পোলিশ ফিল্মমেকার আন্দ্রে ভাইদার সাক্ষাৎকার । মানুষের জন্য, মানুষের প্রতি সিনেমা

492

আন্দ্রে ভাইদা । ৬ মার্চ ১৯২৬-৯ অক্টোবর ২০১৬। পাম দি’অর, অনারারি গোল্ডেন বিয়ার ও অনারারি অস্কারজয়ী পোলিশ মাস্টার ফিল্মমেকার। সদ্যপ্রয়াত এই কিংবদন্তির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে এই পুরনো অথচ টাটকা সাক্ষাৎকারটির পাঠ নেওয়া যাক, চলুন… 

সাক্ষাৎকারগ্রহণ ড্যান যাকির  অনুবাদ রুদ্র আরিফ


অ্যা লাভ ইন জার্মানি ফিল্মটি আপনার অন্য ফিল্মগুলো থেকে আলাদা। এখানে আমজনতার মধ্যে, সিস্টেমিক ম্যানিফেস্টেশনের বিপরীত হিসেবে জেগে ওঠা ফ্যাসিবাদের অপর রূপটি দেখিয়েছেন আপনি।

 আন্দ্রে ভাইদা
হ্যাঁ। বেঁচে থাকার প্রশ্নে, একটা টোটালিটেরিয়ান সিস্টেমকে এর সকল উপাদান, সকল ব্যক্তিমানুষ জড়ো করে, সম্পূর্ণভাবে সমন্বিত ও সমরূপী করে তুলতেই হয়। কার্যকরী হয়ে ওঠার প্রশ্নে, এই সিস্টেমটিকে ব্যক্তিমানুষের রান্নাঘর ও শোবার ঘরেও পৌঁছানোর সক্ষমতা অর্জন করতে হয়। মানুষের বিপক্ষে কোনো শত্রুপক্ষকে সচল করা ছাড়া, সিস্টেমের পক্ষে একতাবদ্ধতা সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এ কারণেই এটি শত্রু তৈরি করে। এই ফিল্মে, এই যে পোলিশ পো [পো/পিওডব্লিউ : পিপল অব ওয়ার], সে নিশ্চিতভাবেই সিস্টেমকে হুমকিতে ফেলতে পারবে না। সে শুধু পারে এক জার্মান নারীর পাশে শুয়ে থাকতে– যার একটা উদ্দেশ্য রয়েছে!
তার আগে, আমি ভিকটিমদের ওপর টোটালিটারিয়ানিজমের প্রভাবের একটা পরীক্ষা করেই দেখতে পারি কেবল। এ বেলা আমি এটা দেখাতে চেয়েছি জার্মান পক্ষ থেকে; কেননা, এ পক্ষটা ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। অশুভকে দেখাতে চেয়েছি আমি– যেন এমনটা আর কখনোই না হয়। আমি মনে করি, এ বিষয়টি সব সময়ের জন্যই গুরুত্ববহ ও সঙ্গতিপূর্ণ; কেননা, টোটালিটারিয়ানিজমের পুনর্জন্ম নানা রূপে ঘটতেই থাকে।

সম্ভবত পোল্যান্ডের প্রেক্ষাপটেও, ম্যান অব আয়রন-এ যেমনটা আপনি দেখিয়েছেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
হ্যাঁ; আর তা দেখিয়েছি মূলত স্তালিনবাদী পিরিয়ডে। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনো অবরোধের বিরুদ্ধে, যে কোনো স্থানে একজন মানুষকে লড়াই করতেই হয়– নিজের ওপর যে কোনো পরিস্থিতিতে অধিকার অর্জনের জন্য।

বর্তমান পরিস্থিতিতে, পূর্ব ইউরোপ, বিশেষ করে, পোল্যান্ডে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও শিল্পগত-স্বাধীনতার কোনো আশা দেখেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
এটা আমার দেশ। যেটুকু স্বাধীনতা প্রয়োজন, সেটি নিখাঁদভাবে লাভ করে, কাজ করে যাওয়ার সম্ভাব্য সকল সম্ভাবনাকে বাজিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমি করে যাই।

আপনার অনেক সিনেমার সমালোচনামূলক বৈশিষ্ট্যের প্রতি প্রয়োজনীয় সমবেদনা দেখায়নি যে রাষ্ট্রনীতি, সেটির বিরুদ্ধে এটি একটি নিরন্তর লড়াই নয় কি?

 আন্দ্রে ভাইদা
নিশ্চয়ই। তবে এটা তো আমার দায়িত্বও। সবচেয়ে বড় কথা হলো, স্বাধীনতা কিন্তু বাধ্যবাধকতার চেয়ে কম কিছু নয়; অবশ্য তা নির্ভর করে, একজন মানুষ নিজের জীবনে এটাকে কতটা নিবিড়ভাবে চায়– সেটার ওপর।

ম্যান অব আয়রন
ম্যান অব আয়রন

আপনার কোনো ফিল্ম মানুষকে কোনো বাস্তব রাজনৈতিক পথে প্রভাবিত করেছে এবং খানিকটা স্বাধীনতার সন্ধান দিয়েছে– বাস্তব অভিজ্ঞতায় এমনটা ঘটতে দেখেছেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
এর জবাবে আমি হ্যাঁ-ই বলব। কেননা, কোনোকিছুকে যদি নিজে সত্য বলে বিশ্বাস না করি, তাহলে এমনতর সিনেমা বানানোর শক্তি ও সাহস খুঁজে পাবো না আমি। আমার ধারণা, ম্যান অব আয়রন ফিল্মটিতে সবচেয়ে নিশ্চিত প্রভাব আমি অর্জন করতে পেরেছি। একটা রাজনৈতিক সিনেমার নির্যাস নিহিত থাকে– না-বলা কথা বলে দেওয়ার মধ্যে, গোপনীয়তাকে ফাঁস করে দেওয়ার মধ্যে, ঘটনার আড়ালে পড়ে থাকা বাস্তবতাকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার মধ্যে।

ম্যান অব আয়রন অতিশয় সোজাসাপ্টা হলেও, পোল্যান্ডের মতো একটা দেশে, একজন ফিল্মমেকারকে এমনতর বিষয় প্রকাশের ক্ষেত্রে চতুরতা ও পরোক্ষ পন্থা খুঁজে নিতেই হয়। এ বিষয়টিকে আপনি কি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
নিশ্চয়; তবে এটি শিল্পীর জীবন ও তার শিল্প সৃষ্টির ঠাসবুনোটকে জটিলও করে তোলে। আমরা পরস্পরের সঙ্গে এমন একটি ভাষায় যোগাযোগ স্থাপন করি, যেটি শুধুমাত্র আমাদের কাছেই বোধগম্য। শিল্পের ভাষা তো সার্বজনীন; ফলে, এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে অস্বাস্থ্যকর। তবুও আমরা কোনো স্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে নিজেদের খুঁজে নিইনি। আমরা, পোলিশ ফিল্মমেকারেরা অনুভব করি, যে সিনেমা আর কারও পক্ষে আমাদের জন্য বানিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, সেগুলো বানানোর কাজেই নিজেদের নিয়োজিত করেছি। সেগুলো অন্যত্র দেখানোর ভাবনটা এ ক্ষেত্রে গৌণ।

