ডুব: বায়োপিকে প্রবেশ

1322
ডুব
[No Bed Of Roses]
স্ক্রিপ্টরাইটার ও ফিল্মমেকার । মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
প্রডিউসার । আবদুল আজীজ; ইরফান খান; অশোক ধানুকা; হিমাংশু ধানুকা
সিনেমাটোগ্রাফার । শেখ রাজিবুল ইসলাম
এডিটর । মোমিন বিশ্বাস
মিউজিক স্কোর । পাভেল আরিন
কাস্টিং [ক্যারেক্টার] । ইরফান খান [জাভেদ হাসান]; নুসরাত ইমরোজ তিশা [সাবেরি]; রোকেয়া প্রাচী [মায়া]; পার্ণো মিত্র [নিতু]
রানিংটাইম । ৮৫ মিনিট
ভাষা । বাংলা
দেশ । বাংলাদেশ; ভারত
বাণিজ্যিক মুক্তি । ২৭ অক্টোবর ২০১৭
অ্যাওয়ার্ড । ফিল্ম বাজার ২০১৩ [দুবাই ফিল্ম মার্কেট অ্যাওয়ার্ড]; মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০১৭ [কমারস্যান্ট জুরি প্রাইজ]

 

লিখেছেনমাহবুব মোর্শেদ


কাজের ব্যস্ততায় এখন আর তেমন করে সিনেমা দেখা হয় না। মাঝে কৃষ্ণপক্ষ, আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক দেখেছি বিশেষ আগ্রহ থেকে। একবারে শেষে দেখলাম ডুব সাঁতার, ডুবআবহমান। বায়োপিক আমার খুব পছন্দ। বিশেষ করে লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্রকারদের বায়োপিক। সে কারণে ডুব নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল। ডুব মুক্তির আগে অনেক আলোচনা তৈরি করেছে, মুক্তির পর আলোচনা বন্যার গতি পেয়েছিল। তাই স্বভাববশত একটু থমকে গিয়েছিলাম। নানা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর দেখে যখন ফেললাম তখন আর চুপ করে থাকার মানে হয় না।

…মিল নেই বলেই
মনে হবে
অনেক কিছুই হতে
পারতো…

ডুব দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, হেমিংওয়ে ও হেলহর্নের কথা। কিছুদিন আগে মার্কিন সেলিব্রেটি লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়েকে নিয়ে ফিলিপ কফম্যানের হেমিংওয়ে অ্যান্ড গেলহর্ন দেখছিলাম। যারা হেমিংওয়েকে পছন্দ করেন, তারা হেমিংওয়ে অ্যান্ড হেলহর্ন নিয়ে খুব হতাশ হবেন। কারণ সিনেমাটা হেমিংওয়ের তৃতীয় স্ত্রী মার্থা গেলহর্নের জবানিতে বলা। আর সকলেই জানেন মার্থা নিজেই একজন প্রখ্যাত সাংবাদিক। তার ব্যক্তিত্ব হেমিংওয়ের সাথে পাল্লা দেবার মতো। মার্থা চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিকোল কিডম্যান। মার্থা কেমন হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। সে তুলনায় হেমিংওয়ে চরিত্র ক্লাইভ ওয়েনের হাতে একটু সাধারণ। সিনেমার ফোকাস মার্থার সাথে পাঁচ বছরের দাম্পত্য। হেমিংওয়ের বাকী জীবনের যে ছিঁটেফোটা দেখানো হয়েছে সেটুকু সাপ্লিমেন্ট। আমি বলবো, মার্থার প্রতি পক্ষপাত সত্ত্বেও হেমিংওয়েকে বেশ পাওয়া যায়। স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে হেমিংওয়ে খুব আলোচিত চরিত্র ছিলেন। জাপান ও চীন সফর নিয়েও বেশ গল্প চালু আছে। মার্থার সাথে বিচ্ছেদের দৃশ্যগুলো নিয়ে অনেক বেশি মনে পড়বে ডুব দেখতে দেখতে। কারণ একদমই মিল নেই। মিল নেই বলেই মনে হবে অনেক কিছুই হতে পারতো। জাভেদ হাসান মায়াকে ছেড়ে কীভাবে নীতুর জীবনে প্রবেশ করছেন, সেটা মিলিয়ে দেখছিলাম। হেমিংওয়ে কীভাবে পওলিনের জীবন ও বাচ্চাঅলা সংসার থেকে মার্থার জীবনে আর মার্থার জীবন থেকে কীভাবে মেরি ওয়েলশের জীবনে ঢুকছেন। ফিলিপ কফম্যান যেভাবে ডিল করেছেন, ফারুকী সেভাবে ডিল করেছেন। কফম্যান বায়োপিকের মাস্টার। মিলান কুন্ডেরার আনবিয়ারএবল লাইটনেস অব বিয়িং বানানোর সাহস তিনি পেয়েছিলেন। হেনরি মিলারের বায়োপিক বানিয়েছেন হেনরি অ্যান্ড জুন নামে। আবার কুইলস বানিয়েছেন মাকুর্ইস দ্য সাদকে নিয়ে। তবু আমি বলবো, হেমিংওয়েতে একটু কমই পাওয়া গেছে। লেখকের প্যাশনটা হেমিংওয়েতে আছে বটে কিন্তু সেটা মার্থার জবানিতে পুরোটা যেন আসছিল না। যতটা আসছিল হেমিংওয়ের যৌনজীবনের উদ্দাম প্রকাশ, যৌনহিংসার বর্ণনা।

