লিখেছেন । প্রসূন রহমান
১৯৮৬ সালের কথা। আমি তখন স্কুলের ছাত্র। বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা হলো ঈদের কোন সিনেমাটি আমরা দেখবো। মোট ৩টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল সে ঈদে। তার একটি ছিল চাঁপা ডাঙার বউ। বাকি দুটো কী ছিল– তা এখন আর মনে নেই। হয়তো দেখা হয়নি বলেই মনে নেই।

চাঁপা ডাঙার বউ দেখার আগ্রহ হওয়ার মূল কারণ ছিল দুটি। প্রথমত নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনা এবং দ্বিতীয়ত নায়করাজের বড়ছেলের অভিষেক। সে ছবিতে বাপ্পারাজের সাথে অভিষেক হয়েছিল অরুণা বিশ্বাসেরও। মাসুদ রানা পড়তে শুরু করা আমাদের প্রজন্মের কাছে তখনো তারাশঙ্করের পরিচিতি কেবলমাত্র কবি উপন্যাসের মাঝেই সীমাবদ্ধ। ফলে সে বয়সে সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র বলে সেটা দেখতে গিয়েছিলাম, এমনটা মনে পড়ে না। কিন্তু সেদিন সেই চলচ্চিত্রটি আমাদের মনে দাগ কেটেছিল বেশ ভালো করেই।

রোগা পাতলা শরীর নিয়ে বাপ্পারাজের খুব নায়কোচিত আবির্ভাব ঘটেছিল– এমন নয়; তবু চিরাচরিত শাবানার আঁচল লুটিয়ে কান্নাকে ছাড়িয়ে বাপ্পার কান্নারত হেঁটেচলা আর আমার সাধ না মিটিল, আশা না পুরিলো, সকলি ফুরায়ে যায় মা গানের অর্ন্তনিহিত যন্ত্রণা আমাদের কৈশোরিক হৃদয়কে আন্দেলিত করতে পেরেছিল। আমরা ঈদের আনন্দময় দিনে ভারাক্রান্ত মনে সিনেমা হল থেকে বেরিয়েও বিশুদ্ধ আবেগে পরিপূর্ণ ছিলাম।
…’আমার সাধ না মিটিল,
আশা না পুরিলো,
সকলি ফুরায়ে যায় মা’
গানের অর্ন্তনিহিত যন্ত্রণা
আমাদের কৈশোরিক হৃদয়কে
আন্দেলিত করতে
পেরেছিল…
ঈদের দিনে একটি চলচ্চিত্র দেখার পর এই পরিপূর্ণতার অনুভব আমাদের কৈশোরিক মনের শুদ্ধতা নাকি সুস্থ বিনোদনের সংক্রামক প্রতিক্রিয়া– সেটা বুঝতে আমাদের আরো বড় হতে হয়েছিল। ম্যাটিনি শো দেখার পর সে চলচ্চিত্রের রেশ ও রস নিয়ে আমরা কয়েকজন ভারাক্রান্ত সন্ধ্যাটিকে বিশ্লেষণী আলোচনায় ভরিয়ে তুলেছিলাম। হয়তো পরবর্তী আরো কয়েকদিন আমরা গুনগুন করেছিলাম খুরশীদ আলমের কন্ঠে শোনা পান্নালাল ভট্টাচার্যের সে কালজয়ী গানের সুর।

এরপর আরো এক দশক আমরা নিয়ম করে ঈদের দিন সিনেমা দেখতে গিয়েছি। বিনোদনে ভরপুর অনেক সিনেমাই দেখা হয়েছে, ৯৩-এর ঈদে সালমান-মৌসুমীকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত-এর রিমেক এসেছে, কিন্তু কেন জানি সেসবের কোনোটাই আর তেমন করে রেখাপাত করেনি। কেন জানি সেদিনের মতো চলচ্চিত্রময় ঈদ আর আসেনি আমার জীবনে!
বলা প্রয়োজন, দীর্ঘদিন অপেক্ষাও করিনি। কিন্তু এখন আবার অপেক্ষা করি। সাহিত্যনির্ভর কিংবা জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রও হয়তো আবার মুক্তি পাবে কোনো ঈদে, এই শহরের প্রেক্ষাগৃহে। আমরা আবার দেখতে যাবো।