সে ক্ষেত্রে, দাঁতো অ্যা লাভ ইন জার্মানির হয়তো নন-পোলিশ আইডেনটিটি থাকা সত্ত্বেও, এগুলো আসলে সেই পোলিশ দর্শকদের উদ্দেশেই বানানো হয়েছে– যেন তারা নিজেদের দেশের এই সবিশেষ রেফারেন্সগুলো খুঁজে পেতে পারেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
অ্যা লাভ ইন জার্মানির তুলনায় দাঁতোর ক্ষেত্রে বিষয়টি বেশি প্রাসঙ্গিক; পোল্যান্ডে এই ফিল্মটাকে ঠিক এভাবেই গ্রহণ করা হয়েছিল। [দেশটির] সর্বত্রই দেখানো হয়েছিল ফিল্মটি; আর এটি যা বলতে চেয়েছে– সব মানুষই বুঝতে পেরেছিল তা। লোকজন আমাকে জিজ্ঞেস করে, দাঁতো আসলে ভালেসা [লেক্স ভালেসা : পোলিশ রাষ্ট্রপতি (১৯৯০-১৯৯৫)] ও রোবেসপিয়্যেরের [মাকসিমিলিয়্যে রোবেসপিয়্যের : ফরাসি বিপ্লব-ব্যক্তিত্ব ও সাম্রাজ্য-প্রধান– ‘রিজন অব টেরর’ (১৭৯৩-১৭৯৪)] শাসনামলের প্রতিনিধিত্ব করে কিনা। বলি, এটি তার চেয়েও জটিল। ভবিষ্যতের ভয়ে নিজ দেশের লোকজনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে একটা যন্ত্র– মানুষ এটা দেখতে পায়। তারা এমন এক পরিস্থিতির দেখা পায়, যেখানে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিজেই একটা লক্ষ্যমাত্রায় পরিণত হয়

দাঁতো
দাঁতো

এ সময়ে এসে, সলিডারিটির [সলিডারিটি : ইনডিপেনডেন্ট সেল্ফ-গভার্নিং ট্রেড ইউনিয়ন ‘সলিডারিটি’; ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ প্রতিষ্ঠিত পোলিশ ট্রেড ইউনিয়ন] কতটুকু সম্ভাবনা দেখেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
পোল্যান্ডের বর্তমান পরিস্থিতিকে নিরূপণ করা একেবারেই কঠিন ব্যাপার। আমরা একটা ক্রমপরিবর্তনশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সামনে কী হয়– তা চেয়ে দেখার অপেক্ষা করছি আমরা। পোলিশ প্রশ্নের চাবিকাঠি রয়ে গেছে আমাদের আয়ত্বের বাইরে; পোল্যান্ডের ভেতরে পরিবর্তন আনা বলতে শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তন আনাই সম্ভব।

আপনার ফিল্মগুলোর প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিক্রিয়া কেমন?

 আন্দ্রে ভাইদা
শেষ কয়েকটি সিনেমা ওখানে দেখায়নি; তবে আমি জানি, সেখানে আমার অনেক গুণগ্রাহী রয়েছেন, আর আমার ধারণা, আমার সিনেমাগুলো সেখানকার মানুষের কথাও বলে।

কীভাবে সিনেমা করেন আপনি? কী কী আপনাকে প্রভাবিত করে?

 আন্দ্রে ভাইদা
একজন ফিল্মমেকারের হাতে অপশন থাকে মাত্র দুইটি : নিজের চারপাশে যা দেখে– তা নিয়ে; অথবা, নিজের সঙ্গে অহর্নিশ বোঝাপড়া করে ও নিজের সৃষ্টিশীলতার ওপর মনোযোগ দিয়ে সিনেমা বানানো। আমি সিনেমা বানাই একটা কারণে : মানুষকে যা কিছু আচ্ছন্ন করে রাখে– গুরুত্বপূর্ণ এমন কোনোকিছু নিয়ে, আমার যখন কোনোকিছু বলার থাকে, তখন সেটিকে নানা ধরনের উপাদান ব্যবহার করার মাধ্যমে বলার চেষ্টা করে; তা সেটা হয়ে ওঠুক দ্য বার্চ উড, কিংবা ল্যান্ডস্কেপ আফটার ব্যাটল, কিংবা ম্যান অব মার্বেল, কিংবা দাঁতো। এটা [সিনেমাটা] প্রথম থেকেই আমার মধ্যে [পরিপূর্ণরূপে] থাকে না; বরং বানাতে বানাতে হয়ে ওঠে।

তবুও, আপনার চেতনা ভীষণ রকম ব্যক্তিগত। এই উপাদানের মধ্য দিয়ে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশ করার সবচেয়ে নৈকট্য ঠিক কখন অনুভব করেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
এভরিথিং ফর সেল ও উইদাউট অ্যানেসথেসিয়া ফিল্মে সে কথা বলেছি আমি– তা এগুলো কারও চোখে আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিল্মগুলোর অংশ হিসেবে বিবেচিত না-ই-বা হোক। নিজেকে যখন আমি এমন কোনো পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করি– যেখান থেকে আমার পালানো উচিত, তখনই সেটি নিজের কাছে সবচেয়ে ব্যক্তিগত পরিস্থিতি হয়ে ধরা দেয়। তার মানে, একেবারেই প্রথম থেকে, একটা নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে আমাকে।

এভরিথিং ফর সেল
এভরিথিং ফর সেল

এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি ঠিক কীসের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন?

 আন্দ্রে ভাইদা
আমি এভরিথিং ফর সেল বানিয়েছি, কারণ, তখন একটা ভীষণ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। প্রথম তিনটি সিনেমার সাফল্যের পর, যখন আমার বেশ নামডাক হয়ে গেল, তখন এমন কয়েকটি ফিল্ম আমি বানিয়েছি– যা আমার জন্য বিপত্তি ডেকে আনে : ইনোসেন্ট সর্কারারস, স্যামসন, সাইবেরিয়ান লেডি ম্যাকবেথ, দ্য গেটস অব প্যারাডাইস…। এগুলো খুব একটা ভালো হয়নি। তাই ঠিক করলাম, আবার নতুন করে শুরু করার রাস্তা খুঁজতে হবে; নিজেকে ভেঙে গড়ার দরকারটা ছিলই আমার। একান্তই নিজের সমস্যাবলি নিয়ে, আত্মপরিচয় সন্ধান নিয়ে, আমি কী বলতে চাই আর কাকে বলতে চাই– তা নিয়ে; মানে ফিল্মমেকিং নিয়ে একটা ফিল্ম বানানোটা তখন আমার জন্য স্বাভাবিক ছিল।
     উইদাউট অ্যানেসথেসিয়ার বিষয়টি ছিল আলাদা। এই ফিল্মটি আমি এমন এক সময়ে বানিয়েছি, যখন সরকার টের পেয়ে গেছে– শিল্প কর্তৃত্বকারীদের মতো, অন্য কর্তৃত্বকারীরা তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠছে; ফলে নিজস্ব পন্থায় এমন সবকিছুর বিনাশ ঘটানোর প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল [সরকারের জন্য]। হুট করেই টের পেলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অনুষদে আমি পড়েছি, সেখানে সামাজিক জীবনের আর কোনো অস্তিত্বই নেই। এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখানোর দরকারটা আমার ছিলই।
     তবে কখনো কখনো আমি দর্শকের মনে স্রেফ একটা আঁচড় কেটে রেখে যেতেও পছন্দ করি। ত্রিশ বছর [সাক্ষাৎকার প্রদানকালের হিসেবে] ধরে সিনেমা বানাচ্ছি আমি; এতদিনে জগতের অনেক কিছুই বদলে গেছে; বিশেষ করে, সিনেমা দেখতে যাওয়া মানুষগুলো। যে ফিল্মমেকার ছোট ছোট দেশে, স্বল্প-পরিচিত ভাষায় সিনেমা বানান, টিকে থাকার জন্য বিদেশ থেকে যদি খ্যাতি বনে আনতেই হয় তাকে– সেই বিবেচনায় তিনি আসলে বিশেষভাবে সমালোচনাযোগ্য

দর্শকের সঙ্গে নিজেকে আপ-টু-ডেট রাখেন কীভাবে?

