সাক্ষাৎকারক । স্টিভ এরিকসন ।। অনুবাদ । রুদ্র আরিফ
এলিয়া সুলেইমান। ফিলিস্তিনি, তথা আধুনিক আরব সিনেমার অন্যতম প্রভাবশালী ফিল্মমেকার। জন্ম : ২৮ জুলাই ১৯৬০; নাজারেথ, ইসরাইল। ফিল্ম : ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য এন্ড অব অ্যান আর্গুমেন্ট [১৯৯৩], দ্য গল্ফ ওয়ার… হোয়াট নেক্সট? [১৯৯৬], ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স [১৯৯৬], ওয়ার অ্যান্ড পিস ইন ভেসোল [১৯৯৭], দ্য আরব ড্রিম [১৯৯৮], সাইবার প্যালেস্টাইন [১৯৯৯], ডিভাইন ইন্টারভেনশন [২০০২], টু ইচ হিজ ঔন সিনেমা [২০০৭], দ্য টাইম দ্যাট রিমেইনস [২০০৯], সেভেন ডেজ ইন হাভানা [২০১২]
সা ক্ষা ৎ কা র
স্টিভ এরিকসন
আপনার ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স ও ডিভাইন ইন্টারভেনশন ফিল্ম দুটিতেই স্ট্রাকচারকে আপনি যেভাবে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন, সেটি কি আপনার ভিশনগত দিক থেকে?
এলিয়া সুলেইমান
আমি কখনোই স্ট্রাকচার ধরে ফিল্ম বানাই না। স্রেফ কিছু নোট নিয়ে রাখি, তারপর কাহিনী গঠনের ক্ষেত্রে সেগুলোকে জুড়ে দিই। এরপর কাহিনীবিন্যাস কম্পোজ করি। আর কাহিনীর পরতগুলো যখন নিজে নিজে দাঁড়িয়ে যায়, তখন তা হয়ে ওঠে একেকটা ইমেজ। পরে শুটিংয়ের সময় অনেকগুলো সম্ভাবনা সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি ভীষণ যথাযথভাবে সুগঠিত স্ক্রিপ্ট লিখি ঠিকই, কিন্তু এরপর সেটিকে কিছুদিন ফেলে রাখি; আর তারপর আবার কাজ শুরু করি। ইমেজকে আর্কাইভ করার বিষয়টি আমি এড়িয়ে যেতে চাই। সৃজনশীল প্রক্রিয়াকে চলমান রাখার ইচ্ছে আমার ভেতর সবসময় কাজ করে; ফলে, স্ক্রিপ্টে যা লিখেছি, সেটে গিয়ে স্রেফ তারই শুট করি না। এভাবে মন্তাজেও অনেক অদল-বদল ঘটে। ন্যারেটিভ স্ট্রাকচারের দিক থেকে দেখলে, এগুলোকে আমি কাব্যিক মন্তাজের ভেতর দিয়েই ধরতে চাই। আমার শুটিং প্রক্রিয়াও এভাবেই অব্যাহত থাকে। এই দুটি ফিল্মের মধ্যে একমাত্র যে মিলটি রয়েছে, তা হলো– এগুলোর শুটিং হয়েছে নাজারেথ ও জেরুজালেমে। ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স হলো সেই সময়ের একটি ডকুমেন্ট– যখন এটির শুট করেছি। আমার কাছে এই ফিল্মটি ছিল ঝড়ের আগেকার নীরবতা। আর ডিভাইন ইন্টারভেনশনও সেই একই ধরনের ব্যক্তিমানুষদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের হারানোর বেদনাকে দেখিয়েছে।

স্টিভ
ডিভাইন ইন্টারভেনশন-এর ওপেনিং-সিনে সান্তা কেন ছুরিবিদ্ধ হলো?
