সাক্ষাৎকারক • নাহেদ নাসর ।। ভূমিকা ও অনুবাদ • রুদ্র আরিফ
মারোউন বাগদাদি। লেবাননের মাস্টার ফিল্মমেকার। নিজ প্রজন্মের নির্মাতাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে দেওয়া নাম। জন্ম ২১ জানুয়ারি ১৯৫০। জন্মভূমির গৃহযুদ্ধ ছিল তার সিনেমার মূল বিষয়বস্তু। জগতের নানাপ্রান্তের মর্যাদাপূর্ণ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালগুলোতে দাপটের সঙ্গে বিচরণ ছিল তার সিনেমার। মূলত আরবি ও ফ্রেঞ্চ ভাষায় নির্মিত এ মহান সিনে-কারিগরের সৃষ্টিকর্মগুলোর গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক/ইংরেজি শিরোনাম– বৈরুত ওহ বৈরুত [১৯৭৫]; কাফারকালা [১৯৭৬]; দ্য মেজরিটি ইজ স্ট্যান্ডিং স্ট্রং [১৯৭৬]; দ্য সাউথ ইজ ফাইন, হাউ অ্যাবাউট ইউ [১৯৭৬]; গ্রিটিং টু কামাল জুম্বলাট [১৯৭৭]; দ্য মোস্ট বিউটিফুল অব অল মাদারস [১৯৭৮]; নাইনটি [১৯৭৮]; দ্য মার্ট্যার [১৯৭৯]; দ্য স্টোরি অব অ্যা ভিলেজ অ্যান্ড অ্যা ওয়ার [১৯৭৯]; উই আর অল ফর দ্য ফাদারল্যান্ড [১৯৭৯]; দ্য প্রসেশন [১৯৮০]; হুইসপারস [১৯৮০]; লিটল ওয়ারস [Houroub saghira; ১৯৮২]; দ্য ভেইলড ম্যান [L’homme voilé; ১৯৮৭]; আউট অব লাভ [Hors la vie; ১৯৯১] ও দ্য এয়ার গার্ল [La fille de l’air; ১৯৯২]। এরমধ্যে তার সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রশংসিত সিনেমা– লিটল ওয়ারস-এর নায়িকা বা কেন্দ্রীয় চরিত্রের অভিনেত্রী সুরাইয়া খৌরিকে [পরবর্তীকালে সুরাইয়া বাগদাদি] বিয়ে করে, তিন সন্তানের জনক হন তিনি। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে, ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ মর্মান্তিক অকালপ্রয়াণের শিকার হওয়া এই কিংবদন্তির সৃষ্টিকর্মকে প্রজন্মের পর প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে নিরলস খেটে যাওয়া অকাল-বিধবা স্ত্রী সুরাইয়ার সঙ্গে, প্রিয় পাঠক, আসুন, বিনম্র মস্তকে আলাপ করা যাক…

সা ক্ষা ৎ কা র
সিনেমার জগতে আপনার আবির্ভাবের বয়স প্রায় ২৫ বছর হতে চলল। লিটল ওয়ারস-এর পর অভিনেত্রী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ারকে কেন থামিয়ে দিয়েছিলেন; অথচ এ ফিল্মটি তো আপনাকে অনেক বড় সাফল্য এনে দিয়েছিল এবং ফিল্মটি হাজির হয়েছিল কান ফেস্টিভ্যালে?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
অভিনেত্রী হিসেবে লিটল ওয়ারস ছিল আমার প্রথম অভিজ্ঞতা। মারোউন চেয়েছিল তার সিনেমায় আমাকে একজন অপেশাদার অভিনেত্রী হিসেবে হাজির করতে; আর আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম ফিল্মটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে। ব্যক্তিগত ও শিল্পগত একটি পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার টার্নির পয়েন্ট ছিল এটি আমার জন্য; আর, অভিনেত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার ঠিকই, তবে