 আন্দ্রে ভাইদা 
নিজেকে নিয়ে যেভাবে ভাবি, দর্শকদের নিয়েও সেভাবেই ভাবি আমি। তারা না আমার চেয়ে বেশি, না কম বুদ্ধিমান; না আমার চেয়ে ভালো, না মন্দ। আমজনতার একজন প্রতিনিধি হিসেবে নিজেকে একভাবেই বিবেচনা করি।
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই এমন অনেক কাকতালীয় ব্যাপার আছে– যা সৌভাগ্যজনক এবং দুর্ভাগ্যজনকও। দাঁতোর জন্য বেশ কিছু বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আমি; কিন্তু যেভাবে বানাতে চাই– সেভাবে মাত্র পাঁচ-ছয় বছর আগে বানাতে পারলেও, ফরাসি দর্শকেরা এটাকে একেবারেই গ্রহণ করেননি। ভাগ্য ভালো, ফ্রান্স যখন সমাজতান্ত্রিক হয়ে যায়, তখন এটা মুক্তি পেয়েছিল; আর দৈনন্দিন জীবনে সমাজতন্ত্রের অনুপ্রবেশ নিয়ে ফরাসি সমাজ হয়ে ওঠে দ্বিধাবিভক্ত। ফলে এ পরিস্থিতিতে ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই সিনেমাটি হয়ে ওঠে উত্তেজক বিষয়। এটিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। সেই আলোচনায় এই ফিল্মটি নিজেই হয়ে উঠেছিল একটি অংশগ্রহণকারী কণ্ঠস্বর। প্রকৃত অনুরাগের উদ্রেক ঘটিয়েছিল এটি।

আপনার প্রথমদিকের সিনেমাগুলো পোলিশ স্কুল [পোলিশ ফিল্ম স্কুল : একটি অপ্রতিষ্ঠানিক ফিল্মগ্রুপ (১৯৫৫-১৯৬৩)] সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। এটির জন্ম হলো কীভাবে? আর ফিল্মগুলোতে এটি কীভাবেই বা উদ্ভাসিত হয়েছিল?

 আন্দ্রে ভাইদা 
সহজাতভাবে জন্ম হয়েছে এটির। নেপথ্যে কারণ ছিল দুটি। একটা ছিল– যুদ্ধের নিজস্ব অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়ে সিনেমা বানানো ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ফিল্মমেকারদের। অন্য কারণটি ছিল– পোলিশ সাহিত্য : এরও ফোকাস ছিল যুদ্ধের উপর; ফলে এটি [সাহিত্য] আমাদের [ফিল্মমেকারদের] মিত্র হয়ে ওঠে। যুদ্ধ শুধুমাত্র আমার কিংবা আন্দ্রে মুঙ্কের [১৯২১-১৯৬১; পোলিশ ফিল্মমেকার] মতো লোকদের কাছেই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল না; বরং ইয়ের্জি আন্দ্রেয়েফসকি (১৯০৯-১৯৮৩) [অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস] ও তাদেউশ বরোস্কির [১৯২২-১৯৫১] মতো লেখকদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ফলে, আমরা যদি পোলিশ সাহিত্যের প্রকৃত রূপ [সিনেমায়] ফুটিয়ে না-ও তুলে থাকি, তবুও এটি [সাহিত্য] আমাদের কাছে একটি সহায়ক ব্যাকগ্রাউন্ড জাহির করেছে।
যুদ্ধ এতটাই ভয়ানক ছিল যে, আমি ভেবে নিয়েছিলাম, ডকুমেন্টারিতেই এটিকে সবচেয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যাবে। ঘটনাগুলো এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে, সেগুলোকে ফিকশনালাইজ করা দুরূহ ছিল। যদিও আমাদের শিল্পগত ও সাহিত্যিক ঐতিহ্য ছিল রোমান্টিক, তবু আমাদের সিনেমায় ডকুমেন্টারি উপাদান হাজির হয়ে ফিকশনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। আমার সিনেমার দুঃসাহসী-বলিষ্ঠ ইমেজ, তিক্ত শ্লেষ, রোমান্টিসিজম– এ সবকিছুরই সৃষ্টি হয়েছে পোলিশ স্কুল-এ।
কিন্তু পোলিশ স্কুল-এরও শেষ ঘনিয়ে এলো। কেননা, নিজেকে এগিয়ে নিতে নিজের পরিবর্ধন ঘটানো ও রূপান্তর করানোর মতো নতুন কোনো বিষয়বস্তুর দেখা এটি কখনোই পায়নি। পোলিশ সিনেমার পরবর্তী বিষয়বস্তু ছিল– স্তালিনবাদ।

ইনোসেন্ট সর্কারারসস্যামসন-এর মতো সিনেমাগুলোকে কোন বিবেচনায় আপনার সৃষ্টিশীলতার একটি অধঃপতন হিসেবে দেখেন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
ইনোসেন্ট সর্কারারস ফিল্মটি আরেকটু ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠতে পারত। ঘটনা হলো, এই ম্যাটেরিয়ালটি তখনকার হিসেবে ছিল একেবারেই নতুন; মানে, নতুন প্রজন্ম সম্পর্কে কোনো ফিল্ম তখন কেউ বানায়নি। কিন্তু ভালোমানের অভিনেতা আমি পাইনি। যাদের চিনতাম, তারা ভীষণ বুড়ো প্রজন্মের। কেন্দ্রীয় চরিত্রটিতে [জিবিগ্নিয়েফ] সিবুল্সকি কিংবা এমনকি [ইয়ের্জি] স্কলিমফসকির মতো কারও অভিনয় করার দরকার ছিল। তাহলে ফিল্মটা সত্যিকার অর্থেই একটা বিস্ময়ের ব্যাপার হতে পারত।
ফিল্মটির কাজ আমি শেষ করার পর, এক বছর ফেলে রাখতে হয়েছিল আমাকে। তারপর অনেকগুলো পরিবর্তন-পরিমার্জন শেষেই কেবল মুক্তি দিতে পেরেছি। কর্তৃপক্ষ কেন ফিল্মটির ওপর এমন নাখোশ ছিল, সে ভাবনা আসলেই অবাক করে আমাকে : নায়ক তার পা দিয়ে একটা স্টেরিওফোনিক রেকর্ড প্লেয়ার চালায়– এমন একটি দৃশ্য আমাকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে। এটির একেবারেই অগ্রহণযোগ্যতার কারণ হলো : একটা সমাজতান্ত্রিক দেশে, যেখানে কিনা এ ধরনের বিলাসবহুল জিনিস ছিল জীবনের জন্য অনেক আরাধ্য ব্যাপার, তা আপনি এমন উদাসিনতার সঙ্গে দেখাতেই পারেন না! এটি ছিল পৃথিবীর একটি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি, এটির ভবিষ্যতের প্রতি একটি সমালোচনার ভাষান্তর স্বরূপ।

