সিনেমা সেন্টিমেন্ট

1042
টেলিভিশন । ফিল্মমেকার : মোস্তফা সরয়ার ফারুকী । বাংলাদেশ । ২০১২
লিখেছেন । আবদুল্লাহ আল মুক্তাদির

ল যাই আনন্দের বাজারে…। আনন্দের এক বড় বাজার নিয়ে আজকের মগজ ধোলাই।

কিছু মানুষ সকল জ্ঞান ধন্য করে পাড়ি জমিয়েছে সিনেমার সমালোচনায়। আদার ব্যাপারী থেকে শুরু করে ফেসবুক সেলিব্রিটি পর্যন্ত সবাই এখন সিনেমার সমালোচক। আমি প্রথমেই যে বিষয়টা সম্পর্কে বলতে চাই, সেটা হচ্ছে– সিনেমা বানানো যেমন অনেক সাধনার বিষয়, সিনেমার সমালোচনা করতে চাইলেও কিন্তু সিনেমা বানানোর মতো জ্ঞান থাকা জরুরি। অবাক হচ্ছেন?

একজন ডাক্তার যেমন আরেকজন ডাক্তারের ট্রিটমেন্টের ভালো-মন্দ খুব ভালো করে বুঝে, তেমন একজন ফিল্মমেকারই আরেকজন ফিল্মমেকারের কাজ খুব ভালো করে বুঝে; যা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব না। মনে রাখতে হবে, হাতুরে ডাক্তারকেও অনেকে ডাক্তার ভেবে ভুল করে।

আপনারা যারা সিনেমার সমালোচলায় খুব আগ্রহী, তারা আজিজ মার্কেটে গেলে ফিল্মের ওপর অনেক ধরনের বই পাবেন। চলচ্চিত্র সমালোচনা নিয়েও কয়েকটা বই আছে। এছাড়া ইন্টারনেট থেকে আপনারা ফিল্মের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট সম্পর্কে আলাদা আলাদা করে বিস্তারিত জানতে পারেন। ফিল্ম সম্পর্কে লিখার আগে এগুলা বিস্তারিত ভাবে জানা খুব, খুব জরুরি। ইউটিউবে লাইট, ক্যামেরা নিয়েও বিস্তারিত ভিডিও পাবেন; সেগুলা দেখুন, বুঝুন। সমালোচনার ভাবভঙ্গী আসলে কেমন, সেটা জানুন, নিজে নিজে প্র্যাকটিস করুন। তারপর ছবি কয়েকবার দেখে আপনার রিভিউ দিন। টি-টোয়েন্টির এই যুগে আজকাল একবার দেখেই রিভিউ লিখে দেয় প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষ। আর একটা সিনেমাকে খারাপ বললেই শত শত ‘জি হুজুর’ প্রকৃতির লোক বলে– ‘ভালো বলছেন ভাই’! জানেন, এই আপনিই যখন জেনে লিখবেন, তখন দেখবেন আপনার আগের লেখা আর আজকের লেখার মধ্যে কত পার্থক্য। সেদিন আমাকে মনে মনে ধন্যবাদ দেবেন।

ব্যাটলশিপ পতেমকিন । ফিল্মমেকার :  সের্গেই আইজেনস্টেইন । সোভিয়েত-রাশিয়া । ১৯২৫
ব্যাটলশিপ পতেমকিন । ফিল্মমেকার : সের্গেই আইজেনস্টেইন । সোভিয়েত-রাশিয়া । ১৯২৫

আরও সহজ করে বলি– আপনি সেই মানুষ সম্পর্কেই ভালো করে বলতে পারবেন, যাকে আপনি খুব ভালো করে চেনেন, যার সাথে আপনি অনেক সময় ব্যয় করেছেন এবং যাকে আপনি আসলেই বুঝতে চেয়েছেন। তাহলে সিনেমার ক্ষেত্রেই এর ব্যতিক্রম হয় কী করে, বলুন? সিনেমা চর্চায় আপনি কত সময় ব্যয় করেছেন? ফিল্মের কোনো রিভিউ পাবলিকলি প্রকাশ করার আগে নিজে নিজে শ’খানেক ফিল্মের রিভিউ লিখে দেখেন, আপনার লেখার আর ফিল্ম সম্পর্কে জানার সীমা কতটুকু। উপরে উপরে জ্ঞানীর সংখ্যা এখন এত বেশি যে, ঐ সব লেখা পড়লে এখন ক্লান্ত লাগে। কারও কারও দৃঢ় বিশ্বাস– অন্যের জ্ঞানকে ছোট করে দেখালেই নিজেকে বড় প্রমাণ করা যায়। এই সব থিওরি এখন পুরানো হয়ে গেছে! মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে সব ধরনের সিনেমারই বেঁচে থাকার অধিকার আছে

