মূল । লিভ উলমন
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ
লিভ উলমন [১৬ ডিসেম্বর ১৯৩৮–]। নরওয়েজিয়ান অভিনেত্রী। ইংমার বারিমনের [ওরফে, ইঙ্গমার বার্গম্যান] ১০টি সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে হাজির থেকেছেন। আর একান্ত বিষয়– স্ত্রী না হলেও সুইডিশ এই মাস্টার ফিল্মমেকারের এক কন্যাসন্তানের জননী তিনি। ফলে একইসঙ্গে ব্যক্তিমানুষ ও সিনেঅলা– ইংমারের উভয়জীবনেরই তিনি এক ঋদ্ধ পর্যবেক্ষক। ১৯৭৬ সালের সিনেমা, ফেস টু ফেস-এর শুটিংয়ের দিনগুলো তিনি টুকে রেখেছিলেন নিজের মতো। তাঁর আত্মজীবনী– চেঞ্জিং-এর সূত্র ধরে, ইংমার-দুনিয়ার অতলে ডুব দেওয়ার এই দুর্লভ সুযোগটি লুফে নেওয়া মন্দ হবে না নিশ্চয়!
পূর্ণাঙ্গ টেক্সটটি বাংলায় প্রথম মুদ্রিত হয় ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত মাসিক কৃত্তিবাস-এর কৃত্তিবাসি শারদীয়া ১৪২৫ সংখ্যার [অক্টোবর-নভেম্বর ২০১৮] বার্গম্যান/বারিমন ক্রোড়পত্রে এবং প্রতিভাস প্রকাশিত বার্গম্যান/বারিমন গ্রন্থে। এখানে সেখান থেকেই দ্বিতীয়াংশ পুনঃমুদ্রিত হলো…
আগের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন
কিস্তি । ২ [৬]
দিন-৬
নিজেকে একটি চালনীর মতো মনে হয় আমার। নিজের ভেতর দিয়ে বাকি সবার অনুভূতিগুলোর বয়ে যাওয়া টের পেলেও, সেগুলোকে আটকানোর কোনো ক্ষমতা আমার কোনোদিনই ছিল না। সন্ধ্যাবেলা আমি রিক্ত হয়ে পড়ে থাকি– কেবল পরের দিন নতুন কোনো আবেগে ভেসে যাবার আশায়।
আমি শিশুতোষ মানুষ। যখন প্রশংসিত হই, আনন্দে বিগলিত হয়ে পড়ি।
একটি দৃশ্যের কাজ শেষ করার পর ইংমার বললেন, ‘তোমাকে ছাড়া এই সিনেমাটি আমি বানাতেই পারতাম না। এমনটা হলে, ব্যাপারটি পুরোই আরেক রকম হয়ে ওঠত।’
তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি না আমি; যদিও মনে করি, অনেকটুকুই টের পেয়ে যাই ঠিক। তবে তিনি কী ‘চান’– তা এক মুহূর্তেই ধরে ফেলতে পারি : এ জায়গাতেই তার মনে নিজের অস্তিত্ব টের পাই আমি। অভিনেত্রী হিসেবে এ আমার সৌভাগ্য।
তার [সিনেমার] নারীদের সবসময়ই আমার কাছে বাস্তব বলে মনে হয়। তারা হয়ে ওঠে আমারই কোনো স্বাভাবিক অংশ। তারা আসলে আমার মতো করে সৃষ্ট– এমনটা বিশ্বাস করার দরকার পড়ে না আমার। এমনকি যদি তিনি আমাকে আমার অচেনা কোনো চরিত্রে অভিনয় করতে দেন, তিনি সেটি লেখার সময়ই আমি বুঝে যাই, তিনি ঠিক জানেন– চরিত্রটি আমি বুঝে ওঠতে পারব; তিনি ঠিক জানেন– আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি দিয়ে চরিত্রটির অভিজ্ঞতাগুলোকে ফুটিয়ে তুলতে পারব ঠিকঠাক।
মাঝে মধ্যে আমরা একে অন্যকে চমকে দিই। এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতেই পারে না।