ইনোসেন্ট সর্কারারস
ইনোসেন্ট সর্কারারস

আপনার সিনেমায় দুজন অভিনেতাকে যথেষ্ট গভীরভাবেই কাজ করতে দেখা গেছে– জিবিগ্নিয়েফ সিবুল্সকি ও দানিয়েল ওলব্রিসকি। তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।

 আন্দ্রে ভাইদা 
সিবুল্সকি অন্য যে কোনো অভিনেতার চেয়ে গভীরভাবে নিজের প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন। নিজের জন্য তিনি এমন এক যথাযোগ্য অবস্থান তৈরি করে নিয়েছিলেন যে, সিনেমায় অভিনীত তার চরিত্র থেকে বাস্তবজীবনের তাকে আলাদা করা অনেকাংশেই সম্ভব নয়। সবসময় নিজের সত্ত্বাকেই জাগ্রত রেখে গেছেন তিনি। তার শরীরে ভিন্ন কোনো পোশাক চাপিয়ে দেওয়া এবং তাকে দিয়ে অন্য কারও চরিত্রে অভিনয় করিয়ে নেওয়া অসম্ভব ছিল। তবে এগুলো বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য। ভেতরের তিনি ছিলেন আমজনতার প্রতি নিজের দায়িত্ববোধের প্রশ্নে সদা-চমৎকার– যে বৈশিষ্ট্যের দেখা [আর কারও মধ্যে] কখনোই কোথাও পাইনি আমি। থিয়েটারে তাকে নিয়ে দু’বার কাজ করেছি আমি– অ্যা হেটফুল অব রেইন ও টু ফর দ্য স্যিস্য। আমাকে বলতেই হবে, এ কাজের জন্যই জন্মেছেন তিনি। ক্রাকোতে [পোল্যান্ডের এক শহর] অ্যা হেটফুল অব রেইন-এর একটা পারফর্ম্যান্স চলার সময়, তিনি সোজা হেঁটে মঞ্চে গিয়ে ওঠেন এবং অভিনয় শুরু করে দেন। তারপর আচমকাই থেমে গিয়ে বলেন, ‘ক্ষমা করবেন, আমার একটা ভুল হয়ে গেছে’। তারপর নাটকটা আবার প্রথম থেকে শুরু করেন তিনি। এ রকমটা করার সাহস কোনো অভিনেতাই দেখাবে না; কিন্তু তিনি অনুভব করেছিলেন, এটা করার অধিকার তার আছে। তুখোড় কল্পনাশক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি।
আপনি হয়তো জানেন, তিনি আক্ষরিকঅর্থেই অন্ধ ছিলেন; ফলে তার চোখ ছিল অভিব্যক্তিহীন। এ কারণেই তার চেহারার ক্লোজ-আপ শট খুব একটা নেওয়া হয় না। নিজের আবছায়া ব্যবহার করে, মুভমেন্টের এই অভাবটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি। অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস-এ কিছু দৃশ্য আছে, যেখানে ফ্রেমের মধ্যে তার পা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে তার আবছায়ার দেখা মিলেছে। যে ফিল্মমেকারেরা এটা বুঝতে পারেননি, তারা তাদের সিনেমায় তার এই বিশেষত্বকে ধারণ করতে সক্ষম হননি; অবশ্য, তারপরও তাদের সিনেমায় তার কাজ হয়ে আছে যথেষ্ট মানসম্পন্ন। জীবনটা যাদের কাছে ছিল একটা উপহারের মতো, একটা অলৌকিক ঘটনার মতো– সেই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে গেছেন তিনি।
অন্যদিকে, ওলব্রিসকি এমন এক প্রজন্মের মানুষ– যারা আধুনিক পোলিশ ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার, অর্থাৎ, যুদ্ধের ভেতর জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা অর্জন না করতে পারার একটা যৌগিক মানসিকতা নিয়ে খেলা করেন। তুমুল বোমাবর্ষণের ভেতর, ভারসাভার এক ভূগর্ভস্থ কুঠিরে জন্মেছেন তিনি; আর তার বয়স যখন দুই বছর, তখন যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়। যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় ঘটনা ছিল স্তালিনবাদ; তবে তার প্রজন্ম বেঁচে থেকেছে আগের প্রজন্মের ছায়াতলে।

 পোলিশ সিনেমায় স্তালিনবাদের পরবর্তী বিষয়বস্তু কোনটি ছিল?

 আন্দ্রে ভাইদা 
সলিডারিটি। অবশ্য যেহেতু খুবই ছোট্ট একটি পিরিয়ড ছিল, ফলে এটিকে নিয়ে খুব বেশি সিনেমা বানানো হয়নি; তবে এটি নিরন্তর প্রেরণা জুগিয়ে গেছে। ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কির নতুন সিনেমা, যা কিনা এখনো মুক্তি পায়নি [সাক্ষাৎকার প্রদানের সময়], সেই নো এন্ড-এর [Bez Końca; ১৯৮৫] বিষয়বস্তুও এটি।

আপনার প্রজেক্টগুলো কীভাবে হয়ে ওঠে? উদাহরণস্বরূপ, ম্যান অব মার্বেল-এর কথাই যদি ধরি?

 আন্দ্রে ভাইদা 
গেটস অব প্যারাডাইস-এর মতো ব্যর্থ ফিল্মগুলো বানিয়ে যখন যুগোস্লাভিয়া থেকে ফিরে এসেছি, ঠিক করলাম, আরও একবার নতুন করে শুরু করা যাক। আবারও বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিলাম ফিল্মমেকিংকে; একটি বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে। আমি শুনেছিলাম, স্তালিনের শাসনামলে নায়কের মতো জীবন কাটানো এক রাজমিস্ত্রী পরবর্তী সময়ে বেকার হয়ে, কাজ খুঁজে পাননি। এভাবেই এ বিষয়বস্তুটির উৎপত্তি। আসলে এটা মাথায় এসেছিল এভরিথিং ফর সেল-এরও আগে; তবে এ সিনেমার শুটিংয়ের অনুমতি পেতে ১১ বছর লেগে গেছে আমার। ফলে এটার বদলে অন্যটি বানিয়েছি এই ফাঁকে।

গেটস অব প্যারাডাইস
গেটস অব প্যারাডাইস

গেটস অব প্যারাডাইস-এর সমস্যা কী ছিল?

