প্রসঙ্গ কিয়ারোস্তামি : আলাপচারিতায় দুই সিনে-সমালোচক : এক ওস্তাদ ঐন্দ্রজালিকের দার্শনিক মতবাদ

624

ভূমিকা : এহসান খোশবখত অনুবাদ  : স্নিগ্ধ রহমান


রানের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি ছিলেন চলচ্চিত্রে বিরাম ও লঘুকরণের গুরু। ৪ জুলাই, সোমবার প্যারিসের এক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা কিয়ারোস্তামি একাধিকবার চলচ্চিত্রের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন। তিনি নিরীক্ষাধর্মী শিশুতোষ চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে তথ্যচিত্র ও কল্পচিত্রের মর্ম বিনির্মাণ কিংবা ডিজিটাল পদ্ধতি পরখ করতে গিয়ে যেমন নতুন ভক্ত পেয়েছেন, তেমনি তার পুরনো কিছু ভক্ত খোয়া গিয়েছে। সর্বোপরি কিয়ারোস্তামির চলচ্চিত্র নিজস্ব কেতাবি ব্যকরণসমেত এক ভঙ্গিমা ও চলচ্চিত্র ভাষার যোগান দিয়েছে।

এই বিষাদময় বিদায়ের প্রাক্কালে, আমি আর জোনাথান রোজেনবাম কিয়ারোস্তামি’র দুনিয়ার কিছু দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। শিকাগো রিডার-এর প্রাক্তন মুখ্য চলচ্চিত্র সমালোচক রোজেনবাম কিয়েরোস্তামিকে নিয়ে একখানা বই লিখেছেন [যার সহ-লেখক হলেন মেহর্নাজ সাঈদ-ভাফা]। বইটি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

জোনাথান রোজেনবাম ও এহসান খোশবখত
জোনাথান রোজেনবাম ও এহসান খোশবখত

আলাপচারিতা

এ হ সা ন   খো শ ব খ ত :
ইরানি চলচ্চিত্রে আব্বাস কিয়ারোস্তামির প্রভাব এতটাই প্রকাণ্ড যে, সেটা তার পূর্ববর্তী ইতিহাসের পুরোটা ও পরবর্তী ইতিহাসের অনেকাংশকে গ্রাস করে ফেলেছে। নসিব বলুন কিংবা বদনসিব, আব্বাস কিয়ারোস্তামি ইরানি চলচ্চিত্রের সমার্থকে পরিণত হয়েছেন। নসিব এই অর্থে যে, এর ফলে ইরানি চলচ্চিত্র আজকের বৈশ্বিক বিস্ময়ের রূপ অর্জন করেছে। আর বদনসিব বলছি, কারণ, এর ফলে ইরানের অন্য নির্মাতা ও নির্মাণ প্রথাগুলো ম্লান হয়ে পড়েছে।

জো না থা ন   রো জে ন বা ম :
আপনি তো জানেনই, আমি কিয়ারোস্তামিকে জাতিসত্তার উর্ধ্বে একজন ‘বহুজাতিক’ ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখি। একজন মানুষকে দিয়ে গোটা দেশের চলচ্চিত্রের পরিচিত পাবার কথা যদি বলেন– সত্যজিৎ, [পেদ্রো] আলমোদোভার, বার্গম্যান [ওরফে বারিমন] ও কুরোসাওয়ার নাম নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা, বহুজাতিকতা, প্রভাব ও বিতর্কিত বিষয়ের বিবেচনায় কিয়ারোস্তামির সাথে তুলনীয় একমাত্র নামটি হলো [জ্যঁ-লুক] গোদার। গোদার নিজেই একসময় বলেছিলেন যে, ‘সিনেমা গ্রিফিথে শুরু হয়, আর কিয়ারোস্তামিতে গিয়ে ফুরায়’। আমার মতে, দুই পরিচালকই ভিন্ন দুই দশক জুড়ে সফলভাবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে স্থান করে নিয়েছিলেন। গোদার ষাটের দশকে আর কিয়েরোস্তামি নব্বইয়ে। আর মানুষ এখনো দুজনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগুলো তুলনা করে ঝগড়ায় নামে।

