‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এবং মনি কাউলের তাত্ত্বিকালাপ

1365
তিতাস একটি নদীর নাম

সাক্ষাৎকার । নাসরীন মুন্নি কবির
অনুবাদ । স্বজন মাঝি


অনুবাদকের নোট

ঋত্বিক ঘটক, দুনিয়াখ্যাত এক বাঙালি চলচ্চিত্র প্রণেতার নাম। চলচ্চিত্রে ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক প্রণয়ন করে তিনি বিশ্বচলচ্চিত্র ইতিহাসে স্বনামধন্য। তার চলচ্চিত্রে ‘অতিনাটকীয়’ উপাদানের উপস্থিতি তাকে কিংবদন্তি করেছে। নির্মাণের নিজস্বতায়, তিনি বাংলা এবং ভারতীয় চলচ্চিত্রকে এক নতুন দিগন্তে উদ্ভাসিত করেছেন।

মনি কাউল, দুনিয়াখ্যাত আরেকজন ভারতীয় চলচ্চিত্রকার। পুনে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে ঋত্বিক ঘটকের সরাসরি সান্নিধ্য পেয়েছেন। পরে নব্য ভারতীয় ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ২০০৬ সালে, তিনি ইংল্যান্ডের চ্যানেল ফোর টিভিতে ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম প্রসঙ্গে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছেন।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন চলচ্চিত্র সমালোচক ও নির্মাতা নাসরীন মুন্নি কবির। নাসরীন মুন্নি কবির দীর্ঘদিন ধরে চ্যানেল ফোর-এ ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে কাজ করছেন। এই সাক্ষাৎকারে চলচ্চিত্রের ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক, ‘নাটকীয়’ আঙ্গিক এবং ‘অতিনাটকীয়’ আঙ্গিক নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তাত্ত্বিক আলোচনা উঠে এসেছে। এই আলোচনা সংগঠিত হয়েছে ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রকে ঘিরে।

তিতাস একটি নাদীর নাম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র। এটি ১৯৭৩ সালে অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস অবলম্বনে পূর্ব বাংলার লৌকিক প্রেক্ষাপটে নির্মিত। চলচ্চিত্রটি ঘিরে গুরুত্বপূর্ণ এই সাক্ষাৎকারটি স্ক্রল ডট ইন অনলাইন জার্নালের ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর করা হলো, এখানে।


মনি কাউল

সাক্ষাৎকার

নাসরীন মুন্নি কবির
মনি, আপনি জানেন মানুষজন চলচ্চিত্রে ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক, বিশেষ করে ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্রকর্মের ‘মহাকাব্যিকতা’ নিয়ে কথা বলে। কিন্তু অনেকেরই ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। একটু সহজভাবে বুঝিয়ে বলবেন, ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম-এ ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে?

মনি কাউল
এটা সহজভাবে বলা মুশকিল, তবে চেষ্টা করতে পারি। মন দিয়ে লক্ষ্য করুন, চলচ্চিত্রচর্চায় যেমন ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকের ব্যবহার রয়েছে, তেমনি অন্যদিকে আছে ‘নাটকীয়’ আঙ্গিক। তাই ‘মহাকাব্যিকতা’ বুঝানোর আগে চলচ্চিত্র আঙ্গিকের ‘নাটকীয়তা’ সম্পর্কে বলা প্রয়োজন। দুনিয়াতে নামকরা নির্মাতাদের চলচ্চিত্র বলেন কিংবা হলিউডি চলচ্চিত্র বলেন– এসবের শতকরা নিরানব্বই ভাগই মূলত ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকে নির্মিত হয়। এই ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের চলচ্চিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন, এই চলচ্চিত্রগুলো একটি সুনির্দিষ্ট ফলাফল বা পরিণতির দিকে ধাবিত।


‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের চলচ্চিত্র
শেষ পর্যন্ত পরিসমাপ্তির
দিকে ধাবিত
হতে বাধ্য

