তারকোভস্কির ডায়েরি: অনশ্বর রোজনামচা

1305
Andrei Tarkovsky

তারকোভস্কির ডায়েরি
Time Within Time: The Diaries 1970–1986
মূল । আন্দ্রেই তারকোভস্কি
অনুবাদ । রুদ্র আরিফ
•••
TARKOVSKY’R DIARYবাংলাদেশি সংস্করণ
প্রথম প্রকাশ । ফেব্রুয়ারি ২০১২
প্রকাশক । ঐতিহ্য [ঢাকা]
প্রচ্ছদ । সব্যসাচী হাজরা
পৃষ্ঠাসংখ্যা । ৪৩২ 
মূল্য । ৭০০ টাকা
•••
TARKOVSKYR-DIARY-INDIAভারতীয় সংস্করণ
প্রথম প্রকাশ । অক্টোবর ২০১৭
প্রকাশক । প্রতিভাস [পশ্চিমবঙ্গ, ভারত]
প্রচ্ছদ । সুদীপ্ত দত্ত
পৃষ্ঠাসংখ্যা । ৪৮০
মূল্য । ৬০০ রুপি

লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়


 

তালীয় কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র যখন তাঁর ইভানের শৈশব [ইভান’স চাইল্ডহুড; ১৯৬২] সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল, তখন ভাবতেও অবাক লাগে স্বয়ং জাঁ-পল সার্ত্র তাঁর সমর্থনে বলে ওঠেন যে, এমনকী গোদারের তুলনায়, এমনকী আন্তোনিওনির তুলনায়, ইতিহাসে দ্রুততার লয় ধরতে তারকোভস্কির সাফল্যের পারাপার নেই। এ ছবি যেন সোভিয়েত ফোর হান্ড্রেড ব্লোজ [ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো; ১৯৫৯]। কিন্তু ত্রুফো যেখানে বুর্জোয়াদের ট্র্যাজিকমেডি, সেখানে তারকোভস্কিতে ধ্রূপদী ট্র্যাজেডির মহিমা। দার্শনিক ও প্রবক্তা সার্ত্র সময়ের অন্যপ্রান্ত থেকে একজন নবীন চলচ্চিত্রকারকে সময়ের শিরোভূষণ হিসেবে বরণ করেছিলেন তাঁর প্রথম কাহিনিচিত্রের সূত্রেই।

ivans childhood
ইভান’স চাইল্ডহুড

আর তার কতদিন পরে উত্তর ইউরোপের চলমান চিত্রমালার নির্জন সম্রাট বার্গম্যান কী বিনীত সম্ভ্রমেই না জানিয়েছিলেন– “তারকোভস্কির প্রথম ছবি আবিষ্কার আমার পক্ষে অলৌকিক ঘটনা। আমি একটা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম যার চাবি আমাকে দেওয়া হয়নি। এই ঘরে আমি সবসময়ই ঢুকতে চেয়েছি আর সেখানে তিনি স্বাধীনতায় ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।” আসলে চলচ্চিত্রের চিরপূজনীয় মহারথী বার্গম্যান মুগ্ধ হয়েছিলেন আত্মার অভিব্যক্তি প্রকাশে রুশ চলচ্চিত্রকার যে-ভাষা ব্যবহার করেন, তা দেখে। সে ভাষা স্বপ্ন ও জাগরণের পার্থক্য অনায়াসে মুছে দিতে পারে।

