রাসেল আহমেদ, ইনডিপেন্ডেন্ট ফিল্মমেকার: অমৃতের পুত্ররা মরে না কখনো

2330
রাসেল আহমেদ
জন্ম । ৫ জুলাই ১৯৭৬; বরিশাল, বাংলাদেশ
মৃত্যু । ১৫ মে ২০১৭; ঢাকা, বাংলাদেশ

লিখেছেন টোকন ঠাকুর


তে পারে, ল্যাতিন অঞ্চল পুনর্দখল করেছে মার্কিন-ন্যাটো সৈন্যেরা। ল্যাতিনের অধিবাসিরা উদ্বাস্তুপ্রায়, ছড়িয়ে পড়েছে।

হতে পারে, গুলশান-বনানী-বারিধারা কিম্বা ধানমণ্ডি হচ্ছে ইউরোপ-অ্যামেরিকা, সমাজে আগে আগে দখল-টখল করে লুটেরা-ঔপনিবেশিক, তাই আগায়ে গেছে, ন্যাটো শক্তিতে বলীয়ান। অর্থ-অস্ত্র-বাণিজ্যে ক্ষমতাধর। উত্তরা হয়তো অস্ট্রেলিয়া-কানাডা, স্বাচ্ছন্দে অভিবাসন উপযোগী। টঙ্গি-সাভার-নারায়ণগঞ্জ চীন-রাশিয়া মার্কা। জি-৭ কে জি-৮ করে, তাতে জায়গা পেতেই মুখিয়ে আছে। মোহাম্মদপুর-মিরপুর-ভেড়িবাঁধ, কামরাঙ্গিররচর, পুরোন ঢাকা, কাঁঠালবাগান বা মুগদাপাড়া, যা্ত্রাবাড়ি– এসব এরিয়াই এশিয়ার অংশ বা উপমহাদেশ। যেমন এও মনে হতে পারে, মগবাজার বা বাইতুল মোকাররম এলাকা কখনো কখনো মধ্যপ্রাচ্য। মগবাজারে খেঁজুরগাছ বেশি। কিন্তু নীলক্ষেত থেকে দোয়েল চত্বর এবং এর মধ্যে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান-টিএসসি-চারুকলা-মধুর ক্যান্টিন থেকে ছবির হাট-শাহবাগ– এটাই ল্যাতিন অ্যামেরিকা! ল্যাতিন হলেও ল্যাতিনের মতো ক্রাইম নেই, মাদকের পাচারও নেই। তাহলে কীভাবে ল্যাতিন হয় এতদাঞ্চল? হয়। ল্যাতিন-ল্যাতিন ড্রিম ফ্যাক্টরি এখানে, অনেক। ল্যাতিন যেমন কাস্ট্রো-গুয়েভারার, ল্যাতিন তেমনি বোর্হেস-কালভিনোর। ফ্রিদা কাহালো বা বোতেরো-রিবেরার। ফলে, নতুন একটি কবিতা আদতে নতুন কিনা, তা নিয়ে তর্ক বাঁধে। নতুন একটি গানের সুর এসেছে কোত্থেকে, সেই নিয়ে ঘণ্টা তিনেক যায়। কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য নিশ্চয়ই অবিভক্ত বাংলা লোকগানের শেষ শিল্পী, তা তিনি শিলচরের জাতক বলেই হয়তো। আমরা এও জানি, কবীর সুমন আমাদের কালের এক বড় শিল্পী, তাকে আমরা বাজারে পেয়েছি। কিন্তু কফিল আহমেদ যে বাংলাদেশের আরো বড় শিল্পী, বাজার জানে না। বাজার না জানলে লোকে তাকে চেনে না, এই বাজারি ব্যবস্থাপনাতেই কেউ কেউ বড়র ভাব পেয়ে প্রতিষ্ঠিত আজ। প্রতিষ্ঠা কাকে বলে, তাহলে? বাজার চিনেছে কিনা, তাই তার একমাত্র পরিমাপক?