এসব ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের চলচ্চিত্রগুলো মনস্তাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বা সামাজিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী হতে পারে কিংবা নিতান্ত আখ্যানধর্মী হতে পারে– যা-ই হোক না কেন, এগুলো নিছক ‘রোমাঞ্চকর’ হয়ে থাকে। এছাড়া ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বা দুর্দান্ত কৌতুকপূর্ণ বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ ধারার হোক না কেন, আবারও বলছি যা-ই হোক না কেন, একটি ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের চলচ্চিত্র শেষ পর্যন্ত পরিসমাপ্তির দিকে ধাবিত হতে বাধ্য। সুতরাং এর চরিত্রসমূহ কিংবা আখ্যানের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব থাকে, তা অবশ্যম্ভাবীভাবে একটা সমাধানের দিকে এগিয়ে যায় এবং সবকিছু একীভূত হয়ে এক ধরনের উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সবশেষে সকল দ্বন্দ্বের এক রকমের মীমাংসা হয়। তাই এ ধরনের চলচ্চিত্র কাহিনিপ্রধান; এখানে ঘটনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে, ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের ঘটনা একদিকে ধাবিত না হয়ে উম্মুক্ত দৃষ্টিকোণে ধাপে ধাপে সম্প্রসারিত হয়; এখানে কাহিনি বা ঘটনার গুরুত্ব সীমিত। এ ধরনের চলচ্চিত্র চরিত্রনির্ভর হওয়ার চেয়ে প্রকৃতি, ইতিহাস অথবা চিন্তানির্ভর হয়ে থাকে। এখানে শুধু সমাজচিত্রের বর্ণনা থাকে না, তারচেয়ে বেশি সময়কালের অন্তর্নিহিত দর্শন থাকে। তাই তো এ ধরনের চলচ্চিত্রে ঘটনা প্রবাহ প্রচলিত ধারায় আগায় না। এখানেও গল্পই বলা হয়; কিন্তু সে গল্প একমুখী না হয়ে বিভিন্ন ধাপে পারস্পরিক সংমিশ্রণে নানা দিকে ছড়িয়ে পড়ে, কখনও কখনও অনেকটা উচ্চকিত ভঙ্গিতে।

তিতাস একটি নদীর নাম
তিতাস একটি নদীর নাম
ফিল্মমেকার । ঋত্বিক ঘটক

নাসরীন মুন্নি কবির
ব্যাপারটি তিতাস একটি নদীর নাম-এ কীভাবে ঘটেছে, যদি একটু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলতেন…

মনি কাউল
তিতাস একটি নদীর নাম-এ দেখবেন, নদীতে ভেসে বেড়ানো নৌকার দৃশ্য, বৃষ্টির নৈসর্গিক দৃশ্য, নানা রকম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং পৌরাণিক মাতৃরূপের উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। এই চলচ্চিত্রের ঘটনাক্রম যদি দেখি, কবরী অভিনীত নববিবাহিতা প্রধান চরিত্রটি নিজ গ্রাম হতে স্বামীর সাথে নৌকায় করে স্বামীর গ্রামে যাচ্ছিল। পথে নৌকাটিতে ডাকাত হানা দেয়। কবরী পানিতে ঝাঁপ দেয়। পরে নদীর পাড় থেকে জেলেরা তাকে উদ্ধার করে স্বামীর গ্রামেই নিয়ে আসে। এ সময় জেলেরা অচেনা এই নারীকে ‘ভগবতী’ নামে সম্বোধন করে। এতক্ষণ পর্যন্ত চলচ্চিত্রটি স্বাভাবিক আট-দশটা গল্পের নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছিল, কিন্তু বাংলার লোক-সমাজে ‘ভগবতী’ নামটির একটি পৌরাণিক ও দার্শনিক মানে আছে। এই সম্বোধনের মধ্যে এক ধরনের চিন্তার বীজ অন্তর্নিহিত আছে– যা চলচ্চিত্রটিকে ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকের দিকে ধাবিত করে এবং চলচ্চিত্রের আখ্যান সহজ গল্প বর্ণনরীতি থেকে জটিল বর্ণনরীতিতে জড়িয়ে পড়ে।

আমরা খুব সৌভাগ্যবান, কারণ ভারতীয় মূলধারার চলচ্চিত্রেও এ ধরনের ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকের চর্চা রয়েছে। অবশ্য কেবলমাত্র গল্প ব্যতীত মূলধারা চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তুতে তেমন কোনো গভীরতা দেখা যায় না। এসব মূলধারার চলচ্চিত্রে তেমনভাবে ইতিহাসগত বা দর্শনগত গভীরতা নাই, যা সময়কালের পরিবর্তন আনয়নে সুস্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম। কারণ এসব মূলধারার হিন্দি বা তামিল সিনেমায় শুধু পৌরাণিক চিত্রকল্প নাচ-গানের ফাঁকে ফাঁকে বর্ণনা করা হয় মাত্র; এসবের মধ্যে কোনো মননশীল উপাদান থাকে না। এতে করে দর্শকরা এগুলো আরামসে গিলতে পারে। পশ্চিম ইউরোপসহ, হলিউডের চলচ্চিত্র এভাবে ‘নাটকীয়’ আঙ্গিক ব্যবহার করে মোটামুটিভাবে গোটা পৃথিবীর বাজার দখল করে রেখেছে– যেখানে তারা শুধু চরিত্র এবং চরিত্রের দ্বন্দ্ব বর্ণনায় জোর দিয়ে গল্প বা আখ্যান উপস্থান করে যাচ্ছে।

