মাটির ময়না: আত্মজৈবনিক আখ্যানের শিল্পরূপ

1522

মাটির ময়না । ফিল্মমেকার : তারেক মাসুদ । প্রডিউসার : ক্যাথেরিন মাসুদ । স্ক্রিপ্ট-রাইটার : তারেক মাসুদক্যাথেরিন মাসুদ । সিনেমাটোগ্রাফার : সুধীর পালসেন । এডিটর : ক্যাথেরিন মাসুদ । কাস্ট : নুরুল ইসলাম বাবু, রাসেল ফরাজী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যার, রোকেয়া প্রাচী, শোয়েব ইসলাম । রানিংটাইম : ৯৮ মিনিট । মুক্তি : ২০০২ । ভাষা : বাংলা । দেশ : বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রথম প্রচেষ্টা শুরু হয় বিগত শতকের বিশের দশকে। সে ছিল এক নিঃশব্দ চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রচেষ্টা। কিন্তু এটি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে অর্থাৎ নিঃশব্দ থেকে সশব্দ চলচ্চিত্রে রূপ নেয় একই শতকের পঞ্চাশের দশকে। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লড়াইয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের চলচ্চিত্র উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় আবির্ভাব ঘটে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মেধাবী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীর। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। কিন্তু এ ভূখণ্ডের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন তার পরম্পরা রক্ষিত হয়নি পরবর্তী সময়ে এগিয়ে আসা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ক্ষেত্রে। এরপরও হাতে গোণা কয়েকজন চলচ্চিত্র নির্মাতা তাদের প্রজ্ঞায় আমাদের এই শিল্পমাধ্যমটিকে গুণগতভাবে সমৃদ্ধ করতে লড়াই চালিয়ে গেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ সেই বিরল শিল্পীদের একজন। অকালপ্রয়াত এই চলচ্চিত্র নির্মাতাকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পাঠ সম্পূর্ণ হবে না কোনোদিন।

তারেক মাসুদের আত্মজৈবনিক আখ্যানের শিল্পরূপ ‘মাটির ময়না’। আমাদের জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণের চিত্ররূপ এই চলচ্চিত্রটি। সীমার মধ্য দিয়ে অসীমের ব্যাপ্তির মতোই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আগের কয়েক বছরকে তিনি সেলুলয়েড ভার্সনে তুলে ধরেন। কতিপয় চরিত্রের দোলাচলে আর নির্বাচিত দৃশ্যবিন্যাসে বিশাল এই জনপদের ঐতিহ্য, ধর্ম, পারিবারিক ব্যবস্থা, প্রকৃতি, রাজনীতি আর ভৌগলিক চারিত্র্য যেন বা উঠে আসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই। কিন্তু সেই উঠে আসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় তারেকের গন্তব্য, তিনি দর্শকের ভেতরে নানা ভাবনার, নানা জিজ্ঞাসারও জন্ম দিয়েছেন। এতে করে পরিণত মানুষ নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রাজ্ঞতা অর্জন করে ফেলে যেন বা। চলচ্চিত্রটি অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, সেই প্রশ্নগুলোর মধ্যে ইতি-নেতির দ্বন্দ্বও রয়েছে। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। প্রকৃতঅর্থে নির্মাতা তারেক কোনো উত্তর দিতে চাননি। কেননা তাঁর উপস্থাপনা কৌশলের ভেতরেই রয়েছে উত্তরের খোঁজ। শিল্পে এই গুপ্ত কিংবা খানিক আভাস অথবা রহস্যময়তাই জিয়নকাঠি। নয়তো সব দৈনন্দিন। আমরা লক্ষ করি, ১৯৭৪ সালে চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত তারেক দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০০২ সালে মুক্তি দেন তাঁর প্রথম কাহিনীচিত্র ‘মাটির ময়না’। একটি যথাযোগ্য শিল্প সৃষ্টিতে ব্যক্তির এই ধৈর্য্য ও প্রতীক্ষা সত্যিই বিরল। তারেক মাসুদ এখানেও ব্যতিক্রমী শিল্পসাধক। এত দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি আর অপেক্ষার নির্মোহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, তিনি আমাদের অভিজ্ঞতায় দ্বিতীয়রহিত হয়ে রইলেন।