রাসেল আহমেদ

আমরা মনে করতে পারি, ফ্রান্সিসকো গোইয়া একই ছবি দুইবার এঁকেছিলেন। এলায়িত  ভঙ্গিতে রানী, পোশাক পরিহিত, রাজা তখন প্রাসাদে; আরেকবার রানী ন্যুড, একই ভঙ্গিতে, রাজা তখন প্রাসাদের বাইরে অবস্থান করছিলেন। মুহূর্তেই কুরোসাওয়াসত্যজিৎ উঁকি মারে আলোচনায়। আর ফেলিনিকে ঠিকঠাক ধরতেই পারি না, ফেলিনি কি ‘কবেকার পাড়াগাঁর অরুনিমা সান্যালের মুখ? কথা ওয়ারি বটেশ্বরের দিকে যায়, কথা যায় আগৈলঝোরার দিকে, ওখানে আলফ্রেড খোকন বলে একজন পাদ্রি থাকে। পাদ্রিকে দেখে আমাদের মনে পড়ে, কবির পোশাক কি এমনই হয়? এসএম সুলতান-আহমদ ছফা বা রবীন্দ্রনাথকেও পোশাকের দিক দিয়ে পাদ্রি পাদ্রিই লাগে। ছবির মতো লাগে। সুতরাং ছবির আলোচনা টু বি কন্টিনিউড। কথাও ওঠে– কিম কি দুক কি এখন কোরিয়ান উপকুলে বড়শি ফেলে সরপুটি ধরছেন? কিম্বা অনুরাগ কাশ্যপ কোন ধরনের নির্মাতা, বানশালির থেকে তার দূরত্ব কত মাইল দূরে! তাহলে শ্যাম বেনেগালকে কোথায় রাখব? আদুর গোপাল কৃষ্ণান বা অরবিন্দম, তাদের ছবিতে কী রস, তা পাব কিভাবে? জাফর পানাহিকেও ভাল্লাগে। মাখমালবাফও প্রথম দিকে বেশি টানত! ধরো, আব্বাস কিয়োরোস্তামির কর্কটে প্রস্থান অধ্যায় নতুন একটি ছবির প্রথম সিকোয়েন্স কিনা– ক্রিস্টোফার নোলান বা গঞ্জালেস ইনারিতুর ছবিকে আমরা প্রাচ্যের এদিকে ডালপুরির দোকানে বসে কীভাবে দেখব– এসব কথা মুক্তাঞ্চলে বসে হতো।

…এরা আসে দেশের প্রত্যন্ত থেকে,
আসার সময় বুক পকেটে নিয়ে আসে
সবুজ কবিতা;
এরা আসে কোনো সোনালি নদীর পাড় থেকে,
গলার মধ্যে ভরাট করে আনে
হাওয়া,
সেই হাওয়াতেই বাঁশি বেজে ওঠে…

মুক্তাঞ্চল মনে হতো ছবির হাটকে। ছবির হাট বা ল্যাতিন অ্যামেরিকায় বসে আমাদের অনেক কথা হতো। ল্যাতিনের অনেক মন্ত্রী-প্রেসিডেন্টও মেইনস্ট্রিম লিটারেচার করে বা এক ইঞ্চি আদিখ্যেতা করে বললে বলতে হয় যে, এখানকার ভবঘুরেরাও অবলীলায় আইন পরিষদের সদস্য হয়। অসংখ্য শিল্পী-দার্শনিক-ছবির মানুষ স্রেফ চা-সিগারেট বা একটু-আধটু দেশি তামাকের স্টিকে টান দিতে দিতেই অনায়াসে দশ-বিশ বছর পার করে দেয়। নেশা বলতে এক স্টিক পুরিয়ায় টান যতটা, তার থেকে বেশি ব্লুতে, পিকাসোর ব্লু পিরিয়ডে। দালির পার্সিস্টেন্স অফ মেমেরিতে। নেশা ঋত্বিকের বাংলায়, নেশা মহুয়ায়, মলুয়ায়, নেশা একটু-আধটু পানেও। দেখেছি, এরা ভালোবাসায় নিয়োজিত, দিতেও, নিতেও; তাই ভালোবাসার থেকে দূরে গিয়ে ভালোবাসাকে এরা চিঠি লেখে, মেসেজ পাঠায়। এরা উনিশ ঘণ্টা স্বপ্নচাষ করে প্রতিদিন। বুকের মধ্যে এদের মাইল মাইল চরাচরের জমি। এরা ঘুমোয় কখন? সেই এক প্রশ্ন, যে-প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে এদের সঙ্গেই নির্ঘুম থাকতে হবে। এরা আসে দেশের প্রত্যন্ত থেকে, আসার সময় বুক পকেটে নিয়ে আসে সবুজ কবিতা; এরা আসে কোনো সোনালি নদীর পাড় থেকে, গলার মধ্যে ভরাট করে আনে হাওয়া, সেই হাওয়াতেই বাঁশি বেজে ওঠে; এরা আসে হয়তো হাওড়-ভূমির হুহুকরা হাহাকার চোখে নিয়ে, ফলে এদের সঙ্গে মাঠের শিয়রে কোনো বটগাছ বা বটপুত্র আহমদ ছফার দেখা হয়ে যায়। এদের সঙ্গে লালন ফকির হাঁটে। ভবা পাগলা নাচে। আর ঘটক বসে পদ্মার এপার-ওপার করে। এরা, এরা কারা?