নিজেকে একান্তই নিজের ও নিজে দেখা অন্যদের হাসি ও কান্নার, আবেগ ও অনুভূতির একজন নির্লজ্জ ও লোলুপ সংগ্রাহক হিসেবেও ভাবি আমি। অন্যেরগুলো কাজ করার সময় কাজে লাগে।
দিন-৭
যথেষ্ট সন্ধ্যা হয়ে গেল, অন্তত আমার বিচারে; কেননা, আমাকে ওঠতে হবে সকাল সাড়ে পাঁচটায়।
মেকআপ-আর্টিস্ট সিলিয়া আমার চোখে ড্রপ দিয়ে গেলেন; এই নীলজলটি এক দুর্দান্ত স্বচ্ছতায় চোখকে লালচে করে তোলে।
গত রাতে আমি একটি লো-কাট ড্রেস আর মাথায় ছোট্ট পরচুলা পরেছিলাম– যেটির কোনোটিই আমার রেগুলার ওয়ারড্রবের অংশ নয়। বহুকাল পর প্রথমবারের মতো লোকজন বললেন, ‘আপনাকে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী লাগছে দেখতে…।’
সিনেমাটির খাতিরে আজকে আমরা মৃত্যু নিয়ে কথা বললাম। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে নিজের স্বামী ও মাকে হারিয়েছেন আইনো। তিনি আমাদের শোনালেন তার মায়ের গল্প– যিনি নিজের অসুখের দিনগুলোতে এক মুহূর্তের জন্যও ভয়ে ভোগেননি। নিজের কন্যাকে চিরতরে ছেড়ে যেতে হবে বলে কেবল বিষাদ ও এক ধরনের নিরর্থক ক্রোধ ফুটে থাকত তার চোখে-মুখে। অন্যদিকে, দীর্ঘ রোগযন্ত্রণায় ভুগে মারা গেছেন আইনোর স্বামী। স্বামীর শেষদিনগুলোতে রাতের বেলা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখতেন এ নারী, যেন টের পেতে পারেন– লোকটি জেগে আছেন নাকি ঘুমের মধ্যে অস্বস্তিতে ভুগছেন।
এটিও ভালোবাসা।
আমরা আমাদের মৃত্যুভীতি নিয়ে কথা বললাম। ছোট্ট কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে মৃত্যু হলো প্রাত্যহিক জীবনের একটি অপেক্ষাকৃত অধিক দৃশ্যমান অংশ। চাপা গলি দিয়ে নিজ গ্রামের লোকগুলো কোনো কফিন বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বিদায় জানানোর এ এক চমৎকার ও অপেক্ষাকৃত অধিক ব্যক্তিগত পন্থা। চলে যাওয়া লোকটির কাছে গাড়ি-বাড়ি নয়, বরং এই মানুষগুলোই অধিক ঘনিষ্ঠ।
***
আজকের দৃশ্যটিকে দেখা যাবে, দু’দিনের গভীর নিদ্রা থেকে জেগে উঠেছে জেনি। নিজের মর্মযাতনা থেকে যতদূরসম্ভব পালিয়ে বাঁচার জন্য সে কেবল ঘুমিয়েছে আর ঘুমিয়েছে। বছর কয়েক আগে হলে এমন দৃশ্যে অভিনয় করা সম্ভব হতো না আমার পক্ষে। যতই চেষ্টা চালাতাম, উদ্বেগ ও নার্ভাসনেসের কারণে ততই হয়ে ওঠত দুরূহ। আর এখন আমি ব্রেকের সময় হাসি-ঠাট্টা করি; আর যখনই ইংমার বলে ওঠেন– ‘অ্যাকশন!’, নিজের মনোযোগের কাছে ফিরে যাই আবারও।
…
আমার
ভেতরের
আমি গেয়ে ওঠে গান
…
‘শুটিং চলছে’ বোঝানোর লাল লাইটটি জ্বলে ওঠামাত্র তার [ইংমারের] স্টুডিওটি পৃথিবীর সবচেয়ে নিশ্চুপ স্টুডিওতে পরিণত হয়। শুট শেষ হলে লাফালাফি ও নাচানাচি করতে ইচ্ছে করে আমার; আমরা চলে যাই কফি খেতে।
নিজেকে নিয়ে ভীষণ গর্ব হয় আমার।
আমি যথেষ্ট শান্ত থেকে, সিলিয়ার সঙ্গে রেসিপি নিয়ে আলাপ করি ঠিকই, কিন্তু আমার ভেতরের আমি গেয়ে ওঠে গান : ‘আমি এটা পারি! এটা আমি পারি!’