একটি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রাত্যহিক কর্মকৃত্য দিয়ে ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রটির যাত্রারম্ভ। শীতের কোনো এক ভোরে শিক্ষার্থীদের ওজু ও শিক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে ক্রমশ অতীতচারি কৌশলে এগিয়ে যায় এর কাহিনী পরম্পরা। এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আনু নামের এক কিশোরকে কেন্দ্র করে এর ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়। আমরা দেখতে পাই, একই সকালে মাদ্রাসায় পাঠগ্রহণরত আনু আর তারই পরিবারের খানিক বৃত্তান্ত। আনুর মা আয়েশার পিঠা তৈরির দৃশ্য আমাদের এই ভূগোলের শীতকালীন বিশেষ খাদ্যাভ্যাসের ঐতিহ্যটি উঠে আসে। গ্রামীণ এক সম্পন্ন পরিবারে বেড়ে উঠলেও ধর্মীয় কুহকবিভ্রমগ্রস্ত আনুর পিতা কাজী মাজহারুল ইসলাম তাকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। আনুর বোন আসমা কিছুদিন ধরে জ্বরে ভুগছে। আনুর বাবা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কাজী সাহেব নিজেই চিকিৎসা করছেন। মেয়ের জ্বর না কমার অভিযোগ শুনে কাজী সাহেব এর জন্য আসমার বাইরে ঘোরাঘুরিকেই দায়ী করেন। মেয়েকে নিয়ে কথোপকথনের এক পর্যায়ে আয়েশা ঘরের আধো-অন্ধকার তাড়াতে জানালা খুলে দেয়। বাইরে বিপুলা সবুজ প্রকৃতি। প্রাণের স্ফূরণ ও বিকাশ যে প্রকৃতিতে তারই এক আহবান যেন বা এই ক্ষুদ্র অথচ তাৎপর্যময় দৃশ্য। মেয়ে আসমার সঙ্গীহীনতা ও ছেলে আনুকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তাকে নিঃসঙ্গ করে দেওয়ার অনুযোগ করে আয়েশা ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মুহূর্তে বাইরে থেকে সেই জানালার ওপর একটি ক্লোজ শট স্থির হয়ে থাকে। ঘরের ভেতরে থাকা কাজী সাহেব উঠে এসে আস্তে করে জানালার সামনে দাঁড়ান। ক্যামেরা খানিক টিলড আপ হয়ে স্থির। কারাগারের মতো রডের বিন্যাসে নির্মিত ওই জানালায় বহুদিন ধরে চর্চিত সংস্কারের মতো মাকড়শার জাল ঝুলে আছে। জানালাটি বন্ধ করে দিয়ে কাজী সাহেব ধর্মান্ধতার গহবরেই যেন বা নিজেকে লুপ্ত করেন। কাজী চরিত্রটি আপাত নিরীহ এই দৃশ্যের অবতারণায় এক লহমায় সমগ্রসহ অঙ্কিত হয়ে যায়। পরক্ষণেই মাদ্রাসার নিরেট দেয়ালের দৃশ্য এসে ঠেকে আনকাট ট্রলি ঠেলে আনুর চুল কর্তনের মুহূর্তে। কিন্তু ধর্মীয় এই শিক্ষায়তনের কঠোরতা কঠিন দেয়ালগাত্র দর্শনে দর্শকের ভেতর প্রবিষ্ট হয়। আনুর চুলে কাচি চালাতে চালাতে ক্ষৌরকার দান করেন ধর্মীয় ও শ্রেণীগত বিভাজনের পাঠ।
মাদ্রাসার এই নিস্তরঙ্গ জীবনে আনুর একমাত্র বন্ধু হয়ে ওঠে রোকন নামের অপর এক কিশোর। এই গণ্ডিবদ্ধতা রোকনকে ক্রমে অসুস্থ করে তোলে। শেষ পর্যন্ত অপ্রকৃতিস্থ হয়ে গেলে তাকে বন্দি করা হয় মাদ্রাসার মালখানায়।

দৃশ্য । মাটির ময়না
দৃশ্য । মাটির ময়না

আনুকে মাদ্রাসায় পাঠানোর কার্যকারণ উদঘাটিত হয় খানিক পরে। আমরা দেখতে পাই, কাজীর ছোটভাই মিলনের সাথে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ দেখে ফেরার পর এই নির্দোষ বিনোদনটিকে ‘হিন্দুয়ানী’ আখ্যা দিয়ে আনুকে ‘রক্ষার’ নামে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন কাজী সাহেব। মিলন প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত।

