অরসন ওয়েলসের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার [৩/৫]

240

সাক্ষাৎকার । কেনেথ টাইনান
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ

অরসন ওয়েলস [৬ মে ১৯১৫–১০ অক্টোবর ১৯৮৫]। আমেরিকান মাস্টার ডিরেক্টর ও অভিনেতা। থিয়েটার, রেডিও ও সিনেমা– তিন মাধ্যমেই সৃজনী শিল্পগুণের কারণে তিনি বিখ্যাত। তার ‘সিটিজেন কেইন’কে অনেকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে গণ্য করে…

আগের কিস্তি পড়তে, এই বাক্যে ক্লিক করুন


তৃতীয় কিস্তি

কেনেথ টাইনান
কাইয়্যে দু সিনেমাসহ [ফিল্ম জার্নাল, ফ্রান্স] সিনেমার আভাঁ-গার্দ সিনে-সাক্ষাৎকারগুলোতে আপনার ওপর প্রচুর পরিমাণ জায়গা ও সময় অপব্যয় করা হয়েছে। এইসব জার্নালের প্রতি ‘ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ’ ফিল্মমেকারেরা এত বেশি বিমুগ্ধ কেন বলে আপনি মনে করেন?

অরসন ওয়েলস
তাদের কাজ দেখার আকাঙ্ক্ষা আমি রাখি! এগুলোর বেশিরভাগই আমি মিস করেছি; কেননা, আমার ভয় লাগে, যদি কোনো প্রভাব আমার ভেতর পড়তে শুরু করে! যখন আমি সিনেমা বানাই, তখন সেটিকে অন্য কোনো সিনেমার সঙ্গে তুলনা করতে পছন্দ করি না; সবকিছু প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করছি– এমনটা ভাবতেই ভালোলাগে আমার। সিনেমা সম্পর্কে সামগ্রিকভাবে কথা বলেছি আমি কাইয়্যে দু সিনেমায়; কেননা, তারা আমার সিনেমা পছন্দ করেন– এ বিষয়টি আমাকে খুব খুশি করেছে। তারা যখন দীর্ঘ কোনো বিদ্বান ধরনের সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন, তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে মন সায় দেয়নি আমার। কিন্তু এটি একটি পুরোদস্তুর অভিনয়। আমি একজন জোচ্চোর; অথচ আমি ‘সিনেমার শিল্প’ নিয়ে কথা বলি! সিনেমার শিল্প নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে চাই না আমি; তারচেয়ে বরং আমার পক্ষে নগ্ন অবস্থায় টাইমস স্কয়ারের ঠিক মাঝখানে ধরা পড়াও ভালো।

কেনেথ টাইনান
আন্তোনিওনির সিনেমা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

অরসন ওয়েলস
জনৈক তরুণ আমেরিকান সমালোচকের মতে, আমাদের কালের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কারগুলোর একটি হলো একঘেয়েমিতার মূল্যমানকে একটি শৈল্পিক বিষয়বস্তু হিসেবে ধরতে পারা। এ কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে আন্তোনিওনিকে একজন পথিকৃৎ ও প্রতিষ্ঠাতা জনক হিসেবে গণ্য করা উচিত। ফ্যাশন মডেলদের ব্যাকগ্রাউন্ডে তার সিনেমাগুলো নিখুঁত। হয়তো ভোগ-এর [ফ্যাশন ম্যাগাজিন] ব্যাকগ্রাউন্ডগুলোও এতটা ভালো নয়; তবে তা হওয়া উচিত। তাদের উচিত, নিজেদের ডিজাইনের জন্য আন্তোনিওনির দ্বারস্থ হওয়া।

মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি । ফেদেরিকো ফেল্লিনি । ইংমার বারিমন

কেনেথ টাইনান
ফেল্লিনি সম্পর্কে কী বলবেন?

অরসন ওয়েলস
এ সময়ে সিনেমা বানানো যে কারও মতোই তিনি জন্মগতভাবে প্রতিভাবান। তিনি মৌলিকভাবে ভীষণ রকম আঞ্চলিক– এটিই তার সীমাবদ্ধতা, এবং তার জাদুমন্ত্রের উৎসও। তার সিনেমাগুলো ছোট্ট কোনো শহরের বালকের বড় শহরের স্বপ্ন দেখা। তার কাজের পাণ্ডিত্য হলো, এ এমনই একজন মানুষের সৃষ্টি– যিনি এটি যাপন করেন না। তবে অল্প কথায় বললে, তিনি একজন সুমহান শিল্পী হওয়ার বিপজ্জনক ইঙ্গিত রাখছেন।

কেনেথ টাইনান
ইংমার বারিমন?