জাভেদ । ‘ডুব’-এর প্রচারণামূলক পোস্টার থেকে…

বায়োপিকের জগতে আন্দ্রেই তারকোভস্কির আন্দ্রেই রুবলেভ-এর তুলনা বোধহয় খুব কম আছে। রুশ শিল্পী রুবলেভের প্যাশন যেভাবে তুলেছেন, তা বোধহয় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। রুবলেকেভকে ধরার জন্য তারকোভস্কি তার সময়, মানে পঞ্চদশ শতকের রাশিয়াকে রিক্রিয়েট করেছেন। তাতে শেষ পর্যন্ত ডিটেইল অনেক বেশি পাওয়া গেলেও শেষে গিয়ে মনে হয়েছিল এটাই দরকার। পরিপ্রেক্ষিতের মধ্যে ফেলে দিয়ে দেখা।

বায়োপিকের মধ্যে আমার বেশ পছন্দ কাপোটে। মার্কিন লেখক ট্রুম্যান কাপোটেকে নিয়ে। কাপোটের জীবনের সামান্য কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ আবার ফ্লেক্সিবল একটা অংশ নিয়ে সিনেমাটা বানানো। পত্রিকায় চার খুনের একটা খবর পড়ে কাপোটে ভাবতে থাকেন এটা নিয়ে লিখবেন, তিনি গ্রেফতার ও বিচারাধীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলা শুরু করেন। লিখতে শুরু করেন ইন কোল্ড ব্লাড উপন্যাস। সিনেমায় কাপোটের বিপরীতধর্মী চরিত্র এমনভাবে এসেছে যে অভিভূত হতে হয়। একজন লেখককে কীভাবে তুলে আনতে হয় সেটার বোধহয় আদর্শ উদাহরণ কাপোটে। এত লাইভ, লেখক তার বন্ধু, আড্ডা, দাহ ও দহন সমেত উপস্থিত।

কিংবা আপনাদের মনে পড়বে এল পোসটিনো বা পোস্টম্যান সিনেমার কথা। কবি পাবলো নেরুদার জীবনের একটা সামান্য অংশ নিয়ে। রাজনৈতিক কারণে নেরুদা স্ত্রী সহ একটা দ্বীপে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে একটা কাহিনী এই সিনেমা। নেরুদাকে কিন্তু পাওয়া যায়।

বায়োপিক নির্মাণে হলিউডের বিশেষ দক্ষতা আছে। গবেষণা, টেকনলজি আর বড় পরিপ্রেক্ষিত ধরার দক্ষতা তাদের আছে। তবু বেশিরভাগ সিনেমাতেই চেনা চরিত্রকে পুরোটা ধরার চেষ্টা তারা করেনি। ফ্রিদা বোধহয় অন্যতম ব্যতিক্রম। এমন হয়তো আরও আছে। বোম্বেতে ইদানিং অনেক বায়োপিক হচ্ছে। আমি খুব একটা দেখিনি। কারণ বোম্বের বায়োপিক ফর্মুলা আমাকে টানে না। এরা সাধারণত পুরোটা ধরার চেষ্টা করে বলে মনে হয়েছে। কম দেখে এমন মন্তব্য হয়তো ঠিক না।