সিনেমা আর টেলিফিল্মের যে সংজ্ঞা আমাদের দেশে প্রচলিত আছে, সেগুলা পড়লে রীতিমত মায়া হয় আমাদের দেশের ফিল্মমেকারদের জন্য। আপনি যদি ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকারদের ফিল্মকে টেলিফিল্ম বলে প্রামান করতে চান, তাহলে তারাও খুব সহজে আপনার কাছে যা সিনেমা সেটা যাত্রা বলে প্রমান করে দেবে। কিছু কথা বলা খুব জরুরি। যেমন ধরুন, আদিম যুগ থেকে মধ্যযুগ, মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগ, আধুনিক যুগ থেকে উত্তরাধুনিক যুগ– যেখানে এখন আমরা আছি, একটু অবজার্ভ করলে দেখতে পাবেন, প্রত্যেকটা নতুন যুগের প্রারম্ভে আগের যুগের একটা সূক্ষ্ম ছায়া বা প্রভাব রয়ে গেছে। এবং পুরাতন যুগে অভ্যস্ত মানুষ নতুনকে খুব সহজভাবে গ্রহণ করেনি। এই কথাটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে– সিনেমা যখন ভিজ্যুয়ালি নতুনভাবে গল্প বলার একটা টেকনিক দেখাল, তখন অনেকেই সহজভাবে বিষয়টা নেয়নি। আবার কেউ কেউ খুব আগ্রহের সাথেই বিষয়টা নিয়েছে।

ক্যামেরা আবিষ্কারের পরে একটা এক্সপেরিমেন্টের কথা আমরা সবাই জানি। কয়েকজন মঞ্চাভিনেতা ও কয়েকজন সত্যিকারের শ্রমিককে নেয়া হয়েছিল ভারি একটা বস্তা নিচে থেকে তুলে পিঠে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য । শুট শেষে দেখা গেলো, মঞ্চাভিনেতাদের বস্তা উত্তোলনের চেয়ে শ্রমিকদের বস্তা উত্তোলনের দৃশ্য বেশি সাবলীল, বেশি গ্রহণযোগ্য। কারণ হচ্ছে, অভিনেতারা বস্তা উত্তোলনের ক্ষেত্রেও অভিনয়ের আশ্রয় নিচ্ছে। বস্তা উঠাতে যত না কষ্ট হচ্ছে, তার থেকে বেশি এক্সপ্রেশন দিচ্ছে। আর অন্যদিকে, শ্রমিকেরা খুব সাবলীলভাবে তার কাজ করে যাচ্ছে।  সেদিনই সবাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, ক্যামেরা দিয়ে যে গল্প বলা হবে, সেখানে লাউড অ্যাক্টিং চলবে না। ক্যামেরার সামনে থাকতে হবে সাবলীল, স্বাভাবিক। লাউড অ্যাক্টিংয়ের জায়গা চলচ্চিত্র নয়

প্রতিদ্বন্দ্বী । ফিল্মমেকার : সত্যজিং রায় । ভারত । ১৯৭০
প্রতিদ্বন্দ্বী । ফিল্মমেকার : সত্যজিং রায় । ভারত । ১৯৭০

কিন্তু দুঃখের বিষয়, ঐ যে নতুনের মধ্যে পুরাতনের প্রভাব; ঐটা বেশ ভালোভাবেই রয়ে গেল। সিনেমায় মঞ্চাভিনেতাদের ব্যবহার করা হলো। ফলে সিনেমায় মঞ্চের অভিনয়ের ফর্মটা ঢুকে গেল। আরেকটা কারণ ধরা হয়, দীর্ঘদিন অভিনয় বলতে যা মঞ্চে দেখে এসেছে নির্মাতারা, তা-ই চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা শুরু করলেন নিজের অজান্তেই।  নির্বাক যুগের পরেও তখনকার বড় বড় নির্মাতাদের চলচ্চিত্রে লাউড অ্যাক্টিংয়ের ব্যবহার দেখা যায়।

এবার আসি আজকের প্রসঙ্গে; কেন কিছু কিছু চলচ্চিত্র আপনার কাছে টেলিফিল্ম মনে হয়?