এই দুই নির্মাতার মাঝে আরেকটি উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য হলো, দুজনেই নিজেদের পুনরাবিষ্কার করেছেন– দর্শক, ফরম্যাট ও আখ্যানভঙ্গি বিচারে। এমনকি আপনি এটাও বলতে পারেন, পিকাসোর মতো গোদার ও কিয়ারোস্তামিরও নিজস্ব কাল বা পিরিয়ড ছিল।

টেস্ট অব চেরি
টেস্ট অব চেরি

এ হ সা ন :
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিয়ে একটু বাতচিৎ করা যাক। আপনি কিয়ারোস্তামির সিনেমার ‘না বলা গল্প’টাও ধরতে পেরেছেন, যেটা কিনা ইরান অথবা ইরানের বাইরের সমালোচকরা পারেননি। রজার ইবার্ট টেস্ট অব চেরির কঠোর সমালোচনা [এম্পেরর ইউদাউট ক্লোদস বলে অভিহিত] করেছিলেন। অথচ সেই টেস্ট অব চেরিরই এক ধরনের পুনর্নির্মাণ, রামিন বাহরানির গুডবাই সলোকে [২০০৮] প্রশংসায় ভাসিয়ে আমেরিকার অন্যতম সেরা ছবি হিসেবে অভিহিত করেছেন। কিয়ারোস্তামিকে নিয়ে আপনার নাজারিয়া অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হলো কীভাবে?

জো না থা ন :
আমার মনে হয় এর মূল কারণ হলো, সিনেমাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপে দেখতে গিয়ে কিয়ারোস্তামির ভেতরে কাজ করতে থাকা আধুনিক অবিশ্বাস। এছাড়া ছিল তার জটিল এবং কতকটা বিপরীতধর্মী কৌশলে নিপুণ জাদুকরের মতো সিনেমায় প্রচলিত রীতি নিয়ে খেলা করার প্রবণতা। এর একটা ভালো উদাহরণ হলো, টেস্ট অব চেরির সংলাপের বেশিরভাগ চরিত্রগুলোর কিন্তু কখনো নিজেদের মাঝে দেখা হয়নি।

অপর পক্ষে, কিয়ারোস্তামির নকলবাজদের নব্যবাস্তববাদী [নিওরিয়ালিস্ট] গল্পকথন এবার্টের মতো মানুষদের স্নায়ুকে কখনোই বিভ্রান্ত করেনি বা চ্যালেঞ্জ জানায়নি। যারা কিয়ারোস্তামিকে সত্যজিৎ অথবা [ভিত্তোরিও] দে সিকার সাথে তুলনা করেছেন, তারা বরাবরই কিয়ারোস্তামির সিনেমার ভিত্তিটা ধরতে পারেননি। তার ছবিগুলো প্রচলিত অর্থে গল্প বলার স্রেফ ভান করত; আদতে এগুলো ছিল গল্পের বেশে থাকা অজ্ঞেয়বাদী দর্শনশাস্ত্রের নিকটবর্তী

কিয়ারোস্তামির নকলবাজরা নিজেদের ছবিগুলোকে ‘বক্তব্য’ হিসেবে জাহির করতেন। কিন্তু কিয়ারোস্তামির ছবিগুলো রচিত হতো প্রশ্ন, অন্বেষণ আর যাত্রা হিসেবে– যেগুলোর স্পষ্ট গন্তব্য বা উপসংহার থাকত না। যে প্রথাগত বয়ানভঙ্গির মধ্য দিয়ে একটা সন্তোষজনক সমাপ্তি দেখতে চায়– এমন নির্মাণভঙ্গি তাকে রাগিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।