আমাকে নিয়ে মারোউনের ছিল অন্যতর নিজস্ব পরিকল্পনা। আমরা যখন বিয়ে করলাম, আমাকে সে জানাল, সে একটা সংসার, একজন স্ত্রী, ও নিজের সন্তানদের একজন মা চায়। ক্যারিয়ারের নানাবিধ টেনশন সঙ্গী করে, সিনেমায় কাজ করতে থাকা কোনো দম্পতির পক্ষে যথাযোগ্য সংসার বানানো সম্ভব হতে পারে– এমনটা সে ভাবতেও পারত না। যেহেতু ক্যারিয়ার বাছাইয়ের প্রশ্নে অভিনয় নিয়ে আমার তেমন আত্মবিশ্বাস ছিল না, এবং ১০ বছর পেশাদার নৃত্যশিল্পী হিসেবে কাজ করার পর নাচ থেকে আমি একটা বিরতি নিতে চেয়েছিলাম; ফলে ওর আইডিয়াটি আমাকে সন্তুষ্ট করেছিল।

স্বামী হিসেবে মারোউন বাগদাদির মধ্যে আকর্ষণীয় জিনিস ছিল কোনটি?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
আমি মনে করি, যখন কোনো মানুষ এমন কারও দেখা পায়– যে তার জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে দেয়, এবং তার জন্য নতুন একটা দুনিয়া খুলে দেয়– ভালোবাসার জন্ম হয় তখনই। মারোউন ছিল আমার কাছে তেমন একজন মানুষ। সে আমাকে একেবারেই নতুন একটি দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। একই মুহূর্তে তাকে ও সিনেমাকে চিনে ফেলতে পারতাম আমি। তার প্রেমে পড়তে খুব একটা সময় লাগেনি আমার।
…আমি
ছিলাম
ওর
স্বস্তির
উৎস…
মারোউনের ওপর আপনার নিজের কতটুকু প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করেন?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
এটি সকল পুরুষের ওপর সকল নারীর প্রভাবের মতোই ব্যাপার। পুরুষ তো উদ্বেগে ভরা। মারোউন ভীষণ উদ্বিগ্ন থাকত। ওকে আরও বেশি প্রশমিত করার ও ভবিষ্যতের প্রশ্নে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার ক্ষেত্রে আমি সাহায্য করতাম। আমি ছিলাম ওর স্বস্তির উৎস। নিজেকে স্বস্তিদায়ক, আত্মবিশ্বাসী ও প্রশমিত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করার মতো একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মারোউনের কাছে আমি ছিলাম সেই মানুষ– এ আমার বিশ্বাস।

এখন, মারোউনের মৃত্যুর দুই দশক পর, আবারও অভিনেত্রী হিসেবে সিনেমায় ফিরেছেন আপনি, কাজ করেছেন কয়েকটি শর্টফিল্মে; তাছাড়া ১৯৯০ দশকের শেষভাগ থেকে কাজ করছেন কোরিওগ্রাফার হিসেবে। কীভাবে ঘটেছিল এই ফেরা?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
অভিনয়-সংক্রান্ত সবকিছুই আমি ভুলে গিয়েছিলাম, আর সম্পূর্ণই জাড়িয়ে পড়েছিলাম মারোউনের সঙ্গে নিজের নতুন জীবনে; কিন্তু ওর মৃত্যুর কয়েক বছর পর আবারও নিজের প্রথম প্রেম– নাচ ও থিয়েটারে ফিরে এসেছি আমি।
২০০৬ সালে যখন আমরা বৈরুতের [লেবানন] নাদি লাকোল নাস-এর [ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মক্লাব অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন] সহযোগিতায় মারুনের সিনেমাগুলোর রিস্টোরেশন ও আর্কাইভিংয়ের প্রকল্পটি শুরু করলাম, লোকজন আবারও লিটল ওয়ারস দেখতে থাকলেন, এবং তরুণ প্রজন্মের অনেকেই ওর সিনেমাগুলো এ বেলা দেখেছিলেন জীবনে প্রথমবারের মতো।