সুলেইমান
আমি একটি বি-মুভির ইন্ট্রোডাকশন চেয়েছিলাম। একটি সুনিশ্চিত চটুলতা ও সহিংসতা– উভয়েরই মেজাজ ছিল এতে। আসন্ন ঘটনাবলির সঙ্গে দর্শকদের সংযোগ স্থাপনের ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার জন্যই এমন ইন্ট্রোডাকশন।
স্টিভ
ফিল্মটিতে আপনি নিজেই অভিনয় করেছেন। আপনার কি অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ছিল?
সুলেইমান
না।
স্টিভ
অন্যকারও সিনেমায় অভিনয় করার আগ্রহ আছে?
সুলেইমান
সেটা নির্ভর করবে চরিত্রের উপর। স্রেফ অভিনয় করার কোনো আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। কিন্তু কোনো ভূমিকাকে যদি মনোমুগ্ধকর মনে হয়, সে ক্ষেত্রে কেন নয়?
স্টিভ
ই. এস. [এলিয়া সুলেইমান] চরিত্রটি কি কখনোই কথা বলবে না?
সুলেইমান
সম্ভবত সজোরে চিৎকার করে ওঠার অপেক্ষাতেই তার এমন নিশ্চুপ থাকা। ফিল্মটিতে আমার উপস্থিতি আমাকে এর ভেতরে নিয়ে গেছে। এতে নিজেকে কাস্টিং করিনি না আমি, বরং কাস্টিং হয়ে গেছি। ই.এস. নামটি শুধুমাত্র ফিল্মেই যায়নি, সিনোপসিস আর স্ক্রিপ্টেও ছিল। ফিল্মটিতে আমার উপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। তবে পরের ফিল্মেও এমনটা ঘটবে কি-না, বলতে পারছি না।

স্টিভ
ফিল্মটিকে ই.এস.-এর বিস্ফোরকধর্মী ফ্যান্টাসির দেখা মিললেও সে নিজে একজন ভীষণ নম্র ও অপ্রতিরোধ্য চরিত্র। ট্যাংক বিস্ফোরণ ও নিনজা অ্যাটাকের মতো দৃশ্যগুলোকে দর্শকেরা ক্ষমাযোগ্য সহিংসতা হিসেবে উপলব্ধি করতে পারবে কিনা– সে ব্যাপারে আপনার কোনো ভীতি ছিল? আপনি তো বলে থাকেন, আপনি শান্তিপ্রিয় মানুষ।
সুলেইমান
প্রথমত, আমি মনে করি, ট্যাংক বিস্ফোরণের দৃশ্যগুলোতে সবিশেষ কোনো সহিংসতা ছিল না। তবে [আমাদের সঙ্গে] ট্যাংকগুলোর সহাবস্থান করা উচিত বলে আমি মনে করি না। প্রশ্নটা আসলে উল্টে দেওয়া দরকার। ট্যাংকগুলোর কি থাকা উচিত? আসলে, আমি মনে করি, এগুলোকে সবসময়ই উড়িয়ে দেওয়া দরকার। আর আমিই কিন্তু এমনটা দেখানো একমাত্র মানুষ নই।
দ্বিতীয়ত, আমার ইমেজগুলোর বিভিন্ন ধরনের অর্থোদ্ধারের বিষয়টি আমাকে আনন্দিত করে। এগুলোতে যতগুলো সম্ভব পরত দেওয়ার চেষ্টা করি আমি। এ হলো ইমেজের একটি গণতান্ত্রিকতা। বর্তমানে আমরা যাকে গণতন্ত্র বলি, সে রকম কোনো উন্নত রাজনৈতিক সিস্টেমে আমরা যেখানে কোনোদিনই পৌঁছতে পারিনি, সেখানে আমার ইমেজগুলো ঠিক গণতন্ত্রের মতো একই ধরনের ঝুঁকি বয়ে বেড়ায়। এর কিছুটা যে মানুষ বুঝতে ভুল করবে, সেই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করি আমি; তবে আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিই না।
স্টিভ
আরব-বিশ্ব আপনার ফিল্মগুলোকে কীভাবে নিয়েছে?
