অরসন ওয়েলসের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার [২/৫]

311
অরসন ওয়েলস

সাক্ষাৎকার । কেনেথ টাইনান
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ

অরসন ওয়েলস [৬ মে ১৯১৫–১০ অক্টোবর ১৯৮৫]। আমেরিকান মাস্টার ডিরেক্টর ও অভিনেতা। থিয়েটার, রেডিও ও সিনেমা– তিন মাধ্যমেই সৃজনী শিল্পগুণের কারণে তিনি বিখ্যাত। তার ‘সিটিজেন কেইন’কে অনেকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে গণ্য করে…

প্রথম কিস্তি পড়তে, এই বাক্যে ক্লিক করুন


দ্বিতীয় কিস্তি

অরসন ওয়েলস
চাইমস অ্যাট মিডনাইট
কাস্ট । জ্যান ম্যরো ও অরসন ওয়েলস
ফিল্মমেকার । অরসন ওয়েলস

কেনেথ টাইনান
আপনার লেখা ও বানানো অনেক সিনেমাতেই নায়কটির বাবা থাকে না। সিটিজেন কেইনের বাবা সম্পর্কে কিছুই জানি না আমরা; আর দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট অ্যাম্বারসন্স-এ জর্জ তার বিধবা মাকে পুনরায় বিয়ে বসা থেকে নিবৃত্ত রেখে বেচারির জীবনটা ধ্বংস করে দেয়। আপনার [এ পর্যন্ত] সর্বশেষ সিনেমা ফলস্টাফ-এর [ফিলমটির চূড়ান্ত নাম, চাইমস অ্যাট মিডনাইট] নায়ক প্রিন্স হালের আইনত পিতা– ইংল্যান্ডের রাজা চতুর্থ হেনরি একজন খুনে দখলবাজ; তবে তার আত্মিক পিতা, যে চরিত্রটিতে আপনি নিজে অভিনয় করেছেন…

অরসন ওয়েলস •
…সে হলো ফলস্টাফ।

কেনেথ টাইনান
ঠিক। পিতা চরিত্রগুলোর প্রতি এই মনোভাবের ভেতর কি আপনার ব্যক্তিজীবনের কোনো প্রতিফলন পড়েছে?

অরসন ওয়েলস •
আমি তা মনে করি না। যতদূর মনে পড়ে, আমার নিজের বাবা ছিলেন প্রচণ্ড পছন্দযোগ্য ও আকর্ষণীয় এক মানুষ। তিনি ছিলেন জুয়ারি; ছিলেন খেলারাম [প্লেবয়]— যখন থেকে তাকে আমি চিনতাম, ততদিনে এ কর্মের জন্য তিনি হয়তো খানিকটা বুড়োই হয়ে গিয়েছিলেন; তবে দুর্দান্ত এক মানুষ ছিলেন তিনি। ফলে তার মৃত্যু আমার জন্য ব্যাপক বেদনা বয়ে এনেছে। আত্মজৈবনিক কারণে নয়, বরং একটি কাহিনি নিজ যোগ্যতাতেই সেটির প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করে। ফলস্টাফের কাহিনি শেক্সপিয়ারের মধ্যে সর্বসেরা; সর্বসেরা নাটক নয়, বরং সর্বসেরা কাহিনি। বাবা, ফলস্টাফ ও পুত্রটির মধ্যকার ত্রিমুখী সম্পর্কটি সমান্তরালবিহীনই ঋদ্ধ; এটি একটি সম্পূর্ণই শেক্সপিয়ারধর্মী সৃষ্টি। অন্য নাটকগুলো অন্যান্য সূত্র থেকে ভালো ভালো কাহিনি বয়ে এনে তুখোড় হয়ে উঠেছে; কেননা, সেগুলোতে দম দিয়েছেন শেক্সপিয়ার। কিন্তু ফলস্টাফ-হাল-কিংয়ের এই কাহিনিটিতে মধ্যযুগীয় পারম্পর্যের কোনো ইঙ্গিতও নেই। এটি শেক্সপিয়ারের কাহিনি, এবং ফলস্টাফ সম্পূর্ণই তার সৃষ্টিকর্ম। নাট্যসাহিত্যের দুনিয়ায় সে-ই একমাত্র তুখোড় চরিত্র– যে কি না ভালো মানুষও।

অরসন ওয়েলস
চাইমস অ্যাট মিডনাইট

কেনেথ টাইনান
তাকে [ফলস্টাফ] একদা যিশুতুল্য চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করা ডব্লিউ. এইচ. অডেনের সঙ্গে আপনি কি একমত?