আড্ডায় রাসেল আহমেদ ।। ছবি, টোকন ঠাকুরের সৌজন্যে

এরা হচ্ছে এই ল্যাতিন অ্যামেরিকার বাসিন্দা। শাহবাগ-ছবির হাট এলাকার তরুণেরা। এরা কেউ হঠাৎ একদিন হারিয়ে যায়। যে-হারিয়ে যায়, আমরা জানি, তখনও তার বুকের মধ্যে একটি নতুন কবিতা ঝুপঝুপ করছিল! যে-হারিয়ে যায়, তখনও তার চোখের মধ্যে নতুন ছবির গল্প বা সিনেমা নির্মাণাধীন ছিলই। ল্যাতিনের এই ছেলেমেয়েদের প্রধান গুরুত্ব এখানে যে, স্বাধীন চিন্তার ফলন ফলিয়ে আর্ট-কালচার করা, ভালোবাসা। চিরকালের দাসত্ব থেকে মুক্তির গান গাওয়া। জীবনের নব নব দুয়ার উন্মোচনের গান। বাংলা গান শুনে ইংরেজি গান আর বসে থাকতে পারে না। ধাতব বন্দুক  কখনো অত স্বাধীনতা পছন্দ করে না। অন্যদিকে, দূরের স্ট্যাবলিস্টমেন্টের চেয়ারগুলো প্রকাশ্যে এদের যতই অসামাজিকতার ধুয়ো তুলে সমালোচনা  করুক, গোপনে মুগ্ধ হয়। সো ঈর্ষা করে। আপোসের মানুষেরা অনাপোসীদের কাছে নত হতে বাধ্য। এটাই ল্যাতিনের গুণ, রাস্তার গুণ, জনপদের প্রতিদিনের মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে ঘেষাঘেষির আগুন। সেই আগুন মাখা ল্যাতিনো বা ছবির হাট আজ আর নেই। উঠে গেছে। ল্যাতিন অঞ্চল পুনর্দখল করেছে মার্কিন-ন্যাটো সৈন্যেরা। ল্যাতিনের ছেলেমেয়েরা উদ্বাস্তুপ্রায়, দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বন্দুক তো আর ছবি-কবিতা পছন্দ করতে পারে না, বন্দুক জীবনকে আরেক সংজ্ঞায় বিভূষিত করে, কব্জা করে। দ্বন্দ্ব চিরকালের ।

…যে-হারিয়ে যায়, তখনও
তার চোখের মধ্যে নতুন ছবির
গল্প বা সিনেমা
নির্মাণাধীন ছিলই…

ল্যাতিন অ্যামেরিকায় আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। সেদিনের ছবির হাটেই পরিচয় হয়েছিল সদ্য বরিশাল থেকে আগত রাসেল আহমেদ নামের ত্রিশ ছুঁইছুঁই এক তরুণের, যার স্বপ্ন সিনেমা, ঘুম সিনেমা, জেগে থাকাও সিনেমা। রাসেল আহমেদ বয়সে আমার কয়েকবছরের জুনিয়র বটে কিন্তু ওর প্রজ্ঞা-পূর্ণতায় আমাদের মধ্যে চমৎকার এক বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল। চলচ্চিত্রে নৃ ওর ডেব্যু প্রজেক্ট। ঢাকা থেকে বরিশালে কয়েকবার টিম নিয়ে গিয়ে গিয়ে অনেক অর্থ-কষ্টে শুটিং শেষ হলো, এরপর সম্পাদনা শুরু হলো। সম্পাদনা বাকি এখনো, নির্মাতা সারাজীবনের জন্যে অনুপস্থিত হয়ে গেল। এটা নিয়মের মধ্যে পড়ে? রাসেল, তুমি ছাড়া আর কেউ তোমার চাওয়া অনুযায়ী নৃ সম্পাদনা শেষ করে উঠতে পারবে? উঠলেও, এটা তোমার সম্পূর্ণ পছন্দ হওয়ার? সম্পাদনা হয়তো শেষ হবে, কিন্তু তুমি তো আর দেখতেও আসবে না তোমারই প্রথম নির্মাণ, নৃ। এরকম ট্র্যাজেডি করার দরকার কি? তুমি কি বলবা রাসেল, ‘হার্ট অ্যাটাকটা সামাল দিতে পারলাম না’ এই তো? তুমি যাই বলো, এটা কিন্তু হলো না। এটা ঠিক নেওয়া যায় না। নিতামও না, কিন্তু তুমি তোমার অনুপস্থিতিকে নিতে বাধ্য করছ। ১৫ মে সন্ধ্যায় তুমি হারিয়ে গেলে। এটা তোমার ঠিক নয়। তাহলে তোমার অনুপস্থিতির জন্যে আজ তুমিই দায়ী? নাকি এই ফাটকাবাজির দেশে এক নির্মম সময়ের মধ্যে বাস করে নিজের মনের মতো করে ছবি করতে চাওয়ার মনোভাবই দায়ী? বাজারের সঙ্গে আপোস করতে না-চাওয়ার বা না-পারার একগুঁয়েমি দায়ী? রাসেল আহমেদ জন্মেছিল ১৯৭৬ সালে, ৫ জুলাই, বরিশালে।