অভিনয়

বুঝ হওয়ার আগে থেকেই বিটিভিতে অথবা ভিসিআর-এ যে সকল চলচ্চিত্র আপনি দেখে এসেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মঞ্চ/যাত্রার অভিনয়ে ভরপুর। এ জন্য নিজের অজান্তেই আপনার সাবকনশাস মাইন্ডে সিনেমার অভিনয় সম্পর্কে ভুল ধারনার জন্ম নিয়েছে। অন্যদিকে, টিভি নাটকে যারা অভিনয় করিয়েছেন, তারা তুলনামূলক অনেকটাই ন্যাচারাল অ্যাক্টিং করিয়েছেন। এই জন্য আপনার কাছে সিনেমার অ্যাক্টিং অন্যরকম মনে হয় টিভি নাটকের থেকে। টেলিভশনের পর্দা সিনেমাহলের মতো বড় না হলেও আপনি খুব কাছ থেকে তা দেখেন, তাই লাউড অ্যাক্টিংয়ের এখানেও কোনো স্থান নেই। কেননা, নির্মাতারা অ্যাঙ্গেল পরিবতর্ন করে প্রয়োজনীয় দৃশ্যের মালা গেথেই আপনাকে দেখাবে।

আমি বলতে চাচ্ছি, মূলত টেলিভিশনের জন্যই হোক আর বড় পর্দার জন্যই হোক, কোনোটাতেই লাউড হওয়ার দরকার নেই। ক্যামেরার সামনে আপনাকে হতে হবে সহজ, স্বাভাবিক, সাবলীল। গুরু নির্মাতারা বলেন– অভিনয়ের প্রথম শর্ত হচ্ছে, কখনো অভিনয় করো না। নিজেকে ভাঙতে হবে সেটা ১০০ ভাগ সত্যি; কিন্তু আরোপিত কিছু করা যাবে না, ফলস কিছু করা যাবে না, অতিরিক্ত কিছু করা যাবে না, দৃষ্টিকটু হয়– এমন কিছু করা যাবে না।

সুতরাং, যারা বলেন, টেলিফিল্মের জন্য অভিনয়ের এক ভাষা আর চলচ্চিত্রের জন্য অন্য ভাষা, তারা ভুল বলেন। ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের ভাষা একটাই। বরং যাত্রা বা মঞ্চ অভিনয়ের ভাষার সাথে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ভাষার দূরত্ব অনেক

মহানগর@কলকাতা । ফিল্মমেকার : সুমন মুখোপাধ্যায় । ভারত । ২০১০
মহানগর@কলকাতা । ফিল্মমেকার : সুমন মুখোপাধ্যায় । ভারত । ২০১০

লোকেশন

তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবিগুলোতে ম্যাক্সিমাম বাড়ি-ঘর এফ.ডি.সি’র সেট-এ বানানো হয়। সেই ডুপ্লেক্স বাড়ি, সেই গরিবের বাড়ি, সেই এফ.ডি.সি’র রাস্তা, সেই বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ/হাসপাতাল। আপনার মনে নিজের অজান্তেই সিনেমার একটা ভিজ্যুয়াল তৈরি হয়ে গেছে। তাই, যখন ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকারেরা রিয়েল লোকেশনে সিনেমা বানায়, আপনার কাছে সেটা মনে হয় প্যাকেজ নাটক/টেলিফিল্ম! কারণ, প্যাকেজ/টেলিফিল্মে আপনি রিয়েল লোকেশন দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

আরও সহজ করে বলি। আপনাকে যদি বলা হয়– আপনি শিয়াল পণ্ডিতের ছবি আঁকুন, তাহলে আঁকা শেষে দেখা যাবে, আপনি শিয়াল পণ্ডিতের চোখে একটা চশমা এঁকে দিয়েছেন । কেন এঁকেছেন, বলেন তো?

কারণ ছোটবেলা থেকে আপনি দেখে এসেছেন, শিয়াল পণ্ডিত চশমা পরে। ঠিক একইভাবে, স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চলচ্চিত্র আপনার কাছে টেলিফিল্ম/প্যাকেজ নাটক মনে হয়! কারণ, আপনার মনের ভিজ্যুয়াল স্ট্যান্ডার্ডের সাথে এই সব ছবির ভিজ্যুয়াল একেবারেই মেলে না। এ বেলায় আপনি চা পানের বিরতি নিতে পারেন; অথবা চা খেতে খেতে লেখাটা পড়তে পারেন। কারণ, ইনুভাইয়ের ভাষায়– পিকচার আভিবি বাকি হেয় মেরেদোস্ত!