 আন্দ্রে ভাইদা 
এমন আজব একটা দেশে বিদেশি অভিনেতাদের নিয়ে সিনেমা বানানোটা সব সময়ই দুরূহ খুব। অভিনেতারা ছিলেন ব্রিটিশ, আমরা শুটিং করেছি যুগোস্লাভিয়ায়, আর তার চেয়েও বড় কথা, স্ক্রিপ্টটা ছিল ধোয়াশাচ্ছন্ন রেখাচিত্রে ভরা চরম কাব্যিক। কাজটা একেবারেই হয়নি!

আপনি ফ্রান্স আর জার্মানিতেও কাজ করেছেন। বিদেশে কাজ করতে কেমন লাগে?

 আন্দ্রে ভাইদা 
বাধ্য হলেই কেবল বিদেশে কাজ করি আমি। সানন্দে যাই না; কারণ, আমি জানি, এটাকে অর্থবহ করে তোলা কতটা দুরূহ। বিদেশে বানানো কোনো সিনেমাকে বিশেষ করে অভিনেতারাই পারে ধ্বংস করে দিতে। আলাদা স্টাইলের একগুচ্ছ অভিনেতাই ফিল্মমেকারের সামনে প্রজেক্টটি ঐক্যবদ্ধ করে তোলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়; আর এর ফল বেশির ভাগ সময়ই হয়ে ওঠে কৃত্রিম ধরনের। তাছাড়া, তাদেরকে আপনি ডাবিং করাবেন আরেকটা ভাষায়– যা তাদের আত্মার অর্ধেকটাই কেড়ে নেবে।

গুরুত্বপূর্ণ পোলিশ ফিল্মমেকারদের মধ্যেই আপনিই শুধু দেশ আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন; বাকি সবাই, যেমন [রোমান] পোলান্সকি (১৯৩৩-), [ইয়ের্জি] স্কলিমফসকি (১৯৩৮-), [ক্রিস্তফ] জানুসসি (১৯৩৯-), [আন্দ্রে] জুয়াফ্সকি (১৯৪০-২০১৬) প্রমুখ তো চলে গেছেন [দেশের বাইরে]

 আন্দ্রে ভাইদা 
পোলান্সকির ঘটনা আলাদা। [ক্যারিয়ারের] একেবারেই শুরুর দিক থেকেই, পোল্যান্ডে থেকে যাওয়ার কোনো আগ্রহ ওর মধ্যে ছিল না। তিনি এখানেই নিজের প্রথম সিনেমাটি বানিয়েছিলেন; কারণ, এটিকে তিনি বিদেশে গিয়ে সিনেমা বানানোর একটা স্প্রিংবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
অন্যদের ক্ষেত্রে, পোল্যান্ডে তারা যে সব সিনেমা বানিয়ে গেছেন, বিদেশে গিয়ে তার চেয়ে ভালো সিনেমা বানাতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি না। জানুসসির ক্ষেত্রে এ কথা সত্য; আর জুয়াফ্সকির ক্ষেত্রে তো নিশ্চিতভাবেই সত্য। স্কলিমফসকির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অবশ্য নির্ভর করে। ডিপ এন্ড [Deep End; ১৯৭০; ব্রিটিশ-জার্মান] একটা অনবদ্য ফিল্ম বটে, তবে বিদেশে বানানো অন্য সিনেমাগুলোর তুলনায় [পোল্যান্ডে বানানো] বেরিয়ার [Bariera; ১৯৬৬] ও হ্যান্ডস আপ!ই [Ręce do góry; ১৯৮১] আমার বেশি প্রিয়। আমি মনে করি, এ ব্যাপারে এই ফিল্মমেকারেরা যথেষ্ট সচেতন; আর এতে অবাক হওয়ারও কিছু নেই। এটা স্রেফ স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

সাংস্কৃতির ভেদ-বিভেদ অতিক্রম করে যাওয়ার প্রতি আস্থা নেই আপনার? মিলোস ফরমানের [১৯৩২-; চেক ফিল্মমেকার] কথা ভাবুন…

 আন্দ্রে ভাইদা 
সেটা আলাদা। আমেরিকান সিনেমায় ফরমানের অবদানকে আমি পছন্দ করি। তাকে ছাড়া ওয়ান ফ্লিউ ওভার দ্য কাকু’স নেস্ট [১৯৭৫] ফিল্মটির অস্তিত্বের কথা ভাবা যায় না। যেমন ধরুন, ভিম ভেন্ডার্সের [১৯৪৫-; জার্মান ফিল্মমেকার] প্যারিস, টেক্সাস [১৯৮৪] ফিল্মটি কোনো আমেরিকান ফিল্মমেকার বানাতে পারতেন না।

দাঁতোও সম্ভবত ফ্রান্সে আর কোনো ফিল্মমেকার বানাতে পারতেন না।

 আন্দ্রে ভাইদা 
আপনি বোধহয় ঠিকই বলেছেন। [হাসি]। সিনেমার পক্ষে সিরিয়াস কিছু বলা উচিত– এমনটা বিশ্বাস করেন না ফরাসি ফিল্মমেকারেরা। তারা মনে করেন, কোনো সিরিয়াস সাবজেক্ট একটা সিনেমাকে বনিতাপূর্ণ করে তোলে। তাদেরকে আমি হতভম্ব করে দিয়েছিলাম।

ইয়ানুস কর্চাকের ওপর প্রজেক্টটার কতদূর?

 আন্দ্রে ভাইদা 
দুই বছর আগেই সিনেমাটা বানানোর ইচ্ছে ছিল আমার। আশা করছি, এ বছরটা শেষ হওয়ার আগেই শুরু করতে পারব। [কর্চাক (Korczak) শিরোনামে সেই সিনেমাটি ১৯৯০ সালে মুক্তি দিয়েছিলেন ভাইদা– ফিল্মফ্রি।] আশা করছি, এগিয়ে যেতে পারব। এটিকে একেবারেই একটা পোলিশ সিনেমা হিসেবে বানাতে চাই আমি।
তার [ইয়ানুস কর্চাকের] জীবনের শেষ পর্যায় ঘিরে চমৎকার একটা স্ক্রিপ্ট লিখেছেন আগনিয়েস্কা হলান্দ [১৯৪৮-; পোলিশ ফিল্মমেকার]। ছাত্রদের নিয়ে কর্চাক যখন ছুটি কাটাচ্ছিলেন, আসন্ন ভয়াবহতা সম্পর্কে যখনও তার কোনো ধারণা ছিল না– ১৯৩৯ সালের গ্রীষ্মকালের সেই প্রেক্ষাপটে ফিল্মটি শুরু হবে। তাদেরকে যখন আস্তানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, ছাত্রদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি লড়ে যান তিনি। কিন্তু তার মধ্যে একটা উভয়সঙ্কট কাজ করছিল তখন : ছাত্রদের সবসময় ভদ্র হতে, সৎ হতে, আর চুরি না করতে শিখিয়েছেন তিনি; অথচ, আচমকাই ওরা নিজেদের আবিষ্কার করে এমন এক জগতে– যেখানে বেঁচে থাকার জন্য ঠগবাজি ও চুরি করাটা পূর্বশর্তে পরিণত হয়েছে। তিনি এখন কী করবেন : ওদের আত্মাকে বাঁচাবেন, নাকি শরীরকে? যেহেতু তাদের শরীরকে বাঁচাতে পারতেন না তিনি, তাই আত্মাকেই বেছে নিয়েছিলেন। আস্তানামুখী জানালাগুলো তিনি বন্ধ করে দিয়ে, ওদেরকে সেটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। পরে নিজের জীবন বাঁচানোর প্রস্তাব পেলেও, সেটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তিনি; বরং নিজের ছাত্রদের সঙ্গে মৃত্যুবরণকেই শ্রেয় ধরে নেন। এমন এক মুহূর্তে ওদেরকে ফেলে চলে গেলে শিক্ষক হিসেবে তার মর্যাদা দাঁড়াত কোথায়?
যেহেতু আমরা ঠিক জানি না, কীভাবে তারা মারা গিয়েছিলেন, যেহেতু কোনো সাক্ষী ছিল না সেই ঘটনার, ফলে ফিল্মটি একটি পোয়েটিক ইমেজের ভেতর দিয়ে শেষ হবে– যেটি কিনা এটির মোড় একটা কিংবদন্তীর দিকে বাঁক করিয়ে দেবে। বাচ্চাগুলোকে আমরা একটা ট্রেনে দেখব; তারপর আচমকাই শেষ গাড়িটি বাকিগুলো থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে থেমে যাবে। এক রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে, শিশুগুলো নিজেদের খুঁজে পাবে একটা গম ক্ষেতে– কর্চাকের সঙ্গে। ক্ষেতের মধ্যে মিলিয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত তারা হাঁটতেই থাকবে।