দৃশ্য । নৃ ।। ফিল্মমেকার । রাসেল আহমেদ

রাসেল বরিশাল থেকেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকায় এসেছিল। আজ, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ছবির হাটের সেই দিনগুলো অধুনালুপ্ত ইতিহাস হয়ে গেছে। ২০০০ সালের পর মাত্র দেড় দশক হয়তো ছবির হাট বা স্বাধীন ল্যাতিন অঞ্চলের অস্তিত্বকাল থাকল। তারপর পুলিশের বাঁশিতে কৃষ্ণের বাঁশি বন্ধ হয়ে গেল। এই ছবির হাটেই রাসেল, ঈয়ন, ড্যানি, তামান্না, হীরাদের সঙ্গে আমার ব্যাপক আড্ডা হয়ে উঠল কয়েকবছর, যারা কিনা সবাই নৃ ছবির সঙ্গে যুক্ত। ছবির হাটে জুয়েল, প্রিমা, বর্ণা, রোকসানা, সুমনদের সঙ্গেও আলাপ হচ্ছিল। রুবেল, গৌতম, স্বপ্নাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। পৃথিবীতে যখন ফেসবুক আসে, সেই সময়ের একটু আগে-আগে থেকেই কয়েকবছর ছবির হাট ছিল। ফেসবুক আসার পরেও ছিল। ল্যাতিন ল্যাতিন-স্বপ্ন-সাহসে উদ্যানে ওপেন এয়ার আর্ট-কালচার ছিল। প্রত্যন্ত থেকে আসা সৃষ্টিশীল তারুণ্যের সান্ধ্য-জমায়েত ছিল। হ্যা, ছবির হাটে আড্ডা সন্ধ্যায় জমজমাট লাগত বটে, আড্ডা ভাঙতে ভাঙতে বা মচকাতে মচকাতে রাত এগারোটা ছুঁয়ে যেত। রাসেলকে সে-সব আড্ডায় পেয়েছি সিনেমা-মুখর সম্ভাবনার চোখে।

…এখানে মানুষের বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়া হয়
লেখাপড়া শিখে
টাকা কামাই করানোর যন্ত্র-দাস
বানানো হবে বলে।
ফলে
এখানে বাজার চিন্তা্র বাইরে
আপোসহীন  শিল্পকলা করাই
ঝুঁকি…

একবার, শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির দোতলায় নৃর একটি প্রেস কনফারেন্স হলো। ছবির অভিনেত্রী তামান্না অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিল। মঞ্চে ডাকল আমাকে, এডিটর সামিরআহমেদকে। রাসেল নৃকে প্রথম প্রেসের সামনে আনল। তখন ছবির আরো অর্থ যোগাড়ের চাপ চলছিল, নইলে নৃর বাকিটা শুটিং হতো কীভাবে? নৃ করতে গিয়ে নিজের পৈর্তৃক জমিও বিক্রি করেছিল রাসেল। হ্যা, আরো অনেক পরিবারের মতো রাসেলের পরিবারও এইসব পছন্দ করছিল না। এসবে তো সচরাচর নিজের পরিবারের সঙ্গেও সৎভাবের একটা টান পড়ে, হয়তো রাসেলের জন্যেও তা বরাদ্দ হয়েছিল। তবে এ নিয়ে রাসেলের মধ্যে খুব একটা প্রকাশ্য খেদ দেখিনি। রাসেল নৃ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়েই নিজের নির্মাতা-সাক্ষর রাখতে সংকেত দিয়েছে। এটাও ঠিক, এই দেশ গরিবের দেশ। ভিক্ষুকের দেশ। চোরের দেশ। বাটপারের দেশ। এখানে মানুষের বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়া হয় লেখাপড়া শিখে টাকা কামাই করানোর যন্ত্র-দাস বানানো হবে বলে। ফলে এখানে বাজার চিন্তা্র বাইরেআপোসহীন  শিল্পকলা করাই ঝুঁকি। সেই ঝুঁকিও কেউ কেউ নেয়, নিতে চায়, স্বেচ্ছায়। রাসেল নিয়েছিল। এদেশের সিনেমায় সেই ঝুঁকি প্রজেক্টের আরেকটি হচ্ছে নৃ। আর সিনেমা বানাতে তো টাকা লাগে, এতগুলো মানুষকে লেবার ওয়ার্ক দিতে হয়, এত সময় দিতে হয়। প্রযুক্তির ব্যবহার লাগে, তাই টাকা লাগে। অনেক মানুষ একটি ছবিতে রুটি-রুজির সংস্থান করে, এটা একটা কারখানা জাতীয় উৎপাদনের ব্যাপার। তাহলে একটা ভালো সিনেমা বানানোর জন্যে এইদেশে টাকা আসবে কোত্থেকে?  নৃ দিয়ে  নির্মাতা রাসেল আহমেদ সূচনা করতে চাচ্ছিল যে, কষ্ট করেও স্বপ্নময় বাস্তবতার সিনেমা বানানো যায়। কোনোপ্রকার ফর্মুলা মাথায় না নিয়ে, সৃজনমুখর এক চেতনায় নিমজ্জিত থেকে সত্যি সত্যি ভালো ছবি, যা ফাপানো জীবনের গপ্পো নয়, বরং নির্মাতার দেখা ও নির্মোহ দর্শন থেকে বানানো কোনো রূপকল্প তৈরি করার অভিপ্রায়। তাই নৃ শেষ হতে দেরি হয়ে যাওয়া, আমি মনে করি এ জন্যেই এই দেরি হওয়া। এবং এটাই নির্মাতার অকালপ্রয়াণের নেপথ্য সত্য

ফরাসগঞ্জে, টোকন ঠাকুরের বাসায়, আড্ডায় রাসেল আহমেদ, তার স্ত্রী ও অন্যরা ।। ছবি, টোকন ঠাকুরের সৌজন্যে