দিন-৮
আজকে আমরা আত্মহনন-দৃশ্যটির শুটিং করব। বাস্তবের ঘুমের বড়ির মতো দেখতে অবিকল বড়ির অর্ডার দিয়েছেন ইংমার। উৎপাদনকারী লোকগুলো কথা দিয়েছেন, তারা সেগুলোকে আঙ্গুরফলগন্ধী মিষ্টি বড়ি বানিয়ে দেবেন। পুরো বোতলভর্তি, শত শত এমন বড়ি! উৎপাদনকারী যদি ভুল করে ফেলেন কোনো, যদি এর ফলে সত্যিকারের ওষুধ রেখে দেন বোতলে– এই ভেবে, আতঙ্কে আমি অসুস্থপ্রায় হয়ে ওঠলাম।
বিষণ্ন আবহ বিরাজ করছে স্টুডিওতে। সবাই নিশ্চিতভাবেই নার্ভাস। ইংমার আমাকে হালকাচালে নির্দেশনা দিয়ে বললেন, ‘এবার তাহলে দেখা যাক, কী হয়।’
‘অ্যাকশন!’
কীভাবে কাজটি করতে হবে– জানি না আমি। না কেশে, নিজের গলা পরিষ্কার রেখে বড়জোর কেবল একটি অ্যাসপিরিন খাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব; অথচ এখন গিলতে হবে শত শত বড়ি।
বিছানার চাদর ঠিকঠাক করে জেনি, দুটি বালিশ ঠিকঠাক করে সুন্দরভাবে রেখে দেয়– যেন সে ওগুলোর ওপর বিশ্রাম নিতে পারে। বাতি নিভিয়ে দেয় সে। দরজা বন্ধ করে। চাদরের ওপর আরও একবার আড়মোড়া দেয়। বিছানার একদম কোণায় গিয়ে বসে। একটা শূন্য গ্লাসকে করে সোডাভর্তি। খোলে ওষুধের বোতলটি। দুই-তিনটি বড়ি নেয় হাতে। একটু কষ্ট করে গিলে ফেলে। এরপর হাতের মুঠোয় নেয় আরও কিছু বড়ি। মুখের ভেতর পুরে দেয় সেগুলো। গিলে ফেলে। আচমকাই জেনির হাত এতই ভয়ঙ্করভাবে কাঁপতে থাকে যে, গ্লাসটি তার দাঁতে বাড়ি খায়। জেনি যখন নিজেরই জীবন কেড়ে নিতে চাচ্ছে– তখন তার অনুভূতি ঠিক কী, আমি তা জানি।
…
এই
আত্মহননের
ভেতর আমারই বসবাস
…
আজব রকমের নীরবতার মধ্যে দীর্ঘক্ষণ নেওয়া হলো প্রস্তুতি। আমি আর জেনি– দুজন মিলেই কাজটি করছি। আর একইসঙ্গে বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে আমিই যেন দেখছি ও পাচ্ছি সেই অভিজ্ঞতা। এই আত্মহননের ভেতর আমারই বসবাস।
আমার মুখ দিয়ে একবারে দশ-বারোটি বড়ি বেশ সহজেই নেমে পড়ল। জেনি ধীরে ধীরে বিচলিত হয়ে ওঠল ঠিকই, কিন্তু তার মুখাবয়ব রয়ে গেল শান্ত। বসে থেকে খালি বোতলটির দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইল সে। মাথা ঝাঁকাল। তারপর শুয়ে পড়ল। আর নিজের হাতে গুছিয়ে রাখা বালিশগুলোর ওপর সমর্পন করল মাথা। শুয়ে থেকে কয়েক মুহূর্ত একদৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইল সিলিংয়ের দিকে।
আচমকাই আমার মনে হলো, যদি সে নিজের ঘড়িটির খেয়াল রাখে আর নিজ মৃত্যুর সময়টি রাখতে পারে টুকে– কেমন হয়? যখনই এ ভাবনাটি মাথায় এলো আমার, তখনই জেনি তা করে ফেলল।