তিতাস একটি নদীর নাম
তিতাস একটি নদীর নাম

হলিউড কিন্তু ভারতের বাজার দখল করতে পারেনি; কারণ ‘মহাকাব্যিক’ ধাচে এখানে এক অদ্ভুত আঙ্গিক চালু রয়েছে– যা ঠিক ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক নয়, এক ‘অতিনাটকীয়’ [মেলোড্রামাটিক] আঙ্গিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমি ঋত্বিক ঘটকের ক্ষেত্রেও এই ‘অতিনাটকীয়’ শব্দটাকে ব্যবহার করতে চাইব এবং ভারতীয় মূলধারা থেকে ঘটকের ‘অতিনাটকীয়তা’ কোথায় যে আলাদা– এখানে তা সুস্পষ্ট করে বলব। আপনি যদি ‘অতিনাটকীয়’ আঙ্গিকের দিকে লক্ষ্য করেন, দেখতে পাবেন, এর মধ্যে এক ধরনের ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক বিদ্যমান; কারণ ‘অতিনাটকীয়’ আঙ্গিকে ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের কার্য-কারণ রীতি [কজ অ্যান্ড ইফেক্ট] অনুসরণ করা হয় না। এমনকি ‘অতিনাটকীয়’ আঙ্গিক ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের মতো চরিত্রের বৈশিষ্ট্যপ্রদানে [ক্যারেক্টারাইজেশন] আগ্রহী নয়; এক্ষেত্রে ‘অতিনাটকীয়’ আঙ্গিক চরিত্রের উচ্চকিত বাচনভঙ্গি উপস্থাপন করতে বেশি আগ্রহী।


যেহেতু
‘নাটকীয়’
আঙ্গিকে আপনাকে
একটা সমগ্র সংঘাত
নির্মাণ করতে হয়, ফলে
সেখানে
একটা পক্ষ
এবং প্রতিপক্ষ
রাখা লাগে এবং
একটা নির্দিষ্ট একমুখী
পরিণতির দিকে সেই
সংঘাতকে টেনে
নিয়ে যেতে
হয়

মহাভারতরামায়ন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ মহাকাব্যের দিকে তাকালে দেখবেন, চরিত্রসমূহের বৈশিষ্ট্যপ্রদানের চেয়ে সেখানে এর দার্শনিক ব্যাপারে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। উপনিষদসহ অন্যান্য পুরাণে একই ব্যাপার ঘটেছে। ভারতীয় যেকোনো পুরাণে আপনি আখ্যানের চেয়ে এর দর্শনের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করবেন। যেমন ধরুন, মহাভারত মহাকাব্যে যদি কৃষ্ণের জবানীতে এর কোনো একটি চরিত্রের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিবৃত হয়, তবে দেখবেন সেখানে সবশেষে হত্যাকাণ্ডের কথা বলা আছে মাত্র এক অথবা দুই বাক্যে, আর তার আগে এই সংঘাতের নৈতিক দিক বা দার্শনিক দিক বিবৃত হয়েছে প্রায় আট-দশ পাতা জুড়ে। যেহেতু ‘ নাটকীয়’ আঙ্গিকে আপনাকে একটা সমগ্র সংঘাত নির্মাণ করতে হয়, ফলে সেখানে একটা পক্ষ এবং প্রতিপক্ষ রাখা লাগে এবং একটা নির্দিষ্ট একমুখী পরিণতির দিকে সেই সংঘাতকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। তিতাস একটি নদীর নাম এমন কোনো একমুখী স্পষ্ট পরিণতির দিকে ধাবিত হয় না।

তিতাস একটি নদীর নাম
তিতাস একটি নদীর নাম

নাসরীন মুন্নি কবির
ঋত্বিক ঘটক যদি তার চলচ্চিত্রে ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকের ব্যবহার করে থাকেন, তবে কি আপনি বলতে চাইছেন তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্রকে এই আঙ্গিক অস্পষ্ট কোনো অন্তর্নিহিত অর্থে, অন্য কোনো স্তরে উন্নীত করছে?

