চান্তাল আকেরমানের সঙ্গে আলাপ [২/৮]

258
CHANTAL AKERMAN

সাক্ষাৎকার গ্রহণ । নিকোল ব্রেনেজ
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ

অনুবাদকের নোট
চান্তাল আকেরমান [৬ জুন ১৯৫০-৫ অক্টোবর ২০১৫]। বেলজিয়ান ফিল্মমেকার। সিনেমার ইতিহাসের অন্যতম স্বতন্ত্র বিপ্লবী অ্যাকটর-ডিরেক্টর। ২০১১ সালের গ্রীষ্মকালে, সদ্যনির্মিত সিনেমা আলমেয়ার’স ফলির সূত্রধরে, নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। দীর্ঘ সেই সাক্ষাৎকারটির দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হলো এখানে…
প্রথম কিস্তি পড়তে ক্লিক করুন এই বাক্যে

সা ক্ষা ৎ কা র

প্রসঙ্গ : রোবের ব্রেসোঁ ও তার ‘মুশেত’

চান্তাল আকেরমান
[রোবের ব্রেসোঁর মুশেত সিনেমায়] মুশেত [কেন্দ্রীয় চরিত্র] নদীর দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে– এমন দৃশ্য দিয়ে ফিল্মটির সমাপ্তি টানা সত্যি দুর্দান্ত লেগেছে। খুব অল্প দিয়েই দুনিয়া সম্পর্কে আমাদের অনেক বেশি অনুভব করাতে পেরেছেন ব্রেসোঁ : এ পর্যন্ত যত কিছু বলিদান করা হয়েছে, সবকিছুকে সঙ্গী করে; যারা কেবল ধর্ষিতই হয়নি বরং ধ্বংসও হয়ে গেছে; যাদের ভেতরটা গড়াগড়ি খেয়েছে এই কাদার ভেতর– তাদের সবাইকেই সঙ্গে নিয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে মুশেত।

মুশেত
ফিল্মমেকার : রোবের ব্রেসোঁ

নিকোল ব্রেনেজ
সনাতন গ্রাম্য মান-মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের বদলে বরং ধর্ষণের ক্ষতচিহ্নকে নিজের মধ্যে বয়ে নিয়ে মরে যাওয়াকেই শ্রেয় মনে করেছে মুশেত। সে নিজ শ্রেণির মানুষের প্রতি সংহতিপরায়ণ।

চান্তাল আকেরমান
হ্যাঁ? আমি জানি না আসলে। হতে পারে। আমার কেবল এন্ডিংটাই মনে আছে। আমি যখন ইউক্রেনে ফ্রম দ্য ইস্ট সিনেমার শুটিং করছিলাম, আমার গাড়ির গ্যাস ফুরিয়ে গিয়েছিল। কয়েকজন গ্রাম্যলোক তাদের গাড়ি থেকে আমাদেরকে গ্যাস পাচার করে দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে এরপর আমরা ভোজোৎসবের প্রস্তুতি নিলে তারা বাধা দিলেন। এই গরিব লোকগুলো নিজেদের ভান্ডারে থাকা খাবার-দাবার জোড়াতালি দিয়ে, একসঙ্গে জড়ো করলেন– যেন আমাদের জন্য রাজকীয় ভোজের ব্যবস্থা করতে পারেন। প্রোকোফিয়েভ [সের্গেই প্রোকিাফিয়েভ : রুশ কম্পোজার] কিংবা শস্তাকোভিচকে [দিমিত্রি শস্তাকোভিচ : রুশ কম্পোজার] কে– তারা জানেন না ঠিকই; তবে ঠিকই জানেন, কেউ ক্ষুধার্ত হলে তাকে তাদের খাবার দেওয়া উচিত। স্তালিন স্বয়ং হালচাষ করার পরিকল্পনা ‘ভুলে গিয়েছিলেন’; ফলে ইউক্রেনে এক দুর্ভিক্ষের কারণে ৭০ লাখ মানুষকে মরতে হয়েছিল। কোনোকিছুই সিম্পল নয়। এই একই গ্রাম্যলোকগুলো এখনো যুদ্ধ বাঁধলে ইহুদিদের ওপর গণহত্যা চালাতে পারে। এই একই কিংবা অন্যকোনো গ্রাম্যলোকগুলো…।