অরসন ওয়েলস •
এ নিয়ে আমি তর্ক তুলব না; যদিও লোকজন যখনই ‘যিশু’ শব্দটি ব্যবহার করে, শরীর গোলাতে থাকে আমার। আমি মনে করি, ফলস্টাফ হলো ভাইস দিয়ে সাজিয়ে রাখা কোনো ক্রিসমাস-ট্রির মতো। গাছটি নিজে তো একেবারেই নিষ্পাপ ও আদুরে। অন্যদিকে রাজা চরিত্রটি কেবল রাজকীয়তাতেই সজ্জিত। সে একজন খাঁটি মাচিয়াভিল্লিধর্মী। নিজ পুত্র সম্পর্কে তার এক ধরনের বিস্ফারিত চোখ ও আত্মমগ্ন ব্যাপার রয়েছে, এমনকি তা সে [পুত্রটি] পঞ্চম হেনরি [পরবর্তী রাজা] হিসেবে মহিমান্বিত হওয়ার পরও।

কেনেথ টাইনান
আপনার কি মনে হয় ফলস্টাফ শেক্সপিয়ারপ্রেমীদের অনেকটাই অবমাননা করেছে?

অরসন ওয়েলস •
দেখুন, শেক্সপিয়ারের কাজ আমি সবসময়ই নিজের মতো সম্পাদনা করে নিয়েছি, এবং শেক্সপিয়ার-নির্ভর আমার অন্য সিনেমাগুলো স্রেফ এ কারণেই চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এই ফিল্মটির বেলায় যে কী হবে, ঈশ্বরই জানেন! ম্যাকবেথ কিংবা ওথেলোর সময় আমি চেষ্টা করেছি একটি একক নাটককে একটি একক ফিল্মস্ক্রিপ্টে রূপান্তরিত করতে। ফলস্টাফ-এর ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছি পাঁচটি নাটক– রিচার্ড সেকেন্ড, হেনরি ফোর-এর দুটি অংশ, হেনরি ফাইভদ্য মেরি ওয়াইভস অব উইন্ডসোর; এবং দুই ঘণ্টারও কম দৈর্ঘ্যরে এক বিনোদনমূলক উপাখ্যানে পরিণত করেছি এগুলোকে। স্বভাবতই, মূল লেখার পবিত্রতার প্রতি খেয়াল রাখা শেক্সপিয়ারপ্রেমীদের আমি এখানে খেপিয়ে তুলতে যাচ্ছি। তবে যারা মনেপ্রাণেই মেনে নেন– সিনেমা আসলে আরেকটি শিল্পমাধ্যম, তাদের ভরসায় সাফল্যের আশা আমি রাখছি।


মূল
লেখার
পবিত্রতার
প্রতি খেয়াল
রাখা শেক্সপিয়ারপ্রেমীদের
আমি এখানে খেপিয়ে তুলতে যাচ্ছি

সবচেয়ে বড় কথা, [জ্যুসেপ্পে] ভের্দি যখন ফলস্টাফওথেলোর অপেরা ভার্সন লিখেছেন, তখন শেক্সপিয়ারকে আমূল বদলে দেওয়ার দায়ে তাকে কেউই অভিযুক্ত করেনি। ল্যারি অলিভিয়ার যে শেক্সপিয়ারীয় সিনেমাগুলো বানিয়েছেন, সেগুলো শেক্সপিয়ারের নাটকগুলোর নির্যাস নিয়ে শুটিংকৃত; আমি মোশন পিকচার বানানোর ক্ষেত্রে শেক্সপিয়ারের বাক্য ও চরিত্রগুলোকে ব্যবহার করি। নানাবিধ থিম নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। ফলস্টাফ-এ অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছি আমি; তবে তা নয় যথেচ্ছভাবে, নয় কচুকাটা করার ফূর্তি নিয়ে।

নাটকগুলো মঞ্চে রাতের পর রাত পরিবেশিত হওয়ার ইতিহাসে যদি আপনি তাকান, দেখতে পাবেন, এ এমন এক কুকর্মকারী রাজপুত্রকে নিয়ে চলমান কাহিনি– যে হয়ে ওঠে একজন তুখোড় মিলিটারি ক্যাপ্টেন, রাজত্ব দখলকারী এক রাজা, আর এই রাজপুত্রের আত্মিক পিতা– ফলস্টাফ হলো একধরনের ধর্মনিরপেক্ষ এক সাধু। ফলস্টাফকে রাজপুত্রটি প্রত্যাখ্যান করলে কাহিনিটি চরম এক সীমায় গিয়ে পৌঁছায়। আমার সিনেমাটি এই কাহিনির প্রতি সম্পূর্ণই বিশ্বস্ত; যদিও কাহিনিটিকে আমি খুড়েছি বলে নাটকগুলোর একটি বিশাল অংশই বিসর্জন দিতে হয়েছে এখানে।

অরসন ওয়েলস
চাইম অ্যাট মিডনাইট-এর শট নিচ্ছেন অরসন ওয়েলস

কেনেথ টাইনান
এই ফিল্মটিতে কি কোনো ‘বার্তা’ রয়েছে?