…তারকোভস্কি দেখার
পর পৃথিবীর অনেক
দেখাই তাৎপর্যহীন
মনে হয়…

যেন সপ্তাশ্ববাহিত রথ, যেন সপ্তসিন্ধু– মাত্র সাতটি ছবির সূত্রে আন্দ্রেই তারকোভস্কি [১৯৩২-১৯৮৬] রচনা করেন অনন্ত নক্ষত্রবীথি। যেন সিনেমার মুখে বাস্তবের ব্রণের তিমির মুছিয়ে দিতে সাতটি তারাই যথেষ্ট। মানুষ যেখানে আসে প্রতীকের অরণ্য পেরিয়ে, যেখানে আগুন, বাতাস ও জল আদিম দেবতাদের চুম্বন করে, যেখানে প্রসারণশীল স্তব্ধতা ও শিশুদের জন্য সুসমাচার, সেখানে তারকোভস্কি উৎকীর্ণ দেখেন মাতৃভাষা। কোনও উচ্ছ্বসিত কারুকর্ম নয়। নারী অথবা পার্থিব অন্য কোনও প্ররোচনা নয়। কিন্তু ইতিহাস ও দর্শন– আমাদের বিশ্বাস করাই শক্ত যে, ছায়াছবির মতো একটি নশ্বর বিনোদনকর্মকে তিনি ব্যবহার করতে পেরেছেন অমৃতের সন্ধানে। প্রতিচিত্রণের গূঢ় মিনতি ও পুতুলের প্রণয়গাথা অথবা বীরপুরুষের কুচকাওয়াজ ও তরুমর্মর তাঁকে পথভ্রষ্ট করতে পারেনি। তাঁর ছবি আমাদের বিস্মিত করে। শুধু রক্তমাংস ছাড়িয়ে আত্মায় হাত রাখে বলে নয় বরং তাঁর ছবি দেখার পর আত্মার পুনর্জন্ম হয় বলে। তারকোভস্কি দেখার পর পৃথিবীর অনেক দেখাই তাৎপর্যহীন মনে হয়। যেমন অধিকতর তাৎপর্যেরও মনে হয় আরও অনেক কিছু। এখানেই কবিদের সঙ্গে তাঁর মস্ত মিল। কবিদের মতোই তিনি বাস্তবের আয়তন অক্ষুণ্ন রেখেও বিন্যাসটিকে পালটে দিতে পেরেছেন।

stalker
স্টকার
…সভ্যতার যাত্রাপথে শতশত
রক্তশব্দ, ভীতিশব্দ, ফাঁকি
প্রত্যক্ষ করার পর আমরা
যখন ‘ইভানের শৈশব’ থেকে শেষ
ছবি ‘স্যাক্রিফাইস’ পর্যন্ত পরিক্রমা
সমাপ্ত করি, তখন দেখি সিনেমার
তাৎক্ষণিকতা উন্নীত হয়েছে
কাব্যে…

কিন্তু তাঁর বাচন মোটেই তর্কের নয়। যে-সমাজ যুগপৎ ঈশ্বর ও প্রকৃতিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল সে যুগের আমলাতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে, তার অধিবাসীদের শাস্তির পরিমাণ তিনি জানতে চান। স্টকার-এ তাঁর বিজ্ঞানী ও লেখন ‘অঞ্চল’ পার হয়ে ইচ্ছাপূরণের ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। তিনিও মনে করেন না যে, বুদ্ধিবৃত্তি সভ্যতার আরোগ্যপথ। বাস্তবিক, আমরা দেখাতে পারি, সভ্যতা ও আলোকপ্রাপ্তি বিষয়ে এই সন্দিগ্ধতা শুধু তারকোভস্কি নয়, সমগ্র রুশ ইতিহাসের একটি প্রধান উপাদান, এই যে আমরা এই চলচ্চিত্রকারকে কবির ভূমিকায় দেখে বিস্মিত হই, সেই কবি কিন্তু আধুনিক লিরিক কবি নন। আমরা যা শুনি তা কোনও কথোপকথন নয়, এক শেষহীন স্বগতোক্তি এক মরণোত্তর আত্মবিলাপ, যেন স্বয়ং অর্ফিয়ুস ইউরোপ পরিক্রমায় নিরত রয়েছেন। তাঁর ভূমিকা যেন এক আধুনিক বাল্মীকির। তারকোভস্কির চলচ্চিত্র শোকলিপ্ত ইতিহাসবোধ। তারকোভস্কি ভুলতে পারেন না সভ্যতার আদিতে কবিই ছিলেন ইতিহাসকার ও দার্শনিক। কবির ছন্দোবদ্ধ বাণীর সর্বার্থসঠিক রূপ চলচ্চিত্রে দেখা দিতে পারে, এমন বিশ্বাস থেকে তিনি সিনেমার প্রচলিত ভাষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। রচনা করেন অন্য ইমেজমাল্য। তিনি নিজের মুদ্রাদোষে একা, শাস্তিপ্রাপ্ত। কিন্তু পশ্চিমে ইউরোপের কবি যেমন শিল্পকর্মকে দিনলিপির মতো ব্যক্তিগত ভাবেন, তারকোভস্কি তা মনে করেন না। তাঁর সাতটি শিল্পকর্ম, চিত্র ও ধ্বনিতে বর্ণিত আধুনিকতা-পূর্ব এমন এক ভঙ্গি, যেখানে মৌলিক রূপকথা ও কাব্যের চিহ্নায়ন প্রবল। তিনি মন্ত্রের মতো স্বচ্ছ ও স্পষ্ট কিন্তু সাংকেতিক। তাঁর কবিতা শাপমোচনের স্বস্ত্যয়নের উত্তরাধিকার বহন করে। সভ্যতার যাত্রাপথে শতশত রক্তশব্দ, ভীতিশব্দ, ফাঁকি প্রত্যক্ষ করার পর আমরা যখন ইভানের শৈশব থেকে শেষ ছবি স্যাক্রিফাইস পর্যন্ত পরিক্রমা সমাপ্ত করি, তখন দেখি সিনেমার তাৎক্ষণিকতা উন্নীত হয়েছে কাব্যে। তিনি মনে করেন ছায়াছবি সাহিত্যের মতো শব্দ ব্যবহার করে না। গানের মতো তার প্রয়োজন নেই ভাষার মধ্যস্থতার। চলচ্চিত্র শুধু স্বধর্মে অবিচল থেকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে, যাতে সময়ের মুদ্রণ সম্ভব হয়।