কর্চাক
কর্চাক

বর্তমানের দিকে তাকানোর বদলে বরং অতীতের দিকে তাকিয়েই সম্ভবত এই বিষয়বস্তুটির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রেরণা পাওয়া যাবে; তাই না?

 আন্দ্রে ভাইদা 
এটি এ সময়ে বানানোটা আসলেই দুরূহ। পোল্যান্ডে বানাতে পারব– এমন বিষয়বস্তুর প্রতি আমি সবসময়ই চোখ রাখি; তবে অন্যত্র শুট করা যাবে– সেগুলোর খোঁজও রাখি। যেমন ধরুন, দ্য পোসেজড ফিল্মটা আমি জেরার দিপর্দিউকে অভিনয়ে নিয়ে ফ্রান্সে বানাতে চাই [পরে, ১৯৮৮ সালে নির্মিত; তবে জেরার ছিলেন না কাস্টিংয়ে]

জেরার দিপার্দিউ [১৯৪৮-; ফরাসি অভিনেতা] ও হানা শিগুলার [১৯৪৩-; জার্মান অভিনেত্রী] মতো অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
সহজ! তারা দুজনই অসাধারণ; তাদেরকে শুধু মেনে নিতে হয়। আলোচনা আর বন্ধুত্ব করা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কাজ বের করে নেওয়ার ভালো কোনো পথ নেই। যারা ওদের মেনে নিতে সক্ষম– তাদের সঙ্গেই কাজ করা উচিত ওদের। আমি মেনে নিই। তাদের দুজনেরই রয়েছে বিপুল জীবনীশক্তি; প্রতিটি মুহূর্তকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফুটিয়ে তোলার মতো সবকিছুই আছে তাদের মধ্যে। স্ক্রিপ্ট যেহেতু কখনোই পরিপূর্ণভাবে প্রস্তুত হয় না; কিছু দৃশ্য ও সংলাপ যেহেতু সবসময়ই বদলে নিতে হয়, ফলে ম্যাটেরিয়াল নিয়ে একটা লড়াই লেগেই থাকে। এ কাজটি আমরা একসঙ্গেই করি।

অভিনেতাদেরকে মেনে নেওয়া বিষয়টি আপনি বারবার উল্লেখ করেছেন। হয়তো এ কারণেই তারা অভিনেতা হয়ে ওঠেন। এরমধ্যে সমান্তরাল কোনো ব্যাপার আছে কি? এই মেনে নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই কি আপনি ফিল্মমেকার হয়েছেন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
আমার তা মনে হয় না। একজন ফিল্মমেকারকে নিজের ওপর আস্থা রাখতেই হয়; যেহেতু তিনিই দায়িত্বে, ফলে অন্যদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার প্রত্যাশা তার করা ঠিক নয়।

হ্যাঁ; কিন্তু সিনেমা বানাতে চাওয়ার কারণে তো…

 আন্দ্রে ভাইদা 
যে সিনেমাগুলো অন্য কেউ এসে আমাকে বানিয়ে দিতে পারবে না, সেগুলো বানাতে চাই আমি। সিনেমা দেখতে যেতে আমি পছন্দ করি; কিন্তু এমন কিছু ফিল্ম আছে– যেগুলো অন্য কেউ বানাতে পারবে না। এ কারণেই আমি বানাই।

কখন বুঝতে পারলেন, আপনি ডিরেক্টর হতে চান? আর ফিল্মই বা কেন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
বৈশিষ্ট্যের অভাবে, হয়তো! পেইন্টার হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল আমার; কিন্তু তুখোড় নিঃসঙ্গতাকে চিত্তাকর্ষক করে তোলার জন্য নিজের প্রতি একটা অসাধারণ আস্থা থাকা লাগে। এ জন্য আপনাকে অপরাজেয় হতে হবে; কিন্তু আমি অতটা বলিষ্ঠ ছিলাম না। এ কারণেই আমি ফিল্মমেকার হয়ে ওঠি; কেননা, এ মাধ্যমেও ইমেজ নিয়ে খেলা করতে পেরেছি আমি, আর সেটা অপেক্ষাকৃত সহজ ছিল। তাছাড়া আমার চারপাশে নানা লোকজন ছিল। নানা বাধা-বিপত্তি নিশ্চয়ই ছিল; কেননা, অর্থবহ কোনোকিছু খুঁজে নেওয়ার পথে যন্ত্রণাকে তো সঙ্গী করতে হয়ই! তবে কোনো কবির কিংবা লেখকের কিংবা পেইন্টারের নিঃসঙ্গতার তুলনায় এটি কিছুই নয়।

অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস
অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস

আপনার শৈশব কেমন ছিল?

 আন্দ্রে ভাইদা 
আমার শৈশব একেবারেই উনবিংশ শতাব্দির অনুরূপ। বিশাল এক বাহিনীর অংশ হিসেবে, আমার বাবার নেতৃত্বাধিক ঠিক যেন একটা অশ্বারোহী সৈন্যদলের মতো বাড়িতে বড় হয়েছি আমি। শীতকালে আমরা স্কি করতাম– ঠিক যেন জন ফোর্ডের সিনেমায় দেখা দৃশ্যের মতোই। সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, এই ধীরলয়ের জীবনযাত্রার চেখভধর্মী [আন্তোন চেখভ] চিত্রকল্পটির পুরোটাই ১৯৩৯ সালে একেবারেই মিলিয়ে গেল!