সুলেইমান
কার্থেজ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে [তিউনিশিয়া] ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স-এর জন্য ভীষণ হেনস্থার শিকার হই। ফিল্মটির শেষদৃশ্যে ইসরাইলি পতাকার যে আয়রনিক্যাল ইমেজ আমি ব্যবহার করেছি, সেটি তারা বুঝতে ভুল করেছে। ফলে আমাকে তারা জিয়নিস্টদের [ফিলিস্তিনে ইহুদিদের পুনর্বাসন আন্দোলনের স্বপক্ষ] একজন সহচর হিসেবে অভিযুক্ত করেছে।
স্টিভ
ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স কি ‘ইসরাইলি ফান্ড ফর কোয়ালিটি ফিল্মস’-এর অর্থায়নে নির্মিত নয়?
সুলেইমান
এ ক্ষেত্রে আমি নিরুপায় ছিলাম। ফিল্মটি নির্মাণের টাকা যোগানোর জন্য আমাকে ভীষণ লড়তে হয়েছে। আরব কিংবা ফিলিস্তিনি ফিল্মে তারা আসলে এর আগে কখনোই অর্থলগ্নি করেনি। আমার কাছে এটি ছিল নাগরিক অধিকারের একটা লড়াই। এ ধরনের জাতিগত বৈষম্যের বিপক্ষে লড়াইটা আমি করতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত টাকা আমি পেয়েছি ঠিকই; কিন্তু আমাকে তারা সম্পূর্ণ অনুদান দিতে চায়নি। যেহেতু আমি একজন আরব, তাই তারা আমাকে অল্প কিছু টাকা দিয়েই আমার মুখ বন্ধ করাতে চেয়েছিল। ফিল্মটি তাদের ভীষণ অপছন্দের; আর, ১৯৯৬ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে [ইতালি] এটি ‘বেস্ট ফার্স্ট ফিল্ম’ অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছিল, পুরস্কারটি আমি নাকি স্রেফ আরব বলেই পেয়েছি। ইসরাইলিদের সঙ্গে আমার লড়াইটা এমনই ছিল।
পরে আরবদের সঙ্গেও আমার লড়াই বাঁধে। দর্শকদের সঙ্গে খুব একটা নয়; বরং সেইসব সমালোচকদের সঙ্গে– যারা অফিসিয়াল অগণতান্ত্রিক আরব-জান্তার মুখপাত্র। তারা ফিলিস্তিনকে স্রেফ ব্যবহার করে আরব দেশগুলোর পরিবর্তনীয় সিস্টেম থেকে তাদের জনগণের মুখ ফিরিয়ে রাখতে। দুটি ভিন্ন ধরনের জান্তার মাঝখানে পড়ে আমি থমকে গিয়েছিলাম। ফিল্মটি সম্পর্কে কয়েকজন আরব সাংবাদিক কিছু চমৎকার লেখা লিখলেও তার বেশিরভাগই ছিল বিক্ষিপ্ত ধরনের।

স্টিভ
আপনার ফিল্মকে ইসরাইলি দর্শকেরা কীভাবে নিয়েছে?
সুলেইমান
সিনে-প্রেমীরা এটিকে পছন্দ করেছে। চার মাস টপ-টেন লিস্টে জায়গা করে নিয়েছিল এটি। তবে দর্শকদের সেই অংশটি বামপন্থার প্রতি স্বভাবতই উদারমনা ছিল। ডিভাইন ইন্টারভেনশনকে তারা কীভাবে নেবে, জানি না। শুধু জানি, কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে [ফ্রান্স] ফিল্মটি দেখে বেশ কয়েকজন সমালোচক একেবারেই ক্ষুব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ ভালো কিংবা মন্দ– যা-ই হোক, ইসরাইলিরা সম্ভবত ফিল্মটিকে অপছন্দ করবে, আর আরবরা করবে পছন্দ। কে জানে? প্রথম ফিল্মটির শেষ ইমেজটি দেখে আরবরা যেখানে আমাকে ইসরাইলের সহচর হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল, ঠিক সে সময়েই একজন ইসরাইলি সমালোচক এটিকে ইসরাইল রাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক একটি ইমেজ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আমি নিশ্চিত, এই ফিল্মটিও তাদের গলা দিয়ে খুব সহজে নামবে না!
