জ্যুসেপ্পে তোর্নাতোরে : ইতালিয়ান সিনেমার প্রজন্ম-প্রতিনিধি

416
জ্যুসেপ্পে তোর্নাতোরে
জন্ম । ২৭ মে ১৯৫৬; সিসিলি, ইতালি

লিখেছেন রুদ্র আরিফ


তালিয়ান সিনেমার ইতিহাস সুবিশাল ও ঋদ্ধ। ফেদেরিকো ফেল্লিনি, মিকেলাঞ্জেলো আন্তোনিওনি, রোবের্তো রোসেল্লিনি, ভিত্তোরিও দে সিকা, পিয়ের পাওলো পাসোলিনি, সার্জো লিওনি, লুচিনো ভিসকোন্তি, বের্নার্দো বের্তোলুচ্চি, লিনা ওয়ের্তমুলারের মতো স্বতন্ত্রধারার মাস্টার ফিল্মমেকার এবং নিওরিয়ালিজমের মতো কিংবদন্তি ফিল্ম-মুভমেন্টের জন্ম এখানে। এরই ধারাবাহিকতায়, সাম্প্রতিক সিনে-বিশ্বে যে কজন ইতালিয়ান ফিল্মমেকার মেধার দাপটে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারছেন, তাদের মধ্যে প্রথমদিকের এবং অনেকের বিবেচনায় প্রথম নামটিই– জ্যুসেপ্পে তোর্নাতোরে। ইতালির স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য সিসিলির আত্মা ছুঁয়ে থাকে তার সিনেমা। আর তা প্রচলিত সিনেমার সাদামাটা, গতানুগতিক ও ছকবাঁধা ধরণ অতিক্রম করে হয়ে ওঠে একেকটি অনবদ্য সৃষ্টি।

তোর্নাতোরের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিসিলির রাজধানী পালের্মোর কাছেই, বাগহেরিয়া শহরে; ১৯৫৬ সালের ২৭ মে। ইমেজের জাদুকরি জগত তাকে ঘোরগ্রস্ত করেছিল খুব অল্প বয়সে। সেই ঘোরে, ইমেজ ধরার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে শুরু করেন ফটোগ্রাফি। সেগুলো মুদ্রিত হতে থাকে নানা ফটোগ্রাফিক ম্যাগাজিনে। ১৬ বছর বয়সে নির্দেশনা দেন স্বদেশের কিংবদন্তি সাহিত্যিক ও নাট্যকার লুইজি পিরানদেল্লো ও এদুয়ার্দো দে ফিলিপ্পোর লেখা দুটি নাটক। এ ছিল সিনেমা নির্মাণের প্রস্তুতিপর্ব। নিজেকে আরও ঝালাই করে নিতে হাত দেন ডকুমেন্টারি নির্মাণে। এর মধ্যে দ্য ওয়াগন শিরোনামের ডকুমেন্টারিটি তাকে নিজ দেশের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দারুণ প্রশংসা এনে দেয়।

সিনেমা প্যারাডিসো
সিনেমা প্যারাডিসো

১৯৭৯ সালে ইতালির ন্যাশনাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক– আরএআইর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে বেশ কিছু টিভি-অনুষ্ঠান নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত পালন করেন সিএলসিটি কোঅপারেটিভ-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব; আর প্রযোজনা করেন জ্যুসেপ্পে ফেরারার সিনেমা– ওয়ান হান্ড্রে ডেজ ইন পালের্মো [Cento giorni a Palermo]। তোর্নাতোরে এ ফিল্মের কো-স্ক্রিনরাইটার এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ডিরেক্টরের ভূমিকাও পালন করেন। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৮৬ সালে তিনি নির্মাণ করেন প্রথম ফিচার ফিল্ম– দ্য প্রফেসর। জ্যুসেপ্পে মারাজ্জোর গ্রন্থ থেকে কাহিনী নিয়ে সিনেমায় এর ইচ্ছেমতো রূপ দেন তিনি। আর তাতেই বেস্ট নিউ ডিরেক্টর ক্যাটাগরিতে জিতে নেন গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড।