নৃ বা নির্মাণাধীন আমাদের ছবি কাঁটা নিয়ে রাসেলের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি শেয়ার হয়েছে গত তিনচার বছর ধরে। আমার নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় আমরা আম খাওয়া উৎসব করেছিলাম। সেই আম পাঠিয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কাজী সুসমিন আফসানার পক্ষ থেকে। কত স্বপ্নইআমরা নাড়াচাড়া করতাম। আমাদের কাঁটা কীভাবে শেষ হবে, কাঁটার বাকি অর্থ কীভাবে যোগাড় করব আমি, সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে অর্থবান দুএকজন মানুষের সঙ্গে দুয়েকটা মিটিংয়েও রাসেল আমার সঙ্গে থেকেছে, নিকেতনে বা এফডিসিতে। আমার এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় আমি একটানা এগারো বছরের বেশি থেকেছি। আতিক আর শুকু যখন ওই বাসা ছাড়ে, তারপর উঠি আমি। এরপর গেলাম শংকরে। রাসেলদের বাসা আদাবরে। ফলে, আবাসিকভাবে আমরা কাছাকাছি হলাম আরেকটু। রাসেল-ঈয়নরা একসঙ্গে থাকত। ড্যানিও থাকত। ওদের বাসাতেও আম উৎসব করেছি আমরা। রাসেলের বউ রাজশাহীর মেয়ে। তারও আগে ইথেলদের বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গে, রাজশাহীর ওপারেই। সেখানেও প্রচুর আম হয়। ইথেল আর রাসেল ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। রাসেলের কাছেই কথায় কথায় একদিন শুনলাম সেই বৃত্তান্ত। নৃর শুটিং চলছিল। ইথেল রাজশাহী থেকে বরিশালে হাজির একেবারে শুটিং স্পটে। স্পটেই, পুরোনো বাড়িটার পরিত্যক্ত বাথরুমকে ঘষেমেজে বাসযোগ্য করা হলো। তারপর সেই বাথরুমই হয়ে গেল রাসেল-ইথেলের ফুলসজ্জার ঘর। এ এক পাগলা জীবনের উদ্দাম টান। হ্যা, ইথেল যথেষ্ট প্রজ্ঞাশীল এক মেয়ে, আমি দেখেছি এবং এ কথা রাসেলকেও বলতাম প্রায়ই, ‘ইথেল তোমার যোগ্য যাত্রীই বটে।’

কাঁটা নির্মাণে রাসেল যুক্ত হয়ে গেল আমার সঙ্গে। এই নিয়ে আমার শংকরের বাসায় প্রায়ই বসাবসি শুরু হলো। কোত্থেকে কাঁটার বাকি বাজেট পূরণ হবে, আমার এই চিন্তায় রাসেল বারবার নৃর স্ট্রাগলের কথা বলেছে এবং আমাদের ছবিতে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে যুক্ত হয়ে উঠল। ইথেল যুক্ত হয়ে উঠল কাঁটার কস্টিউমে। আমি যেদিন শংকর থেকে ফরাশগঞ্জ চলে আসি কাঁটার লোকেশন অনুবর্তী এলাকার এক পুরোনো বাড়িতে, সেইদিনই রাসেলরাও আদাবর ছেড়ে বাড্ডায় উঠে গেল। তারপরই শুরু হলো কাঁটা নিয়ে প্রি-প্রডাকশনের কিছু সারাদিনের মিটিং, সেই যথারীতি মিটিংয়ে রাসেল দায়িত্বশীল একজন, মিটিংয়ের সদস্য রাসেলের বউ ইথেলও এবং ড্যানি। ওরা তখন পুরোন ঢাকার ফরাশগঞ্জে আসত বাড্ডা থেকে। অনেকটাই দূরত্ব। তবু আমরা ভালো ছবি বানানোর নেশায় পড়ে আছি। ছবি বানাতে কিছু অভিজ্ঞ সহকর্মী লাগবেই, তারাই বাকি লোকজন সামাল দেবে বা খেটে-খুটে কাজটা ওঠাবে অন্তত প্রডাকশন পিরিয়ডে, এটাই হয়।আমাদের ছবি কাঁটা টিমে রাসেলকে পেয়ে আমার শক্তির জায়গাটা অনেক বেড়েছে। সত্যি, সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব আমি রাসেলের কাছে, কাঁটার জন্যে ওর মেধা ও শ্রম দেবার অভিপ্রায়ের জন্যে। কাঁটার শুটিং আশা করি খুব শিগগিরই শেষ হয়ে উঠবে এবং রাসেল স্বশরীরে কাঁটা টিমে থাকল না বটে, রাসেলকে আমি ও আমরা নানানভাবে পাব, পেতে থাকব।

