা আর স্বরূপ-সুতনুকা কান্নায়। পরিচালক তাদের কান্নার শব্দটি, বুকের গভীর থেকে বেরিয়ে আসা চিৎকারটি শেষদৃশ্যের শেষেও রেখে দিয়েছেন, ছড়িয়ে দিয়েছেন দর্শকদের বোধের ব্যারিকেডের ভেতর। এই কান্না, বুকফাটা চিৎকার রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, পরিবারে কাছে এক মানবিক আবেদন হিসেবে ধরা দিয়েছে, যে মানবিক আবেদনটি নিপূণ দক্ষতায় দর্শকের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন পরিচালক দেবলীনা।

আত্মহত্যার আগে স্বপ্না-সুচেতার লিখে রেখে যাওয়া চিঠিটি দিয়ে পরিচালক তার গল্প বলার ভিত তৈরি করেছেন। প্রত্যেকটি চরিত্রকে সেই ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়ে সহানুভূতির মানবিক বোধ জাগিয়ে তুলেছেন। গল্প বলার এ কৌশলটি ফিল্মটিকে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ফিল্মের লোকেশন নির্বাচন আর সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারণ লেগেছে। মিউজিক বা শব্দ সংযোজনে পরিচালকের পরিমিতিবোধ মুগ্ধ করেছে। ফিল্মের গল্পটির সাথে সঙ্গীতের তেমন যোগ নেই তাই এর সিংহভাগ সঙ্গীতবিহীত শুধু অ্যাম্বিয়েন্স দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছে। মাঝে মাঝেই আকাশের মেঘ, বৃষ্টি- তার ঘ্রাণ রেখে গেছে রূপালী পর্দায়। রঙের সমন্বয় ভালো লেগেছে তবে আলোক সমন্বয়ের অভাব কিছুটা রয়ে গেছে।

পৃথিবীখ্যাত দশটি’রও বেশি আন্তর্জাতিক ফেস্টিভ্যালে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে এবং ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। এবার ঢাকায় ‘বন্ধু সোসাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র আয়োজনে বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে গত ২৭-২৯ মার্চ তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠিত রিজিওনাল আর্ট ও ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ‘রিইনকার্নেট ২’-এ ২৯ মার্চ প্রদর্শিত হয়েছে দেবলীনা নির্মিত …এবং বেওয়ারিশ

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here