প্রান্তিক জীবন হলো সিসিলিয়ান কাহিনী নিয়ে নির্মিত তোর্নাতোরের সিনেমাগুলোর একটি হলমার্ক। সিনেমার ক্ষমতার প্রতি একটি আবেগঘন অথচ ক্ষমতাধর বন্দনায় নির্মিত সিনেমা প্যারাডিসো সিসিলির প্রেক্ষাপটে বানানো– যেখানে স্থানীয় এক সিনেমা-হলে একজন সিনে-প্রেমী বালক ও একজন প্রজেকশনিস্টের মধ্যে একটি বেখাপ্পা বন্ধুত্বের সম্পর্কের বর্ণনা দেখি আমরা। এই ফিল্মটি তাকে স্বদেশের গণ্ডি পেরিয়ে এনে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতি। অবশ্য এই খ্যাতি কোনো কোমল পথে আসেনি। বরং ১৯৮৮ সালে নিজ দেশে ফিল্মটি মুক্তি পাওয়ার পর ফিল্মমেকার হিসেবে তোর্নাতোরের দুর্নাম বাড়তে থাকে। এমনই এক রূঢ় সময়ে তিনি নজরে পড়েন প্রডিউসার ফ্রাঙ্কো কাস্তালদির। অভিজ্ঞ এই ভদ্রলোক এসে হাত রাখেন এই তরুণের কাঁধে; দেন পরামর্শ। সেই পরামর্শ ও পথনির্দেশনা পেয়ে, লং-টেক নিতে ভালোবাসা এই ফিল্মমেকার তার ম্যাটেরিয়ালগুলোকে আবার ফেলেন এডিটিংয়ের কাঁচির নিচে, এবং রিশেপ দেন। এরপর ফিল্মটির নতুন ভার্সন প্রথমে দেখানো হয় ১৯৮৯ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে; আর সেখানে তুমুল প্রশংসার পাশাপাশি জিতে নেয় স্পেশাল জুরি প্রাইজ। কান জয়ের পর আন্তর্জাতিক সিনেমা-মহলেও ফিল্মটি বেশ সাড়া ফেলতে শুরু করে এবং সে বছর বেস্ট ফরেন-ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম ক্যাটাগরিতে জিতে নেয় অস্কার।

এমন উত্থানের পর আসে পতন। ১৯৯০ সালে নির্মিত এভরিবডি ইজ ফাইন-এ এই ফিল্মমেকারের ট্রেডমার্ক হিসেবে বিবেচিত সেন্টিমেন্টাল-স্টাইলটি একজন বয়স্ক বিপত্মীক পুরুষের মধ্যে প্রতিফলিত হয়– যে কিনা নিজের সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে টের পায়, ওরা প্রত্যেকেই তাদের জীবনযাপন সম্পর্কে তাকে মিথ্যে তথ্য দিচ্ছে। সূচনাদৃশ্যে নিজ সন্তানদের প্রতি একজন পিতার ব্যাকুল বাসনাকে ফুটিয়ে তোলা যেখানে যে কোনো ফিল্মের ক্ষেত্রে একটি বিশাল সম্ভাবনাকে ধারণ করতে সক্ষম, সেখানে সেই শক্তিকে ব্যবহার না করে বরং লোকটির ভ্রমণের ল্যান্ডস্কেপে অধিকতর ফোকাস করার মাধ্যমে সেটিকে তরল করে দেওয়ার গোয়ার্তুমি ছিল তোর্নাতোরের মধ্যে; আর তাতে এভরিবডি ইজ ফাইন নিমজ্জিত হয় ব্যর্থতায়। এরপর স্পেশালি অন সানডে [১৯৯১] শিরোনামের একটি এনথ্রোলজি ফিল্মের একটি সিগমেন্টে কন্ট্রিবিউট করার পর এই ফিল্মমেকার তার নিজের এলাকায় ফিরে আসেন; নন্দনতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন পালের্মো বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দ্য স্টার মেকার
দ্য স্টার মেকার