স্টিভ
আপনার ফিল্মের সবগুলো শটই কি একইরকম কমিক ভঙ্গিমাকে ধারণ করে?
সুলেইমান
না, একইরকম নয়। আমার প্রথম কাজটি ছিল একটি ভিডিও ফিল্ম; নাম, ইন্ট্রোডাকশন টু দ্য এন্ড অব অ্যান আর্গুমেন্ট। অপরাপর ফিল্ম ও ভিডিও ক্লিপের সঙ্গে মানানসই ছিল এটি। খুব বেশি হিউমার তাতে ছিল না। পশ্চিমা মিডিয়া ও ফিল্মে আরবদের, বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ভুলভাবে উপস্থাপনা করার প্রতি একটি কাউন্টার-অ্যাটাক ছিল এটি। খানিকটা বিতৃষ্ণাবোধ-জাগানিয়ার ভেতর দিয়ে এটি শেষ হয়েছে। অন্যদিকে হোমেজ বাই অ্যাসেসিনেশন-এ রয়েছে একেবারেই সুতীব্র ও স্থির সেন্স-অব-হিউমার। আমরা ধারণা, ভীষণ ফানি এটি; তবে ফিল্মমেকিংয়ের সময় নিজের সেন্সর-বোধ আমি চাপা দিয়ে রাখি। সেটি কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়; বরং ফিল্মি-সম্ভাবনার দোহাইয়ে। অল্প বয়সে আপনার পক্ষে জানা সম্ভব হবে না, ফিল্মে নিজেকে যেভাবে প্রকাশ করছেন– সেটি কতটা নিরাপদ। আপনি তখন একটা টলমল অবস্থায় থাকবেন। ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স বানানোর শেষে আমি উপলব্ধি করলাম, যা চেয়েছি– তা করতে পেরেছি। এ কারণেই ডিভাইন ইন্টারভেনশন-এর মধ্যে ভিন্ন ধারার হাজিরা সম্ভব হয়েছে– বাণিজ্যিক ও সার্জো লিয়নের [ইতালিয়ান ফিল্মমেকার] ফিল্মগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করে। ফিল্মটিকে আমি ভিন্ন একটি অ্যাঙ্গেল থেকে হাজির করতে চেয়েছি। চেকপোস্টের দৃশ্যটির আগে ব্যবহার করেছি স্ট্যাটিক ইমেজ। তারপর ফিল্মের চেয়ে বরং মুভির মতো করে ব্যবহার করেছি ট্র্যাকিং শট ও ক্রেন। তবে আন্তরিক থাকার প্রচেষ্টা আমার মধ্যে সবসময়ই থাকে।
স্টিভ
আপনার ফিল্মগুলো কতটা আত্মজৈবনিক? ‘কাইয়্যের দু সিনেমা’য় লেখা এক আর্টিক্যালে নাজারেথের যে বর্ণনা আপনি দিয়েছিলেন, সেটির সঙ্গে তো ফিল্মগুলোতে দেখা বর্ণনা একেবারেই মিলে যায়।
সুলেইমান
আমিও সেটা আশা করি! আমার মতে, নাজারেথকে একটা সমুদ্র হিসেবে দেখা দরকার। তাহলে অন্তত মাছ ধরতে সেখানে যেতে পারব আমরা! তবে ‘আত্মজৈবনিক’ শব্দটির বদলে আমি ‘আত্মপ্রতিকৃতি’ বলতে চাই। আপনি যা দেখছেন তা স্রেফ তথ্যপূর্ণ কিংবা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়। আপনি যখন জীবনকে দেখতে পাবেন, তখনই বিষয়গুলোকে আবিষ্কার করতে পারবেন। স্মৃতি থেকে নিজের শৈশবকে আবিষ্কার করি আমরা। আর সেটিকে যখন বর্ণনা করি, তখন আমরা সবসময়ই ফ্যান্টাসির ভেতর দিয়ে যাই। যে বাস্তবতাকে আমি দেখেছি, তার প্রতিফলন হিসেবে অনেকগুলো আবহও রয়েছে আমার ফিল্মগুলোতে। তবে আমার সঙ্গে ঘটা সব ঘটনা থেকে অনেকগুলো মুহূর্তকে আমি ছড়িয়ে দিয়েছি। নাজারেথে এর অনেক কিছুই ঘটেছে, তবে একেবারে ভিন্নভাবে। চেকপোস্টের দৃশ্যটিতে দেখা ঘটনাটি বাস্তবেও ঘটেছে।

স্টিভ
চেকপোস্টে প্রাইভেট-কারে বসে মিট করার সময় নারীটির হাত ধরে রাখা?