লিটল ওয়ারস এবং মারোউন ও ওর কাজ সম্পর্কিত কয়েকটি ডকুমেন্টারিতে আমাকে দেখার পর কয়েকজন ফিল্মমেকার আমার কাছে হাজির হলেন তাদের সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব নিয়ে; আমি এই আইডিয়াটিকে স্বাগত জানালাম। আচমকাই নিজেকে পাঁচটি সিনেমায় অভিনেত্রী হিসেবে আবারও আবিষ্কার করলাম আমি। এর মধ্যে একটি ছিল আলজেরিয়ান ফিল্মমেকার আনিস জাদের ট্রিপ অব কেলটাম [২০১৭]– যেটির জন্য মাগরেব ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব উজদায় [মরক্কো] সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছি আমি।
…যদিও মারোউন
এখন আর আমার
সাথে নেই, তবু সে
আমাকে নতুন নতুন সুযোগের
সঙ্গে পরিচয় করিয়ে
দিচ্ছে– এমনটা ভাবতেই
ভালোলাগে আমার…
ক্যামেরার পেছনে মারোউন বাগদাদি নেই– এ ক্ষেত্রে এটি কি কোনো পার্থক্য তৈরি করেছে?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
যদিও মারোউন এখন আর আমার সাথে নেই, তবু সে আমাকে নতুন নতুন সুযোগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে– এমনটা ভাবতেই ভালোলাগে আমার। তার সিনেমাগুলোতে পুনর্বার দৃশ্যমান হয়ে, সিনেমা-জগতে ফিরে আসার নতুন সুযোগগুলো আমি পেয়ে গেছি, ঠিক যেমনটা সে করেছিল তিন দশক আগে– জীবনে প্রথমবার আমাকে সিনেমায় হাজির করিয়ে। নিজের অবর্তমানেও ভীষণ রকম উদারচিত্ত সে।

মারোউনের সিনেমাগুলোর রিস্টোরেশন ও আর্কাইভিং প্রজেক্টটি ২০০৬ সালে, তার মৃত্যুর প্রায় ১০ বছর পর বাস্তবায়িত হয়েছিল। কাজটির জন্য এত বেশি সময় লেগেছিল কেন?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
২০০৫ সালে, আমি এখন যেখানে থাকি আর মারোউন যেখানে থাকতে অনেক বছর ধরেই অভ্যস্ত ছিল– সেই ফ্রান্সের একটি ফেস্টিভ্যালে দেখানোর জন্য আমার কাছে ওর বৈরুত ওহ বৈরুত সিনেমাটির একটি ডিভিডি কপি চাওয়া হলো; কেননা, তারা লেবানিজ সিনেমার ওপর একটি স্পেশাল প্রোগ্রামে এটি দেখাতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, সিনেমাটির ডিভিডি কপি ছিল না আমার কাছে; তাই তারা এটি দেখাতে পারেননি। খুব মন খারাপ হয়ে গেল আমার; কেননা, মারাউল ছিল নিউ-লেবানিজ-সিনেমার একজন অগ্রদূত; অথচ ফেস্টিভ্যালটিতে তার সিনেমাই দেখানো গেল না। সেই মুহূর্তে আমি ভাবলাম, তার সবগুলো সিনেমা সংগ্রহ করে রাখা জরুরি; কেননা, সেগুলোর বেশ কয়েকটারই হদিশ নেই আমার কাছে; সেগুলোকে ডিভিডিতে রিস্টোর ও রিপ্রডিউস করা চাই।
আমার কাছে প্রস্তাব এলো বেশ কয়েকটি, তবে নাদি লাকোল নাস যখন মিশনটির দায়িত্ব নেওয়ার প্রস্তাব রাখল, তাদের সহযোগিতা আমি বিশেষভাগে গ্রহণ করলাম; কেননা, এই একই অ্যাসোসিয়েশনটি ইতোমধ্যেই একই রকম আরেকটি প্রজেক্টে কাজ করেছিল– প্রয়াত ও বিশিষ্ট লেবানিজ ফিল্মমেকার বুরহান আলাউইয়ার সিনেমাগুলো রিপ্রডিউসিংয়ে।