এই স্বেচ্ছা-বিমুখতা শেষে, নিজের ফিল্ম-ক্যারিয়ারকে আবারও শুরু করার লক্ষ্যে, ১৯৯৪ সালে তিনি অ্যা পিওর ফরমালিটি নামের একটি হেয়ালিপূর্ণ ও থ্রিলারধর্মী, অথচ মনোমুগ্ধকর ফিল্ম নির্মাণ করেন। এখানে নিজের অভ্যস্ত সেন্টিমেন্টালিটিকে বাদ দিয়ে তিনি বরং একজন পুলিশ অফিসার ও একজন সন্দেহভাজন খুনির মধ্যকার ইন্টারোগেশনের ইঁদুর-বিড়াল খেলার উপর ফোকাস করেন। স্থানীয় এক পুলিশ স্টেশনের একেবারেই বাজে লাইটে শুটিং করলেও এই ফিল্মমেকার শুধুমাত্র নিজের দক্ষ এডিটিং ও ফ্লুইড ক্যামেরা মুভমেন্টের জাদুতেই নয়, বরং প্রধান পুলিশ চরিত্রে কিংবদন্তি ফিল্মমেকার রোমান পোলানস্কি ও খুনি চরিত্রে কিংবদন্তি অভিনেতা জেরার্ড ডিপার্ডিওর অসাধারণ অভিনয়ের কারণেও বেশ ভালোভাবে উৎরে গেছেন।

এরপর তোর্নাতোরে আবারও চোখ ফেরান তার অভ্যস্ত স্টাইলে। নির্মাণ করেন দ্য স্টার মেকার। এই ফিল্মটির সঙ্গে সিনেমা প্যারাডিসোর অনেক মিল পাওয়া সম্ভব। সিসিলির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ফিল্মে আমরা দেখা পাই এক ধোকাবাজের– যে সিনেমার ‘নতুন মুখ’ খোঁজার নাম করে গ্রামবাসীর কাছ থেকে অভিনব কায়দায় টাকা কামাতে থাকে। কিন্তু অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর এক কিশোরী লোকটির ভ্যানের পিছু নিলে এবং ঘটনাক্রমে তাদের মধ্যে রোমান্সের উদ্ভব ঘটলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। দান্তে স্পিনোত্তির অনবদ্য সিনেমাট্রোগ্রাফি আর এন্নিও মোরিকোনের চমৎকার মিউজিকের সমন্বয়ে এই ফিল্মটি ১৯৯৫ সালের অস্কারে বেস্ট ফরেন-ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম ক্যাটাগরিতে মনোনীত হয়।

এরপর আরেকটি অসাধারণ ফিল্ম নির্মাণ করেন তোর্নাতোরে। ১৯৯৮ সালে নির্মিত দ্য লিজেন্ড অব ১৯০০ তার প্রথম ইংরেজিভাষী ফিল্ম। একক-মঞ্চাভিনেতার মনোলোগ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে এর কাহিনী। জাহাজে জন্মে, সেই জাহাজেই পুরোটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া এক অসাধারণ মিউজিশিয়ানকে নিয়ে রচিত একটি আধুনিক উপকথা অবলম্বনে নির্মিত এই মহাকাব্য-ধারার ফিল্মটি ইতালিতে যখন মুক্তি দেওয়া হয়, তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ৩ ঘণ্টা; পরে আমেরিকায় মুক্তি দেওয়ার সময় প্রায় এক ঘণ্টার মতো কমিয়ে ফেলা হয়।

মালেনা
মালেনা

২০০০ সালে তোর্নাতোরে নির্মাণ করেন তার আরেকটি পৃথিবীবিখ্যাত সিনেমা– মালেনা। সিসিলের একটি কাল্পনিক শহরে, যুদ্ধকালীন প্রেক্ষাপটে একটি আবেগপূর্ণ কাহিনীর ভেতর দিয়ে যে সামাজিক বিবৃতিকে ধারণ করে আছে এ ফিল্ম, তা যেকারও মনে চিন্তার ব্যাপকবিস্তারি প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম। মালেনার সাফল্যের পর ২০০৬ সালে নির্মাণ করেন আরেকটি আলোচিত ফিল্ম– দ্য আননৌন ওম্যান। বিদেশ বিভুঁইয়ে, একা একা নিজের ভয়ংকর অতীতের তাড়া খাওয়া এবং হারানো কন্যাকে খুঁজে বেড়ানো এক নারীকে নিয়ে এই সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ও মিস্টেরি ফিল্মের কাহিনী।