অরসন ওয়েলস •
ইংল্যান্ডে শৌর্য্যবীর্যের মৃত্যু ও প্রফুল্লতার প্রত্যাখ্যানের আর্তনাদ রয়েছে এখানে। এমনকি শেক্সপিয়ারের সময়ে, পুরনো ইংল্যান্ডের সবুজ বিরানভূমি ও ফুলেল প্রান্তর ইতোমধ্যে পরিণত হয়েছিল মিথে, তবে তা একেবারেই বাস্তব হয়ে। ফলস্টাফকে রাজপুত্রের প্রত্যাখ্যান করা মানে হলো নতুন এক ধরনের ইংল্যান্ডের কাছ থেকে সেই পুরনো ইংল্যান্ডের প্রত্যাখ্যাত হওয়া– যেটির জন্য শেক্সপিয়ার আর্তনাদ করেছিলেন– সেই ইংল্যান্ড, যেটির সমাপ্তি ঘটেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আবির্ভাবে। বন্ধুত্বের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য কোনো অজুহাত নয়– এটিই মূল পরিবর্তন। মূল লেখাটির ওপর আমার ছুরি-কাচি চালানোর ভঙ্গিমাটিকে ন্যায্যতা দেয় যে কাহিনিটি– এ হলো সেটিরই স্বাধীনতা।

কেনেথ টাইনান
আপনার সম্পর্কে প্রচলিত থাকা কিছু জনপ্রিয় গুজব নিয়ে কি কথা বলতে পারি? বলা হয়ে থাকে, আপনার সিনেমাগুলো সবসময়ই বাজেট ছাড়িয়ে যায়। সত্য নাকি মিথ্যে?

অরসন ওয়েলস •
মিথ্যে। অতি-খরুচে লোক আমি নই; যদিও কখনো কখনো বিলম্বে উপার্জনকারী হয়ে থাকি। যেমন ধরুন, সিটিজেন কেইন বানাতে খরচ পড়েছে সাড়ে আট লাখ ডলারের মতো। এ পর্যন্ত এটি কত টাকা আয় করেছে– আমার কোনো ধারণা নেই; তবে তা নিশ্চিতভাবেই অনেক। মুনাফা পেতে সময় লাগেই; আর তা তো নিশ্চয়ই আমার পকেটে আসে না। এ পর্যন্ত যত সিনেমা আমি বানিয়েছি, বাজেটের মধ্যেই বানিয়েছে সব। এ ক্ষেত্রে একমাত্র ব্যতিক্রম দক্ষিণ আমেরিকা নিয়ে সেই ডকুমেন্টারিটি, যেটির কাজ ১৯৪২ সালে শুরু করে দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট অ্যাম্বারসন্স-এর শুটিংয়ের পরই কেবল শেষ করেছি। বিনা পারিশ্রমিকে, ১০ লাখ ডলার খরচে এটি আমাকে বানাতে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু টাকাটি সরকারের নয়, বরং ছিল স্টুডিওর; আর আমি ৬ লাখ ডলার খরচ করতেই, আমাকে চাকরিচ্যুত করে দিয়েছিল স্টুডিওটি এই অভিযোগে তুলে– আমি নাকি টাকা নষ্ট করছি। এরপর থেকেই এ ধরনের কথার চালু হয়েছে। এ কথাকে ছড়িয়ে দিতে প্রচুর পরিমাণ অর্থকড়ি ও প্রচুর লোকবল বিনিয়োগ করেছিল স্টুডিওটি।

অরসন ওয়েলস
দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট অ্যাম্বারসন্স
ফিল্মমেকার । অরসন ওয়েলস

কেনেথ টাইনান
আরেকটি শক্তিশালী গুজব হলো, আপনার নাকি দিব্যশক্তি রয়েছে। এ কথা সত্য?