দেয়ালের দিকে আমার মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার এবং সত্যি সত্যি মরে না যাওয়ার ঘটনা তো কেবল থিয়েটারেই ঘটে।
এরপর শূন্যতা অনুভব করলাম। খেয়াল করলাম, কেউ কাঁদছে। শুধু অভিনেতাই নন, বরং দর্শকও পারেন বাস্তবের মতোই দেখতে এমন অবাস্তবতার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় অংশীদার হতে।
ইংমার নিশ্চুপ। বিপর্যস্ত। বললেন, ‘দেখো, এরপর অন্তত আত্মহত্যা আমি কখনোই করব না।’
দিন-৯
ইংমারের সঙ্গে ঝগড়া হলো আজ। আমাকে এক রিপোর্টারের সঙ্গে লাঞ্চ করতে যেতে দেখে তার চোখে-মুখে এক ফালি মেঘের বিস্ফোরণ ঘটল যেন। আমাকে ডেকে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘তোমাকে আর তোমার এই ফালতু রিপোর্টারকে নিয়ে আমি খুব বিরক্ত; খুবই বিরক্ত আমি।’ ফিসফিসিয়েই জবাব দিলাম, ‘আর, আমাকে কিছু বলার কোনো অধিকারই তোমার নেই বলে আমি খুব খুশি। তোমার মুখটা কিছুক্ষণের জন্য দেখতে হবে না বলেও [ভীষণ খুশি]; এখন আমি সত্যিকারঅর্থেই জেনে গেছি, তুমি মানুষটা কেমন!’
রেগে আলাদা হয়ে গেলাম দুজন। তিনি নিজের অফিসে গিয়ে সাওয়ার-ক্রিম খেলেন, আমি দিতে গেলাম সাক্ষাৎকার– যেটিতে হাজারও বার ব্যাখ্যা করলাম, কেন ইংমার বারিমনের সঙ্গে কাজ করাটা ভীষণ দুর্দান্ত ব্যাপার।
সাক্ষাৎকার দেওয়া শেষ হলে নিজের ড্রেসিংরুমে ফিরে এসে হাসতে হাসতে মুর্চ্ছা খাওয়ার দশা হলো আমার। কেননা, হলরুমে আমরা দুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে ফিসফিসিয়ে একে অন্যের কথার জবাব দিচ্ছিলাম, আর রিপোর্টারটি তখন জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে এমন এক ভঙ্গিমা করে দাঁড়িয়ে ছিলেন– যেন তিনি একটি ভীষণ রকম দুর্দান্ত কর্মসম্পর্কের ভাঙনের প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে পড়েছেন। সোফার ওপর বসে আমি হাসতেই থাকলাম এই ভেবে, সেটে যখন আমাদের দেখা হবে, তখন তাকে [ইংমারকে] কী বলব। আমাকে এমন একটা ভাব ধরতে হবে, যেন আমি নাখোশ; এক ধরনের ‘বিষাদগ্রস্ত চোখ’ করে থাকতে হবে– যে কাজটিতে আমার মা খুব পারদর্শী। যখন আমি এমন ভঙ্গিমার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো, আর তিনি ঢুকলেন ভেতরে; আর সাওয়ার-ক্রিম ও স্ট্রবেরি জ্যাম খেতে খেতে আমার মতোই হাসতে থাকলেন।
…
তারপর
আপনি ছোট্ট
এক ফালি মেঘের প্রবাহে
নিজের রাগ উগরে দেবেন
…
দুজনের প্রতি দুজনের রাগ আছে ঠিকই, তবে সেটি আমাদের কাজে কোনোদিনই কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। দরকার পড়লে, আমরা কেবল খানিকটা গজগজ করে নিয়েছি।