The Sacrifice
স্যাক্রিফাইস

তিনি ক্যামেরাকে বিরতিহীন করে তোলেন– স্টকার থেকে স্যাক্রিফাইস পর্যন্ত জুড়ে আছে, যেমন জীবনানন্দের পয়ারের নানা মুক্তিতে ছিল, দীর্ঘ ও মন্থর, প্রায় অবিশ্বাস্য– ছ’মিনিটেক অধিক সময়সীমার লং টেক। এই সব মুহূর্তেই তারকোভস্কির ছবি হয়ে ওঠে সময়ের সাংখ্যদর্শন, সময়ের অবিনশ্বর গ্রন্থি, বা বলা চলে তার এই সব নিরঞ্জন অবলোকনই, রিলকে যা কাব্যে চেয়েছিলেন, সেই সব প্রহরপুঞ্জি। যদি দভঝেঙ্কোর লং টেক, মিজোগুচির রূপকথার মতো ট্র্যাকিং শট, আন্তোনিওনির স্তব্ধতার চিত্রলেখ, বার্গম্যানের স্বপ্ন ও জাগরণের পারাপারহীন মোহনা থেকে যদি তিনি কিছু শিখে থাকেন, তবে তা সময় ও বাস্তবতার মিথুন প্রতিমা। প্রাচীন সভ্যতায় যেমন কবিরাই সমাজের হয়ে মননকার্য সম্পন্ন করতেন– যেজন্য তাঁদের দৈবী ক্ষমতার অধিকারী ভাবা হত, তারকোভস্কি নিজের জন্যও অনুরূপ একটি অবস্থান নির্ণয় করেন। মিরর ছবির প্রারম্ভই দেখিয়ে দেয় তারকোভস্কি কবিকেই বাকপতি ভাবতে চান। স্যাক্রিফাইস-এর শিশুটিও কথা বলার শক্তিরহিত।