উদ্ভট ভৌগলিক বিভাজনের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রযন্ত্রটির উদ্ভব। এই অংশ পূর্ব পাকিস্তান আর হাজার মাইল ব্যবধানে পশ্চিম পাকিস্তান। এই দুয়ে মিলে ‘পাকিস্তান’। অখণ্ড ভারত হিন্দু ও মুসলিম এই দুই ‘জাতি’তে বিভক্ত হয়ে তিনখণ্ডে দুটি রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা এই অঞ্চলকে দেশ হিসেবে নয়, নিজেদের উপনিবেশ হিসেবেই গ্রহণ করে। ফলে সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই এ অঞ্চলের অধিবাসীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ জারি রাখে। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন তা ক্রমশ এই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে সূচনা ঘটায় সামগ্রিক মুক্তি আন্দোলনের। এ ভূখণ্ডের মানুষ ধীরে ধীরে অগ্রসর হয় ভাষা ও ঐতিহ্যভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে। কিন্তু তারমধ্যেও কতিপয় ধর্মান্ধ লিপ্ত হয় ইসলামি রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানকে বহাল রাখার চেষ্টায়। কাজীকে আমরা দেখতে পাই সেই পাকিস্তানপন্থীদের সারিতে। পাকিস্তানিদের প্রতি তার বিশ্বাস এতোটাই গভীরে প্রোথিত যে, অন্তিম দৃশ্যে দেখা যায়, হানাদার বাহিনীর হামলায় ভস্মীভূত ঘরের ভেতরে ধর্মগ্রন্থের পুড়ে যাওয়া খণ্ডিত পৃষ্ঠা হাতে দাঁড়িয়ে থেকেও তাদের প্রতি অবিশ্বাস আনতে পারে না সে। তাকে খানিক বিস্মিত দেখায় শুধু। সেই দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই, আয়েশা ছেলেসন্তান আনুকে নিয়ে পালাতে থাকে বেঁচে থাকার তাগিদে, নতুন জীবনের সন্ধানে।

এই চলচ্চিত্রে বস্তুত তিন জোড়া পরস্পরবিরোধী দ্বন্দ্বমূলক ধারণার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়_ নারী-পুরুষ বা ঘর-বাহিরবিষয়ক দ্বন্দ্ব, প্রকৃতি-প্রতিষ্ঠানবিষয়ক দ্বন্দ্ব ও ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র বনাম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। এই তিন জোড়া দ্বন্দ্বই ‘মাটির ময়না’র মূল প্রসঙ্গ। এই মূল প্রসঙ্গগুলো শক্ত বৌদ্ধিক যুক্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য উপসঙ্গ হিসেবে তারেক লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান ব্যবহার করেছেন। এসবের মধ্যে লোকগান, ধর্মীয় বাহাস, নৌকাবাইচ, গ্রামীণ মেলা, বাতাসা, স্থানীয় ভাষা ও উচ্চারণ, নকশিকাঁথা, মাটির তৈরি পাখি, সূচিকর্ম, চিত্রকর্ম, পুঁথিপাঠ প্রভৃতি অন্যতম।