অরসন ওয়েলস
একটু আগে যেমনটা বললাম, তার আগ্রহের জায়গাগুলো কিংবা তার ঘোরগ্রস্ততাগুলো আমার সঙ্গে যায় না। তিনি আমার কাছে জাপানিদের চেয়েও অনেক বেশি বিদেশি।


আজ থেকে
১০০ বছর পর
হিচককের সিনেমার
প্রতি কারও কোনো রকম
আগ্রহ থাকতে পারে– এ কথা
আমি সত্যিকারঅর্থেই বিশ্বাস করি না

কেনেথ টাইনান
সমকালীন আমেরিকান ফিল্মমেকারদের সম্পর্কে কী বলবেন?

অরসন ওয়েলস
পুরনো মাস্টারদের কথা যদি বাদ দিই, কেবল স্ট্যানলি কুব্রিক ও রিচার্ড লেস্টারের আমার মনে আবেদন তৈরি করেন। পুরনো বলতে আমি বোঝাচ্ছি জন ফোর্ড, জন ফোর্ড এবং জন ফোর্ড। আলফ্রেড হিচকককে আমি আমেরিকান ফিল্মমেকার মনে করি না, যদিও তিনি হলিউডে এতগুলো বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তাকে আমার কাছে একেবারেই এডগার ওয়ালেসের ঐতিহ্য অনুসারে ভীষণ রকমের ব্রিটিশ বলে মনে হয়; এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তার কাজ সম্পর্কে সবসময়ই অকল্পনীয় কিছু চালু থাকে; তার কৌশলগুলো কৌশলই রয়ে যায়– তা সেগুলো কতটা দুর্দান্তভাবেই ধারণ ও প্রয়োগ করা হোক না কেন। আজ থেকে ১০০ বছর পর হিচককের সিনেমার প্রতি কারও কোনো রকম আগ্রহ থাকতে পারে– এ কথা আমি সত্যিকারঅর্থেই বিশ্বাস করি না। ফোর্ডের ক্ষেত্রে, আপনার মনে হবে, সিনেমা যেন একটি বাস্তব জগতের মধ্যেই জীবনযাপন করে ও নিঃশ্বাস নেয়; এমনকি সেটি মাদার মাচরির [জন ফোর্ড; ১৯২৮; নির্বাক সিনেমা] ক্ষেত্রেও খাটে। অন্যদিকে, হিচককের দুনিয়াটি ভূত-প্রেতে ভরা।

কেনেথ টাইনান
১৯৪০ সালে আপনি যখন প্রথমবার হলিউডে এলেন, বড় স্টুডিওগুলো তখনো প্রবল পরাক্রমশালী ছিল। আপনার কি মনে হয়, ২০ বছর পর, ইনডিপেনডেন্ট প্রোডাকশনের যুগে এলেই বরং ভালো করতেন আপনি?