অরসন ওয়েলস •
দেখুন, দিব্যশক্তির যদি কোনো অস্তিত্ব থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত, আমার তা রয়েছে; আর যদি এর অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে আমার মধ্যে এমন কিছু রয়েছে– যেটিকে এটির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। লোকজনকে নিজ নিজ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কখনো কখনো আমি ভয়ঙ্করভাবে কিছু কথা বলে থাকি; কিন্তু দয়া করে জানুন, ভাগ্য-গণনা ঘৃণা করি আমি। মানুষের আবিষ্কার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব যেটি– সেই মুক্ত ভাবনার ক্ষেত্রে এ এক অনধিকারচর্চা, বিপজ্জনক ব্যাপার ও উপহাস। তবে কানসাস সিটিতে থাকাকালে আমি এক সময় ভাগ্যগণনাকারী ছিলাম; তখন আমি থিয়েটারে এ অভিনয়টি করেছি এক সপ্তাহ। একজন পার্ট-টাইম জাদুকর হিসেবে প্রচুরসংখ্যক আধা-জাদুকর ধান্দাবাজের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার, এবং পেশাদার দর্শনকারীদের বেশকিছু ছলচাতুরিও শিখে নিয়েছিলাম।


একজন
পার্ট-টাইম
জাদুকর হিসেবে
প্রচুরসংখ্যক আধা-জাদুকর
ধান্দাবাজের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার

সস্তা এক শহরতলিতে একটি অ্যাপার্টমেন্ট নিলাম আমি, ‘ভাগ্যগুণতে ২ ডলার’ লেখা একটি সাইনবোর্ড দিলাম বসিয়ে। প্রতিদিন সেখানে যেতাম, মাথায় জাদুকরের পাগড়ি পরে; করতাম ভাগ্য-গণনা। যেটিকে ‘কোল্ড রিডিং’ বলে– প্রথম দিকে আমি তা ব্যবহার করতাম; এ একটি টেকনিক্যাল টার্ম– আপনাকে ঘিরে থাকা মানুষগুলোকে প্রভাবিত করার এবং তাদের সকল প্রতিরোধবোধ ধূলিস্যাৎ করে দেওয়ার– যেন তারা নিজেরাই নিজ সম্পর্কে বলতে শুরু করে দেয়। কোল্ড রিডিংয়ের একটি টিপিক্যাল কৌশল হলো, আপনার হাঁটুতে কোনো ক্ষতচিহ্ন রয়েছে– এ কথা বলে দেওয়া। আসলে প্রত্যেকের হাঁটুতেই ক্ষতচিহ্ন থাকে; কেননা, প্রত্যেকেই ছোটবেলায় একবার না একবার পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। এ রকম আরেকটি কথা হলো, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সে, জীবন সম্পর্কে আপনার মনোভাবে বড় ধরনের একটি পরিবর্তন এসেছে। তবে দুই-তিনদিনের মধ্যেই এই ট্রিকগুলো থামিয়ে দিলাম আমি, স্রেফ কথা বলতে থাকলাম।

উজ্জ্বল পোশাক পরা এক নারী এলেন একদিন। তিনি বসতেই আমি বলে ওঠলাম, ‘সদ্যই স্বামীকে হারিয়ে ফেলেছেন আপনি।’ এ কথা শুনে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। আমার বিশ্বাস, তথ্য-উপাত্ত নয়, বরং নিজের অবচেতন মনেই এ সমস্ত জিনিস আমি দেখতে ও অনুমান করতে পেরেছিলাম। তবে সচেতনভাবে আমি স্রেফ সে কথাটিই বলেছিলাম, যেটি আমার মাথায় এসেছিল সবার আগে; আর তা সত্য হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভাগ্য-গণনাকারীর পেশাগত রোগের সঙ্গে ভালোভাবেই মানিয়ে গিয়েছিলাম আমি– যেটি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস জন্ম দিতে থাকে; আপনাকে করে তুলতে থাকে এমন একজন, যাকে লোকে বলে– ‘বন্ধ-চোখের’ মানুষ। এ খুবই বিপজ্জনক ব্যাপার।

ফিল্মমেকার অরসন ওয়েলস ও সিনেমাটোগ্রাফার স্ট্যানলি কর্টেজ
দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট অ্যাম্বারসন্স-এর সেটে

কেনেথ টাইনান
আপনার বিরুদ্ধে তৃতীয় যে অভিযোগটি একাকার হয়ে আছে, তা হলো– আপনি কথা বলেই প্রচুর কর্মশক্তি অপচয় করেন। ব্রিটিশ সমালোচক সাইরিল কনোলি একবার বলেছিলেন, আলাপচারিতা হলো একজন শিল্পীর জন্য ‘আত্ম-অপচয়ের এক আয়োজন’। এই কথাটি আপনার মনে কোনো জ্বালাতনের উদ্রেক ঘটায়?