একবার বলেছিলেন, বাস্তবজীবনে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেননি, সেই ক্ষতি পুষিয়ে দিতেই সিনেমা বানান।

 আন্দ্রে ভাইদা 
ঠিক তাই। আমার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা খুবই সীমিত। আমি একটা বন্দিশিবিরে ছিলাম। ফলে ভারসাভার বস্তির গণজাগরণে অংশ নিতে পারিনি। ফলে এটি পর্দায় দেখাটাই আমার জন্য স্বাভাবিক ছিল।

আপনার কাজকে যেগুলো অনুপ্রেরণা যোগায়, সেগুলোর ঋণ স্বীকার করেন? একবার এলিয়া কাজান [১৯০৯-২০০৩; গ্রিক-আমেরিকান ফিল্মমেকার], অরসন ওয়েলস [১৯১৫-১৯৮৫; আমেরিকান ফিল্মমেকার], এবং এমনকি ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর [১৯৩২-১৯৮৪; ফরাসি ফিল্মমেকার] নামও নিয়েছিলেন আপনি।

 আন্দ্রে ভাইদা 
এ রকম অনেকেই আছেন। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ইতালিয়ান নিও-রিয়ালিজম আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে; আমার ফিল্মমেকার হিসেবে [ভিত্তোরিও] দে সিকা (১৯০১-১৯৭৪; ইতালিয়ান ফিল্মমেকার), জ্যুসেপ্পে দে সান্তিস [১৯১৭-১৯৯৭; ইতালিয়ান ফিল্মমেকার]। আমি মনে করি, অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস-এর প্রেরণাটা মূলত এসেছে স্কারফেস [হাওয়ার্ড হকস, রিচার্ড রসন; ১৯৩২] ও দ্য অ্যাসফাল্ট জঙ্গল-এর [জন হাস্টন; ১৯৫০] মতো আমেরিকান নোয়্যা ফিল্মগুলো থেকে। চমৎকার ফিল্ম ছিল এগুলো। আমার ধারণা, ম্যান অব মার্বেল-এও আমেরিকান সিনেমার প্রভাব পড়েছে।

ম্যান অব মার্বেল
ম্যান অব মার্বেল

ভীষণ সুসজ্জিত ক্যামেরা মুভমেন্টে সহকারে, ভিজ্যুয়ালি ম্যান অব মার্বেল ছিল তুমুল দাপুটে; অথচ ম্যান অব আয়রন-এ ক্যামেরাকে সেই তুলনায় গুরুত্ব কম দেওয়া হয়েছে; এটি করার কারণ সম্ভবত, আমরা এখানে ইতিহাস তৈরি হতে দেখছি।

 আন্দ্রে ভাইদা 
ঠিকই বলেছেন। এটি আমাদের এতই ঘনিষ্ঠ বিষয় ছিল যে, কী ঘটেছে– সে সম্পর্কে একটা নোট নেওয়ার ভূমিকাই কেবল পালন করে গেছি আমি। এটিকে সিনেমার ধারণার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।

সাবজেক্টকে স্টালাইজ করতে গিয়েই কি এই সরলীকরণ করে তোলা?

আন্দ্রে ভাইদা
ঠিক তাই। আমি যদি স্টাইলিস্টিক এলিমেন্টের ওপর জোর দিতাম, তাহলে হয়তো ফিল্মটা হয়ে ওঠত না। আমি মনে করি, একটা মানুষের এক জীবনে অনেকগুলো সিনেমা বানানো উচিত; আর সেখানে সরলতার দাবী রাখা বিষয়বস্তুগুলোও থাকা উচিত। আমি যদি এমনটা ভাবতে না পারতাম, তাহলে হয়তো নিজের সাহসটাই খুইয়ে ফেলতাম। ম্যান অব আয়রনকে সিনেমাটিক মেরিটের তোয়াক্কা না করেই বানানোর ছিল।

দাঁতোঅ্যা লাভ ইন জার্মানির মতো এমন প্রভূত সাহিত্য-সম্পদগুলোকে ভিজ্যুয়াল জগতের সঙ্গে কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুললেন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
কোন জিনিসগুলো নিয়ে বলা উচিত আর কোন জিনিসগুলো দেখানো উচিত– এই দুইভাগে ম্যাটেরিয়ালকে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা থাকে আমার। তাছাড়া, একটা কাহিনীর বাস্তবতাকে পুনর্সৃষ্টি করার আগে, সেটি সম্পর্কিত ফটোগ্রাফ, ডকুমেন্ট ইত্যকার যত বেশি সম্ভব ডকুমেন্টারি ম্যাটেরিয়াল দেখে নেওয়ার চেষ্টা করি। এ প্রক্রিয়াটি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ– তা জোর দিয়ে বলতে পারব না। যে দৃশ্যটিতে হানা শিগুলাকে ‘পোল লাভার’ লেখা একটা স্বাক্ষর বহন করতে দেখা যায়, সেটি কিন্তু একটি বাস্তব ফটোগ্রাফের ভিত্তিতে তৈরি; সস্তিকা চিহ্নঅলা ললিপপটি যে একটা শিশু চুষছে– এ দৃশ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। আমি যখন দেখাই, স্তানির [চরিত্র] জল্লাদটিও জাতে একজন পোল [পোলিশ জাতিসত্ত্বা], আর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পুরস্কার হিসেবে সে পেয়েছে তিনটি সিগারেট– এ সবই সত্য। এ রকম অনেক ডকুমেন্ট আমি পেয়েছি, যার অধিকাংশই টাইপকৃত ‘এসএস’ [সস্তিকা] অর্ডার।
অ্যা লাভ ইন জার্মানির ক্ষেত্রে আমি ঠিক করেছিলাম, প্রকৃত ঘটনা যেখানে ঘটেছে, ঠিক সেখানে গিয়েই ফিল্মটা বানাব। ফলে সশরীরে হাজির হই সেখানে, এবং একটা চমৎকার, শান্ত-সুনিবিড় এলাকার দেখা পাই– যেটির আবহ ফিল্মটির কোমলতার সঙ্গে নাটকীয়ভাবে মিলে যায়। এই ছাপটাই আমি চেয়েছিলাম।

অ্যা লাভ ইন জার্মানি
অ্যা লাভ ইন জার্মানি

ক্যামেরা মুভমেন্ট নিয়ে কী বলবেন?

 আন্দ্রে ভাইদা 
যখন একান্তই দরকার পড়েছে, তখনই কেবল [ক্যামেরা] মুভমেন্ট করানোর চেষ্টা করেছি। দাঁতোতেও ক্যামেরাকে শান্ত রেখে, বিপ্লবের উত্তাপ পর্যবেক্ষণ করানো প্রয়োজন ছিল আমার– যেন তা মানুষকে সিক্ত করে। মুখ্যচরিত্রগুলোর আকস্মিকতাগুলোকে দেখানোর জন্য, ফ্রেমকে অনড় হওয়ার দরকার ছিলই। ক্যামেরাকে আমি সবসময়ই আই-লেভেলে রাখার এবং, লং-শট থেকে ক্লোজ-আপে কোনো জাম্পিং ছাড়াই একটিমাত্র লেন্স ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি; যেন কোনো ধরনের এক্সপ্রেশন যুক্ত হয়ে যেতে না পারে, যেন এটিকে অবজেক্টিভ হিসেবেই রেখে দেওয়া যায়। প্রবাহ এসেছে শুধুমাত্র অভিনয়ের কাছ থেকে।

এভরিথিং ফর সেল-এর ঠিক উল্টো ব্যাপার!