নিকোল ব্রেনেজ
‘মুশেত’-এ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জিনিসটি হলো– মরার জন্য সেই বুনো আকাঙ্ক্ষাটি, মৃত্যুর সেই দাবি-দাওয়াটি। শেষ পর্যন্ত ডুবে মরার ব্যবস্থাটি করতে পারার আগে, তিনবার সেই চেষ্টা চালিয়েছিল মুশেত।

চান্তাল আকেরমান
হ্যাঁ; কেউ যখন মরে যেতে চায়, তখন হামেশাই এমনটা ঘটে : সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে সে। এই সিনেমাটি কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে ফ্রান্সকে নিয়েও– যেটি দেখতে অনেক সুন্দর হলেও, ভেতরে একটি ভৌতিক রূপ লুকিয়ে রাখে। তার মানে মুশেত সমাহিত হতে যাচ্ছে, আর ভূখণ্ডটি সুর মেলাচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। এজন্যই রাষ্ট্রের প্রতি আস্থা নেই আমার। দ্য ইনফিনিট কনভারসেশন [১৯৬৯] গ্রন্থে ইহুদি ও নোম্যাডিজম [যাযাবরবৃত্তি] নিয়ে চমৎকার এক লেখা লিখেছেন মরিস ব্লঁশো [ফরাসি সাহিত্যিক] : যাযাবরবৃত্তি ও বইটির স্বীকার করেছেন তিনি। দেশ নেই মানে খুনও নেই। ব্লঁশো ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ভূমিই মানে রক্তপাত, এবং তার পরিণাম– পৃথিবী মানে এক অনন্ত কবরাস্থান ছাড়া আর কিছু নয়; যদি বইটি কোনো রক্তপাতহীন ভূখণ্ডের কথা বলে, সেটিতেও রক্ত লেগে থাকে। নিজের ভূমি ছাড়া বেঁচে থাকা মানে এক অতিকায় কসাইখানায় পরিণত হওয়ার ঝুঁকি। যাযাবরবৃত্তি সুন্দর, এবং এটি নায়োকোচিত। কিন্তু এটি কি সব সময়ের জন্যই নায়কোচিত?

প্রসঙ্গ : আকাঙ্ক্ষা

চান্তাল আকেরমান
আমি থাকতাম একটি চাকরানি-কামরায় [মেইড চেম্বার]; কোনো রকম হিট-মেশিন ব্যবস্থা সেখানে ছিল না। ১৯৬৮ সালের শীতকালের পর কামরাটি বরফ হয়ে গিয়েছিল। ৮৬ কি ৮৮ রু বোনাপার্তে স্ট্রিটে থাকতাম আমি; ছিল না পানির ব্যবস্থা। আমার ঘরের উল্টোদিকে থাকতেন এক বুড়ো দম্পতি– এক পেইন্টার ও তার স্ত্রী;  দুটি চাকরানি-কামরাতেই তারা নিজেদের পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। আমার কাছে কেবল ছোট্ট একটা ল্যাম্প ছিল; নিজেকে গরম রাখতে, পেটের ওপর আমি সেটি ধরে রাখতাম। আমি আমার তিন সেন্টিমিটার পুরু ফোমের ম্যাট্রেসটি নিয়ে ছাত্রীটির ঘরে গিয়ে উঠেছিলাম। সেখানে থেকেছি; প্রচুর মানুষের সঙ্গে, প্রচুর অচেনা মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে; তারা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কখনো কখনো আমার যন্ত্রপাতি হলওয়েতে রেখে দিয়েছি। যেখানে থাকতাম, জানালার ওপর বরফের আস্তর পড়ে যেত। বিলাসিতার মধ্যে কোনোদিনই জীবন কাটাইনি আমি। তবে ব্রাসেলসে আমাদের থাকার জায়গাটি অন্তত উষ্ণ ছিল। বাবা তার সবকিছুই বুঝে নিয়েছিলেন; তবে তিনি আমাকে বেরিয়ে আসতে দিয়েছেন। তিনি নিশ্চিত জানতেন, বেরিয়ে আমি পড়বই।