সীমাবদ্ধ রিসোর্সের কারণে এত বেশি সময় ও এত বেশি শ্রম দিতে হয়েছে মারোউনের সিনেমাগুলো খুঁজে পেতে ও রিস্টোর করতে। কখনো কখনো একেবারেই আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমরা; তবে শেষ পর্যন্ত তার প্রায় সবগুলো কাজ, বিশেষত লেবাবন সম্পৃক্ত কাজগুলো রিস্টোর ও ডিভিডিতে রিপ্রডিউস করতে পেরেছি।
…নিজের সিনেমাগুলোতে
নিজ রাজনৈতিক
ও
সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি
একেবারেই স্পষ্ট করে
রেখে গেছে
মারোউন…

এখন, যখন আপনি দেখেন– তরুণ প্রজন্ম মারোউনের সিনেমাগুলো দেখার সুযোগ পাচ্ছে, তাদের কাছে মারোউন ঠিক কোন বার্তাটি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন বলে তখন মনে হয় আপনার?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
সংলাপকে উদ্দীপ্ত করে তুলতে প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিত মারোউন। একপাক্ষিক কোনো বার্তা কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না ওর। মারোউনের নিজের ও ওর মনোজগতের বিতর্কের প্রতিনিধিত্বকারী নানাবিধ চরিত্রগুলোকে সে জাহির করত। তবে অহেতুক যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান ওর নিশ্চিতভাবেই ছিল। সে বিশ্বাস করত, যুদ্ধ ও সহিংসতা আমাদের ক্ষতি ছাড়া আর কোনোকিছুই দিতে পারে না। নিজের সিনেমাগুলোতে নিজ রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি একেবারেই স্পষ্ট করে রেখে গেছে মারোউন। চিন্তাশীল মস্তিস্কের এক মুক্ত মানুষ ছিল সে। আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেকের প্রতি এই বার্তাটিই রেখে গেছে সে : মুক্ত হতে চাইলে মুক্তমনা মানুষ হতে হবে তোমাকে।
আপনি একবার বলেছিলেন, মারোউনের মৃত্যুর পর তাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পেরেছেন। কী বুঝিয়েছিলেন এ কথা দিয়ে?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
যতবারই ওর সিনেমা দেখি, নতুন নতুন মাত্রা আবিষ্কার করে ফেলি আমি। নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকি, সত্যি কি আমি মারোউনকে পুনরাবিষ্কার করছি, নাকি আসলে নিজেকেই পুনরাবিষ্কার করছি এই আমি? এর জবাব জানা নেই আমার। মারোউনকে যখন হারিয়েছি, বয়স খুব কম ছিল আমার; তবে এখন আমি আরও বেশি পরিপক্ক, আরও বেশি অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ; ফলে বুঝতে পারি– নিজের সিনেমাগুলো ভিন্ন এক তরিকায় কী কথা বলে গেছে সে। ওকে বোধ করি এখনই আমি আরও বেশি মাত্রায় বুঝতে পারি।

মিসরকে খুব ভালোবাসতেন মারোউন; চেয়েছিলেন কায়রোতে একটি সিনেমা বানাতে। আপনি এখন কায়রোতে এসে, মিসরীয় দর্শকের সামনে এই যে তার সিনেমাগুলো হাজির করছেন– লাগছে কেমন?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