এবিসি আফ্রিকা
এবিসি আফ্রিকা

এ হ সা ন :
আলবাৎ! যারা কিয়ারোস্তামির ছবির শুধুমাত্র বাহ্যিক খুবসুরাতিতে মজে ছিলেন, তারাই কিয়ারোস্তামিকে নিওরিয়ালিস্টদের সাথে তুলনা করার মতো গলতি করেছে। এতদসত্বেও, এটাই একমাত্র ভুল বোঝাবুঝি নয়। আপনার কি মনে পড়ে, গত বছর অ্যা সিম্পল ইভেন্ট-এর [সোহরাব শহীদ সালেস; ইরান; ১৯৭৪] স্ক্রিনিংয়ের পরে, কিয়ারোস্তামিকে নিয়ে প্রচলিত আরেকটি ভুল ধারণা নিয়ে আলাপ করেছিলাম? কিয়ারোস্তামিকে সোহরাব শহীদ সালেসের শাগরেদ হিসেবে গণ্য করা হয়; কারণ, দুজনের ছবিতেই শিশুদের উপস্থিতি রয়েছে। [দ্য ট্রাভেলার-এর ড্রিম সিকোয়েন্সটাকে হিসাবের বাইরে রাখলে] এই ধারণাটিও ঠিক নয়। আমার মনে হয়, কিয়ারোস্তামির ছবির বড় একটা অংশ বাচ্চাদের দ্বারা বা তাদের নিয়ে আবর্তিত হওয়ায়, ভুল ধারণাগুলো আরও পাকাপোক্ত হয়েছে। কেননা, শিশুদের উপস্থিতিকে নিওরিয়ালিস্টিক, রাজনৈতিক [এক ধরনের ‘ইস্টার্ন ব্লক’] সিনেমা হিসেবে গণ্য করা হয়।

আপনার কি মনে হয়, কিয়ারোস্তামির ছবিতে শিশুরা এসেছে তাদের কমজোরির জন্য, নাকি তাদের অকপটতা ও দৃঢ়তার জন্য? সত্যি বলতে কি, আমি নিজেও এটা এখনো ভেবে বের করতে পারিনি, তিনি ক্লোজ-আপ-এর মতো গুরুগম্ভীর ছবি বানানোতে সিদ্ধহস্ত হবার পরেও, এতগুলো বছর কেন শিশুদের নিয়ে মশগুল ছিলেন। এটা সত্যি যে, তিনি সরকারি কর্মচারি ছিলেন, আর ‘কানুন’-এ চাকরি করতেন [ইরানি প্রতিষ্ঠান– ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলপমেন্ট অব চিলড্রেন অ্যান্ড ইয়ং অ্যাডাল্টস’ বা, Kanoon-e Parvaresh-e Fekri-e Koodakan va Nojavanan; সংক্ষেপে ‘কানুন’ নামে পরিচিত]। তারপরেও, এই ‘কানুন’ই কিন্তু তার ক্লোজ-আপ প্রযোজনা করেছিল।

জো না থা ন :
শিশুদের সম্ভবত সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়, আর ‘কানুন’-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে তাকে সাহায্যও করেছিল। এখানে আরেকটি কথা যোগ করতে চাই, বাণিজ্যিক ধারার বাইরে থেকে কাজ শুরু করার ফলে সিনেমাকে নিজের মতো করে আবিষ্কার করার নেশা কিয়ারোস্তামিকে পেয়ে বসেছিল। আর, শিশুদের স্বভাবজাত উন্মুক্ত মানসিকতা তার এই উদ্দেশ্য সাধনে আদর্শ সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে।

আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে। [অস্ট্রেলিয়ান সিনে-সমালোচক] অ্যাড্রিয়ান মার্টিন তার এক লেখায় কিয়ারোস্তামির এবিসি-আফ্রিকাকে শ্লেষ করে এক প্রকার উড়িয়েই দিয়েছেন। পক্ষান্তরে আমি এটাকে দেখি, তার পূর্ববর্তী মুখ্য চলচ্চিত্রগুলোর কিছু থিম [যেমন : মৃত্যু] ও প্রক্রিয়ার [যেমন : আঁধার] ছোট্ট, কিন্তু সম্মানসূচক এক পুনর্চরিত্রায়ন হিসেবে। আমার চোখে কিয়ারোস্তামির সবচে বাজে চলচ্চিত্র হলো দ্য ফার্স্ট গ্রেডারসদ্য রিপোর্ট। কিন্তু এবিসি আফ্রিকা ততটা খারাপ নয়। আপনার কী মত?

শিরিন
শিরিন

এ হ সা ন :
আমার মতে কিছু ভালো, এমনকি দুর্দান্ত কিছু দৃশ্য রয়েছে এবিসি আফ্রিকাতে [বিশেষভাবে বলা চলে ব্ল্যাকআউটের দৃশ্যটার কথা]। কিন্তু সর্বোপরি, আমার বেশকিছু বিষয়ে আপত্তি রয়েছে। এমনিতে, যে কোনো চলচ্চিত্রে কৃষ্ণাঙ্গ শিশুরা ‘শাদা চামড়ার’ পরিচালকের ক্যামেরার সামনে নর্তন-কুর্দন করলেই আমি অস্বস্থিবোধ করি। কিন্তু মূল কারণটা বোধহয়,  চলচ্চিত্রটার বিষয়বস্তু সম্বন্ধে কিয়ারোস্তামির জ্ঞানের অভাব, এমনকি জিজ্ঞাসার অভাবটাও আমাকে তাড়িত করেছে। কতকটা এমন যেন, কিয়ারোস্তামির মানবতাবোধ তার ও ছবির বিষাদের মাঝে এক তাবিজ, এক নিরাপদ দূরত্বের জন্ম দিয়েছে

দ্য ফার্স্ট গ্রেডারস হলো তার নির্মিত ইসলামিক বিপ্লবের স্বপক্ষে সাফাই গাওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী চলচ্চিত্র; সমাজে একটা আদর্শের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক বহুমাত্রিকতার জন্য ছবিটাকে আমার বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে; এমনকি যদি আমি এর সাথে একমত না-ও হই।

আর আমি বুঝতে পারছি, দ্য রিপোর্ট সিনেমাটি আপনার কেন ভালো লাগেনি। কিন্তু এটা যেভাবে তেহরানের মধ্যবিত্ত জিন্দেগি তুলে ধরেছে, তার জন্য এই সিনেমাটিকে আমি প্রয়োজনের চে বেশি স্বাগত জানাই। খুব কম ইরানি চলচ্চিত্রেই বিষয়টি উঠে এসেছে। অবশ্য সস্তা ফিল্মফার্সিতে [বলিউডি ঢঙে নির্মিত নিম্নমানের ইরানি চলচ্চিত্রকে ‘ফিল্মফার্সি’ বলা হয়] এই জীবনের কিছু অতিরঞ্জিত রূপায়ন দেখা যায়– যা অতি দ্রুত বিপ্লবের মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়। এছাড়া টিকেটস ছবিতে তার অংশটি আমার মনে ধরেনি।

জো না থা ন :
আমি নিজেও টিকেটস-এর খুব একটা ভক্ত নই। যদিও আমার স্বর্গীয় বন্ধু গিল পেরেজের এটা দারুণ লেগেছিল। আমি একমত যে, শৈল্পিক বিচারে ব্যর্থ হলেও, দ্য রিপোর্ট-এ দারুণ ইন্টারেস্টিং সব দৃষ্টিকোণের দেখা মিলে। আর আমি সার্টিফাইড কপিকে এর এক সফল পুনর্নির্মাণ হিসেবে বিবেচনা করি [আমার বিশ্বাস, কিয়ারোস্তামি নিজেও তা মনে করতেন]। এবিসি আফ্রিকাকে নিয়ে আপনার নেতিবাচক পয়েন্টগুলোও সঠিক। সর্বোপরি আমি আপনার ও অ্যাড্রিয়ানের সাথে একমত যে, এটা কিয়ারোস্তামির পর্যটকীয় দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতাকে ফুটিয়ে তুলেছিল।