প্যারিস ছিল স্বপ্নের শহর, সাহিত্যিকদের শহর। প্যারিসের কোনো চাকরানি-কামরায় থেকেই আমি লেখালেখি করতে চেয়েছি; ব্রাসেলসে থেকে নয়। প্যারিসে আমার কাজিন থাকতেন। তার ছোট্ট কন্যাটির দেখভাল করার জন্য তিনি আমাকে সামান্য কিছু টাকা দিতেন। মেট্রোতে [ট্রেন] আমি চড়তাম না; বরং হাঁটতাম। তবু, প্যারিসকে এখনো আমি চিনি না। সবকিছুই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।

নিকোল ব্রেনেজ
দারিদ্র ও স্বাধীনতার এই অবস্থাটিকে আপনি নিজের অনেক সিনেমাতেই ব্যবহার করেছেন। উদাহরণ হিসেবে আলমেয়ার’স ফলির কথা বলা যেতে পারে : বোর্ডিংস্কুল থেকে নিনা [চরিত্র] যখন পালিয়ে যায়, তারপর সে রাস্তায় রাস্তায়, টাকাকাড়ি শূন্য অবস্থায় উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরতে থাকে।

দ্য ক্যাপটিভ
ফিল্মমেকার : চান্তাল আকেরমান

চান্তাল আকেরমান
হ্যাঁ। ঠিক তাই। আপনি নিজের উপাদান নিয়ে কাজ করতে পারবেন। আপনার কেবল এগুলোই সম্পদ। এরপর আমি রু ক্রলাবার্বেতে [স্ট্রিট, প্যারিস] থাকতাম– ঠিক যে বিল্ডিংটিতে ফ্রাঁসোয়া ও নোয়েল শেৎলে [ফরাসি সাহিত্যিক-ইতিহাসবিদ দম্পতি] থাকতেন। চায়নিজ ও লাওজি নিয়ে পড়ালেখা করতে থাকা অ্যালেক্স নামের এক তরুণ ছাত্রের সঙ্গে আমি ভিনসেনা ইউনিভার্সিটিতে দুল্যুজ ও [জাক] লাকাঁর বয়ান শুনতে যেমতাম। লাকাঁ সত্যিকারঅর্থেই সার্কাস্টিক ছিলেন, বিশেষ করে মেয়েদের প্রতি; মেয়েদের প্রশ্নকে তিনি উপহাস হিসেবে নিতেন এবং তাদের বিদ্রূপ করতেন। তিনি ততদিনে তারা “বোরোমিন নটস” [তত্ত্ববিশেষ] জাহির করে ফেলেছিলেন; কিন্তু কেউই আসলে সেটির আগা-মাথা কিছু বুঝতে পারেনি। অন্যদিকে, দুল্যুজকে আমি মাত্র একবারই দেখেছি, ঠিকঠাক মনে নেই, তবে সেই আবহটি মনে করতে পারি : প্রাণবন্ত, আবেগপূর্ণ, আনন্দময়।

মুখভর্তি ব্রণ থাকলেও,
দেখতে সুদর্শন ছিল
ছেলেটি। সে আত্মহত্যা
করেছে– এ খবরটি আমি
পেয়েছি সিনেমা দেখার
জন্য একদিন লাইনে
দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়

আমার যখন ১৩ বছর বয়স, জিয়নিস্ট-স্যোসালিস্ট-জিয়ুইশ মুভমেন্ট– ‘ডিআরওআর’-এর মাধ্যমে অ্যালেক্সে সঙ্গে পরিচয় হয় আমার। জীবনযাপনের জন্য খুব সামান্যই ভাতা পেত অ্যালেক্স; আমার সঙ্গে থাকতে চলে এসেছিল সে। ওর ছিল পুঁচকে একটা হটপ্লেট; আর আমি কিনতাম একেবারেই সস্তা গাজর ও চাল। খুব একঘেয়ে খাবার ছিল আমাদের। সেখানে শাওয়ার ও একটা আন্ডারফ্লোর হিটিং ছিল ঠিকই; কিন্তু তা আমাদের কারোরই পছন্দের ছিল না। অ্যালেক্স আমাকে জাপানে নিয়ে যেতে চেয়েছিল; কিন্তু ওকে আমি ছেড়ে চলে গেলাম। মুখভর্তি ব্রণ থাকলেও, দেখতে সুদর্শন ছিল ছেলেটি। সে আত্মহত্যা করেছে– এ খবরটি আমি পেয়েছি সিনেমা দেখার জন্য একদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। সেও [আর্তুর] র‍্যাঁবো [ফরাসি কবি] হতে চেয়েছিল। নিজের সম্পর্কে পারতপক্ষে মুখ খুলত না।