আসলে শিল্পী তারকোভস্কি ভাষাকে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কযুক্ত ভাবেন সত্যের সঙ্গে। এক যান্ত্রিক প্রশাসন কাঠামোয়, জড়ের সমাজে, যে প্রস্তুরীভূত সহজীবীর প্রকাশের ক্ষমতা লুপ্ত হয়েছে, তাকে উচ্চারণের অধিকার প্রত্যর্পণ করবে কে? এই অধিকার তারকোভস্কি স্রষ্টা হিসেবে স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেছেন। যদিও বোদল্যেরের সেই সমুদ্রবিহঙ্গ আলবাট্রসের মতোই তারকোভস্কি নিজেকে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ব্যবস্থায় নির্যাতিত, রুদ্ধগতি ও অসহায় ভাবেন, কিন্তু একই সঙ্গে কখনওই মনে করেন না যে, শিল্পীর সঙ্গে সমাজের বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ ও চূড়ান্ত। এক নিবিড় ইতিবচন থেকে তিনি মনে করেন, সিনেমায় যত প্রকট বাস্তবের অন্তর্গত থেকেই অনাহত বাস্তব তাঁকে রচনা করতে হবে। দস্তয়েভস্কি অনেকটা এরকম বলেছিলেন, পুশকিন তাঁর কবরে লুকিয়ে রেখেছেন এক গভীর রহস্য, আমাদের এখন তাঁকে ছাড়াই এই রহস্য খুঁড়ে বের করতে হবে। তারকোভস্কি কি সচেতনভাবেই এমন কোনও গোপনবাণী রেখে গিয়েছিলেন উত্তরপুরুষের জন্য?

The Mirror
মিরর
…যাঁরা গবেষক তাঁরা
অজস্র অবিন্যস্ত ও উৎকেন্দ্রিক
পঙক্তির গহন থেকে খুঁজে
পাবেন হিরণ্যগর্ভ আলোর
রেখা…

এই প্রসঙ্গের অবতারণা করলেই জরুরি হয়ে ওঠে তারকোভস্কির দিনলিপি ও অন্যান্য নিভৃত উক্তি। দেখে ভাল লাগে যে, এমন রহস্যাবৃত চলচ্চিত্র-স্রষ্টার ইংরেজি অনুবাদে যে-বইটি আমরা কলকাতায় অশেষ কৌতূহলে নাড়াচাড়া করতাম, তার একটি বাংলা সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। মনে আসে, কিটি হান্টার-ব্লেয়ার যিনি স্কাল্পটিং ইন টাইম অনুবাদ করে আমাদের হৃদয়হরণ করেছিলেন, তিনি এই দিনপঞ্জির প্রথম প্রকাশ সম্ভব করেছিলেন কলকাতা থেকেই, ১৯৯৯ সালে। তারকোভস্কি নিজে এই রোজনামচাকে শহিদনামা বলার পক্ষপাতীও ছিলেন। খুব যে নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গে এই দিনলিপি লেখা হয়েছে, তা নয়। খুব ব্যক্তিগত কিছু মন্তব্য [১৯৭০-৮৬] ষোলো বছরের এই ডায়েরিতে সংকলিত। যাঁরা গবেষক তাঁরা অজস্র অবিন্যস্ত ও উৎকেন্দ্রিক পঙক্তির গহন থেকে খুঁজে পাবেন হিরণ্যগর্ভ আলোর রেখা।

যেমন, ১৯৭০ সালের এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে তারকোভস্কি তাঁর প্রথম এনট্রিতে লিখেছেন– “আমি ফিল্মে যা করতে চাই, তার সমস্ত বিন্দু ধারণ করবে দস্তয়েভস্কি।” প্রকৃতপ্রস্তাবে দস্তয়েভস্কির ইডিয়ট নিয়েও তাঁর নানা পরিকল্পনা ছিল। কোনওটিই রূপায়িত হয়নি। প্রবাসে অভিমান ও কর্কটরোগ কেড়ে নিয়ে গেছে তাঁকে। তবু বিনা আয়েসেই আমরা বুঝতে পারি, আমাদের পাপ ও শাস্তি, আমাদের ঈশ্বর ও নরকের অদূরে তারকোভস্কি সারা জীবনই সত্যার্থী প্রিন্স মিশকিন। তার প্রকৃত উৎস সেই উন্মাদ কিন্তু সন্ত ফিওদর দস্তয়েভস্কি। মাঝে-মাঝেই প্রিয় উদ্ধৃতি যেন বিদ্যুল্লেখাৎ প্রস্তাবিত কাজের বিবরণ। কোনও প্রকল্প যেমন, সোলারিস বা নস্টালজিয়া প্রসঙ্গে খুচরো নোটস, আন্তোনিওনির বিষয়ে শ্রদ্ধা, হলিউড নিয়ে অন্তহীন বিরাগ। সেই ১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি হ্যামলেট নিয়ে ভাবছেন, স্মরণ করছেন ভিসতস্কির মূল্যায়ন– হ্যামলেট-এ কাজ করতে গেলে যে-কোনও সমালোচক কিংবা অভিনেতাকেই অতিমাত্রায় গোঁড়া হতে হয়। আশ্চর্য! তাঁর ভাল লাগছে না পাস্তেরনাকের অনুবাদ। আক্ষরিক ও জড় মনে হচ্ছে। এই হ্যামলেট নিয়ে তিনি আমৃত্যু ভেবেছিলেন। এই রোজনামচার শেষ এনট্রি প্যারিসের একটি হাসপাতাল থেকে ১৫ ডিসেম্বর ১৯৮৬– “হ্যামলেট…? বাহু ও পিঠে যদি ব্যথা না থাকত, তাহলে কেমোথেরাপি কাজে লাগার প্রশ্ন তোলা যেত। কিন্তু সমস্যা হলো, এখন আমার মধ্যে আর কোনও শক্তিই অবশিষ্ট নেই।”