দৃশ্য । নৃ

রাসেলের একটা যন্ত্রণার কথা বলি? গতবছরে এটা ঘটল। আমি শংকরে আর রাসেলরা তখনও আদাবরের বাসায়, যে বাসায় আমি অনেকবার গেছি শুধু ছবি বানানোর আড্ডা দিতে। আমি একদিন নির্মাতা শাহনেওয়াজ কাকলিকে নিয়ে গেছি রাসেলদের বাসায়। মেইনস্ট্রিম নামে একটি সিনে-কাগজ বের করবার আয়োজন চলল, রাসেলদের বাসায় তার মিটিংও পড়ল কয়েকটা। ওরা মেইনস্ট্রিম-এর সম্পাদক হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দিল। সেটা বেশ কিছু মিটিং এগিয়েছে। এর মধ্যেই রাসেল চলে গেল। কেমন লাগে? যাই হোক, ঘটনাটি বলি? নৃতে অংশবিশেষ ইনভেস্ট করা লাখ পাঁচেক টাকার জন্যে একজন ধনাঢ্য মহিলা, যিনি শিল্পসাহিত্য-ফেসবুকে সক্রিয়ও বটে, “নৃ কবে  শেষ হবে জানি না, আমার টাকা ফেরৎ দিতে হবে” মর্মে টাকার জন্যে তৎপর হলেন। রাসেল তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও ফেইল করল। ওই মহিলা বুঝলেন না। কোনোভাবেই তিনি একজন স্বপ্নচারী তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে বুঝতে পারার জায়গায় পৌঁছুলেন না। তিনি আদাবর থানায় নালিশ পাড়লেন। রাসেল ফোন দিয়ে সব বলল যখন, আমিও বললাম, ‘যাও, থানায় যাও।’

…রাসেল তো আর
টিভি নাটক করে
ছবি বানাতে আসেনি,
ও এসেছে
ছবি বানাবার
প্রস্তুতি নিয়েই…

পুলিশের এসআই কবিরের মধ্যস্থায় মহিলা মেনে নিলেন, পরবর্তী পাঁচ মাসে রাসেল প্রতিমাসে এক লাখ টাকা করে ফেরৎ দেবে। ইথেলকে নিয়ে সংসারে খরচাপাতি হয়তো বেশি নয়, তবে ফ্ল্যাটভাড়া আর সেই মহিলাকে প্রতিমাসে এক লাখ করে টাকা ফেরৎ দিতে গিয়ে রাসেল খুব চাপে পড়ে গেল। রাসেল তো আর টিভি নাটক করে ছবি বানাতে আসেনি, ও এসেছে ছবি বানাবার প্রস্তুতি নিয়েই। অর্থাভাবে রাসেল দুএকটা টিভি প্রডাকশন, দুএকটা টিভিসি বা ফরমায়েসি তথ্যচিত্র বানাতে গেল। তার মধ্যেও চিন্তা জেগে থাকে, নৃর এডিটিং শেষ করতে হবে। এমনিতেই নৃর এডিটিং নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এডিটিং হাউসে গেলেও প্রজেক্টের প্রতি প্রয়োজনীয় সুপ্রাপ‌্য না হওয়ায় নৃ নিয়ে রাসেল এদিক-ওদিক ঘুরে শেষ পর্যন্ত নিজের বাসায় প‌্যানেল বসিয়ে ফেলল। এবং এই নিজের বাসাপর্বে সম্পাদনা নিয়েই একটা তৃপ্তি দেখলাম রাসেলের চোখে। নৃর এডিটর বদল হলো দুএকবার।

দৃশ্য । নৃ

সম্পাদনার শেষ হওয়ার পরই নৃ দর্শকের সামনে আসবে– রাসেলের চোখে সেই মুক্তির ঝিলিক আমি দেখতাম। প্রচলিত পরিবেশকরা তো এ ছবি নেবে না, আমরা জানি, তাই নিজেদের মতো স্বাধীনভাবে নৃ স্ক্রিনিংয়ে আমরা কে কিভাবে জড়িয়ে যাব– তাই নিয়ে ডিজাইন চলত আমাদের। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পিরিওডিক্যাল ছবি আমাদের কাঁটা নির্মাণাধীন আছে বলেই রাসেল আমার চাপটা বুঝত, একটা অন্তরঙ্গ বোঝাপড়া চলত আমাদের। সেই রাসেল নেই, এটা ভাবতেই হু হু করে ওঠে মন। অকালপ্রয়াত তরুণ কবির মতো রাসেল চলে গেল তার প্রথম সন্তানটি লোকচক্ষুর সামনে আনার আগেই। কষ্ট লাগে। ভুংভাঙ ছবি বানানোর কথা ভাবলে এই চাপ নিতেই হতো না, জীবন অনেক স্বচ্ছল হয়ে উঠত দ্রুতই। এটাই সবাই করে। রাসেল সবার দলে নাম লেখাতে বরিশাল থেকে ঢাকা আসেনি, মনে রাখা দরকার।