এরপর এই ফিল্মমেকার আবার মুখ সিসিলিয়ান সমাজে। নির্মাণ করেন বারিয়া [২০০৯]। দুই প্রেমিক-প্রেমিকার দৃষ্টিকোণ থেকে ফুটিয়ে তোলেন ১৯৩০ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তীকালের সময়কে। তাতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত বিষয়আশয় ফুটে ওঠে প্রচ্ছন্নভাবে। ২০০৯ সালের ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ওপেনিং সিনেমা ছিল এটি। আর ১ জানুয়ারি ২০১৩-তে মুক্তি পায় তার সাম্প্রতিক সিনেমা দ্য বেস্ট অফার। ইংরেজিভাষী এই রোমান্টিক ও মিস্টেরিয়াস ফিল্মটি তোর্নাতোরের নির্মাণ-জাদুতে ধারণ করে আছে প্রেম ও প্রবঞ্চনার কাহিনী। এটি ইতোমধ্যে ইতালিয়ান সিনেমা একাডেমির দেওয়া দেভিদ দি দোনাতেলে­ ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে জিতে নিয়েছে বেস্ট ফিল্মের পদক। আর ১৪ জানুয়ারি ২০১৬-তে মুক্তি পেয়েছে তার সাম্প্রতিক সিনেমা দ্য করেসপনডেন্স

বলা বাহুল্য, মূলত তোর্নাতোরের সিনেমার ভেতর দিয়েই ইতালিয়ানদের পাশাপাশি আমেরিকানসহ পশ্চিমাবিশ্ব, তথা সারাবিশ্বের সিনেমাপ্রেমীরা সিসিলিকে সিনেমার উর্বর খনি হিসেবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে। অবশ্য, অনেকেই তার ফিল্মমেকিং স্টাইলে দুই আমেরিকান ফিল্মমেকার ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা ও মাইকেল চিমিনোর স্টোরিটেলিংয়ের ছাপ খুঁজে বেড়ান, বিশেষ করে তাদের যেসব ফিল্মে প্রকৃত সিসিলি ও প্রকৃত সিলিয়ানদের উপস্থিতি রয়েছে, সেগুলোতে; যেমন : কপোলোর দ্য গডফাদার ও চিমিনোর দ্য সিসিলিয়ান। আরও মিল খোঁজেন স্বদেশী কিংবদন্তি ভিসকোন্তির অসাধারণ সৃষ্টি দ্য লিওপার্ড-এর সঙ্গে। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে, একজন তরুণ ফিল্মমেকার হিসেবে তোর্নাতোরে মোটেও ভয় পাননি সেইসব জটিল ঐতিহাসিক ও সামাজিক ইস্যুর উপর আলোকপাত করতে– যেগুলো নিয়ে সচরাচর সিসিলিয়ানরা মুখ খোলে না; যেমন– ফ্যাসিবাদ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রত্যেকটি চরিত্র ও প্রত্যেকটি পরিস্থিতির দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলোর সাহসী ব্যাখ্যা হাজির করে চলেছেন তিনি। আর তাতে একজন দুর্লভতম ফিল্মি-মেধা হিসেবে তার খ্যাতি বিস্তৃত হয়েছে, এবং তিনি গণ্য হচ্ছেন ডিরেক্টরদের ডিরেক্টর হিসেবে।

দ্য করেসপনডেন্স
দ্য করেসপনডেন্স

সাক্ষাৎকার দিতে বা সিনেমা নিয়ে কথা বলতে খুব একটা পছন্দ করেন না তিনি; বরং চান, যেন তার সিনেমাগুলো নিজেই কথা বলুক। শিল্পগত বিবেচনায় এ এক নিখাঁদ অবস্থান। আর তাতে সাড়া দিয়ে, জ্যুসেপ্পে তোর্নাতোরের সিনেমাগুলো নিজেরাই এদের স্রষ্টার পক্ষে বেশ ভালোভাবে কথা বলে ওঠে।