আই, ইউ, হি, শি
ফিল্মমেকার ও অভিনেত্রী : চান্তাল আকেরমান

নিকোল ব্রেনেজ
চাকরাণি-কামরায় জীবনযাপনকালে আপনি কী কী লিখেছিলেন?

চান্তাল আকেরমান
আই, ইউ, হি, শি লিখেছিলাম– তবে সিনেমা নয়, বরং উপন্যাস হিসেবে। এর মাত্র এক বছর পরই আমি সিনেমাটি বানিয়েছি। ফিল্মটিতে যে বালিকাটি অভিনয় করেছে, সেই ক্লেরার [ক্লেরা হুথিয়ুন] সঙ্গে দেখা করতে ব্রাসেলসে ফিরে গিয়েছিলাম। যেতে যেতে রাস্তায় হাত নেড়ে থামিয়ে যে ট্রাকগুলোতে উঠেছিলাম, সেই অচেনা ট্রাকচালকদের সঙ্গে সব ধরনেরই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। এ ছিল বিপজ্জনক ব্যাপার। কিন্তু আমরা তখন এভাবেই জীবন কাটাতাম। ভ্যান গগকে নিয়ে একটি নাটক লিখতে আমার কাজিন জোনাথনকেও সাহায্য করেছিলাম আমি; নিজের ভাই থিওর কাছে লেখা ভিনসেন্টের চিঠিগুলো আমার পড়া ছিল। তারপর আমার মাথা বিগড়ে গেল। চুল ছোট করে ছেটে ফেললাম। তারপর ফিরে এলাম বাড়ি। বাবা খুব মর্মাহত হয়েছিলেন; কেননা, এ ছিল নিশ্চিতভাবেই এক ধরনের আত্ম-অঙ্গহানীর মতো ব্যাপার।

প্রসঙ্গ : অভিনেতাদের নির্দেশিত করা

নিকোল ব্রেনেজ
আপনার সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যে চরিত্রটিতে অভিনয় করতে যাচ্ছে, সেটি যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারে– এ উদ্দেশ্যে নিজ জীবনের এই উপাখ্যানগুলো তাদের শুনিয়েছেন?

চান্তাল আকেরমান
না। আমি তাদের এর কোনোটাই শোনাইনি। যখন সিনেমা বানাই, এসব নিয়ে একদমই ভাবি না। এসবের সঙ্গে সিনেমাটির কোনো সম্পর্কও নেই। এই যে এখন আমি কথা বলছি, নিজেকে নিজের মতো কথা বলতে দিচ্ছি। আমি কথা বলছি, কারণ, মনে হয়েছে, আপনি আমার কথা শুনতে চান। কিন্তু সিনেমা তো অন্য জিনিস। অভিনেতাদের খুব বেশি কিছু আমি বলি না। স্রেফ ঠিকঠাক জিনিসগুলো বেছে নেওয়ার চেষ্টা করি। এই তো!