সুলেইমান
না; চেকপোস্ট ক্রস সে করত না; বরং আমিই করতাম। [চেকপোস্টের কাছে এসে] রামাল্লাহর লাইসেন্স প্লেট লাগানো একটি প্রাইভেট-কার সে পার্ক করত, আর আমি ক্রস করে যেতাম। সে আমার প্রাইভেট কারে লাফিয়ে ওঠত; তারপর আমি তাকে চোরাচালানের মতো নিয়ে যেতাম জেরুজালেমে। চেকপোস্টে যদি ওর আইডি কার্ড দেখতে চায়– সেই ঝুঁকি ছিল আমাদের। তবে আমরা এমনটাই করতাম। একেবারেই ফিকশনের মতো হাত-ধরে বসে থাকতাম।
স্টিভ
প্রথম দুটি ফিচার ফিল্ম নির্মাণের মাঝখানে এতটা সময় নিলেন কেন?
সুলেইমান
পারিবারিক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে দিন যাচ্ছিল আমার। আব্বা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত কারণেই সিনেমা থেকে ছুটি নিয়েছিলাম আমি। পুরো দুটি বছর এভাবেই কেটে গেছে। তারপর আব্বা মারা গেলে আমি প্যারিসে চলে যাই; আর আব্বার অসুস্থতা নিয়ে কয়েকটি সিগমেন্ট লিখতে শুরু করি। একই সময়ে প্রেমে পড়ি আমি। হাসপাতালের দৃশ্যগুলোর অনুপ্রেরণা আমার সেইসব অভিজ্ঞতা থেকেই এসেছে।
স্টিভ
এই ফিল্মটি বানাতে গিয়ে অর্থলগ্নি-সংক্রান্ত কোনো ঝামেলায় পড়েছেন?
সুলেইমান
না। ক্রনিক্যাল অব অ্যা ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স ছিল আমার প্রথম ফিচার ফিল্ম। নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় আমি এটির প্রডিউস করেছি; ফলে ‘আইটিভিএস’ [ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন সার্ভিস] আমাকে একজন আমেরিকান ফিল্মমেকার হিসেবেই গণ্য করেছে। এ ধরনের ফাউন্ডেশনগুলোর কাছে এক সময় আমাকে ধর্ণা দিতে হয়েছে। আমার স্ক্রিপ্টগুলো যখন কাউকে দেখালাম, তখন ব্যাপারটা বেশ দুরূহ হয়ে ওঠত; কেননা, আমার ফিল্মে সংলাপ খুব সামান্যই থাকে। ডিভাইন ইন্টারভেশন প্রডিউস আমি নিজে করতে চাইনি; তবে এটি কো-প্রডিউস করতে হয়েছে আমাকে। নিনজার দৃশ্যটির শুটিংয়ের জন্য আমাদের আরও টাকার দরকার পড়েছিল। ফলে অন্য উৎসের সন্ধানে যাই আমি, আমার প্রডিউসারও তা-ই করেন। প্যাকেজটা আমরা একসঙ্গে করি। এ ক্ষেত্রে একটা সম্পূর্ণ প্রোডাকশন কোম্পানি আমার পেছনে ছিল।
সূত্র : ইন্ডিওয়্যার। ফিল্ম-জার্নাল; যুক্তরাষ্ট্র।।১৫ জানুয়ারি ২০০৩