তোর্নাতোরে কখনোই অনভিজ্ঞ কিংবা অপেশাদার অভিনেতা নিয়ে কাজ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন না। দ্য স্টার মেকার ফিল্মটি নিয়ে চারপাশে বেশ উচ্চসিত প্রশংসা ও গুজবের বান ছুটতে থাকলে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন,

কোনো অপেশাদার অভিনেতাকে, কিংবা যাকে কোথায় খুঁজে পাবেন, তাও আপনার জানা নেই– এমন কাউকে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা হলো, সামনে যাকে পেলেন, তার হাতেই নিজের জমানো টাকা তুলে দেওয়ার মতো ব্যাপার। এই লোকটি আপনার টাকা আদৌ ফেরত দেবে কিনা– তা কখনোই নিশ্চিত পারবেন না। অপেশাদার অভিনেতা খোঁজার আসলে কোনো নিয়ম-কানুন নেই। এটি হতে পারে অনুভূতির প্রশ্ন, কিংবা স্রেফ ভাগ্যের ব্যাপার। ব্যাপারটি মজারও হতে পারে; আবার বেশ যাতনারও।
দ্য স্টার মেকার-এর শুটিংয়ের সময়, একদিন সকালে আমরা থমকে গিয়েছিলাম; কেননা, একজন অভিনেত্রী সেটে এসে পৌঁছাননি। আমরা ভাবলাম, নিশ্চয়ই কোনো ঝামেলায় পরেছেন; তবে দেরিতে হলেও নিশ্চয়ই আসবেন। আমাদের হাতে কোনো বিকল্প শুটিং-সিডিউল ছিল না। ছোট্ট এক শহরের কোনো এক জায়গায় অবস্থান করছিলাম আমরা; ফলে সেই অভিনেত্রীর স্থলে অভিষিক্ত করার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব ছিল না। অবশেষে সেই লাপাত্তা অভিনেত্রী ফোন করলেন। অশ্রুমাখা কণ্ঠে জানালেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অপ্রত্যাশিতভাবেই একটা ফোন পেয়েছেন– শিক্ষিকার চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য। সেটা কোথায়– জানি না; তবে তিনি যদি ইন্টারভিউটা মিস করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই একটা স্থায়ী চাকরির সুযোগ হাতছাড়া করবেন। তিনি ভীষণ শরমে পড়েছিলেন ঠিকই; তবে তোর্নাতোরের সিনেমার অংশ হওয়া আর একটা ‘স্থায়ী চাকরি’ নেওয়া– এ দুটোর মধ্যে কোনটি বেছে নিতে হবে, সে ব্যাপারে তার কোনো দ্বিধা ছিল না!


দ্য বেস্ট অফার
দ্য বেস্ট অফার

জ্যুসেপ্পে তোর্নাতোরের সিনেমাটোগ্রাফি 

১৯৮৬ । দ্য প্রফেসর [Il camorrista]
১৯৮৮ । সিনেমা প্যারাডিসো [Nuovo Cinema Paradiso]
১৯৯০ । এভরিওবডি ইজ ফাইন [Stanno tutti bene]
১৯৯১ । স্পেশালি অন সানডে [এপিসোডিক ফিল্ম; এপিসোড--Il cane blu]
১৯৯৪ । অ্যা পিওর ফরমালিটি [Una pura formalità]
১৯৯৫ । দ্য স্টারমেকার [L'uomo delle stelle]
১৯৯৫ । Lo schermo a tre punte [ডকুমেন্টারি]
১৯৯৬ । Ritratti d'autore: seconda serie [ডকুমেন্টারি]
১৯৯৭ । দ্য লিজেন্ড অব ১৯০০ [La leggenda del pianista sull'oceano]
২০০০। মালেনা [Malèna]
২০০৬। দ্য আননৌন ওম্যান [La sconosciuta]
২০০৭ । বারিয়া [Baarìa]
২০১৩ । দ্য বেস্ট অফার [La migliore offerta]
২০১৬ । দ্য করেসপনডেন্স [La corrispondenza]

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here