আলমেয়ার’স ফলির ক্ষেত্রে আমরা কোনো রিহার্সেল করিনি; আমি কোনো দিক-নির্দেশনাও দিইনি; আমি তাদের [অভিনেতাদের] একটা স্পেস ছেড়ে দিয়েছি, তারা তারা সেটি নিজের মতো করে নিয়েছেন। তারা যখন মুভ করেছেন, আমরা তাদের ফলো করেছি– ঠিক যেন ডকুমেন্টারির মতো। তারা সবাই পুরোপুরি কিংবা অনেকটাই মনমর্জিমতো যা খুশি করার স্বাধীনতা পেয়েছেন।

রেমোঁ ফ্রিমোঁ একজন গ্রেট ডকুমেন্টারি ক্যামেরাম্যান; তাকে নিয়েই আমি সাউথ, ফ্রম দ্য ইস্টফ্রম দ্য আদার সাইড এবং পোর্ট্রেট অব অ্যা ইয়ং গার্ল ইন ব্রাসেলস অ্যাট দ্য এন্ড অব দ্য সিক্সটিজ সিনেমাগুলোর শুটিং করেছি। এবার শুটিং শেষ হলে, তিনি আমার বাহুডোরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন; আমাকে বলেছিলেন, জীবনে আর কোনোদিন এতটা সুখী অনুভব করেননি। প্রত্যেকেই সত্যিকারের খুশি হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই অনুভব করেছিলেন, যেন তারা নিজ রুমেই রয়েছেন, এবং একইসঙ্গে তারা একত্রে থাকার সঙ্গতিটিও করেছেন অনুভব। বিশেষ করে স্তানিস্লাস মোর্হার [আলমেয়ার চরিত্রের অভিনেতা] কথা বলতেই হয় : আমরা কোন পথে এগিয়ে যাচ্ছি, সেটি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ঠিকই, তবে মুখ ফুটে তাকে আমি বলতে গেলে কিছুই বলিনি : স্রেফ কালেভদ্রে কিছু সাজেশন দিয়েছি– তাও একেবারেই সতর্কতার সঙ্গে। অভিনয়ের সময় স্তানিস্লাস নিজের সম্পর্কে, জীবন কিংবা না-জীবনের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক সম্পর্কে কথা বলেছেন বলেই আমার ধারণা : আমি কেবল বলতে পারি, তিনি যা কিছু করছিলেন, তা আমি গ্রহণ করেছি। দ্য ক্যাপটিভ-এর কাজের উদ্দেশে যখন তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়, শুটিং চলাকালে আমি ও সিলভি তেস্তু [অভিনেত্রী] ছাড়া আর কোনো ক্রুর সঙ্গে একটাও কথা বলেননি তিনি। সবাই ধরে নিয়েছিল, তিনি অহংকারী মানুষ; আসলে কিন্তু তা নয়, বরং তিনি ছিলেন খানিকটা ‘অটিস্টিক’। তিনি স্টেজে উঠে পড়েন, আর লোকে স্রেফ তার কাজই দেখে। আমাদের মধ্যে খুব গাঢ় একটা সম্পর্ক রয়েছে, কোনোকিছুই সেটিকে টলাতে পারবে না; পরস্পরের প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের। এই যে এক ধরনের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আমরা অর্জন করতে পেরেছি, এটিই আমাদের মধ্যকার সবকিছুকে শান্তিপূর্ণ করে রাখে; এটি কখনোই বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হবে না– যা কিনা সিনেমার জগতে অহর্নিশ ঘটে থাকে।

নিকোল ব্রেনেজ
এমনকি লাস্ট শটটি– যেটি ভীষণ শিল্পদক্ষতাপূর্ণ ও বিজড়িত– সেটির বেলায়ও কি আপনার কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছিল না?

চান্তাল আকেরমান
একদমই ছিল না। থাকার দরকারও ছিল না। আমরা স্তানিস্লাসের চেয়ারটিকে সূর্যের দিকে ভীষণ স্লোলি মুভ করিয়েছি। তিনি কথা বলেছেন, চুপ থেকেছেন, শুনেছেন নদীর গুঞ্জন, তাকিয়েছেন আমার দিকে; আমি তাকে চালিয়ে যেতে বলেছি; এই দৃশ্যটি ১০ মিনিটের– যেটির টুকরো টুকরো অংশ আমি বেছে নিয়েছি।

আলমেয়ার’স ফলি
ফিল্মমেকার : চান্তাল আকেরমান
সাক্ষাৎকার গ্রহণকাল । ১৫ জুলাই ও ৬ আগস্ট ২০১১; প্যারিস, ফ্রান্স 
সূত্র । লোলা জার্নাল

তৃতীয় কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

2 মন্তব্যগুলো

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here