মনি কাউল
আমি মনে করি, তিতাস একটি নদীর নাম একমাত্র চলচ্চিত্র যেটিতে অন্য স্তর রয়েছে। তবে অন্য স্তরে এটিকে উন্নীত করার ব্যাপার নেই। আমার ধারণা, তিতাস একটি নদীর নাম ব্যাখ্যা করা খুব কঠিন; কারণ এখানে গল্পের বুনন চরমভাবে ঢিলেঢালা এবং সংলাপ ভীষণ হেয়ালিপূর্ণ।

আমার এক পশ্চিমা শিক্ষার্থীর সঙ্গে বছর কয়েক আগে তিতাস একটি নদীর নাম দেখেছিলাম। সে এই চলচ্চিত্রের কোনো সংলাপই বুঝতে পারেনি। আমি জানি পশ্চিমা দর্শকমাত্রই এর সংলাপ বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা। কারণ প্রচ্ছন্নভাবে এর সংলাপ মূলত প্রকৃতি ও সংস্কৃতির অবক্ষয়ের কথা বলে, এবং শেষ পর্যন্ত প্রতীকীভাবে এসবের পুনরুত্থান দেখায়।

ঋত্বিক ঘটক
ঋত্বিক ঘটক
লোকেশন । তিতাস একটি নদীর নাম

তিতাস একটি নদীর নাম-এ ঋত্বিক ঘটক একটা কথা দারুণভাবে বোঝাতে চেয়েছেন : সভ্যতার কখনো মৃত্যু হয় না। তিনি বলতে চেয়েছেন, শুষ্ক তিতাসের বুকে যদি একটি ধানক্ষেতও জন্ম নেয়, তবে সেখানেই আরেকটি নতুন সভ্যতার জন্ম হবে। সুতরাং ঘটকের দৃষ্টিতে সভ্যতা একটি শাশ্বত ব্যাপার। এবং এজন্যই ভারতীয়রা এটিকে ‘পরম্পরা’ বলে অভিহীত করে, যা ঐতিহ্যের চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী। ঘটক বলতে চাইছেন, একটা নদী শুকিয়ে জমিনের সাথে মিশে যাতে পারে, তবে সেটা অন্য কোথাও মাটি থেকে পানি চুইয়ে আবারও নদী হয়ে ওঠবে৷ এটাই প্রকৃতির নিয়ম।


তিতাস একটি নদীর নাম-এ
ঋত্বিক ঘটক একটা কথা
দারুণভাবে বোঝাতে
চেয়েছেন :
সভ্যতার
কখনো
মৃত্যু
হয়
না

তাই বলা চলে, ঘটক ‘সভ্যতা’র বিবর্তন বিষয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। একজন দর্শক হয়তো চট করে এ বিষয়টা বুঝে উঠতে পারবেন না। এ খুবই জটিল ও দুর্বোধ্য ব্যাপার। অবশ্য কেউ যদি বুঝতে চান, এই দুর্বোধ্যতাকে কাটিয়ে তা পারবেন। তবে যারা তিতাস একটি নদীর নাম দেখেছেন, বিশেষ করে পশ্চিমা সমালোচকগণ, তারা অভিযোগের সুরে বলেন, ঋত্বিক ঘটক ‘অতিনাটকীয়’ বা ‘মেলোড্রামাটিক’। আমার মতে, ঠিক ‘অতিনাটকীয়’ নন, বরং নিজের ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিকে ‘অতিনাটকীয়’ উপদানকে তিনি ব্যবহার করেছেন মাত্র। ‘অতিনাটকীয়’ উপকরণ দিয়ে ‘মহাকাব্যিক’ আঙ্গিক নির্মাণ করায় ঋত্বিক ঘটকের চলচ্চিত্র ‘নাটকীয়’ আঙ্গিকের চলচ্চিত্রের তুলনায় এর ঘটনা বা কাহিনির চেয়ে চিন্তার দিক বা দার্শনিকভাবে অনেক শক্তিশালী, অনেক গভীর। এজন্যই ঋত্বিক ঘটক গুরুত্বপূর্ণ।

Print Friendly, PDF & Email
ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার; বাংলাদেশ ।। শর্টফিল্ম : অঙ্কুরোদগম [২০১৫]; গল্প-সংক্ষেপ [২০১৮]; জীবাশ্মজন [২০১৯] ।। ডকুফিল্ম : উজান যাত্রা [২০১৩]; ঘোড়ার অঙ্গে ময়ূরপাখা ও মানুষের মুখ [২০১৮]; প্রত্যর্পণ [২০১৯]।। প্রথম ফিচার ফিল্মের কাজ করছেন

১টি কমেন্ট

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here