অরসন ওয়েলস
বরং তার উল্টোটি মনে হয় আমার। যখনই পৌঁছেছি আমি, তখনই হলিউড আমার কাছে মরে গেছে। আরও আগে যদি সেখানে আসতে পারতাম– স্রষ্টার কাছে এ কামনাই করেছি। ইনডিপেনডেন্টের আবির্ভাব ছিল ফিল্মমেকার হিসেবে আমার পতন। পুরনো স্টুডিও কর্তাগণ– জ্যাক ওয়ার্নার, স্যাম গোল্ডওইন, ড্যারিল জ্যানুক, হ্যারি কন– এরা প্রত্যেকে ছিলেন বন্ধু, নয়তো বন্ধুবৎসল শত্রু; তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়া করতে হবে, আমার তা জানা ছিল। তারা সবাই আমাকে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। লুইস বি. মায়ার তো আমাকে তার স্টুডিওর প্রোডাকশন চিফ পদে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন– যে চাকরিটি করেছেন ডোর শ্যারি। এই বালকদের সঙ্গে অসাধারণ বোঝাপড়া ছিল আমার। যে মুহূর্তে ইনডিপেনডেন্টরা প্রবেশ করল, তারপর থেকে দৈবক্রমের কথা বাদ দিলে, আর কোনো আমেরিকান সিনেমা আমি কখনোই ডিরেকশন দিইনি। গত পাঁচ বছরে যদি আমি হলিউডে একজন কুমার ও অজ্ঞাত লোক হিসেবে যেতে পারতাম, তাহলে নিজের টিকেট নিজেই পারতাম লিখতে। কিন্তু আমি তো কোনো কুমার নই; নিজেকে নিয়ে প্রচলিত মিথ তো আমাকে ঘিরে থাকেই; আর বড় স্টুডিওগুলোর সঙ্গে যতটা ঝামেলা পোহাতে হয়েছে আমাকে, তারচেয়ে বেশি পোহাতে হয়েছে ইনডিপেনডেন্টদের সঙ্গে।

আমি একজন ভবঘুরে ছিলাম ঠিকই, কিন্তু এ কথার মানে কী– তা স্টুডিওগুলো বুঝত, এবং যখনই কোনো তর্ক বাঁধত, আমরা উভয়পক্ষই সেটি উপভোগ করতাম। প্রতিটি স্টুডিওর বছরপ্রতি ৪০টি সিনেমার মধ্যে, অরসন ওয়েলসের একটি সিনেমার জায়গা নিশ্চয়ই সেখানে ছিল। কিন্তু ইনডিপেনডেন্ট মানে এমন একজন লোক, যার কাজ তার নিজের সবিশেষ প্রতিভাকে ঘিরেই তৈরি হয়। এই বিন্যাসের মধ্যে আমার কোনো জায়গা নেই।

আলফ্রেড হিচকক । স্ট্যানলি কুব্রিক । জন ফোর্ড

কেনেথ টাইনান
সিনেমা কীভাবে ডিরেকশন দিতে হয়– এই শিক্ষা কি পাওয়া সম্ভব?

অরসন ওয়েলস
ওহ, নানাবিধ টেকনিক্যাল শিক্ষা হয়তো পেতে পারেন; ঠিক যেমন আপনি ব্যাকরণ ও অলঙ্কারশাস্ত্রের শিক্ষা দিতে পারেন। কিন্তু লেখালেখি তো আপনি শিখাতে পারবেন না। সিনেমায় ডিরেক্টিং অনেকটাই লেখালেখির মতো ব্যাপার, ব্যতিক্রম বলতে এ ক্ষেত্রে ৩০০ মানুষ ও তারচেয়েও ব্যাপক মাত্রার দক্ষতা নিযুক্ত থাকে। যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডারের ভ‚মিকাতেই অবতীর্ণ হতে হয় একজন ফিল্মমেকারকে। অনুপ্রেরণা জোগানো, আতঙ্কিত করা, উৎসাহ দেওয়া, বলিয়ান করে তোলা ও সার্বিকভাবে কর্তৃত্ব আরোপের একই রকম সক্ষমতা আপনার মধ্যে থাকা চাই। ফলে এটি অংশত ব্যক্তিত্বের একটি প্রশ্ন– যেটি এমনই এক দক্ষতা, যা অর্জন করা মোটেও সহজকর্ম নয়।

কেনেথ টাইনান
আপনার কি মনে হয় যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তুকি দেওয়া কোনো ফিল্মস্কুল থাকলে উপকার হতো?

অরসন ওয়েলস
তারা যদি ফিল্মমেকিং সম্পর্কে ‘কথা’ বলার বদলে বরং সিনেমা ‘বানায়’, এবং সব ক্লাসে যদি তত্ত্ব কপচানোকে অক্ষরে অক্ষরে নিষিদ্ধ রাখা যায়, তাহলে আমি মনে করি একটি ফিল্মস্কুলের পক্ষে বস্তুত ভীষণ মূল্যবান হয়ে ওঠা সম্ভব।

কেনেথ টাইনান
ইউরোপিয়ান বহু দেশে যেমনটা করা হয়, আপনার কি মনে হয় ফিল্ম প্রোডাকশনে গণঅর্থায়নের সাহায্য নেওয়া উচিত?