সাবেরী । ‘ডুব’-এর প্রচারণামূলক পোস্টার থেকে…

আমাদের দেশে বায়োপিকের কথা তেমন শোনা যায় না। ফারুকীর হাত ধরে বায়োপিক একরকম যাত্রা শুরু করেছে জেনে একরকম উত্তেজিত হয়েছি। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে প্রথমে প্রযোজকদের তরফে বায়োপিক বলে প্রচার চালিয়েও সে দাবি থেকে পরিচালকের সরে আসার ঘটনায়। চরিত্র হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ খুবই বর্ণাঢ্য। কিন্তু তার জীবন খুব রহস্যময় নয়। তিনি নিজে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন পাঠক ও মিডিয়ার সাথে শেয়ার করতে ভালোবাসতেন। এবং পরে তার জীবন যখন গুলকেতিন থেকে শাওনের জীবনে প্রবেশ করে তখন মিডিয়া এ নিয়ে বিশেষ চর্চা করেছে। তার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে যখন ফারুকী এ নিয়ে সিনেমা করার সিদ্ধান্ত নেন তখন সেটা খুব সুদূরপ্রসারি চিন্তাপ্রসূত বলে মনে হয়নি। সিনেমা দেখার পর মনে হয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ মারা যাবার পর তার পরিবার, ভক্তকূল, বন্ধুরা দুই পরিবারের সমর্থনে বিভাজিত হয়ে যেসব তর্ক করেছিলেন সেসব দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ফারুকী এই সিনেমা বানিয়েছেন। পক্ষপাত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রথম পরিবারের প্রতি পক্ষপাত ফারুকীর হয়তো ছিল। সেটা তিশার মাধ্যমে মূল চরিত্রকে রূপদানের মাধ্যমে পরিষ্কার। কিন্তু দুই পরিবারের মধ্যে কারও প্রতি ফারুকী অন্যায় পক্ষপাত করেছেন, তা বলা যাবে না।

…চলচ্চিত্রকার জাভেদ ও তার
প্রথম স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সমস্যা
এবং
তার পরের স্ত্রী নীতুর সঙ্গে সম্পর্ককে
আমাদের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে
জাভেদের মেয়ে সাবেরীর
পার্সপেক্টিভ থেকে কীভাবে
তুলে আনা সম্ভব?…

এখন প্রশ্ন হলো, চলচ্চিত্রকার জাভেদ ও তার প্রথম স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সমস্যা এবং তার পরের স্ত্রী নীতুর সঙ্গে সম্পর্ককে আমাদের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে জাভেদের মেয়ে সাবেরীর পার্সপেক্টিভ থেকে কীভাবে তুলে আনা সম্ভব? আদৌ কি সম্ভব? বাবা মায়ের সম্পর্ককে সাবেরী কীভাবে দেখছে? খুব জটিল অবশ্যই। নীতু আর সাবেরী ক্লাসমেট ছিল বলেই তার পার্সপেক্টিভটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ নেই। কারণ বাবা-মেয়ে আর স্বামী ও স্ত্রীদের ব্যাপার সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাবেরীর এখানে প্রবেশাধিকার নেই। যদিও দহনটা তার বেশি। ঘনিষ্ট বান্ধবী ও বাবা দুজনকেই সে হারাচ্ছে, তার কষ্টটা বেশি। সম্ভবত ছোটবেলা থেকে গড়ে উঠতে থাকা অভিনয় ক্যারিয়ারও তাকে স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে। সে ইঙ্গিত সিনেমায় স্পষ্ট। কিন্তু সাবেরীকে একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবে দেখানো হয়তো ভুলই। তাহলে অভিনয় নিয়ে দুই শিশুশিল্পীর কথার কী মানে থাকতে পারে। পরে যে জাভেদের সিনেমায় নীতুকে দেখা যাচ্ছে সেখানেও নীতু কতটা শিল্পীর মতো হয়ে উপস্থিত হয়েছে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। একজন নির্মাতা শিল্পী হিসেবে ফারুকীর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো তিনি গল্পটা দাঁড় করিয়েছেন পাবলিক পার্সপেক্টিভ বা মেঠো গল্প থেকে। সাবেরী একজন অভিনেত্রী যার ক্যারিয়ার বাবার সিনেমাকে অবলম্বন করে। নীতু একজন অভিনেত্রী যার ক্যারিয়ার জাভেদের সিনেমাকে কেন্দ্র করে। জাভেদও কোনো না কোনোভাবে এদের দুজনের ওপর নির্ভরশীল। এটা নিয়ে সিনেমা আগায়নি কেন সেটা ফারুকীর সিদ্ধান্ত, কিন্তু এর যে ইঙ্গিতও তিনি দিতে পারলেন না সেটা বড় ব্যর্থতা। সাবেরীর পেশা কী? কী করে? এর উত্তর সিনেমায় আছে? নীতু সিনেমা থেকে বেরিয়ে গেছে এই খবর না জানালে তো নীতু কী করে সেটাও জানা যেত না। অথচ, তারা দুইজন অভিনয় করে ছোটবেলা থেকে। স্কুলে, স্কুলের আগে থেকে।