নাচ/গান/ঢিসুম ঢিসুম

ঠিক একইভাবে আপনি ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন– সিনেমা মানে নাচ, গান আর ঢিসুম ঢিসুম। আর টেলিফিল্মে এগুলো প্রায় নেই বললেই চলে।

মোটা চালের ভাত

আপনি আরও দেখে এসেছেন, মোটা ডায়ালগবাজি, যাত্রার মতো করে সংলাপ বলা। আপনার ব্রেইন সিনেমার এই স্ট্যান্ডার্ডটাও সেট করে রেখেছে। অন্যদিকে, দেশ-বিদেশের সিনেমা দেখে যারা সিনেমা চর্চা করে এসেছেন, তারা কখনোই সিনেমায় মোটা মোটা ডায়ালগ ব্যবহার করবেন না। তাদের ডায়ালগ হবে বাস্তবের কথোপকথনের মতো। আরও অনেক কারণ আছে।

  • সিনেমা মানে সিনেমার আর্টিস্টই নিতে হবে।
  • নায়ক-নায়িকা থাকতে হবে। নায়ক-নায়িকা ছাড়া সিনেমা হয় নাকি?
  • নায়িকার স্বাস্থ্য ভালো হলে ভালো হয়।
  • নায়কের জবরদস্ত এন্ট্রি থাকতে হবে।
  • সিনেমা মানে নায়িকার পোশাক হবে খোলামেলা।
  • সিনেমা মানে লং শট থাকতে হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি…

ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক

আমাদের বাণিজ্যিক ছবিগুলোতে দিনের পর দিন একই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে, স্বাধীন নির্মাতারা প্রত্যেকটা সিনেমাতেই আলাদা আলাদা মিউজিক ব্যবহার করেছেন। যার সাথে আবার এফ.ডি.সি’র মিউজিকের কোনো সাদৃশ্য নাই।

দ্য পিয়ানো টিচার । ফিল্মমেকার : মাইকেল হানেকে । অস্ট্রিয়া । ২০০১
দ্য পিয়ানো টিচার । ফিল্মমেকার : মাইকেল হানেকে । অস্ট্রিয়া । ২০০১

ক্যামেরার কাজ

ক্যামেরার কাজের কথাই ধরুন। মূলধারার ছবিতে যে চিত্রগ্রাহকই থাকুক না কেন, আপনি তাদের কাজ দেখে আলাদা করতে পারবেন না। এদের নিজেদের আলাদা করে কোনো সিগনেচার নাই। সবার একই ধরনের স্টাইল। অথচ স্বাধীন নির্মাতারা/চিত্রগ্রাহকেরা প্রতিটা কাজেই আলাদা আলাদাভাবে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করেন। দিনের পর দিন নিজের সিগনেচার তৈরি করার জন্য পরিশ্রম করে যান। নতুন ফ্রেমের পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। দুঃখের বিষয়, এই আচরণের সাথেও আপনি অভ্যস্ত নন!

কৌষ্ঠকাঠিন্য

আমাদের দেশের মানুষের কাছে আরেক রকম চলচ্চিত্র খুব জনপ্রিয়। কেউ কেউ আবার এই চলচ্চিত্রের নাম দিয়েছে কলকাতার কৌষ্ঠকাঠিন্য! কিছু কিছু যুবাকে প্রায়ই অহংকার করে বলতে শুনি– আমি এইসব ফালতু ছবি দেখি না; আমি কলকাতার আর্টফিল্ম দেখি! একটু খেয়াল করে দেখবেন– সেই সব ফিল্মগুলোতে বেশির ভাগই, বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে তেল চুপচুপে জ্ঞান দান চলছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, নির্মাতা কোথাও জ্ঞান রাখার পাত্র না পেয়ে তার সব জ্ঞান সিনেমায় বমি করে দিয়েছেন! দেখুন, ঘুরে ফিরে বার বার একটা কথাই আসছে– সিনেমাতে মোটা দাগে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। জ্বি, মোটা দাগে জ্ঞানও দেওয়া যাবে না। স্থুলভাবে যা করবেন, সেটাই দৃষ্টিকটু মনে হবে। সিনেমা মানেই পরিমিত বোধ। ইনফরমেশন হোক, ম্যাসেজ হোক, তত্ত্বই হোক কিংবা গল্প বলা– পরিমিতিবোধটাই সিনেমার ভাষা।  পরিমিতিবোধটাই সিনেমার সৌন্দর্য্য।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রথমে টেলিফিল্ম প্রডিউস করা শুরু করে। এরপর তারা আসে সিনেমা প্রডিউস করতে। এই সিনেমা প্রডিউস করতে এসে এরা কিছু কাজ করে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে কনফিউশন তৈরি করে। মানুষ ভাবে, এরা যা করে, সবই টেলিফিল্ম। কেননা, ছবি শুরু হওয়ার সময় বড় করে লেখা আসে– ইমপ্রেস টেলিফিল্ম। মানুষের সাবকনশাসে ঢুকে যায়, তারা টেলিফিল্ম দেখছে।  আর এর সাথে আরও কিছু বিষয় মিশে আছে, যা লেখার প্রথমদিকেই বলা হয়েছে। অথচ, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ছবিগুলাও ৩৫ মি.মি., 2k অথবা 4k ফরমেটে শুট করা হয়। যার উদ্দেশ্য কেবল বড়পর্দা। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের নাম পরিবর্তন করে ইমপ্রেস ফিল্মস রাখাটা জরুরি হয়ে গেছে!