ফেসবুকে প্রায়ই দেখতাম, রাসেল ওর বউকে নিয়ে ছবি আপলোড দিচ্ছে। কোনো ছবির লোকেশন রাজশাহী পদ্মার পাড়, কোনো ছবির লোকেশন কুয়াকাটার সমুদ্রতীর, কোনো ছবির লোকেশন হবিগঞ্জ রেইলস্টেশনের প্লাটফরম। ছবি তোলায় দারুণ হাত ছিল রাসেলের। ছবি বানানোর জন্যে প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল প্রস্তুতিও ছিল ভালো, যা আশা করি দর্শক সম্পাদনা শেষে নৃতেই দেখতে পাবে। কয়েকবছর আগেই আমাকে নৃর চিত্রনাট্য পড়তে দিয়েছিল রাসেল। ফুটেজও দেখেছি। সত্যি, এক স্বতন্ত্র নির্মিতি-সাক্ষর নিয়ে পরিচালক রাসেল আহমেদের ছবি নৃ আমাদের সামনে হাজির হবে, দুর্ভাগ্য, রাসেল নিজেই থাকল না আর। আরও আরও ছবি ওর বানানো হলো না। আরও আরও ভালো কিছু আর রাসেলের কাছ থেকে পাবে না বাংলাদেশ, রাসেল প্রয়াত। রাসেল দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে ওর তৃতীয় বিবাহবার্ষিকীর দিনে, ওর সহযোদ্ধা-স্ত্রী ইথেলকে এক দুঃসহ স্মৃতির মধ্যে ফেলে। আমাদের জন্য এক সাহসী, সহমর্মী সহযোদ্ধা হারানোর বেদনা দিয়ে গেল এই তরুণ ফিল্মমেকার।

…সহযোদ্ধা হারালে যে-রকম ধাক্কা লাগে,
বুক ফেটে যায়,
অনেক স্মৃতির ঢিবি বুকের মধ্যে
ধীরে ধীরে পাহাড় হয়ে ওঠে,
রাসেলকে হারিয়ে তাই অনুভব করছি…

কথা ছিল, নৃ কাঁটা সারাদেশে আমরা নিজেদের স্ক্রিন-প্রজেক্টর নিয়ে দেখিয়ে বেড়াব, টাকা তুলব পরবর্তী ছবির। সে কথা থাকল না। আমাদের কাঁটা টিম সবসময় রাসেলের অনুপস্থিতি অনুধাবন করবে। কাঁটার কাজও শেষ হবে কিছুদিনের মধ্যেই। রাসেলকে অনুভব করব বারবার। ব্যক্তিগতভাবে কাছের মানুষ, বন্ধু, সহযোদ্ধা হারালাম। বাংলাদেশ হারাল একজন সম্ভাবনাময় তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে। আমরা দেখেছি, ধাপ্পাবাজের এই দেশ তার ধ্যানী সন্তানদের ধরে রাখতে পারে না। চলচ্চিত্রে অকালেই চলে যেতে হলো জহির রায়হান, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদকে। সেই ক্ষতি এই দেশ, এই দেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পোষাতে পারবে না কখনো। রাসেলের মতো সম্ভাবনাময় তরুণকেও এদেশ রাখতে পারল না, বরং ভালো ছবি বানানোর দায় নিয়ে কত গঞ্জনা, কত অপমান, কত অবহেলা উগরে দিল পরিচালক বরাবর। থানা-পুৃলিশ সামাল দিতে দিতে, শুটিংয়ের টাকা বা এডিটিং এর টাকা কোত্থেকে আসবে ভাবতে ভাবতে রাসেল চলে গেল নৃ ফেলে কিম্বা আমাদের উপর ছবিটা সম্পাদনা শেষ করে দর্শকের সামনে আনবার দায়িত্ব দিয়ে। আমার শংকরের বাসায় ঝিনেদা থেকে আমার মা এসেছিল যখন, একদিন রাসেল বাসায় এলো। মনে পড়ছে, আমার মা রাসেলকে বলল, ‘তোমরা ভালো করে কাজ করবা, ভালো সিনেমা বানাবা।’ এই কথা পরে রাসেল আমাকে প্রায়ই মনে করিয়ে দিত কথায় কথায়, আড্ডাচ্ছলে। হ্যাঁ, আমরা আড্ডা দিয়েছি অনেক, আড্ডাই আমাদের প্রধান পাঠশালা, সেটা আমরা জানি, মানি, স্বীকার করব, করব। আর সহযোদ্ধা হারালে যে-রকম ধাক্কা লাগে, বুক ফেটে যায়, অনেক স্মৃতির ঢিবি বুকের মধ্যে ধীরে ধীরে পাহাড় হয়ে ওঠে, রাসেলকে হারিয়ে তাই অনুভব করছি।