নীতু । ‘ডুব’-এর প্রচারণামূলক পোস্টার থেকে…

আর জাভেদই বা কী করে?
গুলশানে একটা বাড়ি। নতুন একটা ডুপ্লেক্স। একটা বাগানবাড়ি তার প্রতিভা? রাস্তায় বের হলে লোকজন অটোগ্রাফ চায় এটা তার সেলেব্রেশন? মেয়ের জন্য আইপ্যাড কিনে নিয়ে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া তার অপত্য?শিল্পী বা ফিল্মমেকার লোকটা কোথায়? তার সৃষ্টির দাহ কোথায়?

ফারুকী একজন ফিল্মমেকার। একজন সেলিব্রটি লেখক যিনি একজন ফিল্মমেকারও বটে এমন একটা সিনেমা হচ্ছে শুনে আমি ভেবেছিলাম, ফিল্মমেকারের ডিটেইল কিছু মিলবে। ফ্রাঁসোয়া ত্রুফোর ডে ফর নাইট সিনেমার মতো কিছু ব্যাপার আমরা হয়তো দেখবো। নির্মাতা হিসেবে নিজের কষ্ট সুখ জাভেদ হাসানের মধ্যে চারিত করতে পারবেন। সেসবের কোনো ছাপ দেখা গেল না।

…পরিচালক যে এটা
হুমায়ূনের বায়োপিক
দাবি করেননি, তা
খুবই সঙ্গত
হয়েছে…

পরিচালক যে এটা হুমায়ূনের বায়োপিক দাবি করেননি, তা খুবই সঙ্গত হয়েছে। কারণ, হুমায়ূন চরিত্রে জাভেদ হাসান খুব বেমানান হতেন। হুমায়ূনের মতো ছোটখাট, ফূর্তিবাজ, নিষ্ঠুর, একরোখা, অসুখী মানুষের কোনো সিগনেচার ইরফান খানের মধ্যে নেই। তিনি যে খুব বেশি হোমওয়ার্ক করেছেন তাও মনে হয়নি। সে অর্থে এটি মোটেও হুমায়ূনের জীবন নয়। কারণ শিল্পী, লেখক, চলচ্চিত্রকার হুমায়ূনের কোনো ছাপ আমরা সত্যিই পাইনি। তার আশপাশের পরিপ্রেক্ষিতও শিল্পীর মতো নয়। একজন সাধারণ বাবা একটা সাধারণ পরিবার দ্বিতীয় বিয়ে আর তেমন কিছু কিন্তু আমরা পেলাম না। তারপরও এই সিনেমাকে যে হুমায়ূনের বায়োপিক মনে হচ্ছে, তার কারণ সিনেমার আগের প্রচারণা। মানুষ হুমায়ূনকে দেখতে যাচ্ছেন। হুমায়ূনকে দেখে আসছেন। একটা দৃশ্যেই শুধু মনে হয়েছে এটা হুমায়ূনকে নিয়ে। প্রথম পক্ষের শশুর যখন খেতে বসে থালা ভেঙে ফেলেন। এটা খুবই হুমায়ূনীয় ছিল।