একজন অভিনেতা ও একজন ফিল্মমেকারের মধ্যে কাজের সম্পর্কটি যদি ভালো হয়, তাহলে তা চূড়ান্ত রকমের নিবিড় হয়ে ওঠে, এবং তাতে প্রায়-সময়ই বিবাদের একটি ছোঁয়া থাকে হাজির– সাধারণত অভিনেতার তরফ থেকে। হাঁটতে, দাঁড়াতে, কথা বলতে, কোনো নির্দিষ্টভাবে তাকাতে, লাঞ্চব্রেক নেওয়ার ও দিনের কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করতে আপনাকে যদি সারাটাদিন কোনো ফিল্মমেকারের নির্দেশগুলো মানতে হয় [এমনকি যদি তা কোনো জিনিয়াসের কথা হয়েও থাকে], তাহলে একটা সময় এসে আপনি ঠিকই ভাববেন : এই লোকটাকে গুলি করা উচিত! আমি মুক্ত হতে চাই, স্বাধীনভাবে ভাবতে চাই। তাকে আমি ঘৃণা করি।
তারপর আপনি ছোট্ট এক ফালি মেঘের প্রবাহে নিজের রাগ উগরে দেবেন। আর সবাই বুঝে যাবে, এটির কোনো মানেই হয় না।
দিন-১০
নিজের মায়ের কথা বলতে থাকেন ইংমার। শিশু বয়সে কোনো ভুল করে ফেলেছিলেন কি-না– এই ভয় কাজ করে তার মনে। একবার তিনি প্যান্টেই হিসু করে দিয়ে ধরা পড়লে তার মা তাকে তার বোনের লাল ড্রেসটি পরিয়ে দিয়ে, রাস্তায় বের করে দিয়েছিলেন।
মায়ের ডায়েরিগুলোর কথা তিনি বলেন– যেগুলোতে এমন এক নারীর জীবনকথা লেখা ছিল, যাকে কি-না নিজের পরিবার চিনতেই পারেনি কোনোদিন। কেবল তার মৃত্যুর পরই, তার এই গোপন জার্নালগুলোর মধ্য দিয়ে তাদের কাছে এভাবে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।
যখন মৃত্যুর দিন ঘনিয়ে আসছিল তার, নাকের ভেতর টিউব নিয়ে শুয়ে ছিলেন তিনি, আচমকাই ইংমারকে বলে ওঠেছিলেন, ‘আমার মা কোনোদিনই আমার খেয়াল রাখেননি’; আর কেঁদেছিলেন খুব।
একবার, যখন আমি নরওয়েতে এক সফরে গিয়েছিলাম, ইংমার বিমানবন্দরে এসেছিলেন আমাকে এগিয়ে আনতে। আমরা গাড়িতে ওঠার পর তিনি বললেন, ‘মা আজ মরে গেছেন।’
তৃতীয়বারের মতো হার্ট-অ্যাটাক হয়েছিল তার [ইংমারের মায়ের]। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন ইংমারকে ফোন করতে, কিন্তু মা তাদের বারণ করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘ও তো অনেক ব্যস্ত। ওকে বিরক্ত করবেন না।’ শেষ পর্যন্ত একজন নার্স যখন কল করলেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল অনেক। তিনি [ইংমার] মায়ের বিছানার কাছে পৌঁছে দেখেন, মা মৃত। তার [মায়ের] নখগুলো লাল রঙে রঙিন : আগের দিনই নেইলপলিশ লাগিয়েছিলেন ভদ্রমহিলা।
একেবারেই অসহায়ের মতো কান্নায় ভেঙে পড়ে ইংমার বলছিলেন, ‘এখন আমার আর কেউ রইল না।’ জানতাম, তাকে কোনোদিনই ছেড়ে যাব না আমি; আসলে একদিক থেকে, কোনোদিন ছেড়ে যাইওনি।
[…] পরের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন&… […]