আমি এখন মিসরীয় সিনেমার কিংবদন্তিদের মাঝখানে : ইউসেফ শাহিন [১৯২৫-২০০৮], ইউসরি নাসরাল্লাহ [১৯৫২-], সামির নাসরি ও অনেকেই। মিসরের এই বিশিষ্ট ফিল্মমেকার ও ফিল্মস্টারদের কেউ কেউ ছিলেন মারোউনের বন্ধু; আমাকে ছাড়াই বহুবার মিসর বেড়াতে আসত সে। আর আমি এখন ওকে ছাড়াই এখানে এসেছি, ওর সিনেমাগুলো দেখাব বলে। গত ২৬ বছরের মধ্যে এটি আমার প্রথম ভ্রমণ, এবং মারোউন যা শুরু করেছিল– তা চালিয়ে যাওয়ার তাড়না বোধ করছি। এটি নিজেকে পুনরাবিষ্কারের ক্ষেত্রে আমার যে জার্নি– তারই অংশ যেন।
অভিনেত্রী হিসেবে ক্যারিয়ার অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা আছে?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
১৯৮১ সালে আমি ছিলাম মারোউনের সিনেমার অংশ; তবে এখন আমি করছি নিজের কণ্ঠস্বর ও নিজের সিনেমার অন্বেষণ; এবং সকল উপায়ন্তর ও সকল সম্ভাবনার প্রতি উন্মুক্ত আমি। শুধু অভিনেত্রী হয়ে থাকাই নয়, ফিল্মমেকিংয়েরও সম্ভাবনা নিশ্চয়ই রয়েছে।
…যখন আপনি নিজের
ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে
ফেলবেন, নিজ জীবনে সৃষ্টি
করে নিন তার অস্তিত্ব, এবং
নিজের একান্তই ভেতরের
একটা জায়গায় অনুভব
করুন তাকে…

১৯৯৩ সালে মারোউনের মর্মান্তিক [বৈরুতে, নিজের মায়ের বাড়ির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি] মৃত্যুর পর ভীষণ কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে আপনাকে। সেইসব দুঃসময় সামলিয়ে ওঠার প্রেরণা কী ছিল আপনার?
সু রা ই য়া বা গ দা দি
আমি আমার তৃতীয় সন্তান– কামালকে জন্ম দেওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগেই মারা গিয়েছিল মারোউন। নিশ্চিতভাবেই, এ ঘটনাটি একটি দুর্যোগ ছিল; তবু আমি চেয়েছিলাম নিজের সন্তানটিকে টিকিয়ে রাখতে। ব্যাপারটি এমন যেন, একজনের মৃত্যু আরেকজনকে জীবন দিয়ে গেল, কিংবা কামালের জন্ম যেন ছিল দুর্দশা ও বিষণ্নতা থেকে আমাদের উত্তরণের নিয়ামক হয়ে এলো।
কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে হলে, আপনাকে সে সময়ের বলয় থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। নিজস্ব জীবনদর্শন, নিজস্ব স্বপ্ন ও নিজস্ব পরিকল্পনা আপনার মধ্যে থাকা চাই-ই; এবং সেখানে থাকা চাই প্রচুর ভালোবাসাও। নিজের জীবনকে, নিজেকে ঘিরে থাকা মানুষদের ভালোবাসা উচিত আপনার; আর ভোগা যাবে না একাকিত্বে।
তার মানে এই নয় যে, সবকিছু মসৃণভাবে এগোবে; তবে এ সকল দুঃসময় উৎরে আসার হাতিয়ারগুলো ছিল আমার। মারোউনও সবসময়ই পাশে ছিল আমার! যখন আপনি নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলবেন, নিজ জীবনে সৃষ্টি করে নিন তার অস্তিত্ব, এবং নিজের একান্তই ভেতরের একটা জায়গায় অনুভব করুন তাকে। যখন আমি মারোউন বাগদাদির কিংবদন্তিকে মানুষের কাছে আবারও হাজির করতে পারলাম, একমাত্র তখনই অনুভব করলাম, শেষ পর্যন্ত বেঁচে যেতে পেরেছি।
নাহেদ নাসর । বিনোদন সাংবাদিক, মিসর সূত্র । আহরাম অনলাইন । নিউজ পোর্টাল, মিসর । ১৯ মে ২০১৭