এই সিনেমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ‘আহারে জীবন’। দর্শকের মধ্যে যদি আপনি আহা উহু জাগাতে পারেন তবে তারা নিশ্চয়ই তা করতে দ্বিধা করবে না। কিন্তু আহারে জীবন বলে গান গাইবার দরকার কী? এভাবে দর্শককে আহা উহু করতে বলবেন কেন? শেষে পুরনো সেই দিনের কথার আবহ তো ব্লান্ডার হয়েছে।

…এমন বহুস্তরীয় গল্প
ক্যামেরার মাধ্যমে বলার ইতিহাস
আমাদের নেই। ফারুকী
বলতে পেরেছেন। এটা
বড় অর্জন…
ডুব । ফিল্মমেকার : মোস্তফা সরয়ার ফারুকী

অনেক সমালোচনা হলো, এবার বলি, ডুব আমাদের সিনেমায় একটা মাইলসে্টান। কেন? এটা প্রথম বায়োপিক। সবচেয়ে আলোচিত সিনেমা। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো একক সিনেমা নিয়ে এত আলোচনা বোধহয় হয়নি। বেদের মেয়ে জোছনা নিয়ে অনেক কথা আমরা শুনেছি। আয়নাবাজি, ঢাকা অ্যাটাক সবাই একবাক্যে প্রশংসা ও এনজয় করেছেন। কিন্তু ডুব হলো সেরকম একটি সিনেমা– যা নিয়ে পুরো জাতি দুইভাগ হয়ে গেছে। কিন্তু এত আলোচনার মধ্যে একটা কথা ভোলা যাবে না যে ফারুকী বিরাট রিস্ক নিয়ে এই গল্পটা বলেছেন। গল্পটা সবার জানা। জানা গল্পকে বলতে হলে সাহসটা অনেক বেশি দরকার। হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় ন্যারেটিভ। তাকে নিয়ে গল্পটা বহুস্তরীয়। এমন বহুস্তরীয় গল্প ক্যামেরার মাধ্যমে বলার ইতিহাস আমাদের নেই। ফারুকী বলতে পেরেছেন। এটা বড় অর্জন।

এ সিনেমায় হয়তো অনেকের উপস্থিতি আমরা দেখবো, কিন্ত ফারুকীর নিজস্ব চলচ্চিত্র ভাষার দেখাও তো পাওয়া গেল। গল্পটা ফারুকী লিখেছেন বলে হয়তো গল্প হিসেবে কিছু দুর্বলতা আছে। কিন্তু ভাষাটা পুরোটাই চলচ্চিত্রীয়। এটা আমাদের সিনমোয় নতুন ঘটনা। ক্যামেরার অনেক টেকনিক আমাদের সিনেমায় আগে দেখা যায়নি। সিনেমাটোগ্রাফি যে ভালো, সেটা শত্রুরাও বলছেন। আমার তো মনে হয়, বিতর্কে ব্যবসা ভালো হলেও ফারুকীর কাজের প্রকৃত মূল্য থেকে লোকের চোখ সরে গেল। কিন্তু মন দিয়ে দেখলে ফারুকীকে দোষ দেয়া যাবে না। আমরা একজন বড় নির্মাতাকে পেতে যাচ্ছি, ডুব-এ এটা নিশ্চিত হলো।

Print Friendly, PDF & Email
কবি; কথা-সাহিত্যিক; সাংবাদিক । বাংলাদেশ ।। প্রকাশিত গ্রন্থ : ব্যক্তিগত বসন্তদিন [২০০৬]; ফেস বাই ফেস [২০১০]; বস্তুপৃথিবীর রহস্য [২০১০]; দেহ [২০১১]; গুরু ও চণ্ডাল [২০১৩]; অর্ধেক জাগ্রত রেখে [২০১৩]

১টি কমেন্ট

  1. এইটা প্রথম বায়োপিক না। এর আগে লালন আর হাসন রাজাকে নিয়ে এদেশে সিনেমা হয়েছে।

Leave a Reply to মণি

Please enter your comment!
Please enter your name here