ফরাসগঞ্জে, রাসেল আহমেদের ক্যামেরায় বিড়াল-বন্দী ।। ছবি, টোকন ঠাকুরের সৌজন্যে

ছবির হাটের স্বাধীনতা রুদ্ধ হয়ে গেল। এরপরও কেউ কেউ টিএসসি গেইট সংলগ্ন রাস্তায় সান্ধ্যকালীন সমাবেশে আসে বটে কিন্তু হাট তো পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। তবু সোহরাওয়ার্দি উদ্যান থেকে যাচ্ছে, টিএসসি থেকে যাচ্ছে, চারুকলা-শাহবাগ থেকে যাচ্ছে, আজিজ মার্কেট-কনকর্ড বইপাড়া থেকে যাচ্ছে, আমাদের সিনেমা নির্মাণ স্বপ্নটা থেকে যাচ্ছে, গান-কবিতা-ছবির ভুবন থেকে যাচ্ছে– শুধু রাসেল নেই। রাসেল আহমেদ আমাদের অকালপ্রয়াত ফিল্মমেকার। ও বরিশাল থেকে এসে কয়েকবছর ঢাকায় কাটিয়ে ফের বরিশালেই ফিরে গেল। সিলেটে বেঙ্গলের কালি ও কলম কবিতা ভাসান-এ গিয়ে দেখা হলো বন্ধু হেনরী স্বপনের সঙ্গে। স্বপনের সঙ্গেও ওখানে বসে কথা হলো ঈয়ন-রাসেল বা নৃ প্রসঙ্গে। সেই রাসেল আর নেই। রাসেলের নৃ কিন্তু রয়ে গেল, ভালো সিনেমা দর্শকের জন্যে। কামিং সুন নৃ

রাসেল চলে যাওয়ার পর, চট্টগ্রাম থেকে আসা যে মেয়েটি এখন ঢাকায় প্রফেশনালি প্রডাকশনে কাজে ব্যস্ত থাকে, সে, সে আমাকে ফেসবুকে ইনবক্সে জানতে চেয়েছে, ‘রাসেল নেই, কেন কেন কেন?’ আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি ওকে। এই মেয়েটি রাসেলকে একদা খুব ভালোবাসত, আমি জানি। তখনও মেয়েটি চট্টগ্রামেই ছিল, ঢাকায় আসেনি। আবার রাসেল হয়তো বাঁধা পড়ে ছিল রাজশাহীর পদ্মার কাছে। একদা ওই মেয়েটিই আমাকে ফোনে ফোনে বলত রাসেলের কথা। আমি বলতাম, কে রাসেল? মেয়েটি বলত, ‘ফিল্ম বানাচ্ছে, ছোটনদের বন্ধু।’ ছোটনও প্রডাকশন করে। ছোটন আমাদের কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ছোটনের বড়টা নীল আমাদের জলযাত্রার সঙ্গী। এবং ওদের বাবা জয়ন্ত দা’ও আমাদের বন্ধু, ছোট যেমন বন্ধু, রাসেলও আমাদের বন্ধু।

তোমার জন্যে ভালোবাসার ঝাঁপি খুলে বসে আছে, অনেক প্রিয়জনই আছে, রাসেল তুমি জানলে না। তুমি জানলে না, রাসেল, তোমার ইথেল জানিয়েছে, ‘নৃ সম্পাদনা শেষ করেই আমরা তোমাকে শ্রদ্ধা জানাব।’

দৃশ্য । নৃ

প্রিয় সহযোদ্ধা, তরুণ কমরেড,  নৃর পরিচালক রাসেল আহমেদ, আমরা তোমাকে ভুলছি না…


১৭ মে, ২০১৭, ফরাশগঞ্জ, ঢাকা
Print Friendly, PDF & Email
কবি; আর্টিস্ট; ফিল্মমেকার।। ঢাকা, বাংলাদেশ।। ফিল্ম : ব্ল্যাকআউট [২০০৬]; রাজপুত্তুর [২০১৫]; কাঁটা [নির্মাণরত]।। কাব্যগ্রন্থ : অন্তরনগর ট্রেন ও অন্তরঙ্গ স্টেশন; দূরসম্পর্কের মেঘ; আয়ুর সিংহাসন; কবিতা কুটিরশিল্প; দুপুর আর দুপুর রইল না; নার্স, আমি ঘুমোইনি; কুরঙ্গগঞ্জন; টোকন ঠাকুরের কবিতা; তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না; আমি রিলেটিভ, মেসো; ভার্মিলিয়িন রেড; প্রেমের কবিতা; রাক্ষস@gmail.com; শিহরণসমগ্র; আমি পুরুষ মৌমাছি; ১ ফর্মা ভালোবাসা; নির্বাচিত ১০০ কবিতা।। গল্পগ্রন্থ : খশ্যেদ ও অন্যান্য চরিত্র; লিবিয়ান ভিসা; জ্যোতি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিল; সুঁই ও ব্লেড।। উপন্যাস : চরৈবেতি; মধুযামিনী রে।। শিশুতোষ-গ্রন্থ : ফড়িঙের বোন; সব পাখিরাই পাখি না; মেঘলা দুপুর শীতের পুকুর; মি. টি. মি. অ অ্যান্ড মিসেস মেঘের গল্প; নিলডাউন; মমি।। ফিল্ম-প্রোডাকশন হাউস : ভার্মিলিয়ন রেড

5 মন্তব্যগুলো

  1. আরিব্বাস! এতবড় লেখা একদমে পড়ে ফেললাম। আমার ধৈর্য বেড়েছে নয়তো টোকনদার ম্যাজিক।

  2. রনক, রাসেলের হঠাত মৃত্যুতে আমার অন্তরে রক্তখরণ হচ্ছিল, সে ক্ষরণটাই লিখতে চেয়েছি মনে হচ্ছে

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here