আমরা কিন্তু শিরিন নিয়ে কোনো কথাই বলিনি– যেটা কিনা আমার মতে কিয়ারোস্তামির সবচে মৌলিক ছবি। আমার মতে এই ছবির সীমাবদ্ধতা এই যে, শিরিনের অর্জনগুলো মূলত তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক; আবেগিক বা দার্শনিক নয়। যেমন : আমাকে ভালোবেসেও সে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে পারেনি। কারণ, সম্পর্ক নিয়ে তার ভাবনা পরাজয়প্রবণ ও বিদ্রূপপূর্ণ। কিন্তু সেই সাথে এটাও বলা যেতে পারে যে, সিনেমাটি কিইয়ারোস্তামির সেই ‘বৈশ্বিক সাংবাদিক’ চরিত্রটি আবার ফিরিয়ে এনেছিল– যে কিনা আমাদের সমকালীন পৃথিবীর স্বভাব সম্পর্কে জানান দেয়; অন্তত সার্টিফাইড কপির চেয়ে বেশি [যেটার কিনা আরও অনেক শক্তিশালী দিক ছিল]।

আব্বাস কিয়ারোস্তামি
আব্বাস কিয়ারোস্তামি

এ হ সা ন :
আমার মতে, শিরিন ছিলো শেষ দিককার কিয়ারোস্তামির প্রতিভূ। মূলত এই কারণে যে, তিনি এইবার সেই সব থিম ও চলচ্চিত্রিক চর্চাকে বিশদভাবে তুলে এনেছেন, যা সত্তরের দশক থেকেই তার মনোজগতকে আচ্ছন্ন করেছিল। নিশ্চিতভাবেই, কিয়ারোস্তামি অপেশাদারদের সাথে কাজ করতে করতে শেষের দিকে পেরেশান হয়ে পড়েছিলেন; এবং আমার মতে, তারকাবহুল শিরিন মূলধারার সিনেমার ‘কিয়ারোস্তামি সংস্করণ’-এর একটি ভালো উদাহরণ।

আমি জানি না, আপনি সম্প্রতি আবিষ্কৃত, জর্জ মেলিসের সিনেমা দ্য ট্রিপল হেডেড লেডি [Bouquet d’illusions; ১৯০২] দেখেছেন কিনা। এই সিনেমায় দেখা যায়, মেলিস তার ক্ল্যাসিক সিনেমা কৌশল ব্যবহার করে অনেকগুলো মেয়ের মাথা দিয়ে ভেলকি দেখাচ্ছেন। মেয়েদের মাথা জাগল করে, ভিন্ন ভিন্ন ধড়ে বিভিন্ন মাথা বসাচ্ছেন। সবশেষে নিজের মাথাটি কেটে এক মেয়ের ধড়ে বসিয়ে দিলেন। এটা আমাকে শিরিন-এর কিয়ারোস্তামির কথা ইয়াদ করিয়ে দিয়েছে। যেখানে ছিল, নারী হিসেবে নিজেকে এহসাস করার এক বিরল বোধ। তারমানে কি এটা দাঁড়াচ্ছে যে, কিয়ারোস্তামি যতটা না ল্যুমিয়ের, তার থেকে বেশি মেলিস দ্বারা প্রভাবিত?


এহসান খোশবখত । সিনে-সমালোচক, ইরান
জোনাথান রোজেনবাম । সিনে-সমালোচক, যুক্তরাষ্ট্র

সূত্র : আন্ডারলাইন ম্যাগাজিন । ব্রিটিশ কাউন্সিল, আয়ারল্যান্ড । আগস্ট ২০১৬

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here