 আন্দ্রে ভাইদা 
সে সময়ে ফিচার ফিল্মের জন্য জুম ল্যান্সের ব্যবহার চালু হয়েছিল। লং লেন্স, ফিউজি কালার…। এ সবই তখন যথেষ্ট মৌলিক ছিল; ফলে এগুলোর সঙ্গে খেলা করেছি আমি। ক্লুদ লুল্যুশ [১৯৩৭; ফরাসি ফিল্মমেকার] এই সবগুলোর প্রথম ব্যবহার করেছিলেন অ্যা ম্যান অ্যান্ড অ্যা ওম্যান [Un homme et une femme; ফ্রান্স; ১৯৬৬] সিনেমায়। ক্যামেরা নিয়ে ঠিক যেন একটা বাচ্চার মতো খেলা করেছিলেন তিনি।

আপনি কি আশাবাদী মানুষ? নাকি একইসঙ্গে একজন পোলিশ ও একজন আশাবাদী হয়ে ওঠা সম্ভব নয়?

 আন্দ্রে ভাইদা 
আমাকে মানতেই হবে, দুই বছর আগে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই হিসেবে নিজেকে আশাবাদী বলেই মনে হয় আমার : অর্থাৎ, অসংখ্য বছর ঔদাসিন্যের ভেতর কাটানোর পরে, পোলিশ সমাজে একটা জাগরণ ঘটিয়ে দিয়েছে সলিডারিটি; ফলে আমি বিশ্বাস করি, এই জাদুকরি মানুষগুলো তাদের নব-আত্মসচেতনতা সহকারে বলবান হয়ে ওঠবে।

আপনার কাজের মধ্যে পোলিশ সাহিত্যের একই রকম রোমান্টিক ও নায়োকোচিত ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পাবো কি?

 আন্দ্রে ভাইদা 
আমার ধারণা, পাবেন। ঐতিহ্য তো এখনো জীবন্ত। আমাদের দেশের বাস্তবতার বহিরাবরণে, আমরা এখনো সে দেশটির ইমেজ মনে ধরে রাখি : যেটি হবে আরও উন্নত রাষ্ট্রনীতির, আরও উন্নত একটি রাষ্ট্র।


সূত্র • ফিল্ম কমেন্ট । ফিল্ম ম্যাগাজিন, যুক্তরাষ্ট্র । নভেম্বর/ডিসেম্বর ১৯৮৪ সংখ্যা

Andrzej Wajdaআন্দ্রে ভাইদার ফিল্মোগ্রাফি

১৯৫১  দ্য বেড বয় [Zły chłopiec] । শর্টফিল্ম
১৯৫১  দ্য পটার অ্যাট ইলজা [Ceramika ilzecka] । শর্টফিল্ম
১৯৫৩  হোয়াইল ইউ আর স্লিপিং [Kiedy ty śpisz] । শর্টফিল্ম
১৯৫৪  অ্যা জেনারেশন [Pokolenie]
১৯৫৫  টুওয়ার্ডস দ্য সান [Idę do słońca] । ডকুমেন্টারি
১৯৫৬ কানাল [Kanał]
১৯৫৮ অ্যাশেজ অ্যান্ড ডায়মন্ডস [Popiół i diament]
১৯৫৯ লোত্না [Lotna]
১৯৬০ ইনোসেন্ট সর্কারারস [Niewinni czarodzieje]
১৯৬১ সাইবেরিয়ান লেডি ম্যাকবেথ [Powiatowa lady Makbet]
১৯৬১ স্যামসন [Samson]
১৯৬২ লাভ অ্যাট টুয়েন্টি [L'amour à vingt ans] । এপিসোডিক ফিল্ম
১৯৬৫ দ্য অ্যাশেজ [Popioly]
১৯৬৮ এভরিথিং ফর সেল [Wszystko na sprzedaż]
১৯৬৮ রলি পলি [Przekładaniec] 
১৯৬৮ গেটস টু প্যারাডাইস [Bramy Raju]
১৯৬৯ হান্টিং ফ্লাইস [Polowanie na muchy]
১৯৭০  দ্য বার্চ উড [Brzezina]
১৯৭০ ল্যান্ডস্কেপ আফটার দ্য বাটল [Krajobraz po bitwie]
১৯৭২ পিলেট অ্যান্ড আদারস [Pilatus und andere]
১৯৭৩  দ্য ওয়েডিং [Wesele]
১৯৭৪ দ্য প্রমিজড ল্যান্ড [Ziemia obiecana]
১৯৭৬ দ্য স্নো লাইন [Smuga cienia]
১৯৭৭ ম্যান অব মার্বেল [Człowiek z marmuru]
১৯৭৮ উইদাউট অ্যানেসথেসিয়া [Bez znieczulenia]
১৯৭৯ দ্য মেইডস অব ভিলকো [Panny z Wilka]
১৯৮০ অ্যাজ ইয়ারস গো বাই, অ্যাজ ডেজ গো বাই [Z biegiem lat, z biegiem dni] । টিভি সিরিজ
১৯৮০ দ্য অর্কেস্ট্রা কনডাক্টর [Dyrygent] 
১৯৮১ ম্যান অব আয়রন [Człowiek z żelaza]
১৯৮৩  দাঁতো [Danton]
১৯৮৩ অ্যা লাভ ইন জার্মানি [Eine Liebe in Deutschland]
১৯৮৫ অ্যা ক্রনিকেল অব অ্যামারাস অ্যাক্সিডেন্টস [Kronika wypadków miłosnych]
১৯৮৮ দ্য ফ্রেঞ্চ অ্যাজ সিন বাই... [Proust contre la déchéance]
১৯৮৮ দ্য পোজেসড [Les possédes]
১৯৯০ কর্চাক [Korczak]
১৯৯২ দ্য ক্রাউনড-ঈগল রিং [Pierścionek z orłem w koronie]
১৯৯৪ নাস্তাসিয়া [Nastasja]
১৯৯৫ হলি উইক [Wielki Tydzień]
১৯৯৬ মিস নোবডি [Panna Nikt]
১৯৯৯ পান তাদেউশ [Pan Tadeusz]
১৯৯৯ বিগদা ইদজি [Bigda idzie] । টিভি থিয়েটার
২০০০ দ্য কনডেমনেশন অফ ফ্রান্সিসেক ক্লজ [Wyrok na Franciszka Kłosa]
২০০১  জুন নাইট [Noc czerwcowa] । টিভি থিয়েটার
২০০২ ব্রোকেন সাইলেন্স [Przerwane milczenie]
২০০২ দ্য রিভেঞ্জ [Zemsta]
২০০৫ ম্যান অব হোপ [Czlowiek z nadziei] । শর্টফিল্ম
২০০৭ কাতিন [Katyń]
২০০৯ সুইট রাশ [Tatarak]
২০১২ ভালেশা : ম্যান অব হোপ [Wałęsa. Człowiek z nadziei]
২০১৬ আফটারইমেজ [Powidoki]
Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

১টি কমেন্ট

Leave a Reply to আলমগীর কবির : বায়োস্কোপের দেশে একজন অথর পরিচালক/ তানভীর মোকাম্মেল [কিস্তি ১ঃ৩] | ফিল্মফ্রি

Please enter your comment!
Please enter your name here