অরসন ওয়েলস
এ কথা যদি সত্য হয়ে থাকে, আমি অবশ্য এ কথাটি বিশ্বাস করি, যে, থিয়েটার, অপেরা ও মিউজিকের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ভর্তুকি দেওয়া উচিত, সে ক্ষেত্রে সিনেমার ক্ষেত্রেও এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য, এবং তা একটু বেশিমাত্রায়ই। সিনেমা তো সামাজিকভাবে অপেক্ষাকৃত অধিক প্রভাবশালী, এবং বিশ্ব ইতিহাসের এই সবিশেষ মুহূর্তের ক্ষেত্রে এটির আরও বেশি কিছু করার আছে। সবচেয়ে বেশি টাকা সিনেমার পেছনেই খাটানো উচিত। এটির আরও বেশি [টাকা] প্রয়োজন, এবং এটির আরও বেশি কিছু বলার আছে।


বিপ্লব ছাড়া
স্তম্ভ তো গেথে থাকে আর
এক কোণায় পড়ে থেকে ক্ষয়ে যায়

কেনেথ টাইনান
সিনেমার পরবর্তী কোন অগ্রগতি আপনি দেখতে পান?

অরসন ওয়েলস
আমার আশা, এটি বিকশিত ‘হবে’; এই তো। গত ২০ বছরেরও অধিককাল ধরে সিনেমায় কোনো বড় ধরনের বিপ্লব আসেনি; কোনো বিপ্লব ছাড়া স্তম্ভ তো গেথে থাকে আর এক কোণায় পড়ে থেকে ক্ষয়ে যায়। আশা করছি, একটি একেবারেই ব্র্যান্ড-নিউ ধরনের ফিল্মমেকিংয়ের আবির্ভাব ঘটবে। তবে সেটি হওয়ার আগে, সিনেমা নির্মাণের কিছু ফর্মকে আরও বেশি কম-খরচে নির্মাণ ও সেগুলোকে আরও সস্তায় দেখানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। অন্যথায় বড় কোনো বিপ্লবের আবির্ভাব ঘটবে না, এবং সিনেমার শিল্পীরা কোনোদিনই স্বাধীন হবেন না।

কেনেথ টাইনান
বিশ্বব্যাপি বিপণনের মধ্য দিয়ে কোনো সিনেমার পক্ষে ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন?

অরসন ওয়েলস
হ্যাঁ। আর সেটি কোনো একেবারেই বাজে সিনেমাও হতে পারে।

কেনেথ টাইনান
চলুন, থিয়েটার নিয়ে আলাপ করা যাক। পাঁচ বছর আগে আপনি বলেছিলেন, ‘লন্ডন হলো অভিনেতার শহর, প্যারিস নাট্যকারের শহর, আর নিউইর্য়ক ডিরেক্টরের শহর।’ আপনি কি এখনো এ মূল্যায়নের সঙ্গে একমত?

অরসন ওয়েলস
আজকের দিনে আমি বলতে পারি, নিউইয়র্ক ডেভিড মেরিকের শহর। থিয়েটারের বিবেচনায় প্যারিসের প্রতি আসলে আগ্রহের জায়গাটি স্থবির হয়ে গেছে। লন্ডন এখনো অভিনেতাদের জন্য অসাধারণ জায়গা; তবে অভিনেত্রীদের জন্য নয়। ব্রিটিশ থিয়েটার আসলে পুরুষের দুনিয়া। ‘লন্ডন হলো পুরুষের শহর, এখানে বাতাসে ক্ষমতা : প্যারিস নারীর শহর– তার চুলের ফুল সহকারে।’– পুরনো এই ভয়ঙ্কর কবিতাটি কে লিখেছেন– জানি না; তবে এ কথা এখনো সত্য। ইংল্যান্ডে কেউই নারীদের সেরা অংশগুলো নিয়ে লিখেন না।

কেনেথ টাইনান
থিয়েটার ঘিরে আপনার কি কোনো অতৃপ্ত অভিলাষ আছে?