Nostalghia
নস্টালজিয়া
…আমাদের মাতৃভাষা
এত সুন্দরী যে, তাকে
নিয়ে এত তাড়াহুড়ো
না
করলেই চলত…

কী করুণ! কী মর্মান্তিক! কিন্তু যদি আমরা এই অযত্নে, অবহেলায় রাখা শব্দের স্তূপে তলিয়ে দেখি, তাহলে যে কত থরে থরে সাজানো রত্নাবলি ঝলমল করে উঠবে প্রজ্ঞার ঐশ্বর্যে! অনুবাদক রুদ্র আরিফকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি নিষ্ঠাভরে এই দিনপঞ্জির ভাষান্তর সম্ভব করেছেন ঢাকা থেকে সেই ২০১২ সালেই। বর্তমান সংস্করণটি প্রকৃত অর্থে কলকাতা থেকে পুনর্মুদ্রণ। অনুবাদকের আর-একটি গুণ আছে, তা সত্যভাষণ। তিনি দাবিও করেননি যে, তিনি রুশ ভাষায় অভ্যস্ত। বরং তিনি আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন ইংরেজি বইটির চলচ্চিত্র বিষয়ক সংক্ষিপ্ত বয়ান তিনি বাদ রেখে শুধু দিনপঞ্জিটির অনুবাদ করেছেন। রুদ্র আরিফ বেশ ঝরঝরে ও গতিসম্পন্ন গদ্য ব্যবহার করেছেন। পড়তে হোঁচট খেতে হয় না। তবে সামান্য অনুযোগ– আমাদের মাতৃভাষা এত সুন্দরী যে, তাকে নিয়ে এত তাড়াহুড়ো না করলেই চলত। রুদ্র যদি আরও-একটু সংযমী হতেন, তাহলে এই দিনলিপির নানাস্তরে যে নানাস্বরের বিষণ্নতা ও তিক্ততা, যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ, তা আরও আচ্ছন্ন করত পাঠককে।


সূত্র : বইয়ের দেশ
গ্রন্থবিষয়ক ত্রৈমাসিক ম্যাগাজিন; কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
জানুয়ারি-মার্চ ২০১৮ সংখ্যা
Print Friendly, PDF & Email
জন্ম : ১৯৫২। প্রাবন্ধিক, সমালোচক, অনুবাদক, শিক্ষক, প্রশাসক, বক্তা; পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। এমন একজন লেখক, যার বাক্য পাঠককে উত্তেজিত ও তার্কিক করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও তার লেখায় কোনো একাডেমিক জীবাশ্ম নেই; আর থরে থরে সাজানো আছে মেধার নুড়ি-পাথর। প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা অন্তত দশটি। কলকাতাতেই তার ঘর-গেরস্থালি। গ্রন্থ : নাশকতার দেবদূত; সিনেমার রূপকথা; তিন তরঙ্গ; বুনো স্ট্রবেরি; ঋত্বিকতন্ত্র; পাতালের চিরকুট; হে চলমান চিত্রমালা; স্থানাঙ্ক নির্ণয়; বার্গমান বিষয়ক; অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন; ইবলিসের আত্মদর্শন সম্পর্কিত

১টি কমেন্ট

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here