'মাটির ময়না'র সেটে তারেক মাসুদ
‘মাটির ময়না’র সেটে তারেক মাসুদ

তারেক মাসুদ ছিলেন বাংলাদেশের একজন ঐতিহ্যনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা। তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে তাঁর সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভবপর যে, তিনি ছিলেন বাংলা ঐতিহ্যের প্রতি সংবেদনশীল একজন শিল্পী। এ কারণে তাঁর চলচ্চিত্রে বাংলার ঐতিহ্যিক পার্বন, সঙ্গীত, প্রকৃতি, প্রাণী ও গ্রাম-শহরের জীবনযাপন উঠে এসেছে স্বতস্ফূর্ত প্রণোদনায়। কোথাও তা আরোপিত বলে ভ্রম জাগেনি। তাঁর শিল্পচেতনায় মানুষের বৃহত্তর কল্যাণকামী একটি আভাস সবসময়ই বিরাজমান। ‘আদম সুরত’, ‘সোনার বেড়ি’ থেকে শুরু করে সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘রানওয়ে’ পর্যন্ত সর্বত্রই তিনি তাঁর ঐতিহ্যনিষ্ঠতার প্রমাণ রেখেছেন। সর্বশেষ যে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছিলেন, সেই ‘কাগজের ফুল’-এ দেশবিভাগের কাহিনি নির্বাচন করেছিলেন। এতেও তাঁর মানুষের প্রতি সংবেদনশীল ও ঐতিহ্য নিষ্ঠতার খোঁজ পাওয়া যায়। সমালোচকের ভাষায়_
“তারেক চলচ্চিত্রমাধ্যমেই তাঁর জীবনদর্শন ও বিশ্ববীক্ষার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর মানস আবৃত ছিল মার্কসবাদ, বিজ্ঞানচেতনা, ধর্মচেতনা এবং লোকসংস্কৃতির ভেতরকার মূল তিনটি উপাদান : মানবতাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতান্ত্রিক মনোভাব দ্বারা। ‘মানুষ’ই তাঁর সব চলচ্চিত্রকর্মের কেন্দ্রে অবস্থান করেছে। তাই তাঁর বক্তব্য সব সময় মানবদরদী হয়ে ওঠেছে। তারেক বোধহয় মধ্যপন্থী মনোভাবের চলচ্চিত্রস্রষ্টা, যাঁর কাছে চরম বা পরম বলে কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে তিনি সহিষ্ণুতার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করতেন বলে প্রতীয়মান হয়। এই সহিষ্ণুতার সংস্কৃতি কিন্তু আমাদের চিরায়ত লোকসংস্কৃতির একটি বড় দিক। তারেক এ দিকটিকেই লোকসংস্কৃতি, লোকসমাজ ও লোকদর্শনের নানা উপাদানে সজ্জিত করে তাঁর চলচ্চিত্রের বিষয়, চরিত্র ও বক্তব্যের রূপায়ণে ব্যবহার করেছেন।”
চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা আর ঐতিহ্যনিষ্ঠার বিষয়টি গুপ্ত থাকেনি বিদেশ বিভূঁইয়ে থাকা তাঁর শুভাকাক্সক্ষী চলচ্চিত্র স্বজনদের। এ কারণেই জন লিহি স্পষ্ট ভাষায় বলেন_
“তারেকের দুটো একই রকম তীব্র ভালোবাসর জায়গা পরিষ্কার। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা আর বাংলাদেশের জন্য ভালোবাসা। দুটো বিষয়েই ওর অগাধ জ্ঞান প্রমাণ করে কতোটা গভীর ভাবে এই দুয়ের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তারেক। ও ভালোবাসতো ওর বাংলা সংস্কৃতির সম্পদ আর এর বৈচিত্র্য। কিন্তু ওর ভালোবাসা রবীন্দ্রনাথ আর সত্যজিৎ রায় কেন্দ্রিক উচ্চশ্রেণীর সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং যেমনটা ও আমাকে বলেছে ওর অনুরাগ ছিল গ্রামীণ লোকজ আর অনাধুনিক সংস্কৃতির প্রতিও, যাকে তারেক ব্যাখ্যা করেছে ইগালিটারিয়ান ইনক্লুসিভ এন্ড সিনক্রিয়েটিক হিসেবে। তারেক মনে করতো এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের অসীম সম্ভাবনা। […] সৃষ্টির কাজটাই এমন যে একজন শিল্পী শেষ পর্যন্ত তাই করেন যা তার কাছে ঠিক মনে হয়। শিল্পী এমন কিছু করেন না যাকে তার সচেতন সঋতি আর অভিজ্ঞতা কোনো একটি বিশেষ ক্ষেত্র প্রকাশের ঠিক উপায় বলে মনে করেন না। নিজের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে অভিজ্ঞতাকে মেলানোর ক্ষমতা ছিল তারেকের। এই বিরল ক্ষমতা ওর মতো একজন কবিকে অপরিসীম শক্তি আর সমৃদ্ধি দিয়েছিল। এজন্যই আমি বিশ্বাস করি ওর সেরা কাজটি এখনো বাকি ছিল।”

তথ্য নির্দেশ :

১. সাজেদুল আউয়াল, তারেক মাসুদ তাঁর লোক চলচ্চিত্র, ই-কালি ও কলম, বর্ষ ১৩, সংখ্যা ৩, এপ্রিল ২০১৬।
২. প্রাগুক্ত।
৩. তারেক মাসুদ : জীবন ও স্বপ্ন, ক্যাথরিন মাসুদ (সম্পাদক), প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা, ২০১২, পৃ ১২।

Print Friendly, PDF & Email
কবি, গবেষক, নাট্যকার, সাংবাদিক, সিনে-সমালোচক। জন্ম : নেত্রকোণা, বাংলাদেশ। পিএইচডির থিসিস : বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নারী-- শিল্প ও সমাজবাস্তবতার প্রেক্ষাপট [২০০০ সাল পর্যন্ত]। ফিল্মবুক : তারেক মাসুদ

5 মন্তব্যগুলো

  1. […] মাটির ময়না বোধহয় একমাত্র চলচ্চিত্র, যা আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত হয়েছে। অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে অংশগ্রহণ এবং পুরস্কারপ্রাপ্তি ছাড়াও ফ্রান্সের এমকে-টু এর সাথে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি পৃথিবীর ৩৬টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায়। এরপর আরও কয়েকটি চলচ্চিত্র ১ দু সপ্তাহের জন্যে কোনো কোনো দেশে মুক্তির নজির রয়েছে। এখন কানাডায় প্রায়শই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এক-দুই সপ্তাহের জন্যে দুয়েকটি সিনেপ্লেক্সে রিলিজ হওয়ার খবর পাওয়া যায়– যা নিশ্চয় অন্যদের অনুপ্রাণিত করে। গত মার্চের ৩ তারিখে  মালয়েশিয়ার ‘গোল্ডেন স্ক্রিন সিনেমা’র ৪টি মাল্টিপ্লেক্সে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সুতপার ঠিকানা। চলেছে টানা ৭ সপ্তাহ। এরপর সেটি মালয়েশিয়া এবং ব্রুনাইয়ের দুটি টিভি চ্যানেলেও প্রচারিত হয়। […]

মন্তব্য লিখুন

Please enter your comment!
Please enter your name here