অরসন ওয়েলস
কোনো থিয়েটার স্কুল চালাতে পারলে আমার ভালোলাগত; কিন্তু পারিনি। আমেরিকায় তা পারিনি– এ কথাটি বলতে ভীষণ বেদনা অনুভব করি। বিশেষ করে, নিউইয়র্কে পারিনি। দুই প্রজন্মের আমেরিকান অভিনেতাদের মননে মেথডটি এমনভাবেই গেথে আছে, সেটি থিয়েটারের প্রতি অন্য কোনো মনোভাব তৈরি করতে তাদেরকে ভেতর থেকেই বাধাগ্রস্ত করে। নিউইয়র্ক থেকে মেথডটিকে আমি বের করে দিতে চাই না, তবে আমার আকাঙ্ক্ষা হলো, এটিকে আরেকটু এগিয়ে নিয়ে অভিনয় সম্পর্কে অল্পকিছু আইডিয়া ছড়িয়ে দেওয়া। শেষবার আমি নিউইয়র্কে তা করার চেষ্টা করেছিলাম। খেয়াল করে দেখেছি, কাউকেই এ বিষয়টি একদমই স্পর্শ করেনি।

অরসন ওয়েলস
ম্যাকবেথ
অ্যাকটর ও ফিল্মমেকার । অরসন ওয়েলস

কেনেথ টাইনান
আপনি কি মনে করেন আমেরিকান অভিনেতারা মজ্জাগতভাবেই ক্লাসিক অভিনয়ে অভ্যস্থ?

অরসন ওয়েলস
তাদের তা-ই করা উচিত; কিন্তু বছর পঁচিশ আগে আমরা যখন মার্কুরি থিয়েটার চালাচ্ছিলাম, তখনকার চেয়েও এ কাজটি করতে তারা কম-সক্ষম। এর একটি কারণ হলো, বর্তমান সময়ে নিউইয়র্ক একটি অপেক্ষাকৃত অধিক কসমোপলিটন শহর হয়ে উঠেছে। যখন এটিকে দ্রবণীকরণ পাত্র বলে ডাকা হতো, সে সময়কালেও আমরা একটি দূরবর্তী জায়গা থেকে কথা বলেছি। লোকজন তখনো ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্মের ইউরোপিয়ান; এবং সেখানে একটি নিখাঁদ আন্তর্জাতিকতাবাদের অস্তিত্ব ছিল– যেটির আবির্ভাব গণমাধ্যমের কাছ থেকে ঘটেনি। এটি তো এসেছিল ভারসাভা [পোল্যান্ড] শহরতলিতে জন্ম নেওয়া আঙ্কেল জো’র কাছ থেকে। এখানে বিদেশি ভাষার থিয়েটারগুলো ছিল। বিদেশি ভাষার সংবাদপত্র যে কতগুলো ছিল– জানি না। এ সবই এ মাটিকে উর্বরতায় ঋদ্ধ করেছিল– যেটি এখন অতীত। নিউইয়র্ক হয়ে উঠেছে অনেক বেশি প্রমিত। আজকাল এ আইরিশীয়তা, ইহুদীয়তা, ওয়াসপ [ডব্লিউএএসপি : হোয়াইট অ্যাংলো-স্যাক্সন প্রোটেস্ট্যান্ট; যুক্তরাষ্ট্রীয় সবিশেষ নৃগোষ্ঠী] ও ইত্যকার উকুনের সঙ্গে এক ধরনের ম্যানহাটন ককটেলের সংমিশ্রণ যেন। আর এটিই আপনার আধুনিক নিউইয়র্কবাসী– তা আপনার দাদা-নানা যেখান থেকেই আসুন না কেন; সে [আধুনিক নিউইয়র্কবাসী] হয়তো স্রেফ একজন ভালো মানুষ, কিন্তু তার মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই।


কেনেথ টাইনান
[২ এপ্রিল ১৯২৭–২৬ জুলাই ১৯৮০]
লেখক ও সমালোচক । যুক্তরাষ্ট্র

উৎস ।। প্লেবয় ম্যাগাজিন । ১৯৬৭
অনুবাদটির প্রথম প্রকাশ ।। ইত্তেফাক ঈদ ম্যাগাজিন । ২০১৮

পরের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন…

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

2 মন্তব্যগুলো

Leave a Reply to অরসন ওয়েলসের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার । কিস্তি ২:৫ | ফিল্মফ্রি

Please enter your comment!
Please enter your name here