ডিজাইন

গল্পের মুডের সাথে সামাঞ্জস্যতা রেখে ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকারেরা সময়, লোকেশন, কস্টিউম, লাইট, ব্যাকগ্রাউন্ড, সেট, প্রপ্স, আর্ট, শুটিং স্টাইল, এডিটিং, কালার গ্রেডিং ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ডিজাইন করেন। আপনি যখন স্ক্রিনে ছবিটা দেখবেন, তখন আপনার কাছে বিষয়টা খুব স্বাভাবিক মনে হবে। অনেক সহজ মনে হবে। মূলত সিনেমাকে জীবনের মতো, জীবনের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এত সময় নিয়ে, এত মাথা খাটিয়ে কাজ করা হয়। কিন্তু আমাদের এফ.ডি.সি’র সিনেমাগুলোতে এত কিছুর সমন্বয় করা হয় কি? এভাবে ডিজাইন করা হয় কি?

ডিপারচার্স । ফিল্মমেকার : ইয়োজিরো তাকিতা । জাপান । ২০০৮
ডিপারচার্স । ফিল্মমেকার : ইয়োজিরো তাকিতা । জাপান । ২০০৮

কেউ কেউ সিনেমা বানায়ই রিকশাওয়ালা ভাইদের জন্য। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু রিকশাওয়ালা ভাই ছাড়াও আমাদের আরও বেশকিছু দর্শক শ্রেণী আছে। তাদের কথাও তো ভাবতে হবে। অনেক রুচির মানুষ পৃথিবীতে আছে। তাই সিনেমাও হতে পারে নানান রঙের। কিন্তু এক রুচির দর্শক যদি আরেক রুচির দর্শককে গাল মন্দ করে, তাহলে শুধু বিবাদই সৃষ্টি হবে।  তর্কের সমাধান হবে না।

পরিমিতিবোধের বাইরে, জীবনের বাইরে যেয়ে সিনেমা বানালে যে সিনেমা হবে না– সেটা কিন্তু নয়। সেটা হয়তো কারও কারও মুখে রুচবে না। সেটা হয়তো শিল্পগুণ হারাবে। তাই বলে ঐসব সিনেমাকে যাত্রা না বলাই ভালো। তেমনি আপনার কাছে কোনো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে টেলিফিল্ম মনে হতে পারে, সেটা রুচির বিষয়। তাই বলে এগুলা সিনেমা না, এটা আপনি বলতে পারেন না।  আপনি বলতে পারেন না– সিনেমার নামে টেলিফিল্ম বানাচ্ছে।

জ্বি ভাইজান, আমাদের ইনডিপেনডেন্ট ফিল্মমেকার’রা সিনেমার নামে টেলিফিল্ম বানান না। বরং তাদের টেলিফিল্মগুলাই হুবহু সিনেমার মতো। তারা টেলিফিল্মে সিনেমার ট্রিটমেন্ট দেন। যে উদ্দেশ্য নিয়ে সিনেমার জন্ম হয়েছিল, ঠিক সেইরকম।

যেহেতু সব সিনেমারই দর্শক আছে, তাই কোনো সিনেমার গলা না চেপে আসুনে চর্চাটা বাড়াই। সব ছবিই বাজারে চলুক। এর মধ্যে থেকে কিছু হয়তো ফেস্টিভালে যাবে, কোনোটা চায়ের টেবিলে আড্ডায় উঠবে, বাণিজ্য করবে, মানুষ মনে রেখে দেবে, অন্যকে দেখতে বলবে। ধন্যবাদ।

Print Friendly, PDF & Email

4 মন্তব্যগুলো

  1. এরপরেও যদি টেলিফিল্ম সিনেমা নিয়া কথা কয়, তাহলে আর কিছু করার নাই।

  2. না জেনে জ্ঞানী হওয়ার প্রবণতা আমাদের তাড়া করে বেড়ায়…. সেটাই যে বড় সমস্যা।

Leave a Reply to তামজিদ মেহরান

Please enter your comment!
Please enter your name here