অরসন ওয়েলস •
না; তবে কথাটি আমাকে থর্নটন ওয়াইল্ডার ও তার ক্যাপসুল কনভারসেশনস তত্ত্বটির কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি আমাকে প্রায়শই বলতেন, ‘আপনি নিজের কর্মশক্তি অপচয় করা বন্ধ করুন, অরসন। আমি যা করি, আপনারও তাই করা উচিত– ক্যাপসুল কনভারসেশনস।’ একটি কমিক চরিত্র নিজের শ্বাশুরি সম্পর্কে তিন মিনিটে যা যা করতে পারে, থর্নটন তা তিন মিনিটে করে ফেলতে পারতেন গার্টরুড স্টেইন কিংবা লোপ দে ভেগা সম্পর্কে। এভাবেই নিজের কর্মশক্তির সঞ্চয় করতেন তিনি। তবে আমি মনে করি না, আপনি যদি কর্মশক্তি বাঁচিয়ে রাখেন– তাতে আদৌ এটি বৃদ্ধি পাবে। গোপন বোতলে ঢুকিয়ে রাখার মতো কোনো অমূল্য রস এটি নয়। আমরা তো সামাজিক প্রাণী; স্রেফ পুনরাবৃত্তিমূলক স্লোগান ও প্রচলিত শব্দ নয়, ভালো কথোপকথন বস্তুত ভালো জীবনযাপনের একটি অনিবার্য অংশ। তাকে এতই মূল্যবান কিছু বলতেই হবে– যেটির দ্বিতীয় কোনো কথা হয় না বলে নিজের অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় নষ্ট হয়ে যাবে– এমনটা কোনো শিল্পীরই গণ্য করা উচিত নয়।

কেনেথ টাইনান
স্কি-কারী ও মধ্য-ইউরোপিয়ান সিংহাসনের ভণ্ডদের সঙ্গ নিয়ে প্রচুর সময় আপনি কাটিয়ে দেন– এমন কথাও বলা হয়ে থাকে। আপনি কি একমত?

অরসন ওয়েলস •
এ ধরনের ক্যাটাগরির খুব বেশি মানুষ আমি চিনি না। যাদেরকে চিনি, তারা ঠিকই আছেন; তবে তারা নিশ্চিতভাবেই আমার চিরসঙ্গী নন। যাহোক, যে কোনো ধরনের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব থাকার দায় নিতে আমার কোনো আপত্তি নেই।


কেনেথ টাইনান
[২ এপ্রিল ১৯২৭–২৬ জুলাই ১৯৮০]
লেখক ও সমালোচক । যুক্তরাষ্ট্র

উৎস ।। প্লেবয় ম্যাগাজিন । ১৯৬৭
অনুবাদটির প্রথম প্রকাশ ।। ইত্তেফাক ঈদ ম্যাগাজিন । ২০১৮

পরের কিস্তি পড়তে এই বাক্যে ক্লিক করুন

Print Friendly, PDF & Email
সম্পাদক: ফিল্মফ্রি । ঢাকা, বাংলাদেশ।। সিনেমার বই [সম্পাদনা/অনুবাদ]: ফিল্মমেকারের ভাষা [৪ খণ্ড: ইরান, লাতিন, আফ্রিকা, কোরিয়া]; ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো: প্রেম ও দেহগ্রস্ত ফিল্মমেকার; তারকোভস্কির ডায়েরি; স্মৃতির তারকোভস্কি; হিচকক-ত্রুফো কথোপকথন; কুরোসাওয়ার আত্মজীবনী; আন্তোনিওনির সিনে-জগত; কিয়ারোস্তামির সিনে-রাস্তা; সিনেঅলা [৪ খণ্ড]; বার্গম্যান/বারিমন; ডেভিড লিঞ্চের নোটবুক; ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ফেদেরিকো ফেল্লিনি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার চান্তাল আকেরমান; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার বেলা তার; সাক্ষাৎ ফিল্মমেকার নুরি বিলগে জিলান; ক্রিস্তফ কিয়েস্লোফস্কি; বেলা তার; সের্গেই পারাজানোভ; ভেরা খিতিলোভা; সিনেমা সন্তরণ ।। কবিতার বই: ওপেন এয়ার কনসার্টের কবিতা; র‍্যাম্পমডেলের বাথটাবে অন্ধ কচ্ছপ; হাড়ের গ্যারেজ; মেনিকিনের লাল ইতিহাস ।। মিউজিকের বই [অনুবাদ]: আমার জন লেনন [মূল : সিনথিয়া লেনন]; আমার বব মার্লি [মূল: রিটা মার্লি] ।। সম্পাদিত অনলাইন রক মিউজিক জার্নাল: লালগান

১টি কমেন্ট

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here